প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬০

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬০
জান্নাত নুসরাত

বুধবার দিন রাতে কাপড় গুছাতে গিয়ে আরশ আর নুসরাতের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লাগলো। ঝগড়ার কারণ ফ্যাশন সেন্স কার ভালো। নুসরাত বলল তার ফ্যাশন সেন্স ভালো। আরশ বলল—তার ফ্যাশন সেন্স নুসরাতের তুলনায় আরো বেশি ভালো।
নুসরাত চিৎকার করে বলল,
“আমি বলছি না কার্গো প্যান্টের সাথে এই টি-শার্ট টা মানাবে। আপনার ফ্যাশন সেন্সের যাতা আবস্থা দেখছি।
আরশ মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
” এ্যা আসছে আমার ভালো ফ্যাশন সেন্স ওয়ালি। কানের নিচে এমন এক চটকানা দিব বেশি বেশি কথা বলা—একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
নুসরাত তর্জনী আঙুল তুলে ঠোঁটে রাখলো। আরশকে চুপ করার জন্য ইশারা করলো। আরশ নুসরাতকে তাকে শাসাতে দেখে রেগে গেল।
“তুই আমার বড় না আমি তোর বড়! আমাকে চুপ করতে বলছিস। বড় ভাইকে চুপ করতে বলতে তোর বিবেকে বাঁধে না।
নুসরাত চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” না বাঁধে না! কে বড় ভাই? আমি এখানে কোনো বড় ভাইকে দেখতে পাচ্ছি না।
নুসরাত চোখের পাতা ঝাপটিয়ে বলল,
“কোথায়? কোথায় বড় ভাই? কে এই বড় ভাই? কি তার পরিচয়?
আরশ বিড়বিড় করে বলল,
“কানা হলে তো দেখতে পাবি না।
নুসরাতকে একপ্রকার ঠেলে সরিয়ে দিল লাগেজের কাছ থেকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“যা তো সর এইখান থেকে, আমাকে প্যাকিং করতে দে নিজের লাগেজ নিজে প্যাকিং কর গিয়ে যা। আমার কাপড় গুছাতে এসে মাস্টারি করবি না। নিজের ফ্যাশন সেন্স নিজের কাছে রাখ! আমার দরকার নেই।
নুসরাত কিছুক্ষণ চুপচাপ আরশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরশ এতো নীরব দেখে বুঝলো না ঘূর্ণিঝড় আসার সম্ভবনা। নুসরাত কে পাত্তা না দিয়ে সুন্দর করে ভাঁজ করে কাপড় লাগেজে রাখতে লাগলো। পিছন ফিরে শেভিং ফম, জেল, চিড়নি হাতে নিল লাগেজে রাখার জন্য। আরশের ওদিকে তাকানোর সুযোগ নিয়ে নুসরাত লাথ মেরে দিল লাগেজে। লাগেজ গিয়ে উল্টে পড়ল দরজার সামনে।
পড়তে পড়তে একবার দেয়ালের সাথে আঘাত লাগলো। ফলে লাগেজের হ্যান্ডেল ভেঙে গেল। আরশ হা করে তাকিয়ে রইলো লাগেজের দিকে। নুসরাতের এক লাত্তিতে লাগেজে গুছিয়ে রাখা কাপড় গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারিদিকে পড়ে গেল।

আরশ ঘুরে তাকাতেই লাগেজের করুণ অবস্থা দেখে তার চোয়াল রাগে শক্ত হয়ে গেল। নুসরাত লাগেজের দিক থেকে চোখ সরিয়ে যখন আরশের দিকে তাকালো, তখনই ক্ষুব্ধ আরশ নুসরাতের বুকের কাছে ধাক্কা দিল। নুসরাত সামান্য পিছিয়ে গেল, কিন্তু নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে রইলো আরশের দিকে।
সে মাথা কাত করে ভালো করে দেখলো—আরশের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে, রাগে মুখটাও কঠিন হয়ে গেছে। কিন্তু এতো রাগ দেখেও নুসরাতের মুখে কোনো ভাবান্তর ঘটলো না।
আরশ নুসরাতকে ধাক্কা মারতে মারতে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। নুসরাত রোবটের মতো পিছনের দিকে গেল। আরশ ও পা বাড়িয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো ধাক্কা দিয়ে নুসরাতের সাথে।

নুসরাতের এতো নির্লিপ্ততা আরশের সহ্য হলো না। রাগে দাঁত দাঁত পিষল। হালকা ঝুঁকে দাঁত খিঁচিয়ে কামড় বসিয়ে দিল নুসরাতের গলার মধ্যে। আকস্মিক আরশের এমন কাজে নুসরাত চোখ বড় বড় করে তাকালো। আরশ একহাত গলিয়ে দিল ঘাড়ে আরেক হাত কোমরে রেখে নুসরাতের শরীর ছুঁই ছুঁই হয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁট কামড়ে শয়তানি হাসি হাসল। নুসরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,” বিটিং ইউ আপ ওয়ান্ট ডু এনি গুড. কাম লেট’স হেভ সাম ডার্টি রোমান্স.

