প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৯
জান্নাত নুসরাত
সকাল সকাল নুসরাত ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে গেল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার ভিতর দিয়ে সন্তর্পণে একবার বিছানার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল। চুল মুছে টাওয়াল ঢিল মেরে বিছানার এক পাশে ফেলে দিল।
স্কিনি টি-শার্টের উপর হালকা সাদা রঙের শার্ট পরে ইন করে নিল। চুলগুলো কোনরকম বান করে হাতে ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল নিশ্চুপ। রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে চিৎকার করে বলল,”আম্মা নাস্তা দাও!
নাজমিন বেগমের উদ্দেশ্যে হাক ছুঁড়া শেষে নব ঘুরিয়ে বাহির থেকে রুম লক করে চলে গেল। নুসরাত বের হয়ে যেতেই আরশ চোখ মেলে তাকালো। বিড়বিড় করে বলল,”একবার ফিরেও তাকালো না!
ভ্রু বাঁকিয়ে আরশ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। পরনের গেঞ্জি খুলে ছুঁড়ে ফেলল ওয়াশরুমে। সিগারেট ঠোঁটে চেপে রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো উদাম গায়ে। শরীরের প্রতিটি খাঁজ ভেসে আছে। রেলিঙের উপর হাত চেপে ধরতেই হাতের পেশি গুলো ফুলে ফেপে উঠলো। সিগারেটে আরো দু-একবার টান দিয়ে আরশ বারান্দার পাশ দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
এর মধ্যে নুসরাতকে দেখা গেল ইরহামের কাঁধ চেপে বাড়ির বাহিরে বের হতে। মুখ গম্ভীর করে রেখেছে। কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ, চোখে চশমা, পায়ে স্লিপার, হাতে গাড়ির কী! দেখতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। আরশ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকলো এক দৃষ্টিতে। নুসরাত নাকের উপর থেকে চশমা ঠেলে উপরের দিকে তুলে গ্যারেজের দিকে এগিয়ে গেল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কিছুক্ষণ পর,
গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের করে নিয়ে এসে গাড়ির কাচ নামিয়ে ইরহামের দিকে তাকিয়ে কিছু বলল। ইরহামের উত্তর আসতেই এক সেকেন্ড দেরি না করে বারান্দার দিকে তেজস্রী চোখ তাক করলো নুসরাত। আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে ছিল। নুসরাত তাকাতেই দু-জনের চোখাচোখি হলো।
আরশকে রেলিঙে দু-হাত চেপে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে নুসরাত বিরক্ত হয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। আরশের থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে ইরহামকে বলল,
” গাড়িতে উঠ!
ইরহাম মুখ কালো করে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ির দরজা লাগিয়ে সিট বেল্ট বাঁধার আগেই নুসরাত গাড়ি স্টার্ট করে এক টান মেরে বাড়ি থেকে গাড়ি বাহিরে নিয়ে গেল।
আকস্মিক গাড়ি স্টার্ট দেওয়ায় ইরহাম পিছন থেকে সামনের দিকে ঝুঁকে গেল। মুখ তুলে নুসরাতের দিকে তাকাতেই দেখলো নুসরাত মুখ প্যাঁচার মতো বানিয়ে রেখেছে। এই তো এতক্ষণ ঠিক ছিল! এখন আবার মুখ এরকম বানিয়েছে কেন?
আরশ গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো। নুসরাত গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই টনক নড়লো কার গাড়ি নিয়ে গিয়েছে এরা? যখন বুঝল এটা তার গাড়ি ছিল। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। নুসরাত গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে বাড়ির ত্রি- সীমানার বাহিরে।
আরশ রাগে চুল মুঠো করে চিৎকার করে উঠলো। তার গাড়ির এক চুল পরিমাণ কিছু হলে সে নুসরাত কে ছাড়বে না। গাড়ি তার ইমোশন! আর তার ইমোশন নিয়ে নুসরাত বারবার খেলে। সে এবার নুসরাতকে ছাড়বে না! আরশ নাক মুখ রাগে লাল করে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
জায়িন অফিস থেকে এক হাওয়ারের ছুটি নিয়ে এপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে বের হলো। এক হাতে গাড়ি চালিয়ে অন্য হাতে ফোন নিয়ে কল দিল ইসরাত কে। ইসরাতের মোবাইল রিং হয়ে কল কেটে গেল। জায়িন পঁচিশ মিনিটের মাথায় বাসা এসে পৌঁছাল। এলিভেটরে কাঙ্কিত নাম্বার প্রেস করে অপেক্ষা করতে লাগলো পৌঁছানোর জন্য। এলিভেটর খুলে যেতেই জায়িন এগিয়ে গেল এপার্টমেন্টের দিকে। লক খুলে ভিতরে ঢুকতেই চোখে ভেসে উঠলো অন্ধকার। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফ্ল্যাশ অন করলো। ড্রয়িং রুমের লাইট অন করে ইসরাতের নাম ধরে ডাকলো। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না ভালো করে দেখলো জায়িন। ইসরাতের উত্তর না পেয়ে জায়িন মনে করলো ইসরাত রেস্টুরেন্টে গিয়েছে। তাই এপার্টমেন্ট লক করে সে ও বের হয়ে গেল।
ইসরাত ক্যামেলিয়ার এপার্টমেন্টে বসে আছে। ক্যামেলিয়া নখ কামড়াতে কামড়াতে জিজ্ঞেস করলো ইসরাতকে, “এখন কি করবে তুমি ইসরাইট?
