প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩২

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩২
জান্নাত নুসরাত

দুপুরের কাটাফাটা রোদ। আরশ ঘেমে শার্ট জবজবে হয়ে গিয়েছে। নিজের ঘামের গন্ধে নিজের বমি চলে আসলো। আরশ ছোট একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামাতে বলল নুসরাতকে। নুসরাত আরশের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এখানে গাড়ি থামাবে কেন? কৌতূহল মনের ভিতর চেপে রেখে গাড়ি রাস্তার একপাশে সাইড করলো। আরশ গাড়ি থেকে নামতে নামতে নুসরাতকে বলল তার সাথে নামার জন্য। নুসরাত গাড়ি থেকে নেমে আরশের দিকে কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো। আরশ তার পিছন পিছন নুসরাতকে আসার জন্য বলে নিজে পকেটে এক হাত গুজে সামনে হেঁটে চলে গেল। নুসরাত গাড়ি লক করে আরশের পিছনে দৌড়ে গেল। পিছন থেকে চিৎকার করে বলল, “আরে দাঁড়ান, আমাকে রেখে চলে যাচ্ছেন কেন?

প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে নুসরাত আরশকে জিজ্ঞেস করলো,”আমরা এখানে আসছি কেন? বিশেষ কেউ কি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে? কারোর সাথে কি আমরা দেখা করতে এসেছি।
আরশ স্বাভাবিকের মতো নুসরাতের এই কথার উত্তর দিল না। নুসরাত আশা ও করলো না উত্তর পাবে। কাচের দরজা ঠেলে আরশ ভিতরে ঢুকলো। তার পিছন পিছন নুসরাত ও ঢুকল। ছোট খাটো রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল নুসরাতের। আরশ ভিতরের দিকের একটি সিটে গিয়ে বসলো। নুসরাত তার পিছু পিছু গিয়ে তার সামনে বসলো। চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো। ছোট রেস্টুরেন্ট হলেও গুছিয়ে সাজিয়ে রাখা। আলাদা একটা শান্তি রয়েছে এই রেস্টুরেন্টে। নুসরাত দু-মিনিট বসে উঠে দাঁড়ালো। তার মতো চঞ্চল মানুষ এক জায়গায় দু-মিনিটের বেশি বসলে চঞ্চলের অপমান হবে। তাই নিজের ফ্রমে ফিরে গেল। এসব চুপ করে বসে থাকা তার দ্বারা সম্ভব না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরশের মোবাইল হাতে কিন্তু চোখ নুসরাতের দিকে। কখন কি না জানো অঘটন ঘটিয়ে দে? এর উপর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই আরশের। নুসরাত আশ-পাশ ঘুরে দেখলো। নীরিবিলি বসে কেউ কোনো কাজ করতে চাইলে এই রেস্টুরেন্টটা বেস্ট হবে। নুসরাত একিউরিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রঙের মাছ দেখলো। ইচ্ছে করলো চুরি করে নিজের প্যান্টের পকেটে পুরে বাড়ি নিয়ে যেতে, নিজের ইচ্ছেকে প্রধান্য দিয়ে একিউরিয়ামে হাত ডুকিয়ে দিতে যাবে পিছন থেকে ওয়েটার বলল,” ম্যাম হাত দিবেন না। জীবাণু লেগে মাছগুলোর ক্ষতি হতে পারে।
নুসরাত নিজের হাত আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনলো।
নুসরাত যখন গভীর মনযোগ দিয়ে রঙ বেরঙের মাছ চুরির করার প্ল্যান করছিল তখন আরশ ডাক দিল। নুসরাত মাছ চুরির প্ল্যান মাথায় রেখে আরশের সামনে গেল। আরশ বলল বসার জন্য। নুসরাত বসে টেবিলে দুটো আইস্ক্রিম এর বক্স দেখে দুটো নিজের দিকে টেনে নিল।

