প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৩

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৩
জান্নাত নুসরাত

শীতের সকাল। কুয়াশার চাদরে ভিজে আছে পুরো পৃথিবী। আরশ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের পর্দা দু-পাশ মেলে দিল যাতে সকালের স্নিগ্ধ বাতাস রুমে প্রবেশ করতে পারে। হালকা বাতাসে রুমের পর্দা উড়তে লাগলো। চোখে এসে আলো লাগায় নুসরাত কম্ফোর্টার দিয়ে মাথা ঘুরে শুয়ে পড়ল।
আরশ শর্টস, ঢিলে ঢালা টি-শার্ট, পায়ে জোগারস পরে রেডি হয়ে গেল। রুম লক খুলে বের হতে যাবে নুসরাত ঢুলে ঢুলে উঠে বসলো। আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বের হতে যাবে নুসরাত বলল, “আমি ও যাব!
আরশের নির্লিপ্ত গলার স্বর,

” কোথায় যাবি তুই?
“আপনার সাথে জিমে যাব। কয়েকদিন ধরে আমার মনে হচ্ছে ক্যালরি বেশি হয়েছে, তাই জিম করে ক্যালরি কমাবো।
” তুই এভাবে যাবি?
নুসরাত চুল বান করতে করতে বলল,
“তো এতে খারাপ কি?
” যা ব্রাশ করে আয় আমি অপেক্ষা করছি।
“ব্রাশ জিম থেকে এসে করবো। চলুন চলুন মর্নিং ওর্য়াকে যেতে লেট হচ্ছে সাথে জিমে ও। তাড়াতাড়ি চলুন। দেরি করে ফেলছেন।
নুসরাত আর আরশ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো। নুসরাত গ্যারেজের দিকে যেতে নিলে আরশ জিজ্ঞেস করলো,” ওদিকে কি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ওদিকে গ্যারেজ।
আরশ বিরক্ত হয়ে বলল,
” তোর কি মনে হয়? আমি জানি না ওদিকে কি আছে?
আমি বলতে চাইছি ওদিকে কি করতে যাচ্ছিস।
“গাড়ি বের করতে যাচ্ছি।
” গাড়ি দিয়ে কি করবি তুই?
“আরে গাড়ি দিয়ে কি করে আপনি জানেন না। গাড়ি দিয়ে আমরা জিমে যাব।
“তোকে কে বলেছে আমরা গাড়িতে করে জিমে যাব?
“গাড়িতে করে না গেলে কি করে যাব?
“আল্লাহ পা দিয়েছেন না, পা গুলো কি কাজে ব্যবহৃত হবে? আল্লাহর দান করা পা দিয়ে হেঁটে জিমে যাবো। ভালো কাজে তো এগুলো ব্যবহার হয় না, সব উল্টাপাল্টা কাজে এই পা গুলো আগে ভাগে চলে যায়।
“এভাবে বলছেন কেন?
“কীভাবে বলছি?

নুসরাত কথা না বলে আরশের পিছন পিছন বাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে আসলো। সারা রাস্তা পুরো শুনশান হয়ে আছে। মানুষ কেন, একটা পোকার দেখা সাক্ষাৎ নেই। আরশ খালি রাস্তা দেখে দৌড়াতে শুরু করলো।
” আরে আরে আপনি এই বয়সে এসে বাচ্চাদের মতো দৌড়া-দৌড়ি করছেন কেন? পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভাঙলে কে খেয়াল রাখবে আপনার? ধীরে ধীরে দৌড়ান। বুড়ো বয়সে ভীমরতি!
আরশ সামনের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,
“বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি আয় কালি। পরে রেখে চলে যাব।
নুসরাত আরশের কথা শুনলো না। ধীরে ধীরে হেঁটে এগিয়ে গেল সামনের দিকে।
জিমে পৌছানোর পর আরশ ট্রেডমিলে উঠে হাঁটতে লাগলো। নুসরাত ঘুরে ঘুরে জিমের ভিতর দেখতে লাগলো। সব ধরনের জিমের সরঞ্জামাদি ধরে ধরে দেখলো। দেখা শেষে এসে আরশের পাশে দাঁড়ালো। আরশ একবার নুসরাতের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে মনোযোগ দিল। নুসরাত নিজের দিকে আরশের মনোযোগ না পেয়ে গাইগুই করতে করতে বলল”আমরা বাসায় কখন যাব?
আরশ সেই কথার উত্তর না দিয়ে বলল,

“তোকে এখানে আসতে কে বলেছে?
নুসরাত নাক ফুলিয়ে আধঘন্টার মতো আবার আশ-পাশ ঘুরলো। আরশ ততক্ষণে ট্রেডমিল থেকে নেমে এসেছে।
আরশ ক্রস ট্রেইনারে উঠতে যাবে নুসরাত বলল,
” আরে এটা তো আমি পারি। দাঁড়ান আপনাকে আমি শিখিয়ে দেই।
নুসরাত পা রেখে উঠে দাঁড়ালো। হ্যান্ডেলে ধরে টান দিয়ে হ্যান্ডেল জায়গা থেকে নাড়াতে পারলো না। বোকা হেসে নেমে আসলো। আরশ ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে নুসরাতের দিকে। ইশারা করে বলল,”কি দেখালি না? আমি বসে আছি তো দেখার জন্য।
নুসরাত ধীর কন্ঠে বলল,