ইসরাত গালে হাত দিয়ে বসে রইলো। বসে বসে চিন্তা করতে লাগলো। নুসরাতের বলায় নয়, মেয়েটা তার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে তাই আর সে এখন আর ওই বাসায় ফিরে যাবে না।
” কিছু ভাবিনি!
ইসরাত টাইম দেখার জন্য হাতে মোবাইল নিল। ওয়ালপেপারে অনেক গুলো মিসডকল ভাসছে। ইসরাত লক খুলে ঢুকতেই একের পর এক কলের নোটিফিকেশন আসতে লাগলো। সাথে ওয়াট’স এ্যাপে ও আটচল্লিশ প্লাস মিস কল। ইসরাত মোবাইলের সাউন্ড মুডের দিকে তাকালো। মিউট করে রেখে দিয়েছে! ইসরাত হাত দিয়ে কপাল চাপড়ালো। সে কখন থেকে এতো অন্যমনস্ক হলো, মোবাইলের সাউন্ড মিউট করে রেখেছে আর সেটা অন করতে ভুলে গিয়েছে।
লিপি বেগম আর জায়িনের নাম্বার থেকে এতো এতো মিসড কল দেখে ইসরাত প্রথমে কল ব্যাক করলো লিপি বেগমকে। লিপি বেগমকে অনেক্ষণ সাফাই দেওয়ার পর তিনি মানলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো? কি করছ? খাওয়া দাওয়া কেমন চলছে? শরীর কেমন? এসব জিজ্ঞেস করে রেখে দিলেন!
ইসরাত জায়িনকে কল ব্যাক করলো। জায়িন প্রথম বার কল ধরলো না। ইসরাত এরকম করে প্রায় চার বারের মতো কল করলো। জায়িন ধরলো না! ইসরাত এবার কল দিতেই জায়িন কল ধরলো। কল ধরে যতেষ্ট ধীর স্বরে বলল,”আর ইউ ওকে?
ইসরাত ঢোক গিলল। তার কান্না আসছে! বলতে ইচ্ছে করলো আমি ঠিক নেই! কিন্তু বলা হলো না!গলায় কান্না দলা পাঁকিয়ে আটকে গেল কথা। জায়িন আবার জিজ্ঞেস করলো, “আর ইউ ওকে ইসরাত?
ইসরাত কিছু বলতে পারল না গলায় বাঁধা কান্নার তোড়ে। কথা গুছিয়ে নিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই জায়িন বলল,” আমি একটু বিজি আছি! এখন আর কল দিয়ে ডিস্টার্ব করো না!
ইসরাত বিমূড় হয়ে কথা বলতে পারল না। গুছিয়ে রাখা কথাগুলো অগোছালো হয়ে গেল। ইসরাতের কানে ফোন ধরা রইলো। জায়িন কল কেটে দিল। ইসরাত কিছুক্ষণ ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার পুরো পৃথিবী ঘুরছে। সে কি সবার কাছে বোজা হয়ে গেল? সে কি সবার লাইফে ডিস্টার্বনেস হয়ে যাচ্ছে? সবাই কেন তার সাথে এমন করছে? সে কেন কল দিতে গেল জায়িন কে? তারপর একে একে চোখে ভেসে উঠলো বিয়ের পরের খাবার টেবিলে বসার পর মেহেরুন নেছার একেক কথা। ইসরাতের মনে হলো তার শরীরের প্রতিটি অংশে কেউ ছুড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করছে। হঠাৎ করে মাথা ভু ভু করে উঠলো।
মেয়েটার মনে হলো তার মাথার মধ্যে কোনো পোকা ঢুকে গিয়েছে। শরীরের প্রতিটি কোষের চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্বাস নিতে পারল না! সেকেন্ডের ভিতর মনে হলো যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটা দুলে উঠেছে। ব্রেইনের প্রতিটি রগ ছিড়ে যাবে ইসরাতের কাছে মনে হলো। কোষ বিভাজনের একেকটা কোষ চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। চোখের সামনের দেয়াল ধীরে ধীরে ধোঁয়াশার মতো হয়ে গেল। মনে হলো দেয়াল গুলো তার গলা চেপে ধরতে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে। ইসরাতের হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল। অতিরিক্ত চিন্তার ফলে চোখের মধ্যবিন্দু থেকে এক ফোটা তরল জল চোখ বেয়ে নেমে আসলো। ধীরে ধীরে সব অন্ধকার হয়ে আসলো। কানের কাছে শুধু দুটো শব্দ ঝাপসা ভাবে শোনা গেল,”ইসরাইট তুমি কি ঠি”””””’ক আ”ছ”’ছ””ছ……….?