“একটা আমার আর একটা তোর?
” আমার চকলেট টা।
“কিন্তু আমি চকলেট আমার জন্য অর্ডার করছি। তুই আগে বলবি না তুই চকলেট আইস্ক্রিম খাবি। তাহলে তো আমি অর্ডার দিতাম।
” আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন?
“মেয়েরা তো ভ্যানিলা ফ্লেভারের আইস্ক্রিম খেতে পছন্দ করে। আমি মনে করলাম তুই ও পছন্দ করিস! তুই পছন্দ করিস না?
” আমি না করেছি আমি ভ্যানিলা ফ্লেভারের আইস্ক্রিম পছন্দ না।
“তাহলে চকলেট নিয়ে টানাটানি করছিস কেন?

নুসরাত ভ্রু বাঁকিয়ে চাইলো আরশের দিকে। মুখে বলতে তার কি রকম লাগছে? তার দুটো চাই? প্লিজ আরশ আজ খাস না তুই। আমাকে দুটো দিয়ে দে? এই মাছুম টাকে না দিয়ে তুই কীভাবে খাবি! তোর গলা দিয়ে আইস্ক্রিম কীভাবে নামবে ভাই আমাকে বোঝ? কিন্তু নুসরাতের কথা মনে হয় আজ আল্লাহ শুনলেন না। আরশ আইস্ক্রিমের প্যাকেট খুলে চামচ ভরে ভরে খেয়ে আইস্ক্রিমের প্যাকেট সাবার করে ফেলল। নুসরাত শুধু করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশের হাতের আইস্ক্রিমের বক্সের দিকে। খেয়ে নিল পুরোটা! নুসরাত নিজের টা হাতে পুরে রাগ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। আরশ নুসরাতের হঠাৎ রাগের কারণ বুঝলো না। বোঝার চেষ্টা ও করলো না!

বাড়িতে ফিরে নুসরাত গোসল করে খাবার খাওয়ার জন্য নিচ তলায় আসলো। ইতিমধ্যে বাড়ির সবাই খাবার খেয়ে ফেলেছেন। ডায়নিং টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছিল আরশ। নুসরাত প্লেট এনে আরশের সামনা-সামনি চেয়ার টেনে বসে পড়ল। ভাত বেড়ে নিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। আরশ একবার খাবার খেতে খেতে নুসরাতের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে মোবাইল দেখতে ব্যস্ত হলো।
আরশ রিলস দেখছিল। নুসরাত এক পা চেয়ারের উপর তুলে এক পা ভাঁজ করে রেখে ভাত খাচ্ছিল। ভাত খাচ্ছিল বললে ভুল হবে ভাত খাওয়ার তোলনায় মোবাইল দেখছিল বেশি। নুসরাত টেবিলের উপর মোবাইল রেখে হাত বাড়াল ভাতের দিকে। আরশ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাত বাড়ালো ভাতের দিকে। দুজন দু-দিক থেকে ভাতের বাটি চেপে ধরে টানতে লাগলো। আরশ নুসরাতের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।

“নুসরাত আমি আগে নিয়ে নেই তারপর তুই নিস?
” এ্যাঁ বললেই হলো। আমি আগে নিয়ে নেই তারপর আপনি নিবেন।
“নুসরাত ছাঁড়! আগে আমি নিব। আমি বড়, বড়রা যা বলে তা ছোটরা করে।
” কিন্তু আমি ভাতের বাটিতে আগে হাত দিয়েছি। তাই আগে আমি নিব।
“বড় ভাইয়ের কথা শুনিস না তুই। বড় ভাই যা বলে তাই শোনতে হয়। আগে আমি নিব তুই স্পর্শ ও করবি না ভাতে।
নুসরাত শোনলো না। এক হাত দিয়ে ভাতের বাটি চেপে রেখে ভাত খাওয়া হাত ভাতের বাটির ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে ভাত প্লেটে নিয়ে নিল। আরশকে জিহ্বা বের করে ভেঙাল। আরশ শান্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে খাবার টেবিলে রেখে চলে গেল। নুসরাতের কি? সে তার খাবার খেতে মনযোগ দিল। খেলে খাক, না খেলে মরে যাক তার কি? সে খাবার পেলেই হলো। যত্তসব আজাইরা মানুষ জন এই বাড়িতেই থাকে!

