প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৯
জান্নাত নুসরাত
বিয়ের কাজকর্ম শুরু হয়েছে পুরোদমে। সৈয়দ বাড়ি নাছির মঞ্জিল সবদিকেই রমরমে ভাব। যে কেউ দেখলে ভেবে বসবে আগামীকাল বিয়ে। বিয়ের আঠারো দিন আগ থেকে এত জমজমাট আয়োজন দেখে আশেপাশের লোকজন সামান্য অবাকই। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হেলাল সাহেব একটু বিরক্তি বোধ করলেন তাই হেঁটে বারান্দায় চলে গেলেন। একটা মানুষ নেই যার সাথে কথা বলবেন, সবাই কাজে ব্যস্ত৷ লিপিকে ও দু-দিন যাবত ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না। নাছির মঞ্জিলের দিকে তাকাতেই দেখলেন নুসরাত ব্রাশ করছে, সাথে বারান্দার রড ধরে ঝুলছে। কিৎকাল নুসরাতকে অবলোকন করে চুপচাপ চলে গেলেন তিনি। হেলাল সাহেবের বিরক্তি কমাতে হয়তো সৈয়দ বাড়ির গেটে আগমন ঘটল একটা গাড়ির। গেট খুলে দিতেই কালো রঙের গাড়িটা ফ্রন্ট ইয়ার্ডে প্রবেশ করল। শব্দ করে হর্ণ বাজিয়ে থেমে গেল তা। গাড়ি থেমে যেতেই তড়িঘড়ি করে গাড়ির সামনের দরজা থেকে বের হয়ে আসলো একজন কালো কাপড় পরিহিত লোক। দৌড়ে গিয়ে পেছনের দরজা খুলে দিল।
প্রথমেই সেখান থেকে স্টিলেটো পরা শুভ্র বর্ণের পা নেমে আসলো। ধীরে ধীরে অন্য পা টা কংক্রিটের রাস্তায় নামল। পরপরই কালো কাপড় পরিহিত লোকটা হাত বাড়িয়ে দিল। বাড়ানোর হাতের দিকে অক্ষিপট নির্ঘত করে গোলাকার আকৃতির শুভ্র মুখটায় ফুটে উঠল উজ্জ্বল হাসি। হ্যাজেল বর্ণের চোখগুলো দিয়ে দেখল বাড়ির ইন্টেরিয়র। তারপর ওই বাড়ানো হাত চেপে ধরে নেমে দাঁড়াল শুভ্র বর্ণের মেয়েটা। মণি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল পুরো বাড়িটা। বাড়ির গেট খোলা থাকায় লোহার তৈরি নেমপ্লেটে লিখা দেখল সৈয়দ নিবাস। ওইদিকে চেয়ে হাসল মেয়েটা সামান্য। তীর্যক হাসি ঠোঁটে চেপে টকটক পায়ে এগিয়ে গেল ভেতরে। গা থেকে চান্স সেনেল পারফিউমের সুঘ্রাণে পুরো জায়গা মো মো করে ওঠল। হাঁটতে হাঁটতে দৃষ্টি বারবার ঘুরে গেল। হাতের মধ্যে থাকা মিস ডিওর এর ব্যাগটা থেকে আলগোছে গুচ্ছি লগো বিশিষ্ট চশমা বের করে পরে নিল। হুডা বিউটি লিখা নিউড কালারের লিপিস্টিক বের করে ঠোঁটে স্মাচ করে নিল সামান্য। ঠোঁট উপর নিচ ঘঁষে কালো কাপড় পরিহিত লোকটার দিকে চেয়ে শুধাল,”সুন্দর লাগছে?
লোকটা নিজের কালো ঠোঁট নাড়িয়ে বলে ওঠল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“গর্জিয়াস ম্যাম, সুন্দর জিনিসটা আপনার সাথেই যাচ্ছে না, কেমন ফিকে পড়ছে!
মেয়েটা সামান্য হেসে নিয়ে বলে ওঠল,
” থ্যাংক্স ফর ইউ্যের কম্পিলিমেন্ট ভিক্টর!
