প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৩
জান্নাত নুসরাত
ভোর ৫:০০ টা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। সারারাত ফ্যানের বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই সকালের দিকে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হয়। ওড়নাকে কাঁথার মতো পেঁচিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে নুসরাত। ঘুম চোখ খুলে একবার তাকিয়ে আবার চোখ বুজে ফেলল। আজ বাহিরে যেতে ইচ্ছে করছে না আগামীকাল বাহিরে যাবে এই আরামের ঘুম রেখে কে বা বাহিরে যেতে চায়। শরীরে হালকা ধাক্কা অনুভূতি হতেই নড়েচড়ে উঠল নুসরাত। কানে এলো কর্কশ কন্ঠে কেউ বলছে,” এই উঠ, যাবি না আজ পাশের বাসার বাগান থেকে এ্যালোভেরা চুরি করার কথা ছিল না। মরার মতো পড়ে ঘুমাচ্ছিস কেন? পরে বলিস না আমি ডেকে তুলিনি তোকে।
হঠাৎ নুসরাতের টনক নড়লো। ইস একদম ভুলে গিয়েছিল। মন্টু আঙ্কেলের বাড়িতে আজ মিশন আছে। ঘুম ভুলে লাফ দিয়ে বসে গেল। কিছুক্ষণ বিছানা বসে কিছু চিন্তা করে দৌড়ে ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুম থেকে ওযু করে একেবারে বের হলো।
নামাজ শেষে বড় সুতি ওড়না পেঁচিয়ে নিল শালের মতো করে। মূল দরজা দুজন খুব সাবধান ও তার সহিত খুলল। তারপর পা টিপে টিপে বাসা থেকে বের হলো। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। মেঘের গর্জন এখনো থামেনি। মনে হচ্ছে আরেকবার বৃষ্টি হবে। প্রকৃতির যা অবস্থা বোঝা যায় না কখন বৃষ্টি হবে আর কখন ঝড় হবে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
মন্টু মিয়ার বাড়িতে আলাদা কোন গেট নেই। তাই ভিতরে ঢুকতে কোন অসুবিধে হলো না। এ্যালোভেরা গাছের দিকে ঝুঁকে আছে ইসরাত। হাত দিয়ে টান দিয়ে নিচের পাতা ছিড়ে ফেলল। সাবধানতার সহিত ফিসফিস করে ইসরাত বলল,” এই এখানে ছোট চারা বের হয়ে আছে। তুলে নেই!
“নে তাড়াতাড়ি কর যা করার! মন্টু মিয়া উঠে গেলে পুরো পাড়া এক করে ফেলবে।
ইসরাত এ্যালোভেরা ছোট চারাটা তুলে ওড়নার নিচে ঢুকিয়ে নিল। আরেকটা এ্যালোভেরার দিকে যখন ঝুকে তাকিয়ে ছিল খট করে শব্দ হলো। মেইন দরজা খুলতে দেখে নুসরাত এক লাফে মন্টু মিয়ার বাড়ির ত্রি-সীমানা থেকে ভাগলো।
দরজা খুলে ইসরাতকে দেখে মন্টু মিয়া ভ্রু কুচকে নিলেন। ইসরাত মেকি হাসি টেনে টুনে ঠোঁটে এনে হে হে করে হেসে সালাম দিয়ে মন্টু মিয়ার বাগান থেকে বের হয়ে এসে রুদ্ধ শ্বাস ছাড়লো। মন্টু মিয়া ইসরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করলেন,” ছোডডা আইলে মনে করতাম কিছু নিতে আইছে এই মাইয়াডা ভালা আছে। কীভাবে মোরে সালাম দিয়ে গেল? যাই বলি আর তাই বলি, নাছিরের ছোড মাইয়াডা এক্সছের বেয়াদব। বড় মাইয়াডা ভালাই আছে।
