প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪১
জান্নাত নুসরাত
সন্ধ্যা ছয়টায় দুপুরের রান্না করোল জায়িন। সুগন্ধি পুরো এপার্টমেন্ট মো মো করে উঠলো। ক্যামেলিয়া নাক টেনে সুভাস নিল। মুখ দিয়ে আহা আহা বলে তৃপ্তিদায়ক শব্দ বের করল।
“কি সুভাস? গ্রাণেই তো আমার গ্রাণইন্দ্রিয় সহ পেট ভরে গেল। আজ কি ও আমাদের ওর রান্না করা খাবার খাওয়াবে?
ইসরাত কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইলো। ল্যাপটপ বিছানার এক পাশ থেকে নিয়ে আসলো। নুসরাতকে ভিডিও কল দিল। ক্যামেলিয়া নিজে নিজে কথা বলছে। ক্যামেলিয়ার দিকে ধ্যান না দিয়ে ল্যাপটপে তাকাতেই দেখলো নুসরাত কল কেটে দিয়েছে। ইসরাত কল দিল না আর। ক্যামেলিয়া দরজার ওখানেই দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে। কিছুক্ষণ পর পর নাক টেনে নিয়ে শ্বাস বন্ধ করছে আর শ্বাস ছাড়ছে।
” আহা, গন্ধে তৃপ্তি চলে আসছে। আর খাবার দেখলে তো মনে হচ্ছে আর খেতে হবে না গন্ধ শুকে পেট ভরে যাবে। এতো মজার কি রান্না করছে তোমার রুমমেট?
ইসরাত কিছু বলার পূর্বেই পুরো রুম কাঁপিয়ে ফোন আসলো। ফোনের শব্দে ক্যামেলিয়া বিরক্ত হলো। সে একটা কাজ করছে তার মধ্যে এই ফোন কল এসে তাতে ডিস্টার্ব করছে। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”এর কুকুরের মতো নোংরা মুখ বন্ধ করাও। আমি ডিস্টার্ব হচ্ছি।
ইসরাত মাথা নাড়িয়ে কল ধরলো। নুসরাতের ফিসফিস কন্ঠ ভেসে আসলো।
” কি? এতো রাতে কল করছিস কেন?
ইসরাত উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“তোর রুম অন্ধকার কেন?
” আরে কাজ করছি আর আস্তে কথা বল। নাহলে আমার জামাই ঘুম থেকে উঠে যাবে। আর আমার কাজ করা হয়ে যাবে। সারাদিন কত পরিশ্রম করে আমার জামাইটা। শব্দ করে কথা বলিস না। বেচারার ঘুম ভেঙে যাবে।
ইসরাত কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি কাজ করছিস?
নুসরাতের ত্যাড়া উত্তর শোনে ফাটা বেলুনের মতো মুখ চুপসে গেল ইসরাতের।
“জামাইকে চুমু খাচ্ছি। দেখবি তুই?
ইসরাত আতঙ্কিত গলায় বলল,
“না বোন, দেখবে না। তুই দেখ তোর জামাইকে, অন্যের জামাই আমি দেখে কি করবো?
” তুই চাইলে দেখাতে পারিস। শালা হট হট হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। পুরো হট চকলেট লাগছে।
“ছি্হ নাউজুবিল্লাহ, এসব কি কথা বড় বোনের সাথে।
নুসরাত কথার উত্তর না দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো। ইসরাতের কানে হঠাৎ ঘট ঘট শব্দ আসলো।
” এই কি করছিস তুই?
নুসরাত বাঁকা হাসল। যা অন্ধকারের মধ্যে দেখা গেল না।
“খাট জোরা দেওয়া যেসব স্ক্রু দিয়ে, ওইসব স্ক্রু খুলছি।
” খাটের স্ক্রু খুলে কি করবি? খাট তো ভেঙে যাবে।
“জামাইয়ের মাথা জায়গায় নেই, তাই জায়গায় লাগিয়ে দিব। শালার মাথা মনে হচ্ছে আজকাল খুলে পড়ে যাবে। সারাদিন মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। তাই একটু টাইট দিয়ে দিচ্ছি একমাত্র বোন হিসেবে। পরে আমার সাথে লড়াই করতে এসে পারবে না। স্ক্রু দিয়ে ঢিলে হয়ে যাওয়া মগজ আজ টাইট করে দিব।
ইসরাত মৃদু চিৎকার করে বলল,
” তুই কি পাগল?
