প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩০
জান্নাত নুসরাত
দু-তলা বিশিষ্ট বাড়িটি লাল, নীল, সবুজ, ঝাড়বাতি দিয়ে আবৃত। ছাদ থেকে শুরু করে পুরো বাড়ির ভিতর ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে। মেহেদি অনুষ্ঠান উপলক্ষে নুসরাত, অনিকা, মমো, সাদিয়া,সৌরভি আর আরিশা মেচিং কাস্টমাইজ করা ল্যভেন্ডার কালারের ড্রেস তৈরি করেছে। ছয়জন সেইম ড্রেস পরে মেকআপ করতে ব্যস্ত। ব্রাইড পার্লারে রেডি হওয়ার জন্য গিয়েছে।
আশিকের কোনো ধরনের মেহেদি,গায়ে হলুদ,অনুষ্ঠান না হওয়ায়, মমো সৈয়দ বাড়িতে চলে আসছে। লুৎফা বেগম নিজের স্বামীর বাসায় রয়েছেন। আশিকের বিয়ে উপলক্ষে তার স্বামীর বাড়ির অনেক মেহমান তাদের বাসায় আসছেন। তাই তিনি আসতে পারছেন না। তিনি ফোন দিয়ে জানিয়েছেন আগামীকাল তো এমনিতেই কনভেনশন হলে দেখা হবে, তাহলে আজ আর এসে কি করবেন? আর ডেলাদের বাসায় মেয়ের কাপড় পাঠানো এখনো বাকি রয়েছে। তার সব কাজ পড়ে আছে, এখনো পর্যন্ত কিছুই গোছাতে পারেননি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
মাগরিবের আজানের শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। জায়ানের সাদা রঙের কার সৈয়দ বাড়ির ফটকে ঢুকতে দেখা গেল। আরিশা উপর তলা থেকে দৌড় দিয়ে নিচ তলায় গেল বড় আপুকে এগিয়ে আসার জন্য। ইরহাম আর আহান সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে। আরশ স্বাভাবিক ভাবে শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে আছে। বাসা সাজাতে আসা লোকদের দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় কোন ফুল লাগাতে হবে। ইসরাতের বিয়ের সকল দায়িত্ব এসে পড়েছে আরশের উপর।
রাত আটটার দিকে সাজিদা, শুভ, আর শুভ্র আসলো।
বাড়ির কর্তীরা মেহমানদের সেবা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। কাজ করে ফুরসত পাচ্ছেন না, যে একটু গিয়ে রেডি হবেন।
জায়িন নিজের রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। মেহেরুন নেছা সাদা রঙের নতুন শাড়ি পড়ে টুক টুক লাঠির শব্দ করে এদিক থেকে সেদিক হাঁটছেন।
ইসরাতকে আরিশার সাথে নুসরাতদের রুমে রাখা হয়েছে। ইরহামের রুমে এসে গাঠি গেড়েছে সবাই। ইরহাম কিছুক্ষণ পর পর আসে আবার চলে যায়।
“আমাকে একটু ওইটা লাগিয়ে দিবি?
নুসরাত ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইরহামের দিকে। আশ-পাশ চেক করে দেখলপ ছেলেদের মাখার মতো কিছু আছে নাকি? কিন্তু, কিছুই খুঁজে পেল না। নুসরাত বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কি?
“ওই যে তোরা মাখিস ওইটা দে, আমি লাগাবো?
” কোনটা? এক্সেক্ট নামটা বল?
“তোরা যেটা ঠোঁটে দিয়েছিস ওইটা দে?
” আমরা ঠোঁটে লিপিস্টিক দিয়েছি। এটা দিয়ে তুই কি করবি?
“আমি ঠোঁটে মাখবো।
” এ্যাঁ…
“বুঝলি না বলদি, আজ আরশ ভাইয়া,জায়ান ভাইয়ার ফ্রেন্ড আসবে। মেয়েগুলোকে তো পটাতে হবে। আমি ছাড়া আর কোনো হ্যান্ডসাম পুরুষ আছে নাকি এই বাড়িতে।
কিছুটা ভাবসাব নিয়ে পাঞ্জাবির কলার ঠিক করলো ইরহাম।
” এদিকে আয় লাগিয়ে দেই? যদি মেয়ে পটাতে না পারিস দেখবি আমি তোর কি করি?
