প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২
জান্নাত নুসরাত

যে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাবার সাথে দ্বন্দ্বে নেমেছিলেন, সেই সম্পর্ক তিনি নিজ হাতে ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলেন। বন্দুকের ভিতর থেকে বের হওয়া গুলি মানুষের শরীরে আঘাত করলে সেটি সময়ের সাথে চামড়ার আস্তরণে ঢাকা পড়ে, কিন্তু মানুষের মুখ থেকে বের হওয়া কথার ভুলি তা মনে আঘাত করলে কখনো চামড়ার আস্তরণে ঢাকা পড়ে না।

হেলাল সাহেবের কিছুক্ষণ আগের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন নাছির সাহেব। নাছির সাহেবের এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেনে নিতে পারলেন না হেলাল সাহেব। রাগী গলায় চোখ-মুখ অন্ধকার করে বললেন,”আজ, এক্ষুণি, এই মুহুর্তে তুই আমার বাড়ি থেকে বের হও। তুই কী বুঝতে পারছিস না আমার কথা নাছির? তোকে বারংবার এই কথা বলতে হচ্ছে কেন?
ইসরাত দাঁড়িয়ে ছিল নাছির সাহেবের পাশে। বাবাকে স্থির হয়ে এক-জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুক ধড়ফড় করে উঠল ছোট মেয়েটার। কাঁদো কাঁদো চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চেপে ধরল নাছির সাহেবের বড় হাতখানা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নাছির সাহেব ইসরাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলেন। এতক্ষণ ধরে ধ্যান জ্ঞান হারিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছিলেন ভাইয়ের সামনে। অবিশ্বাস্য চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন নিষ্পলক। যে ভাইয়ের সাথে বড় হওয়া, যার হাত ধরে হাঁটতে যেতেন, যে উঠতে বললে উঠতেন, বসতে বললে বসতেন, সেই ভাই আজ তাকে আদেশ দিচ্ছে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য।
পুরুষেরা কাঁদে না, কিন্তু সেদিন ইসরাত দেখেছিল তাদের বাবার জলে চিকচিক হয়ে যাওয়া চোখ। কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা।
আজমল আলী আর মেহেরুন নেছা এসবের কোনো কিছু জানতেন না। তারা রাতের খাবার খেয়ে শোয়ার পরপরই এই ঘটনা। হেলাল সাহেবকে দমাতে এগিয়ে আসলেন সোহেদ সাহেব আর শোহেব সাহেব।
শোহেব সাহেব অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

” বড় ভাই আপনি এ কী বলছেন? এতো রাতে মেজ ভাই বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাবেন? আপনি রুমে গিয়ে শুয়ে পরুন। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এখানে তো ভাইয়ের কোনো দোষ নেই, আব্বার কথায় তো এ বিয়ে, তাহলে আব্বাকে গিয়ে আপনি প্রশ্ন করুন। মেজ ভাই তো শুধু নিরপেক্ষ ছিলেন, না তিনি আব্বাকে উস্কেছেন, না তিনি বলেছেন বিয়ে দেওয়ার কথা। আব্বা ভালো বুঝেছেন তাই তো এই বিয়ে দিয়েছেন, সেখানে আপনি মেজ ভাইকে অপমান করে, বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারবেন না। কারণ এ বাড়িতে যতটুকু আপনার টাকা আছে ততটুকু আব্বার ও আছে। আপনি বড় হয়ে না বুঝলে কীভাবে হবে বলুন বড় ভাই!
শোহেব সাহেবের এতো কথায় টু শব্দ করলেন না হেলাল সাহেব। নিজের জায়গায় স্থির রইলেন। সোহেদ কিছু বলতে যাবেন হেলাল সাহেব থামিয়ে দিলেন। চোখ ছোট ছোট করে পুরুষালি পুরু গলায় আওড়ালেন,”আমি তোদের বড় না তোমরা আমার বড়, আমার এই সিদ্ধান্তে কারোর সমস্যা হলে সে ও বাড়ি থেকে নাছিরের সাথে বের হয়ে যেতে পারে।

