প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৩
জান্নাত নুসরাত
১ মাস পরের কথা,
প্রকৃতিতে আজ স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। চারিদিকে মাতাল করা পরিবেশ। সবাই রমজানের বাজার করতে ব্যস্ত। আজ রাতে সেহরি করার পর আগামীকাল থেকে রোজা। রোজা উপলক্ষে সৈয়দ বাড়িতে এক প্রকার হৈ হুল্লোড় শুরু হয়েছে। পরিবারে চার কর্তা মিলে বাজারে গিয়েছেন বাজার করতে। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ইরহাম, জায়ান, জায়িন, আর আরশ। দল বল বেঁধে সৈয়দ বাড়ির সবাই বাজারে হাজির। প্রথম বারের মতো হেলাল সাহেবের তিন ছেলে বাজারে এসে স্তব্ধ।
জায়িন কিছুক্ষণ আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। জায়গায় জায়গায় রাস্তা গর্ত হয়ে পানি জমে আছ। মাছের বাজার সামনে হওয়ায় মাছের আশাটে গন্ধ এসে নাকে লাগছে। আর এই গন্ধে পেট গলিয়ে বমি চলে আসছে।
জায়গায় জায়গায় ময়লার স্তুপ। আনহাইজেন পরিবেশ দেখে জায়িন ভিতরে যেতে চাইলো না।
সোহেদ জায়িনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“জায়িন দাঁড়িয়ে আছো কেন?
জায়িন হাত বুকের কাছে আড়া-আড়ি ভাঁজ করে বলল,”আপনারা চাইলে শপে যেতে পারতেন,লোকাল বাজারে কেন? চলুন গ্রোসারি শপে চলে যাই,ওখানের পরিবেশ ভালো।
জায়িনের কথায় হেলাল সাহেব তীর্যক নয়নে তাকালেন। গলার স্বর উঁচু করে বললেন,”এটা ফ্রান্স নয় যে গ্রোসারি শপে ফ্রেশ জিনিস পাবে। এটা বাংলাদেশ এখানে লোকাল বাজার থেকে ফ্রেশ খাবার দেখে নিতে হয়।
আরশ গম্ভীর গলায় ছোট্ট উত্তর করলো,
“আমার জানামতে, বাংলাদেশের সব খাবারেই ফরমালিন ব্যবহার করা হয়।
জায়ান আরশের কথা নিজের কথা দিয়ে জোড়া তালি দিয়ে পুরো কথা পূর্ণ করল।
” মাছ, সবজি, মুরগি, গরুর গোস্ত, সবকিছুতেই তো ফরমালিন ব্যবহার করা হয়, তাহলে এখানে আপনি কীভাবে ফরমালিন মুক্ত খাবার পাবেন।
হেলাল সাহেব রাগান্বিত গলায় বললেন,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“তাহলে তোমরা তিন ভাই মিলে একটা ফার্ম দিয়ে দাও, যেখানে ফরমালিন মুক্ত গোস্ত পাওয়া যাবে,সাথে মাছ চাষ করে ফেলো।
হেলাল সাহেবের বিদ্রুপ মূলক কথা শুনে তিন ভাই চোয়াল ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শোহেব হেলাল সাহেব কে বোঝানোর স্বরে বললেন,”ভাই,পাবলিক প্লেস একটু ধীরে কথা বলুন।
হেলাল সাহেব চোখ রাঙানি দিলেন শোহেব কে। হেলাল সাহেবের চোখ রাঙানি খেয়ে শোহেব আর কোনো কথা বললেন না। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেলেন সবজি বাজারের দিকে।
নুসরাত আর ইসরাত মিলে লোকাল বাজারে আসছিল কিছু কাপড় কিনার জন্য। ইসরাত নুসরাতের হাত ধরে হাঁটছে। এমন হাঁটা দেয়, এক সেকেন্ডের ভিতর দৃষ্টি সীমানার বাহিরে চলে যায় এই মেয়ে।
ইসরাতকে নাক ফুলিয়ে হাঁটতে দেখে নুসরাত ততোটা পাত্তা দিল না।
“ধীরে হাঁট,আমার পা ব্যথা করছে।
নুসরাত শুনলো না,পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলো। ইসরাতের হাত ধরে এক প্রকার টেনে টেনে নিয়ে গেল নিজের সাথে। গজ কাপড়ের দোকানে ঢুকলো নুসরাত। ইসরাত পিছন পিছন ধীরে সুস্থে ঢুকলো। নুসরাতকে ফিসফিস করে বলল,”বোন এই নিয়ে সাত নাম্বার দোকানে ঢুকেছিস,এবার ভালো করে একটু বার্গেনিং করিস। এমন প্রাইজ বলিস না যাতে লজ্জায় আমার মাথায় কাটা যায়।
” আমার বাপের এতো টাকা নেই যে, আমি দয়ালু হয়ে যত টাকা বলবে তত দিয়ে দিব।
নুসরাত কাপড় বের করে বার্গেনিং করতে শুরু করলো। ইসরাত বিরক্ত হয়ে দুজনের কথার মাঝে বলল,”গজ পঁচাত্তর টাকা দিয়ে দিবেন।
দোকানদার রাজি হয়ে গেলেন। নুসরাত ইসরাতের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। দাঁত দিয়ে দাঁত চাপলো।
ইসরাত নুসরাতের দিকে না তাকিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিয়ে দিল।
দু-জন দোকান থেকে তর্কা-তর্কি করতে করতে বের হলো। ইসরাত কে বলল নুসরাত ,”আমি এই কাপড় সত্তর টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম।
“পাঁচ টাকা বেশি দিয়ে কিনেছিস তো কি হয়েছে?
