প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৬
জান্নাত নুসরাত
গতকাল রাতে ঝড় আর সাথে বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতির অবস্থা খুবই খারাপ। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে শীত পড়েছে অনেক বেশি। ইসরাত এক হাত অন্য হাতের সাথে ঘর্ষণ করে হাত গরম করতে চাইলো। তবু ও মনে হলো শীত কমেনি! গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে শরীরে গরম কাপড় জড়ালো। পায়ে বোট পরে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে ক্যাব বুক করলো। প্রয়োজনীয় সব জিনিস পকেটে পুরে ইসরাত এপার্টমেন্ট লক করে বের হয়ে গেল।
“গুড মর্নিং ক্যামেলিয়া।
” গুড মর্নিং ইশরাইট।
“ক্যামেলিয়া ইট’স নট ইশরাইট ইট’স ইসরাত। হাউ আর ইউ?
” আ’ম ফাইন ইশরাইট। আর আমি ইশরাইট বলেছি।
“নো ওটা বলেননি আপনি, আপনি বলেছেন ইশরাইট।
” দুটোই তো এক তাহলে আর সমস্যা কোথায়?
ইসরাত শ্বাস ফেলল। তার নামের তেরো টা বাজিয়ে দিয়েছে ক্যামেলিয়া। ক্যামেলিয়া তার স্বামীকে আনতে গেল ইসরাতের সাথে পরিচয় করানোর জন্য।
লিও স্ত্রী কে বোঝানোর জন্য বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“বেবি এখন কাস্টমার আছে পরে গিয়ে পরিচিত হবো। এখন আমার অনেক কাজ।
ক্যামেলিয়া লিও এর কথা শোনলো না। তার কথা সে এখন বলেছে মানে এখন যেতে হবে।
” শুনো খাবার সার্ভ করে এসেই পরিচিত হবো।
ক্যামেলিয়া গাল ফুলালো। লিও খাবারের ডিস গুলো হাতে নিয়ে ক্যামেলিয়ার গালে চুমু খেয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল।
খাবার সার্ভ করে আসলো, ইসরাতের সাথে পরিচিত হতে। ইসরাতের সাথে পরিচিত হওয়ার আগে লিও ফানি ফানি জোক শোনালো ইসরাতকে। ইসরাত হালকা হাসল কিন্তু ক্যামেলিয়া হেসে গড়াগড়ি খেল। লিও এবং ক্যামেলিয়া এই দম্পতিকে ইসরাতের কাছে মনে হলো প্রচুর আন্তরিক। কারণ দু-দিনের পরিচয়ে তারা ইসরাতের সাথে এভাবে মিশছে যেন তাদের অনেক পুরনো সম্পর্ক।
ক্যামেলিয়া ছটফটে ভাবে বলল,
“আজ আর রেস্টুরেন্ট ওপেন রাখার দরকার নেই। ইশরাইট কে নিয়ে আমি বাহিরে বেড়াতে যাব। ও প্যারিস আসলো আর প্যারিস ঘুরে দেখবে না এটা হয়, একদিন রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকুক। আজ আমাদের হলিডে!
লিও চিন্তিত হয়ে বলল,
” কিন্তু কাস্টমার তো ব্রেক টাইমে এখানে আসবে খাবার খাওয়ার জন্য।
ক্যামেলিয়া স্বামীর উপর বিরক্ত হয়ে বলল,
“তো তার দায়বার কি আমরা নিয়েছি নাকি? আমরা ও মানুষ আমাদের ও রেস্টের প্রয়োজন আছে। আমাদের হলিডে পালন করতে ইচ্ছে হয়। তোমার ইচ্ছে না হলে তুমি এসো না আমি আর ইশরাইট দু-জন চলে যাব। তুমি তোমার কাস্টমারের সাথে টাইম স্পেন্ড করো। তুমি কি মনে করো তোমাকে ছাড়া আমরা যেতে পারবো না। একা একা হারিয়ে যাব। হাসালে ওহে বালক! এই ক্যামেলিয়া প্যারিসের অলি গলি চিনে। আজ আমি বেড়াতে যেতে চাইছি মানে আজ আমি বেড়াতে যাব। কারোর আমাকে থামানোর সাধ্যি নেই। শুধুমাত্র গড ছাড়া। চলো ইশরাইট আমরা যাই। কারোর ইচ্ছে নাহলে আসার দরকার নেই।
” আরে বেবি রাগ করছো কেন? আমি কি বলেছি যাব না। তোমার থেকে ইম্পর্ট্যান্ট আমার কাছে আর কিছু না। চলো চলো একদিন রেস্টুরেন্ট অফ থাকলে কিছু হবে না।
ক্যামেলিয়া হেসে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেল। ইসরাত চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল। লজ্জা সরম নেই এই মেয়ের। আবার মাথায় আসলো এটা তো নরমাল বিষয় এরা তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিপ কিস পর্যন্ত করে।
সৈয়দ বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে। নুসরাত মাথা নিচু করে চুপচাপ ড্রয়িং রুম থেকে চলে যেতে চাইলো হেলাল সাহেব ডেকে উঠলেন। নুসরাতের চোয়াল ঝুলে পড়ল। এখন আবার ডাকছেন কেন? হৃদপিন্ডের গতি ধুপ ধুপ করে বেড়ে গেল। মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ে হেলাল সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালো।
“আরশ তোমার সাথে কি করেছে?
