প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১ (৩)
জান্নাত নুসরাত
ড্রয়িং রুম থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে হেলাল সাহেব নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলেন। দারোয়ানের সাথে দাঁড়িয়ে একুশ, বাইশ বছরের এক যুবক ঝগড়া করছে।
“কি হয়েছে রহমান? চেচামেচি করছ কেন?
” এই ছ্যামড়া টাকে নিষেধ করার পর ও জোর কইরা বাড়িতে ঢুইকা গেছে। আমি আটকানোর চেইষ্টা করায় আমায় ধাইক্কা দিয়া ফালাই দিতে ছাইছে।
“আচ্ছা তুমি যাও রহমান। আমি দেখছি!
রহমান চলে গেলেন বাড়ির বাহিরে। হেলাল সাহেব এবার ছেলেটার দিকে তাকালেন।
” কি প্রয়োজন? আর কার সাথে দেখা করতে এসেছ?
“ইসরাতের সাথে।
” নাম কি তোমার? আর ইসরাতের সাথে তোমার কি প্রয়োজন?
“আরমান শিকদার! আর আপনাকে আমার দরকার বলতে বাধ্য নই। যার সাথে দরকার থাকেই বলবো।
” এভাবে বললে হবে না তো। আমাকে বলো তারপর না হয় আমি ইসরাত কে ডেকে দিব।
আরমান চিৎকার করে উঠলো। হেলাল সাহেবের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল,”একবার বলেছি না আপনাকে বলতে বাধ্য নই তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?
হেলাল সাহেব মুখ গম্ভীর করে ফেললেন। হাঁটুর বয়সী ছেলে তার উপর চিৎকার করছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“চিৎকার করছ কেন? একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর ভালো ভাবেই দিলে হয়। এটা ভদ্রলোকের বাড়ি গলা নিচু করে কথা বলো।
আরমানের চিৎকারে সবাই নিজ নিজ রুম থেকে বের হয়ে আসলো। নুসরাত দৌড়ে আসছিল কি হয়েছে দেখার জন্য? সিঁড়ি কাছে এসে আরমানকে দেখে চিনে ওখানেই থেমে গেল। এতো ওই ছেলে?
আরশ নুসরাতের কানের পাশে এসে বলল,
” কোন ছেলে?
নুসরাত দুইপাশে মাথা নাড়ালো কোনো ছেলে না বলে। আরশ প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামলে। জায়িন বাসায় নেই শপিং করার জন্য মলে গিয়েছে। জায়ানের ক্লাইন্ট কল করে বলেছে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য তাই জায়ান ও বাসায় নেই। আরশ হেলাল সাহেবের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, “কি? চিৎকার করছ কেন? হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,এটা ভদ্রলোকের বাড়ি গলা নামিয়ে কথা বলো।
আরমান আরশের কথা না শুনে জিজ্ঞেস করল,
” ইসরাত কোথায়?
আরশ আরমানের গেঞ্জি টেনে ঠিক করে দিল। গেঞ্জির কলার ঝাড়লো এমনভাবে মনে হলো ময়লা ঝেড়ে ফেলছে।
আরশ শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
“কি প্রয়োজন ইসরাতের সাথে?
” আমি ইসরাতকে বলবো। আপনাকে কেন বলবো?
নাছির সাহেব পিছন থেকে এসে বললেন,
“এই ছেলে এই তুমি আমার মেয়ের নাম ধরে ডাকছ কেন? ও তোমার বয়সে বড় হবে আপু বলে ডাকো।
আরমান চিৎকার করে উঠলো,
” ইসরাত কোথায়। তোমাদের বলছি আমাকে এসে এডভাইজ দেওয়ার জন্য। আমার ইসরাতের সাথে প্রয়োজন তোমরা আমায় বাঁধা দিচ্ছ কেন? আমাকে যেতে দাও?
“তুমি কেন আমার মেয়ের কাছে যাবে? তুমি কে?
” তার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই। আমার ইসরাতের সাথে প্রয়োজন আপনারা আমাকে যেতে দিবেন হ্যাঁ অথবা না তে উত্তর দিন। এতো কথা বলছেন কেন?
“আসল কথা বলো তারপর যেতে দিব।
আরমান সবশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
” তোমরা বুঝতে পারছ না আমার ইসরাতের সাথে দরকার। তোমাদের সাথে না।
ইসরাত নিচ থেকে চিৎকারের শব্দ শোনে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আরমানকে সিনক্রিয়েট করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরমানের দিকে। ইসরাত ধীরে ধীরে নেমে আসলো নিচ তলায়।
“কি হয়েছে এখানে?