” দশ গজ কিনেছি,পাঁচ দিয়ে দশ গুণ কর। পঁঞ্চাশ টাকা লস হয়ে গেল।
ইসরাত বিরক্তির স্বরে বলল,
“কিপটে কোথাকার? আব্বার মতো কিপটে হয়েছিস।
” আমি কিপটে না! আমি টাকা সংরক্ষণ করছি।
“হ্যাঁ হ্যাঁ সব বুঝতে পারছি!
ইসরাত আর নুসরাত বাজার থেকে বের হতেই দেখলো তারকারি বাজারের দিক থেকে দলবল বেঁধে হেলাল সাহেব বের হয়ে আসছেন। হেলাল সাহেবের সাথে তাল মিলিয়ে আসছেন সবাই। শুধু সোহেদ আর শোহেব ছাড়া এখানে সবাই উপস্থিত।
নুসরাত যখন সোহেবকে দেখলো তাদের থেকে উল্টো দিকের রাস্তা দিয়ে আসছেন নুসরাত এক প্রকার ইসরাতকে ধাক্কা মেরে অন্য গলির রাস্তার দিকে পাঠিয়ে দিল। সতর্ক গলায় বলল,” চাচ্চু, চাচ্চু!
নিজে ভাগল ইসরাতের বিপরীত গলির দিকে।
সোহেদ সাহেব এসে দাঁড়ালেন। আশে পাশে তাকালেন নুসরাত আর ইসরাতের মতো কাকে যেন দেখেছিলেন এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। আশে-পাশে তাকিয়ে কাউকে না পেয়ে সোহেদ মনে করলেন মনের ভুল। তাই গলার আওয়াজ বাড়িয়ে ভাই ডেকে সামনের দিকে চলে গেলেন।
নুসরাত বের হলো উনি যেতেই। ইসরাতকে গিয়ে দেখলো কাচু মাচু হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। নুসরাত কে দেখে ধমকে উঠলো।
“বলেছিলাম না মলে চল! এবার ধরা খেলে কি হতো? আব্বু দেখলে তো এখানেই থাপড়ে লাল করে ফেলত।
নুসরাত কথা বলল না। কপালে ভাঁজ ফেলে, বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল। নুসরাতের হাতে হঠাৎ টান পড়তেই নুসরাত চোখ ছোট ছোট করে পিছনে তাকালো। ইসরাত অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,
“বাড়িতে চলে যাই! আব্বু দেখলে মার খাবো।
নুসরাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো শান্ত চোখে।
“আয়,আমি আছি, সামলে নিব! কিছু হবে না। কিছু হলে দায়বার আমার। আমার সাথে এসেছিস যা হবে, তার দায়বার আমার। ওকে….
