প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৪ (২)

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৪ (২)
জান্নাত নুসরাত

সময় প্রবাহমান,সময় তার গতিতে চলছে। ইসরাত আর জায়িন দেশে আসার প্রায় এক মাস পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ইসরাত নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। সামনেই যে তার অষ্টম সেমিস্টার। এই সেমিস্টারে পাস করলে সে পরিপূর্ণ ভাবে ফেসন ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করতে পারবে। তাই মন দিয়ে পড়া শোনা করছে। আর যারপনাই চেষ্টা করছে জায়িনকে ইগনোর করার। সেমিস্টার শেষ হওয়ার পর যা করার করবে। এখন এসব মাথায় নিয়ে সেমিস্টারে খারাপ করে কোনো লাভ নেই। তাই চিন্তা সাইড করে চিল মুডে পড়ালেখা করছে।

নুসরাত পঞ্চম সেমিস্টারে কথা মতো লাড্ডু পেয়েছে। কিন্তু, ইরহাম কোনোরকম টেনে টুনে পাস করেছে। নুসরাত এই বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কারণ মানুষ ফেল করবে আবার পাস করবে, এটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। এসব থ্রাড ক্লাস জিনিস নিয়ে চিন্তা করে নিজের ডিপ্রেশন সে বৃদ্ধি করবে না। তার চিন্তা করার জন্য অনেক বড় বড় বিষয় আছে। নুসরাত জানতো এবার সে ফেল করবে তাই তো পড়ালেখা একটু ও করেনি। কলম নিয়ে পরীক্ষা হলে গিয়ে আঁকি- বুকি করে চলে আসছে। যার জন্য অর্গানিক রসায়নে ডাব্বা পেয়েছে। প্রফেসর আনোয়ার নুসরাত কে ধমকে -ধামকে ফ্যামেলি মেম্বার নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নুসরাত চোখ উলটে উনার দিকে তাকাতে দেখে বলেছেন,”আপনি যদি আপনার ফ্যামেলি মেম্বার নিয়ে না আসেন তাহলে আমি নিজে ফোন করে আপনার আব্বুকে বলব। এন্ড এটা মোস্টলি বলব, যে আপনি ক্যাম্পাসে কি কি করেন?
নুসরাত চোখ-মুখ উল্টে উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকল। প্রফেসর আনোয়ার বললেন,”এখন যান আপনি!
নুসরাত কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমকে বের করে দিলেন নিজের অফিস রুম থেকে। নুসরাত ঘুরে ঘুরে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে বের হয়ে গেল।

এখন নুসরাতের চিন্তার বিষয় হচ্ছে কাকে নিয়ে সে যাবে ভার্সিটি তে। ইসরাত কে নিয়ে যেতে পারবে না কারণ ইসরাতের সেমিস্টার সামনে। আম্মা কে নিয়ে গেল সব ফাঁস করে দিবেন বাড়িতে এসে আব্বার কাছে। আব্বা কে তো বলাই যাবে না,স্যারের সামনে ধরে ঠুস ঠুস করে পিটাবে। ইরহাম কে নেওয়া যাবে না আনোয়ারের বাচ্চা চিনে ওকে।
নুসরাত পায়চারি করে ভাবতে লাগলো আর কাকে নিয়ে যাওয়া যায়? হঠাৎ মাথা টনক নড়তেই মনে হলো তার তো জামাই আছে। জামাইটাকে নিয়ে যাবে। বলার চেষ্টা করলে বাসায় এসে ব্ল্যাকমেইল করবে। নুসরাত শয়তানী হাসি হাসল।

এরমধ্যে সকালের নাস্তা করার জন্য ডাক দেওয়া হলো। নুসরাত ইসরাত কে ডেকে নাচতে নাচতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো। সিঁড়ি তে আরশের সাথে দেখা হতেই নুসরাতের মুখ কালো হয়ে গেল। আরশ নুসরাতের আগে নামতে যাবে নুসরাত ধাক্কা মেরে সরিয়ে আগে চলে গেল। আরশ কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো। নুসরাত সামনের দিকে বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে গিয়ে উল্টে পড়ে যেতে নিল, নিজেকে সামলিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলো আরশ হাসছে ঠোঁট বাঁকিয়ে। নুসরাতের দিকে এগিয়ে আসলো এক হাত পকেটে রেখে। কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “আমার সাথে পাঙ্গা নিবি না নুসরা…..

