প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৭
জান্নাত নুসরাত
অফিসের কর্মচারীরা একত্রে বসে গল্প করছিল। গল্পের মূলবিষয় হচ্ছে আরশ এবং মিস ডায়নার ভিতরে কিছু চলছে। একজন কর্মচারী বলল,” মিস ডায়না কীভাবে স্যারের দিকে তাকিয়ে তাকেন? একবার খেয়াল করে দেখবেন। উনি স্যারকে মনে হয় চোখ দিয়ে গিলে খাবেন।
দ্বিতীয় কর্মচারী বলল,
” হুম! আরেকটা বিষয়, স্যারের রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেন ডায়না ম্যাম। অন্য কেউ তো স্যারের কেবিনে যাওয়ার আগে উনাকে বলে যেতে হয়। নিজেকে স্যারের বউ ভেবে বসে আছেন ডায়না ম্যাম।
আরেকজন বলল,
“স্যার সবার সাথে কি রুড ব্যবহার করে আর ডায়না ম্যামের সাথে কী ভাবে হেসে কথা বলে তা আপনারা খেয়াল করে দেখবেন?
প্রথম কর্মচারীটি বলল,
” না তো আমি কখনো দেখিনি স্যারকে ডায়না ম্যামের সাথে হেসে কথা বলতে।
তৃতীয় কর্মচারীটি বলল,
“আপনাকে দেখিয়ে হেসে কথা বলবে। সেদিন আমি দেখেছি ডায়না ম্যামের সাথে কথা বলছিল আর মুচকি মুচকি হাসছিল।
প্রথম কর্মচারী বলল,
” তাই নাকি?
তৃতীয় কর্মচারী বলল,
” হু!
একটা মেয়ে দৌড়ে আসলো। যেখানে গোল হয়ে বসে সবাই গল্প করছিল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“কি হয়েছে রুবা? এভাবে দৌড়ে আসলেন কেন?
” টাইম খেয়াল করেছেন। ৯:৩০ বাজে স্যার করিডোরে এসে গিয়েছেন। আর আপনারা কাজ বাদ দিয়ে গল্প করছেন এভাবে গোল হয়ে বসে।
আরশ আসার কথা শুনে সবাই নিজ নিজ ডেস্কে দৌড়ে গেল। নিজেদের ফাইলগুলো হাতে নিয়ে চেক করার ভান করলো। আরশ মেইন ডোর খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই সালাম দিল। সালামের উত্তর দিয়ে সামনে যাওয়ার সময় রুবা নামের মেয়েটার হাতের ফাইলের দিকে চোখ পড়ল। মেয়েটার কাছে গিয়ে আরশ ফাইলটা সোজা করে দিল আর বলল,” ফাইল দেখার অভিনয়টা ঠিক আছে কিন্তু ফাইলটা উল্টো না ধরলে ধরা পড়তেন না আমার কাছে মিস।
তারপর সবার দিকে তাকিয়ে আরশ বলল,
“আমি আপনাদের এখানে রাখিনি আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে গসিপ করার জন্য। কোনো কাজ না করে বসে বসে বেতন নিবেন সেটা তো আর হবে না। কাজে মনোযোগী হোন! আর প্রোডাক্ট গুলো ঠিকভাবে প্যাকেজিং করুন। আজকাল পণ্যের অনেক বেড রিভিউ আসছে। আর মিস রুবা ফাইলটা চেক করে তাড়াতাড়ি আমার কাছে নিয়ে আসুন।
” ইয়েস স্যার!
আরশ নিজের কথা শেষ করে কেবিনে চলে গেল। সবাই মুখ কালো করে নিজ নিজ কাজ করতে গেল।
অন্যদিকে,
নাহিদের চাচাতো বোনের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে নুসরাত ও ইসরাতের৷ নুসরাত আর ইসরাত নাহিদদের বাসার করিডোরে হাঁটছিল। নাহিদের চাচাতো বোন ওদের হাঁটতে দেখে নিজের রুমে নিয়ে গেল। সেখানে ওর মা নাছিমা আক্তার ছিলেন।
নাছিমা আক্তার বললেন,
” নাস্তা করা শেষ?
