প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৬
জান্নাত নুসরাত
একটু আগে আছরের আজান দিয়েছে। বাড়িতে এতো বড় হাঙ্গামা হয়েছিল কিছুক্ষণ আগে তা এখন বুঝাই যাচ্ছে না। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। ওই বিষয় নিয়ে আর কেউ কোনো কথা বলেনি। সবাই কেমন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে।
আছরের নামাজ শেষ করে বারান্দায় বসে আঙুলে তাসবিহ পড়ছিলেন মেহেরুন নেছা। দরজার বাহির থেকে নক করার শব্দ আসলো। এরপরই আরশের গলা ভেসে আসলো,
” দাদি আসবো।
মেহেরুন নেছা ভিতরে আসার অনুমতি দিলেন। আরশ রুমে মেহেরুন নেছাকে খুঁজে পেল না। তাই বারান্দায় গেল। সেখানে গিয়ে আরশ দেখলো মেহেরুন নেছা চুপচাপ বসে তাসবিহ পড়ছেন। আরশ উনার গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসল। মেহেরুন নেছা কিছু বললেন না। তাকিয়ে রইলেন দূর ওই আকাশের দিকে। আরশ নিজে থেকে বলল,
“দাদি ওই সময় কি হয়েছিল? আর চাচা ও প্রচুর রেগে আছে দেখলাম নুসরাতের উপর।
মেহেরুন নেছা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
” এইসব কথা কইতে এখন ইচ্ছা করতাছে না। এইডা জিগাইবার লাগি তুই এখন আসচ্ছ এইখানে।
“না দাদি। তোমার সাথে সময় কাটানোর জন্য আসছি।অনেকদিন হয় গল্প করি না।
” আইচ্ছা। তো বইসা রইছত ক্যা? গল্প কর!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আরশ আমতা আমতা করলো। মেহেরুন নেছাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে? এসব নিয়ে টানাপোড়ন করল নিজ মনে কিছুক্ষণ। পরে ভাবলো যা হওয়ার হবে এখন জিজ্ঞেস করে নেই।
“দাদি বড় ভাইয়ার জন্য না কি তুমি মেয়ে পছন্দ করে রাখছো?
” হু!
” মেয়েটা কে আমি কি জানতে পারি?
মেহেরুন নেছা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন আরশের দিকে। জিজ্ঞেস করলেন,” তোর মা তোরে এইখানে পাডাইছে তাই না।
“না দাদি মাম্মা আমাকে এখানে কেন পাঠাবে? আমি বাবা আর মাকে কথা বলতে শুনেছিলাম তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম। বলো না দাদি মেয়েটা কে?
মেহেরুন নেছা বললেন না। কথা কাটানোর চেষ্টা করলেন। আরশ বুঝল মেহেরুন নেছা কথা কাটানোর চেষ্টা করছেন।
” দাদি কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে না। আমি প্রমিজ করছি কাউকে বলব না। এটা তোমার আমার মধ্যে সিক্রেট থাকবে।
“হাছা কইতাছস! কাউরে কইবি না।
” সত্যি বলছি দাদি কাউকে বলব না।
হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন কাছে আসার জন্য। আরশের কানে ফিসফিস করে কিছু বললেন। আরশ অবাক হয়ে মেহেরুন নেছার দিকে তাকালো।
“আমি যা শুনছি এটা সত্যি?
” শুউউউ! আস্তে কডা ক। কেউ হুইনা লইবো। এইডা যদি ফাঁস হয় আমি বুইঝা লইমু তুই এইডা ফাঁস করছত।
“আরে দাদি চিল। আমি কাউকে বলব না। এটা আমার তোমার সিক্রেট!