আরশের কথা শেষ হলো কই নুসরাত ধাক্কা মেরে আরশকে সামনে থেকে সরিয়ে ডায়নিং এর দিকে এগিয়ে গেল। আরশ ঠোঁট কামড়ে এগিয়ে আসলো ডায়নিং এর দিকে নুসরাত চেয়ার টেনে বসতে নিল আরশ নিজে গিয়ে বসে গেল নুসরাতের বের করা চেয়ারে। নুসরাত অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। আরশ নুসরাতের পানে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল।
ধীরে ধীরে সবাই খেতে বসলো এসে। ইসরাত এসে ঢুকতেই জায়িন এসে পিছন পিছন ঢুকলো। এক পাশের দুটো চেয়ার খালি ছিল। একটায় জায়িন বসলো। ইসরাত এসে নুসরাত কে কানে কানে বলল,”তুই ওখানে চলে যা, আমাকে তোর চেয়ার দে?

আরশ শুনলো ইসরাতের কথা। নুসরাত উঠতে যাবে দেখলো আরশ তার হাঁটু চেপে ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে ইশারা করে বলছে যাবি না। নুসরাত স্মির্ক(smirk) করলো। আরশের হাত সরিয়ে দিয়ে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙল। নেচে নেচে গিয়ে জায়িনের পাশে বসে আরশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাল। ইসরাত নুসরাতের চেয়ারে বসতেই আরশ উঠে দাঁড়ালো। জায়িনের চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলল,”চেয়ার ছাড়ো।
জায়িন চোখ তুলে তাকিয়ে না বুঝার মতো মাথা নাড়ালো। আরশ জায়িনকে হাত ধরে টেনে তুলল চেয়ার থেকে। রুঢ় গলায় বলল,”আমার বউয়ের কাছ থেকে উঠো, নিজের বউয়ের কাছে গিয়ে বসো।
চোখ দিয়ে নিজের চেয়ারের দিকে ইশারা করে বলল,

“ওই যে তোমার বউ। যাও তো যাও… আমার জায়গা ছাড়ো। ভালো লাগছে না।
আরশ এক প্রকার জায়িনকে ধাক্কিয়ে ইসরাতের পাশের চেয়ারের দিকে পাঠিয়ে দিল। নুসরাতের কাছে বসেই চুল ধরে টেনে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”না করার পর উঠে আসলি কেন? তাই তোর শাস্তি এটা।
নুসরাত শুধু ঠান্ডা চোখে তাকালো আরশের দিকে। মুখ বুজে সহ্য করে নিল।
জায়িন চেয়ারে গিয়ে বসলো। ইসরাতের দিকে না তাকিয়ে রাশভারী গলায় বলল,”এখানে বসে কি হলো? সেই তো আমার পাশে বসতে হলো।
বাঁকা হেসে আবার বলল জায়িন,