নুসরাতের ভ্রু কুঁচকে গেল। আরশ তার সাথে কি করবে? সে তো করে এসেছে আরশের সাথে কতো কিছু! কপালে ভাঁজ ফেলে ড্রয়িং রুমের চারিদিকে তাকাল। সবার মুখ থমথমে! মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে বিরাট কিছু ঘটেছে। নুসরাত মেহেরুন নেছার দিকে তাকালো। মেহেরুন নেছা শাড়ির কোণ দিয়ে চোখ মুছলেন। নুসরাত কে তার দিকে তাকাতে দেখে চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলেন কি? নুসরাত দু-পাশে মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলল।
হেলাল সাহেব উত্তরের আশায় নুসরাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
” আব,,,
মেহেরুন নেছা নাক টানতে টানতে বললেন,
“ও কি কইব? ও কি কিছু কইতে পারবো এখন। তোমার পোলা ওরে কডনাপ করে নিয়ে গেছে। নিজের মুখে কইতে ওর কষ্ট ওইব না।
নুসরাত বুঝলো মেহেরুন নেছা বাড়িতে আরেকটা গন্ডগোল পাকিয়েছেন। ভালো হয়েছেই গন্ডগোল পাকানোয়। তার জন্যই ভালো, তার কাজ সহজ হয়ে গেল। সেকেন্ডের মধ্যে নুসরাত নিজের মুখ কাঁদো কাঁদো করে দু-হাত মেলে জড়িয়ে ধরোল মেহেরুন নেছাকে। কানে কানে জিজ্ঞেস করলো, ” কি বলেছ দাদা?
মেহেরুন নেছা শাড়ি কোণ দিয়ে মুখের এক পাশ ঢেকে বললেন,”কইছি তোরে কডনাপ কইরা নিয়া গেছে।
নুসরাত হাসল ঠোঁট বাঁকিয়ে। মেহেরুন নেছার গলা জড়িয়ে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলো। চোখ চেপে ধরে রাখলো মেহেরুন নেছার কাঁধে। নুসরাতের ঠোঁটে হাসি কিন্তু মুখ দিয়ে হু হু করে কান্না করার মতো করলো। যা শুনতে করুন শুনালো।
পাঁচ মিনিট পর আরশ বাড়িতে আসলো। নুসরাতকে কান্না করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আরশকে খেয়াল করতেই হেলাল সাহেব তেড়ে গেলেন আরশের দিকে। ইরহাম এসে হেলাল সাহেবকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলো।
“শু*য়ো** বাচ্চা তুই আমাকে বললে তোর বিয়ে দিয়ে দিতাম না ওর সাথে। তুই কু**র বাচ্চা জোর করে বিয়ে করেছিস কেন? গুন্ডা হয়েছিস তুই!
আরশের মনে হলো তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরেছে। হেলাল সাহেবের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সবার দিকে তাকালো। বাড়ির সবাই তার দিকে রুষ্ট চোখে তাকিয়ে আছেন। শুধুমাত্র নাজমিন বেগম তার দিকে না তাকিয়ে নুসরাতের দিকে ক্ষেপা বাঘিনীর মতো তাকিয়ে আছেন।
” তোকে বলেছিলাম তোর কোনো পছন্দ থাকলে বলতি তুই তো বললি পছন্দ আছে। আমি তো তোর পছন্দের কথা মেনে নিয়েছি তাহলে তুই তোলে নিয়ে বিয়ে করতে গেলি কেন রামছাগলের বাচ্চা। তোকে কি বিয়ে দিব না বলছি আমরা?