“তো এখন কি সার্টিফিকেট দেখাতে হবে, আমি পাগল কি না তা জানানোর জন্য।
ইসরাত তপ্ত শ্বাস ফেলল। এই মেয়ে একটা সোজা কথা জবাব দিবে না। সব সময় উল্টাপাল্টা জবাব দেবে এটাই পণ করে রেখেছে।
নুসরাত নিজের কাজ শেষে বের হয়ে আসলো,খাটের নিচ থেকে। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে এবার আর্তনাদ করে উঠলো।
” এ কি হয়েছে? এটা কখন হলো! আর কীভাবে হলো। কে করেছে এইসব? ওই শালা জায়িন ভাই তোর উপর নারী নির্যাতন করছে নাকি? আমাকে একবার বল, আমি এক্ষুণি পুলিশ নিয়ে আসবো। আমার বোনার গায়ে হাত দেওয়া।
“আরে, এতো ডেস্পারেট হোস না। জাস্ট ছোটো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।
” এ্যাঁ, বললেই হলো ঝেড়ে কাশো তো বাবু। কি হয়েছে? সাফ সাফ করে বল।
ইসরাত ধীরে ধীরে সব খুলে বলল। নুসরাত রাগে দাঁত কটমট করে উঠলো। সে পারলে ওইগুলো কে এক্ষুণি শিক্ষা দিয়ে দিত।
“আচ্ছা ভালো থাক! পরে কথা বলছি। আমার হাতে ব্যথা করছে। আর দুপুরের খাবার এখনো খাইনি।
নুসরাত ইসরাতকে শাসিয়ে বলল,
” নিজের খেয়াল রাখবি, ফল খাবি, জায়িন কে বলবি তোর কেয়ার করতে, সুন্দর ব্যবহার করতে, আর বেশি করে ভালোবাসতে।
ইসরাত হালকা হেসে বলল,
“আচ্ছা।
জায়িন ক্যামেলিয়া কে ডাক দিল। ক্যামেলিয়া মনে করলো জায়িন থাকে উঁকি ঝুঁকি মারতে দেখা ফেলছে। চুরের মতো মুখ বানিয়ে কিচেনে গেল। গিয়ে দেখলো জায়িন অ্যপ্রোণ পড়ে টপাটপ টমেটো কাটছে। কাটতে কাটতে দু-একটা মুখে ঢুকাচ্ছে।
” আপনি গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসুন দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন।
ক্যামেলিয়া ভদ্রতা দেখিয়ে বলল,
“এসবের কি প্রয়োজন? আমরা তো খেয়ে এসেছি।
আরেকবার বলো প্লিজ আমি এগুলো টেস্ট করতে চাই। এগুলো দেখে কতো সুস্বাদু মনে হচ্ছে। আহ আমাকে ডাকছে এরা এদের কে খাওয়ার জন্য।
” না না প্রয়োজন আছে। আপনি গিয়ে বসুন আর আপনার হাজবেন্ডকে ও সাথে নিয়ে আসুন।
ক্যামেলিয়া হে হে করে হেসে বলল,
“এতো করে বলছেন যখন তখন আর না করে কি হবে? আচ্ছা আপনার মন রক্ষাতে আমি বসছি।
জায়িন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলো ক্যামেলিয়ার দিকে।
” আমি কখন এতো বার সাধলাম আপনাকে।
ক্যামেলিয়া শুনলো না সে নাচতে নাচতে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেল। আহা এতক্ষণ ধরে উঁকি ঝুঁকি মারা তবে বিফলে যায়নি। ইসরাইটের রুমমেট টা মনে হচ্ছে খুবই ভালো। যেমন রুপ তেমন ছেলেটার গুণ ও আছে।
জায়িন খাবার পরিবেশন করে ইসরাত কে রুম থেকে আনতে গেল। ধরে ধরে নিয়ে এসে বসালো সোফার উপর।
জায়িন গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যথা পাচ্ছো?