“ড্রালিং তোমার জন্য কষ্ট হচ্ছে।
ইসরাত কোনো কথা না বলে হাতের কাটা চামচ দিয়ে কাচের প্লেটে আঘাত করলো। জায়িন ইসরাতের হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,”দেটস মাই গার্ল।
যা ইসরাত শুনলো না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো। হেলাল সাহেব ধীরে ধীরে এসে বসলেন নিজের চেয়ারে। শরীর ভালো নেই তার,কিছুটা খারাপ করেছে শরীর কিছু দিন ধরে। আজ আগের তুলনায় খারাপ লাগছে শরীর।
জায়িন গলা পরিস্কার করে নিল। হেলাল সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে শুরু করল,”আব্বু আমি যা বলবো, আপনি বুঝবেন প্রথমে তারপর রিয়েক্ট করবেন। না বুঝে প্লিজ রিয়েক্ট করবেন না। আপনার কাছে আমার অনুরোধ মনে করবেন।
হেলাল সাহেব রুটি মুখে পুরে বললেন,

“বলো কি বলবে? আমি শুনছি।
জায়িন ঢোক গিলে নিয়ে সবার দিকে তাকালো। নাছির সাহেব খাওয়া বাঁধ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। নুসরাত ও ড্যাব ড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। জায়িন থতমত খেল। মনে মনে ভাবল,”বাপ মেয়ে দুজন একই নৌকার যাত্রী। এভাবে তাকানোর কি আছে? আমি কি কোনো চুরি করে এসে এখানে বসেছি।
জায়িন সবার দিকে তাকানো শেষে চোখ নিচের দিকে প্লেটে রেখে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে বলল,” আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
হেলাল সাহেবের মুখ হা হয়ে গেল। ইসরাত প্লেটের দিকে স্থির রাখা চোখ তড়িৎ ঘুরাল জায়িনের দিকে। নাছির সাহেবের চোয়াল ঝুলে গেল। লিপি বেগম ক্রোধ নিয়ে জায়িন কে বললেন,”কি বললে আবার বলো?
জায়িনের নির্লিপ্ত গলার আওয়াজ,

” আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি আম্মু।
ইরহাম আর অনিকা এক সাথে বলল,
“এ্যাঁ! চাকরি ছেড়ে দিয়েছো?
সোহেদ বললেন,
” তুমি ঠিক আছো জায়িন। এতো হ্যান্ডসাম স্যালারির একটা জব তুমি ছেড়ে দিলে।
জায়িনের গম্ভীর গলার আওয়াজ,
” জি আমি ঠিক আছি।
জায়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল,
“তুই ওটা ছেড়ে দিলি কেন? রিজন কি?
জায়িন চোখ বাঁকা করে বলল,
“আমি রিজন বলতে পারবো না।
আরশ বলল,
” তুমি কেন বলবে না?

“আমি বলতে বাধ্য নই আরশ। আমার জব আমি করবো কি করবো না তা আমার উপর ডিপেন্ড করে। আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই তোমাকে।
আরশ কথা বলল না। হাঁটুর উপর হাত চেপে ধরে বিড়বিড় করলো,”ড্যাম ইট!
নুসরাত শান্ত চোখ ঘুরিয়ে তাকালো আরশের দিকে। আরশ নুসরাত কে তার দিকে চোখ শান্ত করে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি? নুসরাত উত্তর না দিয়ে নিজের চোখ আরশের থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে উরুর উপর স্থির করলো। আরশ উত্তর না পেয়ে নুসরাতের চোখ অনুসরণ করে নিচের দিকে তাকালো। তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল ছেলেটার। লজ্জায় লাল হওয়া মুখ নিয়ে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে আনলো। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজলো। অপরাধী গলায় বলল,”স্যরি!

নুসরাত চোখ সরিয়ে নিয়ে জায়িনের দিকে তাকালো। হেলাল সাহেব বললেন,”আমাকে কি রিজন টা বলা যাবে?
জায়িন হেলাল সাহেবের চোখে চোখ রাখলো। ঠোঁট কামড়ে বলল,”একান্তে বলব আপনাকে আব্বু।
হেলাল সাহেব মাথা নাড়ালেন। কেউ আর কথা বাড়ালো না এই বিষয়ে। নাছির সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,”জব ছেড়ে দিয়েছো ঠিক আছে, কিন্তু এখন কি করবে?
জায়িন সুন্দর করে বসলো। গলা পরিস্কার করে বলল,