বাড়ির ভেতর ঢোকার আগে চোখের চশমাটা নাকের কাছে নামিয়ে নিয়ে পাছিরের ওপারে ডু-প্লেক্স বাড়িটার দিকে তাকাল। চোখ সরু সরু করে চেয়ে থেকে বলে ওঠল,”ওই বাড়িটা কার?
ভিক্টর নামের লোকটা নিজের পকেট থেকে নোটবুক বের করল। কিৎকাল চোখ বুলিয়ে নিয়ে যান্ত্রিক সুরে আওড়াল,”সৈয়দ আজমল আলীর দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ নাছির উদ্দিনের ওই বাড়ি। নিজের স্ত্রী ও দু-সন্তান নিয়ে ওখানে বসবাস করেন।
“আই সি, আমার উড-বি এর এক্স ওয়াইফ।
নাছির মঞ্জিলের টেবিলে বসে আছে নুসরাত, ইসরাত, ইরহাম, আহান। ইরহাম গতকাল রাতে এই বাড়িতে থেকেছে তাই নাস্তার টেবিলে সে ও বসে। ভদ্র মুখ বানিয়ে চোখ নিচের দিকে দিয়ে রেখেছে। দেখলে যে কেউ ভাববে এই ছেলের মতো ভদ্র দুটো নেই। ভেতরে কাহিনি দেখলে সকলে নাক ছিটকে বলবে এই ছেলের মতো দুটো অভদ্র আর এই পৃথিবীতে নেই। মমো খাবার টেবিলে নেই, সে আজ সৈয়দ বাড়িতে। গতকাল ও ট্রান্সফার হয়েছে ওই বাড়িতে। দু-দিন হলে এই মামার বাড়িতে থাকছে, তো দু-দিন ওই মামার বাড়িতে। আহান সকাল সকাল মজাদার নাস্তা করার জন্য এ বাড়িতে হাজির হয়েছে। ওই বাড়িতে ইন্দুর মুখী একটা মেয়ে এসেছে আর ওই মেয়েকে নিয়ে বড় আব্বুর, চাচ্চুর, আর তার বাবার যতো আলো আলো তুলো তুলো। এসব দেখে তার বমি আসছে। একটা বাইশ তেইশ বছরের মেয়ের এতটা ন্যাকামি সে মেনে নিতে পারছে না। তাই চোখ বন্ধ করে সে বেরিয়ে এসেছে। যাক চুলোয় সবগুলো, জ্বলে পুড়ে ছারখার হোক। তার কী! সে এখানে আরামে বসে খাবে।
টেবিলে খাবার রেখে এসে বসলেন নাজমিন বেগম। নুসরাত কোনো কিছুতে হাত না দিয়ে আগে গুঁড়ো দুধ হাতে নিল। ব্রেড পিরিচ থেকে দুটো নিয়ে একটার উপর গুঁড়ো দুধ ভালো করে ঘঁষে নিল। তারপর অন্যাটা উপরে রেখে দু-কামড়ে পুরোটা সাবাড় করে দিল। ইসরাত একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে নিজের চায়ের কাপ টেনে নিল। নুসরাত নিজের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি উপলব্ধি করল, তারপরও না দেখার ভান করল। সে জানে এটা তার জননীর দৃষ্টি। আহান নুসরাতের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকল। তারপর উদাসীনতায় পরিপূর্ণ কন্ঠে বলল,”আপু তুমি কী রাক্ষস দু-কামড়ে এই মোটা ব্রেড খেয়ে নিলে!
নুসরাত ঠোঁট নাড়িয়ে ইশারায় বলে ওঠল,
“বেশি কথা বললে তোকে ও দু-সেকেন্ডে মহাকাশে পাঠিয়ে দিব।
নুসরাত আবার একইরকম ভাবে খাবার টুপুসটাপুস করে মুখে ঢোকাতেই আহান ক্যামেরা বের করে বলে ওঠল,”লুক এট মি মিসেস নুসরাত, ডটার অফ সৈয়দ নাছির!