সৌরভি চ্যাত করে উঠলো। নুসরাতকে সাবধান করে বলল,”নুসরাত লাগিয়ে দিবি না। এই ইরহাইম্মার বাচ্চা তোর একটায় হচ্ছে না। আরো লাগবে, শালা খবিস, বদমাস। বাল লাগাবি মুখে এদিকে আয় আমি লাগিয়ে দিচ্ছি ভালো করে।
“আরে বউ রাগ করো কেন? আমি তো মজা করছি। এমনি লাগাচ্ছি একটু। ঠোঁট গোলাপি করার জন্য একটু দিচ্ছি যাতে ক্যামেরা ম্যান ছবি তুলবে যখন ভালো আসে। আমার পরের প্রজন্ম যাতে আমাদের ছবি দেখে আমাকে হ্যান্ডাসাম ম্যান বলতে পারে। বুঝেছ জান!
” আগে বলবি তো, নাহলে আজ তোর কি করতাম আমি নিজেই জানিনা?
নুসরাত নুড কালার লিপিস্টিক লাগিয়ে দিল ইরহামকে। ইরহাম লিপিস্টিক লাগিয়ে যেতেই আহান দৌড়ে আসলো।
“তোর আবার কি?
” আপু আমি ও দিব?
“কি দিবি?
“ছোট ভাইয়া যা দিয়েছে তাই।
“নাম না বললে বুঝবো কি করে? নাম বল?
” আপু লিপিশটিক।
নুসরাত হা হা করে হেসে উঠলো।
“কি বললি আবার বল?
আহান মুখ কাঁদো কাঁদো বানিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকলো। নুসরাত মেঝেতে বসে আহানকে বিছানায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” আবার বল কি বলেছিস?
আহান বলতে গিয়ে কান্না করে দিল। নুসরাত ঠেসে চুমু খেল আহানের গালে। ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগিয়ে দিয়ে ঠোঁটে হালকা চুমু খেল।
নুসরাত বলল,
“হয়েছে,কান্না করতে হবে না। মেয়েদের মতো ছিঁচকাদুনে হয়েছিস। দেখে আয়, বড় আপু কি করছে?
আহান চোখ মুছতে মুছতে ইরহামের রুম থেকে বের হলো।
“মেকআপ শেষ হলে গুছিয়ে নেই।
” হু গুছিয়ে ফেল।
রাত দশটার দিকে মেহেদি অনুষ্ঠান শুরু হলো। মেহেদি অনুষ্ঠানের জন্য আলাদাভাবে আরশ স্টেজ করিয়েছে যাতে ব্রাইড ফটোশেষন করতে পারে। স্টেজ কিছুটা ল্যাভেন্ডার কালার আর সবুজ কালারের মিশ্রণে। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে কোশন। ব্রাইডের বসার জন্য ডিজাইনিং সোফা আনানু হয়েছে।
ক্যামেরা ম্যান ব্রাইডের বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলছে। কিছুক্ষণ পর গ্রুপ ফটো তোলার জন্য ভাই বোন সবাইকে আসার জন্য বলল ক্যামেরা ম্যান ।
আরশ ছাদে খাবার চেক করতে এসেছিল সবকিছু ঠিক আছে কিনা, কিন্তু মাঝপথে ক্যামেরা ম্যান আরশকে ডাক দিল। আরশ যেতেই তাকে ইসরাতের পায়ের কাছে বসিয়ে দিল।
আরশ বিরক্ত হয়ে বলল,
” আমার অবস্থা দেখছেন ঘামে জবজবে,তার মধ্যে ট্রাউজার আর শার্ট পরে আছি,এইসব ছবি তো এলবাম করা হবে। আমি এই অবস্থায় ছবি তুলবো? কাপড় চেঞ্জ করে এসে ছবি তুলছি।
“ভাইয়া আপনাকে এইভাবেই হ্যান্ডসাম লাগছে। কাপড় চেঞ্জ করতে হবে না! মুখে যদি একটু হাসি আনেন তাহলেই হবে, পুরো নায়কের মতো লাগবে।
আরশ ইসরাতের ডান পায়ের কাছে বসলো। ইসরাত কিছুটা উঁচু কোশনের উপর বসা। মমো আর সাদিয়া তার পাশে বসে হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরহাম আর সৌরভি সবার সামনে শুয়ার মতো করে বসে আছে।
“ভাইয়া পোজ নিয়ে বসে ব্রাইডের বাঁ- পাশে যে আপু বসেছেন তার দিকে তাকান। আর আপু আপনি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা করে একটু হাসুন।