” জি আমি ভেবেছি চাচা, আমি নিজের একটা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি খুলবো। এবং, আরো কিছু মানুষ আছে যারা ইনভেস্টমেন্ট করবে। বর্তমানে আমরা একটি শান্তি পূর্ণ জায়গার খোঁজ করছি। ফাস্টে ভেবেছিলাম চিলেকোঠার ঘরে সবকিছু সেটআপ করবো কিন্তু সারাদিন বাড়িতে যা শোরগোল হয় তাতে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা পড়তে হবে। এই প্ল্যান বাঁধ দিয়ে দিয়েছি।
নাছির সাহেব কিছু ভাবলেন। তারপর কিছু বলতে যাবেন শোহেব ও উনার সাথে কথা বলে উঠলেন। নাছির সাহেব শোহেবের দিকে তাকাতেই তিনি বললেন,”ভাই আপনি আগে বলুন আমি পরে বলছি।
নাছির সাহেব গ্লাস থেকে পানি খেয়ে গলা পরিস্কার করে নিয়ে বললেন,”তুমি চাইলে আমাদের অফিসের ব্লিডিংয়ে তোমার সবকিছু সেটআপ করতে পারো। সেভেন ফ্লোর খালি আছে।
“জি না এতো উঁচুতে কাজ করতে সমস্যা হবে।
শোহেব কথা কেটে বললেন,

” ফোর ফ্লোরে হাবি জাবি জিনিস রাখা আছে তুমি চাইলে ওইটা ও ব্যবহার করতে পারো। আমি এটা বলতে চাইছিলাম।
জায়িন দেনামোনা করলো রাজি হতে। সোহেদ বললেন,
“জায়িন দেনামোনা করার প্রয়োজন নেই। ওখানে তোমার অধিকার আছে।
জায়িন বাবার দিকে তাকালো। হেলাল সাহেব মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন রাজি হয়ে যাওয়ার জন্য। জায়িন গম্ভীর গলায় ঠিক আছে বলল।
শোহেব বললেন,
” তাহলে আগামীকাল একবার অফিসের ব্লিডিং ঘুরে দেখে যেও। সবকিছু বুঝার একটা ব্যাপার সেপার আছে না। আগে থেকে জায়গা ঠিক করে রাখলে কাজ করতে সুবিধা হবে।
জায়িন মাথা নাড়ালো। তারপর সবাই চুপচাপ খেতে লাগল।

পরেরদিন,
সকাল সকাল জায়িন ফরমাল সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে রেডি হয়ে গেল। নিজের গাড়ির চাবি আর মানিব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো৷ শোহেব আর সোহেদের সাথে সে যাবে। আরশের সাথে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আরশের সাথে ইরহাম নুসরাত যাবে। আজকে শোহেবের গাড়ি জায়িন ড্রাইভিং করবে। আর আরশের গাড়ি স্বাভাবিক ভাবে নুসরাত ড্রাইভিং করবে।
একে একে গাড়ি দুটো বাড়ির ফটকের বাহিরে চলে গেল। ইসরাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল করিডোরের শেষ প্রান্তে। যেখানে আরাম কেদারায় বসে হেলাল আর নাছির সাহেব দাবা খেলছেন।
ইসরাতকে দেখতেই হেলাল সাহেব বললেন,

“যা তো একটু চা নিয়ে আয়! খেলাটা জমছে না চা ছাড়া।
ইসরাত চুপচাপ চলে গেল চা আনতে। দশ মিনিটের মাথায় চা নিয়ে হাজির হলো। হেলাল সাহেব টেবিলের পাশে রাখার জন্য আদেশ দিলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,”ভালো হয়েছে চা। মন খারাপ করো না কিন্তু, নুসরাতের হাতে চা এই বাড়ির কেউই বিট করতে পারবে না।
নাছির সাহেব হেলাল সাহেবের কথার ফাকে একটা দাবা সরিয়ে নিলেন তার জায়গা থেকে। হেলাল সাহেব তড়িৎ চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললেন,”আবার চিটিং করছিস তুই!
নাছির সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে হাসলেন।
“তোমার সাথে পারা যায় না। তাই একটু আধটু করতেই হয়।
ইসরাত বসলো মাঝের সোফায়। হেলাল সাহেব শব্দ করে হেসে উঠলেন।

