প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২০

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২০
জান্নাত নুসরাত

সূর্য মধ্যআকাশে। সূর্যের তাপে শরীর পুড়ে যাবে এমন মনে হচ্ছে। কপাল থেকে ঘাম মুছে নিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করলো নুসরাত। ব্যাগ থেকে পানি বের করে দুই চুমুক খেল। ইরহামকে বলল, “খাবি? ইরহাম পানির বোতল নিয়ে এক চুমুকে সব পানি খেয়ে নিল।
” আজকাল অনেক গরম পড়ছে?
গরমের জন্য নুসরাতের কথা বলতে ইচ্ছে হলো না। তবু ও মুখ দিয়ে টেনে টেনে কথা বের করল,” হু!
“মামা সামনে দিয়ে দিবেন?
সিএনজি থেকে নেমে বাড়ির রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেল নুসরাত। বাড়ির গেইট থেকে ভিতরের শোরগোলের শব্দ শোনা গেল। ইরহাম আর নুসরাত দু-জন দুজনের মুখের দিকে চেয়ে ভো-দৌড় দিল বাড়ির ভিতর।

” কি বললি আশিক? আবার বল! আমি শুনতে পাইনি।
জায়িনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আশিক। দু-সেকেন্ড লাগেনি তুমি থেকে তুইয়ে চলে গেল। আশিক বিরক্ত হয়ে বলল,” শুনতে পাওনি? বলেছি আমি ডেলাকে বিয়ে করেছি!
জায়িন ক্ষিপ্র গতিতে এসে আশিকের কলার চেপে ধরলো। পরপরই আশিকের গালে থাপ্পড় পড়ল। থাপ্পড়ের বেগে আশিক দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ল। দু-বাহু ধরে আবার তুলে ধরল জায়িন। তিন-চারটা নাকে ঘুষি মারল আশিকের। বড় ভাইয়ের জন্য সম্মান করে ঘুরিয়ে প্রতিবাদ করলো না আশিক। যখন এটা তীব্র পর্যায়ে চলে গেল আশিক ঘুরিয়ে দু-একটা ঘুষি মারলো। জায়িনের মতো সুঠাম দেহের লোকের সাথে পেরে উঠলো না আশিক। আবার আশিককে ঘুষি মারার পূর্বেই জায়িনের গালে থাপ্পড় পড়ল। জায়িন পিছন ফিরে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলল। কার এত বড় সাহস তাকে থাপ্পড় মারে? ডেলাকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তোলা হাত কেঁপে উঠল জায়িনের। যে হাত থাপ্পড় মারার জন্য তুলেছিল সেই হাত ধীরে ধীরে আগের জায়গায় নামিয়ে নিল।
আশিকের নাকে ঘুষি পরার জন্য নাক দিয়ে রক্ত বের হয়েছিল। তা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিল। মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে জায়িনকে বিচ্ছিরি গালি দিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কি টুই এবার আমাকে মারবি? আমার গায়ে হাট টুলবি? হাট ভেঙে দিব জায়িন আরেকটা স্পর্শ যডি আশিকের গায়ে লাগে। হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মাই হাজবেন্ড? হাউ ডেয়ার ইউ?
জায়িনের বুকে হাত দিয়ে পিছনের দিকে ধাক্কা দিল ডেলা।
” কোন সাহসে টুই আমার স্বামীর গায়ে হাট টুলেছিস? কে টুই? আই উইল ফাইল আ কেস অন ইউয়ের নেইম, বিকজ অফ দেট ইউ ট্রাই টু কিল মাই হাজবেন্ড।
জায়িন অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। ডেলা তাকে জিজ্ঞেস করছে সে কে? জায়িন নিজের দিকে আঙুল তুলল। তুলে ডেলাকে জিজ্ঞেস করলো,” তুই জিজ্ঞেস করছিস আমি কে? তুই!