নুসরাত বলল,
“জি!
নাছিমা বললেন,
” লাবণ্য তুই যে আচার তৈরি করেছিলি তা ওদের খেতে দে?
ইসরাত বলল,
“আন্টি আমি আচার খাই না।
নাছিমা বললেন,
” তুমি না খেলে ও খাবে। দে তো লাবণ্য নুসরাতকে দে।
লাবণ্য মেয়েটা আচার এনে দিল। নুসরাত ভদ্রতা দেখিয়ে না বলল। নাছিমা কিছুটা জোর করতেই নুসরাত বলল,
“এতো করে যখন বলছেন, তখন একটু খাচ্ছি। আপনি জোর করার জন্যই খাচ্ছি।
ইসরাত নুসরাতের কানেকানে বলল,
” জিহ্বা সামলা! মানুষ রাক্ষস বলবে! বেশি খাস না!
নুসরাত চুপচাপ বসে আচার খেতে লাগলো। নুসরাতের আচার খাওয়া শেষ হতেই নাছিমা আরো এক বাটি আচার দিলেন নুসরাতকে। নুসরাত মহিলার উপর প্রচুর খুশি হলো।
পাম দিল নাছিমাকে, “আপনি অনেক কিউট আন্ট।
” দেখ মেয়ের কান্ড এসব বলতে হয় নাকি।
“সত্যি বলছি আন্ট আপনি অনেক কিউট।
নাছিমা লজ্জা পেলেন। তারপর হালকা হেসে বললেন,
” আমার বোন লন্ডন থেকে এই বেডশিট টা পাঠিয়েছেন।
ইসরাত বলল,
“ওহ!
নাছিমা বললেন,
” লাবণ্যকে লন্ডন থেকে অনেকগুলো ড্রেস আর জুতাে দিয়েছেন। এই লাবণ্য ওদের দেখাতো।
নুসরাত বলল,
“না না দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমরা বুঝতে পারছি!
নুসরাতের কথা কানে তুললেন না নাছিমা। লাবণ্যকে কাবার্ড থেকে বের করে দেখাতে বললেন। লাবণ্য বের করে দেখাতে শুরু করল।
লাবণ্য বলল,
” এটা আমার খালামনি আমেরিকা থেকে দিয়েছে। এটা আমার মামাতো বোন লন্ডন থেকে দিয়েছে। আর এই ব্যাগগুলো সব বাহির থেকে আসছে।
নুসরাত বলল,
“জি বুঝতে পারছি।
লাবণ্য আবার বলল,
” এই পার্সটা আমার খালা আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছে।
লাবণ্য পার্স খুলতেই সেখান থেকে স্যানেটারি ন্যাপকিন বের হয়ে আসলো।
ইসরাত নুসরাতের কানে কানে বলল,
“এই সব দেখে তো মনে হচ্ছে লোকাল বাজার থেকে কিনেছে।
নুসরাত বলল,
” আরে কথা বলিস না। শুধু শোন আর হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলা!এদের কথা যতক্ষণ শুনবো এরা ততক্ষণ আমাকে আচার খাওয়াবে।
ইসরাত তাজ্জব বনে তাকিয়ে রইলো। আচার খাওয়ার জন্য মেয়েটা চুপচাপ বসে এদের কথা শুনছে।
লাবণ্য বলল,
“আরে, প্যাড পার্সের ভিতর কবে রেখেছিলাম ভুলে গিয়েছি। আসলে আমাদের প্যাডগুলো ও লন্ডন থেকে এসেছে।
লাবণ্যের কথা শুনে ইসরাত প্যাডের দিকে তাকালো। যেখানে সেনোরা লেখা। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নুসরাত চিমটি কাটলো। নুসরাতের দিকে ইসরাত ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নুসরাত ইশারা করে বলল কিছু না বলতে।