ইসরাতকে দেখে আরমানের চোখে মুখে ঝলক এসে গেল। ইসরাতের দিকে এগিয়ে যেতে নিতেই আরশ এসে মাঝে দাঁড়ালো। আরমান আরশের দিকে লাল চোখ নিয়ে তাকালো। আরশ আরাম করে দাঁড়ালো আরমানের সামনে। গলা কাথ করে তাকালো আরমানের দিকে।
আরশ শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
” তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ না ছেলে। বুঝতে না পারলে প্রাকটিক্যালি বুঝাতে পারি। তোমাকে কি বললাম?
আরমান শোনলো না আরশের কথা। আরমান ধাক্কা মারলো আরশকে। আরশ আকস্মিক ধাক্কায় নিজের জায়গা থেকে নড়ে গেল। আরমান আরশকে সামনে থেকে সরিয়ে দৌড়ে গিয়ে ইসরাতের হাত চেপে ধরলো। ইসরাত হাত ছাড়াতে চাইলো কিন্তু আরমান হাত ছাড়লো না। আরো জোরে চেপে ধরলো।
আরমান পাগলের মতো করে বলল,
“ইসরাত প্লিজ আমার কথা শুনো! প্লিজ আমার কথা শুনো। একবার শুনো!
ইসরাত নিজের হাতের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে তাকল। আরমান তার হাতের যে যে অংশ স্পর্শ করেছে ওই দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলল,” হাত সরাও, এখান থেকে হাত সরাও!
আরমান হাত আরো জোরে চেপে ধরলো। ইসরাতের কথা শোনলো না, হাত সরালো না ইসরাতের হাতের উপর থেকে।
“ইসরাত তুমি বিয়ে করে নিয়েছ? তুমি কীভাবে বিয়ে করতে পারলে? এটা তুমি করতে পারো না।
ইসরাত আরমানের কথার উত্তর না দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল।
” হাত সরা তুই আমার হাতের উপর থেকে। তোকে বলছি না হাত সরাতে। তুই হাত সরাস না কেনো?
ইসরাত ঝাড়া মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। আরশ এসে আরমানের বুকের কাছের গেঞ্জি চেপে ধরল।
“তোরে বলছি না, যা কথা বলার আমার সাথে বল?
তুই আমাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়ির মেয়ের হাত চেপে ধরিস। সাহস অনেক বেশি মনে হচ্ছে। বুকের পাটা অনেক বড়।
আরমান গেঞ্জি থেকে আরশের হাত ছাড়িয়ে নিল। আরশের বুকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিল। দৌড়ে গিয়ে ইসরাতকে জড়িয়ে ধরল।
” প্লিজ ইসরাত বলো, তুমি বিয়ে করোনি ওসব মিথ্যে। প্লিজ এটা সত্যি বল না। প্লিজ! তুমি বিয়ে করতে পারো না। এটা মিথ্যা,মিথ্যে তাই না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আই লাভ ইউ।
ইসরাত ধাক্কা দিয়ে আরমানকে নিজের থেকে দূরে সরাল। আরমানের গালে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারল। আরমানকে একটা থাপ্পড় মেরে ক্রান্ত হলো না আরো দু-তিনটা থাপ্পড় মারল।
“আমার পারমিশন ছাড়া যেখানে আমি আমার হাত ধরা পছন্দ করি না সেখানে তুই আমাকে জড়িয়ে ধরলি।
ইসরাত হাত তালি দিয়ে বলল,
” বাহ তোর তো অনেক সাহস। তোরে সেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি বুঝিয়েছি? তোকে বুঝানোর জন্য আমার আধঘন্টা সময় ওয়েস্ট হলো। তুই কি বুঝলি? কি বুঝলি তুই? কিছুই বুঝলি না। যেই সেই রয়ে গেলি।
ইসরাত চিৎকার করে উঠল। ড্রয়িং রুমে মিনি কাঁচের টেবিল এক লাথে দূরে উড়িয়ে ফেলল। হাতের কাছে থাকা ফুলের ভাস দূরে ছুড়ে মারল।চিৎকার করে বলল,”আধঘন্টা তোকে আমি কি বুঝিয়েছি? তুই তো কিছুই বুঝলি না। ইসরাত কাঁচের টেবিল তুলে আছাড় মেরে ভেঙে দিল।
“তুই জানতি না আমি বিবাহিত। জানার পর ও তুই আমাকে স্পর্শ করলি। তোর সাহস দেখে আমি স্তব্ধ।
বিবাহিত মহিলাকে স্পর্শ করতে তোর বিন্দুমাত্র লজ্জা লাগল না। তোরে থাপড়ে তোর সামনের পাটির দাঁত ফালাই দেব বেয়াদব।
ইসরাত নিজের রুমে যাওয়ার আগে আরমানের গালে এরো একটা থাপ্পড় মারতে বুলল। রুমে যাওয়ার সময় পায়ের কাছে থাকা চেয়ারে লাথ মেরে গেল। নুসরাত ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। ছেলেটার জন্য তার দুঃখ হলো। আহারে বেচারা এসেছি ভালোবাসি বলতে সাথে ফ্রি কয়টা চড় থাপ্পড় খেল। আরশের দিকে তাকিয়ে দেখল আরশ শার্টের হাত গুটাচ্ছে। নুসরাত যা বুঝার বুঝল, আরমানের পিঠে আজ পরবে।নুসরাত দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামল। আজ এর হাড্ডি গুড্ডি ভাঙবে আরশ। আরমানের হাত চেপে ধরে নিজের পিছনে দাঁড় করাল নুসরাত।
নাছির সাহেব নুসরাতের দিকে তাকালেন ভ্রু কুচকে।
” তুমি ওর হাত ধরে নিজের পিছনে দাঁড় করালে কেন?