নাজমিন বেগমের বোন বলেছিলেন ৩:০০ টার মধ্যে চলে আসবেন কিন্তু এখন বাজে ৫:০০ টা উনার এখনো দেখা সাক্ষাৎ নেই। গত পাঁচ মিনিট ধরে উনাকে কল দিচ্ছেন রিং হচ্ছে কিন্তু, কেউ কল ধরছে না। নাজমিন বেগম আবার উনার বোনকে কল দিলেন। রিং বাজতে বাজতে এবার ও কল কেটে গেল।
চিন্তায় নাজমিন বেগমের ঘাম ছুটে গেল। কোনো বিপদ- আপদ হয়নি তো উনার বোনের। কিছুক্ষণ পর কল আবার দিলেন। এবার কল রিসিভ করলেন নাজু বেগম। নাজমিন বেগমের গলায় পানি আসলো।
“হ্যালো আপা! কোথায় তুমি?
” এসে গিয়েছি। আর পাঁচ মিনিটের রাস্তা।
“আমার বাসায় আসতে তোমার ত্রিশ মিনিট সময় লাগে আর তুমি দুই ঘন্টা ধরে কি করছিলে?
” আমি তো আধঘন্টা আগে বের হয়েছি। এসে গিয়েছি তোর বাসায়।
বলে ফোন কেটে দিলেন নাজু। নাজু কল কাটতেই নাজমিন বেগম ইসরাতের রুমের দিকে গেলেন। রুমের ভিতর ঝটপট ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন,” রেডি হয়ে গিয়েছিস দুটো?
ইসরাত বলল,
“আম্মু আমি রেডি কিন্তু নুসরাত এখনো রেডি হয়নি।
নাজমিন বেগম নুসরাতের দিকে তাকালেন। যে চিল মুড নিয়ে মোবাইল টিপছে। হঠাৎ নুসরাতের খেয়াল হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। যখন নাজমিন বেগমকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতে দেখলো এক লাফে বিছানা থেকে উঠে গেল। আলগোছে কাবার্ড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল।
নাজমিন বেগম জোরে শ্বাস ফেললেন। তিনি এই মেয়েকে নিয়ে কি করবেন?
” প্রয়োজনীয় যা কিছু আছে সব ব্যাগে ঢুকা। পরে ওখানে গিয়ে এটা খুঁজে পাচ্ছি না ওটা খুঁজে পাচ্ছি না,এটা বাসা থেকে আনিনি ওটা আনিনি বলিস না। ভালো করে চেক কর সব আছে কি না?
নাজু বেগম এসেছেন কিছুক্ষণ হলো। মেহেরুন নেছার সাথে বসে গল্প করছেন। দু-জনের গল্প জমে ক্ষীর হয়ে উঠেছে।
“তোর ছেলে দুটো আনলি না ক্যা?
” আর বল না খালা! ব্যবসার এতো কাজ এতো কাজ যে নাহিদের বাবা শ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না সাথে আমার নাঈমটাকে ও বসিয়ে দিয়েছেন উনার সাথে। আমার ছেলেটা রোগা হয়ে গিয়েছে এই কয়েকদিনে। নতুন আবার পেঁয়াজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন নাহিদের বাবা। কিন্তু যাকে দিয়ে পেঁয়াজের ব্যবসা করিয়ে ছিলেন সেই লোকটা সব পেঁয়াজ নিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছে।
” হায় আল্লাহ! নাজমিন আমাগো এই কথটা কয় নাই।
“খালা আমি এখন পর্যন্ত নাজমিনকে এই কথা বলেনি শুধু আপনাকে এই কথা বলছি।
মেহেরুন নেছা প্রচুর খুশি হলেন। কাউকে যে কথা বলেনি নাজু বেগম সে কথা উনাকে বলেছে এর থেকে খুশির আর কি বা হতে পারে?
” তোমাগো বড় ছেলেডার বিয়া কবে দিবা?