ইসরাত তবুও নড়তে চাইলো না। নুসরাত ইসরাতের হাত টেনে নিয়ে গেল। গলি থেকে বের হতেই শোহেবের মুখোমুখি হলো। শোহেব আর তারা বিপরীত রাস্তা। ওদের মধ্যে শুধু রাস্তার ডিসটেন্স। শোহেব রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কমলা কিনছেন। নুসরাত ইসরাত কে নিয়ে টেনে দোকানের ভিতর দিয়ে ঢুকে মেইন বাজারে বের হলো। হেঁটে হেঁটে যেতেই দেখলো নাছির সাহেব কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কারোর সাথে কথা বলছেন। নুসরাত উল্টো পথ ধরতেই গিয়ে সামনা-সামনি হলো জায়িন,ইরহাম আর আরশের। দু-জনের হাতে বাজারের ব্যাগ। ঘেমে নেয়ে কাপড় জবজবে হয়ে গিয়েছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ ভেসে উঠছে।
নুসরাতের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো অস্বাভাবিক বিরক্তির স্বর। জায়িনের সাথে ইসরাতের চোখা-চোখি হতেই জায়িন ভ্রু উচালো।ইসরাত মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলে মাথা নাড়ালো।
নুসরাত বুকে আড়া-আড়ি হাত বেঁধে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। পুরো বাড়ি সুদ্ধ মানুষ নিয়ে আসছে বাজারে। সবদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাজার করছে। একেবারে হয়ে গেল রোজার বাজার তার সাথে নুসরাতের ও বর্তা। কি ভাগ্য? দু-জনের কাছ থেকে বেঁচে এসে এদের কাছেই ধরা খেতে হলো।
আরশ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকল। নুসরাত বোরকার সাথে হিজাব পরেছে। হিজাব পরার কারণে শ্যামলা মুখটা আলগোছে বের হয়ে আছে হিজাবের উপর। মুখে প্রসাধনীর ছোঁয়া নেই। বাজারে হাঁটার জন্য মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। আরশ পর্যবেক্ষণ করা শেষে তাকিয়ে রইলো গম্ভীর চোখে।
জায়িন বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল। ইসরাতের শোনার মতো করে বলল,”আমার পারমিশন না নিয়ে আসছো। বাড়ি আসো পানিশমেন্ট পাবে।
আরশ ও মুখ গম্ভীর করে পা বাড়ালো সামনের দিকে। নুসরাতের পাশ ঘেঁষে যাওয়ার সময় বলল,”বাড়ি আয়! তোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাকে জিজ্ঞেস করে তুই লোকাল বাজারে আসছিস?
নুসরাতের কোনো নড়চড় নেই। দেখে মনে হলো জড়বস্তু হয়ে গিয়েছে। ইসরাত নুসরাত কে টেনে নিয়ে গেল।
“আর কাপড় কিনার দরকার নেই! বাড়ি চল!
নুসরাত বাড়িতে পৌঁছানোর পর দেখলো বাড়ির পরিবেশ থমথমে। সবাই ড্রয়িং রুমে পায়ের উপর পা তুলে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে।
ইসরাত ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলল। নুসরাতের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। ইসরাতের বুকের ভিতর ধড়াস ধড়াস করছে। নুসরাত ইসরাতের তাকানোর মানে বুঝতে পারল। নিজের মনের ভয় লুকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। কারোর দিকে তাকানোর প্রয়োজন না মনে করে, বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ির দিকে যেতে লাগলো। যেতে পারল কোথায়? নাছির সাহেব নুসরাত কে পিছন থেকে রাগী গলায় ডেকে উঠলেন।
নুসরাত নাছির সাহেবের দিকে ফিরতে ফিরতে ইসরাতের উদ্দেশ্যে গলা নামিয়ে বলল,” তুই যা,আমি সামলে নিব।
ইসরাত গেল না ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইসরাত নুসরাতের কিছু টা সামনে হওয়ায় নুসরাত টেনে ইসরাতকে নিজের পিছনে নিয়ে গেল। নুসরাত নাছির সাহেবের দিকে চোখ তুলে তাকাল।
“কোথায় গিয়েছিলে ইসরাত?
ইসরাত ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নুসরাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ইসরাতকে নিজের পিছনে দাঁড় করিয়ে ঢাকতে চাইলো।
“আব্বা যা জিজ্ঞেস করার আমাকে জিজ্ঞেস করুন!
নাছির সাহেব শাণিত চোখে তাকালেন নুসরাতের দিকে।
” আমি তোমার সাথে কথা বলছি না। যাকে জিজ্ঞেস করছি সে উত্তর দিবে।
নুসরাত তর্ক করে বলল,
“ওকে কেন জিজ্ঞেস করবেন? আমি ওকে নিয়ে গিয়েছি তাই আমার কাছে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পাবেন,এবং আমাকে জিজ্ঞেস করবেন!
” তর্ক করছো আমার সাথে!