নুসরাত সে কথার উত্তর দিল না।
” আরে সবাই বেচারার দিকে এমন ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেন? একজন ব্যক্তি তো আরেকজনকে ভালোবাসতেই পারে তাই বলে আপনারা সবাই মিলে ওকে গণ ধোলাই দিবেন। উঁহু এটা তো ঠিক না। এবারের মতো মাফ করে দিন।
অনিকা ও এসে দাঁড়াল নুসরাতের পাশে।
অনিকা বলল,
“ভাইয়া আপি ঠিক বলেছে আজকের মতো ছেড়ে দিন। আর এইরকম করলে কিছু বলবেন। এবারের মতো মাফ করে দিন।
সোহেদ বললেন,
” ছোট মানুষ বোঝেনি ছেড়ে দাও আরশ। বয়সের তুলনায় ম্যাচুরিটি কম মনে হচ্ছে।
হেলাল সাহেব বললেন,
“বাধ দে আরশ, এমনিতে ইসরাত থাপ্পড় মেরে দেখ গাল লাল করে দিয়েছে।
আরশ এগিয়ে আসলো নুসরাতের দিকে নুসরাত চোখ বাঁকা করে আরশের দিকে তাকাল। আরমানের বুকের কাছের গেঞ্জি ঝাড়তে ঝাড়তে কিছুটা নিচু হয়ে নিজের মুখ আরমানের কানে নিয়ে বলল,”মনে করিস না, এদের কথায় তোকে ছাড়ছি। আজ আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই তোকে ছেড়ে দিচ্ছি। আজ কাউকে পিটাতে ইচ্ছে করছে না। ওহ আরেকটা কথা আর কোনদিন যদি তোকে এই বাড়ির ত্রি-সীমানায় বা আমার চোখের ত্রি-সীমানায় পরিস আমি তোকে জ্যান্ত কবর দিব। গট ইট!
আরশ সরে যেতেই নুসরাত আরমানের হাত চেপে ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে এলো। আরমানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার প্রচুর কষ্ট হলো। পিঠে চাপড় মারল।
আরমান নুসরাতের দিকে তাকাল। নুসরাত দাঁত বের করে হাসল। আরমান নুসরাতের হাসি দেখে কান্না চোখে নিজে ও হেসে দিল। নুসরাত পিঠে আরেকটা চাপড় মারল।
“শুনো ছেলে মনে করো না, আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে বাঁচিয়েছি। তোমাকে দেখে আমার কষ্ট লেগেছে তাই আজ বাঁচিয়েছি। কিন্তু সারাজীবন বাঁচাব এমন নয়। আচ্ছা যা বলতে চাইছিলাম শুনো পড়াশোনা করো ভালো করে, আমি বলব না অন্যদের মতো করে ইসরাতকে ভুলে যাও। ওকে তোমার দূর্বলতা না বানিয়ে তোমার অনুপ্রেরণা বানাও। ভালো করে পড়াশোনা করো। ভালো করে পড়াশোনা করলে, আমি তোমার বিয়ে অনিকার সাথে দিয়ে দিব।মেয়েটা কিন্তু অনেক সুন্দর! আচ্ছা একটা সিক্রেট বলি অন্য কাউকে তুমি বলো না। অনিকা রোজ রাতে ফেসপ্যাক লাগিয়ে ঘুমায়। তোমাকে বলছি তুমি কাউকে বল না যেন।
শুভ্র গালে থাপ্পড় খাওয়ায় আরমানের গাল লাল হয়ে আছে। নুসরাত নোটিশ করল সেটা। পেন্টের পকেট থেকে হাতড়ালো কিছু মুখে লাগানোর জিনিস পাওয়ার জন্য। প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেট বের হয়ে আসলো। নুসরাত সিগারেটের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তার পকেটে সিগারেট কি করে এলো? সিগারেট টা পকেটে পুরে আবার পকেট হাতড়াল কাঙ্কিত জিনিস খুঁজে পাওয়ার জন্য। এই পকেটে থেকে এবার শুকনো পান বের হয়ে আসলো। কাঙ্কিত জিনিস দুই পকেটে খুঁজে না পেয়ে অন্য পকেটে খুঁজল।
” কি খুঁজছ? আর তোমার পকেটে সিগারেট কি করে?