নুসরাতের কান ঝা ঝা করে উঠলো। ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেল আরশের নির্লজ্জতা দেখে। চোখ তীক্ষ্ণ করে তাকিয়ে বুঝতে চাইল আরশ সিরিয়াসনেস নিয়ে বলছে নাকি শালা এমনি বকবক করছে, ডার্টি রোমান্স করতে চায় বলে!
নুসরাত ঠোঁট কামড়ে হাসল। আরশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে বলল,”আপনার চৌদ্দ গুষ্টির একটা ও বেড রোমান্স করছে।
আরশ গলার স্বর নামিয়ে নিল। হাস্কি স্বরে বলল,
“আমার চৌদ্দ গুষ্টির একটা বেড রোমান্স করেনি বলে কি আমি ও করতে পারবো না? রেডি হো, বেড রোমান্সের জন্য।

নুসরাত রাগে কপাল দিয়ে আরশের কপালে ধুম করে মেরে দিল। আরশ আজ নুসরাতকে ছেড়ে দিল না দাঁত দিয়ে কামড় মারল নুসরাতের নাকে। নুসরাত ধুম ধুম করে কিল বসাল আরশের পিঠে। আরশ নুসরাতকে এক হাত দিয়ে চেপে কাবার্ডের সাথে চেপে ধরে কলার বনের কিছুটা উপরে দাঁত বসিয়ে দিল।
কেউ কাউকে ছাড়লো না আজ। নুসরাত আরশের চুল টেনে ধরলো। আরশ ও চুল টেনে ধরলো নুসরাতের,রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটালো এবার। এতক্ষণ দাঁত কামড়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলে ও এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
” তুই আমার লাগেজ লাথি মেরে উল্টে ফেলে দিয়েছিস কেন?
“ভালো করেছি,বেশ করেছি। আবার সামনে পেলে আপনার লাগেজ উস্টা মেরে নর্দমায় ফেলে আসবো।
আরশের মাথায় রাগ চড়ে বসলো। নিজেকে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো। নুসরাতের দু-হাত উপরের দিকে তুলে চেপে ধরলো কাবার্ডের সাথে। নুসরাত হাত ছুটাতে চাইলো, আরশ শক্ত করে ধরে রাখলো। হাত ছুটাতে না পেরে কপাল দিয়ে আরশের কপালে ধুম ধুম করে মারল।

আরশ ব্যথায় নাক কুঁচকে নিল। নুসরাতের সবচেয়ে দূর্বল জায়গা নাকে কপাল দিয়ে আঘাত করলো। হঠাৎ করে নাকে কপাল দিয়ে আঘাত করায় নুসরাত নির্বাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ হা করে থাকার পর চিৎকার করে উঠলো।
কিছু সেকেন্ডের ভিতর নাক মুখ খিঁচে নিল। চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। ঠোঁট হালকা হালকা কেঁপে উঠলো। নাকের ব্যথায় হাফসাফ করে শ্বাস নিতে লাগলো।
আরশ হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে তো ধীরে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু এতো জোরে লেগে যাবে সে ভাবতে পারেনি। আরশ অন্য ভাবনায় বিভোর হতেই হাত একটু ঢিলে হয়ে গেল। আরশের হাত ঢিলে হতেই নুসরাত হাত ছাড়িয়ে এনে নাক চেপে ধরলো। নাক চেপে ধরে পিঠ ঘেঁষে বসে গেল কাবার্ডের সাথে।
নাকের ব্যথায় কেঁদে উঠলো। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো যাতে শব্দ বের না হয় মুখের বাহিরে। আরশ হা করে তাকিয়ে থাকল। এটা কি করলো সে? রাগে চুল টেনে ধরলো নিজের। সে আবার রাগের মাথায় সব শেষ করে দিচ্ছে। উফ সে এই রাগ নিয়ে কি করবে?

নুসরাতের ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। আরশ নিজে ও বসলো নুসরাতের পাশ ঘেঁষে। নুসরাতের হাত দিয়ে চেপে রেখেছিল ঠোঁট যাতে কান্নার শব্দ না শোনা যায়। আরশ হাত টেনে নিয়ে আসলো মুখের সামনে থেকে। নুসরাত চোখ বুজে হাউমাউ করে কান্না করছে নাকের ভিতরের তীক্ষ্ণ ব্যথায়। আরশ নুসরাতের হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে মেয়েটাকে টেনে আনলো নিজের দিকে।

নুসরাত রোবট হয়ে বসে থাকলো নিজের জায়গায়। আরশ ঠোঁট কামড়ে নুসরাত হাতের নিচের দিকে হাত গলিয়ে নিয়ে পিঠের উপর হাত রাখলো। টেনে নিজের কাছে এনে ফিসফিস করে নুসরাত কে বোঝানোর স্বরে বলল,”প্লিজ ডোন্ট ক্রাই! আ’ম, আ’ম স্যরি! আমা, আমার কোনো ইনটেনশন ছিল না তোকে ব্যথা দেওয়ার।
নুসরাত তবুও থামলো না। নাকের চারিপাশ লাল হয়ে আছে, নাকে আঘাত করার জন্য। নুসরাতের কাছে মনে হলো নকের তীক্ষ্ণ ব্যথা মগজের প্রতিটি নিউরণে নিউরণে ছড়িয়ে পড়েছে।
আরশ আরেকটু কাছে টেনে নিল। গালে হাত রেখে নুসরাতের মুখ তার দিকে করে ধরে রাখলো। গালে হাত রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে নাকের পাশ স্পর্শ করে ধীর স্বরে বলল,”শুউউউ! কান্না কেন? বেশি ব্যথা লেগেছে? ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে কান্না করছিস কেন?