নুসরাত দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো। একে তার সাথে বসিয়ে দিতে হলো। তার তো এর মুখ দেখলেই রাগ আসে । হাসি আসবে কোথা থেকে। জোর করে মুখ টেনে হাসি বের করে আরশের দিকে তাকালো। আরশ নুসরাতের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হতেই নুসরাত চোখ সরিয়ে নিল। তখনি ডি-এস-এল-আর ম্যান ছবি তুলল।
ডি-এস-এল-আর ম্যান ফটো তুলার পর চিৎকার করে বলল,” পার্ফেক্ট ছবি এসেছে।
আরো কিছু গ্রুপ পিক তুলা হলো। ডি-এস-এল-আর ম্যান বলল,”আপুরা সবাই চলে আসুন আর ভাইয়া আপনি থাকুন আর ওই আপু থাকুন।
নুসরাত ইরহামের হাত চেপে ধরলো। ডি-এস-এল-আর ম্যান বলল,”আপু এই ভাইয়াকে ছেড়ে দিন আপনি আর ওই ভাইয়া থাকুন। ব্রাইডের সাথে আপনাদের কিছু আলাদা পিক তুলে দেই।
ব্রাইড মাঝখানে যান আর আপু আপনি ব্রাইডের পায়ের সামনে আসুন আর ভাইয়া আপনি ও আসুন। দু-জন দুজনের ক্লোজ হোন।
নুসরাত কিছুটা আরশের দিকে সরে বসলো। মুখের অবস্থা থমথমে মনে হচ্ছে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ডি-এস-এল-আর ম্যানকে।
“ভাইয়া ক্লোজ হোন আরেকটু।
আরশ একটু নুসরাতের কাছে আসলো।ডি-এস-এল-আরের মনে হয় হলো না এতে সে এগিয়ে এসে দু-জনকে এক সাথে লাগিয়ে বসিয়ে দিয়ে গেল।
” আপু আরেকটু ক্লোজ হোন। হলে ছবি ভালো আসবে।
নুসরাতের রাগের মাথায় যা মুখে আসলো বলে দিল,
“এক কাজ করি ভাইয়া কোলে উঠে বসে যাই। তাহলে আরো ভালো ফটো আসবে।
” হ্যাঁ হ্যাঁ তাই করুন!
নুসরাত হা করে তাকিয়ে তাকলো ডি-এস-এল-আর ম্যানের দিকে। কি বলে শালা? যখন ডি-এস-এল-আর বুঝলো ভুল কিছু বলেছে তখন বলল,”আপু হাসুন তো হাসুন, অনেক সুন্দর ছবি আসছে আপনার আর ভাইয়ার।
নুসরাত সামনের দাঁত বের করে পেত্নিদের মতো করে হাসল। ডি-এস-এল-আর ম্যান বলল,” আপু আপনার আর হাসা লাগবে না আপনি যেভাবে আছেন বসে থাকেন। দাঁতগুলো ভিতরে ঢুকিয়ে নিলে ভালো হয়।
মেহেরুন নেছাকে কোলে করে নিয়ে আসলেন সোহেদ।
ডি-এস-এল-আর কে আদেশ দিয়ে বললেন,”ব্রাইডের ছবি আম্মার সাথে তোলে দাও?
” দাদি আপনি গিয়ে ওখানে বসুন ব্রাইডের পাশে। আর ভাইয়া আপনি ও নিচ থেকে উঠে ব্রাইডের পাশে বসুন।আরে আপু আপনি যাচ্ছেন কোথায়? আপনি ভাইয়ার পায়ের কাছে বসুন। আর পা সামনের দিকে বের করে বসুন যাতে জুতো দেখা যায়।
নুসরাত তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ডি-এস-এল-আর এর দিকে। আরশের পায়ের কাছে বসে পা সামনের দিকে দিলো নুসরাত। আরশ নুসরাতের চুল ধরে টান মারলো নুসরাত পিছন ফিরে আরশের দিকে তাকাতেই ডি-এস-এল-আর ম্যান ঠাস করে ছবি তুলে নিল। জোম করে আরশ আর নুসরাতকে বের করে ছবি তুলল।
ছবিটা কিছুটা দেখতে এরকম আসছে নুসরাত আরশের দিকে তাকিয়ে আর আরশ তার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি বিনিময় করছে। আরশের ঠোঁটে হালকা হাসি আর নুসরাত মুখ কালো করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আরে গ্রুম কই? অনেক তো ব্রাইডের একা ফটো তুললাম এবার গ্রুমকে নিয়ে আসুন। কাপল ফটো তুলবেন না।
আরশ উঠে দাঁড়ালো। প্যান্ট ঝেড়ে জুতো পড়ে নিল।
” আমি গ্রুমকে পাঠাচ্ছি? আপনি ততক্ষণে ওদের ফটো তুলুন।
অনিকা দৌড়ে আসলো। ডি-এস-এল-আর ম্যানকে বলল,”ভাইয়া আমার পিক তুলে দিন?
