প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬১

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬১
জান্নাত নুসরাত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। এটি প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঢেউয়ের সুর, এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজার সমূদ্র সৈকত চট্টগ্রামে অবস্থিত।
রাত দুটোর দিকে ঘুমে ঢুলু ঢুলু হয়ে সবাই গাড়ি থেকে নামল। রিসোর্ট দেখার কোনো চেষ্টা না করে সবাই ভিতরে পা বাড়ালো। কিন্তু নুসরাত সে ল্যাপটপ ব্যাগ হাতে নিয়ে চোখের চশমা ঠিক করতে করতে চারিদিকে তাকালো। রিসেপশনে আসতেই ওয়েলকাম ড্রিংক দেওয়া হলো। সবাই ঘুমের জন্য না করে দিল, কিন্তু নুসরাত সে ড্রিংকের ট্রে ওয়েটারের কাছ থেকে নিজের কাছে নিল। হাতে নিয়ে রিসেপশনে পাশের ওয়েটিং লাউঞ্জে একাই বসে গেল। বসে বসে একা একা সাবার করে দিল সব ড্রিংক। ড্রিংক খেয়ে ঢেঁকুর তুলল। বিড়বিড় করে বলল,”এতো মজার ড্রিংক এরা না করে দিল। টাকা দিয়ে রিসোর্ট বুক করলাম আর ফ্রি এর মাল না করে দিব।

রিসেপশনিস্টের কাছ থেকে নিজ নিজ রুমের চাবি নিয়ে হাঁটা ধরলো সবাই ভিতরের দিকে। নিউলি মেরিড কাপলদের জন্য দুটো রুম বুক করা হলো স্পেশালি।
দুই কাপলদেরকে একেবারে শেষের রুম দেওয়া হয়েছে। জায়িন ইসরাতের কাঁধের উপর ভর দিয়ে এক চোখ খুলে এক চোখ বন্ধ করে হাঁটছে ঘুমের চক্করে।
ইসরাত রুমের লক খুলতেই দেখল বিছানার মাঝখানে গোলাপ ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। সাদা বেডে গোলাপ ফুল দিয়ে লাভ সেপ আঁকানো। লাভের ভিতর গাধা ফুল দিয়ে জায়িন আর ইসরাত লেখা। জায়িন সেদিকে তাকালো না কোনোরকম পা থেকে জুতো খুলে ছুঁড়ে ফেলল রুমের এক কোণায়। তারপর ঠাস করে বিছানার মাঝখানে শুয়ে পড়ল। সুন্দর করে সাজানো ফুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে গেল চারিদিকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নুসরাত রুমের লক খুলল না। আরশ নিভু নিভু চোখে চেয়ে বলল,”দরজা খোল বোন ঘুমে আমার চোখ খোলে পড়ে যাচ্ছে। এই দেখ…
নুসরাতের ভাবান্তর হলো না। সে ধীরে ধীরে দরজার লক খুলল। দুই মিনিটের কাজ দশ মিনিটে গিয়ে শেষ হলো। আরশ ঘুমের ঘোরে কোনো রকম দরজায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নুসরাত আকস্মিক নব ঘুরিয়ে দরজা ধাক্কা মারতেই দরজা খুলে গেল। হঠাৎ দরজা খোলার জন্য আরশ হুমড়ি খেয়ে গিয়ে রুমের ভিতর পড়ল। নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
বিছানায় শুয়ে পড়তে যাবে নুসরাত হাত ধরে ফেলল। আরশ ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো।