নুসরাতের শীতল গলা,
“যা আপনি ভাববেন তাই।
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলেন বাড়ির কর্তীরা। রুহিনি কখন থেকে ধাক্কাচ্ছেন নাজমিন বেগমকে সামনে যাওয়ার জন্য? নাজমিন বেগম ফিসফিস করে বললেন,”এখন আমি গেলে আরো রাগ চড়ে বসবে। বড় ভাবি আপনি যান,আপনি সামনে গেলে আপনাকে মানবেন উনি।
লিপি বেগম এগিয়ে আসলেন বাহিরে। চুপচাপ এক পাশে এসে দাঁড়ালেন। নাছির সাহেব নুসরাতের দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ ফেললেন। এক পা এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বললেন,”আমার হাতে থাপ্পড় অনেক দিন পড়েনি গালে, তাই তো এতো বেয়াদব হয়েছো। থাপড়ে গাল ফাটিয়ে দিব। কে তোমাকে বলেছে লোকাল বাজারে যাওয়ার জন্য? তোমার মা!
নুসরাতের গলার আওয়াজ নাছির সাহেবের থেকে আরো উঁচু হলো। সবাই চুপচাপ বসে বাপ মেয়ের তর্ক দেখছেন।
“আম্মাকে টানবেন না আমাদের মাঝে,আমার প্রয়োজন ছিল তাই আমি গিয়েছি।
নাছির সাহেব দু-হাত বুকে আড়া আড়ি বেঁধে ব্যাঙ্গাতক গলায় বললেন,”তোমার কি প্রয়োজন ছিল বলো শুনি?
নুসরাত মুখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। নাছির সাহেব একই প্রশ্ন দুইবার জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু, নুসরাত স্থির, সে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না।
“আমি শেষ বারের মতো তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, তোমার কি প্রয়োজন ছিল? উত্তর দিবে না কি অন্য ব্যবস্থা নিব?
” আপনাকে বলতে বাঁধ্য নই…
কথা শেষ হওয়ার আগেই গালে থাপ্পড় পড়ল পুরো ড্রয়িং রুম কাঁপিয়ে। লিপি বেগম কেঁপে উঠলেন। জায়িন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। সে ভাবেনি চাচা থাপ্পড় মেরে বসবেন। সোহেদ আর শোহেব নড়লেন না। আরশ চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো। হেলাল সাহেব চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
“নাছির গাঁধার মতো আচরণ করছিস কেন? থাপ্পড় মারলি কেন? বুঝিয়ে কথা বলা যায় না!
জায়ান গিয়ে নুসরাতকে সড়াতে চাইলো নুসরাতের জায়গা থেকে। নুসরাত নড়ল না! এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো রোবটের মতো।
হেলাল সাহেবের কথার উত্তর দিলেন নাছির সাহেব তীব্র ক্ষোভ নিয়ে,”আমরা বাপ-মেয়ের বিষয়,কেউ কথা না বললেই ভালো। বেয়াদব হয়েছে উনি! দু-দিন পর পর থাপ্পড় গালে না পড়লে উনি ঠিক হবেন না।
এরপরে নাছির সাহেবের কথার বিপরীতে আর কোনো কথা বললেন না হেলাল সাহেব। মুখ বন্ধ করে সোফায় চুপ করে বসে গেলেন।
ইরহাম আরশের কানে কানে বলল,
” ছোট ভাইয়া, এটা না বললে ও আপনি পারতেন!