সোহেদ তোয়াক্কা করলেন না। রাগী গলায় মেজ ভাইয়ের হয়ে বলে দিলেন,”আপনি ভুল করছেন বড় ভাই। সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে, তা আরো ভেঙে দিচ্ছেন। আপনি যদি বড় হয়ে না বুঝেন তাহলে আপনাকে বোঝানোর সাধ্যি আমার নেই।
নাছির সাহেব নিজের অস্থিরতা লুকিয়ে নিলেন। দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে বললেন,”আপনার যখন এই ইচ্ছা তাহলে, তাই হবে। আগামীকাল আমি আমার স্ত্রী সন্তান নিয়ে চলে যাব। আজকে এই ঝড় ঝাপটার রাতটুকু আপনার বাসায় থাকতে দিন। এই আর্জি আপনার কাছে, আজকের জন্য এই বাড়ির ছাদ কেড়ে নিবেন না দয়া করে।
নাছির সাহেবের কথা শেষ হওয়ার আগেই গটগট পায়ে চলে গেলেন হেলাল সাহেব। ভাইয়ের এই নির্লিপ্ততা মনে ভীষণ আঘাত হানল নাছির সাহেবের। ড্রয়িং রুমে বসে থেকে নিজ মনে শপথ নিলেন,”এই জীবনে বেঁচে থাকতে এই বাড়ির সদর দরজার ভিতর পা মারাবেন না কোনোদিন। আল্লাহ্ যেন তার এই শপথ চিরকাল স্থায়ী রাখার তৌফিক দেন।

রান্না ঘরে ফুঁপিয়ে কান্না করছেন নাজমিন বেগম। পাশেই মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছেন লিপি বেগম।পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,” কাঁদিস না মেজ, আমি কথা বলব উনার সাথে। উনার এ-রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানে টা কী এখনো আমি বুঝতে পারছি না। লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে।
লিপি বেগমের কথা শেষ হতেই নিরেট গলায় রান্না ঘরের বাহির থেকে নাছির সাহেব বলেন,”আপনার কথা বলতে হবে না ভাবি, বড় ভাইয়ের সিদ্ধান্ত আমি কখনো ফেলে দেইনি এইবার ও ফেলব না। নাজমিন যাও গিয়ে কাপড় গুছিয়ে নাও, এ-বাড়িতে যেন আমাদের কারোর একটা সুতো না থাকে।
নাজমিন বেগম এবার জোরালো শব্দে কেঁদে উঠলেন। সাথে কেঁদে উঠলেন ঝর্ণা, ও রুহিনী। লিপি বেগম মুখ শক্ত করে বললেন,”উনি বললেন বলেই তুমি চলে যাবে মেজ ভাই, এখানে উনার যতটুকু ভাগ আছে ততটুকু তোমার ও ভাগ আছে।
নাছির সাহেব অনিহা নিয়ে চলে গেলেন। পরবর্তী কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করলেন না। লিপি বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে গেলেন দেয়ালে পিঠ ঘেঁষে। মৃদু গলায় আওড়ালেন,”বড় মিয়া তো বড় মিয়া, মেজ মিয়া সুবহান-আল্লাহ। একজনের তুলনায় আরেকজনের রাগ, জেদ বেশি।

চারিদিকে ঝিঝি পোকার ঝি ঝি ডাক। বৃষ্টির তোড়ে গাছের ঢাল মট মট করে ভাঙার শব্দ হচ্ছে সেই সাথে উচ্চ শব্দে বজ্রপাত। কাছেই কোথাও বাজ পড়েছে। সেই শব্দে পুরো সৈয়দ বাড়ির ইট-পাথর কেঁপে ওঠল। জায়িন একবার বন্ধ জানালার দিকে চিন্তিত চোখে তাকিয়ে খালি হাতে হাতড়ে হাতড়ে কিছুটা চুপি চুপি ইসরাতের রুমে আসলো নাজমিন বেগমের খুঁজে। সেখানে ইসরাতের মাথার পাশ ঘেঁষে চোখ বুজে বসে ছিলেন নাজমিন বেগম। চোখ লেগে এসেছিল নাজমিন বেগমের, বিছানার হেডবোর্ডে মাথা লাগিয়ে এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন তিনি। ফিসফিস কন্ঠে কারোর গলার আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন।