আরশ কিছু বলতে যাবে হেলাল সাহেব বললেন,
“চুপ আর একটা কথা না, বিয়ে করেছো জোর করে খুব ভালো কাজ করছো। এখন যা করার আমরা করবো তুমি শুধু চুপচাপ আমাদের কথা শুনবে।
আরশ দাঁতের দাঁত পিষে কটমট শব্দ করলো। নুসরাতের দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি তাক করলো। নুসরাত মেহেরুন নেছার কাঁধ থেকে মাথা তুলে আরশের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। আরশকে বুড়ো আঙুল দেখালো উল্টো করে। তারপর দু-হাত মেহেরুন নেছার গলার পাশ দিয়ে নিয়ে এসে মিডিল ফিঙার দেখালো । ঠোঁট উপরের দিকে তুলে মিচকে শয়তানের মতো হাসল।
” নুসরাতের বাচ্চা তোকে আমি ছাড়বো না।
হেলাল সাহেব নুসরাতের দিকে তাকাতেই নুসরাত ন্যাকা কান্না জোরে দিল।আরশ রাগে এক হাত দিয়ে অন্য হাতে চিমটি কাটলো,রাগ ব্যালেন্স করার জন্য! নাহলে রাগ সামলানো মুশকিল হবে! হেলাল সাহেব আরশকে ধমকে উঠলেন,”এতো বড় কাজ করে তোর হয়নি আবার ওকে ধমাকাচ্ছিস! তোর লজ্জা করছে না। এই চোখ নামা নিচের দিকে। নুসরাতের দিকে এভাবে তাকাবি না।
আরশ চিৎকার করে উঠলো,
“আমি ভিক্টিম, তোমরা কেউ কেন বিশ্বাস করছো না। ও আমায় জোর করে বিয়ে করছে। আমি বিয়ে করেনি ওকে। তোমরা ভিক্টিম কে অপরাধী ভাবছো আর অপরাধী কে ভিক্টিম ভাবছো। আমাকে সহানুভূতি না দেখিয়ে ওকে সহানুভূতি দেখাচ্ছ।
নুসরাত হু হু করে কান্নার সাউন্ড আরো বাড়িয়ে দিল। আরশ হা হয়ে গেল এর অভিনয় দেখে। নুসরাতের চোখ বেয়ে টপাটপ পানি পড়ছে যা গাল বেয়ে নেমে যাচ্ছে চিবুকে। চোখে পানি আনলো কীভাবে এটা? আরশ নুসরাতের দিকে হা হয়ে তাকালো।
লিপি বেগম এবার মুখ খুললেন,
” ও তোকে বিয়ে করবে কীভাবে? তুই আমাদের বোকা পেয়েছিস। তোকে জোর করে ও বিয়ে করবে কীভাবে আমাকে বোঝা? আরশ মিথ্যা বললে ঘুছিয়ে বলতে হয়, তোমার কথা শোনেই তো বোঝা যাচ্ছে তুমি মিথ্যা কথা বলছ।
আরশের রাগে নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে হলো। সবাই মিথ্যা কথা বিশ্বাস করে বসে আছে কেন?
হেলাল সাহেব বললেন,
“হয়েছে আর নাটক করতে হবে না! আমরা বুঝতে পারছি কে ভিক্টিম আর কে অপরাধী? এবার মেইন পয়েন্টে আসি বিয়ে করে নিয়েছ ভালো কথা। একদিন করার ছিল আজ করে নিয়েছ তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু আমাদের জানিয়ে বিয়ে করলে আমরা কি বাঁধা দিতাম? তোমাদের ভাইদের কোন ইচ্ছা আমরা অপূর্ণ রেখেছি এই পর্যন্ত। সব পূরণ করেছি তাহলে এটা ও করতাম পূর্ণ। এতো তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিয়ে করে নিয়েছে বলে এখন তো আর বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারিনা। যাও যাও যে যার রুমে যাও! আমি এদের নিয়ে ভেবে জানাবো কি করা যায় এদের। একজন থেকে আরেকজন দুই কাটি উপরে। আর এসব ভালো লাগছে না প্রতিদিন তোমাদের ডং। শরীর খারাপ করছে!