” আসলে আপনি তো জানেন আমি সহজ কাজ করিনা। এটা অতিরিক্ত সহজ কাজ, আর অতিরিক্ত সহজ কাজ এই নুসরাত নিজে করে নিজের হাতকে কষ্ট দেয় না। আপনি না হয় এই সহজ কাজটাই করুন।
আরশ ক্রস ট্রেইনারে উঠে হ্যান্ডেলে ধরে টান দিয়ে ব্যায়াম করতে লাগলো। নুসরাত মেট্রেস বিছিয়ে নিচে হাত রেখে শুয়ে পড়ল। আরশ আরো আধ ঘন্টা পর ক্রস ট্রেইনার থেকে নেমে আসলো। রোমাল দিয়ে ঘাম মুছে নিয়ে মেট্রেসে বসলো। হাত বাড়িয়ে নুসরাতের পাশ থেক পানির বোতল নিয়ে চুমুক বসালো। নুসরাত ততক্ষণে ঘুমে কাদা হয়ে আছে।
আরশ বিড়বিড় করলো,
“জিম করতে এসে ঘুমিয়ে জিম করছে। জিমের কি ছিড়ি….
নুসরাতের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ল আরশ। এক হাতে ভর দিয়ে নুসরাতের মুখের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে নুসরাতের নাক চেপে ধরলো। ঘুমের মধ্যে নুসরাত হাফসাফ শুরু করলো। আরশ তবুও নাক ছাড়লো না। নুসরাত চোখে বুজে থেকে হাতে থাপ্পড় মারলো। আরশ হাত সরাল না। নুসরাত আরশের দিকে পাশ ফিরে শুয়ে পড়তেই আরশ নুসরাতের নাক ছেড়ে দিল।

আরশ হাতে ভর দিয়ে আরেকটু ঝুঁকে নুসরাতের দিকে তাকালো। ঘুমের মধ্যে কপালে ভাঁজ ফেলে শুয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে এতো কি ভাবছে যে কপাল কুঁচকে আছে। আরশ নুসরাতের নাকে হাত স্পর্শ করোল। তারপর গালে বুড়ো আঙুল দিয়ে ঘষলল। থুতনির দিকে ঝুঁকে তাকাল কিছু খেয়াল করে। হালকা লাল রঙের তিল, শ্যামলা হওয়ায় তিলটা আছে বলে বোঝা যায় না। গভীর চোখে তাকালেই দেখা যায়।” আগে তো এখানে কোনো তিল ছিল না। কবে হলো এটা? আরশ আরেকটু ঝুঁকতে গিয়ে ঝুঁকল না। নুসরাতের চোখের দিকে তাকালো। তাকাতেই ধপ করে নুসরাত চোখ মেলে তাকালো। আরশকে তার দিকে এতো ঝুঁকে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকাল। ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কি?

আরশ নুসরাতের মুখ হতে নিজের মুখ দু-ইঞ্চি উপরে রেখে বলল,”তোকে দেখতে পুরো পেত্নীদের মতো?
“এতো ভালো করে খেয়াল করলেন, আমি যে পেত্নীর মতো সেটা বুঝে গেলেন।
আরশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
” পেত্নীকে পেত্নী বলবো না তো কি সুন্দরী বলব?
নুসরাত আরশের মুখ নিজের উপর থেকে ঠেলে সরিয়ে দিল। উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙল। শরীর মেজমেজ করছে,মাটিতে শোয়ার জন্য।
“মনে হচ্ছে,আপনার পেত্নীদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।
” তুই কীভাবে বুঝলি আমার পেত্নীদের সাথে একসময় ভালো সম্পর্ক ছিল।
“যেভাবে পেত্নীদের ব্যাপারে বলছেন মনে করলাম পেত্নী বিষয়ক পিএইচডি করেছেন। নাহলে পেত্নীর সাথে আপনার গভীর থেকে গভীর প্রেমের বা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল।
আরশ খুশিতে চিৎকার করে বলল,