মমো ক্লাস রুম থেকে প্রফেসরের পারমিশন নিয়ে ফেসিলেটিজ রুমের দিকে গেল। হালকা মুখ ধোয়ে চোখ তুলে তাকাতেই আয়নায় দেখলো পিছনে অগ্নিমূর্তি হয়ে মাহাদি কে দাঁড়িয়ে থাকতে। মমো চোখ বড় বড় করে বিস্ময় নিয়ে পিছনের দিকে ফিরে তাকালো। ফিরে তাকেতে পারল কই? মাহাদি গাল চেপে ধরলো মমোর। মমো গাল থেকে হাত ছুটানোর চেষ্টা করলো তবুও মাহাদি ধরে রাখলো।
“এই তুই আমাকে আবার ব্লক করে রেখেছিস কেন? তুই আমার সাথে আবার ডং শুরু করেছিস তাই না? আমার সাথে এইসব রং ডং একদম করবি না? এসব ন্যাকামি আমি দু-চোখে দেখতে পারিনা। পিঠিয়ে তোর ন্যাকামি ছুটিয়ে দিব। শালা ন্যাকার গুষ্টি!
মমো গাল থেকে হাত টেনে ছুটানোর চেষ্টা করে কাঁপা গলায় বলল,” আমি নুসরাত কে বলে দিব আপনি আমাদের ন্যাকার গুষ্টি বলেছেন?
“তো বলিস না! আমি ভয় পাই নাকি তোর ওই নুসরাতকে?
মমো হাত ছুটানোর চেষ্টা বাঁধ দিয়ে সন্দেহের নজরে মাহাদির দিকে তাকালো।
” আপনি সিউর তো! আপনি নুসরাতকে ভয় পান না!
মাহাদি গাল থেকে হাত একটু ঢিলে করলো। মমোর গাল গুলো আঙুল দিয়ে চেপে ধরায় লাল হয়ে গিয়েছে। বুড়ো আঙুলের দিয়ে দাগ বসে যাওয়া জায়গায় স্লাইড করতে করতে মাহাদি বলল,”আমি ওকে ভয় পাই না! বন্ধুর বউ হিসেবে সম্মান করি আর, ছোট বোন হিসেবে ওর কথা রাখার চেষ্টা করি এই যা!
হাত দিয়ে লাল হয়ে যাওয়া জায়গায় আরেকটু ধীর ভাবে ঘষতে ঘষতে বলল,”ব্লক করেছিস কেন? তোকে বলছি না, এক মাস পর আমার ছায়া ও দেখবি না তাহলে আবার ব্লক করেছিস কেন? ছোট মানুষ বুঝিসনি ব্লক করে দিয়েছিস! এবারের মতো মাফ বাসায় গিয়ে ভালোয় ভালোয় ব্লক খুলে ফেলিস!