নুসরাতদের সোসাইটির মধ্যে সবথেকে বেশি কিপটে লোক হলেন মন্টু মিয়া। উনার বাসার বাগানে সব প্রকার ফল,ফুলের গাছ রয়েছে। তাতে প্রচুর পরিমাণে ফুল- ফল ও হয়, কিন্তু মন্টু মিয়া এতো কিপটে যে তার গাছের নিচে ফল পরে রইবে, পোকা-মাকরশা ফল খেয়ে নষ্ট করবে তবুও মানুষকে এক টুকরো ফল দিতে তার জান কাঁপবে। টাকা খরচ হয়ে যাবে বলে বাসা বাউন্ডারি পর্যন্ত করেননি মন্টু মিয়া।
মন্টু মিয়ার এই চরিত্রের জন্য নুসরাত লোকটার পিছনে পরে রয়। সুযোগ পেলেই মন্টু মিয়ার বাসার বাগানে ঢুকে পেয়ারা, জাম্বুরা, ডালিম, মাল্টা, কমলা, বরই ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে আসে। দু- তিন দিন চুরি করার সময় ধরা পরেছে মন্টু মিয়ার কাছে। লোকটা হাতে নাতে ধরার আগেই আহানকে নিয়ে ভো দৌড় দেয়। তারপর আর কি? বিচার গিয়েছে বাসায় তাও আবার মেহেরুন নেছার কাছে! মেহেরুন নেছা এই এক বিষয়ে নুসরাত আর আহানকে কিছু বলেন না। তিনি নুসরাত ও তার সহযোগীকে সমর্থন করেন। ফলে চুরি করা জিনিসের কিছুটা ভাগ মেহেরুন নেছা ও পান।
সৈয়দ বাড়িতে সদর দরজার সামনে তিনটে সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে সদর দরজার কাছে যেতে হয়। নুসরাত মন্টু মিয়ার ওখান থেকে পালিয়ে আসার পর মেহেরুন নেছাকে লাঠিতে ভর দিয়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো নুসরাত,
“কি গো বুড়ি? আজ এতো সক্কাল সক্কাল তুমি কি কইরা জাইগ্গা গেলা। তোমার আরামের ঘুম থইয়া এইহানে দাঁড়াইয়া আছো ক্যা?
মেহেরুন নেছা শব্দ করে হেসে উঠলেন। নুসরাত বাঁকা দৃষ্টিতে তাকালো মেহেরুন নেছার দিকে।
” যতই চেইষ্টা করবার কইরা লও মাগার এই মায়ার মতো কইরা কথা কইবার পারবা না। হেইডা ছাড়,তুই পেড মুডাডার বাড়ি গেছিলি?
“হ্যা! তুমি কীভাবে বুঝলে?
” ওইডা আমার টিলেন্ট। তুই বুঝবার পারবি না। আমার নাতিডি কই?
ইসরাত পেছন থেকে বলল,
” আমি এখানে দাদি।
মেহেরুন নেছা সামনের দিকে তাকালেন। ইসরাত হাতে কিছু একটা নিয়ে আসলো। মেহেরুন নেছা কৌতুহল নিয়ে চেয়ে রইলেন।
“এইডা কি? পেড মোডাডার বাড়ি থাইকা খাইবার কিচ্চু লইয়া আইছত।
” না দাদি এইটা এ্যালোভেরার চারা। পাতা দেখিয়ে বলল,
” আর এইগুলো পাতা।
“কি বললি? আবার বল!
নুসরাত বলল,
” এ্যালোভেরা দাদি এ্যালোভেরা।
মেহেরুন নেছা উচ্চারণ করার চেষ্টা করলেন। থেমে থেমে উচ্চারণ করলেন,”এলে ভেড়া,এইডা আবার কি?