লাবণ্য বলল,
” আসলে আমাদের কাবার্ড ভর্তি প্যাড। দাঁড়াও তোমাদের দেখাচ্ছি।
ইসরাত বলল,
“না না দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমরা বুঝতে পারছি আপনাদের সব জিনিসি বিদেশি। আমার একটু কাজ আছে। আমি যাচ্ছি! পরে আসবো আপনাদের ঘরে।
বলে ইসরাত রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুম থেকে বের হয়ে জোরে শ্বাস ফেলল।
নুসরাত আচারের বাটি হাতে নিয়ে বলল,
” আসলে আমার ও একটা কাজ আছে। আমি আচারের বাটিটা নিয়ে যাই। খাওয়া শেষ হলে এনে দিয়ে যাব।
নাছিমা বললেন,
“আরে বস! গল্প করি।
নুসরাত বলল,
” পরে আসবো আন্ট। এখন যাই।
কথাটা বলে নুসরাত দৌড়ালো। মনে মনে ভাবল মনে হয় নতুন ধনী হয়েছে। তাই এতো টাকার কথা বলে। আর বার বার মেনশন করে এই দেশ থেকে আসছে ওই দেশ থেকে আসছে।
নুসরাত আর ইসরাত নাঈমের রুমে আসতেই নাহিদকে দেখল বিছানায় শুয়ে থাকতে। নুসরাত নাহিদের পিঠে কিল মেরে বলল,”আ্যই উঠে বস!
নাহিদ বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ” কিরে কালি! কি হয়েছে?
নুসরাত বলল,
” ফাতেমা আপ্পি কল দিয়েছিল।
নাহিদ ফাতেমার কথা শুনে এবার নড়েচড়ে বসলো। নুসরাতের দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকালো।
“কি বলেছে?
” আপি বলেছে উনার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
” না এ হতে পারে না। ফাতেমা আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারে না।
” যা সর এখান থেকে! তোকে আবার কখন ধোঁকা দিল।তোর মতো প্লে-বয়কে যে আপ্পি পছন্দ করেছে এটাই অনেক।
” ফাতেমার বাচ্চাকে বল ব্লক খুলতে। ওর সাথে আমার কথা আছে।
ইসরাত ওদের দু-জনের কথায় ফোড়ন কেটে বলল,
” তুমি না, তানিয়াকে ভালোবাসো। তাহলে এখন মেয়েটার পিছনে পড়লে কেন?
নুসরাত বলল,
“ফাতেমা তোর থেকে এক বছরের বড়। কোচ সারাম কার, বারি বেহেন কা লেহাজ কার!
নাহিদ বলল,
” কিন্তু ফাতেমা কে আমি ভালোবাসি।
ইসরাত বলল,
“তোমার মোবাইলটা একবার দাও?
নাহিদ বলল,
” কেন?
নুসরাত বলল,
” তুই যদি ফাতেমাকে ভালোবাসিস তাহলে তোর মোবাইলে এতো মেয়ের পিক কি করে?
নাহিদ বলল,
” আরে এদের সাথে আমি ফ্লার্ট করি।
নুসরাত বলল,
“যাহ শালা, বারো ঘাটে নৌকা চালাস ? আর বলিস ওকে ভালোবাসিস।
নাহিদ কথাটা কাটিয়ে দিল।
” প্লিজ, ফাতেমাকে বল ব্লক খোলার জন্য। আমি সিরিয়াস ওর বিষয়ে।
নুসরাত শুনল না নাহিদের কথা। নাহিদ মুখ কাঁদো কাঁদো করে বলল, ” বইনা প্লিজ,,,,,।
নুসরাত বলল,
“পারব না।
” প্লিজ বইন!
“কি?
” ফাতেমা আপ্পির বিষয়ে।
“ফাতেমা কে?