আচ্ছা কান্না বন্ধ কর! তোর নাক ব্যথা কমলে আমাকে তোর মাথা দিয়ে নাকে মেরে দিস। আ’ম স্যরি! আমি বুঝতে পারিনি! তোর নাক এতো সেনসেটিভ। ডোন্ট ক্রাই সুইটহার্ট। ইউ্যের টিয়ার্স আর হার্টিং মাই হার্ট। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই! আমি স্যরি বলছি তো। আমার কষ্ট হচ্ছে তো। ডাক্টার কে কল করি। এসে স্প্রে দিয়ে যাবে। নাক ঠিক হয়ে যাবে। তবুও কাঁদিস না। নাক লাল হয়ে যাচ্ছে তো।
আরশ পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। নুসরাতকে তার সমান করে বসিয়ে দিয়ে নাকের এক পাশে নাক ঘষল। ঠোঁটের কোণে চুমু খেল। ফিসফিস করে বলল, “ডোন্ট ক্রাই সুইটহার্ট! ইট’স হার্টিং মি। প্লিজ ডোন্ট….!
কথা বলতে বলতে আরশ নুসরাতের মাথা তার বুকের পাশে চেপে ধরলো। চুপচাপ মন খারাপ করে বসে থেকে শুনতে লাগলো নুসরাতের কান্না। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নিল নিজের। চোখ মুছতেই দেখা গেল চোখের কোণ লাল হয়ে গিয়েছে ছেলেটার।

হেলাল সাহেব বিরক্তির চোখে তাকিয়ে আছেন আরশের রুমের দিকে। বিড়বিড় করে বললেন,”একটা কে মানুষ করতে পারলাম না।
পাশে বসা জায়ানের দিকে তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লেন। চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললেন,”কি? তোমার আবার কি? আমার মুখের সামনে এসে বসে আছো কেন?
জায়ান থতমত খেয়ে ঢোক গিলল। বাবার দিকে লজ্জা নিয়ে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকালো।
হেলাল সাহেব জায়ানের এতো লজ্জা পাওয়া সহ্য করতে পারলেন না। চায়ের কাপ শব্দ করে টেবিলের উপর রেখে জিজ্ঞেস করলেন,”তোমাকে এখানে কেউ মেয়ে দেখতে আসেনি যে এতো লজ্জা পাচ্ছো। সোজা করে বললে বলো, কেন আমার মুখের সামনে এসে বসে আছো নাহলে ভাগো এখান থেকে।
বিড়বিড় করলেন,

“সহ্য হচ্ছে না আমার সুখ এবাড়ির কেউ। চা ও এক কাপ আরাম করে খেতে দিবে না। সব জ্বালা আমার কপালেই জুটেছে।
জায়ান ঢোক গিলল। ঠোঁট কামড়ে হেলাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,” বলবো!
হেলাল সাহেবের চিড়বিড় করা গলার আওয়াজ।
“না বললে না বলো! যাও সরো ডিস্টার্ব করো না তো। একটু ইনজয় করতে দাও আমাকে আমার রিটায়ার্ড লাইফ।
জায়ান বুঝলো এখন না বললে হবে না। পরে বলতে গেলে আরেকটা গন্ডগোল হয়ে যাবে। যা বলার এখন বলতে হবে।
জায়ান লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে বলল,
” আসলে ইনায়াকে কখন বাড়িতে তুলবে? সেদিন না বললে খুব তাড়াতাড়ি তুলে ফেলবে।
হেলাল সাহেব খ্যাকখ্যাক করে উঠলেন। জায়ানকে ধমকে উঠলেন।
“তুমি বাড়ির পরিস্থিতি দেখছো? সব কেমন হয়ে আছে? তোমার লজ্জা লাগছে না বাপকে এসে বউকে ঘরে তোলার কথা বলতে।
জায়ান ফোঁড়ন কেটে বলল,

” জি দেখছি! সব তো ঠিকই তো আছে। আর লজ্জা পাবো কেন? আমার ছোট ভাই আর সাথেরটা বিয়ে করে সংসার করছে আর আমি এখনো বিবাহিত সিঙ্গেল ঘুরছি।
হেলাল সাহেব চা হাতে নিলেন। চুমুক দিয়ে ঠান্ডা চা দেখে ধমকানো স্বরে ডেকে উঠলেন।
“লিপি, এই লিপি! আরেক কাপ চা নিয়ে আসো তো। চা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে—জায়ানের সাথে কথা বলতে গিয়ে।
জায়ানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলেন। গলা পরিস্কার করে নিয়ে কর্কশ গলায় বললেন,” দেখছো বাড়ির পরিবেশ কেমন হয়ে আছে? তোমার ছোট ভাই তো বউকে সামলাতে গিয়ে নিজে মার খাচ্ছে বউয়ের হাতে। আবার বউকে ও পিটাচ্ছে। আর বড় ভাইকে তো বউ আঙুল দিয়ে নাচাচ্ছে। বউ যে-দিকে যায় তোমার বড় ভাই ও সেদিকে যায়। তা যাইহোক তোমাকে একটা এডভাইজ দিচ্ছি, সিঙ্গেল আছো ইনজয় করো। বউ আসলেই তোমার ডানা কেটে ওই ফ্যানের সাথে বেঁধে দিবে। তোমার তো নিজের ভালো সহ্য হচ্ছে না। বিয়ে করে ভাইয়েদের মতো অশান্তি করতে চাচ্ছো। ভালো আছো ভালো থাকো। নিজে শান্তি তে থাকো, আর আমাদের ও শান্তিতে থাকতে দাও।
জায়ান অবাক হয়ে বলল,