আরশ মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে রইলো। চোখ তুলে তাকালে না।
“আমি কিছু বলিনি,চাচা নিজে দেখেছে ওকে বাজারে।
নুসরাতের গালে আরেকটা থাপ্পড় পড়ল। নুসরাত গালে হাত পর্যন্ত দিল না। ব্যথায় টন টন করে উঠলো গাল। তবুও মুখ গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে রইলো। গালে স্পষ্ট পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে।
নুসরাত কণ্ঠনালি ঠেলে কান্না আসলো। তবুও কান্না টেনে আটকালো। নাছির সাহেবের দিকে তাকিয়ে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বলল,” হ্যাঁ হ্যাঁ আমাকেই মারুন। আর কাউকে পান না তো হাতের কাছে। যে আমাকে পেলো ধুম ধুম করে মেরে দিল। যাকে নরম পেলেন আপনারা তার উপর গরম দেখালেন। যা করার করে নিন আর তো পাবেন না কাউকে। আমি বাজারে গিয়েছি! বেশ করেছি। আমার যা ইচ্ছা তাই করব। আমি নিয়ে গিয়েছি আপনার মেয়েকে! সব দোষ আমার! এই বাড়ির বাচ্চারা বেয়াদবি শিখছে আমার জন্য। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। খুশি সব দোষ শিকার করে নিলাম।
নুসরাত দু-হাত নাছির সাহেবের সামনে এনে বলল,”আমাকে মাফ করে দিন। আমার মতো বেয়াদবের জন্ম দিয়েছেন তাই আপনাকে অনেক অনেক শুকরিয়া। আমার জন্য সৈয়দ বাড়ির সব বাচ্চারা বেয়াদবি শিখছে। এবং ভবিষ্যতে যা শিখবে তা ও আমার জন্য।
নুসরাত পায়ের জুতো খুলে উড়িয়ে ফেলল রাগে। হাতের কাছে কিছু পেল না তাই মাথার হিজাব টেনে খুলে ঢিল মেরে দূরে ফেলল। পায়ের কাছে ডাস্টবিন পেয়ে সেটা এক লাথ মেরে দিল। ডাস্টবিন উড়ে গিয়ে দূরে পড়ে ফেটে গেল।
সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে গেল গটগট শব্দ করে। রুমে ঢুকে শবে করে দরজা বন্ধ করলো। রুমের দরজার উপর সব রাগ ভাঙলো। দরজা লাগানোর শব্দ বাড়ির প্রতিটা দেওয়ালে প্রতিধ্বনি হলো। তারপর দরজার মধ্যে ধুপ ধাপ শব্দ হলো। নাছির সাহেব শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন নিজ জায়গায়। তিনি জানেন, এখন তার উপরের সব রাগ রুমের দরজার উপর লাথ মেরে মেরে শেষ করবে।
রাত তিনটা,
সৈয়দ বাড়ির সবাই সেহেরি খেতে নিচে নামলো। টেবিলে সবাই উপস্থিত থাকলে ও নুসরাতের দেখা মিলল না।
ইসরাতের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,
“তোমার বোন কোথায়?
নাছির সাহেবের যেমন প্রশ্ন ইসরাতের তেমন উত্তর,
” আপনার মেয়ে রুমে!
নাছির সাহেব গাল ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“বের হয়নি?
” জি না!
নাছির সাহেব আর কোনো কথা বললেন না। থমথমে মুখে সেহেরির শেষ করে হাত ধুয়ে নিলেন। ফজরের আজানের আগে বাড়ির সকল পুরুষকে নিয়ে নামাজ আদায় করার জন্য চলে গেলেন মসজিদে।
নাজমিন বেগম নুসরাতের দরজার বাহিরে গিয়ে নক করলেন। নুসরাতের নড়চড় পেলেন না।
“সেহেরি করে যা!
অনেকবার দরজা ধাক্কানো ও বলার পর রুমের ভিতর থেকে শক্ত গলায় উত্তর আসলো,” আমাকে একা থাকতে দাও। সময় হলে আমি করে নিব। নামাজ পরে গিয়ে ঘুমাও আম্মা! আমার চিন্তা করতে হবে না।
নাজমিন বেগম কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ বাপ-মেয়ের ঝাঁঝ সব আমার উপর প্রকাশ করো! আর তো কাউকে পাও না।
নুসরাত ক্লান্ত স্বরে বলল,
” আম্মা আমি হাপিয়ে উঠেছি! তুমি যাও আগামীকাল কথা বলবো। কিছু বলে দিলে তোমার খারাপ লাগবে। যাও আম্মা! কান্না কাটি করবে না। আমার ক্লান্ত লাগছে। দয়া করে, একটু একা থাকতে দাও!
নাজমিন বেগম কান্না করতে করতে সেহেরি করতে চলে গেলেন।
এভাবে কেটে গেল পনেরো রোজা। আগের মতো সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। নিজ ধারায় সময় চলছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে মানুষজন।
বিকেল চারটা,
নাজমিন বেগম নুসরাত কে হাক ছাড়লেন,
“নুসরাত নিচে এসে কিছু খেয়ে যা! বাড়িতে কেউ নেই, পরে কেউ চলে আসবে।
নুসরাত আসলো না। আরশের রুমে বসে চিপস্ খেতে খেতে বলল,”আম্মা খোদা বন্ধ হয়ে গেছে! আগের মতো খাবার খাওয়ার রুচি নেই!