নাহিদের ধর্য্যের বাদ ভেঙে গেল। নুসরাতের পিঠে থাপ্পড় মেরে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নুসরাত ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ” দেখলি, আমাকে কীভাবে মেরে চলে গেল?
ইসরাত বলল,
” তুই সুযোগ পেলে আরো দুটো বেশি মেরে দিস। এখন আর কানের গোড়ায় ঘ্যান ঘ্যান করিস না।
নুসরাত বলল,
“তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি?
ইসরাত বলল,
” হ্যাঁ বলতে পারলাম! নাটক কম কর বইন।
রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জায়িন আইস্ক্রিম পার্লারে আইস্ক্রিম আনতে গিয়েছে। ডেলা গাড়িতে বসে যান্ত্রিক গাড়ি গুলোর চলাচল দেখছে। হঠাৎ করে চিনা পরিচিত কাউকে গাড়ির পাশ দিয়ে যেতে দেখল ডেলা।
“আশিক!
ছেলেটা পিছন ঘুরে তাকালো। জানালা দিয়ে মাথা বের করে ডেলাকে তাকাতে দেখে ছেলেটা নিজের দিকে আঙুল দিয়ে দেখাল আমি। ডেলা হ্যাঁ ভঙ্গিতে মাথা নাড়াতেই আশিক গাড়ির দিকে এগিয়ে আসলো।
” হ্যালো ডেলা! আমাকে কি ডাকছিলে?
ডেলা এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খোঁজলো তারপর বলল, “ওখানে টুমি ছাড়া টো আর কেউ ছিল না। টাই টোমাকেই তো ডাকবো আর কাউকে টো ডাকবো না।
” ওহ! কি করছো তুমি? আর এখানে গাড়ি নিয়ে কি করছিলে?
“কিছু না। গাড়িটে একা বসে বোরিং ফিল করছিলাম।
” ওহও! আমি কি তোমাকে কম্পানি দিতে পারি।
“ইয়াহ! অভিয়েসলি!
” এই গরমে গাড়ির বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। গাড়িতে বসার জন্য বলবেন না। আসলে বসে গল্প করি। তাহলে মজা আসবে গল্প করতে।
“হ্যাঁ হ্যাঁ আসো না আসো! ভিটরে আসো!
ডেলা গাড়ির পিছনের দরজা খুলে দিল। নিজে ও ফ্রন্ট সিট থেকে নেমে গিয়ে পিছনে বসলো। আশিকের সাথে গল্প করতে শুরু করলো।
” টোমার জিএফ আছে।
“না, আমি পিওর সিঙ্গেল।
” ওহো। কাউকে পছন্ড কর!
” তেমন কেউ নেই।
” কি করটে টোমার ভালো লাগে?
“ট্রাভেলিং করতে।
” রিয়েলি। আমি অনেক পছন্ড করি ট্রাভেলিং করতে।আমাদের বেশ জমে যাবে মনে হচ্ছে।
জায়িন এরমধ্যে আইস্ক্রিম নিয়ে আসলো। আশিকের সাথে ডেলাকে কথা বলতে দেখে কিছুটা জেলাস হলো। আইস্ক্রিম এগিয়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো জায়িন।
কিছুটা রুড হয়ে জায়িন বলল,
“আমি কারোর ড্রাইভার না। একজন সামনে আসো।
” আরে, একডিন আমাডের ড্রাইভার হলে টোর কি জাট চলে যাবে। একডিনের জন্য ড্রাইভার হয়ে যা। চিল ব্রো, চিল।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৬
হালকা চাপড় মেরে ডেলা জায়িনকে বলল।
জায়িন বিরক্ত হয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। আর পিছনে আশিক আর ডেলা গল্প করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর পর ডেলার হা হা করে হাসির শব্দ ভেসে আসলো পিছন থেকে। হাসতে হাসতে দু-একবার আশিকের গায়ে থাপ্পড় মেরে বসলো ডেলা। তারপর স্যরি বলল! আবার হাসতে হাসতে থাপ্পড় মেরে বসলো আশিকের গায়ে।