নুসরাত নিজের কান্না থামিয়ে উঠে দাঁড়ালো। এমনভাবে হাঁটলো যেন কেউ ধাক্কা দিলে উল্টে পড়ে যাবে। সে প্রচুর শোকাহত আরশের এই অদ্ভুত আচরণের জন্য। আরশের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় চোখের কোণে জমায়িত পানি বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছল। তর্জনী আঙুলের সাহায্যে বুড়ো আঙুলে লেগে থাকা জল টোকা মেরে দূরে ফেলল। এমনভাবে ফেলে দিল যেন চোখের পানি না, নির্কৃষ্ট কোনো জিনিস ফেলে দিচ্ছে। আরশের কানে তার কথা যায় সেভাবে সাউন্ড রেখে সতর্ক গলায় বলল,” কি যেন বলেছিলেন? মুখের মতো মন ও কালো হু এই রকম কিছু বলেছিলেন, ওয়াট এভার, যাই বলেন, এখন থেকে ওই মন কালোর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। ওয়েট এন্ড ওয়াচ ব্রো! আপনার জীবন যদি তেনা তেনা করে না ছাড়ি আমার নাম বদলে দিবেন মিস্টার আরশ হেলাল।
নুসরাত গা জ্বালানো কথা বলে হাসল। মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করলো। ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলল, “উপস জামাই এভাবে তাকাবেন না, এই যে, বুকের বাঁ- পাশে হাত রেখে বলল,এইখানে ধ্বক করে উঠে।
আরশ ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইলো। নুসরাত অভিনয় করে বলল,”আমাকে মারতে ইচ্ছে করছে উফ, মারতে পারবেন না, আপনার হাত-পা তো বাঁধা। মারবেন কীভাবে? শালার ভদ্রতা!
বাগাতেল গার্ডেন (Jardin de Bagatelle) প্যারিসের একটি ঐতিহাসিক এবং সুন্দর বাগান, যা বাগাতেল প্রাসাদ এর পাশে অবস্থিত। এটি বুট-শঁত-ভঁদ (Bois de Boulogne) পার্কের মধ্যে এবং প্যারিসের পশ্চিম অংশে অবস্থিত। বাগাতেল গার্ডেনটি তার সুবিন্যস্ত ফুলের বাগান, সজ্জিত লন, এবং শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
এখানে বিভিন্ন ধরনের রোজের গাছ রয়েছে, যার মধ্যে ১০,০০০ এরও বেশি রোজ ফুলের জাত রয়েছে।
লিলি, ল্যাভেন্ডার, সিজনাল। এই বাগানে ঋতুভিত্তিক ফুলের সমাহার দেখা যায়, যেমন টিউলিপ, পপি, এবং অন্যান্য রঙিন ফুল। বাগানে বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষ এবং ঝোপঝাড় রয়েছে যা সবুজ পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ছোট ছোট রাস্তা, পাথরের পথ এবং বনভূমি দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুদৃশ্য এলাকা রয়েছে।
বাগাতেল বাগানটিতে বেশ কয়েকটি ছোট পুকুর এবং ঝর্ণা রয়েছে, যা পার্কের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে।
এই বাগানের মধ্যে একটি ছোট প্রাসাদ রয়েছে, যা ১৮ শতকের নব্য ক্লাসিক্যাল আর্কিটেকচারে তৈরি।
প্রাসাদটি একটি বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে এবং একসময় এটি রাজার সময় কাটানোর স্থান ছিল।
বাগাতেল গার্ডেনে বছরে একাধিক ফুলের প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল রোজ ফেস্টিভ্যাল। এই ফেস্টিভ্যাল মে মাসের শেষ সপ্তাহে থেকে শুরু হয়। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গিয়ে শেষ হয় ।এখানে বিভিন্ন ধরনের ফুলের প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বাগানটিতে হাঁটার জন্য অনেক সুন্দর পথ রয়েছে, যেখানে আপনি শান্তভাবে সময় কাটাতে পারেন। বাগাতেল গার্ডেন তার শান্ত, সবুজ পরিবেশ এবং অসংখ্য ফুলের কারণে প্যারিসে একটি জনপ্রিয় স্থান।
ক্যামেলিয়া এতক্ষণ ধরে বাগাতেল গার্ডেন সম্পর্কে ইসরাতকে জানাচ্ছিল। ইসরাত একজন নীরব স্রোতা হিসেবে ক্যামেলিয়ার কাছ থেকে বাগাতেল গার্ডেন সম্পর্কে শুনছিল। ক্যামেলিয়ার কথার মাঝখানে কোনো কথা বলল না। ক্যামেলিয়া ইসরাতের মতো এমন নীরব স্রোতা পেয়ে প্রচুর খুশি তা তার হাসি হাসি মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
ক্যামেলিয়া রাস্তার মাঝখানে হাঁটছে একপাশে লিও ক্যামেলিয়ার হাত ধরে হাঁটছে আর আরেকপাশে ক্যামেলিয়ার হাত ধরে ইসরাত হাঁটছে । ইসরাত যে পাশ দিয়ে হাঁটছিল ওই পাশ দিয়ে লোকজন চলাচল করছিল। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় একজন লোকের সাথে ইসরাতের ধাক্কা লাগলো। ইসরাত পিছন ফিরে তাকালো। লোকটির দিকে না তাকিয়ে চোখ নিচের দিকে রেখে বলল,”আই এম স্যরি মিস্টার!