” দাদি এলে ভেড়া না এ্যালোভেরা।
“ওই একডা হইল। খাইবার কিচ্চু আনছ নাই বেটাছেলে।
” এএএএ একদম বেটাছেলে বলবে না। আমি মেয়ে! তুমি আমাকে ছেলে বলে অপমান করতে পারো না। আর দুইদিন পর টপকাই যাইবা এতো খাই খাই না, কইরা একটু নামাজ-রোজা করো।
” তোরে দেইখতে কোন এঙ্গেইলে মাইয়ে লাগে। তুই তো পুরাডা ছেলে মনে হয় আমার কাছে। আর আমি টপকানোর হইলে এমনেই টপকামু। তোর চিন্ডা কইরতে হইব না।
“এই তুমি আমার জেন্ডার নিয়ে প্রশ্ন তুলছ। চলো রুমে চলো আজ তোমাকে আমি প্রমাণ করে দেখাব আমি মেয়ে।
ইসরাত দুজনের ঝগড়া নীরব দর্শক হয়ে দেখছে। বিরক্ত হয়ে বলল,” হইছে দুইজন থামো! ঝগড়া করা বন্ধ করো। গোটা দুনিয়ার মানুষ তোমাদের ঝগড়ার শব্দে ঘুম থেকে উঠে যাবে।
মেহেরুন নেছা নিজের সাফাই দিয়ে বললেন,
“আমি ঝইগড়া করছি না। ওইডা আমার লগে ঝইগড়া করতেছে।
” হ্যাঁ হ্যাঁ এখন সব দোষ নন্দ ঘুষ। শুধু ধনী হতে দাও এই বাড়িকে লাত্তি মেরে ফেলে রেখে যাব। আর ফিরে আসব না। আজ গরীব বলে।
এমনি চোখের পানি মুছার অভিনয় করে নুসরাত দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।
ভার্সিটিতে টিফিন টাইমে ক্যাম্পাসে নুসরাত, সৌরভি, ইরহাম আর সাদিয়া হাঁটছিল। হঠাৎ একটা ছেলে এসে তাদের পথ রোধ করে দাঁড়ালো। নুসরাত ছেলেটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকাল। ভ্রু উঁচালো! ইরহাম নুসরাতকে সরিয়ে নিজে সামনে দাঁড়ালো।
“কি দরকার? এভাবে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন কেন? মানুষের হাঁটার রাস্তায় বাঁধা দিচ্ছেন কেন?
” যার সাথে দরকার তার সামনেই দাঁড়িয়েছি। আর তোমাকে কৈফিয়ত দিব কেন? তুমি কে?
” অব্যশই আমাকে কৈফিয়ত দিবেন। আর আমি কে তা না জানলে ও চলবে।
“সিনিয়রের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানো না কি? বড় ধরণের মিস্টেক করছ মিস্টার ডট ডট।
নুসরাত ইরহামকে টেনে পিছনে নিয়ে আসলো। চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে শাসালো। নুসরাত জোর করে মুখ দিয়ে হাসি বের করে বলল,” জি ভাইয়া বলুন, কি সাহায্য করতে পারি। আসলে আমার ছোট ভাই তো তাই একটু চেইতা গেছে। আপনাকে আমাদের রাস্তায় ঠ্যাং ঢুকাতে দেখে।
ইরহাম জ্বলে উঠলো। নুসরাতের পিঠে কিল বসিয়ে বলল,
” আমি তোর ছোট, মিথ্যে কথা। আমি নুসরাতের বড় ভাই। সব সময় তুই নিজেকে আমার থেকে বড় জাহির করিস।
ছেলেটা মুখে আঙুল চেপে দেখালো চুপ হওয়ার জন্য ইরহামকে। ইরহাম চুপ হলো না আর একটা নুসরাতের কাধে থাপ্পড় বসালো। নুসরাতের রাগের পারদ হাই, এতো জোরে ধমক দিল ইরহামকে মনে হলো কানে তালা লেগে গিয়েছে।
“ইরহামের বাইচ্চা আমি যদি এইবার হাত তুলি তুই বাসায় আস্তো ঠ্যাং নিয়ে যেতে পারবি না। এখানে ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিব। একটা মানুষ তরে বাঁচাতে আসবে না। মুখ বন্ধ রাখ,দেখছিস কথা বলছি এর মাঝে লাফালাফি ঝাপাঝাপি করবি না।
কর্কশ গলার স্বর নুসরাতের ছেলেটার দিকে তাকালো। কোনো প্রকার গলার টোন না বদলে জিজ্ঞেস করলো,
” কি হয়েছে? কি ধরণের সাহায্য করতে পারি এবং কীভাবে?