“কি? এখন রোমান্স করার মোড নেই, অন্য সময়!
নুসরাত হাসল ক্যানাইন দাঁত বের করে।
” আরে ভাই সবুর করুণ। ঘুমানোর জন্য এতো ছটফট করছেন কেন?
বিছানার দিকে ইশারা করলো। আরশ নুসরাতের ইশারা করা দেখে বিছানার দিকে তাকালো। ফুল দিয়ে সাজানো পুরো বেড। নুসরাত ধীরে ধীরে ফুল গুলো নিয়ে ডাসবিনে ফেলল। বিছানা টেনে ভাঁজ ঠিক করলো। আরশ বিছানা টেনে ঠিক করতেই দৌড়ে এসে শুয়ে পড়ল। নুসরাত আরশের কোমরে লাথ মেরে বলল,”আপনি শুয়ে পড়েছেন কেন? এখনো বিছানা ঠিক হয়নি ভাঁজ রয়েছে।
আরশ নুসরাতের কথার উত্তর না দিয়ে চোখ বুঝে শুয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল। এখন কথার উত্তর দিলেই লেগে যাবে তাদের। পরে তার ঘুম যাবে আকাশে আর নুসরাত নাক ডাকিয়ে ঘুমাবে।

প্রভাতে সূর্যের তীক্ষ্ণ রশ্মি পৃথিবীতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। রুমের বাহির থেকে টকটক করে শব্দ হচ্ছে। সাথে জোরে জোরে নাম ধরে ডাকার শব্দ। নুসরাত আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। নাজমিন বেগমের চড়া গলার আওয়াজ ভেসে আসলো দরজার বাহির থেকে।
” কীরে উঠেছিস?
নুসরাত মুখে হাত দিয়ে আআবাবা করলো।
“হ্যাঁ উঠেছি আম্মা!
“ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি আয়,নাস্তা করবি।
“আসছি আম্মা।
” আরশ কোথায়?
নুসরাত মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। আরশ নিচের দিকে মাথা দিয়ে নুসরাতের মুখের দিকে পা দিয়ে শুয়ে আছে।
বিরক্তির সহিত বলল,

“ঘুমাচ্ছে!
“আরশকে তোল ঘুম থেকে!
নুসরাত চোখ উল্টে বলল,
” পারব না।
” পারবি না কেন? একা আসবি না! ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে আসিস। নাহলে বাড়ি গিয়ে তোর পা ভাঙবো।
নুসরাত বিরক্তিতে চোখ উল্টালো। পা দিয়ে আরশের গায়ে লাত্তি মারল। আরশ ধড়ফড় করে উঠে বসলো। কিছুক্ষণ আতঙ্কগ্রস্থ মুখ বানিয়ে রেখে আশেপাশে চোখ বুলালো।
নুসরাত আরশের এভাবে রিয়েকশন দিতে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসল। আরশ টেনে শ্বাস ফেলল। পাশেই বিপদ নিয়ে শুয়ে আছে, আর সে ভাবছিল—কি না কি বিপদ হয়েছে!

“শরীরে লাথি মারলি কেনো?
” ফ্রি নাস্তা দেওয়া হচ্ছে গ্রাউন্ড ফ্লোরে। তাড়াতাড়ি চলুন! দেরি হয়ে যাচ্ছে। পরে নাস্তা পাওয়া যাবে না।
“ফ্রি নাস্তা পাওয়ার জন্য স্বামীর গায়ে পা তুলেছিস!
নুসরাত আরশের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
” তো কি হয়েছে? স্বামীর গায়ে পা তুললে ভালুপাসা বৃদ্ধি পায়।
আরশ কথা বলল না। নুসরাতের কথা এড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই নুসরাত হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।