চোখের পাতা ঝাপটে নরম চোখে চারিদিকে তাকিয়ে খোঁজ করতে লাগলেন ডেকে ওঠা মানুষটাকে। শেষ হয়ে যাওয়া মোমবাতির শেষ আলোয় নাজমিন বেগম দেখতে পেলেন কিশোর বয়সে পর্দাপণ করা এক বোঝদার কিশোর দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে কাচুমাচু ভঙ্গিতে। জায়িনকে এক পাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাত বাড়িয়ে টেনে নিয়ে এসে বসালেন নিজের পাশে। কোনো প্রশ্ন করলেন না, ঠিক সময়ের অপেক্ষা করলেন, যখন ঠিক সময় আসবে তখন জায়িন নিজেই কথা শুরু করবে। আর সেই ঠিক সময়ের অপেক্ষায় নাজমিন বেগম নির্লিপ্ত হয়ে বসে রইলেন জায়িনের দিকে তাকিয়ে।

টিকটিক করে সময় গড়াল। ভারী শব্দে মোটা দেয়াল ঘড়িটি বেজে উঠল। নাজমিন বেগম শেষ হয়ে যাওয়া মোমবাতির শেষের অংশ চেপে ধরে ঘড়ির দিকে তুলে ধরলেন সময় দেখার জন্য। ঘড়ির মিনিটের কাটা চারটা ত্রিশ মিনিটে আটকে। মোমবাতি নামিয়ে নিয়ে রাখলেন টেবিলের উপর।
আবার ও নীরবতা নেমে আসলো তাদের দু-জনের মধ্যে। দূরের মসজিদ থেকে ধীরে ধীরে ফজরের আজান আসতে শুরু করেছে। নাজমিন বেগমের মধ্যে এবার কিছুটা উদ্দীপণা দেখা গেল। এতক্ষণ চুপ করে বসা নাজমিন বেগম ছটফট করতে লাগলেন।
জায়িন চুপচাপ নাজমিন বেগমের উদ্দীপনা,ছটফট করা লক্ষ করল। মসজিদে ফজরের আজান হতেই জায়িন নিজের মুখ খুলল,”মেজ মা, মেজ বাবা কী ইসরাতের নতুন করে বিয়ে দিয়ে দিবে?
কিশোরের এতো উদ্দীপণা নিয়ে প্রশ্ন শুনে হাসলেন নাজমিন বেগম। গুছিয়ে রাখা চুলগুলো মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এলোমেলো করে দিলেন।

জায়িন নাজমিন বেগমের হাত নিজের মাথায় এক হাত দিয়ে চেপে রেখে চেয়ে রইল নাজমিন বেগমের দিকে, নিজের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায়। নাজমিন বেগম মোলায়েম কন্ঠে বললেন,”চিন্তা করো না সব ঠিক হবে। তোমার আমানত আল্লাহ্ নিজে তোমার কাছে পৌঁছে দিবেন ঠিক সময়ে। শুধু পড়াশোনায় মনোযোগী হও, অনেক বড় হও, যাতে যেদিন তুমি আমার মেয়েকে নিতে আসবে সেদিন আমি নির্বিঘ্নে তোমার কাছে আমার মেয়ে, সপে দিতে পারি। বড় ভাইয়াকে নিয়ে আবার দেশে আসবে, সবকিছু ঠিক করবে তুমি, তোমার কাঁধে এই বড় দায়িত্ব আমি তুলে দিলাম। আমার মান, আমার গুরুর, আমার ভরসা তুমি ভাঙবে না, আমি জানি জায়িন। এমন হয়ে তৈরি হয়ে আসবে যাতে তোমার মেজ বাবা চাইলে ও তোমাকে রিফিউজ না করতে পারে। মানুষ যাতে পদে পদে তোমার আচরণে মুগ্ধ হয়, আমি ও নিজে যেন তার একজন হই। এখন যেমন আছো তার তুলনায় আরো বেশি বোঝদার হও৷
নাজমিন বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন জায়িনের। জায়িন ছলছল চোখে নাজমিন বেগমের দিকে তাকিয়ে দু-হাতে জড়িয়ে ধরল। ভাঙা গলায় আওড়াল, “আপনাকে অনেক মিস করব।