“ওরা অশান্তি করছে?
” অব্যশই অশান্তি করছে। একটু আগে শুনলে না, নুসরাতের কান্নার শব্দ। তোমার ভাই মনে হয় আমার ভাতিজি কে মেরে টেরে অজ্ঞান করে ফেলেছে।
জায়ান হাসার চেষ্টা করলো। হেলাল সাহেবের কথার দ্বিম-ত করে বলল,”আর যাই করুক আরশ বউ পেটাবে না। হয়তো…
হেলাল সাহেব জ্বলে উঠলেন।
“হয়তো বলে কি বুঝাতে চাচ্ছো? আমাদের বাড়ির মেয়েরা ছেলেদের কে পেটায়। এরকম কথা যেন মুখ থেকে বের হতে না শুনি। শুনলে তোমার ঠোঁট সেলাই করে রেখে দিব।
জায়ান ঠোঁট কামড়ে মিনমিন করে বলল,
” তা তো দেখছি, বড় ফুফু কি করেছেন?
হেলাল সাহেব কর্কশ গলায় বললেন
“মিনমিন করে কি বলছো? সাহস থাকলে পরিস্কার করে বলো!
” জি না কিছু বলছি না! আমি যাই!
“হ্যাঁ যাও না তো! এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে?

পরেরদিন রাতে,
হেলাল সাহেব রেডি হয়ে এসে বসলেন সোফার উপর। বাড়ির ছেলেদের আগে নুসরাত রেডি হয়ে গেল। পরণে সাদা শার্ট আর কার্গো প্যান্ট, পায়ে স্লিপার, চোখে চশমা, হাতে ল্যাপটপ ব্যাগ। চুলগুলো কোনরকম খোপা করে রাখা মনে হচ্ছে একটু টোকা দিলে খুলে পড়ে যাবে।
হেলাল সাহেব সোফায় আরাম করে বসলেন। নুসরাতের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। নুসরাত হেলাল সাহেবকে ডিঙ্গিয়ে মেহেরুন নেছার রুমের দিকে চলে গেল।
ইসরাত সাদা আর কালোর মিশ্রণে কুর্তি আর ব্যাগি প্যান্ট পরেছে। গলায় চেরি জরজেটের কালো ওড়না। পায়ে ফ্ল্যাট জুতো, কাঁধ ঘেঁষে ছোট্ট একটা ব্যাগ।
ইসরাত কে নিচ তলায় আসতে দেখে হেলাল সাহেব ইসরাতকে ডেকে নিজের পাশে বসালেন। ইসরাত ঠোঁট এলিয়ে হাসল হেলাল সাহেবের পাশে বসে। হেলাল সাহেব ও হাসলেন।

আরশ, জায়িন আর জায়ান এক সাথে নামলো। আরশ ডার্ক রেড কালার শার্ট আর কালো প্যান্ট ইন করে পরেছে। তাই শার্টের উপর দিয়ে সুঠাম দেহের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। আরশ শার্টের হাতা গুটিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে মোবাইল কানে ধরে বাহিরের দিকে পা বাড়ালো। জায়িন বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এসে হেলাল সাহেবের সামনের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে হাতে মোবাইল নিয়ে নির্লিপ্ত হয়ে বসলো।
হেলাল সাহেব কেঁশে মনোযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলেন জায়িনের। জায়িন নির্লিপ্ত,মোবাইলের দিকে চোখ তার। এমনভাবে বসে রইলো যেন, তার আশে-পাশে একটা কাকপক্ষির উপস্থিতি নেই।
হেলাল সাহেব যখন কেঁশে জায়িনের কাছ থেকে মনোযোগ নিতে ব্যর্থ হলো তখন নাক ফুলিয়ে গর্জন করে উঠলেন।

“কি?
জায়িনের ভারী গলার স্বর,
” কি?
হেলাল সাহেব থতমত খেয়ে ঢোক গিললেন। ঠোঁট ফুলিয়ে বললেন,”আমি তোমার বাপ না তুমি আমার বাপ!
জায়িনের নির্লিপ্ত উত্তর,
“আপনি জানেন না!
হেলাল সাহেব দমে গেলেন না। জায়িনকে ধমক দিয়ে বললেন,”পা নামিয়ে বসো! দিনকে দিন বেয়াদব, অসভ্য হয়ে যাচ্ছ। বাপের সামনে পা তুলে বসো?
জায়িনের ভাবাবেগ হলো না। ঠোঁট কামড়ে মোবাইল স্ক্রল করতে লাগলো। হেলাল সাহেব ছেলের কাছ থেকে পাত্তা না পেয়ে মিনমিন করে বললেন,”নাছিরের ছোট মেয়েটার সাথে থেকে এর এই অধপতন।
হেলাল সাহেবের কথা জায়িনের কানে গেল। বাবার কথা শুনে জায়িন ভ্রু কুঁচকে নিল। বাবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু দিয়ে ইশারা করলো। তারপর বলল,”কি বললেন? আবার বলুন! মিনমিন করে কথা বলবেন না,আমি বুঝতে পারিনা!
হেলাল সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। সবাইকে আসতে দেখে জায়িনের কথা ইগনোর করলেন। সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,”সবাই সবকিছু লাগেজে নিয়েছো?