নাজমিন বেগম আর ডাকলেন না। চিৎকার দিয়ে বললেন,”তোর যা ইচ্ছা তাই কর! পরে বলিস না খিদে লেগেছে।
আরশ বাড়ি তে আসলো বিকেল পাঁচটার সময়। রমজানের মাস আসার পর থেকে আরশের রুটিন হয়ে গিয়েছে এই টাইমে বাড়িতে আসা। একে একে সবাই এসে যাবে আজানের আধঘন্টা আগে বাড়িতে ইফতার করার জন্য।
আরশ লিপি বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মাম্মা এসে গিয়েছি।
লিপি বেগম কিচেন থেকে বললেন,
” হু!
আরশ পা চালিয়ে রুমে যেতে লাগলো। টাই গলা থেকে খুলতে খুলতে রুমের নব মোচড় মারল। নুসরাত ধড়ফড় করে চিপসে্র প্যাকেট বালিশের নিচে ঢুকালো। মনে করলো আহান এসেছে। হাত দিয়ে মুখ মুছে মুখের খাবার গিলার চেষ্টা করলো। তাড়াহুড়ো করায় চিপস্ গলায় আটকে কাঁশি উঠে গেল। আরশ টাই খোলতে খোলতে নুসরাতের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“কি হয়েছে?
নুসরাত মুখ চেপে কাঁশতে কাঁশতে চোখে জল চলে আসলো। আরশের কথার উত্তর না দিয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিল।
আরশ হা করে তাকিয়ে বলল,
” এই রোজা ভেঙে ফেললি কেন? তুই রোজা রাখিসনি, হায় আল্লাহ তোর তো গুণা হবে। তুই রোজা ভেঙে পানি খাচ্ছিস। ছি্হ ছি্হ…
নুসরাত বিরক্তি নিয়ে চোখ তুলে আরশের দিকে তাকালো। আরশ এখনো শকড থেকে বের হতে পারেনি। হা করে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায়। নুসরাত পাত্তা দিল না। বালিশের নিচ থেকে চিপসে্র প্যাকেট বের করে টুপ টুপ করে মুখে ঢুকালো।
আরশ স্তব্ধ নয়নে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকল। যখন মাথা ধরলো নুসরাত কি কারণে পানি খাচ্ছে, তখন নিজের মূর্খতার জন্য নিজেকে গালি দিল বলদ বলে।
পরেরদিন থেকে শুরু হলো নুসরাতের অত্যাচার আরশের উপর। তার সামনে বসে খাবার খায় দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে। আরশ যদি বারান্দায় যায় সেখানে নুসরাত খাবারের বাটি নিয়ে হাজির হবে। তারপর আরশকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবার খাবে।
আরশ যদি নুসরাতের দিকে না তাকায় নুসরাত মুখ চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নে! আরশ নুসরাতের
এই ধরণের অত্যাচারে প্রচুর বিরক্ত।
ইসরাতের সাথে সেইম ঘটনা ঘটছে। প্রথম দিকে ইসরাত রোজা ভেঙে খেয়েছিল তখন নুসরাত কে লালসা দিয়েছিল খাবার দেখিয়ে। আর এখন নুসরাত তার সামনে বসে গাপুস-গুপুস করে সারাদিন খাবার খায়। ইসরাত যদি মুখ লুকিয়ে ফেলে তার পাশে বসে আহা কি সুন্দর গ্রাণ খাবারের বলবে?
নুসরাতের এই অত্যাচার শেষ হলো গিয়ে বিশ রোজার দিন। ইসরাত আর আরশ বিশ রোজার দিন শান্তির শ্বাস ফেলল। বাঁচা গেল!