নুসরাত মুখ তুলে তাকাতেই আহান জুম করে নুসরাতের ছবি তুলে নিল। অতঃপর দাঁত কেলিয়ে বিজয়ী হাসি হাসল। ইসরাতের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে দেখাল, সাথে বলল,”সুন্দর না? আপু আরেকটু গুলুমুলু হলে ভালো লাগবে তাই না আপি?
ইসরাত চায়ে চুমুক দিয়ে মাথা নাড়াল। শান্ত চোখ টেবিলে ঘুরিয়ে নিল। ইরহামের দিকে একবার তীর্যক দৃষ্টি দিয়ে, ব্যঙ্গ করে হাসল। ইরহাম তার বদলে নিষ্পাপ হাসি দিল। নাছির সাহেব ইরহামের পিঠে চাপড় মেরে বলে ওঠলেন,” তো কেমন চলছে সবকিছু ইয়াং ম্যান? কবে থেকে সৈয়দ চয়েসে আসছ? আমাদের সাথে বসছ?
ইরহাম মেকি হাসি দিল। আহান নুসরাতের দিকে ত্যাড়া চোখে তাকাল, নুসরাত ও তেমন করে তাকাল। দু-জনের চোখাচোখি হতেই চোখ উল্টালো। ইসরাত ইরহামের কান্ড দেখে বারবার শিহরিত হলো। কী একটা ভান করছে এই ছেলে! কানে ভেসে আসলো,”কয়েকদিন যাক মেঝ আব্বু, তারপর জয়েন করব।
নাছির সাহেব মাথা নাড়িয়ে মুখে আপেলের টুকরো ঢোকালেন। নাজমিন বেগম ইরহামের প্লেটে ফ্রজেন পাউরুটি তুলে দিতে দিতে শুধালেন,”প্রথম বর্ষের রেজাল্ট কবে তোর?
ইরহাম ঢোক গিলল। মোটা মোটা ডাব্বা পেয়েছে তা জানলে তার মাতা রানীর থেকে এই মহিলা বেশি খেপবেন। কন্ঠে ধীরতা এনে অবিলম্বে বলে ওঠল,”এখন না, আরো দু-য়েকমাস পর রেজাল্ট।
নাজমিন বেগমের অবিশ্বাস্য পূর্ণ দৃষ্টি নিজের উপর দেখে ইরহাম বলে ওঠল,”আহানের নামে কসম কেটে বলছি।
নাজমিন বেগম রুঢ় কন্ঠে বলে ওঠেন,
“অন্যের নামে কসম কাটবে না, এসব শিরক।
ইরহাম জিভ কাটল। আহান বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠল,
” আবারো মনে হয় ফেইল করেছে, তোমার ছেলেএএএ।
তারপর নুসরাত আর সে হাসিতে ফেটে পড়ল। ইসরাত ও মুচকি মুচকি হাসল। নাজমিন বেগম রুঢ় কন্ঠে বললেন,”জুতো কিন্তু আমার পায়ে আছে। খেতে চাও বাদাম দু-জনে?
নুসরাত আর আহান দু-পাশে মাথা নাড়াল। নাছির সাহেব নিজের চোখের চশমা নাকের ডগা থেকে উপরে টেনে তোলেন। নুসরাতকে জিজ্ঞেস করলেন,”তোমাদের নাকি কী একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেটা নিয়ে নাকি ক্যাচক্যাচ করেছেন বড় ভাই!
নুসরাত কাঁধ ঝাঁকাল দু-দিকে। ঠোঁট উল্টিয়ে বোঝাল সে জানে না। আহান দু-হাতে মাথা চাপড়ে নিয়ে কাঁদু কাঁদু কন্ঠে বলল,”আর বলবেন না মেঝ আব্বু, আমার ভিডিওটা এত ভিউজ হয়েছিল সেটা দেখে বড় ভাইয়া হিংসে করে আমার মোস্ট ভিউয়েড ভিডিওটা পেজ থেকে উড়িয়ে দিয়েছেন। হু হু.. মাম্মিইইই..!