ছেলেটা থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এইতো কি সুন্দর জিজ্ঞেস করলো কি দরকার এখন এভাবে চিৎকার করে কথা বলছে কেন? ঢোক গিলল ছেলেটা। হাত দিয়ে শহিদ মিনারের দিকে দেখালো। নুসরাত দেখল গতকালের ছেলটা দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছু জিজ্ঞেস না করে একা একা দাপুটে ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল।
ছেলেটা বিড়বিড় করলো,
“মেয়েদের গলা এরকম কর্কশ আর ফাটা হয় না কি? মনে হচ্ছে তোমাদের উপর প্রচুর অত্যাচার করে এরা।
ইরহাম বলল,
” হ ভাই হ ! আমাদের বাড়ির মেয়েদের গলা ফাটা বাঁশ। মাইক ছাড়া পুরো দুনিয়ার মানুষ এদের গলা শুনতে পাবে। আর চিৎকার শুনলে তো রুহ কেঁপে উঠবে। আমাদের উপর প্রচুর অত্যাচার করে ভাই এরা। আমাদের বাড়িতে নারী নির্যাতন নয় পুরুষ নির্যাতন হয়।
গমগমে স্বরে নুসরাত জিজ্ঞেস করলো,
” নাম কি তোমার? আর কেন পছন্দ হলো আমাকে?
নুসরাতের কাটখোট্টা প্রশ্ন।
ছেলেদের সাথে কথা বলতে গেলে নাকি মেয়েরা কাঁপে এখানে দেখি তার উল্টো হচ্ছে ছেলেটা কাঁপছে। ভয়ে মনে হচ্ছে কান্না করে দিবে।
“জি আবির আমার নাম। আপনাকে পছন্দ করার বিশেষ কোন কারণ নেই? আপনাকে দেখলে আমার মন ভরে যায় তাই আপনাকে আমার পছন্দ।
নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে অদ্ভুত হাসল।
” কিন্তু তুমি জানো কি? আমি তোমাকে রিজেক্ট করবো। আর কাঁপাকাঁপি বন্ধ কর! আমি বাঘ ভাল্লুক না তোমাকে খেয়ে ফেলবো।
ছেলেটা চোখ পানি টলমল করে উঠলো। নুসরাত ছেলেটার চোখের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হতেই আবির নিজের চোখ নিচে নামিয়ে নিল। সে তাকাতে পারে না মেয়েটার চোখের দিকে। কিছু একটা আছে এই মেয়ের চোখে।
“ভবিষ্যতে কিছু হতে পারে?
” না। কান্না বন্ধ কর! আমি তোমাকে রিজেক্ট করতাম না। তোমাকে একটা চান্স দিতাম। আমার তোমার কথা বলার স্টাইল পছন্দ হয়েছে আর ভয়েজটা পুরাই উফফ। কিন্তু, আমার একটা সমস্যা আছে এজন্য হবে না।
” আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি জিনিসটা কি?
” আচ্ছা বলি তোমাকে, আসলে আমি আমার কাজিনকে বিয়ে করতে চাই। কাজিন বলতে চাচাতো ভাইকে। কিন্তু এখানেই সমস্যা শালা চাচাতো ভাই বড়টাকে আমার বিশেষ পছন্দ না, দ্বিতীয়টা এক্সট্রোবার্ট আমার মতে তাই এইটা ও না। ছোটটা ইন্ট্রোভার্ট। এইটারে ও আমার বিশেষ পছন্দ না আর হেতি ও আমাকে বিশেষ পছন্দ করে না। কিন্তু এইডারেই আমি বিয়ে করমু।
“আর না করতে পারলে কি করবে? ছেলেটা তো তোমাকে পছন্দ করে না আর তুমি ও! তারপর ও কেন বিয়ে করতে চাও?
” ভাই বেনিফিট বুঝতে হবে। আর করতে না পারলে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করবো। ডায়েরেক্টলি বললে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে নেব।
আবির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। কিসের বেনিফিট কাজিন বিয়েতে। সে বুঝতে পারছে না।
” একে তো আরশ আমাকে পছন্দ করে না তার মধ্যে একে বিয়ে করে নিলে সারাদিন ওর সামনে ঘুরঘুর করতে পারবো। এর থেকে শান্তির আর কি হতে পারে। আমার নম্বর ওয়ান শত্রুকে এভাবে শাস্তি দিব। এন্ড বেনিফিট হলো অন্যের বাড়িতে যেতে হবে না। নিজের বাড়ি থাকব ইচ্ছে হলে জামাইয়ের ঘরে যাব না হলে নিজের ঘরে পরে রইবো। আবার কাজ কামের কোন প্যারা নাই। আগে যেমন ছিলাম সেরকম থেকে যাব। একচোখ টিপ দিয়ে বলল,” বুঝলে।
আবির মাথা নাড়ালো। নুসরাত ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আবিরকে সান্ত্বনা দিল,”আমার থেকে বেটার পাবানা আমি জানি তারপর ও বলবো ভালো একটা মেয়ে তোমার লাইফে আসুক তোমার জীবন সাজিয়ে দিবে যে। আর কান্না করে তো আমাকে পাবে না। কাউকে পাওয়া গেলে এভাবে সবাই কান্না করে তাকে হাসিল করে নিত। বি আ ম্যান নট আ বয়। ওকে!