“এই তো দিয়ে দিব! ইনশাআল্লাহ পাত্রী খুঁজে পেলে।
নাজমিন বেগম কে ডাক দিলেন নাজু বেগম। নাজমিন বেগম আসার পর বললেন, ” কন্যা বেটিদের নিয়ে আয়! আমি বের হবো। বাসায় অনেক কাজ রেখে এসেছি।
নাজমিন বেগম বললেন,
“আরে আপা রাতের খাবার খেয়ে যাবে।
মেহেরুন নেছা ও বললেন আজ রাত থাকার জন্য। আগামীকাল যাবেন। কিন্তু নাজু বেগম রাজি হলেন না। তার বাসায় অনেক কাজ আছে। আজ থাকলে হবে না।
নাজমিন বেগম নুসরাত আর ইসরাতকে ডাকতে গেলেন।
” আপা বের হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি নিচে আয় দুটো।
নুসরাত বলল,
” আন্টি বাসার বাহিরে চলে গিয়েছে। আই মিন, ড্রয়িং রুম থেকে উঠে দরজা খুলে উনাদের গাড়ির কাছে চলে গিয়েছে।
নাজমিন বেগম বললেন,
“নাহ। আম্মার সাথে গল্প করছে। এক্ষুনি বের হয়ে যাবে বলেছে।
ইসরাত বলল,
” আরো একঘন্টা পর আমাদের ডাক দিও! কারণ তোমার বোনের গল্প আরো একঘন্টা পর শেষ হবে।
নাজমিন বেগম রাগী চোখে তাকালেন।
“নিজেদের ব্যাগ নিয়ে নিচে চল ফটাফট। এতো কথা বলবে না! আপা বলেছে বের হয়ে যাবে।
নুসরাত আর ইসরাত কাচুমাচু করে লাগেজ নিয়ে নিচে এলো। নাজু বেগমের সাথে কুশল-বিনিময় করে চুপচাপ উনার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
মেহেরুন নেছা জিজ্ঞেস করলেন,
” তুমি এখনো আগের মতো মুরগী পালন করো!
নাজু বেগম বললেন,
” হ্যাঁ! আমার ১৫টা মুরগী,২ মুরগা আর ৪০টা মুরগীর বাচ্চা আছে। রোজ বারোটা করে ডিম দেয়। আর বাসায় এতো মশার উৎপাত কি বলব খালা?
মেহেরুন নেছা খুব মনোযোগ সহকারে নাজু বেগমের গল্প শুনছেন। ইসরাত নুসরাত বিরক্ত হলো।
“আন্টি তোমার মুরগী কয়টা ডিম পেরেছে মশায় কয়টা ডিম পেরেছে আমরা জানতে ইচ্ছুক না। কখন যাবে তোমার বাসায়। দেরি হয়ে যাচ্ছে না এখন।
” আরে দাঁড়া, গল্পটা শেষ করতে দে?
রাগে নুসরাতের নাকের পাটা ফুলে উঠলো। একে তো দুনিয়ার আগে রেডি করে রেখেছে তারপর এখানে এনে দাঁড়া করিয়ে রেখেছে। আর এখন মশায় কয়টা ডিম পেরেছে তার গল্প শুনতে হচ্ছে।
এরমাঝে উনাদের গল্পে এসে যোগ দিলেন ঝর্ণা, রুহিনি,আর লিপি বেগম। নাজু বেগম আরো উৎসাহ পেয়ে উনার বড় ছেলের কথা গল্প করতে লাগলেন। রাগে নুসরাতের মাথা কিলবিল করে উঠলো। ইচ্ছে করলো নাজু বেগমের মাথায় কিছু দিয়ে আঘাত করতে।
ইসরাত বুঝে গিয়েছে সন্ধ্যার আজানের আগে উনাদের গল্প শেষ হবে না। তাই সোফায় বসে মোবাইল স্ক্রল করতে শুরু করলো। আর নুসরাত রাগ সামলানোর জন্য কিচেনে ঠান্ডা পানি খেতে গেল। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে বোতলের মুখ খুলছিল নুসরাত। নিজের সাথেই কথা বলল,
“এই মহিলা এতো কথা বলে কেন?
” তুই ও তো সেইম। সারাক্ষণ পটর পটর করিস আমরা কিছু বলি তোকে?
নুসরাত বিড়বিড় করলো,
“এইডা আবার কোথায় থেকে উদয় হলো। এখন আবার জ্ঞান দিতে শুরু করবে। উফ কখন যে যাবো এখান থেকে।
” কি বিড়বিড় করছিস?
