প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৯

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৯
জান্নাত নুসরাত

ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য নুসরাত আর ইসরাত আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলো। দুজন দুই ইউনিভার্সিটি তে পড়ায় রাস্তা ও আলাদা। নুসরাত রিকশা দেখে ইশারা করলো। সচারাচর তাদের বাসার আশে পাশে রিকশা পাওয়া যায় না।
“মামা আখালিয়া যাবেন?
” অয় যাইমু!
” কত টাকা ভাড়া নিবেন?
“১০০ টেখা দিলাই ও!
” না মামা, ৮০ টাকা দিব যাবেন।
“আচ্ছা আইও। আর কিতা কইতাম।
নুসরাত রিক্সা উঠে বসলো। ইরহাম দৌড়ে এসে রিকশা উঠলো।

” তুই আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিস কেন?
“কোথায় যাচ্ছিলাম। শুধু রিকশায় উঠে বসে আছি। আমি তোর জন্য রিকশায় বসে অপেক্ষা করছিলাম।
“বেইমান! আমি যদি আরো দু-মিনিট লেট করতাম তুই আমাকে রেখে চলে যেতি তাই না।?
” জানিস যখন তাহলে জিজ্ঞেস করছিস কেন?
ইরহাম রিকশা ওয়ালা মামার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”মামা আপনি রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আসলে আমি তোমাতানোর মাইর দেখিয়ার। যে সুন্দর করি তুমি তাইন মাইর কররায়।
” আমদের ঝগড়া দেখা বন্ধ করে রিকশা চালান মামা।আর তুই, তুই কত লেট করিস কখনো তোকে রেখে আমি কলেজে বল ভার্সিটিতে বল গিয়েছি? আমি তোর জন্য অপেক্ষা করতাম না।
” আসলে কি জানিস? এই আমি কারোর জন্য অপেক্ষা করি না সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করে। হিজাব বাঁধা তাই চুল ঝাড়া দিতে পারলাম না।
ইরহাম নুসরাতের কাঁধে ঘুষি মারলো। ঘুষি খেয়ে নুসরাত হাসতে লাগলো।
“তোর থেকে বেশি জোর দিয়ে আমি ঘুষি মারতে পারি। দেখবি..
” না বইন, দেখব না। এখন দেখার ইচ্ছে নেই।

অন্যদিকে,
ইসরাতের ভার্সিটি বাসার উল্টো দিকে হওয়ায় মেইন রোডে যেতে কিছুক্ষণ হেঁটে যেতে হয়।
” ইসু বেবি! কতদিন পর তোমার সাথে দেখা। কোথায় ছিলে সোনা এতোদিন? সেদিন ওইদিকে গিয়ে তোমার বোনকে পেয়েছিলাম। তোমার বোন আমাকে পাথর দিয়ে আঘাত করেছিল বাবু।
“তোর নানির বাড়ি ছিলাম। আর আঘাত করেছে খুব ভালো করেছে। তোর মতো লাফাঙ্গাকে গণ দোলাই দেওয়া উচিত।

” ও মাই গুডনেস! তুমি সোনা আমার নানু বাড়ি গিয়েছিলে। এজন্য নানু সেদিন বলছিল আসলে সারপ্রাইজ পাবি!
ইসরাত ছেলেটার পেঁচালে বিরক্ত হলো। বুকের কাছে দু হাত ভাঁজ করে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে শীতল দৃষ্টিতে মায়াবি চেহারার ছেলেটার দিকে তাকালো। ইসরাতকে দাঁড়াতে দেখে ছেলেটা ও দাঁড়ালো।
“কি চাই তোমার? আমার পিছনে লেগে আছো কেন? অনেকদিন ধরে তোমার এসব ফালতু কথা সহ্য করছি।
ছেলেটা কাচুমাচু করে চোখ নিচের দিকে নামালো। ইসরাতের কথা উত্তর না দিয়ে চোখ এদিক সেদিক ঘুরাতে লাগলো।
” হাওয়া সব বেরিয়ে গেল। এতোক্ষণ তো খুব বেবি সোনা করছিলে। তখন লজ্জা লাগলো না। এখন নিচের দিকে চোখ কেন? চোখ উপরে তুলে আমার চোখের দিকে তাকাও। আর নাম কি তোমার?