“আমাকে নাকি ইসরাতকে?
জায়িন লজ্জা পেয়ে মুখ গুজল নাজমিন বেগমের বুকে। নাজমিন বেগম সস্নেহে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন ছেলেটার। নতুন ভোরের ঝাপসা আলোয় দেখতে পেলেন তাদের চলে যাওয়ার দুঃখে কিশোর এক ছেলের ফুঁপিয়ে কান্না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এক হাতে পিঠে ও অন্য হাতে চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। ফিসফিস করে জায়িনের উদ্দেশ্যে বলেন,”তুমি নতুনভাবে এসো আমাদের জীবনে, আমি ইসরাতকে তোমার অপেক্ষায় শেষ বিকেলের সূর্যের শেষ আলোয় জানালার কাছে দাঁড় করিয়ে রাখব। আমাদের এই অপেক্ষা যেন দীর্ঘ না হয় জায়িন, তুমি এসো, তাড়াতাড়ি চলে এসো।
জায়িন ঘুমে বুজে আসা চোখ কোনোরকম খোলা রেখে আওড়াল,”আমি আপনাদের দীর্ঘ অপেক্ষা করাব না মেজ মা। খুব তাড়াতাড়ি আসব, আপনাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসব এই বাড়িতে, সব ঠিক করে দিব আমি, বাবার এই মিথ্যে অহংকার, অহমিকা একদিন ভাঙবে। তিনি নিজে লজ্জিত হবেন নিজের এই দোষে।

লিপি বেগম মুখ বেজার করে বসে আছেন হেলাল সাহেবের পাশে। হেলাল সাহেব স্ত্রী দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন সামনের দিকে। কপালে গাঢ় ভাঁজ ফেলে চেয়ে রইলেন বাহিরের দিকে। ঝড়ের গতিতে গাছ পালা হেলছে দুলছে এদিক-সেদিক। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনুভূত হলো পিঠে মোলায়েম নারী হাতের স্পর্শ। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকালেন। লিপি বেগম মুখ দিয়ে আ আকার শব্দ বের করতেই হেলাল সাহেব ঠোঁটে তর্জনী আঙুল রেখে চুপ দেখালেন। স্বামীর কাছ থেকে কথা বলার অনুমতি না পেয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে রইলেন লিপি বেগম।

ধীরে ধীরে সারাদিনের ক্লান্তি নেমে আসছে শরীরে। বিয়ে বিষয়ক কোনো প্রশ্ন করতে চাইলেন না স্বামীকে, কিন্তু মুখ দিয়ে সেই বের হয়ে আসলো বিয়ে বিষয়ক প্রশ্ন। স্বামীর পিঠে হাত বুলিয়ে মৃদু গলায় আওড়ালেন,
“আপনি বিয়েটা মেনে নিচ্ছেন না কেন?
হেলাল সাহেব চোখ থেকে চিকন লেন্সের হাই পাওয়ারের চশমাটা খুলে রাখলেন পাশের মিনি টেবিলে। বালিশ বিছানার হেডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে রেখে নিজে ও আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়লেন। চোখের উপর ডান হাতের কব্জি চেপে রেখে গম্ভীর স্বরে আদেশ করলেন,”মোম নিভিয়ে দাও!

অজ্ঞতা লিপি বেগম নিভিয়ে দিলেন মোম। মোমের শিখা নিভে যেতেই ধীরে ধীরে অন্ধকারে ডুবে গেল পুরো কক্ষ। হেলাল সাহেব এবার নিজ থেকেই নিজের মনের কথা গুলো বলতে শুরু করলেন,”আমার বন্ধু শাহেদ খানকে তো তুমি জানো। তার মেয়ের সাথে আমি জায়িনের বিয়ে ঠিক করেছিলাম, একপ্রকার বলতে পারো ওয়াদা বদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু মাঝখান থেকে আব্বা বললেন জায়িনের সাথে বিয়ে দিবেন ইসরাতের। আমি প্রথমে বিরুধিতা করলে ও পরে ভাবলাম আচ্ছা মেনে নেওয়া যায়। কারণ আমি ভেবেছিলাম বন্ধুর সাথে করা ওয়াদা রক্ষা করব আরশের আর ওর বিয়ের মাধ্যমে, তবে মাঝখান থেকে আবার আব্বা আমার না করাতে রেগে গিয়ে আরশের সাথে বিয়ে ঠিক করে দিলেন।