“কিছু না।
” আমি শুনেছি তুই কিছু বলছিলি।
“শুনতে পেয়েছেন যখন, তখন জিজ্ঞেস করছেন কেন?
আরশ ভ্রু বাঁকালো। নুসরাতের দিকে এগিয়ে গেল। নুসরাত মনে করল থাপ্পড় মারবে কিন্তু তেমন কিছু হলো না। নুসরাতের পাশ ঘেষে আরশ শেল্ফের কাছে গেল। কফির বোয়াম হাতে নিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো।
” কি খুঁজছেন?
“ওই যে,
” কি?
আরশ খুঁজতে খুঁজতে উত্তর দিল,
“ওই যে, যেটার মধ্যে কফি রান্না করে ওইটা।
” আরে আপনি পাত্র খুঁজছেন।
” হ্যাঁ ওইটাই! কোথায় রাখা দেখতো।
“আমি কেন দেখব? আপনার দরকার আপনি খুঁজে নিন।
” এতো বেশি কথা বলছিস কেন? খুঁজে দিবি না সোজা বলে দেয়। এতো তর্ক করার কি আছে? তোর ভবিষ্যৎ তো পুরো অন্ধকার। তোর যে কি হবে এক আল্লাহ জানে ভালো !
নুসরাত ভেংচি কাটলো আরশকে। আরশ দেখে ও না দেখার ভান করলো। নুসরাত কিচেনের নিচের শেল্ফ থেকে কফি তৈরি করার পাত্র বের করে দিল।
আরশ বলল,
” কফি করে দে?
“পারব না। আমি এখন খালার বাসায় যাব আর আপনি আমাকে রান্না করার জন্য বলছেন। কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে।
আরশ নুসরাতের উপর থেকে নিচের দিকে তাকালো। আঙুল তুলে নুসরাতের কাপড় দেখিয়ে বলল,” তুই এই বেষ নিয়ে মেহমানের বাড়ি যাবি?
“এতে খারাপ কি আছে? এভাবে বলছেন কেন?
” এই গেঞ্জি আর প্যান্ট পড়ে তুই মানুষের বাড়ি যাচ্ছিস ছি্হ ছি্হ।
“ইট’স নট গেঞ্জি ইট’স টি-শার্ট। আর এখানে ছি্হ বলার কি আছে? ইট’স মাই ফ্যাশন।
” নুসরাত ইংরেজির বেজ্জতি করিস না। পারিস না তাহলে বলতে যাস কেন?
“আমি কোথায় ভুল বললাম? সঠিকই তো বললাম। আসলে কি জানেন? আপনি নিজেই পারেন না! আবার আমাকে বলছেন ভুল ইংরেজি বলছি। আমি তো দেখছি আপনার ভবিষ্যৎ পুরো অন্ধকার। লাইট জ্বালিয়ে ও আলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আরশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল নুসরাত। আরশ তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েকে একটা কথা বললে এই মেয়ে থাকে দশটা কথা শুনিয়ে দেয়। আজব মেয়ে মানুষ!
ইসরাতের কথা মতো নাজু বেগম সন্ধ্যার নাস্তা খেয়ে বের হলেন নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।
নুসরাত বলল,
” শেষ পর্যন্ত আমরা যাচ্ছি।
ইসরাত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। নাজু বেগম সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। মেহেরুন নেছা আবার আসার জন্য বললেন। নাজু বেগমের সেই এক কথায় নাহিদের আব্বু ব্যবসার কাজে এতো বিজি যে শ্বাস ফেলার সময় নেই। উনার এতো এতো কাজ উনি সময়ই বের করতে পারছেন না। আজ কত কষ্ট করে এখানে আসলেন। নুসরাত আর ইসরাত জোরে শ্বাস ফেলে উনাদের ওখানে রেখেই হাঁটা ধরলো। নাজু বেগমের কথা শেষ হলে এমনিতেই আসবেন।
জায়িন মাত্র গাড়ি গ্যারেজে রেখে বাসার দিকে আসছিল তখন নুসরাত আর ইসরাতের সাথে দেখা হয়। জায়িন নুসরাতকে জিজ্ঞেস করল, ” কোথায় যাচ্ছ, তোমরা এই সন্ধ্যেয় বেলা?