মাহাদি হাত সরিয়ে নিয়ে যতেষ্ট দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ালো। মমোর কোনো নড়চড় না দেখে বলল,”ভালো মুখে বলছি চুপচাপ গিয়ে খুলে ফেলবি! আমি যদি আবার বলি, তাহলে সেটা মোটেও ভালো মুখে বলা হবে না। তাহলে আজ আসছি! তুই মনে রাখিস কথাগুলো।
মাহাদি হাতের আঙুলে গাড়ির চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বের হয়ে গেল। মমো তাকিয়ে রইল মাহাদির দিকে। কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো এসে ঝড় দিয়ে এখন আবার শান্তভাবে ফিরে যাচ্ছে।
অফিস থেকে কাজ শেষ করে নুসরাত একা একা বের হয়ে আসলো। কোনো রিকশা খুঁজে না পেয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাঁটতে লাগলো। কিছুক্ষণ হাঁটার পর ফুটপাত পেরিয়ে ব্রিজে উঠতেই একটা ছেলে নুসরাতের পথ এসে রোধ করে দাঁড়ালো। নুসরাত ছেলেটার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলল বিপদ সংকেত! নুসরাত এক হাত পিছনে নিয়ে রাখলো। আগে ভাগে রেডি হলো ছেলেটা এদিক সেদিক কিছু করার চেষ্টা করলে সে ঘুষি মেরে উঁড়িয়ে দিবে।
ছেলেটা নুসরাতের মুখের সামনে এসে শ্বাস ছাড়তেই বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে লাগলো। ছেলেটার শ্বাসের গন্ধে নুসরাতের মনে হলো পেট ঠেলে বমি বের হয়ে আসবে।
নুসরাত ছেলেটাকে নিজের সামনে থেকে সরতে না দেখে হাত পিছন থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসে থাপ্পড় মারল। ছেলেটা মাতাল থাকায় এক থাপ্পড় খেয়ে ব্রিজের উপর লুটিয়ে পড়ল। নুসরাত ছেলেটাকে ওইভাবে ফেলে রেখে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু ছেলেটা নুসরাত কে যেতে দিল না। পিছন থেকে এসে হাত চেপে ধরলো। শট টেম্পার নুসরাত আর এদিক সেদিক না তাকিয়ে ছেলেটা মেইন পয়েন্টে লাথ মেরে ব্রিজের পাশে ফুটপাতে ফেলে দিল। ছেলেটা নিজের গোপন অঙ্গ চেপে ধরে ব্রিজে শুয়ে কাতরাতে লাগলো। নুসরাতের মোটেও দুঃখ লাগলো না। আরো দুটো লাথ মেরে ক্রান্ত হলো। পা থেকে স্লিপার খুলে টপাটপ গালে বারি দিতে লাগলো। হাতের সাথে মুখ ও চলল,
“আর জীবনে মেয়েদের সাথে পাঙ্গা নিবি? তোর আজ ভবিষ্যৎই আমি অন্ধকার করে দিব। শালা মেয়েদের হাত ধরিস? এই পর্যন্ত কতোটা মেয়ের হাত ধরেছিস বল?
ছেলেটা রাস্তায় পড়ে কাতরাতে লাগলো। মুখ দিয়ে গুঙ্গিয়ে ব্যথাতুর শব্দ বের করতেই নুসরাত হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। গালে হাত দিয়ে থাপ্পড় মেরে বলল,” চপ গুঙ্গাবি না! গুঙ্গিয়ে নিজেকে অবলা প্রমাণ করতে চাস? তুই নীরিহ! আমি তোর উপর অত্যাচার করছি!থাপড়ে গাল লাল করে দিব? তুই গুঙ্গানো বন্ধ করবি না। এবার তোর ওই জায়গায় মেরে আমি সারাজীবনের জন্য অন্ধকার করে দিব। এতক্ষণ যতোটুকু ঠিক ছিলি এবার মনে হচ্ছে আর ঠিক থাকবি না।
নুসরাত পা তুলে লাথ মারতে যাবে পিছন থেকে সাইরেনের শব্দ ভেসে আসলো। পিছনে তাকিয়ে গাড়ির সামনের আলোর জন্য কিছু দেখতে পারল না। গাড়ির লাইট এসে নুসরাতের চোখে লাগলো। নুসরাত চোখে হাত দিয়ে গাড়ির দিকে তাকালো। গাড়ি এসে তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। নুসরাত পুলিশের গাড়ি দেখে ও অতোটা পাত্তা দিল না। ছেলেটাকে আরো দুটো থাপ্পড় মেরে নিজেকে শান্ত করলো।
এরমধ্যে গাড়ি থেকে পেট উঁচু দারোগা নেমে আসলেন। দারোগার পেট দেখে নুসরাতের কাছে মনে হলো শার্ট ছিড়ে পেট বের হয়ে আসবে। না হলে অতিরিক্ত পেট মোটা হওয়ার জন্য দারোগার পেট ব্লাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঠোঁট চেপে হাসল দারোগার পেটের দিকে তাকিয়ে। দারোগা পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে বললেন,” তুমি এই ছেলেটাকে মারছ কেন?
“তো মারবো না তো চুমু খাব!