সবাই মাথা নাড়ালেন। হেলাল সাহেব চোখ ঘুরালেন। চোখ দিয়ে খুঁজলেন কাঙ্কিত ব্যাক্তিকে। হয়তো কাঙ্কিত ব্যাক্তিকে খুঁজে পেলেন না, তাই চোখে মুখে নিরাশা ভেসে উঠল।
নাকের উপর থেকে চিকন লেন্সের চশমা উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে ভারী আওয়াজে ডেকে উঠলেন,”আম্মা কোথায় তুমি? সবাই চলে আসছে! তোমার এখনো শেষ হয়নি।
মেহেরুন নেছার গলার আওয়াজে তাড়া। নিজের রুম থেকে উচ্চ আওয়াজ ছুঁড়ে বললেন,”আইতাছি আইতাছি, এতো তাড়া দেও ক্যা? একটু আরাম কইরা রেইডি হইবার দিবানা।

মেহেরুন নেছা এর দশ মিনিট পর নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলেন। লাঠির ঠকঠক শব্দে ড্রয়িং রুমের সবাই ফিরে তাকালো পিছনের দিকে। মেহেরুন নেছার মুখের দিকে তাকাতেই সকলের মুখ ইয়া বড় হয়ে গেল।
মেহেরুন নেছার ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক, সাথে ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। পার্লের কানের রিং, চোখে গুচ্ছির চশমা,পরণে নুসরাতের কুর্তি, গলায় ছোট ছোট পাথরের ক্লাসি নেকলেস, এক পাশ দিয়ে রাখা ওড়না। হাতে চিকন পাথরের ব্রেসলেট। কুর্তির সাথে মিলিয়ে ব্যগি প্যান্ট। পায়ে নাইকের লগো বিশিষ্ট ব্ল্যাক কালার শু।
মেহেরুন নেছা সবার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসলেন। সৈয়দ বাড়ির সবাই হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছেন।
হেলাল সাহেব ভারী গলায় বললেন,

“আম্মা তুমি এসব কি পরেছো?
মেহেরুন নেছা লাঠি ধরে একটা চক্কর মারলেন। যুবতীদের মতো হাসলেন ঠোঁটে হাত দিয়ে। নাছির সাহেব হাত দিয়ে বুক চেপে ধরলেন। মেহেরুন নেছার দিকে তাকিয়ে বললেন, “উনি আমার মা হতেই পারে না।
নাজমিন বেগমের কানে কানে বললেন,
” আম্মার কিছু হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে! পাগল হয়ে গেলেন নাকি আম্মা?
নাজমিন বেগম বিস্ময় নিয়ে বললেন,
“আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে! এরকম অদ্ভুত সাজ সজ্জা আম্মা কেন করেছেন?
নাছির সাহেব দুই কাঁধ তুলে বললেন,
” আমি কি করে জানবো?
নাজমিন বেগম থুতনিতে হাত রেখে বললেন,

“তাই তো, তাই তো!
হেলাল সাহেব ঢোক গিললেন। মায়ের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললেন,”আম্মা এসব পরতে তোমায় কে বলেছে? তোমাকে এসব পরে কী রকম দেখাচ্ছে? প্লিজ চেঞ্জ করে আসো! আমরা ততক্ষণ অপেক্ষা করছি।
মেহেরুন নেছা চ্যাত করে উঠলেন। হেলাল সাহেব কে শাসানো গলায় বললেন,”তুই স্টিলিং এর কি বুঝছ? আমারে এইভাবে কতো সুন্দর লাগতাছে তা আমি আয়না দেইখা আইছি। তোর কথা আমি ক্যা শুনমু? তুই তো আমারে সুন্দর দেইখা জিদ করতাছছ? মানুষ যখন কইবো এই বয়সে আপনার মা এতো ফিটিং আর আপনি এরকম কুমরো পটাশ ক্যা? মায়ের মতো সুন্দর হইলা না ক্যা? তখন তো উত্তর দিবার পারবা না। সব বুইঝা লইছি আমি হেলাল। তুমি যে আমারে ঈর্ষা করছো তা তোমার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
হেলাল সাহেব মেহেরুন নেছাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। মেহেরুন নেছার দিকে তাকিয়ে বললেন,”তোমাকে এইসব ডং কে সাজিয়ে দিয়েছে?