ডি-এস-এল-আর ম্যান বলল,
“জি আপু চলুন ওদিকে ফটো ভালো আসবে।
নুসরাত তার গ্যাং নিয়ে বসে খাবার খাচ্ছে। সবাই এক এক করে গিয়ে প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসলো। ইসরাতকে নাজমিন বেগম মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন। খাবার খাওয়াতে গিয়ে জলে চোখ টইটম্বুর হয়ে গেল।
” আম্মু কান্না করছ কেন? আমি তো কোথাও যাচ্ছি না? কান্না বন্ধ করো।
ইসরাতের বলতে দেরি হলো নাজমিন বেগমের চোখ থেকে জল চোখ থেকে পড়ে গিয়ে গাল বেয়ে নামতে দেরি হলো না। ইসরাত চোখ মুছে দিল নাজমিন বেগমের।
“আম্মু কান্না বন্ধ করো। পরে আমি ও কান্না করে দিব।
নাজমিন বেগম চোখ মুছলেন মুছে ইসরাতের মুখে ভাত তুলে দিলেন। ভাত খাওয়াতে গিয়ে নাজমিন বেগম ফুঁপিয়ে কান্না করলেন। ইসরাতের মায়ের কান্না দেখে নিজের ও কান্না চলে আসলো। মাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলো। নাজমিন বেগমের ফুঁপিয়ে কান্না হাউমাউ কান্নায় পরিবর্তন হলো। ইসরাত নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু কান্না ধরে রাখতে পারলো না। নাজমিন বেগম তাল মিলিয়ে মেয়ের সাথে কান্না করতে শুরু করলেন। মেহেরুন নেছা চোখের পানি মুছলেন শাড়ির কোন দিয়ে। রুহিনি আর ঝর্ণা সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরা কান্না করে দিলেন। মমো, সাদিয়া, সৌরভি ইসরাতের দিকে তাকায় আর নিজেদের চোখের পানি মুছে।
নুসরাতের মুখ থমথমে। মুখ দেখে বোঝা গেল না মনের ভিতর কি চলছে? ইসরাতের বাহু বন্ধন থেকে মাকে ছোটালো নুসরাত। ভাতের প্লেট নিজের হাতে নিয়ে নাজমিন বেগমকে টেনে ছাদ থেকে নিয়ে আসলো।
” আপু ওদিকে কান্না করছেন সবাই, যাই একটা ফটো তুলে আসি।
“আরে ভাইয়া এদিকে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো আর আপনি আমার ফটো তুলে দিন।
” আপু পরে তুলে দিব, এখন যাই ব্রাইডের ওখানে।
“ভাইয়া লাস্ট ফটো। এটা তুলে দিয়ে চলে যান।
” আপু তুলে দিয়েছি এবার যাই।
“ভাইয়া এদিক থেকে একটা ফটো তুলুন যাতে আমার ফুল ড্রেস ফটোতে আসে। আর এইটা শেষ ফটো।
ডি-এস-এল-আর ম্যান বলল,
“আরে বোন কখন থেকেই তো আপনার ফটো তুলছি। অন্য কাউকে সুযোগ দিন, আমার কাছে মনে হচ্ছে ব্রাইড আপনি উনি না। যত্তসব…
ডি-এস-এল-আর ম্যান ঝাড়ি মেরে চলে গেল অনিকা কে রেখে। অনিকা মুখ কাঁদো কাঁদো বানিয়ে গেল বিচার দিতে আরশের কাছে।
নাজমিন বেগমকে নিয়ে যাওয়ার পর ইসরাতের কান্না থেমেছে। কিন্তু কান্নার করার ফলে নাক,মুখ ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে।
আরশ আর জায়ান মিলে জোর করে ধরে জায়িনকে নিয়ে আসলো। জায়িন আসতে চাইছিল না কিন্তু আরশ বলেছে তুমি যদি এখন রুম থেকে না বের হও আমি আর ছোট ভাইয়া মিলে তোমাকে কোলে করে ছাদে নিয়ে যাব। বাধ্য হয়ে জায়িনের আসতে হলো। আরশের উপর বিশ্বাস নেই সত্যি থাকে দেখা যাবে কোলে করে নিয়ে ছাদে চলে গিয়েছে।
ডি-এস-এল-আর ম্যান আরশকে ছাদে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,” বর কই?