দারোগা থতমত খেয়ে গেলেন। হালকা কেঁশে বললেন,
” সরকারি পেশাদারের সাথে মুখ সংযত রেখে কথা বলো। ছেলেটার কি এমন ক্রাইম ছিল যে তুমি ওকে রাস্তায় ফেলে মারছ?
নুসরাত উপরের দিকে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙল।
দারোগার দিকে কোণা চোখে তাকিয়ে বলল,”আসলে এই মাতাল আমাকে মদ খেয়ে ওদিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছিল?
“কোনদিকে?
নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল,
” আরে ওদিকে বুঝেন না! জঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে চাইছিল।
দারোগা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“তোমাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে ও এভাবে উল্টে এখানে পড়প আছে কেন?
” আসলে কি হয়েছে? এই মাতালটা আমার হাত ধরতেই আমি মাতাল টাকে এমন থাপ্পড় মেরেছি যে রাস্তায় পড়ে মুখ ছেঁচে গিয়েছে।
নুসরাত প্রচুর আগ্রহ নিয়ে বলল,
“আপনারা দেখতে চান কীভাবে আমি থাপ্পড় মেরেছি?
দারোগা হ্যাঁ বলতে গিয়ে কেঁশে উঠলেন। নুসরাত হা করে দারোগার দিকে তাকিয়ে আছে। দারোগা কঠোর হওয়ার চেষ্টা করে নুসরাতের দিকে রাগী চোখে তাকালেন।
” তোমার হাত ছেলেটা চেপে ধরায় তুমি ওকে এতো পিটা পিটেছ? ও তো কিছু করেনি?
নুসরাত চিৎকার করে বলল,
“তাহলে আপনি বলতে চাইছেন, এই মাতালটা আমার সাথে কিছু করার পর আমি একে থাপ্পড় মারতাম। এর মেইন পয়েন্টে শট মারতাম।
” আমি সেটা কখন বললাম। আর তুমি ছেলেটার মেইন পয়েন্টে ও লাথ মেরেছ একটা। চলো হাজতে চলো একদিন। তোমাকে রাখতে হবে। তুমি বাংলাদেশের আইন সংবিধান লঙ্গন করেছ।
নুসরাত দাঁত কেলিয়ে বলল,
“আঙ্কেল একটা না তিনটে মেরেছি মেইন পয়েন্টে।
দারোগা তাকিয়ে রইলেন। মেয়েটা কি অবলিলায় নিজের দোষ গুলো শিকার করছে?
” সুমন ওকে গাড়িতে তুলো! আর মাতালটাকে ও সাথে তুলো।
নুসরাত সুমনকে আটকে দিয়ে বলল,
“আমি উঠে যেতে পারবো। ওই শালা মাতালকে আপনারা তুলুন গাড়িতে।
নুসরাত চুপচাপ গাড়ির পিছনে গিয়ে উঠে বসলো। তার সামনের সিটে মাতাল টা পড়ে পড়ে গুঙ্গাচ্ছে। নুসরাতের ইচ্ছে করলো আরো দু-একটা লাত্তি মারার জন্য। সব এর দোষ! এর জন্য থাকে আজ হাজতে যেতে হচ্ছে।
পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার পর নুসরাত পায়ের উপর পা তুলে বেঞ্চে বসে রইলো। দারোগা নুসরাতের সামনের টেবিলে বসে থাকলেন। নুসরাতের বসে থাকতে থাকতে কোমর ধরে গেল।
” আঙ্কেল বসতে বসতে কোমর ধরে গিয়েছে একটু হাঁটার ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।
“এভাবে বসে থাকো! তোমার বাসার মানুষ না আসা পর্যন্ত এমনভাবে বসে থাকতে হবে।
নুসরাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
” কাউকে কল দিলে তো আসবে! আপনি কাউকে বলেছেন কল দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে আসছেন হাজতে?
লোকটা মাথা নাড়ালো। কাউকে তো বলা হয়নি? মেয়েটাকে যে সে ধরে নিয়ে আসছে? গম্ভীর গলায় বললেন দারোগা,
“তোমার বাবার নাম্বার দাও?
নুসরাত নাছির সাহেবের নাম্বার দিতে গিয়ে ও আটকে গেল। চোখে ভেসে উঠলো অগ্নিমূর্তি হয়ে নাছির সাহেব এসে তাকে এখানে উড়াধুড়া থাপ্পড় শুরু করলেন। তারপর থাপড়ে থাপড়ে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সবার সামনে বেত দিয়ে পেটালেন। আরশ পিছনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সে বিবাহিত হয়েও বাবার হাতে মার খাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এসব ভাবতেই নুসরাতের হাত গালে চলে গেল। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল বাবার নাম্বার দেওয়ার কথা।
নুসরাত মিনমিন করে বলল,
” বাবার নাম্বার দিতে যাব কেন আমার স্বামী আছে?