ইসরাতের পা কেটে যাওয়ার জন্য জ্বর এসেছে। তাই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে। মাগরিবের আজানের আগে লুৎফা আর মমো আসলো।
সন্ধ্যা বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হওয়ার পর সোফার উপর রাখা শপিং ব্যাগের দিকে চোখ পড়ল। হাত বাড়িয়ে নিতে যাবে নুসরাত এক লাফে কোথা থেকে এসে হাজির হলো ইসরাতের মুখের সামনে? বোকা হাসি দিল ইসরাতের সামনে দাঁড়িয়ে। ইসরাত ভ্রু কুঁচকাল।
” আরে তুই কষ্ট করে ব্যাগ খুলে দেখবি তোর না পায়ে ব্যথা? আমি তোকে দেখাচ্ছি কি কি নিয়ে এসেছি?
ইসরাত বিছানার হেডবোডের সাথে লেগে বসলো। নুসরাত সোফার উপর থেকে ব্যাগ গুলো ছুঁড়ে মারলো বিছানার উপর। নিজে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
প্রথম ব্যাগ থেকে স্কিনি টি-শার্ট কোট আর ব্যাগ্গি প্যান্ট বের করলো। ইসরাত কাপড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। এসব তার জন্য নিয়ে এসেছে? মনের কথা মনে রইলো নুসরাত দেখাতে শুরু করলো।

“এই গুলো দেখে আমার এতো ভালো লাগছে সে জন্য নিজের জন্য নিয়ে আসেছি।
” ও আচ্ছা। আমার জন্য কি এনেছিস?
“এটা ও আমার জন্য নিয়ে এসেছি।
ইসরাত একটা শপিং ব্যাগ খুলল নুসরাত বলল,
“এটা ও আমার জন্য নিয়ে আসছি।
” বইন তুই গিয়েছিলি আমার জন্য কিনতে আর সব তোর জন্য তুলে নিয়ে আসছিস? আমার জন্য কি আনছিস?
ইসরাত সব ব্যাগ খুলে কোট,স্কিনি টি-শার্ট, ব্যগ্গি প্যান্ট,ফ্লেয়ার প্যান্ট,হুডি, ওভার সাইজ টি-শার্ট পেল।জিজ্ঞেস করলো এগুলো কার নুসরাত বলল সব আমার। সব ব্যাগ খোলার পর শেষ ব্যাগ খুলল সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো কয়েকটা ইনার। ইসরাত জিজ্ঞেস করলো,”এগুলো কার? এবার বলিস না এগুলো ও তোর।

“হ্যাঁ হ্যাঁ এই গুলো তোর জন্য নিয়ে আসছি। আর ওই গুলা আমার জন্য নিয়ে আসছি।
” আমার জন্য শপিং করতে গিয়ে সব তোর জন্য নিয়ে আসলি। বাহ, বাহ, নিজের জন্য নিয়ে আসছিস, এখন এই সব আমি নিব। তোর কি এসব কাপড় কম আছে? যে এই গুলা আবার তুলে আনলি।
“কিন্তু তুই তো এসব পড়িস না বাহিরে?
” না পরলে কি হয়েছে এখন থেকে পরবো?
” আচ্ছা পড়িস?
“মোট কত টাকা খরচ হলো?
নুসরাত হিসাব কষলো পনেরো হাজারের মতো খরচ হয়েছে। কত বলা যায়? কত বলা যায়? হুম পাঁচ হাজার টাকা মেরে দিলে ভালো হয়। বাকি গুলা পরে আম্মার কাছ থেকে পটিয়ে নিয়ে চলে আসবে।
” বিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
“বাকিগুলো আম্মার কাছে দিস?
নুসরাত মুখ গম্ভীর করে বলল,
” আচ্ছা।