ছেলেটা স্লান হাসল। যে হাসিতে প্রাণ নেই। নুসরাত পিঠে চাপড় মারার জন্য হাত তুলে ও গুটিয়ে নিল। হালকা হেসে ইরহামের দিকে চলে গেল।
” চল বাসায় চলে যাই, আজ আর ক্লাস করতে ইচ্ছদ করছে না।
রাতের খাবার খেতে বসেছেন সবাই। নুসরাত রাতে খায় না সচারাচর আজ খেতে দেখে ইরহাম কিছুক্ষণ পিঞ্চ মারলো।
মেহেরুন নেছা গলা পরিস্কার করে নিলেন। খাবার টেবিলে চোখ ঘুরালেন। আহান আর আরিশা ছাড়া সবাই আছে। ডায়নিং টেবিলে আসার জন্য মেহেরুন নেছা ডাক দিলেন রুহিনি আর ঝর্ণাকে। সবাই বুঝল বিশেষ কিছু বলবেন তাই সবাইকে ডেকে জমায়িত করছেন মেহেরুন নেছা।
” কয়দিন বাঁচমু আর। হডাঢ কইরা একদিন মইরা যাইমু তার আগে আমি আমার নাডিডার বিয়ে দেইকা মরবার চাই।
সবাই খাবার রেখে নড়ে চড়ে বসলেন। খাবার খাওয়া থামিয়ে মেহেরুন নেছার দিকে তাকালেন। জায়িন একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। জায়িন, ইসরাত, আরশ আর নুসরাত প্লেট থেকে হাত তুলল না। আরশ আর নুসরাত খাওয়ায় এমন ব্যস্ত যে, তাদের এই পৃথিবীতে কোনো অস্থিত্ব নেই। খাবার খাওয়া ছাড়া এখানে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু নেই।
“আমি তোমাগো ওইদিন কইছিলাম একডা মাইয়া আমি আমার জায়িনের জন্য পছন্দ কইরা রাকছি তো ওই মাইয়াডার লগে আমি জায়িনের বিয়া দিবার চাইতাছি।
জায়িন খাবার খাওয়া থামিয়ে দাদির দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিল। কথা শেষ হওয়ার জন্য বসে রইল।
” আম্মা আপনি বলেছেন পাত্রী আপনার পছন্দের তো বলুন পাত্রী কে? আমদের তো জানতে হবে কোন মেয়ের সাথে আমার ছেলেকে আপনি পছন্দ করেছেন।
ঝর্ণা আর রুহিনি দুজন দুজনের দিকে তাকালেন। রুহিনি মাথা নেড়ে না করতেই ঝর্ণা ও মাথা নেড়ে কিছু না করল। তারপর নাজমিন বেগমের দিকে তাকাতে দেখে তিনি ও না করলেন এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অসন্তুষ্ট মুখ বানিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ঝর্ণা।
” আচ্ছা পাত্রীরে দেখবার জন্য তোরা আগ্রহী তো রিডি হয়ে নে।
নুসরাত ফোড়ন কেটে বলল,
“দাদি রিডি না রেডি হবে।
” চপ, বেটাছেলে খাইবার খা চুপচাপ। আমার কথা বাঁ-হাইত ঢুকাবি না। তো মাইয়া হইলো গিয়া আমাগো মানে আমার প্রিয় নাডিন্ডা ইসরাত।
জায়িনের ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেল। আরশ আর নুসরাত বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখালো না। আরশ আগে থেকে জানতো তাই প্রতিক্রিয়া জানায়নি কিন্তু নুসরাত এতো নির্লিপ্ত। ইসরাতের খাবার মুখের সামনে নেওয়া হাত ওইভাবে ওখানে স্টপ হয়ে গেল। নাছির সাহেব কেশে উঠলেন। হেলাল সাহেব হা করে স্ত্রী দিকে তাকিয়ে আছেন উনার স্ত্রীর ও সেইম প্রতিক্রিয়া। একমাত্র ইরহাম চিৎকার করে নিজের উচ্ছাস প্রকাশ করলো।
“দাদি ও দাদি এইটা তুমি কি বললা? আমি ভুল শুনতাছি!