ইসরাত মাথা নাড়িয়ে না বলল। জায়িন ইসরাতের প্লেটে খাবার বেড়ে দিল। ক্যামেলিয়া কে বলার প্রয়োজন হলো না সে নিজ থেকে হাত লাগিয়ে প্লেটে খাবার নিয়ে নিল। তারপর হে হে করে হাসল।
দুপুরের খাবার খেয়ে ক্যামেলিয়া ঢেকুর তুলল। আহ কি মজাদার খাবার? ছেলেটা ভালোই রান্না করতে পারে। খাবার খেয়ে কচ্ছপের মতো পেট উপরের দিকে দিয়ে বসে রইলো ক্যামেলিয়া। ভাবসাব এমন আজ আর এখান থেকে যাবে না। লিও দুয়েকবার যাওয়ার কথা বলল, ক্যামেলিয়া সেটার উত্তর দিল না। ধমক দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে রাখলো। লিও শুধু অসহায় চোখে তাকিয়ে তাকলো ক্যামেলিয়ার দিকে। ক্যামেলিয়া পেটে হাত দিয়ে পেট ভুলাচ্ছে, লিও এর দিকে তাকানোর তার সময় নেই। এতো সুস্বাদু খাবার খাওয়ার পর কার ইচ্ছা হবে বাসায় যাওয়ার। উঁহু কারোর না!
পৃথিবী কাপিয়ে বর্ষণ নামলো। আষাঢ় মাসের বৃষ্টি বিরামহীন চলছে। রাস্তাঘাট স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। সৈয়দ বাড়ির প্রাঙ্গন থেকে বের হয়ে আসলো ব্ল্যাক কালারের Audi RS
মেইন রোডে উঠে গিয়ে গাড়ি স্প্রিড বেড়ে গেল। হাই লেভেলের গান বাজছে গাড়িতে। যা গাড়ির বাহির থেকে ও একটু একটু শোনা যাচ্ছে। গানের সাথে তাল মিলিয়ে গান গাচ্ছে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মেয়েটা।
“ESTAR SOLA Tú PREFIERE’.
” ven Y DAME UN chance PA ‘Guayarte’.
পিছনের সিটে দু-হাত বুকের উপর বেঁধে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে ইরহাম। সে আসতে চায়নি কিন্তু নুসরাত তাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে। পাশের সিট থেকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নুসরাত পাত্তা দিল না। সে এখন গান গাইতে ব্যস্ত।
সামনে জ্যাম দেখে নুসরাত গাড়ি থামালো। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে আশে পাশে তাকালো। নুসরাতদের গাড়ির পাশে এসে আরেকটি অফ হোয়াইট কালার মিশেলে গাড়ি থামলো। অপর পাশের গাড়িটি কাচ নামালো। গাড়ির ভিতর থেকে মাহাদির মাথা বের হয়ে আসলো।
“হেই মামা! আমার কল ধরছিস না কেন? আমি কি করেছি?
আরশ কথা না বলে মুখ ফিরিয়ে রাখলো। ইরহাম ব্যাকসিটের গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুখ বের করলো।
” হ্যালো ভাইয়া! কি অবস্থা?
“এই তো বিন্দাস তোমার কি অবস্থা? আর তুমি কোথায় যাচ্ছো ওর সাথে?
“আজ থেকে আমি অফিস জয়েন করছি। তাই ভাইয়ার সাথে যাচ্ছিলাম।
” গুড!
মাহাদি আবার আরশের দিকে তাকালো। আরশ এদিক-সেদিক তাকালো,মাহাদির দিকে না তাকানোর জন্য। এমন অভিনয় করো সে মাহাদিকে চিনে না।
“ইরহাম নতুন ড্রাইভার নাকি? আগের জনের কি হয়েছে?