“বলুম না!
হেলাল সাহেব বললেন,
” কেন?
বুকের কাছে হাত বেঁধে মেহেরুন নেছা বললেন,
“তুই আমার স্টিলিংকে ক্যা ডং কইতাছিস? তাই বলুম না।
” আচ্ছা আমার কথা আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি, এবার বলো কে তোমাকে সাজিয়ে দিয়েছে।
নুসরাত তখন পিছন থেকে বের হয়ে আসলো। মেহেরুন নেছার কানে ফিসফিস করে বলল,”ওদের কথায় কান দিও না,তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে দাদা। এরা স্টাইলের কি বুঝে? এখনকার মেয়ে, যুবতী, কিশোরী, সবাই এসব কাপড় পরে। ফ্যাশন বুঝছ ফ্যাশন! ওদের ফ্যাশন সেন্স বলতে মাথায় ডাব্বা আছে।
মেহেরুন নেছা গলা পরিস্কার করে বললেন,

“কি কইতাছিলি না?
হেলাল সাহেব কিছু বলার পূর্বেই মেহেরুন নেছা থামিয়ে দিয়ে বললেন,” হ হ মনে পড়ছে! আমারে কে স্টিলিং করে দিছে তাই না?
হেলাল সাহেব মাথা নাড়ালেন। মেহেরুন নেছা হাত দিয়ে নুসরাত কে তার পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
হেলাল সাহেব যা বোঝার বুঝে গেলেন। এটা নুসরাতের কাজ!
নুসরাতের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকেতেই মেহেরুন নেছা বললেন,”ওর দিকে এইভাবে তাকাছ ক্যা?
হেলাল সাহেব মেহেরুন নেছার কথার জবাব না দিয়ে বললেন,”তুমি আম্মাকে এভাবে কাপড় পরিয়ে দিয়েছো?
নুসরাত চোখের চশমা ঠেলে নাকের উপর তুলে উপর নিচ মাথা নাড়ালো। ইসরাত মাথায় হাত দিল। এই মেয়েকে নিয়ে সে কি করবে? এটা এরকম কেন? এই বয়সের একজন বয়স্ক মহিলাকে কার্টুন সাজিয়ে দিয়েছে। নুসরাত টা পারে ও বটে।

ঝর্ণা আর রুহিনি ঠোঁট টিপে হাসল। সোহেদ হাসি আটকানোর চেষ্টা করে হাস্যরস গলায় বলল,”ভাই বাদ দিয়ে দিন! আম্মা এভাবে থাকতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করলে আমরা বলে কি হবে? উনি যা ভালো বুঝেন, তাই করুক!
সোহেদের কথা শুনে হেলাল সাহেব বড় বড় পা ফেলে বাহিরের দিকে পা বাড়ালেন।
লুৎফা বেগম নুসরাতের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আমাকে সাজিয়ে দিলি না কেন?
নুসরাত চশমা ঠিক করতে করতে বলল,
” তুমি বলেছিলে আমাকে!
লুৎফা বেগম রুষ্ট চোখে তাকালেন মমোর দিকে। মমো ঠোঁট উল্টে বলল,”আমি আবার কি করলাম? আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছো কেন?

লুৎফা বেগম রাগ করে বের হয়ে গেলেন। নুসরাত বলল,”যাহ বাবা! রাগ করে ফেলল।
একে একে সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। শোহেব লাইট, দরজা, জানালা, চেক করলেন ভালো করে লাগানো কি না? চেক করা শেষে মেইন ডোরে বড় একটি তালা লাগিয়ে দিলেন। গাড়ি আলাদা করে ভাড়া করে নেওয়া হয়েছে। ভাড়া করা গাড়িতে নিজেদের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস তোলা হলো। এতো রাতে গাড়ি চালানো বিপদজনক হতে পারে তাই হেলাল সাহেবের আদেশে তিনটা সেভেন সিটার গাড়ি বুক করা হয়েছে।
প্রথম গাড়িতে হেলাল সাহেব, লিপি বেগম, নাছির সাহেব, নাজমিন বেগম,জায়ান,অনিকা আর মেহেরুন নেছা ।
দ্বিতীয় গাড়িতে রোহিনী, আরিশা, আহান, সোহেদ, শোহেব, ঝর্ণা আর লুৎফা।
তৃতীয় গাড়িতে জায়িন,ইসরাত,আরশ, নুসরাত, মমো আর ইরহাম।
নুসরাত আরশের সাথে না যাওয়ার জন্য প্রথম গাড়িতে উঠে বসলো। নাছির সাহেব ধমকে পাঠিয়ে দিলেন শেষের গাড়িতে। মুখ লটকে যখন গাড়িতে উঠতে যাবে আরশ নুসরাত কে ভেঙ্গিয়ে বলল,”ওলে আমার বোন টা। ইশ তোকে নিল না তোর বাপ। বাচ্চা টাকে নাছির সাহেব রেখে গেলেন, অনেক দুঃখ পেলাম আমার বোনটার জন্য।
নুসরাত গাড়িতে বসার পর আরশ আদেশে স্বরে বলল,

“পিছনে গিয়ে বস!
নুসরাত গো ধরে সামনের সিটে বসে রইলো। ইসরাত ও সামনের সিটে বসতে চাইলো। জায়ান গম্ভীর গলায় বলল,
” ইসরাত আমার পাশে আসো! আমরা পিছনে বসবো।
ইসরাত দাঁড়িয়ে রইলো নিজের জায়গায়। জায়িন শার্টের হাতা গুটিয়ে ইসরাতের দিকে এগিয়ে আসলো। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই জায়িন, ছোট ভাই বোনের সামনে ইসরাতকে কোলে তুলে এক প্রকার পিছনের সিটে ছুঁড়ে ফেলল।
তারপর সিট টেনে লাগিয়ে দিল। আরশ শুধু চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকল নুসরাতের দিকে। এরজন্য তার পিছনে বসে রোমান্স করার ইচ্ছা চৌপাট হয়ে গেল। রাগী পায়ে ধুম ধুম করে পা ডাকিয়ে এসে বসলো গাড়িতে।
কর্কশ গলায় বলল,