“এক মিনিট দাড়াও খুঁজে পেয়ে যাব? আর সিগারেট , এসব প্রমাণ বুঝেছ! আরশের বিরুদ্ধে জমা করছি। শালাকে একটা বাস খাওয়াতে হবে। আজকাল অনেক উড়ছে।
নুসরাত খুঁজে না পেয়ে হাঁটুর কাছের পকেটে খুঁজল। কাঙ্কিত জিনিস খুঁজে পেয়ে হালকা হাসল। মিনি জনসন লোশনের বক্স বের করে আরমানের দিকে এগিয়ে দিল।
” এটা কি? এটা দিয়ে কি করবো?
“গালে লাগাও, গাল লাল হয়ে গিয়েছে। অনেক জোরে মেরেছে ইসরাত। আহারে বেচারা!
আরমান নিতে না করল নুসরাত হাতের তালুতে জোর করে লোশনের মিনি বক্স পুরে দিল।
” আচ্ছা এখন যাও! আরশ দেখলে তোমাকে আস্তো রাখবে না সাথে তোমাকে ও রাখবে না।
আরমান নুসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকল। যেতে গিয়ে ও ফিরে গেল না। পিছন ফিরে নুসরাতের দিকে তাকাল।
“আমার সাথে গেইট পর্যন্ত চলো।
নুসরাত আরমানের চোখের দিকে তাকাল। চোখ ফুলে গিয়েছে কান্নার করার জন্য। নুসরাত আরমানের সাথে পায়ে তাল মিলিয়ে হেঁটে গেল গেইটের দিকে। নুসরাত হালকা হেসে গেইট খুলে দিল।
” দারোয়ান কোথায়?
“সকালের নাস্তা করার জন্য গিয়েছেন।
আরমান নুসরাতের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে তাকল।
” গেইট বাইরে থেকে আটকিয়ে দিয়ে যেও?
নুসরাত বাড়িতে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াল। আরমান পিছন থেকে ডাক দিল।
“কেন আই হাগ ইউ?
নুসরাত ভ্যাবাচেকা খেয়ে হা করে তাকিয়ে রইল। আরমান উত্তরের আশা করল না। ঝড়ের গতিতে এসে নুসরাতকে জড়িয়ে ধরল। নুসরাতের কানে ফিসফিস করে বলল,” কেন ইউ বি মাই সিস্টার?
নুসরাত কথা বলল না। আরমান নুসরাতের কাধে মাথা রেখে পিঠে হাত দিয়ে হালকা চাপড় মেরে ছেড়ে দিল।
“উত্তরের অপেক্ষায় থাকব। বায় বায় ডিউ।
আরমান বেরিয়ে গেল। নুসরাত অতিরিক্ত শকড হওয়ার হা করে তাকিয়ে তাকল আরমানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ। বাড়িতে ফিরে আসার সময় দু-তলার বারান্দার দিকে থাকাতেই চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। আরশ চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে মুচকি হাসি হাতে মোবাইল যা দু-আঙুল দিয়ে নাচাচ্ছে। নুসরাত যা বুঝার বুঝলো তার আর আরমানের ছবি তুলেছে আরশ।
ইসরাতের পা কেটে গিয়েছে। নাজমিন বেগম ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিলেন।
” চেয়ারে লাথ মারলি কেন? এতো রাগ করার কি ছিল?
ইসরাত কথা বলল না।
“এখন শপিংয়ে যাবি কিভাবে?