নাছির সাহেব হেসে দিলেন। আহান আবারো হু হু করে কাঁদার মতো করল। নুসরাত বলে ওঠল,”শিয়াল এর মতো হুক্কা হুয়া দিয়ে উঠছিস কেন কতক্ষণ পর পর?
আহান এসব শুনল না। টিপিক্যাল মহিলাদের মতো মাথা চাপড়াল। টি-শার্ট চোখের কাছে নিয়ে এমনি এমনি চোখ মুছল। তারপর আবার পাহাড়ী এলাকায় ঘোরা একাকী, সঙ্গহীন শিয়ালের মতো হুংকার দিয়ে উঠল। কষ্টে ভরা কন্ঠে বলে ওঠে,”সব সেল হয়ে গিয়েছিল। আপির হাতের ব্রেসলেট,কুর্তি, আপুর পায়ের স্লিপার, শার্ট, প্যান্ট, চোখের চশমা, মেঝ আম্মুর পায়ের রোবটিক্স জুতো, ছোট ভাইয়ার কাপড় চোপড় সব স্টক-আউট৷ আর কিছু বাকি রয়েছিল ভাইয়ার জন্য, হলো না। মাম্মিইইইইইই…!
অনিকা আসার পর থেকে হেলাল সাহেবের সাথে কথা বলছে। মেয়েটাকে অত্যন্ত ভদ্র মনে হয়েছে হেলাল সাহেবের কাছে। একবারও তার চোখে চোখ রেখে কথা বলেনি। এই যুগের মেয়ে হয়ে মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে রেখেছে। ওয়েস্টার্ন এর সাথে কে পরে ওড়না। আসলেই তার বন্ধু শাহেদ খান মেয়েটাকে ভালোই শিক্ষা দিয়েছে। এই বাড়ির একটা মানুষ তার সাথে কথা না বললেও এই মেয়ে বলছে। ঘড়ির কাটা দশটায় যেতেই ভূমিকম্পের ন্যায় সেটা কেঁপে ওঠল। উচ্চ শব্দে ঝংকার হলো তাতে। এতেই দুটো রুমের দরজা খুলে বের হলো তিন-জন মানুষ। আরশ জায়িনের দিকে তাকিয়ে মৃদু সুরে সালাম ঠুকল। দেখল যে কেউ বলবে কী ভদ্র ছেলেটা!! জায়িন ও সালামের জবাব দিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল সামনে।
মাহাদি তখনো ঘুমের চোটে তাকাতে পারছে না। কোনরকম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ব্রাশ করেছে সে। এখন আবার নিচে যেতে হবে তাদের। এক চোখ খুলে সামনে অবলোকন করতে গিয়ে দেখল জায়িন গোসল করে ফিটফাট হয়ে নিচে নামছে। ফরমাল বেবি পিংক কালার শার্ট ইন করে গ্রে কালার প্যান্টের ভেতর ঢোকানো সাথে কালো বেল্ট। নিজের দিকে একবার তাকাল। নিজেকে দেখেই নিজের বমি আসলো। এমন একজন পরিস্কার লোকের সাথে সে বসবে। আহ…! অগোছালো চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে নিজের হ্যাজেল বর্ণের চোখ দিয়ে আরশকে স্টক আউট করল। নিজেদের পাশে থাকা ওয়াল মিররে দেখল নিজেকে একবার। আরশের থেকে তাকে মানুষ লাগছে। অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেসে এগিয়ে গেল সে। যেতে যেতে আরশকে টিপ্পনী কাটতে ভুলল না। শুধাল,”এরকম হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট পরে মেয়েদের পাগল করতে বের হচ্ছিস?
আরশ নিজের সামনের দিকে ছোট ছোট করে রাখা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে ভ্রু উচাল। কোনো কথার উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যেতে নিলে মাহাদি বলে ওঠল,”এক কানে হেডফোন পরে এমন পাগলের মতো ঘুরিস কেন? ইসস্টাইলিশ প্রমাণ করতে চাচ্ছিস?