” আরে বাচ্ছ, তুই তো দেখছি সব বুঝে ফেলেছিস। এককালে আমার এক কালি পেত্নীর সাথে গভীরতর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পেত্নীটা বুঝলো না আমার প্রেমের ভাষা।
“আপনার মুখ দেখেই বুঝা যায় ভালো মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ক থাকতেই পারে না। হলে তো ওইসব পেত্নীদের সাথে হবে।
নুসরাত মেট্রেস গুছিয়ে উঠে বসলো। উঠে দাঁড়িয়ে আরশের গায়ে ঢলে পড়তে গিয়ে ও পড়ল না। আরশ নুসরাতের হাত চেপে ধরে সামনের দিকে যেতে যেতে বলল, ” তোর যে একটা ছোটবেলার প্রেমিক ছিল ওটা কোথায় রে?
নুসরাত উচ্ছাসিত গলায় বলল,
“আরে ও তো এখনো আমার প্রেমিক। আপনি কি ওর সাথে দেখা করতে চান। চাইলে একদিন দেখা করাতে পারি।
” তোর বিন্দুমাত্র লজ্জা লাগছে না। ছোটবেলার প্রেমিকের কথা স্বামীকে বলছিস। আবার তার সাথে আমার দেখা করানোর কথা কি জোর গলায় বলছিস? ছি্হ ছি্হ….
নুসরাত শব্দ করে হাসল। আরশের কাঁধে নিজের হাত পেঁচিয়ে ধরে বলল,”আপনি আমার কীসের স্বামী? আপনি তো আমার একমাত্র ভাই।
শেষের কথা বলে নুসরাত হা হা করে হাসতে লাগলো। আরশ পাগলের কথায় কান দিল না। হাত বাড়িয়ে নুসরাতের কাঁধ চেপে নিজের সাথে নিয়ে চলল।

গোধুলি লগ্ন, সুর্যের তীব্র রশ্মি এসে পৃথিবীতে পথিত হচ্ছে। সকালবেলা যতটুকু পৃথিবী শীতল ছিল এখন ততটা গরম। গরমে ঘেমে নেয়ে মমো রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। রিকশা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এর মধ্যে রিকশা খুঁজে পেলে ও রিকশা ওয়ালারা টাকা বেশি চাচ্ছে। তাই মমো সামনের দিকে হাঁটা ধরেছে। সামনে গিয়ে সি-এন-জি পাওয়া যাবে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখ গেল পিছনে মমোর। অফ হোয়াইট কালারের একটা গাড়ি কখন থেকে তার পিছু পিছু আসছে। মমো প্রচুর বিরক্ত হলো। দাঁতে দাঁত চেপে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। গত একমাস ধরে গাড়িটা তাকে ফলো করছে। কিছুক্ষণ পর পর হর্ণ বাজিয়ে বাজিয়ে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। কথাটা ভাবতেই মমোর কানে হর্ণের শব্দ ভেসে আসলো। মমো আজ আর ছেড়ে দিল না। এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। হাত বাড়িয়ে গাড়ির কাচে শব্দ করলো। কিন্তু যাকে গাড়ির ভিতর দেখলো তাকে সে গাড়ির ভিতর মোটেও আশা করেনি। লোকটা গাড়ির কাচ নামাতেই মমোর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেল। চোখ মুখ কুচকে বলল,”আপনি।
লোকটা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলতে খুলতে বলল,
“হ্যাঁ আমি! কেন কি হয়েছে? অন্য কাউকে আশা করছিলে বুঝি তুমি?

আজকের দিনটার শুরু ইসরাতের অন্যভাবে হলো। দরজা খুলে বের হতেই জায়িন নাস্তা এনে টেবিলে রাখলো। ইসরাত চোখ তুলে তাকাতেই জায়িন ইশারা করে বলল খাওয়ার জন্য। ইসরাত পরোটা আর ডিম ভাজি মুখে ঢুকিয়ে নিল। মনে হলো বেটার হাতে রান্না অসাধারণ। রান্নার ক্ষেত্রে এই বেটাকে কেউ হার মানাতে পারবে না। ইসরাত গপাগপ করে খেয়ে সব খাবার সাবার করতেই জায়িন এটো প্লেট গুলো নিয়ে কিচেনে চলে গেল। ইসরাত নুসরাতের মোবাইলে কল করলো। নুসরাত কল ধরলো।

” কি বল?
“কিছু করছিস।
” হ্যাঁ করছি!
“কি করছিস?
” ওই তো বুড়িকে শাস্তি দেওয়ার একটা ব্যবস্থা করছি। বুড়িটার মগজ আজকাল বেশি চলছে।
‘কি করবি তুই?
নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল,
“তুই ফোনটা রাখ। পেঁচাল করিস না তো কানের গোড়ায়।
নুসরাত ফোন কেটে দিল। ইসরাত কল দিল আবার ধরলো না। ইসরাতে টেনশনে নখ কামড়াতে লাগলো। এ আবার কি করবে? হায় আল্লাহ ফোন ও ধরছে না। ইসরাত আরশকে কল দিল। আরশ কল না ধরে কেটে দিল। ইসরাতের মনে হলো ভিতরে অস্থির অনুভূতি হচ্ছে। কপালে এই শীতের মধ্যে ঘাম জমলো। নুসরাত এর মধ্যে কল দিল।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪২

“কাজ করে ফেলেছি।
ইসরাত জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল।
” কি করেছিস?
নুসরাত হেসে হেসে বলল,
“বুড়ির ব্যবস্থা করে ফেলেছি।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৩ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here