ইসরাত মায়ের দিকে তাকাল। তার মা আগের যুগের রয়ে গিয়েছে।
” আম্মু অনলাইনে ওডার করে দিব?
“অনলাইনে ভালো কাপড় খুঁজে পাওয়া যায় নাকি? এসব খারাপ কাপড় দে?
” আম্মু নুসরাত আছে তো ও এনে দিবে।
নুসরাত চিৎকার করে উঠল সে যাবে না। ইসরাত বিরক্তির সাথে তাকাল।
“টাকা দিব যাবি?
নুসরাত চোখ নিচের দিকে নামিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চাপল।বোকা হেসে বলল,” এতো করে যখন বলছিস না গিয়ে হয়? কত টাকার শপিং করবি?
“পঞ্চাশ হাজার টাকা দিব নিয়ে আসিস এতে যা পাস।
নুসরাত টাকার এমাউন্ট শুনে হা হয়ে গেল।
” তুই এতো টাকা কই পেলি?
“আব্বু দিয়েছে।
নুসরাত মুখ কাঁদো কাঁদো করে বলল,
” আমি ঠিকই বলি, আব্বা আমার আব্বা না। যেদিন ধনী হবো আমি অবশ্যই অবশ্যই ডি-এন-এ টেস্ট করব। আমাকে জীবনে তো পঞ্চাশ টাকার বেশি দেয় না।
নাজমিন বেগম বিরক্ত হয়ে বললেন,
“আচ্ছা করে নিস। এখন কানের পোকা খাস না।
নুসরাত মায়ের কথা পাত্তা না দিয়ে মনে মনে গুনল ইসরাতের টাকা থেকে কত টাকা মারা যাবে? মনে মনে ভেবে নিল কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা মেরে দেওয়া যাবে। এটা বোন হিসেবে তার দায়িত্ব।
” আমি যাব আমাকে কত টাকা দিবি?
“কত টাকা নিতে চাস তুই? আজ যতো বলবি ততো দিব?
নুসরাত উড়ে আসার মতো করে এসে ইসরাতের গালে চুমু খেল। আবার সেকেন্ডের সাথে নিজের জায়গায় ফিরে গেল।
” বেশি না মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিলে হবে।
“আচ্ছা দিব নে। কোথায় যাবি?
” লোকাল বাজারে।
“নুসরাত সাবধান লুকাল বাজারে যাবি না। তাড়াতাড়ি যাবি আর তাড়াতাড়ি আসবি! তুই লোকাল বাজারে গেলে বিকেলের আগে বাসায় আসবি না। ইউনিমার্টে যাবি ওখান থেকে কিনে আনবি। দাম নিয়ে ছেঁছড়ামি করবি না। লোকাল বাজারে কাপড় ও ভালো পাওয়া যায় না।
নুসরাত মাথা উপর নিচ নাড়ালো। মনে মনে হিসাব কষলো লোকাল বাজারে গেলে সব টাকা তার পকেটে। আর ইউনিমার্টে গেলে সব টাকা উড়ে যাবে। সে তো লোকাল বাজারে যাবে। কেউ তো আর জানবে না। নুসরাত কাবার্ড থেকে লং টপস বের করে পড়ে নিল। মাথা হিজাব বেঁধে নিয়ে আবার খুলে ফেলল। বাজার ঘুরতে ঘুরতে মাথা গরম হয়ে যাবে পরে। ওড়না ঠিকভাবে মাথায় পেঁচালো!
” আমি কার সাথে যাব?
“দাঁড়া আরশকে বলছি তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
নুসরাত নাজমিন বেগমকে না করতে গেল, কিন্তু তিনি ততক্ষণে আরশকে নুসরাতকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন। আরশ বলল আসার জন্য সে ফ্রি আছে নিয়ে যাবে নুসরাতকে।
নুসরাত মুখ ফুলিয়ে বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আরশ গাড়ি পাকিং এড়িয়া থেকে বের করে নিয়ে আসলো। নুসরাত গাড়িতে উঠে বসলো।
” কোথায় যাবি?
“লালদিঘির পাড়।
” ওখানে কেন? ব্লু ওয়াটারে চল?
“না আমি ওখানে যাব।
আরশ বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” ওখানে কি এমন মধু আছে যে ওখানে তুই যেতে চাচ্ছিস?
“আপনি বুঝবেন না।
” আচ্ছা, শপের নাম বল?
“কিসের শপ?
” আমরা যে মলে যাব তার নাম কি?