২৪ রোজার দিন,
নুসরাত আর ইসরাত মাগরিবের নামাজ পড়তে বসলো এক জায়নামাজে। নুসরাত আগে নামাজ পড়তে বসায় তার ফরজ নামাজ তিন রাকাত আগে শেষ হয়ে গেল।
ইসরাত মাগরিবের ফরজ নামাজ শেষ করে টেবিলের উপর থেকে আপেল নিয়ে নুসরাতের মুখে ঢুকিয়ে দিল। নুসরাত কামড়ে কামড়ে আপেল খেতে লাগলো। মুখে আপেল থাকায় নামাজ পড়তে পারছে না সে।
ইসরাত হাসতে হাসতে মেঝেতে শুয়ে পড়ল। নুসরাত কোনো রকম হাসি আটকিয়ে নামাজ শেষ করলো।
ইসরাত যখন নামাজ পড়তে নিবে নুসরাত আপেলের টুকরো ইসরাতের নাকের ঢগায়, ঠোঁটে, মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দিল। নামাজের মধ্যে ইসরাত অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।
তারপর আবার ওযু করে এসে দু-জন প্রথম থেকে নামাজ পড়ে শেষ করলো। নামাজ শেষে দু-জনের মধ্যে মারামারি লেগে গেল। এক পর্যায়ে সেটা চুলো চুলিতে গড়ালো।
ঈদের দিন,
সকাল সকাল ইসরাত ঘুম থেকে উঠে গোসল করলো। সৈয়দ বাড়িতে প্রত্যেক বার ঈদে একপ্রকার জোম লেগে যায় কার আগে কে গোসল করবে তা নিয়ে।
ইসরাত গোসল করে জায়িনকে ঘুম থেকে তুলে দিল গোসল করার জন্য। জায়িন ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে গোসল করতে চলে গেল। গোসল শেষ করে এসে জায়িন দেখলো, ইসরাত চুল আঁচড়ে নিচ্ছে । জায়িন ইসরাতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ইসরাতের চুলের মধ্যে নাক ডুবাতেই বাহিরে নক করার শব্দ আসলো। জায়িন বিরক্ত হয়ে দরজার দিকে তাকালো। তার রোমান্টিক মুডের দফা রফা হয়ে গিয়েছে।
ইসরাত মৃদু গলায় বলল,
“দেখুন গিয়ে কে এসেছে?
জায়িন রাগে কিড়মিড় করে বলল,
” আর কে আসবে? তোমার বোন আসছে!
জায়িন হম্বিতম্বি করে এগিয়ে গেল। আজ সে এসপার উসপার করে ছাড়বে এই হাড্ডির। দরজা খোলতেই নাজমিন বেগমের মুখ ভেসে উঠলো।
“বাবা তোমার চাচারা রেডি নিচে বসে আছে। তাড়াতাড়ি যাও রেডি হয়ে! পরে ঈদের নামাজে যেতে লেট হয়ে যাবে।
জায়িন আসছি বলে রুমে আসলো। পাঞ্জাবি পরে, আতর লাগিয়ে,চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে মাথায় টুপি পরে, রেডি হয়ে গেল। ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে ইসরাতের কপালে সফট চুমু দিয়ে বলল,”আসছি!
ইসরাত পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। জায়িনের ঠোঁটে হালকা চুমু খেয়ে, হাত পেতে বলল, “আমার সালামি!
” নামাজ থেকে আসার পর দিব।
ইসরাত মাথা নাড়ালো। জায়িন আসছি বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
নামাজ শেষে সবাই মসজিদ থেকে বের হয়ে কোলাকোলি করলো। জায়িন, জায়ান, ইরহাম আর আহান, সবাই সবার সাথে কোলাকোলি শেষে সোসাইটির মানুষের সাথে কথা বলতে লাগলেন। এক অপরকে নাস্তার দাওয়াত দিতে লাগলেন।
প্রায় ১০ টার দিকে বাড়ির পুরুষরা সব বাড়িতে আসলেন। তাই রুহিনি বেগম, ঝর্ণা বেগম তাদের সেমাই, পিঠা, মিষ্টি জাতীয় খাবার দিতে লাগলেন।
মা -চাচিদের সাথে কুলশ বিনিময় শেষ করে জায়িন রুমের দিকে গেল। রুমে গিয়ে ইসরাত কে খোঁজ করলো কিন্তু, পেল না। তাই ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ইসরাত রেডি হয়ে রুমে আসলো।
“আসসালামু আলাইকুম।
জায়িন উপরের দিকে তাকাল। তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,”ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়াইফি।
সালামের উত্তর দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো জায়িন। ইসরাতকে হালকা হাতে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেল।
“ইউ আর লুকিং সো প্রিটি।
ইসরাত হালকা করে হাসলো।
“আপনাকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে। সালামি দিন এবার!
এমন সময় রুমে আহান আর আরিশা আসলো। গলার আওয়াজ বাড়িয়ে চিৎকার করে বলল,”ভাইয়া!