দারোগা নাম্বার বলতে বললেন। নুসরাত গলার স্বর নরম থেকে নরম করে বলল,” আমি কল দেই আমার স্বামীকে!আঙ্কেল প্লিজ, এই আর্জিটা রাখুন!
দারোগা কি মনে করে উঠে আসলেন নিজের চেয়ার থেকে। নুসরাতের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে নুসরাতের পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন।
নুসরাত গলার স্বর করুন করে কল করলো আরশকে।
আননোন নাম্বার থেকে কল দেখে আরশ প্রথমে কল পিক না করে কেটে দিল। কেটে দিয়ে ফাইল দেখতে ব্যস্ত হলো। নুসরাত লাগাতার কল দিতে লাগলো।
নুসরাতের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পেট উঁচু দারোগা থু করে পানের পিক ফেলে বিরক্তির চোখে নুসরাতের দিকে তাকালেন। নুসরাত বুড়িওয়ালা দারোগার দিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে হে হে করে বোকা হেসে আবার কল দিতে লাগলো। এবার আরশ কল পিক করে ব্জ্র কন্ঠে ধমক দিয়ে উঠলো,”কি চাই? কল কেটে দেওয়ার পরও বার বার কল দিচ্ছেন কেন?
নুসরাত গলার কন্ঠ যতেষ্ট নরম করে সুরেলা করে বলল,
“হ্যালো ভাইয়া শুনছেন!
আরশ ফোন কান থেকে নামিয়ে নাম্বারের দিকে একবার তাকালো। আবার কানে নিতেই নুসরাত বলল,”ভাইয়া একটা লোকেশন পাঠাচ্ছি একটু কষ্ট করে তাড়াতাড়ি আসুন প্লিজ!
আরশের ভ্রু আরেকটু বাঁকিয়ে গেল। নুসরাত এতো সু-মধুর কন্ঠে তাকে যাওয়ার জন্য বলছে কেন? এখানে নিশ্চিত কোনো গড়বড় আছে?
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,
” কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বল? এতো মিষ্টি গলায় আমাকে ডাকা হচ্ছে কেন?
নুসরাত কেঁশে উঠলো। ধীমি স্বরে বলল,
“আসলে ভাইয়া, কি হয়েছে?
নুসরাত একে একে সব কাহিনি খুলে বলতে লাগলো। আরশের কাছ থেকে হ্যাল্প পাওয়ার আসায় মিনমিন করে বলল, “প্লিজ ভাইয়া একটা সই করে নিয়ে যান আমাকে! আব্বা আসলে আমাকে আজ পৃথিবী থেকে টা টা বায় বায় করে দেবে!
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,
“আমি পারবো না!
নুসরাত আরশকে মানানোর জন্য বলল,
” আব্বা কে বলতাম! কিন্তু আব্বা আসলে বলবে, নুসরাত গলার স্বর মোটা করে বলল,সৈয়দ বাড়ির কোনো মেয়ে কোনো দিন হাজতে আসেনি। তুমি বেয়াদব সেটা ও পূরণ করে দিয়েছো। আল্লাহ তোমার হেদায়েত করুন। তোমার মতো এতো বেপরোয়া, বেয়াদব, অভদ্র মেয়ে আল্লাহ কাউকে না দিক। সৈয়দ বাড়ির কোনো মেয়ে কোনো দিন হাজতে এসেছিল, না আসেনি! তুমি এসে গিয়েছো! হাজতে এসে আমাকে ধন্য করেছ? এবার আমার মাথার উপর বসে তবলা বাজাও। তুমি আমার মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলে। তোমার মতো বজ্জাত সৈয়দ বাড়ির ভিতর দ্বিতীয় টা নেই। আব্বার এসব কথা শুনে যখন আমি হি হি করে হেসে দিব তখন তিনি বলবেন আবার, নির্লজ্জ আবার এখানে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছো, লজ্জা করে না এতো বড় কাজ করে হাসতে।
আরশ কি একটু হাসল? হয়তো বা হাসল! কপালে হাত চেপে ধরে ফোন থেকে একটু মুখ দূরে নিয়ে গিয়ে গলা পরিস্কার কে নিল। নুসরাতের মুখের উপর বলল,”আমি পারবো না! নিজে নিজের ব্যবস্থা করে নে? তুই মানুষ পিটাতে যাস কেন? আমি বলে দিছি তোরে, মানুষ পেটানোর জন্য।
আরশ নুসরাতের ফোন রেখে দিল মুখের উপর। নুসরাত ফোন কতক্ষণ কানে লাগিয়ে রেখে সামনে নিয়ে আসলো। আরশের নাম্বারের দিকে তাকিয়ে থেকে দাঁত কিড়িমিড়ি করে চিৎকার করে গালি দিল, “কুকুরের বাচ্চা তুই আমার জামাই হতেই পারিস না? শালা বইদমাস! লাগবে না তোরে আমার! আমি নিজেই এখান থেকে ছুটে যাব। আসিস আমার সাথে চুম্মা চাটি করতে। মুখ ভেঙে নকশা বদলে দিব। তুই কেন? তোর মুখ, তোর বউ ও চিনবে না!