আরশ দাঁতের মাড়ি চেপে ছোট করে উত্তর করল,
“হুয়াই উড আই নিড টু প্রুভিং এনিথিং? আ’ম অলরেডি স্টাইলিশ।
মাহাদির চোয়াল ঝুলে গেল আরশের উত্তরে। বিরক্তিতে নাক ফুলিয়ে নিল সে। অতঃপর রাগী ভঙ্গিতে লাফ মেরে আরশের গলা পেঁচিয়ে ধরে ঝুলে পড়ল। আরশ পাত্তা দিল না। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠল,”সামওয়ান ইজ লুকিং এট ইউ উইয়ারডলি।
আরশ নির্বিকার চিত্তে কথাটা শেষ করতেই মাহাদি গলা খাঁকারি দিয়ে আরশের গা থেকে নেমে গেল।ঘাবড়ে যাওয়া মুখে আশপাশ চোখ বুলাতেই দেখল মমো তাদের দিকে তাকিয়ে। মাহাদি দাঁত চেপে আরশের কানে কানে বলল,” এই শাকচুন্নি মহিলা সবসময় আমার দিকে নিশানা সেট করে রাখে নাকি?
আরশের কঠোর দৃষ্টির সম্মুখে পড়ে, মাহাদি জিভ কেটে আমতা আমতা করে বলে ওঠল,
“ইয়ে মানে, আমি বলতে চাইছিলাম ভদ্র-মহিলা যেখানে ইনসিডেন্ট ঘটে সেখানেই উপস্থিত থাকেন।
দু-জনেই নিচে নামতেই দেখল নতুন একজন ব্যক্তির আগমন। হেলাল সাহেবের কথা কানে আসলো আরশের, তিনি বলছেন,” অনিকা ও হচ্ছে জায়িন আমার বড় ছেলে, আর জায়িন ও হচ্ছে…
হেলাল সাহেব কথা শেষ করতে পারলেন না,
অনিকা হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল জায়িনের উদ্দেশ্যে। জায়িন বাড়ানো হাত দেখে ও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে শান্ত আওয়াজে বলে ওঠল,”এক্সকিউজ মি!
অনিকা আলগোছে গুটিয়ে নিল নিজের হাত। কালো মুখ করে হেলাল সাহেবের দিকে কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে তাকাল। হেলাল সাহেব বলে ওঠলেন,”ফরগেট ইট!
লিপি বেগম দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জায়িনের এমন কান্ডে ঠোঁট চেপে হাসি আটকালেন। ওড়নার কোণোয় মুখ চেপে চলে যেতে নিলেন জায়িন ডেকে উঠল,”গিভ মি সাম ফুড মম, অর জাস্ট ওয়াটেভার ইউ মেইড।
মাহাদি দু-হাত দু-দিকে মেলে এসে অনিকাকে জড়িয়ে ধরতে নিল, অনিকা দূরে সরে গেল। নাক চেপে ধরে বলে ওঠল,”স্মেল আসছে,দূরে যাও মাহাদি!
মাহাদি নাক ফোলাল। নিজের কাপড় থেকে নাক টেনে স্মেল নিয়ে বলল,”কোনো স্মেল নেই, এই দেখো!
অনিকা পাত্তা দিল না মাহাদির কথা। ভিক্টরের দিকে চেয়ে বলে ওঠল,”মাহাদির গায়ে মিস রোজের পারফিউম স্প্রে করো।
” ওইটা মেয়েলি পারফিউম!
অনিকা অনিহা নিয়ে শুধাল,
“সো ওয়াট?