” হ্যাঁ আমি জিজ্ঞেস করছি টুই কে? আমার পার্সনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করার টুই কে? হু আর ইউ?
” আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড! তোর, আমার এসব আমাদের ভিতর কখন আসলো।
” বেস্ট ফ্রেন্ড বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো ঠাক। আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবি না।
জায়িন অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো ডেলার দিকে। নিজের গম্ভীর চরিত্রের বাহিরে এসে জায়িন বলার চেষ্টা করলো কিছু। কিন্তু কণ্ঠনালিতে শব্দ এসে তা আর বাহিরে আসলো না। নিজের সাথে যুদ্ধ করে জায়িন ডেলাকে বলল,
” আই লাভ ইউ ডেলা! আই লাভ ইউ মর দেন মি। প্লিজ তুই আমাকে ফিরিয়ে দিস না। ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে চলে আয়। আমি তোকে সব দেব। তোর যা ইচ্ছা আকাঙ্কা আমি সব পূরণ করবো।

ড্রয়িং রুমের সকলের মাথায় বজ্র পড়ল। সবাই ঘুরে জায়িনের দিকে অবাক চোখে তাকালো। ইতিমধ্যে লিপি বেগম বিলাপ শুরু করেছেন। তার ছেলেটা এতো নির্লজ্জ হলো কখন? পুরো পরিবারের সামনে কেউ এভাবে কোনো মেয়েকে প্রপোজ করে। আবার ছোট ভাইয়ের বউকে বলে ডিভোর্স দিয়ে দিতে।
জায়িনের গালে আরেকটা থাপ্পড় পড়ল। থাপ্পড় টা মেরেছেন হেলাল সাহেব।
ডেলা রাগে থরথর করে কেঁপে উঠলো। এত জীবন যাকে সে বন্ধুর চোখে দেখে এসেছে আজ সে তাকে প্রপোজ করছে। ডেলার ইচ্ছে করলো জায়িনের গালে কয়েকটা থাপ্পড় মারার জন্য। এক হাত দিয়ে নিজের আরেক হাত চেপে ধরলো, হাত কন্ট্রোল করার জন্য। তার লজ্জা করছে একে বন্ধু বলতেই।
“টুই এক্ষুণি আমার সামনে থেকে সর নাহলে আজ টর আমি কি করবো আমি নিজেই জানি না? টুই আমার ফ্রেন্ড এটা ভাবটেই আমার লজ্জা লাগছে। ছিহ্ ছিহ্ ছিহ,,,

থাপ্পড়ের জোরে জায়িনের মতো সুঠাম দেহের লোক নিজের জায়গা থেকে কিছুটা সরে গেল। লাল লাল চোখ নিয়ে ডেলার দিকে তাকালো জায়িন। চোখে টোকা দিলেই মনে হলো রক্ত বের হয়ে যাবে। জায়িন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল ডেলার দিকে তাকিয়ে।
” তোরা কেউ আমার অনুভূতি কোনদিন বুঝলি না?
জায়িনের গলার স্বর কিছুটা ভাঙা শোনালো। মানুষ কান্না করলে যেরকম হয় ওই রকম! ডেলার নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিল জায়িনের দিক থেকে।
” হেই ছ্যাঁমরি হেই! তুই আমার নাডিডারে মারলি কেন?
ডেলা উত্তর দিল না। মেহেরুন নেছা ক্ষেপে গেলেন। তার প্রিয় নাতিকে এই মেয়ে দুটো থাপ্পড় মারলো তার সামনে আর এই বাড়ির কেউ তার প্রতিবাদ করলো না। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাটক দেখলো।
মেহেরুন নেছা আবার বললেন,

” আমি তোর জইন্য একডা সুন্দর দেইখা মাইয়া পছন্দ কইরা লইয়া আইমু। ভালো হইছে এর মতো সাদা চামড়ার বিলাইডা আশিককে বিয়া কইরা লইছে। তোর জীবনডা বাঁইচা গেছে এই সাদা ফরিঙের থেকে। আমি সুরত ভালা মাইয়া আইন্না তোরে দিমুনেরে জায়িন। কানদিস না! মনডা খারাপ করিস না।
জায়িন মাথা নিচু করে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। ইরহাম কোন কথা না বলে ড্রয়িং রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইলো। টু শব্দ করলো না ইরহাম! নুসরাত এতো সিরিয়াস একটা মমোন্টে হা হা করে হেসে দিল। সবার চোখ তার দিকে পড়তেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো নুসরাত।