“আমরা কোনো মলে যাচ্ছি না। আমরা লোকাল বাজারে যাচ্ছি।
” ইয়াক, ওসবে যাবি। ওসবে কত ভীড় থাকে আমি যাব না। আর কাপড় ও ভালো হয় না।
“আপনি যখন আমার সাথে আসছেন তাহলে আমি যেখানে যাব ওখানে যেতে হবে। নেন গাড়ি টান দিয়ে লোকাল বাজারে নিয়ে যান। আর কে বলেছে কাপড় ভালো হয় না? লোকাল বাজারে কমদামে ভালো প্রোডাক্ট পাওয়া যায়।
আরশ চোখ মুখ বিকৃতি করে গাড়ি স্টার্ট দিল। নুসরাত খুশি মনে জানালার বাহিরে তাকিয়ে তাকলো। আরশ রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে বের হলো। নুসরাত গাড়ি থেকে বের হতেই আরশ গাড়ি লক করে দিল। নুসরাত রাস্তা পার হতে নিতেই আরশ হাত চেপে ধরলো। নুসরাত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো আরশ হাত ছাড়লো না আরো জোরে চেপে ধরলো। নুসরাত আরশের দিকে কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো।
” কি হাত ধরে রেখেছেন কেন? রাস্তা পার হতে দিচ্ছেন না কেন?
আরশ আশ-পাশ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ট্রাফিক পুলিশ, ট্রাফিক সিগনাল এসব নেই।
” আপনি এই লোকাল বাজারে এসে এসব জিনিস খুঁজছেন। এসব এখানে খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে কেন? মেইন টাউন ছাড়া কোথাও এসব খুঁজে পাওয়া যায় না।
আরশ নুসরাতের হাত আরো জোর দিয়ে চেপে ধরলো। নুসরাত আরশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো। সে যা বুঝার বুঝেছে।
“আমি যা ভাবছি তা কি সত্যি?
” তুই কি ভাবছিস?
“আপনি রাস্তা পার হতে ভয় পাচ্ছেন নাকি?
আরশ কিছু বলল না। মুখ করুন বানিয়ে যানবাহনের দিকে তাকিয়ে তাকলো। নুসরাতের হাত ও ছাড়লো না।
” আমি ভয় পাচ্ছি না। এসব যানবাহন যেভাবে চলছে মানুষ রাস্তা পার হতে নিলেই তো উড়িয়ে দিবে। ট্রাফিক সিগনাল থাকলে ভালো হতো।
“আচ্ছা আচ্ছা আসুন আমার সাথে হাঁটুন। এদেশে ট্রাফিক সিগনাল খুঁজে পাওয়া বিলাসিতা।
নুসরাত আর আরশ এক সাথে রাস্তা পার হলো। মার্কেটে গিয়ে ভিড় ভাট্টার ভিতর দিয়ে ফরফর করে হেঁটে গেল নুসরাত। কিন্তু বিপাকে পড়ল আরশ! মানুষের মাঝখান দিয়ে যেতে নিয়ে বারবার আটকে গেল। নুসরাত এগিয়ে এসে আরশকে নিজের সাথে নিয়ে আসলো। নুসরাত হাঁটার সময় পাশ দেখে হাঁটে না। তাই হাঁটার সময় মানুষের সাথে শরীরের স্পর্শ লাগে। তার পাশ তাকানোর সময় নেই সামনের দিকে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে হাঁটে। দু-একজনের সাথে ধাক্কা লাগলো নুসরাতের। আরশ এক হাত দিয়ে নুসরাতের বাহু ধরে কিছুটা তার কাছাকাছি নিয়ে আসলো।
” আমার সামনে হাঁট। আর হাঁটার গতি কমা, ছেলেদের মতো করে হাঁটিস কেন? মেয়েদের মতো করে হাঁট?
“মেয়েরা হাঁটে কীভাবে? আমি কোমর বাঁকিয়ে হাঁটতে পারি না। আমি এইভাবে হাঁটি যা আপনার ভাষায় ছেলেদের মতো।
আরশ নুসরাতের হাত পিছন থেকে চেপে ধরে রাখলো। এই মেয়ে কখন তার সামনে থেকে উধাও হয়ে যাবে আর সে এই ভীর ভাট্টার মধ্যে পড়ে রইবে। তার চেয়েও ভালো নুসরাতের হাত ধরে হাঁটা।
নুসরাত মাঝারি আকারের একটা দোকানে ঢুকলো।
” আপু কি নিবেন?