ইরহাম কিছু বলতে যাবে নুসরাত ফোড়ন কাটল। গাড়ির ছাদ খুলে মাথা থেকে ক্যাপ সরালো। মাহাদির দিকে তাকিয়ে বোকা হাসল।
” ভাইয়া আমি আপনার একমাত্র, দ্বিমাত্র, ত্রিমাত্র ভাবি। আমাকে চিনতে পারছেন না। এভাবে ড্রাইভার বলে অপমান করতে পারলেন।
মাহাদির চোখ মনে হলো ভিতর থেকে খুলে হাতে চলে আসবে। নুসরাতের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো আরশের ফরমাল শার্ট-প্যান্ট পরে বসে আছে।
কিছুটা নার্ভাস হয়ে মাহাদি বলল,
“ওহ ভাবি আপনি! আপনি এরকম ড্রাইভারের সিটে বসে আছেন, তাই মনে করেছিলাম, নতুন ড্রাইভার।
” আসলে, আমার জামাইয়ের টাকা আজকাল অনেক কমে গিয়েছে তাই ড্রাইভার কে বিদায় দিয়ে নিজে ড্রাইভার হয়ে গিয়েছি। ভবিষ্যতের জন্য সেভিংস করছি। আমার মতো এতো গুণবতী বউ পেয়ে আপনার বন্ধু গুণে গুণান্বিত। তাই না গো।
আরশ কথা বলল না। মুখ শক্ত করে বসে রইল। মাহাদি হে হে করে হাসল।
“ভাবি আপনার কিডন্যাপ করে বিয়ে করা ছাড়া আরো অনেক গুণ আছে মনে হচ্ছে। আমার বন্ধু সত্যিই খুব গর্ববতী। স্যরি স্যরি আই মিন ভাগ্যবতী।
” না না উনি ভাগ্যবতী হবেন কেন? এটা তো ওমেন ভার্সন উনি হবেন মেইল ভার্সন। তাহলে মেইল ভার্সন হলো ভাগ্যবান।
পিছন থেকে গাড়ির হর্ণে নুসরাত সামনে তাকালো। কথা বলায় এতো ব্যস্ত ছিল যে সামনের দিকে তাকায়নি। এতক্ষণে জ্যাম ছুটে গিয়েছে। নুসরাত ঝটপট বিদায় নিল মাহাদির কাছ থেকে। নুসরাত গ্লাস লাগিয়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। হুইল ঘুরিয়ে ঝটপট একপাশ করলো গাড়ি যারা তার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের যাওয়ার জন্য সাইড দিতে।
সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে শক্তপোক্ত দেহের একটা লোক রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কানে ফোন এঁটে কথা বলছিল। দূর হতে লোকটা কে দেখে ইনায়ার চিনতে একটু অসুবিধা হলো না। এটা তার প্রেমিক পুরুষ যে এখন অভিমানী পুরুষে পরিণত হয়েছে। যে গত একমাস ধরে তার ফোন কল, মেসেজেস টেক্স কোনো কিছুর রিপ্লে করছে না। এতো কীসের অভিমান তার সাথে?
হঠাৎ করে জায়ানের দেখা পেয়ে ইনায়ার মনে হলো গ্রীষ্ম কালের খড়া রোদে এক পশলা বৃষ্টির মতো। সময় নষ্ট না করে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো এসে ইনায়া জায়ানকে জড়িয়ে ধরলো। জায়ান আকস্মিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে নিজ জায়গা থেকে দু-এক পা সরে গেল। নিজেকে সামাল দিতে সামনের তারযুক্ত কুটি এক হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরলো।
মুখ দিয়ে চিৎকার বের হতে গিয়ে নিজেকে সামাল দিল। ফোনে ধীরে সুস্থে কথা বলে ফোন রাখলো। আলগোছে মোবাইল পকেটে পুরে ইনায়াকে ঠেলে দূরে সরাতে চাইলো তবুও ইনায়া সরল না। ঝাপটে জড়িয়ে ধরে পরে রইলো জায়ানের বুকে। জায়ান নিজের ঘাড় সমান চুল গুলো ঠেলে পিছনের দিকে সরিয়ে নিল। ইনায়ার পিঠে হাত রাখতে গিয়ে রাখলো না অভিমানে হাত সরিয়ে নিয়ে পকেটে পুরলো।
গম্ভীর গলায় বলল,
“ইনায়া ডিস্টেন্ট মেইনটেইন করো। মানুষ আমাদের দেখছে। এখানে তামাশা করার কোনো মানে হয় না। সরে দাঁড়াও! মানুষ খারাপ বলবে।
ইনায়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। জায়ানের ঘাড়ে দু-হাত দিয়ে চেপে ধরলো। হাতের নক সবগুলো দাঁবিয়ে দিল ঘাড়ের উপর। জায়িন মৃদু চিৎকার দিয়ে ঝটকা মেরে দূরে সরালো ইনায়াকে।
ইনায়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল,
” তুমি আমার কল মেসেজ এর রিপ্লাই দিচ্ছ না কেন? আমি ভুল করেছি তা আমি শিকার করছি কিন্তু সামান্য ভুলের তুমি আমাকে এতো শাস্তি দিচ্ছ কেন? এটা তো আমার পাওনা নয়। তোমাকে ভালোবাসার বদলে তো আমি শুধু কষ্ট পাচ্ছি।
“কে বলেছে ভালোবাসতে আমাকে?