ভিক্টর অনিকার কথা মতো তার ব্যাগ থেকে পারফিউম বের করে মাহাদির গায়ে স্প্রে করল। পরপরই অনিকা দু-হাত মেলে মাহাদিকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল,” ও মাহাদি, আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি।
মাহাদি অনিকাকে ভেঙ্গাল,
“ও মাহাদি, আমি তোমাকে অলেক মিত কলেতি।
অনিকা এবার হাগ ছেড়ে বের হয়ে আসলো। আরশের দিকে সরু চোখে চেয়ে এগিয়ে গেল। আরশ তখন এসে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে। বাঁ-হাতে মোবাইল চেপে ধরে কিছু একটা করছে মনোযোগ সহকারে। নিজের সামনে কাউকে দেখতেই মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে নিল তৎপরতা নিয়ে। গলার নিচ থেকে শীতল স্বর বের হয়ে আসলো,” ওয়াট?
অনিকার কাছে মনে হলো ধমকে কথা বলছে লোকটা। নিজের মনের ভাব ভেতরে চেপে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। আরশ সেই বাড়ানো হাতের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে দেখল। তারপর চোখ তুলে তাকিয়ে রুঢ় গলায় শুধাল,”হু আর ইউ?
আসার পর থেকে গণে গণে দু-বার অপমানিত হলো অনিকা। জীবনে এতবার কখনো সে অপমানিত হয়নি। এখানে এসে যতবার অপমানিত হয়েছে। প্রথমে আঙ্কেলের বড় ছেলে আর এখন তার ছোটছেলে। আজ কী তার অপমান হওয়ার দিন! ঢোক গিলে অপমান হজম করে নেওয়ার চেষ্টা করল। ঠোঁট চেপে গলার কাছে দলা পাকা কান্নাগুলো চেপে বলে ওঠল,”আমি, আমি…!
আরশ কথা কেটে দিয়ে বলে ওঠল,
“Whatever, Do your thing and move out of the way.
অনিকার চোখ অপমানে ছলছল করে উঠল। এতক্ষণে খুশিতে ভরা মন এক মুহুর্তে দুঃখের সাগরে ভাসতে সময় নিল না।
খাবার টেবিলে নাইফ দিয়ে ধীরে ধীরে কেটে খাবার মুখে পুরল অনিকা। হেলাল সাহেবের সাথে টুকটাক কথা চলছে তার। চেয়ার টেনে শব্দ করে মমো বসতেই মাহাদি চোখ তুলে তাকাল। দু-জনের চোখাচোখি হলো সামান্য সময়ের জন্য, তারপর তা ভেঙে গেল। দু-জনেই অস্বস্তি নিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে, স্থির করল অক্ষিদ্বয় প্লেটের দিকে। চুপচাপ খাবার খেতে ব্যস্ত হলো। রুহিনী আকস্মিক বলে ওঠলেন,” কিরে মমো এমন চুপচাপ কেন তুই! কথা বলছিস না কেন?
অনিকা এতক্ষণে মমোকে খেয়াল করল। প্রথম দেখায় গুলুমুলু মেয়েটাকে তার মনে ধরল। গোল গোল চোখে মমোকে অবলোকন করে বলে ওঠল,”হায় বেবিগার্ল, ইউ লুক লাইক আ ডল! তুমি কী মাহাদিকে বিয়ে করবে? আসলে বেচারার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।
প্রথমবার দেখা হওয়ার পর এমন অদ্ভুত কথা কেউই আশা করেনি অনিকার থেকে। অনিকার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলে আছে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে ভিক্টর, হাতে ব্যাগ নিয়ে। রুহিনী হেসে দিলেন শব্দ করে। পরিবেশ স্বাভাবিক করতে অনিকাকে প্রশ্ন করলেন,”মজা করছো না তুমি?
“সে তো মমো আমার ভাবী হলে মজা করব,এখন আমি সিরিয়াস! বেচারা মাহাদিকে কোনো মেয়ে পাত্তা দেয় না।
মমো লিপি বেগমের দিকে নাক ফুলিয়ে চেয়ে বোঝাল এই মেয়েকে থামাও। জায়িন তখনই শক্ত কন্ঠে বলল,”দেট’স টু মাচ. স্টপ দ্যা ননসেন্স টক. লাইক মাহাদি, মমো’স ব্রাদার.