“আরমান!
” ফুল নেইম বলো?
” আরমান শিকদার।
” তো আরমান শিকদার বয়স কত তোমার? আমি যদি ভুল না হই ২১ বা ২২ তাই না।
“জি ২১ বছর!
” আমার কত জানো?
” জি না?
” আমার ২৩+ বয়স, তোমার থেকে দু-বছরের বড়।
” বয়স দিয়ে কি হবে? আমি আপনাকে পছন্দ করি।
ইসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা হাসল। আরমান যা মুগ্ধ হয়ে দেখলো। এই হাসির প্রেমে তো সে পড়েছে। এই মেয়ে এতো সুন্দর করে কীভাবে হাসে?

” আরমান রাইট! তোমার আমার প্রতি যেটা সেটা হলো এট্রাকশন।
“কিন্তু আপনাকে আমি ভালোবাসি ইসরাত। সত্যি ভালোবাসি।
” উঁহু, ইসরাত নয়, নিজের বড় বোনের বয়সি একটা মেয়েকে নাম ধরে ডাকছ। সো বেড! আর যেন এ বিষয়ে কোনো কথা না শুনি! তুমি আমার ছোট বোনের বয়সী তাই একটা এডভাইজ দেই, পড়াশোনা কর, ভালো কিছু হও। তোমার ভাগ্যে যে সে নিজে হেঁটে তোমার কাছে আসবে। তোমাকে খুঁজে নিতে হবে না। সো এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনা মন দাও! আগামীকাল থেকে বাইক নিয়ে ঘুরতে যেন না দেখি। আর আমার পিছনে তো একেবারে না! মনে থাকে যেন।
ইসরাত ছেলেটার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ইসরাতের যাওয়ার পথে উদাস চোখে ছেলেটা তাকিয়ে তাকলো কিছুক্ষণ। চোখের কোনে জমা হওয়া পানি গুলো গড়িয়ে পড়ল। ছেলেটা মুছার প্রয়োজন অনুভব করলো না। পানি গড়াতে গড়াতে চিবুক বেয়ে পরে গেল নিচে। ইসরাত দৃষ্টি সীমানার বাহিরে যেতেই ছেলেটা পিছন ঘুরে দাঁড়ালো। মনে হলো মানুষ যাচ্ছে না, একটা প্রাণবিহীন দেহ হেঁটে যাচ্ছে।

শহিদ মিনার চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সাদিয়া,সৌরভি আর নুসরাত। ইরহাম তাদের সাথে যোগ দিলে সৌরভি ধমক মেরে বলল তুই কি মেয়ে? আমাদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। যা ওদিকে যা। ইরহাম মুখ কালো করে সেখান থেকে চলে গেল।
” আমার কিছু বলার ছিল তদের?
” হুম বল!
“আসলে না,
” বইন তুই আসল নকল বাদ দিয়ে মূল কথা বল।
“ফাতিন মেসেজ দিয়েছিল।
সৌরভি আর নুসরাত চোখ গুল গুল করে ঘুরে তাকালো সাদিয়ার দিকে। নুসরাত চোখের পাপড়ি ঝাপটে সৌরভির দিকে তাকালো। সেইম কান্ড সৌরভি করলো। তারপর মুখ বিকৃত করে বমি করার ভাব করলো। সাদিয়া এদের চাহনি আর ভাব ভঙ্গি দেখে বিরক্ত হলো।

” এভাবে তাকাবি না আমার দিকে? আর এরকম করছিস কেন? মনে হচ্ছে এক্ষুণি বমি করে দিবি দুটো।
নুসরাত নাক মুখ বিকৃতি করে বলল,
“হ্যাঁ করে দিব বমি। তোর কোন সমস্যা? আর শালা আবালটা কি বলেছে?
” নুসরাত তুই ওকে আবাল বলতে পারিস না।
সৌরভি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ওমা ভালোবাসা উতলে পরছে, শালা খান*টার সাথে। যখন সোহার জন্য তোকে ধোঁকা দিল তখন ওই খা*কাটা ছিল না। এই আমি আর নুসরাত ছিলাম! আর এখন বলছো নুসরাত তুই এভাবে বলতে পারিস না। বাবা গো কি দরদ?