ইসরাত চোখ উপরে তুলে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। ইসরাতের মতো ওপাশের ব্যাক্তিটি ইসরাতকে এখানে দেখে সমান অবাক হলো। ইসরাত নিজের অবাকতা নিজের ভিতর রেখে আবার স্যরি বলল লোকটিকে। এমন আচরণ করলো লোকটিকে সে জীবনে ও দেখেনি। উনাকে এই প্রথম দেখেছে।
ইসরাতের দিকে অবাক হয়ে তাকালো জায়িন। ইসরাত এখানে কীভাবে আসলো? মনের প্রশ্ন আসলে ও মুখে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই ইসরাতের থেকে খাটো একটি মেয়ে এসে ইসরাতের বাহু ধরে টেনে নিয়ে গেল।
জায়িনের নাম ধরে পিছন থেকে একটি মেয়ে ডেকে
উঠলো, “মিস্টার জাইন! আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?এদিকে আসুন।
” আসছি ম্যাম!
জায়িন মেয়েটার দিকে যেতে নিয়ে পিছন ফিরে বার বার চেয়ে তাকলো কেউ একজনকে দেখার পতিক্ষায়। মনের ভিতর প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি দিল ইসরাত এখানে কি করছে? কিন্তু ইসরাত জায়িনের দিকে দ্বিতীয় বার ফিরে তাকালো না। ফিরে তাকালে দেখতে পেত এক সুদর্শন যুবক তার পানে দৃষ্টি দিয়ে আছে। যুবকের সেই কোমল দৃষ্টিতে অনেক কিছু জানার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
“এই দাঁড়া! আমার কথা আছে তোর সাথে।
নুসরাতকে রুমে দরজা লাগাতে দেখে আরশ চিৎকার করে বলল, “এই দরজা লাগাবি না। হাত ভেঙে দিব দরজা লাগালে। বলছি না কথা আছে তোর সাথে।
আরশ চিৎকার করে নুসরাত কে শাসালো। নুসরাত শুনতে পেল তারপর ও মুখ গম্ভীর করে রুমের দরজা আরশের মুখের উপর ঠাস করে লাগিয়ে দিল।
আরশ হাত মুঠো করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো। দাঁতে দাঁত চেপে কটমট শব্দ করলো। বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে প্রবেশ করলো। নিজের রুমের দরজা শব্দ করে লাগালো। নুসরাতের উপরের রাগ দরজায় প্রকাশ করছে। রুমে ঢুকে টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড়ালো। শাওয়ার না নিলে মাথা ঠান্ডা হবে না! তাইএখন শাওয়ার নেওয়া জরুরি।
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলে চোখ বন্ধ করে পানির নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো গতকাল রাতের নিজের করা কান্ড কারখানা। রাগে ঘুষি মারলো ওয়াশরুমের দেয়ালে। ঘুষি মেরে দেয়ালে নিজে হাতে ব্যথা পেল আরশ। দেয়ালে দুই হাত ভর দিয়ে চোখ খুলল। দেয়ালে ভর দেওয়ার জন্য কৃত্রিম জিম করা পেশি গুলো ফুলে উঠলো। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। টোকা দিলেই মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে রক্ত বের হবে। আরশ আবার চোখ বন্ধ করে নিল। চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছুক্ষণ আগে বিবাহ করা তার বিবাহিত স্ত্রীর মুখ। যে তার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে। শাওয়ার অফ করে আরশ দু-হাতের তালু দিয়ে মুখ থেকে পানি মুছে নিল। বাথটাবের উপর বসে দু-হাতের মুঠোয় চুল চেপে ধরলো। এতো মাথা ব্যথা, শরীরে ব্যথা আর বুকে টনটনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে কেন? এই কেন এর উত্তর নেই আরশের কাছে! হয়তো বা আছে! একটু মনের ভিতর খোঁজ নিলে হয়তো এই কেন এর উত্তর পেয়ে যেত।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৫ (২)
বিশালদেহী পুরুষটা যদি বোকামি না করতো, যদি একটু নিজেকে সামাল দিতো, নিজে আরেকটু ধৈর্য ধরতো, তাহলে ভবিষ্যতে এই রকম ভোগান্তি পোহাতে হতো না।