“সর‍্যি, সর‍্যি আর হাসব না!
লুৎফা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে এতক্ষণে। যখন সোফা থেকে উঠে বসলেন ধীরে ধীরে সব মনে পড়ল, কিছুক্ষণ আগের ঘটনা এক এক করে। মনে পড়তেই সোফা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলেন। পায়ের জুতো খুলে হাতে নিলেন।
আশিক বুঝতে পাড়ল এই জুতো তার পিঠে পড়বে। নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্য দৌড়ে গিয়ে ডেলার পিছনে দাঁড়ালো। লুৎফা বেগম জুতো দিয়ে মারতে গেলেই ডেলাকে লুৎফা বেগমের সামনে চেপে ধরলল আশিক। ” এই তুই এই সাদা চামড়ার মুরগীরে কেন বিয়ে করেছিস? তোর কি বিয়ে করার বয়স? নিজেই খাস অন্যের টাকায় আবার নতুন আরেকজন নিয়ে আসছিস।
আশিক বলল,

” উফ, আম্মা এতো চিন্তা কিসের? আমরা যেভাবে খাচ্ছি ও সেভাবে খাবে এতে সমস্যা কি?
লুৎফা বেগম জুতো দিয়ে আশিকের পিঠে দু-এক গা লাগিয়ে দিলেন। আশিক ব্যাথাতুর শব্দ মুখ দিয়ে বের করলো। আশিককে ধরার জন্য লুৎফা বেগম আশিকের শার্টের কোনা চেপে ধরলেন। আশিক নিজের শার্ট ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় দিল। ডেলাকে ঘিরে দু-জন দুই তিনবার গোল গোল ঘুরলো। মা -ছেলে দৌড় ঝাপ করে হাঁপিয়ে উঠল।
” ওই লুৎফা তুই আমার নাডিডার পিছে এভাবে পরলি ক্যা? সামান্য বিয়েই করছে বেশি কিছু করেনাইগা আমার নাডিডা।
” আম্মা ওর বয়স কত ও যে এই বয়সে বিয়ে করছে? নিজেই তো খায় মামার টাকায় আবার নতুন সদস্য নিয়ে আসছে।

লুৎফা বেগম কথা বলতে বলতে কেঁদে উঠলেন। শাড়ির কোণা দিয়ে চোখ মুছে নিলেন।
“তো কি হয়ইছেডা কি? আমার নাডিডা কত সুন্দর মাইয়া বিয়া কইরা লইয়া আইছে দেখ তুই? চেহারা সুরত দেইখা তো আমি ফিদা হইয়া গেছি।
নুসরাত দূর হতে দৌড়ে আসলো। আশিকের পিঠে চাপড় মেরে বলল,” গুড জব ভাই, গুড জব! এই বিদেশিনীকে বিয়ে করে তুই তো ছক্কা মেরে দিলি। পটালি কীভাবে এই ফিরঙ্গীনিকে?
আশিক ভাব-সাব নিয়ে নিজের শার্টের কলার ঠিক করলো।

” বুঝতে হবে না ভাইয়ের টেলেন্ট।
লুৎফা বেগম চেতে গেলেন। সোফার উপর বসে ছিলেন পা থেকে জুতো খুলে আশিককে ঢিল মারলেন।
“তোর টেলেন্টের গুষ্টি কিলাই। আর কি বিয়ে করেছিস? তোর বউ এসব কি পরে থাকে সবসময়? এর কি কোন কাপড় নাই।
আশিক লুৎফা বেগমকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আম্মু কোট পড়ে।
লুৎফা বেগম বললেন,
“তোরে বলতে বলেছি?

আশিক তব্ধুল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে ছাড়া আর কাকে জিজ্ঞেস করবে? মায়ের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। হেলাল সাহেব আশিক আর ডেলাকে সোফায় বসার জন্য বললেন। ভদ্র ছেলে-মেয়ের মতো এসে আশিক আর ডেলা চোখ নিচের দিকে রেখে সোফায় বসলো। হেলাল সাহেব গলা পরিস্কার করে নিলেন।
” বিয়ে করে নিয়েছ দুজন। কারোর মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করনি! আচ্ছা যাই হোক, তোমার ফ্যামেলি কি জানে তুমি বিয়ে করেছ? তাদের কি এতে মত আছে?
ডেলার দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকলেন হেলাল সাহেব। ডেলা মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে ছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। হেলাল সাহেবের কথার উত্তর অনেক্ষণ পর দিল।