“জি ভাইয়া, ব্যগ্গি প্যান্ট ওভার সাইজড টি-শার্ট, হুডি আর ফ্লোয়ার প্যান্ট বের করুন।
লোকটা সবকিছু বের করে দিল। নুসরাত সব কালার পাশে রেখে ব্ল্যাক কালারের প্যান্টগুলো আলদা করলো। আরশ একপাশে দাঁড়িয়ে দেখলো মেয়েটা কাপড় কীভাবে কিনছে।
” প্রাইজ কত?
“জি আপু এক হাজার টাকা।
নুসরাত চোখ বড় বড় করে তাকালো। লোকটার দিকে তাকিয়ে একসাথে অনেকবার চোখের পাতা ফেলল।
” এটা না পাইকারি দোকান তাহলে এতো দাম কেন?
“আপু দাম এতো কোথায় মাত্র এক হাজার?
আরশ কিছু বলতে নিবে নুসরাত বলল,
” আপনি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকুন। আমি কথা বলছি।
লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইয়া এসব প্যান্ট আমি সচারাচর কিনি। চারশত বা সাড়ে চারশত টাকায়। সাড়ে চারশত দিব দিবেন।
“না আপু হবে না।
আরশ বলল,
” কিপটেমি করছিস কেন? দিয়ে দে যত বলছে তত?
নুসরাত চোখ রাঙালো। আরশের হাত ধরে বের হতে নিল দোকানদার ডেকে উঠল, “আচ্ছা আপু পাঁচশত টাকা দিয়েন।
” না আমি সাড়ে চারশত টাকা দিব।
“আপু একটু বাড়ান।
” চারশত ষাট টাকা দিব।
“আরেকটু বাড়ান আরো বিশ টাকা বেশি দিয়েন।
” আমি আর দুইটাকা বেশি দিব না। দিলে দিন না দিলে নেই। আমি অন্য দোকানে যাব।
নুসরাত আর আরশ মিলে পুরো মার্কেট রাউন্ড মারলো। নুসরাত ভার্গেনিং করতে করতে একটা জিনিস কিনে যদি পাঁচ টাকা বেশি দিতে হয় তাহলে আর ওখান থেকে কাপড় কিনে না। আরশ হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে উঠলো। ছোটো একটা দোকানের সামনের চেয়ারের উপর বসলো। গরমে মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। ঘাম কপালে আর থুতনিতে জমেছে। আরশ পকেট হাতড়ালো রুমালের জন্য কিন্তু পকেটে রোমাল ঢুকাতেই তো ভুলে গিয়েছে।
“রোমাল আছে?
” হ্যাঁ!
“থাকলে দে?
নুসরাত সাইট ব্যাগ থেকে হ্যালো কিট্টির ছবি ধারী একটা কাপড়ের টুকরো বের করে দিল। আরশ মুখ মুছে নিয়ে পকেটে পুরে রাখলো।
” পরে নিয়ে নিস?
নুসরাত মাথা নাড়ালো। আরশ কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজের হয়রান কমানোর চেষ্টা করলো। নুসরাত তাড়া দিল এখনো কত কি কিনার বাকি রয়েছে এভাবে বসে থাকলে কি হবে? আরশ উঠলো না। সে আর যাবে না। কয়েকটা কাপড় কিনতে এসে সারা দুনিয়া চক্কর কেটে ফেলল। আরশ ঘাড়ত্যাড়ার মতো বসে রইলো। সে আর এই জায়গায় শপিং করবে না। করলে ফিক্সড প্রাইজে যেতে হবে। না হলে সে এখান থেকে এক পা নড়বে না। নুসরাত কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে গেল।
আরশ উঠে দাঁড়ালো। নুসরাতের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটতে লাগলো। নুসরাত নিজের কাঁধ থেকে আরশের হাত সরিয়ে দিল। আরশ তবুও নুসরাতের কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে লাগলো। আরশ নিজের সব ভার নুসরাতের উপর ছেড়ে দিল। নুসরাত বিরক্ত হয়ে আরশের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
“সোজা হয়ে হাঁট? তুই আমায় ঘুরিয়েছিস এবার তোর কাঁধে ভার দিয়ে আমি হাঁটবো। আমার শরীর ছেড়ে দিয়েছে এতো হেঁটে।
গাড়িতে নুসরাত ফ্রন্ট সিটে বসতে যেতেই আরশ ড্রাইভিং সিটে যাওয়ার জন্য বলল। নুসরাত ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসল। একদিন হেঁটে এই অবস্থা শালার? বউকে নিয়ে শপিং করতে আসলে কি হবে? সেদিন তো পৃথিবী
থেকে টা টা বায় বায় হয়ে যাবে।
” এতো হাঁটিয়েছিস আমার পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে। এজীবনে তোর সাথে লোকাল বাজারে শপিং করতে আসবো না। কাপড়ের গাজাখুরি দাম বলছিলি কেন? মানুষ কীভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল?