নুসরাত কিছু বলার পূর্বেই ইসরাত নুসরাতকে টেনে নিয়ে চলে গেল।
“আবে ইয়ার, ভাইয়া কি জিজ্ঞেস করেছে শুনতে পাসনি?
” শুনতে পেয়েছি।
“তাহলে টেনে নিয়ে এলি কেন? প্রশ্নের উত্তর দিতে দিলি না কেন? বেয়াদব বলবে তো!
” ওরে আমার আদবী মেয়ে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এর সাথে কথা বলবি না। এই বেডার থেকে দূরে থাকবি। শালা প্রচুর খারাপ!
নুসরাত চোখ বড় বড় করে বলল,
“সত্যি!
” হু।
নাজু বেগম আরো দশ মিনিট পর আসলেন বিদায় নিয়ে। গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে তাড়া দিলেন তাড়াতাড়ি গাড়ি চালানোর জন্য উনার বাসায় অনেক কাজ আছে। নুসরাত আর ইসরাত দু-জনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
“আম্মু ওরা কোথায় গিয়েছে?
” কারা!
“নুসরাত আর ইসরাত! আর বাসা এতো ঠান্ডা কেন?
লিপি বেগম সব খুলে বললেন। জায়িন মনোযোগ সহকারে সবকিছু শুনলো। তারপর বলল,” চাচা রাগ করে ওদের সামনে না যেতে বলায় ওরা ওদের খালার বাসায় চলে গেল। এদের মাথায় কি গিলু নেই? রাগের মাথায় বলায় চলে যাবে।
” চলে গিয়েছে যখন কয়েকদিন থেকে আসুক! আর তুই তো জানিস, আরশ ছোট টাকে মোটে ও সহ্য করতে পারে না। আমার ছেলেটা কয়েকদিন আরামে থাকবে।
জায়িন আর কিছু বলল না। শুধু ভাবলো ইসরাতকে ভদ্র ভাবলে ও মেয়েটা ভদ্র না। দু-জনই সেইম।
“আম্মু কিছু খেতে দাও!
“আমি নিয়ে আসছি। তুই ফ্রেশ হয়ে আয় ততক্ষণে।
রাত৭:০০। কিছুক্ষণ আগেই তারা নাজু বেগমের বাসায় পৌঁছেছে। বর্তমানে তারা নাঈমের রুমে রেস্ট করছে। পিছন থেকে নুসরাতের মাথায় কেউ টোকা দিল। নুসরাত আউচ বলে চিৎকার করে উঠলো।
” এই কোন শালারে আমাকে মারল?
“ছি্হ ছিহ্ মুখের ভাষা দেখে আমি শিহরিত। কি সব লেঙ্গুয়েজ তুই ইউজ করিস কালি?
” নিজের মুখের ভাষা আগে ঠিক কর! তারপর আমার মুখের ভাষা দেখে শিহরিত হোস!
” কালি এসব কি বলে!
” কানে আজ কাল কম শুনছিস মনে হয়।
ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল ছেলেটা ,
“আমি ওর বড় ভাই ও আমার সাথে কীভাবে তুই তোকারি করছে দেখ ইসরাত?
ইসরাত ধমক দিল নুসরাতকে। নুসরাত পাত্তা দিল না ইসরাতের ধমক।
“এই তোর ইন্সট্রাগ্রামের পাসওয়ার্ড টা দে তো নুসরাত ?
” দিব না।
“দে বলছি!
” দিব না, দিব না, দিব না। কি করবি তুই?