“নুসরাত মাঝে যা।
নুসরাত যাবে না বলে মাথা এলিয়ে শুয়ে পড়ল। ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইলো মাঝে না বসার জন্য।
আরশ নাক ফুলিয়ে গিয়ে বসলো নুসরাতের কাছে। মমো চুপচাপ এসে বসলো। এখন কথা বলা যাবে না পরিবেশ বেশ গরম হয়ে আছে।
ইরহাম ড্রাইভারের পাশের সিটে উঠে বসলো। ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলল,”গাড়ি চালান আঙ্কেল!ও রা অনেকটা চলে গিয়েছে এতক্ষণে।
আরশ নুসরাতের পায়ের উপর নিজের এক পা তুলে রাখলো। নুসরাত ভ্রু কুঞ্জন করলো,তবুও নড়লো না। আরশ নুসরাতের মতিগতি বুঝে অধর বাঁকা করে অদ্ভুত ভাবে হাসল। গলার কাছে নিয়ে গরম শ্বাস ফেলল।
নুসরাত কে নড়তে না দেখে ফিসফিস করে বলল,
“দেখি কতক্ষণ আমার পায়ের ভর নিজের উপর নিতে পারিস। আজ দেখব, মিসেস সৈয়দ আরশ হেলালের কতো ধৈর্য শক্তি।

নুসরাত তবুও নড়লো না। সিটে গা এলিয়ে শুয়ে থাকলো। বলতে ইচ্ছে হলো বার বার নিজের পুরো নাম বলে আমাকে কি আপনার নাম মুখস্ত করাতে চাচ্ছেন? কিন্তু এখন কথা বলা যাবে না। স্বার্থে খাতিরে দু-একটা কথা কোরবানি দেওয়া মনজুর।
ইসরাত কিছুক্ষণ পিছে বসার পর পর হাফসাফ করতে লাগলো। জায়িন ইসরাতের এমন অদ্ভুত আচরণের মানে খুঁজে পেল না। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে?
ইসরাত ঠোঁট কামড়ে বলল,
“কিছু না।
জায়িন ইসরাতের মুখ দু-হাত দিয়ে চেপে ধরলো হাতের তালুর মধ্যে। গম্ভীর গলায় বলল,”আমাকে বলো! আমি দেখি কিছু করতে পারি কি না?
ইসরাত টেনে শ্বাস নিয়ে বলল,
“শ্বাস আটকে যাচ্ছে।
জায়িন কিছুক্ষণ তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসল। ইসরাতের দিকে চোখ বাঁকা করে তাকিয়ে বলল,”দাঁড়াও শ্বাস আটকে যাওয়া ঠিক করে দিচ্ছি।
ইসরাত রিনরিনে মেয়েলি গলায় বলল,

“কীভাবে?
জায়িন হাসল। ঠোঁটে তার শয়তানি হাসি। ইসরাতের ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি রেখে হাত বাড়িয়ে ইসরাতের মাথা চেপে ধরলো। নিজের ঠোঁট ইসরাতের ঠোঁটের সন্নিকটে নিয়ে বলল,
“এভাবে!
ইরহাম গান বাজাল। তার কাছে কী রকম লাগছে ট্যুর ট্যুর ফিল আসছে । হাই বলিউমে গান বেজে উঠলো গাড়িতে। যে সে গান বাজাল না ইরহাম, লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে আনহলি গান বাজাল।
গানের লিরিক্স শুরু হলো,

“Mummy don’t know daddy’s getting hot
At the body shop, doing something unholy
He lucky, lucky,
yeah (ooh)
He lucky, lucky,
yeah (ye-yeah)
He lucky, lucky,
yeah
He lucky, lucky,
yeah
A lucky, lucky girl
She got married to a boy
like you
She’d kick you out if she ever,
ever knew’Bout all the
– you tell me that you do
Dirty, dirty boy
You know everyone is talking on the scene
I hear them whispering
’bout the places that you’ve been
And how you don’t know how to keep your business clean
Mummy don’t know daddy’s getting hot
At the body shop,
doing something unholy
He’s sat back while she’s dropping it,
she be popping it
Yeah,
she put it down slowly
Oh-ee-oh-ee-oh, he left his kids at Ho-ee-oh-ee-ome, so he can get that

জায়িন ফিসফিস কন্ঠে হেসে উঠলো। ইসরাতের ঠোঁটে নিজের আধিপত্য বিছাতে বিছাতে বলল,”একদম ঠিক টাইমে ঠিক গান বাজিয়েছে। এজন্য একটা ট্রিট পাওনা।
লজ্জায় ইসরাতের গাল লাল হয়ে গেল। জায়িন ঠোঁট চেপে ধরলো ইসরাতের। ইসরাতের শুনার মতো করে বলল, “এবার শ্বাস আটকা বন্ধ হয়েছে। ক্লিয়ার হয়েছে! শ্বাস চলাচল…
ইসরাত মিনমিন করে বলল,
” জি!
জায়িন ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠলো।
“আর যদি এমন হয় আমাকে বলবে। আমি বিনা কোনো এমাউন্টে তোমার শ্বাস চলাচল ঠিক করে দিব।
গট ইট।
ইসরাত কথা বলল না। জায়িন ফিসফিস করে বলল,