ইনায়া জায়ানের কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরতে গেল জায়ান ধরতে দিল না। দু-হাত চেপে ধরে নিজের গাড়ির কাছে নিয়ে গেল। গাড়ির দরজা খুলে ইনায়াকে উঠার জন্য ইশারা করলো। ইনায়া কান্না করতে করতে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
জায়ান গাড়ি স্টার্ট করলো। ইনায়া জিজ্ঞাসার প্রয়োজন বোধ করলো না। গাড়ি গিয়ে থামলো শুনশান এক জায়গায়। মানুষের উপস্থিতি নেই বললে চলেই। গাড়ির কাচ নামিয়ে দিয়ে বলল, “কি বলবে বলো? আমি শুনছি।
ইনায়া ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো। জায়ান বিরক্ত হলো না। পকেট থেকে রুমাল বের করে এগিয়ে দিল ইনায়ার দিকে। ইনায়া চোখ মুছলো। মুছে ও আবার চোখ ভিজে উঠলো।
” তুমি আমাকে ইগনোর করছো কেন? আর কোনোদিন তোমার সাথে এরকম মজা করবো না। আমি স্যরি বলেছি তো! এবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ। আর এরকম করবো না। প্লিজ আমার কথা শুনো।
কথা বলতে বলতে আবার হু হু করে কেঁদে উঠলো। জায়ান হাত বাড়িয়ে চোখের পানি মুছে দিল ইনায়ার। ইনায়া তবুও কাঁদলো। জায়ান রাগ করতে গিয়েও রাগ করলো না। তার রাগ আসছে না মেয়েটার উপর। এতোদিনের জমা হওয়া অভিমান মেয়েটার কান্না দেখে উড়ে গিয়েছে।
ইনায়া হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো জায়ানকে। জায়ান এবার সরালো না। নিজের বাহুনন্ধনে টেনে নিল ইনায়াকে।
“আর এরকম করবে কোনো দিন?
” আমার চৌদ্দ গুষ্টির জন্মে ও করবো না। আমি নিজের কান ধরছি।
জায়ান হালকা জোরে হাসল। ইনায়া ও হাসল জায়ানের সাথে। ইনায়া মাথা তুলে তাকালো জায়ানের দিকে। জায়ান কপাল দিয়ে কপালে আঘাত করলো।
“কেন আই কিস ইউ্যের লিপস?
ইনায়া লজ্জা পেল। রক্তিম গাল নিয়ে বলল,
” ইয়েস!
ইনায়ার বলতে দেরি হলো জায়ানের ঠোঁটের উপর হামলে পড়তে দেরি হলো না। ধীরে ধীরে নিজের ওষ্ঠের সাথে প্রেয়সীর ওষ্ঠ চেপে ধরলো।
ক্যামেলিয়া কিছুক্ষণ পায়ের উপর পা তুলে বসে থেকে গভীর শ্বাস টেনে নিল। জায়িন খাবারের প্লেটগুলো ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিয়ে রাখছে কিচেনে। ইসরাত অলস ভঙ্গিতে সোফায় বসে আছে।
ক্যামেলিয়া লিও এর কানে কানে কিছু বলল। লিও প্রথমে না করলো কিন্তু ক্যামেলিয়ার জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে গেল। আনছি বলে উঠে গেল।
ইসরাত শূন্য দৃষ্টিতে ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলল। পায়ের ব্যথা কমে ছিল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেড়ে গিয়েছে। পায়ে চিন চিন ব্যথা করছে। ইসরাত ঠোঁট কামড়ে বসে রইলো।
জায়িন কিচেন থেকে চিৎকার করে বলল,
“ইসরাত পেইনকিলার খেয়েছ?
ইসরাত ধীরে বলল,
” হ্যাঁ!