ছেলেটা ঠাস করে থাপ্পড় মারলো নুসরাতের পিঠে। নুসরাত ও দুটো ঘুষি মারলো ছেলেটার পিঠে। ছেলেটা নুসরাতের পায়ে লাথ মারলো। ইসরাত এদের বাচ্চাদের মতো মারামারি হা করে বসে দেখতে লাগলো।
ইসরাত বলল,
“এই মারামারি বন্ধ করো, দুজনে! নাহিদ, তুই কি দিন দিন ছুটো হচ্ছিস? পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছিস নুসরাতের সাথে।
নুসরাত বলল,
” ও আমাকে একটা বেশি মারছে। সমান সমান না হলে আমি থামব না।
নাহিদ বলল,
” বড় ভাই একটা থাপ্পড় মারলে ঘুরিয়ে মারতে হয় না জানিস না। এই কথা তোকে কেউ বলেনি?
নুসরাত বলল,
“কিসের বড় ভাই তুই?
নাহিদ আস্তে করে থাপ্পড় মারতে গিয়ে নুসরাতের গালে বেশি জোরে থাপ্পড় মেরে ফেলল। নুসরাত ছলছল নয়নে নাহিদের দিকে তাকিয়ে দুটো কিল নাহিদের পিঠে বসিয়ে দিল। নাহিদ ঘুরিয়ে মারার আগেই নুসরাত চিৎকার করে বলল,” আন্টি তোমার ছেলে আমাকে মারছে? দেখে যাও এসে! আমার মতো নিষ্পাপ বাচ্চাকে মারতে মারতে মেরে ফেলবে তোমার ছেলে।
নাহিদ বলল,
“কে নিষ্পাপ বাচ্চা? দেখি দেখি মুখটা দেখি।
নুসরাত নিজের মুখে দুই-হাত রেখে চোখ ঝাপটে বলল,
” এই যে দেখ আমি নিষ্পাপ বাচ্চা!
নাজু বেগম রান্না ঘর থেকে দৌড়ে আসলেন। এসে নাহিদের বাহুতে থাপ্পড় মারলেন। বিরক্ত হয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুই কি বাচ্চা? বাচ্চা মেয়েটাকে মারছিস কেন?
নাহিদ বলল,
” আম্মু ও আমাকে একটা বেশি মারছে। আর এখন তোমার কাছে বিচার দিচ্ছে। আর ও বাচ্চা! তুমি হাসালে আমায়!
নাজু বেগম বললেন,
” তো কি হয়েছে? ছোট বোন একটা মারলে কি তুমি মরে যাবে? আর ও তো বাচ্চাই,তোমাদের দু-জনের তুলনায় ও তো ছোট।
কথাটা বলে নাহিদের পিঠে আরেকটা থাপ্পড় বসালেন। নাহিদ আম্মু বলে চিৎকার করলো। নাজু বেগম বললেন,
” কি?
নাহিদ বলল,
“তুমি আমার মা হতেই পারো না। তুমি এই কালির মা।
নুসরাত ভেংচি কাটলো নাহিদ কে। নাজু বেগম বললেন,
” আমি তো তোর মা এটা কে বলেছে? তোকে আমি দত্তক নিয়েছি।
নাহিদ করুন চোখে ইসরাতের দিকে তাকালো।
“দেখলি ইসরাত দেখলি, আম্মা সবসময় আমার সাথে এরকম করে। আমি থাকব না আর এই ঘরে।
নাজু বেগম বললেন,
” তোকে কে বলেছে থাকতে যা বের হয়ে যা এই ঘর থেকে।
নাহিদ রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ইসরাত নাজু বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আন্টি তুমি ওর সাথে এটা ঠিক করনি। ছেলেটা কষ্ট পেয়েছে!
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৫
” দূর! রাগ পড়লে এমনিতেই চলে আসবে। কিসের কষ্ট পাবে? সব ওর নাটক!
বলে নাজু বেগম নিজের কাজে চলে গেলেন। নাজু বেগম যেতেই রুমে আসলো নাহিদ। এসে নুসরাতের মাথায় থাপ্পড় মেরে জিহ্বা বের করে নুসরাতকে ভেঙ্গিয়ে দৌড়ে চলে গেল রুম থেকে।