লিপি বেগম আলো নিভানো থাকায় হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। কান পেতে যে বিকেলে সব শুনে নিয়েছেন তা আলগোছে চেপে গেলেন নিজের মাঝে। জিজ্ঞাসা করলেন,”এবার আপনি কী করবেন?
হেলাল সাহেব এবার রহস্যময়ী হাসি হাসলেন। অন্ধকারে স্ত্রীর দিকে স্থির চেয়ে বলতে লাগলেন,
“ওদের ডিভোর্স করিয়ে দিব!
লিপি বেগম আঁতকে উঠলেন। মুখে এক হাত দিয়ে চেপে ধরে অবিশ্বাস্য গলায় শুধান,”আপনি পাগল হয়েছেন? নিজের ওয়াদা রক্ষা করার জন্য বিয়ে ভেঙে দিবেন। আপনি না সন্ধ্যাবেলায় বলছিলেন পরিবার ভেঙে যাবে, তাহলে এখন কী হবে, সম্পর্ক কী এভাবে জোরা লাগবে! আপনার এরুপ কাজে তো সম্পর্ক ছিন্ন- ভিন্ন হয়ে যাবে। এরকম অদ্ভুত চিন্তা আপনার মাথায় আসতে পারে আমি ভাবতে পারিনি।

হেলাল সাহেব নিজের আত্ম-অহমিকা বজায় রেখে বললেন,”অবশ্যই আসতে পারে, আমি আমার কথা রাখতে যত নিচে নামা যায় নামব, তবুও ডিভোর্স করাবো।
লিপি বেগম দ্বিধা নিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।সতেরো বছরের এই সংসারে তিনি লোকটাকে বিন্দুমাত্র চিনতে পারেননি, এই মুহুর্তে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করলেন। চিন্তিত গলায় বললেন,”কিন্তু জায়িন তো ডিভোর্স দিবে না ইসরাত কে!
“আমি কী সেটা বলেছি তোমাকে, জায়িন কেন দিতে যাবে ডিভোর্স, আরশ দিবে! ছেলেটা আমার একটা কথা ফেলে না, এবারের আবদার ও ফেলবে না।

” আপনি এরকম করছেন কেন? নুসরাতের কী হবে? ডিভোর্স দিলে তো মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
হেলাল সাহেব বিরক্তির শ্বাস ফেললেন। স্ত্রীর কপালে দু -আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে রাশভারী গলায় আওড়ালেন,”এটা কোনো বিয়ে ছিল না। পুতুল পুতুল খেলার মতো একটা খেলা ভাবো। আর আরশকে আমি নিজের মতো করে গড়ব! এখান থেকে যাওয়ার পরপরই এসবের স্মৃতি ওর মস্তিষ্ক থেকে বের করে দিব। তখন নাহয় বিয়ে করে নিবে শাহেদের মেয়েকে। আর আমি তো আরশকে জীবনে কখনো আসতে দিব না, এই দেশে। আরশকে দেশে আসতে না দিলে নাছিরের মেয়ের সাথে ও দেখা হবে না। আর এই বিয়ে এমনিতেই ভেঙে যাবে
লিপি বেগম স্বামীর দিকে ঘৃণ্য দৃষ্টি দিলেন।

অন্ধকারে যা উপলব্ধি করতে পারলেন না হেলাল সাহেব। উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন লিপি বেগম। স্বামী নামক পুরুষটার প্রতি বিতৃষ্ণায় তীব্রতর গতিতে বেড়ে যেতে লাগল। নিজের বিতৃষ্ণা লুকিয়ে শুধু মৃদু গলায় স্বামীকে সাবধান করলেন,”উপরে একজন আছেন, আজকের বিয়েকে আপনি যেখানে অস্বীকার করছেন সেখানে স্বয়ং আল্লাহ তার দরবারে কবুল করেছেন। আর তার ইচ্ছে হয়েছে বলেই এই বিয়ে হয়েছে। আপনি-আমি কেউ নই যে, এই বিয়ে ভেঙে দিব। এই ধরণের পাপে লিপ্ত হবেন না, আমি আপনাকে সাবধান করছি। আচ্ছা আপনি একবার ভেবে দেখুন আরশের বিয়ে করতে কোনো সমস্যা হবে না কারণ পুরুষদের চার টা বিয়ে জায়েজ কিন্তু মেয়েটার কী হবে? না পারবে বিয়ে করতে, না পারবে কাউকে নিজের সাথে জড়াতে, আর না পারবে আপনার ছেলের কাছ থেকে ডিভোর্স নিতে। আপনি নিজের অহমিকা বজায় রাখার জন্য কতোটা নিচে নেমে গিয়েছেন তা আপনি কল্পনা করতে পারবেন না।