অনিকা আবারো অপমানে থমথমে মুখ করে নিল। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানাল,কী এক বাড়িতে এসেছে, কথায় কথায় এরা অপমান করে! পঞ্চমবারের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনিকা। খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না তার। মাহাদি আড় চোখে দেখল বোনকে একবার। মুখ দেখে বোঝা নিল এখানে আরেকটুখানি বসে থাকলে তার ফুলের মতো নাজুক বোনটা কেঁদে দিবে। তাই সে উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠল,” আ’ম ডান। অনিকা সাথে আসো তোমার সাথে কথা আছে।
অনিকা এখান থেকে বের হতে চাইছিল, মাহাদির কথায় উঠে দাঁড়াল খাবার টেবিল থেকে। টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে নিয়ে ক্যাজুয়াল হাসি দিয়ে মাহাদির পেছন পেছন চলে গেল। সাথে ভিক্টর ও ছায়ার মতো তাদের অনুসরণ করল। সৈয়দ বাড়ির মেইন ফটকের সামনে পৌঁছাতেই মাহাদি দু-হাতে বুকে টেনে নিল তাকে। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু আওয়াজে সান্ত্বনা দিল,”ডোন্ট ক্রাই সিস, ইট’স ওকে! ফরগেট ইট!
সৈয়দ বাড়ি থেকে দুটো গাড়ি পরপর বের হলো। প্রথম গাড়িতে ইসরাত, জায়িন, মমো, মাহাদি, ভিক্টর। দ্বিতীয় গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে আরশ, ফ্রন্ট সিটে অনিকা, ব্যাক সিটে ইরহাম, আহান, নুসরাত। আরশ ফ্রন্ট মিরর ঠিক করে নিয়ে বলে ওঠল,”কেউ একজন সিট বেল্ট বাধেনি তাকে বলা হচ্ছে বাঁধার জন্য!
নুসরাত বিরক্ত হয়ে সিটবেল্ট টেনে নিয়ে বেঁধে ফেলল। অনিকা ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে ফিরে নুসরাতকে দেখল। চিকন সুরে বলে ওঠল,”তুমি মুখে কী ইউজ করো, এতটা গ্লো করছে কীভাবে? কোন ব্রান্ডের স্কিন কেয়ার ইউজ করো?
নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে মিথ্যা হাসি দিল। টেনে টেনে বলল,”স্পেশাল ওয়াশরুমের কাপড় ধোয়ার সাবান দেই, লাইক ভিম ওয়াশ, কামাল সাবান, লাক্স সাবান, ডাব সাবান, ইত্যাদি ইত্যাদি। কখনো কখনো হুইল পাউডার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলি আবার কখনো হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে। আপনি চাইলে ট্রাই করতে পারেন মিস অর মিসেস?
অনিকা বলে ওঠল,
“মিস বলতে পারো! তোমার আর আরশের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে?
নুসরাত অনিহা নিয়ে বলে ওঠে,
” তার আগে এটা বলুন আপনি কে?
অনিকা উৎফুল্ল হয়ে জবাব দিল,
“উনার উড-বি! এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দাও!
নুসরাত আড় চোখে আরশকে দেখল। উদাসীন গলায় বলে ওঠল,”জানি না!
অনিকা আর কথা বলল না। ব্লুটুথ কানেট করে লাউড স্পিকারে গান বাজানো শুরু করল। ইরহাম নুসরাতের কান ঘেঁষে মৃদু সুরে, ভ্রু উচিয়ে বলে ওঠল,”এই মহিলা এত বেশি ইন্টারফেয়ার করছে কেন আমাদের পরিবারের বিষয়ে, আর ভাই ও দেখি কোনো কথা বলে না! কেমিস্ট্রিটা কী?