“আরে বাবা, দাঁড়া,একটু সানস্ক্রিন লাগাতে দে। মুখটা শুকনো হয়ে আছে।
” আপনি বুঝতে পারছেন না! এখন গেলে ফ্রি ফান্ডের খাবার খেতে পারব। পরে গেলে কিন্তু নাস্তা পাবো না। আবার ফ্রি খাবার ও পাবো না। আমাকে দেখুন সানস্ক্রিন তো দূর মুখ পর্যন্ত ধুয়ে আসিনি।
“না পেলে নেই! কিনে খাব। আর তুই খাচ্চর যাতো মুখ ধুয়ে আয়। এভাবে ব্রাশ না করে চলে যাচ্ছিস।
” ইইইই বললেই হলো! ফ্রি এর খাবার রেখে কিনে খাব। পাগল কুত্তা কামড় দিয়েছে আপনাকে। চলুন তো চলুন….! দেরি হলে একটা খাবার পাওয়া যাবে না।এতক্ষণে হয়তো সবাই বুফে থেকে সব খাবার খেয়ে নিয়েছে।
আরশকে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল নুসরাত। আরশ রাগ করতে গিয়ে করলো না। ঢোক গিলে হজম করে নিল। পরে না হয় সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিবে। রাগ করার কি আছে আরশ? রাগ করা চলবে না। এই রাগের জন্য সবকিছু তোর ধ্বংস হবে। তাই রাগ মেনটেন করে চল নইলে—সব যাবে।
ডাইনিং হলে গিয়ে নুসরাত দেখলো দুটো টেবিল জোরে পরিবারের সবাই বসে আছে। তার আর আরশের জন্য খালি জায়গা নেই। নুসরাত চোখ উল্টে গিয়ে আরেকটা টেবিলে বসে পড়ল। আরশ বসলো না,হেঁটে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে চলে গেল।

প্লেটে সাজিয়ে খাবার নিয়ে আসলো। আরশ টেবিলে খাবার রাখতেই নুসরাত হাত দিয়ে ফ্রুটস খেতে লাগলো।
আরশ চোখ রাঙিয়ে বলল,
“মানুষের মতো খা!
নুসরাত পাল্টা চোখ উল্টিয়ে বলল,
” তাহলে কি আমি গরুর মতো খাচ্ছি?
“তাই তো মনে হচ্ছে! নাইফ দিয়ে খা।
নুসরাত মুখে আপেলের টুকরো পুরে বলল,
” পারব না।
আরশ নাক মুখ উল্টিয়ে বলল,
“তুই অমানুষ নাকি যে এভাবে খাচ্ছিস।
” নাহ, আমি হোমো সেপিয়েন্স তাই আমি এভাবে খাচ্ছি!

আরশ বিরক্ত হয়ে বুফের দিকে এগিয়ে গেল। ছোট ছোট প্লেটে করে নান রুটি, কাবাব, কফি নিয়ে আসলো।
চারিদিকে তাকিয়ে নুসরাতের দিকে তাকালো। বিরক্তির স্বরে বলল,”মানুষ আমাদের দেখছে।
“তো কি হয়েছে? মানুষের কাজ তো দেখা! দেখবে না তো কি করবে?
আরশ ধপ করে চেয়ারে বসলো। চেয়ার পিছনে কিছুটা সরে গেল। কফি তে চুমুক দিয়ে নুসরাতের সামনে থেকে প্লেট টেনে নিল। কিছুটা ধমকে বলল,”প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবি না, এটা তোর খারাপ অভ্যাস!
নুসরাত খাবার মুখে ঢুকিয়ে চোখ রাঙাল।
“আপনার কাছে আমার সবকিছুই খারাপ লাগে। কি ভালো লাগে আমার আপনার কাছে?
নুসরাত খাবারের প্লেট নিজের দিকে টানতে টানতে বলল,”আমার খাবার দিন!
“তোর খাবার আমি খাচ্ছি না! কেটে দিচ্ছি।
নুসরাত নাক ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল।