আরশ নিজের পাশে ইশারা করে দেখালো জায়িনকে। ডি-এস-এল-আর ম্যান জায়িনের উপর থেকে নিচের দিকে তাকালো ব্রাইডের কাপড়ের দিকে একবার তাকালো আর একবার জায়িনের দিকে তাকালো। নাক কুঁচকে ডি-এস-এল-আর ম্যান বলল,” এইটা বর!
জায়ান বলল,
“জি!
” একি বেসুরত চেহারা আর কাপড়। ব্রাইডের কাছে দাঁড়ালে মনে হবে কোনো কাজের বেডা এসে দাঁড়িয়েছে। ব্রাইডের মান সম্মান সব খেয়ে দিবে উনি। ব্রাইডের কাছে উনাকে একটু ও মানাবে না। এক কাজ করুন, জায়ানকে ইশারা করে বলল, আপনি ভাইয়া আসুন। আপনাকে উনার থেকে বেটার লাগছে। কনের পাশে আপনাকে দাঁড়ালে কেউ চিনবে না। জায়িনকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,”আপনি চলে যান ভাইয়া।
জায়িন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ডি-এস-এল-আর ম্যানের দিকে। ঘাড়ত্যাড়ার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ভালো করে বললে সে চলে যেতে কিন্তু, এতো বড় অপমানের পর সে যাবে না। সেই এই কাপড় নিয়ে সে ইসরাতের সাথে কাপল ফটো তুলবে।
জায়িন ইসরাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। যারা যারা বসেছিল মেহমান সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো বরের দিকে। বরের পরণে শর্ট ট্রাউজার আর ভাঁজ ফেলা অভার সাইজড টিশার্ট। শর্ট ট্রাউজার পরার জন্য পায়ের হাঁটু অব্দি কালো লোম বের হয়ে আছে।
মমো বলল,
“ইয়াক, কি বিচ্ছিরি লাগছে বড় ভাইয়াকে? মনে হচ্ছে, ফকিন্নির মতো সাত মাস ধরে খাবার পায়নি। আপুকে লাগছে পূর্ণিমার চাঁদ আর বড় ভাইয়াকে লাগছে অমাবস্যার চাঁদ।
জায়িন বলল,
” এই আসুন এসে ফটো তুলুন হা করে মুখ দেখছেন কেন?
ডি-এস-এল-আর ম্যানের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে মোটে ও ইচ্ছুক না জায়িনের সাথে ইসরাতের ফটো তুলতে। আরশ আর জায়ান ফটো তুলার জন্য ডি-এস-এল-আর ম্যানকে বলল। ডি-এস-এল-আর ম্যান মুখ গম্ভীর করে এগিয়ে গেল।
“আপুর ক্লোজ হয়ে দাঁড়ান। আপু ভাইয়ার দিকে তাকান আর ভাইয়া আপুর দিকে তাকান। দুজন দুজনের হাত চেপে ধরে হালকা করে হাসবেন।
জায়িন ডি-এস-এল-আর ম্যানের কথা না শোনে ইসরাতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ইসরাতের কোমর চেপে ধরলো। ইসরাত জায়িনের কাঁধে হাত রাখলো। জায়িন ইসরাতের মুখের দিকে গম্ভীর মুখ নিয়ে তাকালো। আর ইসরাত হালকা হাসি নিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকালো।
কাপল ফটো তুলার পর ইরহাম আর সৌরভিকে ইসরাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বলল। দু জন নিদিষ্ট দূরত্ব নিয়ে হাত চেপে দাঁড়ালো।
হঠাৎ পিছন থেকে ইনায়ার কথা বলার শব্দ শোনা গেল।
জায়ান ইনায়াকে দেখে মুখ গম্ভীর বানিয়ে ফেলল। ইনায়া সবার সাথে কুশল বিনিময় করার পর জিজ্ঞেস করলেন আজ ডেলার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না। ইনায়া বলল হলুদ অনুষ্ঠান শেষ করে সে এখানে এসেছে।
ডি-এস-এল-আর ম্যান ইনায়াকে ডেকে নিয়ে গেল। ইনায়াকে ব্রাইড আর গ্রুমের একপাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আরশকে বলল আসার জন্য আরশ না করে দিল তাই জায়ানকে নিয়ে আসলো ডি-এস-এল-আর ম্যান। তিন কাপলকে দাঁড় করিয়ে গ্রুপ ফটো তুলল। জায়িনকে হাসার জন্য বলা হলে সে মুখ আরো গম্ভীর বানিয়ে ফেলল।
আরশের হঠাৎ করে কল আসায় সে কল ধরে কথা বলতে বলতে নিচ তলায় গেল। ছাদে মানুষের কথা বলার শব্দে ফোনের অপাশ থেকে বলা কথা শোনা যাচ্ছিল না।
” আপনি চলে এসেছেন মিস রুবা?