“মানুষ কীভাবে আমার দিকে তাকাল আই ডোন্ট কেয়ার। যার যেভাবে ইচ্ছা আমার দিকে তাকাক।।হু কেয়ারস? আর কি গাজাখুরি দাম বলেছি? ঠিকই বলেছি তো দাম। এটা লোকাল বাজার বুলে যাচ্ছেন কেন? আপনার ফিক্সড প্রাইজ না।
নুসরাত গাড়ি স্টার্ট দিল। বাজার থেকে বের হয়ে মেইন রোডে উঠল। গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তার অপর সাইডে নিয়ে আসলো। গাড়ি থেকে নেমে চাবি আরশের কাছে দিয়ে দিল। আরশ নুসরাতের কাধে ভর দিয়ে মাহার ভিতর গেল।
আরশ সোজা হয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। নুসরাত গ্লাস খুলে ভিতরে গিয়ে গ্লাস একহাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। আরশ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শো-রুমের ভিতরে গেল। নুসরাত গ্লাস লাগিয়ে দিয়ে ভিতরে সেকশনের দিকে গেল। নুসরাতকে দেখে একটা মেয়ে এগিয়ে আসলো।
” কীভাবে সাহায্য করতে পারি ম্যাম? কি প্রয়োজন আপনার?
“ইনার সেকশন কোথায়?
“আপনার জন্য ইনার নিবেন ম্যাম?
“না আরেকজনের জন্য। এবার বলুন ইনার শেক সন কোথায়?
মেয়েটা দেখিয়ে দিল। নুসরাতকে অন্যদিকে যেতে দেখে নুসরাতের পিছন পিছন মোবাইল টিপতে টিপতে আরশ ও গেল। নুসরাত ইনার হাতে নিয়ে দেখছিল। নিজের পিছনের কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে পিছন ফিরে তাকালো। আরশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক ভ্রু উচালো। আরশ ও এক ভ্রু উচালো। নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা হাসল। ইনার আরশের মুখের সামনে ধরে বলল,”টাডা! আপনি ও কিনবেন নাকি ইনার?
আরশ চোখ ছোট ছোট করে তাকাল নুসরাতের দিকে। এতোক্ষণ মোবাইলের দিকে চোখ থাকার কারণে চার-পাশ চেক করেনি আরশ। যখন চার-পাশে তাকালো তখন দেখলো সে মেয়েলি শেকসনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখের সামনে নুসরাতকে ইনার ধরে রাখতে দেখে মুখ দিয়ে ছিটকে বের হলো,”নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ । কি বলিস তুই এসব? নির্লজ্জ কোথাকার? কোনো লজ্জা নেই তোর ভিতরে। বেলেহাজ মেয়ে।
আরশ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে নুসরাতের দিকে নিজে আবার লজ্জা পেল। মেয়েটা এখনো তার দিকে অন্তর্বাস বাড়িয়ে দিয়ে আছে সাথে দাঁত কেলাচ্ছে। এর কি লজ্জা লাগছে না? এর ভিতর কি লজ্জার ছিটে ফুটো নেই। আরশের নিজের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। মাথা নিচু করে আরশ শো-রুমের বাহিরে বেরিয়ে গেল।
সাইড করা গাড়ি থেকে লোকাল বাজার থেকে কেনা সব কাপড়ের ব্যাগ বের করে আরশের হাতে ধরিয়ে দিল নুসরাত । হাতের ব্যাগগুলো ডিক্কিতে রেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকাল বাজার থেকে কিনা কাপড় মাহার শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। আর লোকাল বাজারের সব ব্যাগ রাস্তায় ফেলে দিল। আরশ নুসরাতের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এ মেয়ে এসব কি করছে? গাড়ির ডিক্কি লাগিয়ে নুসরাত গাড়ির ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো। আরশ ফ্রন্ট সিটে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো, “ব্যাগ গুলো ফেলে দিলি কেন?
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১ (২)
” ও আপনি বুঝবেন না।
আরশ আচ্ছা বলে বাহিরে তাকালো। হঠাৎ মনে হলো কয়টা বাজে? হাতের ঘড়ি চেক করে দেখলো তিনটা ত্রিশ বাজছে। নুসরাতকে গাড়ির গতি বাড়ানোর জন্য বলল।অগত্যা নুসরাত গাড়ির গতি বাড়াল।