জায়িন কিচেনের কাজ শেষ করে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে ক্যামেলিয়া ডেকে উঠলো।
“এখানে বসো। আমাদের সাথে একটু গল্প সল্প করো। এতো চুপচাপ থাকলে হয়।
জায়িন সোফয় এসে বসলো। লিও এর মধ্যে কয়েকটা কার্ড নিয়ে হাজির। জায়িন একবার ক্যামেলিয়ার দিকে তাকালো আর একবার কার্ডের দিকে তাকালো। ক্যামেলিয়া নিজ থেকে বলল,” চলো ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলি।
জায়িন না করার পূর্বেই ক্যামেলিয়া বলল,
“একদম না করার চেষ্টা করবে না। আমরা চারজন মিলে খেলবো অনেক মজা হবে।
জায়িন কথা বলতে গেলে ক্যামেলিয়া কথা বলতে দিল না। লিও কিচেন থেকে কাঁচের বোতল নিয়ে আসলো। প্রথমবার ঘুরানো হলো। ইসরাতের দিকে গিয়ে থামল। ক্যামেলিয়া হু হু করে চিৎকার করে উঠল।
” ট্রুথ ওর ডেয়ার!
“ট্রুথ!
” ইসরাইটের লাভ কেউ ছিল? বা কাউকে তুমি লাভ করো এরকম কেউ আছে।
জায়িন অধীর আগ্রহে বসে রইলো জানার জন্য। ইসরাত নেতিবাচক উত্তর দিতেই ক্যামেলিয়া বোতল ঘুরিয়ে দিল। এবার লিও এর দিকে থামলো।
“ট্রুথ ওর ডেয়ার!
লিও ট্রুথ বলল। ক্যামেলিয়া কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই ইসরাত থামিয়ে দিল।
” আমি জিজ্ঞেস করবো। লিও আপনার মোট কতজন গার্লফ্রেন্ড ছিল ক্যামেলিয়াসহ এবং ক্যামেলিয়া কত নম্বার।
লিও উৎফুল্ল গলায় বলল,
“আমার মোট দশটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। আর ক্যামেলিয়া ৭ নম্বার গার্লফ্রেন্ড।
ক্যামেলিয়া ক্ষেপা বাঘিনীর মতো তাকালো। লিও ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে আর তাকালো না। দেখে মনে হচ্ছে আজ তার উপর ফ্ল্যাটে গিয়ে ঘুর্ণিঝড় হবে। ইসরাত আবার বোতল ঘুরানোর জন্য বলল। ক্যামেলিয়া ঘুরালো এবার জায়িনের দিকে গেল। জায়িন আগেই বলল ট্রুথ। ক্যামেলিয়া ব্যাঙ্গের মতো লাফ দিয়ে বলল সে খেলবে না। কেউ কেন ডেয়ার নিচ্ছে না। জায়িনকে ডেয়ার নিতে হবে। অগত্যা জায়িন ডেয়ার নিল। ক্যামেলিয়া একটা কাঁচের বক্স জায়িনের দিকে এগিয়ে দিল। জায়িন চুপচাপ একটা কাগজ হাতে তুলে নিল।
ক্যামেলিয়া নিজের কাছে নিল কাগজের ছোট্ট টুকরো টা। ঝটপট কাগজটা খুলে পড়ল, পড়ে হে হে করে হাসল।
” কি লিখা আছে?
ক্যামেলিয়া জোরে জোরে পড়তে শুনাতে লাগল,
“কিস ইউ্যের রুমমেট।
জায়িন চোখ বড় বড় করে তাকাল। ইসরাত বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে চাইল কিন্তু ক্যামেলিয়া উঠতে দিল না। নিজের সাথে ইসরাতকে ধরে বসিয়ে রাখল।।
জায়িন গম্ভীর গলায় বলল,
” এটা করা সম্ভব নয়, অন্য কিছু ডেয়ার দাও।
ক্যামেলিয়া একইভাবে বলল,
“ডেয়ার যা আসছে তাই করতে হবে। বদলানো যাবে না। তাড়াতাড়ি কিস করো আরো তো খেলতে হবে।
জায়িন ইসরাতের দিকে অসহায় চোখে চাইল। ইসরাত প্রতিবাদ করতে চাইল ক্যামেলিয়া বলল,” এটা সে নিয়েছে আমি দিয়ে দেইনি। ঝটপট এবার চুমু খাও ইসরাইটের রুমমেট। চুমু খেয়ে ডেয়ার পূরণ করো। নইলে তোমাকে শাস্তি দেওয়া হবে। শাস্তি হিসেবে আমি তোমাকে চুমু খাব। রেডি হও তার জন্য মিস্টার রুমমেট।
জায়িন ইসরাতের দিকে তাকাল। ইসরাত মাথা নাড়িয়ে না করল জায়িন শুনল না। এই মেয়েকে চুমু খাওয়ার থেকে ইসরাতকে চুমু খাওয়া ঢের ভালো। মেয়েটার স্ত্রী একটা চুমু খেলে কিছু হবে না। জায়িন ইসরাতের ঘাড়ের পিছন দিয়ে একহাত নিয়ে ইসরাতের মাথা চেপে সামনের দিকে নিয়ে আসলো। আলগোছে কপালে চুমু খেল। ক্যামেলিয়া লাফ দিয়ে উঠল। চিৎকার করে বলল, “এটা হবে না। তুমি ওর লিপে কিস করলে না কেন? তুমি চিটিং করেছ।
জায়িনের সোজা উত্তর,
” এখানে লেখা ছিল না কোথায় চুমু খেতে হবে?