সোমবার রাত সাড়ে চারটা। ঘুম থেকে সবাই উঠে পড়েছে। নুসরাত এখনো ঘুমাচ্ছে। ইসরাত ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ল। নামাজ পরে বাহিরে হাঁটতে বের হলো। কিছুক্ষণ হাঁটা হাঁটি করে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো। সকাল ছয়টা বাসা থেকে বের হবে। সাতটার ভিতর ইমেগ্রিয়েশন শেষ করে এয়ারপোর্টে ভিতরে যেতে হবে।
ইসরাতকে হালকা নাস্তা করার জন্য টেবিলে ডাকা হলো। হালকা নাস্তা করে ইসরাত রুমে গেল রেডি হওয়ার জন্য। নুসরাতকে এই ফাঁকে ডাক দিল। নুসরাত ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে উঠে বসলো। ইসরাতের দিকে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কে?
ইসরাত মাথায় গাট্টা মারলো। নুসরাত মাথায় কিছুক্ষণ হাত দিয়ে স্পর্শ করে ওভাবে বসে রইলো। ধীরে সুস্থে উঠে ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো ইসরাত চুল বান করছে।

” কি পড়বি?
“শনিবারে যা নিয়ে আসছিস শপিং করে তা থেকে কিছু পড়বো।
ইসরাত কাপড় চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে গেল। হোয়াইট কালার স্কিনি টি-শার্ট, উপরে ব্ল্যাক কালার কোট যার বোতাম খোলা। ব্ল্যাক কালার প্যান্ট সাথে জোগারস। ছোট দেখে গলায় একটা পেন্ডেন্ট আর হাতে স্টোনের কাজ করা ব্রেসলেট পড়ল। গলায় ছোট একটা ব্যাগ নিল।
নুসরাত হা করে তাকিয়ে বলল,
” সুন্দর লাগছে তোকে? বটিফুল।
ইসরাত হালকা হাসল। নিচ তলা থেকে নাছির সাহেব ডেকে উঠলেন। ইসরাত বের হলো রুম থেকে নুসরাত চুলগুলো কোনো রকম বান করে নিচে দৌড় দিল।

ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই। জায়িন এখনো বের হয়নি রুম থেকে। সে রেডি হচ্ছে। ইসরাতের দুটো লাগেজ ইরহাম উপর থেকে গিয়ে টেনে নিয়ে আসলো।নিচ তলায় এনে এক পাশে সাইড করে রাখলো। নুসরাত পন্ডিতি করে লাগেজ আরেকটা আনতে গেল। রুম থেকে বের করে নিজে লাগেজের উপর উঠে বসলো। তারপর শু করে উড়ে যেতে চাইলো কিন্তু লাগেজ উল্টে গিয়ে করিডোরে ধুম করে পড়ল সাথে নিজে ও ধুপ করে মেঝেতে পড়ল।
আরশ রুম থেকে বের হয়ে দেখলো নুসরাত লাগেজের উপর আর লাগেজ নুসরাতের নিচে পড়ে আছে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে নুসরাতের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। নুসরাত আরশের বাড়ানো হাত না ধরে নিজে উঠে দাঁড়ালো। লাগেজ টানতে টানতে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেল। দুই সিঁড়ি নামিয়ে হাপিয়ে গেল। লাগেজ ওখানে ফেলে রেখে নিজে নিচে চলে গেল। আরশ লাগেজ নিয়ে আসলো নিচে।
“ইসরাত রুমে আর কিছু রয়েছে? কিছু থাকলে নিয়ে নাও পরে গিয়ে বলবে এটা আনিনি ওটা আনিনি। ওখানে কিন্তু সহজে কোনো কিছু খুঁজে পাবে না। বাঙালি মার্কেট ছাড়া। তাও অনেক দূরে।
ইসরাত হালকা হেসে বলল সব নিয়ে নিয়েছে।
হেলাল সাহেব বললেন,