” আমি এডাল্ট হয়ে গিয়েছি। আর আশিক ও এডাল্ট। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ট নিটে পারি। হ্যাঁ আমার ফ্যামেলি আমার বিয়ের বিষয়ে জানে না। কিন্তু আমি নিজের সিদ্ধান্ট নিজে নেওয়ার ক্ষমটা রাখি এবং এটে আমার ফ্যামেলির কোনো সমস্যা হবে না আমার মটে।
নুসরাত বাহবা দিয়ে উঠলো ডেলাকে। আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল,” আমার মনের মতো ভাবি নিয়ে আসছো ভাই। আসো তোমাকে জড়িয়ে ধরি। আর ভাবি আপনি তো ফাটিয়ে দিয়েছেন। আমার আপনাকে প্রচুর পছন্দ হয়েছে। আসুন গলায় গলায় মিলাই।
হেলাল সাহেব ধমক দিলেন নুসরাতকে। নুসরাত হেলাল সাহেবের ধমক গায়ে মাখলো না।

“দেখছ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি! তার মধ্যে তুমি এতো কথা বলছ কেন?
” আমার কাছে মনে হচ্ছে না তো আপনি কোন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন? নুসরাত মিনমিন করে বলল।
হেলাল সাহেব আবার ডেলার দিকে তাকালেন।
” তোমাদের বয়স ডিফারেন্স কত জানো?
আশিক অকপটে জবাব দিল,
” বয়স ডিফারেন্স জেনে কি হবে? ও আমাকে আমি ওকে পছন্দ করেছি এটাই তো বড় কথা। বয়সের কাজ কি এখানে?
নুসরাত পিছন থেকে আশিকের পিঠে হালকা চাপড় মেরে বলল,” ডেট’স মাই ব্রো! ব্রেইভ বয়!
আশিক শার্টের কলার ধরে একটু ভাব নিল।

“ডেলা তোমার মায়ের নাম্বার দাও? আর তুমি তোমার বাসায় ফিরে যাও! আমরা পারিবারিক ভাবে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসবো। তোমার পরিবারের সম্মতিতে! আশিক ডেলাকে ওর বাসায় পৌছে দাও!
আশিক ভদ্র ছেলের মতো চোখ নিচের দিকে রেখে দিয়ে বলল, ” জি মামা
“এই প্রসঙ্গে কথা এখানেই শেষ। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। কেউ যেন এ নিয়ে আর একটি কথাও না বলে।

লিপি বেগম গুনগুন করে কাঁদছেন। হেলাল সাহেব স্ত্রী আচরণে বিরক্ত হলেন। বিরক্ত হয়ে বারান্দায় চলে গেলেন। বারান্দায় পায়চারি করে আবার রুমে ফিরে আসলেন।
” উফ কান্না থামাও তো! বাচ্চাদের মতো কি শুরু করেছ? তোমার ছেলে কি ভাগিয়ে নিয়ে চলে আসছে এভাবে কান্না করছ?
লিপি বেগম কান্না থামানোর বদলে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন। হেলাল সাহেব লিপি বেগমের পাশে বসে পিঠে হাত বুলালেন।

“আহ, কান্না থামাও! কি হয়েছে বলতো? না বললে বুঝব কিভাবে?
লিপি বেগম চোখের পানি মুছে নিলেন। কান্না থামানোর জন্য কিছুক্ষণ সময় নিলেন। অনেক্ষণ ধরে কান্না করার জন্য লিপি বেগমের গলা বসে গেছে।
” তোমার ছেলে সবসময় ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতো। মেয়েটা একটা কল দিলে তোমার ছেলে ছোটে যেত। আর আজ কি করল? নির্লজ্জের মতো বাপ, মা,চাচিদের সামনে কীভাবে ছোট ভাইয়ের বউকে সে ভালোবাসে এটা বলল? আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে! ছি্,ছি্,ছি্ মানুষ কি বলবে? এই ছেলেটা তার ছোট ভাইয়ের বউকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়।
লিপি বেগম কথা বলতে বলতে আবার হাউমাউ করে কান্না করে দিলেন।
হেলাল সাহেব বললেন,