” তুই আর বদলাবি না তাই না?
নাছির সাহেব হা হা করে হাসলেন। মাথা নাড়িয়ে না করলেন তিনি বদলাবেন না। পরের ম্যাচ হেলাল সাহেব আর ইসরাতের মধ্যে হলো। খেলা শুরু হলো দু-জনের মধ্যে। সময় গড়ালো। ঘড়ির কাটা সেকেন্ডের কাটা থেকে মিনিটের কাটায়, মিনিটের কাটা থেকে ঘন্টার কাটায় গেল। তবুও দু-জনের খেলা শেষ হলো না। হেলাল সাহেব এক চাল দিলে ইসরাত আরেক চাল ফিরিয়ে দে।
হেলাল সাহেব হা হা করে হেসে বললেন,
“তুই তো জম্বেশ খেলিস। নাছিরের থেকে তো চার গুণ ভালো করছিস।
উনার কথা শেষ হলো না ইসরাত বলল,
” কিস্তিমাত।
হেলাল সাহেব দাবার বোর্ডের দিকে তাকালেন অবাক হয়ে। চাল দেওয়ার জন্য খুঁজলেন কিন্তু কিছু পেলেন না খুঁজে।
ইসরাত হাসল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলল,
“বড় আব্বু আপনি হেরে গিয়েছেন।

জায়িন অফিসে পৌঁছানোর পর চার তলা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো। যারা যারা তার সাথে কাজ করবে তারা ও ঘুরে দেখতে লাগলো। ঘুরে দেখা শেষে জায়িনকে জিজ্ঞেস করলো কোন পাশে কি হবে?
জায়িন প্রফেশনাল ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বুঝাতে লাগলো কোথায় কি রাখতে হবে? কোন পাশে রাখলে সিগনাল ভালো আসবে। ভালো প্রফিট পাওয়া যাবে। কোন রুম ইনভেস্টরদের জন্য ভালো। কনফারেন্স রুম কোনটা রাখবে। এবং কোথায় রাখলে কি কি সৌন্দর্য বর্ধন হবে?
সবাই জায়িনের কথা মন দিয়ে শুনলো। জায়িনের কথা শেষ হওয়ার পর হাতে তালি দিতে লাগলো। জায়িন গম্ভীর গলায় বলল,”হাতে তালি দিতে হবে না। বুঝতে পেরেছ? না বুঝলে বলো,আমি আবার বুঝাব।
রাব্বি নামক ছেলেটা বলল,

“ভাই আপনি এতো সুন্দর করে বুঝালেন না বুঝে যাব কই?
“সবাই বুঝেছো?
সবাই সমস্বরে বলল,
” জি ভাই।

নুসরাত ক্লাস করছিল। এবার থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। নাহলে সিক্সথ সেমিস্টারে ও আন্ডা পাবে। প্রফেসর ক্লাস করাচ্ছিলেন। পিওন এসে অনুমতি নিল ক্লাসে ঢোকার জন্য। প্রফেসরের কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে কিছু বলে চলে গেল পিওন। প্রফেসর বললেন,”নুসরাত কে?
নুসরাত উঠে দাঁড়ালো। প্রফেসর তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন,”আপনাকে প্রফেসর আনোয়ার ডেকে পাঠিয়েছেন। এই ক্লাসের শেষে আপনি প্রফেসর আনোয়ারের অফিস রুমে যাবেন।
নুসরাত ক্লাস শেষে প্রফেসরের পিছন পিছন বের হয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো শালা টাকলা প্রফেসর আবার থাকে কেন ডেকে পাঠালো? সে তো কোনো গন্ডগোল পাকায়নি। নুসরাতের ভাবনা-চিন্তার মধ্যে এসে পৌছাল প্রফেসর আনোয়ারের রুমের সামনে। ঢোক গিলে বলল,”মে আই কাম ইন স্যার!
আনোয়ার সাহেব নুসরাতের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালেন। নুসরাত শরীর এলিয়ে হেঁটে ভিতরে গেল।
ভিতরে যেতেই প্রফেসর আনোয়ারের প্রশ্নের সম্মুখীন হলো নুসরাত।