ইসরাতের হাত থেকে ভাত পড়ে গেল প্লেটের উপর টপাটপ করে। দাদি এরকম বোম মেরে এতো হাসি খুশি কীভাবে আছেন?
” আম্মা এইটা তুমি কি বললে? জায়িনের সাথে ইসরাতের আমার ভাবতেই শিরশির করছে।
“হেলাল তুমি আমার আব্বা হইতে যাইয়ো না। তুমি আমার পোলা আর আমি তোমার আম্মা। তো আমি তোমার থাইকা ভালা বুঝি।
হেলাল সাহেব চুপ হয়ে গেলেন। ইসরাত আশা করেছিল কেউ তো কিছু বলবে? কেউ কিছু না বললে নুসরাত বলবে এ তো খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত।
লিপি বেগম প্রতিবাদ করলেন,
” মা আপনি কি বলছেন? আমার জায়িনের জন্য আপনি ইসরাত কে ঠিক করেছেন। এইটা কোন কথা হলো। ওরা তো ভাই-বোন একসাথে বড় হয়েছে। এসব কীভাবে সম্ভব!
” যেইভাবে সম্ভব ওইভাবে। আর কিসের ভাই-বোন ওরা। ওরা কোনোদিন কইছে ওরা ভাইবোন।
জায়িন মেহেরুন নেছাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“দাদি! আপনি এটা কোনো কথা বললেন। আর আপনি আমার পারমিশন ছাড়া আমার বিয়ে ঠিক করে নিলেন আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না। জানতে চাইলেন না আমি রাজি কিনা অরাজি!
” এতো সুন্দর একডা মাইয়া রাজি না হইবার কি আছে? ভেংচি কেটে বললেন মেহেরুন নেছা।
“আমি তো একবার বলিনি আপনাকে দাদি আমি বিয়ে করতে চাই।
” বলতে হবে ক্য তুমি প্রাইপ্তবয়স্ক হইছ তোমার বিয়া দেওয়া আমার দায়িত্ব। দুইদিন পর আমি মইরা গেলে কে বিয়া দিব তোমারে?
“কিন্তু আমি বিয়ে করবো না দাদি। এই জীবন যতদিন আছে আমি নিসঙ্গ কাটিয়ে দিতে পারব। আমার কোনো বিয়ের প্রয়োজন নেই।
জায়িন আরেকটা বোম মেরে চলে গেল। মেহেরুন নেছা রাগে হিস হিস করলেন। নুসরাত বিড়বিড় করলো,” ওয়াট দ্যা ফাঁক? এইডা কি হইল।
” বইন গালাগাল বন্ধ কর আর চুপ মাইরা বইসা র!
“এই বাড়িডে আমার কোন মূল্য নেই। আমি এই বাড়ি থাইকা চইলা যাইমু। এই বাড়িতে থাকুম না। বুইরা হইগেছি বইলা কেউ আমার কথাখানা পাত্তাই দিচ্ছে না। বাঁইচা থাইকে কি লাভ?
আরশ কানে কানে বলল,
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২২
” তুমি ভালো নাটক জানো দাদি! পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে চালিয়ে যাও।
আরশ চোখ টিপ দিল। সেই হচ্ছে দুই আঙুল দিয়ে বোঝালো। মেহেরুন নেছা বুড়ো আঙুল দেখিয়া থামঝাপ দেখালেন।খাবার টেবিলে শেষের দিকে বসা নুসরাত তাদের অঙ্গভঙ্গি দেখে মুচকি মুচকি হাসছে তা কেউই খেয়াল করলেন না দু-জনের একজন ও।