নুসরাত গালাগাল করে মুখ তুলে তাকাতেই দেখলো দারোগা সাহেব তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছেন। নুসরাত হে হে করে বোকা হাসল দারোগার দিকে তাকিয়ে। নিজের সাফাই গেয়ে বলল,”আসবে না বলছিল তো, তাই একটু টেম্পার হাই হয়ে গিয়েছে। স্লিপিং টাং হয়ে বকা দিতে গিয়ে গালি বের হয়ে গিয়েছে। বুঝতেই পারছেন তো! স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার সেপার!
নুসরাত দাঁত কেলিয়ে হেসে আবার কল দিল। কল দিতেই আরশ কল পিক করলো। বোঝাই গেল ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিল নুসরাতের দ্বিতীয় বার কলের অপেক্ষায়। নুসরাত দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে আরশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,”আপনি আসবেন না আমাকে হাজতে থেকে নিতে।
“নাহ!
নুসরাত বিরক্তের সহিত বলল,
” আগে কথা শেষ করতে দিন পরে কথা বলুন!
আরশ মুখে হাত দিয়ে বসে রইলো। নুসরাত গলা পরিস্কার করে গলার স্বর নামিয়ে বলল, “আপনি যদি আমাকে আজ নিতে না আসেন তাহলে আমি আমাদের সোসাইটির মসজিদে গিয়ে এনাউন্স করবো, আপনি আমার গালে, গলায়,ঠোঁটে চুমু খেয়েছেন। এবং আপনি আমার ঘুমিয়ে থাকা সত্ত্বেও সুযোগ নিয়েছেন। তাই নিজের সম্মান বাঁচাতে চাইলে ঝটপট চলে আসুন তো।
” তোর এটা বলার এভেলিটি আছে তো?
নুসরাত ডোন্ট কেয়ার গলায় বলল,
“আপনি সেটা ভালোই জানেন!
এবার আরশ কল কাটলো না। নুসরাত ভাব নিয়ে কল কেটে দারোগার দিকে ফোন এগিয়ে দিল।
” তোমার স্বামী আসছে?
নুসরাত খুশি মনে মাথা নাড়ালো। আরশ স্তব্ধ হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।এ টা বউ নাকি অন্যকিছু? নিজের স্বামীকে ব্ল্যাকমেইল করছে! আরশ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর টনক নড়তেই হন্তদন্ত পায়ে হাতে গাড়ির চাবি আর মানিব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল।
দারোগা নুসরাতের মোবাইল জব্দ করেছেন। তাই নুসরাত পা তুলে বসে দু-পা জড়িয়ে বসে আছে বেঞ্চের উপর। দারোগা এদিকে নিজে মোবাইল দেখছেন, আর নুসরাতের মোবাইল নিয়ে তার সামনে রেখে দিয়েছেন। নুসরাত নিজের জায়গা থেকে উঠে গিয়ে দারোগার পাশে দাঁড়ালো। দারোগাকে সাবওয়ে সাফারি খেলতে দেখে নুসরাত চিৎকার করে উঠলো।
“আরে আঙ্কেল, সাবওয়ে সাফারি খেলছেন আমি ও খেলি! প্লিজ একবার আমাকে দিন টাইম পাস করার জন্য।
দারোগা নুসরাত কে ধমকে বসিয়ে দিলেন। নুসরাত করুণ মুখ অনেক্ষণ বসে থেকে দারোগা কে বলল, “আপনি খুবই নিষ্ঠুর! আপনার মেয়ের বয়সী একটা অবলা বাচ্চাকে খেলতে দিচ্ছেন না। প্লিজ আঙ্কেল খেলতে দিন! একবার আপনি,! একবার আমি! আপনি শেষ হলে আমি, আমি শেষ হলে আপনি! এভাবে গেইম খেলতে দারুণ লাগে। একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন। প্লিজ আঙ্কেল প্লিজ দিন!