” তুমি কি বুঝোনি! আমি কি আবার বুঝিয়ে দিব।
ইসরাত থতমত খেল। আতঙ্কিত গলায় ধড়ফড় করে বলল, “জি না! আমি বুঝেছি।
জায়িন ইসরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” ডেট’স মাই ওমেন। একবার বললেই সব বুঝে যায়।
ইসরাত কিছুটা ঝাঁঝালো গলায় কিন্তু ধীরে বলল জায়িনের শুনার মতো করে।
“ফিসফিস করে কথা বলা ছাড়া আপনি কি কথা বলতে পারেন না? এভাবে শুধু গায়ের সাথে লেগে বসে থাকেন কেন? সরে বসতে পারেন না।
জায়িন রাশভারী গলায় বলল,
” অধিকার আমার, বউ আমার, প্রোপার্টি আমার। সব আমার। আমি কেন সরে বসবো? প্রয়োজন হলে বউয়ের কোলে চড়ে বসে থাকবো তবুও সরে বসবো না।
ইসরাত বিরক্ত হয়ে জায়িনকে ঠেলে দিল। জায়িন ঠেলে দেওয়ার পর ও আরো কাছে এসে বসলো। ঠোঁট এলিয়ে হেসে চটাস করে ইসরাতের গালে চুমু খেয়ে নিল।
নুসরাত অনেকক্ষণ সহ্য করলো এই অশ্লীল মার্কা
গান। যখন দেখলো কেউ অফ করতে বলছে না তখন নুসরাত ইরহামকে বিরক্তির স্বরে বলল,”শালা গানটা বন্ধ কর। তোর গানের জ্বালায় আমি ঘুমাতে পারছি না।
আরশ আদেশের স্বরে বলল,

“আমরা ট্যুরে যাচ্ছি ইরহাম, একটু গান বাজনা হবেই। এটার সাউন্ড কম মনে হচ্ছে আরেকটু বাড়িয়ে দে। ফিল পাচ্ছি না।
বিড়বিড় করে বলল,
” পাশে বউ রেখে গানের মমার্থ ধরে রাখতে পারছি না। আমার মতো অভাগা এই পৃথিবী তে দুটো নেই।
নুসরাত বিরক্ত হয়ে কথা বলল না। মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলো।
আরশ নুসরাতের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে গানের সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে লাগল,”nusrat Don’t know arosh getting hot at the body shop. Doing something unholy.
” সর কাছ থেকে শালা। তুই হট হলে যা না গায়ে গিয়ে পানি ঢেলে আয়। তাহলেই তো সব হটনেস চলে যাবে। আমার কানের কাছে এসে প্যান প্যান করা বন্ধ কর আল্লাহর ওয়াস্তে।
আরশ সরল না। নুসরাতের কাঁধে মাথা রাখলো। নুসরাত কে জ্বালানোর জন্য গরম নিঃশ্বাস ছাড়লো কাঁধে। কিছুক্ষণ পর পর কানের কাছে ফু দিতে লাগলো।

চাঁদের আলো ঘোলাটে কিরণ ছড়াচ্ছে। অন্ধকারে ঝিঝি পোকার ঝি ঝি ডাক কানের কাছে লাগছে। জানালার গ্লাস কিছুটা ফাঁক করা ছিল তাই শনশন করে এসে বাতাস গাড়ির ভিতর ঢুকলো। গড়িতে থাকা সবাই ঘুমিয়ে আছে শুধু নিশাচর প্রাণীর মতো দুটো চোখ সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছে।
হাতে মোবাইল। মোবাইলের ব্রাইটনেস একেবারে লো তে থাকা সত্ত্বেও হালকা আলো ছড়িয়ে নুসরাতের চারপাশ পরিস্কার হয়ে আছে। সবাই গভীর ঘুমে। ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার শব্দ কানে আসছে। নুসরাত চোখ ঘুরিয়ে একবার জায়িন আর ইসরাতের দিকে তাকালো। দু-জন দুজনের সাথে এমনভাবে লেগে আছে মনে হচ্ছে কেউ ওদের আলাদা করে দিবে। নুসরাত ভেংচি কাটলো দু-জনকে। মোবাইলে সফট গান বাজিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে নিল।
ওয়াট’সঅ্যাপে ঢুকে আবিরকে মেসেজ পাঠালো,
“আমরা অলমোস্ট পৌঁছে গিয়েছি। তুমি কোথায়?
অপরপাশ থেকে মেসেজ আসলো,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৯

” হু! আগামীকাল সকালে তবে দেখা হচ্ছে।
নুসরাত রিপ্লে দিল না। মেসেজ সিন করে বসে রইলো।
আরশ কিছুটা নড়েচড়ে নুসরাতের গলার ভাঁজে নিজের মুখ আরো ভালোভাবে ডুবিয়ে দিল। নুসরাত মোবাইল থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে আরশের দিকে বিরক্তির চোখে তাকালো একবার। গালি দিল মনে মনে। আরশের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করলো। হঠাৎ করে মনে হলো আরশের চৌদ্দ গুষ্টির মধ্যে একজন সে! নিজের কথা ফিরিয়ে নিল। সে বাদে আরশের চৌদ্দ গুষ্টি সবকটা একেকটা খবিশ।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here