” সৌরভি গালাগালি করবি না ফাতিনকে। ও আমায় সত্যিকারের ভালোবাসে।
নুসরাত থাপ্পড় মারল সাদিয়ার পিঠে। বিরক্তি নিয়ে বলল, “একশত বার গালাগাল করবে! কি করবি তুই? বালের ভালোবাসা! তোমার ভালোবাসার আমি গুষ্টি কিলাই।
সৌরভি নুসরাতকে থামানোর চেষ্টা করে বলল,
“নুসরাত থাম! সব খুলে বল সাদিয়া। এ টু জেড! ম্যানেজ করল কীভাবে শালা?
” গতকাল মেসেজ দিয়েছিল। আমি সিন করিনি। তো রাতের দিকে সিন করার সময় আপু এসে পেয়েছে ওর সাথে কথা বলছি। আপু রেগেমেগে আগুন! কেন ও এখন মেসেজ দেয়? আপুকে বললাম প্যাচ আপ করতে চায় আপু বলল আমাকে ফোন দিতে বল আমি ওর সাথে কথা বলব। আপুকে কি বুঝিয়েছে আমি জানি না? আপু বলেছে ঠিক আছে ভালো কিছু করতে পারলে সাদিয়ার সাথে সামনে কথা আগবে না হলে নেই।
সৌরভি কতক্ষণ সাদিয়াকে ভেঙ্গালো। সাদিয়া কিছু না বলে নুসরাতের দিকে তাকালো। যে নাক ফুলিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সাদিয়ার এই নিব্বি মার্কা কথা শোনে নুসরাতের রাগ লাগলো। কিন্তু, ওদের বা কি করার আছে? যার লাইফ সে ডিসাইড করবে সে কি করবে?

“এই নুসরাতের বাচ্চা তুই একে আমাদের গ্রুপে কি দেখে নিয়েছিলি? এর মাথায় কোন মগজ নেই। সব গোবরে ভরপুর! আর মগজ যদি থাকে ওটা পচে গিয়ে গোবর হয়ে গিয়েছে।
সাদিয়া রাগী চোখে তাকালো সৌরভির দিকে। সৌরভি সাদিয়ার রাগ পাত্তা দিল না। সাদিয়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে ফাতিন নামের ছেলেকে গালি দিল,” সা*য়াটা যখন ছেড়ে যাবে তখন তুমি বুঝবে মনু ভালোবাসা কারে কয়? শালা মাদা***** খপ্পরে পরে গিয়েছত তুই। আবার খাবি ধোঁকা তারপর কান্না করতে করতে আসবা তুমি সা*য়া আমাদের কাছে।
সাদিয়া ধীর গলায় বলল,

” এই সৌরভি আস্তে গালি দে মানুষ শুনতে পাবে।
সৌরভি গালি দিয়ে বলল,
” আমি মানুষের বাল ফালাই না মানুষ আমার বাল ফালায়। আমি গালি দিব! আমার মুখ! কার বাপের কি?
সাদিয়া বলল,
” ছি্হ,কি অশ্লীল মেয়েরে বাবা। মুখের ভাষা শুনে আমার গা রিরিরি করে উঠছে।
সৌরভি বলল,
” যাহ বাল গায়ে পানি ঢাল গিয়ে। তাহলে রিরি করার কমবে।
সৌরভি ভেংচি কাটল সাদিয়াকে। সাদিয়া জিহ্বা বের করে ভেঙ্গাল।
নুসরাত বলল,

“এই থাম তোরা! ওইটা আবালটা না?
সৌরভি জহুরি নজরে তাকালো। সৌরভি দূর হতে এমনভাবে তাকালো মনে হলো এখান থেকেই দাঁড়িয়ে স্ক্যান করে ফেলবে ফাতিনকে। ফাতিন নুসরাতদের দিকে তাকাতেই নুসরাতের সাথে আই কন্টাক্ট হলো। নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে এমনভাবে তাকালো যেন এখান থেকে আস্তো কাঁচা চিবিয়ে খাবে ফাতিনকে। ছেলেটা থতমত খেয়ে অন্য দিকে তাকালো।