” তো কি হয়েছে? মানুষ কি বলল তার ধার আমি ধারি না। আমি মানুষের খাই না,আর মানুষ আমায় খাওয়ায় না। যে যা বলার বলুক, আমি তা শুনছি না। তারা তো আমার সামনে এসে এসব বলবে না, সব আমার পিঠ পিছেই বলবে। তাহলে আমি তুমি আমার পরিবারের মানুষ এসব শুনবে কীভাবে? আর আমার পরিবারের মেয়েরা আমি মনে করি যথেষ্ট প্রতিবাদী। তারা নিজেকে নিজে অবশ্যই ডিফেন্ড করতে পারবে।
লিপি বেগম গাইগুই করে উঠলেন। হেলাল সাহেব স্ত্রী কে কিছু বলতে না দেখে আবার বললেন, ” এসব চিন্তা বাদ দাও! যখন যা হওয়ার হবে। সময়ের উপর সবকিছু ছেড়ে দাও। সময় বলে দিবে কি করতে হবে?
যাও হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আর এসব কান্না কাটি বন্ধ কর!
” কিন্তু জায়িন যে সেই রুমে ঢুকলো আর বের হলো না। আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।
“এতক্ষণে ছেলের কথা মনে হয়েছে। আমি যাচ্ছি ওর রুমে তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

” এতোসব কাহিনী ঘটে গিয়েছে? আর আমার তো বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে জায়িন ভাইয়া ডেলাকে ভালোবাসে।
“আরে বইন আস্তে কথা বল! বড় আব্বু শুনলে আমাকে খাল্লাস করে দিবে। না করে দিয়েছেন এই বিষয়ে কোনো কথা যেন উনি না শোনে। আজ তুই এতো দেরি করে আসলি কেন? ইম্পর্ট্যান্ট সিন মিস করে গেলি।
নুসরাত হা হা করে হেসে দিল। নুসরাতকে হাসতে দেখে ইসরাত ও হাসল। হিজাবের ক্যাপ খুলতে খুলতে ইসরাত বলল, ” কি কি হয়েছে সব বল?

নুসরাত যা যা হয়েছে তা ইসরাতকে খুলে বলল। ইসরাত হিজাবের ক্যাপ জায়গায় রাখতে রাখতে উত্তর দিল, “ভাইয়ার উচিত হয়নি ওরা বিবাহিত জেনেও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা। উনি যখন দেখতেই পাচ্ছেন ডেলা বিয়ে করে নিয়েছে তাহলে ডেলার জন্য তার কি অনুভূতি তা বলার কি প্রয়োজন ছিল?
নুসরাত পেটে হাত রেখে হেসে গড়াগড়ি খেল। হাসির দাপটে কথা বের হলো না।
” আরে বুঝিস না বইন বড়লোক্সদের বড়লোকি কারবার।
ইসরাত কাপড় চেঞ্জ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
” আমার না, জায়িনের উপর প্রচুর হাসি উঠে ছিল।
“তুই ওখানে দাঁড়িয়ে হেসেছিলি?

” ওই একটু। নুসরাত বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী আঙ্গুল একত্রে করে দেখালো সে একটু হেসেছে।
“আমার ওই সময়ের কথা মনে হলেই হাসি আসছে। আর ডেলা আপু কি থাপ্পড় লাগিয়েছে শালা জায়িনের গালে? হাত এইভাবে ঘুরিয়ে এনে জায়িনের টসটসে গালে এক থাপ্পড় লাগিয়েছেরে বইন। বেচারার গাল লাল হয়ে গিয়েছে। আমার কাছে ওই সময় ক্যামেরা থাকলে আমি একটা ভিডিও করতাম। তারপর জায়িন শালাকে ভাইরাল করে দিতাম।
ইসরাত হেসে দিল নুসরাতের বলার ভঙ্গিমা দেখে। নুসরাত চটপটে গলায় বলল, ” বইন একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?