জায়িন আর ইসরাত নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে নিল। জায়িন গম্ভীর গলায় বলল,”ভিতরে আসো।
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া এন্ড ছোট আপু।
হালকা হেসে জায়িন আর ইসরাত সালামের উত্তর দিল।
“ভাইয়া আমাদের সালামি দাও।
জায়িন কোনো কথা না বাড়িয়ে এক হাজার টাকার বান্ডিল বের করে আরিশা আর আহান কে দিল।ইসরাত আরিশা আর আহানের হাত থেকে টাকা গুলো নিজের হাতে নিয়ে নিল।
” এগুলো আমার চাই।
“ইসরাত তোমার জন্য আছে ওদের গুলো ওদের দিয়ে দাও।
ইসরাত জিদ্দি গলায় বলল,
“না আমার ওদেরটা লাগবে।
“তুমি কি সিওর,ওদেরটা তুমি নিবে?
“হ্যাঁ আমি সিওর!
” আমি আবার বলছি তুমি কি সিওর?
“হান্ডেট এন্ড টেন পারসেন্ট সিওর আমি। এখানে কত আছে টাকা?
” পঞ্চাশ হাজার, পঞ্চাশ হাজার! আর আহান আরিশা তোমরা দু-জন কিন্তু সাক্ষী ইসরাত বলছে সে এই গুলা নিবে।
আহান আর আরিশা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।
” তাহলে তোমার গুলো ওদের দিয়ে দিই।পরে আমাকে কিছু বলতে পারবে না।
ইসরাত মাথা নাড়ালো। সে কিছু বলবে না বলে। জায়িন আহান আরিশার দিকে তাকিয়ে বলল,”আহান আরিশা তোমরা এখানে অপেক্ষা করো, আমি তোমাদের জন্য নিয়ে আসছি তোমাদের সালামি।
জায়িন রুম থেকে বাহিরের দিকে গেল। কিছুক্ষণ পর জায়িন একটা বুকেট নিয়ে আসলো যেটা একশ ডলার দিয়ে বানানো। বুকেট তে কমপক্ষে ৫০ টার মতো একশ ডলারের নোট। ইসরাত অবাক হয়ে তাকালো যখন বোধগম্য হলো এগুলো জায়িন এখন আহান আর আরিশা কে দিয়ে দিবে তখন আহান আর আরিশা টাকা গুলো ওদের ফিরিয়ে দিল ইসরাত।
লাফ মেরে জায়িনের পেট জড়িয়ে ধরলো। আরিশা আর আহান তারা তাদের সালামি পেয়ে আলগোছে চলে গেল। এখন অন্য ভাইয়াদের কাছে তারা তাদের সালামি পাবে। এবারের ঈদ বেস্ট ঈদ।
“এগুলো আমার।
” না এখন এগুলো তোমাকে দেওয়া যাবে না। এগুলো এখন আহান আর আরিশার।
“ওদের এগুলোর প্রয়োজন নেই!
” এখন এইসব বললে ও হবে না। আগে জিজ্ঞেস করেছি আমি তোমাকে ইসরাত,তুমি না করেছিলে।
ইসরাত জায়িনের দিকে এগিয়ে গেল। জায়িনের ঘাড়ে নিজের দুই হাত পেঁচিয়ে ধরে হালকা করে জায়িনে গালে চুমু খেল।
“হাব্বি!
“ইয়েস!
“গিভ মি দিস!
“নো।
ইসরাত আবার জায়িনের আরেক গালে চুমু দিল। ঠোঁট এলিয়ে হাসল। হেসে বলল, “আমার গুলো আমাকে দিয়ে দিন না। আমি তো ওদের গুলো ওদের ফিরিয়ে দিয়েছি।
জায়িন কিছু একটা ভাবলো।
“দিতে পারি, এর জন্য তুমি আমাকে কি দিবে?
ইসরাত ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর বলল,
“আপনি যা চাইবেন, কি চাই আপনার?
” যখন প্রয়োজন হবে নিয়ে নিব! নাও তোমার সালামি।
ইসরাত টাকার বুকেট পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। জায়িনের দুই গালে চুমু খেল অনেকবার।
জায়িন বাঁকা হেসে বলল,
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬২
” তুমি যদি আজ ভালো অবস্তায় রুমের বাহিরে যেতে চাও, তাহলে আর চুমু খাওয়া বন্ধ করো। নাহলে এই রুমের বাহিরে যাওয়ার অবস্থায় থাকবে না।
ইসরাতের লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেল। জায়িনের পিঠে হালকা থাপ্পড় মেরে বলল,”এসব কোন ধরনের কথা?
জায়িন শব্দ করে হেসে উঠলো। ইসরাতের গাল টেনে দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।