” নুসরাত…..
নুসরাত সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁট চেপে ধরে ভেঙ্গাতক হাসি হেসে বলল,”জি স্যার!
প্রফেসর আনোয়ার গম্ভীর গলায় বললেন,
“আপনি আপনার ফ্যামেলি মেম্বার নিয়ে আসেননি কেন?
নুসরাত কোনো কথা না বলে চোখ বড় বড় করে চারিদিকে তাকাতে লাগলো।
“নুসরাত আমি আপনাকে কিছু বলছি।
” জ্বি স্যার, আমি শুনছি।

” সবাই সবার গার্জিয়ান নিয়ে এসেছে আপনাকে বলার পর ও আপনি কেন কোনো গার্জিয়ান নিয়ে আসলেন না। কালকের মধ্যে আপনি আপনার গার্জিয়ান নিয়ে আসবেন।
নুসরাত কোনো কথা না বলে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে টাইলসে পা ঘষতে লাগলো।
“আপনি যদি আপনার গার্জিয়ান নিয়ে আগামীকাল না আসেন আমি তাহলে আপনার বাসায় গিয়ে নালিশ করবো এবং আপনার বিরুদ্ধে ভার্সিটি অথোরিটি থেকে লিগেল এ্যাকশন নিব। ভার্সিটি রুল ব্রেক করার জন্য। আমি কি বলেছি আপনি কি বুঝতে পারছেন?
” আরে, স্যার এইরকম করছেন কেন? আমি আগামী কালকে নিয়ে আসবো তো গার্জিয়ান। আর আপনি যা যা বলেছেন সব আমি বুঝতে পেরেছি।
“এবার আসুন।
” জি!

“আপনাকে আসতে বলেছি। এক কথা আপনাকে কতবার বলতে হয়? আপনাকে দু-বার না বললে আপনি কি কোনো কথা বুঝতে পারেন না ?
” জি, জি বুঝেছি।
নুসরাত বের হতে হতে প্রফেসর আনোয়ার কে গালি দিতে দিতে বের হলো। শেষের কথা কিছুটা জোরে হওয়ায় প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসলো।
” শালা বেশি কথা বলে আর ক্যা ক্যা করে বলে কোনো মেয়েই তো ধারে কাছে ঘেঁষে না। ঘেঁষবে কীভাবে এই সব বেশি কথা বলা মানুষ আমার একটু ও পছন্দ না। আর অন্যদের কীভাবে পছন্দ হবে? শালার বিয়ে তো এই জন্য হচ্ছে না। মেয়েরা এর মুখ দেখেই একে রিজেক্ট করে দে?
পিছন থেকে প্রফেসর আনোয়ার গম্ভীর গলায় বললেন,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৪

“কি বললেন আপনি ? আবার বলুন! এইইইই…যে শুনুন!
নুসরাত নিজের মুখ চেপে ধরে সামনের দিকে দৌড় দিল। এমন ভাব করলো সে শুনেইনি প্রফেসর আনোয়ার থাকে কি বলছেন? নিজেকে ভাগ বলে দৌড়াল ক্লাসের দিকে। আগামী কালের আগে এ-মুখো সে হবে না।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here