ইসরাত নুসরাতের বলার ভঙ্গিমা দেখে মনে করলো প্রচুর সিরিয়াস কোনো কথা। নুসরাতের কথা শুনে ইসরাতের মুখ হা হয়ে গেল। মেয়েটা এসব বলে কি?
” একটা জিনিস খেয়াল করেছিস। জায়িন শালা ডেলাকে ছোট বেলা থেকে পাহাড়া দিয়ে বড় করলো পাখি বড় হলে পাখিকে তার খাঁচায় বন্ধি করবে কিন্তু মাঝখান থেকে আশিক এসে পাখিটাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। আহা কি দুঃখ?
মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করলো নুসরাত। এমনভাব করলো যেন সে অনেক কষ্ট পেয়েছে জায়িনের জন্য। ইসরাত উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
ইসরাত হাসতে হাসতে বলল,
“সিলেটের বাপ্পারাজ জায়িন ভাইয়া।
দু-বোনের হাসিতে পুরো রুম রম রমে হয়ে উঠলো। নাজমিন বেগম হাসতে হাসতে ইসরাতের রুমে ঢুকলেন। ইশারা করে বললেন আস্তে কথা বলার জন্য। বাহিরে থেকে সব শুনা যাচ্ছে। মা-মেয়ে মিলে একদফা হেসে নিল।
ইসরাত বলল,

“আম্মু তুমি কখন আসছো?
নাজমিন বেগম বললেন,
” অনেকক্ষণ। তোদের কথা শুনছিলাম।
নুসরাত দুজনকে থামিয়ে দিল।
“এইইইই আমার কথা শুনো! আম্মা আমি ঠিক বলছি না। জায়িনের পাখি উড়িয়ে নিয়ে আশিক চলে গিয়েছে।
নাজমিন বেগম মেয়ের কথায় সহমত প্রকাশ করলেন। নুসরাত হেসে লুটোপুটি খেল বিছানায়। নুসরাত কিছু একটা চিন্তা করে নাজমিন বেগমের দিকে তাকাল।
” আম্মা আমাদের তো দুঃখ পাওয়া উচিত ছিল কিন্তু জায়িনের জন্য আমার মোটে ও কষ্ট হচ্ছে না। আমার ভাবতেই হাসি পাচ্ছে জায়িনের মতো ইগোস্টিক মানুষকে ডেলা রিজেক্ট করেছে।
নুসরাত কথা সম্পূর্ণ করার আগেই হু হা করে হেসে উঠলো। ইসরাত সঙ্গ দিল নুসরাতের। ইসরাতকে চুপ করালো।
“এই এই আমি কিছু বলতে চাইছি?
নুসরাত বলল,

” একমিনিট!
হাত মুঠো করে মুখের সামনে ধরলো মাইকের মতো করে।
“এখন আমাদের মধ্যে বক্তব্য পেশ করবেন সৈয়দা ইসরাত উরফে জায়িনের চাচাতো বোন।
ইসরাত নিজের হাত মুষ্টি করে মুখের সামনে ধরলো।
” আমি উগান্ডা নিউজ টিভি চ্যানেল থেকে এসেছি চিং চাং চু। আজকে জোরদার খবর জায়িন নামের এক সুদর্শন সূপুত্রকে রিজেক্ট করে দিল এক বিদেশিনী ডেলা নামক রমণী। উনার পরিবারের মানুষ এই বিষয়ে ব্যথিত হলে ও উনার দুই চাচাতো বোন ও চাচি মুটেও দুঃখ পাননি। রুমের মধ্যে এই তিনজন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছেন। কিন্তু উনাকে নিয়ে চিন্তিত উনার এক চাচাতো বোন। উনি কি এই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। জীবনে কি সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন? সংসারী হয়ে উঠতে পারবেন ভবিষ্যতে। তা জানতে আমাদের টিভি চ্যানেলের সাথে থাকুন এবং চোখ রাখুন এইখানে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৯

নুসরাত বিছানায় হেসে গড়াগড়ি খেল। নাজমিন বেগম হাসির জন্য সোজা হয়ে বসতে পারলেন না। মা-মেয়ের এই সুন্দর দৃশ্য দূরে দাঁড়িয়ে কেউ একজন খেয়াল করল। কিছু মানুষ আছে না যারা অন্যের হাসি দেখলে নিজেরা তৃপ্তি সহকারে হাসে সে লোকটা এই সুন্দর মোমেন্টের সাক্ষী হয়ে তৃপ্তি ভরে হাসল।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here