লিপি বেগমের এতো কথার একটা উত্তর করলেন না হেলাল সাহেব। লিপি বেগমের ইচ্ছে হলো এক দলা থুথু স্বামীর মুখে ছুঁড়ে ফেলার, কিন্তু সেই সাহস তার নেই। চুপচাপ এক পাশ ফিরে মটকা মেরে শুয়ে রইলেন ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত। একেবারে ফজরের নামাজ শেষ করে দু-চোখ বুজলেন তিনি, পাড়ি জমালেন নিদ্রার দেশে।

সারারাত বৃষ্টির পর স্নিগ্ধ এক ভোরের শুরু হলো। পৃথিবী তখন ঠান্ডা বাতাসে তরতাজা। হাতের বাহুতে জোরালো ধাক্কায় চোখে হাত দিয়ে উঠে বসল নুসরাত। এক চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে আবার বসে বসে ঝিমাতে লাগল। আরশ কিছুক্ষণ বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের খড়খড়ে হাতে ট্যাপট্যাপ করে গালে থাপ্পড় মারল নুসরাতের।
গালে হাতের স্পর্শ যখন জোরালো হলো তখন চোখ দু-হাত দিয়ে ডলে সামনে তাকাল ঝিমানো নিয়ে। মুখে হাত রেখে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙল ছোট্ট মেয়েটা। আরশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কপালে ভাঁজ ফেলল। সকাল সকাল আরশের মুখ দর্শন হতেই, বিরক্তিতে কপালের মাঝ বরাবর ভাঁজ পড়ল, আপনা-আপনি এক ভ্রু উপরের দিকে উঠে গেল। ঠোঁট বেঁকে গেল এক পাশে। আরশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু লক্ষ করল নুসরাতের বিকৃতি ঘটা মুখ। আর ধৈর্য রাখতে পারল না নিজের গাম্ভীর্য ধরে রেখে বড় মানুষের মতো বলে,”শোনলাম আজ তোরা চলে যাচ্ছিস?

এই কথা বলতেই নুসরাতের চোখে সামনে ভেসে উঠল বাবার জলে চিকচিক করা চোখ। সে ঘুম থেকে উঠেছিল নিচ তলায় যাওয়ার জন্য। প্রতিমধ্যে হেলাল সাহেবের অপমান মূলক বাক্য শুনে সে পর্দা আড়ালে লুকিয়ে ছিল ,তখন মেয়েটার কানে সব কথা এসেছে৷ একবার উঁকি মেরেছিল রেলিঙ ধরে, তখন জলে চিকচিক করতে থাকা বাবার চোখ সে দেখেছে। বুকের ভিতর ধড়ফড় করে কোথাও কিছু একটা ধুপ করে জ্বলে উঠল। চোখ মুখ কালো করে পা দিয়ে টাইলসের মধ্যে নখ দিয়ে খুঁচাতে লাগল।

আরশ এটা ও লক্ষ করল খুব নিপুণভাবে। নুসরাতের রাগ সামলানোর চেষ্টা তার কাছে অসাধারণ লাগল। ভ্রু চুলকে আরশ চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করল। দু-হাত আড়া-আড়ি বুকে বেঁধে ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“যা বলতে এসেছিলাম, তোর আর আমার তো গতকাল বিয়ে হয়েছে, আর আমাদের পরিচয় ও বেশি দিনের নয়, তোর সাথে আসলে কথা বলতে আমার ইন্টারেস্ট আসে না বুঝছিস, যাই হোক তো তোকে কয়েক টা এডভাইজ দিতে আসলাম যেহেতু আমি তোর স্বামী। কথা গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবি কারণ আমি যখন দেশে আসব তখন যেন তোকে এরকম এসে পাই।
নাম্বার ওয়ান এডভাইজ,

“স্লিম হবু, মোটা মেয়ে আমার পছন্দ না, আর এখন তুই যে মোটা, দেখলে ইচ্ছে করে ফুটবল খেলি তোকে বল বানিয়ে। রোগা হবি বুঝতে পারছিস।
এডভাইজ নাম্বার টু,
“তোর এই গায়ের রঙটা আসলে আমার পছন্দ না। সকালে দেখি তুই সাদা হয়ে যাস, দুপুরে দেখি লাল, গোসল করলে দেখি শ্যামলা আর বিকেল হলে তুই কালো, গিরগিটির মতো রঙ পরিবর্তন করে তোর এই গায়ের বর্ণ। এখন তোর কাজ হলো, ক্রিম মেখে কালো হবি নাহলে সাদা হবি, যেকোনো একটা হবি।
এডভাইজ নাম্বার থ্রি,