নুসরাতদের পাশ দিয়ে দুটো মেয়ে যাচ্ছিলো। তাদের হালকা কথার শব্দ নুসরাতদের কানে আসলো। তাদের কথোপকথন ছিল এমন যে সামনে সাদা রঙের শার্ট পরা ছেলেটার সাথে আঁখির তিন মাস রিলেশন ছিল। বাকি কথা শোনা গেল না, কারণ মেয়েগুলো দূরে চলে গেল। সৌরভি পরের কথা শোনার জন্য কান পেতে মেয়েগুলো সাথে হাঁটা শুরু করেছিল। নুসরাত পিছন থেকে এসে হাত চেপে ধরে সৌরভিকে নিয়ে এসে বেঞ্চে বসালো।
সাদিয়া কান্না করে দেবে এমনভাব! কিছু বললেই টুকুস করে চোখ থেকে পানি পড়ে যাবে। নুসরাত আর সৌরভির কষ্ট হওয়ার কথা থাকলে ও তাদের একটু ও কষ্ট হচ্ছে না। একবার সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে দু-জন দুজনের মুখের দিকে তাকাল। তারপর আকাশ পাতাল ফাটিয়ে হু হা করে হেসে দিল। যারা নুসরাতদের আশেপাশে ক্যাম্পাসে হাঁটছিল তারা ফিরে ফিরে তাদের দিকে তাকালো। এসবে ধ্যান নেই নুসরাত আর সৌরভির। দুজন পারলে হাসতে হাসতে এখানে শুয়ে পড়ে।

” ওর আঁখির সাথে রিলেশন ছিল ও আমায় বলেই নি?
আজ বাসায় গিয়ে আমি মেসেজ দিব কি গো আঁখির বি-এফ?
নুসরাত আর সৌরভি আরো এক দফা হেসে দিল সাদিয়ার এসব আউল ফাউল কথা শোনে। মানুষ কি লেভেলের বোকা, গাঁধা হলে ছেলেটা বারো বাতারি জেনেও তার সাথে রিলেশন করে? আবার তার সাথে ব্রাকআপ না করে কী সব প্রশ্ন করবে বলছে?
“তোর মতো মগজ বিহীন প্রাণী আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। মানুষ কি লেভেলের গাঁধা হতে পারে তোকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। এতো বড় গাঁধী তুই!

অন্যদিকে,
” আম্মু আমি ডেলাকে বিয়ে করে নিয়েছি!
লুৎফা বেগম কিছুক্ষণ ছেলের দিকে তাকিয়ে মমোর উপর ভর ছেড়ে দিলেন। অতিরিক্ত শকড হওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। মমো আম্মু বলে চিৎকার করে উঠলো। মমোর চিৎকারে সৈয়দ বাড়ির সবাই যে যেখানে ছিল সেখান থেকে এসে হাজির ড্রয়িং রুমে। হঠাৎ করে এমন করে চিৎকার করলো কেন মমো দেখার জন্য? আশিকের সাথে ডেলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সকল অবাক হলো। নিজেদের অবাকতা এক পাশে ফেলে সবাই লুৎফা বেগমকে ধরে নিয়ে এসে সোফায় শুইয়ে দিলেন।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৮

হেলাল সাহেব লুৎফা বেগম কে শুইয়ে আশিকের দিকে তাকালেন। বোনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার ধরুন আশিক ও ডেলাকে তেমন একটা খেয়াল করেননি। ডেলার হাত আশিকের হাতে দেখে হেলাল সাহেব কিছু একটা সন্দেহ করলেন। সন্দেহ সঠিক কি না তা জানার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, ” মামা, তুমি ওর হাত ধরে রেখেছ কেন?
আশিক একবার লুৎফা বেগমের দিকে তাকালো। তার বিয়ের কথা শুনে যেখানে তার মা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। সেখানে হেলাল সাহেব কীভাবে রিয়েক্ট করবেন আশিক বুঝতে পাড়ল না?
” মামা আমি ডেলাকে বিয়ে করে নিয়েছি!
দূর হতে কেউ রুঢ় গলায় বলল ,
” কি বলেছিস আশিক? আবার বল!

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here