দারোগা কিছু বলতে যাবেন নুসরাত বলল,
“প্লিজ আঙ্কেল না করবেন না!
লোকটা দেয়ালে পানের পিক ফেলে নুসরাতের দিকে তাকালেন। নুসরাত হাত মুখে কাছে জোর করে বসে আছে। বার বার চোখের পাতা ফেলে হ্যাঁ বলার জন্য বলছে।
” আচ্ছা আসো সামনের চেয়ারে বসো! তুমি শেষ হওয়ার পর আমাকে দিবে চিটিং করবে না।
নুসরাত দু-পা তুলে দারোগার চেয়ারের সামনে বসলো। দারোগা সাউন্ড বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বললেন। নুসরাত সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে খেলতে লাগলো। দারোগা এর মধ্যে সুমন কে দিয়ে চকলেট বিস্কুট আর ড্রিংকো আনিয়ে নিলেন। নুসরাত বিস্কুট মুখে পুরে খেতে খেতে গেইম খেলায় মনোযোগী হলো।।
দারোগা নুসরাত কে জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমার স্বামী কি করে?
নুসরাত মুখের বিস্কুট গিলে বলল,
” বিজনেস ম্যান!
“তোমার ছেলে মেয়ে কয়জন?
নুসরাত শব্দ করে হেসে উঠলো।
” নেই আঙ্কেল। সিঙ্গেল লাইফ ইনজয় করছি!
“তোমার স্বামী কেমন?
নুসরাত এবার চুপ হয়ে গেল। তার দেওয়ার মতো কোনো উত্তর নেই। একটু অন্যমনস্ক হয়ে ভাবতেই শেষ হয়ে গেল। দারোগা নুসরাতের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিলেন। এবার নুসরাত উনাকে জিজ্ঞেস করলো, ” আপনার সন্তান কয়জন?
“আল্লাহর রহমতে এক মেয়ে আছে!
নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। দারোগা নিজ থেকে বললেন, ” মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। মেয়ের এখন একটা ছেলে ও আছে!
নুসরাত মুচকি হাসল। বিস্কুট এক সাথে তিনটে মুখ পুরে বসে রইলো। মুখে পুরার জন্য কথা বলতে পারল না। দারোগা এর মধ্যে শেষ হয়ে গেলেন। নুসরাত পা নাচিয়ে নাচিয়ে খেলতে লাগলো গেইম। দারোগা নুসরাত কে আরো প্রশ্ন করলেন। নুসরাত ধীরে ধীরে সব কথার উত্তর দিল।
হঠাৎ বাহিরে গাড়ির শব্দ শুনা গেল। গাড়ির শব্দ শুনে ও নুসরাতের বিশেষ ভাবাবেগ হলো না। আরশ পা চালিয়ে ভিতরে এসে যা দেখলো তাতে তার চক্ষুচড়ক গাছ হয়ে গেল।
নুসরাত দু-পা তুলে চেয়ারের উপর বসে আছে! মোবাইল নিয়ে গেম খেলছে! মুখে বিস্কুট দিয়ে ঠাসা। টেবিলের উপর ড্রিংকো জুসের বোতল পড়ে আছে। দারোগা হেসে হেসে নুসরাতের সাথে আলাপ করছেন। নুসরাত ও আলাপ করছে দারোগার সাথে।
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,
“দিব্বি আছিস তো এখানে, তাহলে আমাকে কল দিয়েছিস কেন?
নুসরাতের মুখে বিস্কুট থাকায় কথা বলতে পারল না। বিস্কুট আস্তো গিলার চেষ্টা করল, যাতে কথা বলতে পারে। বিস্কুট ঠিকমতো গলদ করণ না করে দ্রুত কথা বলতে গিয়ে বিষম লেগে কেঁশে উঠল। দারোগা হাত বাড়িয়ে জুসের বোতল এগিয়ে দিলেন। নুসরাত নিতে গেল আরশ এসে দারোগার হাত থেকে জুসের বোতল টেনে নিয়ে বোতলের মুখ খুলে নুসরাতের মুখে ধরলো।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৮
” আমার স্ত্রীর জন্য আমি আছি।
ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু, এর ভিতর দায়িত্বশীলতা আর কত্বব্য এর বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। নুসরাত চোখ তুলে তাকাতেই আরশ ইশারা করলো জুস পান করার জন্য। নুসরাত নিজেকে ধাতস্ত করে বোতল আরশের হাত থেকে নিয়ে মিনমিন করে বলল, “আমি পারবো খেতে।