” তুমি ইসরাতের নাম ধরে ডাকছ কেন? তোমার বড় ভাইয়ের বউ ভাবি বলে ডাকো?
“কিন্তু ও তো আমার ছোট। আর ভাবি ডাকতে কী রকম লাগবে?
” যেরকম লাগুক সম্পর্কে তো ও তোমার বড়।
“আচ্ছা ডাকব ভাবি।
আরশ ঘড়ি চেক করে দেখলো ছয়টা প্লাস বাজে। জায়িনের মোবাইলে কল দিল।
” কি তোমার এখনো শেষ হয়নি?
“আসছি এক মিনিট। এই তো শেষ।

ইরহাম আর জায়ান মিলে সব লাগেজ নিয়ে গাড়িতে তুলল। আরশ ট্রাউজারের পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। জায়িন কিছুক্ষণ পর নেমে আসলো ছোট খাটো একটা ট্রলি আর লাগেজ নিয়ে। পরনে গ্রে কালার শার্ট আর ব্ল্যাক কালার প্যান্ট। চুলগুলো সবসময়ের মতো কপালের উপর পড়ে আছে। গলার ভিতর দিয়ে ঢুকানো জেন্টস ব্যাগ।
আরশের সাথে বাসা থেকে বের হলো জায়িন। মেহেরুন নেছা এসে জড়িয়ে ধরলেন জায়িনকে। গালে কপালে হালকা করে চুমু খেলেন। ইসরাতকে চুমু খেতে গেলেন ইসরাত মুখ সরিয়ে নিল।
” গোছা করছস আমার উপর?
ইসরাত কথার উত্তর দিল না। মেহেরুন নেছা হালকা জোরে হাসলেন। জোর করে ইসরাতের গালে চুমু খেয়ে নাকে চুমু খেলেন।

“আচ্ছা গোছা কইরা থাক। যেইদিন পোলা মাইয়া লইয়া বিদেশ থাইকা আইবা ওইদিন আমি জিকাইমু পোলা মাইয়া গুলা আইলো কীভাবে? বেশি করে গোছা করো এই বুড়ির উপর।
ইসরাতের গালে আরেকটা চুমু খেলেন। ইসরাত দাদির কথায় কষ্ট লাগলে ও অভিমান থেকে কথা বলল না।
জায়িন, লিপি বেগম আর হেলাল সাহেব কে জড়িয়ে ধরলো। লিপি বেগমকে জড়িয়ে ধরতেই কান্না করে দিলেন। হেলাল সাহেব বললেন ওর খেয়াল রাখবি। না রাখলে তোর আমি ব্যান্ড বাজিয়ে দিব জায়িন। লিপি বেগম ছেলের বুকে দোয়া পড়ে ফু দিলেন। সাথে কান্না করলেন।
ইসরাত মাকে জড়িয়ে ধরলো। নাজমিন বেগম গতকাল রাত থেকে কান্না করছেন। ইসরাত মজা করে বলল,

” আম্মা এতো কান্না করো না। আমরা তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি না। কান্না থামাও!
নাজমিন বেগম ইসরাতের পিঠে হালকা থাপ্পড় মারলেন। লুৎফা আর মমো এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। লুৎফা বেগম একা কান্না করে বাড়িকে মরা বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। জায়িন লুৎফা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো। লিপি বেগম ওড়নার কোণ দিয়ে চোখ মুছলেন। জায়িন নাছির সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো। তিনি কানে কানে কিছু বললেন। সবাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিল জায়িন। যখন নুসরাতকে জড়িয়ে ধরতে গেল নুসরাত বলল,”এক মিনিট।
নিজে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। জায়িনের সাথে মাপ দিল আর কতটুকু লম্বা হলে জায়িনের সমান হবে। আরো ৬ ইঞ্চি লম্বা হলেই হবে।