” আমি দেশে আসি বা না আসি মেজ বাবা যদি তোর বিয়ে দিতে যায় তুই বলবি আমি বিবাহিত মহিলা। আমার স্বামী আছে সে প্রবাসে, সে আসলে ও আমার স্বামী না আসলে ও আমার স্বামী, তার অপেক্ষা করে এই জীবন আমি কাটাতেই চাই। তবুও বিয়ে নামক দ্বিতীয় সম্পর্কে জড়াবো না।
এডভাইজ নাম্বার ফোর,
“আমার স্মৃতিগুলো ভুলবি না। যদি ভুলে যাস তাহলে দেয়ালের সাথে দুটো বারি দিবি মাথায়, তাহলে আবার তোর স্মৃতি চলে আসবে। আর আমাদের বিয়ের ডেট মনে রাখবি, প্রতিবছর এই দিনে আমাকে একটা করে মেসেজ লিখবি, নাম্বার তো আছেই তোর কাছে।
এডভাইজ নাম্বার ফাইভ,
“ছেলে বন্ধু বানাবি না, আর এই ফোলা ফোলা গাল গুলো যেন এরকম থাকে, তোর মুখের মধ্যেই এই একটা জিনিস আমার পছন্দ, বুঝেছিস। চাইলে আরো একটু খেয়ে গাল ফোলাতে পারিস।
এডভাইজ নাম্বার সিক্স,

“মেজ বাবার কাছ থেকে যত টাকা নিবি তার একটা লিস্ট রাখবি, যাতে ভবিষ্যতে যখন আমি আয় করব তখন মেজ বাবার সব টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি। আর আমাকে একদম সাধারণ নিবি না বুঝছিস। তোর সাথে একটা সিক্রেট শেয়ার করি, তুই তো এখন নিজের মানুষ। ঐ দেশে না, আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে নাম ফ্লোরা। মেয়েটা এতো সুন্দর, এতো সুন্দর, আর গাল গুলো এতো গোলাপি কি বলব তোকে? মেয়েটাকে দেখলে তুই দেখতে থাকবি! সামনে দেখলে মন চাইবে দু-একটা চুমু টুমু খেয়ে ফেলতে। তাই বলে মনে করিস না আমি চুমু খেয়েছি,আমার মন চেয়েছিল আমি নিজেকে বলেছি, চুপ, অন্যের বউয়ের দিকে তাকাস তোর চোখগুলো গেলে দেওয়া উচিত। ওহ আরেকটা কথা মেয়েটাকে দেখলেই ইচ্ছে করে গাল টিপে দিতে।
আরশের বকবক শুনে নুসরাত শব্দ করে শ্বাস
ফেলল। দু-হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোখ উল্টে একটা শব্দ করল,”গাল টিপে দিতে ইচ্ছে করে,গলা টিপে দিতে ইচ্ছে করে না?
আরশ পকেটে হাত পুরে কান পেতে বলল,

” কি? আবার বল, ঠিক শুনতে পাইনি।
“কিছু না।
আরশ নুসরাতের পাশ ঘেঁষে বসল সিঙ্গেল বেডে। আরাম করে বসে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের গলা পরিস্কার করে নিয়ে আওড়ায়,” আচ্ছা ফ্লোরার কথা অন্য একদিন বলব আজ থাক, তোকে এডভাইজ গুলো আগে দিয়ে দেই।
এডভাইজ নাম্বার সেভেন,
“লম্বা বেশি হবি না, পাঁচ ফুট দুই তিন হলে চলবে, বা চার ফুট এগারো ইঞ্চি হলে ও চলবে। আমার আবার লম্বা মেয়ে পছন্দ নয়, খাটো হবি। এখন তো খাটো আমার পেটে এসে পড়িস, যখন আমাদের অনেক বছর পর দেখা হবে তখন যেন তুই আমার মুখোমুখি হলে আমার পেটে এসে পড়িস। আর আমি ঝুঁকে তোর দিকে তাকাতেই যেন বুঝে যাই ওইটা তুই কালিয়ানী মসি। যেই কালীকে আমি দীর্ঘ কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছি।
এডভাইজ নাম্বার এইট,