আরশ ঠোঁট কামড়ে নাইফ দিয়ে আপেল, স্ট্রোবেরি, ড্রাগন ছোট ছোট টুকরো করে কাটতে লাগলো।
নুসরাতের সবুর করতে পারল না। আরশের পাশের চেয়ারে বসে প্লেটে কেটে রাখা ফলের টুকরো একসাথে করে হাতের মুঠোয় নিয়ে মুখে ভরে নিল।
আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। একে ঠিক করা যাবে না।
আরশ নাইফ দিয়ে কাটা বাদ দিয়ে দিল। নুসরাত জিজ্ঞেস করলো,”কাটছেন না কেন?
“কেটে কি হবে? তুই তো সেই হাতের তালুতে সব একসাথে নিয়ে খেয়ে ফেলছিস।
নুসরাত দাঁত বের করে হেসে ফেলল।
” কাটা চামচ দিয়ে একটা একটা করে খেতে হবে। এভাবে পেটের এক কোণ ও ভরবে না। তাই সব খেয়ে নিচ্ছি একবারে। এতো স্ট্রাগল করার কি আছে বুঝি না বাপু?
“তাহলে এভাবেই স্লাইস তুলে খা! আমি কেটে টুকরো করে লাভ কি? পরিশ্রম ছাড়া আর কিছুই না,সব এমনি ব্যর্থ হচ্ছে!

জায়িন ধীরে ধীরে ফ্রুটস নাইফ দিয়ে কেটে মুখে পুরল। ইসরাত হেলাল সাহেবের দিকে তাকালো তিনি ও এভাবে খাচ্ছেন। ইসরাত জায়িনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে জায়িন মুখে ড্রাগন ফলের ছোটো ছোটো টুকরো ঢুকিয়ে দিল। ইসরাত চিবিয়ে নিয়ে বলল,”আপনি ফ্রুটস এতো ধীরে ধীরে কাটছেন কেন? আর স্লাইস করে খেলেই হয়! এতো ডং এর কি?
জায়িন ভারী গলায় বলল,
“স্ট্যাটাসের সাথে তো মিল রেখে চলতে হয়।
“তবুও আপনি স্টেক খাচ্ছেন না, যেভাবে কাটছেন মনে হচ্ছে স্টেক ছোটো ছোটো টুকরো করছেন।
জায়িন ইসরাতের কথা না শুনে টেবিলের চারিদিকে একবার চোখ ঘুরাল। সবাই নিজ নিজ খাওয়ায় ব্যস্ত। তাদের দিকে কেউ তাকিয়ে নেই। ইসরাতের দিকে তাকিয়েই চামচের সামনে ফলের টুকরো নিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দিল।
জায়িন আবার তাকালো নিশ্চিত হওয়ার জন্য। সামনের টেবিলে চোখ পড়তেই নুসরাতের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সম্মুখীন হলো। নুসরাত তর্জনী আর মধ্যমা আঙুল দুটো নিজের চোখ থেকে নিয়ে জায়িনের চোখের দিকে ইশারা করলো। যার মানে তার নজর জায়িনের উপর আছে।
জায়িন বিড়বিড় করলো,

” হাড্ডিটা আবার চলে আসছে। এটার জন্য আমি ভালোবেসে বউকে একটু খাওয়াতে পারি না। সবসময় চোখ মুখ তীক্ষ্ণ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। একবার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসে যাক, তারপর আমার বাচ্চাদের দিয়ে এর মাথার এক একটা চুল ছিঁড়াবো। হাড্ডিটার কাছে আমার বাচ্চা দিয়ে আমি আর আমার বউ রোমান্স করবো। জন্ম হওয়ার পর থেকে আমার বাচ্চাদের ট্রেনিং দিবো হাড্ডি টার কাছে গেলেই এর উপর হিসু, পটি সব যেন করে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬০

এটার জন্য তোদের বাবা মা রোমান্স করতে পারেনি। এটা তোদের ওয়াশরুম। এর উপর সব কর! যা ইচ্ছে তাই….
জায়িন নিজের চিন্তায় নিজেকে বাহবা দিল। নুসরাতের দিকে তাকাতেই দেখলো নুসরাত মুখের ভিতর আপেলের স্লাইস ঢুকিয়ে দাঁত দিয়ে খচখচ করে কামড়ে খাচ্ছে। যেন আপেল না জায়িনকে আস্তো কামড়ে খাচ্ছে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬১ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here