” ভাইয়া একটু ঝুঁকুন তো।
জায়িন বিনা বাক্যে ঝুঁকলো। নুসরাত নিজের মুখ জায়িনের কানের কাছে নিয়ে বলল,”ইসরাতের খেয়াল রাখবেন। নাহলে এই যে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে কাটা কম্পাস বের করে বলল, এটা দিয়ে চোখ কানা করে ফেলবো। যদি ওর গায়ে একটা আঁচর লাগে আপনার সারা শরীরে সুই দিয়ে কানা করে ফেলবো। ওকে প্রিন্সেস বানিয়ে রাখবেন। বুঝেছেন!
জায়িন উপর-নিচ মাথা নাড়ালো সে বুঝেছে। নুসরাতের কানে কানে বলল জায়িন,”যার ভাগ্যে তুমি তার জন্য ভবিষ্যৎে অনেক দূ্র্ভোগ আছে।

“ধন্যবাদ প্রশংসা করার জন্য। আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছি আপনার এই প্রশংসায় প্রশংসিত হয়ে।
জায়িন আবার লিপি বেগমকে জড়িয়ে ধরলো। তিনি এবার হু হু করে কেঁদে উঠলেন। জায়িন মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ব্যাক সিটে উঠে বসলো। ইসরাত ফ্রন্ট সিটে উঠতে নিবে লিপি বেগম ধমকে পিছনে উঠতে বললেন। ফ্রন্ট সিটে বসল অনিকা, আর জায়ান বসলো ড্রাইভিং সিটে।
আরশ, অনিকা, আহান, নুসরাত আর জায়ান যাবে তাদের বিদায় দিতে। এয়ারপোর্টে যেতে কারোরই ইচ্ছা হচ্ছে না। লিপি বেগম যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু হেলাল সাহেব যেতে দেননি। কান্না কাটি করে এয়ারপোর্টে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবেন। নুসরাত গাড়িতে বসতে নিবে আরশ ধমকে উঠলো।

” এসব পড়ে তুই এয়ারপোর্টে যাবি? থাপড়ে গাল লাল করে দিব। দুনিয়ার সব মানুষ সেখানে থাকবে। তোর যাওয়ার দরকার নেই।
নুসরাত উল্টো ধমকে উঠলো।
“আমি কি গাড়ি থেকে বের হবো। আমি তো গাড়ি থেকে বসে বিদায় দিব। মানুষ তো আর গাড়ির ভিতর ঢুকে আমায় দেখবে না আমি কি পড়ে এসেছি।
” আচ্ছা নিয়ে যাব এই জুতো জোড়া খুলে আয়। অন্য জুতো পড়ে আয়।
“এই স্লিপার জোড়া আমি ইরহামের কাছ থেকে মারামারি করে নিয়ে আসছি। আমি এ জুতো মরে গেলে ও খুলবো না। এই জুতো পরে আমি এয়ারপোর্টে যাব। না হলে ইরহাম অপমান বোধ করবে।
আরশ বিরক্ত হয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। আহান আর নুসরাত ঝটপট গাড়ির পিছনের সিটে উঠে বসলো। আরশের কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না। বললেই এরা তার কথা বলে তার মাথা যা-তা করে দিবে। প্রথমে জায়ানের গাড়ি পরে আরশের গাড়ি বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে গেল।