” কিউট হবি না, আর ন্যাকা তো একদম হবি না। মানুষের সাথে পায়ের সাথে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবি, মারামারি করিস,যদি পারিস তো কুপাকুপি শিখিস। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে! ঝগড়াতে নিজের দোষ যদি থাকে তবুও মানবি না, বলবি এহ আমার দোষ না এটা আপনার দোষ।
এডভাইজ নাম্বার নাইন,
“ফ্ল্যাট জুতো পরবি। ওই যে কি বলে, স্লিপার ঐসব! মেকআপ করবি না, কাপড় পুরনো, ছিঁড়া, ফাটা পরবি যাতে মানুষ দেখলে বলে তুই ওই বাড়ির কাজের বেডি।
এডভাইজ নাম্বার টেন,

” লাফালাফি করবি বেশি করে, ওড়না পরবি, আমার দেওয়া সব এডভাইজ অক্ষরে অক্ষরে মানবি। আর বিশেষ করে দ্বিতীয় বিয়ে করবি না, এরকম কোনো প্রপোজাল আসলেই রিজেক্ট করবি। আমার অপেক্ষায় থাকবি, বিশ বছর, ত্রিশ বছর পর আমি না আসলে ও আমার অপেক্ষায় রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকবি। তবুও দ্বিতীয় বিয়ে করবি না! আমার কানে যদি বিয়ে বিষয়ক কোনো কিছু আসে, তাহলে ওখান থেকে বসে তোকে বটি দিয়ে কোপ মারব নয়তো বটি তোর মুখের উপর ছুঁড়ে মারব, যাতে তোর মুখের নকশা বদলে গিয়ে বিয়ের শখ আজীবনের জন্য ঘুচে যায়। আমি কিন্তু নিজের অধিকারের বিষয়ে খুবই সেনসেটিভ! যা আমার তা পিউর আমার থাকবে, অন্য কেউ এতে নজর দিবে না, আর তুই ও অন্য কেউতে নজর দিবি না। সেকেন্ড হ্যান্ড মাল আমি ঘৃণা করি। আর সংসার জীবনে সেকেন্ড হ্যান্ড মাল নিয়ে সংসার করব, কি রকম হয়ে যায় না! তাই একদম বেশি বেশি উড়বি না ওখানে বসে ডানা কেটে ছাটাই করে দিব। তারপর ভালো করে উড়বি, আর গান গাইবি, পানচি বানু উড়তি ফিরু মাস্ত গাগান মে….
নুসরাত বিরক্তি নিয়ে আরশের বক্তৃতা চুপচাপ গিলল। অতঃপর আরশের জ্ঞান দেওয়া শেষ হওয়ার পর সে বলল,”এবার আমি বলি!

আরশ চুপ করে বসল। মাথা নাড়িয়ে ইশারা করল কথা বলার জন্য। নুসরাত দু-হাত কোলের উপর রেখে আরশের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,”এতো এতো আপনার বিরক্তিকর বাধ্য-বাধকতা আমি শুনলাম এবার আমার কথা আপনি শুনুন। এই যে, আপনার চুলগুলো আমার মোটেও পছন্দ না, দেখলেই ইচ্ছে করে চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। তার আগে আপনাকে আমার আগা-গোড়া একদম পছন্দ না, তাই আপনার গরু মার্কা এডভাইজ শুনতে আমার বয়ে গেছে।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ১

আরশ চোয়াল শক্ত করে চেয়ে রইল নুসরাতের দিকে। নুসরাত অধর এলিয়ে হেসে বিছানা থেকে নেমে যেতে নিবে আরশ হাত চেপে ধরে দাঁড় করালো। দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল,”নুসরাত একদম বেশি কথা বলবি না, যা বলেছি তা চুপচাপ শুনবি। আর উড়া উড়ি তো একদম না, নো, নেভার! যেটা আমার সেটা আমার, তাতে কারোর ভাগ আমি পছন্দ করিনা। আর যদি এরকম কোনো কিছু শুনি তাহলে একদম জানে মেরে ফেলব। গট ইট!
নুসরাত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ উল্টে নিল। মুখ বাঁকিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক গলায় আওড়াল,”যেটা আমার সেটা আমার, তাতে কারোর ভাগ আমি পছন্দ করিনা। আর যদি এরকম কোনো কিছু শুনি তাহলে একদম জানে মেরে ফেলব। গট ইট!

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here