“জি স্যার আপনাদের বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
আরশ গেইটের সামনে গিয়ে গেইট খুলে দিল। হাসিমুখে রুবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” মিস রুবা এতো লেট করলেন অলমোস্ট রাত এগারোটা।
“আসলে স্যার বাসার কাজ শেষ করে আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠান কি শেষ?
” না এখনো শেষ হয়নি। চলুন উপরে ছাদে চলুন।
রুবাকে নিয়ে ছাদে আসলো আরশ। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল তাদের অফিসের একজন কর্মচারী। মেহেরুন নেছা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুবার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
রুবা আর আরশকে নিয়ে জায়িন আর ইসরাতের পাশে বসিয়ে দিল ডি-এস-এল-আর। আর নুসরাত আর আহান বসল ইসরাতের পায়ের পাশে। সৌরভি ইরহাম আর মমো, সাদিয়া ব্রাইড গ্রুমের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। আরিশা বসলো আরশ আর রুবার সামনে আর অনিকা বসলো আহান আর নুসরাতের পাশে।
একে একে সবাই ফটো তুলল ইসরাত আর জায়িনের সাথে। ইনায়া চুপ মেরে এক পাশে বসে রইলো। ফ্যামেলি ফটো তুলার জন্য সবাই এগিয়ে আসলো।
মেহেরুন নেছা মাঝে বসলেন। উনার একপাশে নাছির সাহেব আর নাজমিন বেগম তাদের কোলে আহান অন্যপাশে হেলাল সাহেব আর লিপি বেগম। পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন শোহেব, ঝর্ণা আর রুহিনি ও সোহেদ তাদের মাঝে আরিশা দাঁড়িয়ে আছে। জায়িন আর ইসরাত কুশনের উপর বসলো। জায়িনের পায়ের কাছে বসল ইরহাম আর ইসরাতের পায়ের কাছে অনিকা। জায়ান বসল ইরহামের পাশে আর ইনায়া বসল অনিকার পাশে। নুসরাত আর আরশ মেঝেতে বসল দুজন দুই কোনায়।
ডি-এস-এল-আর ম্যান বিরক্ত হয়ে বলল,
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৯
“আপনাদের দু-জনকে শুধু বলতে হয় কেন ক্লোজ হয়ে বসার জন্য। ক্লোজ হোন দু-জন। মনে হয়ে একজন ভারত আর আরেকজন পাকিস্তান। কাছে আসুন দুজন। দু-জন দুজনের কাছে আসলে কি এলার্জি হয়ে যাবে।
নুসরাত আর আরশ দুজন গায়ের সাথে গা কিছুটা লাগিয়ে বসলো। ইসরাত জায়িনের দিকে তাকাতেই জায়িন তার দিকে গম্ভীর মুখ নিয়ে তাকালো। জায়ান ইনায়ার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আর ইনায়া হাসি মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে। আরশ আর নুসরাতের মুখ দেখে লাগছে আর কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকলে বোমের মতো ফেটে যাবে। দুজন দুজনের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে।ডি-এস-এল-আর ম্যান ঠাস করে ফটো তুলল আর মেহেদি অনুষ্ঠান শেষ এখানে হলো।