নুসরাত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। হাত উপরে তুলতেই ইসরাত এসে জড়িয়ে ধরলো। নুসরাত ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। এ আবার এভাবে জড়িয়ে ধরলো কেন? আরশ নুসরাতের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো। নুসরাত পাত্তা দিল না। সে তো ওড়না পড়ে আছে আর তার গেঞ্জি ও হাঁটু সমান তাহলে সমস্যা কি ভাই তোর?এমনি চিড়বিড় করছিস কেন শালা?
ইসরাতের পিঠে হাত রেখে নিজেও জড়িয়ে ধরলো।
“দোয়া করে দিলাম, স্বামীর বাড়ি গিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস কর। নিজে ভালো থাক আমাদের ও ভালো থাকতে দে। ঝগড়া বিবাদ করিস না জামাইয়ের সাথে। জামাই যা বলবে তাই করবি। জামাইয়ের কথা উঠবি, বসবি, শুয়ে পড়তে বললে শুয়ে পড়বি। যা ইসরাত যা জিলে আপনা জিন্দেগি উইথ ইউ্যের হাজবেন্ড ।
ইসরাত জোরে হেসে উঠলো। নুসরাত চাপড় মারলো ইসরাতের পিঠে। ইসরাত নুসরাতকে ছাড়ল োনা।

“মিস করবো?
” তো করিস। আমার মতো একজন ব্যক্তিকে মিস করা জরুরি। মিস না করলে হয় আমার মতো সেলিব্রিটিকে।
“তুই আমায় মিস করবি না?
” না। আমি তো নাচবো কারণ তোর রুম এখন আমার। আমি একা তোর রুমে রাজত্ব করবো। খাবার খাব, প্যাকেট রুমের মাঝে রেখে দিব ফ্লোরে ফেলে দিব। এখনা আমায় আর কেউ কিছু বলবে না। পরিস্কার করা লাগবে না রুম।
ইসরাত তবুও হাসল। নুসরাতকে ছেড়ে দিল। নুসরাত ছাড়লো না।
“তোর বিয়ের গিফট তোর লাগেজের ভিতর দিয়েছি। তোর জামাইরে সাথে নিয়ে খুলিস। ভিরি ভিরি স্পিশাল গিফেট দিয়েয়েছি।
আরশ তাড়া দিল ইসরাতকে। দু-বোন কথা শেষ করলো।তবুও কত কথা বাকি পড়ে রইলো! ইসরাত বিদায় নিল না। ইসরাত যেতে নিয়ে আবার ফিরে আসলো। নুসরাতের গালে চুমু খেল নুসরাত ও কপালে চুমু খেল। তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে বিদায় নিল। মুখ দিয়ে বিদায় না নিলে কি হলো? চোখের দিকে তাকিয়ে বিদায় নিল।
জায়িনকে ও শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরলো জায়ানকে। অনিকা আর আহানকে জড়িয়ে ধরে আহানের গালে চুমু খেয়ে নুসরাতকে জড়িয়ে ধরলো।

” মনে আছো তো কি বলেছি? আর জড়াজড়ি করছেন কেন? বাসা থেকে জড়াজড়ি করতে করতে আসছেন এখানে এসে এতো জড়াজড়ি করার কি আছে?
“হ্যাঁ বোন হ্যাঁ! সব মনে আছে। তাহলে আজ আসি আবার দেখা হবে।
” আর আসার দরকার নেই ওখানেই থাকবেন। কষ্ট করে এসে শরীরটাকে ক্লান্তি দিয়ে কি হবে? ওখানে থাকবেন আসার দরকার নেই।
“ওকে!

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১ (৩)

আরশকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল দু-জন। ইসরাত এয়ারপোর্টের ভিতর থেকে যতটুকু পর্যন্ত দেখা যায় ততটুকু পর্যন্ত পিছন ফিরে চাইলো নুসরাতের দিকে। যে এক দৃষ্টিতে বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকে হালকা ব্যথা অনুভব হলো তবুও মুখে ফুটলো না কোনো কিছু! মেয়েটা কি কষ্ট পাচ্ছে? সে জানে আর তার মন জানে?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here