ক্যামেলিয়া লিও এর দিকে ক্ষুব্ধ চোখে তাকাল। পারলে এখনই ভেজে খেয়ে ফেলবে। কএন লিখে দিল না লিপে কিস করতে হবে।
অফিসের দু-তলায় আরশের পিছন পিছন নুসরাত আর ইরহাম আসলো। দরজা ঠেলে আরশ ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেল। আরশ আর ইরহাম সামনের দিকে হেঁটে গেল কিন্তু নুসরাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। এ বাবা এ এভাবে চলে যাচ্ছে কেন? তাদের পরিচয় করাবে না সবার সাথে। পরিচয় না করালে কি হবে সে নিজে পরিচিত হয়ে নিবে। তাই আলম সাহেব কে বলে একটা মাইক আনিয়ে নিল। চিৎকার করে সবার দৃষ্টি নিজের দিকে নিয়ে নিল।
“হ্যালো গাইজ! এ্যাটেনশণ প্লিজ। কেউ যখন আমার পরিচয় করাচ্ছে না আমি নিজেই আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে নিচ্ছি। আপনারা আপনাদের মোবাইলের ক্যামেরা অন করে নিন। পরে আবার আমি বলতে পারব না। একবার বলব পরে শুনতে হলে মোবাইলের রেকর্ড অন করে নিবে। এবং মনোযোগ সহকারে শুনে নিবেন।
” আপনাকে আমরা চিনি ম্যাম। তাহলে আর পরিচয়ের কি প্রয়োজন।
নুসরাত মুখ মাইক ধরে বিরক্তির স্বরে বলল,
“আরে এটা তো একভাবে আজ থেকে আরেকভাবে চিনবেন। আর আমার কথার মাঝখানে কথা বলবেন না। তাহলে পরিচয় দিয়ে দেই, আপনাদের স্যারের একমাত্র স্ত্রী আমি। আপনাদের স্যারকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করার জন্য আপনাদের দাওয়াত দিতে পারিনি। পরে অনুষ্ঠান হলেও অব্যশই দাওয়াত পাবেন।
নুসরাত বুক ফুলিয়ে কথা বলা শেষে সবার দিকে তাকাল। সবাই তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
” কি ভাই? হাত তালি দিন এতো বড় সুসংবাদ দিলাম আপনাদেরকে। আপনারা এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার মুখ দেখছেন কেন? ক্লেপ ক্লেপ ক্লেপ….
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪০
নুসরাত হাত তালি দিয়ে দেখাল হাততালি কীভাবে দিতে হয়? সবাই হা করে তাকিয়ে হাততালি দিল। আরশ এসে নুসরাত কে টেনে নিয়ে নিজের সাথে গেল। নুসরাত পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল,”আমার জামাইকে কংগ্রেস বলুন। আরে আপনারা তো দেখছি কোনো কাজের না। শুধু মুখ দেখা ছাড়া। সবগুলো কে আমি ছাটাই করবো। এজন্য ব্যবসার কোনো উন্নতি নেই। আমি এসে গেছি এখন উন্নতির উপর উন্নতি হবে।
আরশ মুখ চেপে ধরলো। এরপর ও নুসরাত চিৎকার করে কথা বলল যা উপর থেকে ভুভু শব্দ আকারে শোনা গেল।