নুসরাত শক্ত কন্ঠে বলল,
“কোনো কেমিস্ট্রি নেই, ইগনোর কর ভদ্র মহিলাকে।
জায়িন ইসরাতকে নিয়ে এসেছে ওয়েডিং ওয়াড্রবে। আসার পর থেকেই অফ হোয়াইট কালার লেহেঙ্গা একের পর এক পরাচ্ছে তাকে। গত দেড় ঘন্টা যাবত কাপড় ট্রায়াল দিচ্ছে তারা। ইসরাত কিছুক্ষণ পর পর কাপড় চেঞ্জ করে এসে জায়িনের সামনে দাঁড়াচ্ছে, জায়িন তাকে বারবার নতুন কাপড় চুস করে ট্রায়াল রুমে পাঠাচ্ছে। সব কাপড়ে খুঁত বের করছে লোকটা খুঁজে খুঁজে। কোনোটার ফিটিং নিয়ে চিৎকার করছে, কোনোটার লং লেংথ নিয়ে তার সমস্যা। আবার অতিরিক্ত রিভিলিং বলে বলে কাপড় চেঞ্জ করাচ্ছে। আরশ, মাহাদি, ইরহাম, আহান, ভিক্টর, জেন্টস সাইডে। জায়িন না করে দিয়েছে সে যতক্ষণ পর্যন্ত কাউকে আসতে না বলে ততক্ষণ পর্যন্ত যেন কেউ না আসে এখানে। পরপর অনেকক্ষণ কাপড়ের খুঁত ধরার পর শেষ পর্যন্ত একটা কাপড় তার পছন্দ হলো। ইসরাতলে উল্টো করে দাঁড় করিয়ে রেখে দেখল ড্রেসের ডিজাইন খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে। শেষ পর্যন্ত এটা ডান করা হলো! ইসরাত ট্রায়াল রুম থেকে এসে ধুপ করে সোফার উপর বসে পড়ল। নুসরাতকে দেখল সোফায় বসে মিটিমিটি হাসছে। বলল,” নুসরাত নাছির বেশি করে হাসো, তোমার সময় দেখে নেব!
নুসরাত নির্বিকার চিত্তে বলল,
“এত কষ্ট করতে হলে আমি জীবনেও বিয়ে করব না। প্রয়োজন হলে শার্ট প্যান্ট পরে বিয়ে করব।
“দেখা যাবে না হয় তখন!
ইসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে নুসরাতকে ভেঙচি কাটল। জায়িন একের পর এক জুতো দেখছে। কয়েকটা জুতো পছন্দ করে এনে ইসরাতের পায়ের কাছে রাখল। ইশারা করল পরে দেখতে। ইসরাত হাপানি গলায় বলল,” এনার্জি নেই, এই মুহুর্তে সম্ভব না।
জায়িন হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসল। ইসরাতের পা চেপে ধরে নিজের হাঁটুর উপর রাখল। ঠাখনু পর্যন্ত স্পর্শ করা জিন্সের প্যান্ট ফোল্ড করে উপরে তুলে দিয়ে বলে ওঠল,”আপনি রেস্ট করুন, আপনার পা আমার উপর ছেড়ে দিন!
ইসরাত পা টেনে সরাতে চাইল জায়িন চোখ দেখাল। ধমকে উঠে বলল,”নড়চড় করবেন না, নাহলে কোলে বসিয়ে জুতো পরাবো।
ইসরাত বিরক্তি শ্বাস ফেলে শরীরের ভার সোফায় ছেড়ে দিল। জায়িন ধীরে ধীরে ইসরাতের পায়ে জুতো পরালো। প্রত্যেকটা জুতো পরিয়ে জানতে চাইল,”কম্ফোটেবল?
ইসরাত শুধু এমনি হু বলল। জায়িন কয়েকটা পরানোর পর শেষ পর্যন্ত জুতো চুস করতে ব্যর্থ হলো। ইসরাতকে বলে ওঠল,”সবগুলো কম্ফোটেবল হলে সবগুলো নিয়ে নেই?
ইসরাত আশ্চর্য বনে গেল। অস্বাভাবিক হেসে বলল,
“আপনি পাগল!
জায়িন কথা শুনল না ইসরাতের, স্টাফকে ডেকে বলে ওঠল,” সবগুলো জুতো, হাই হিল, ওর হোয়াটএভার প্যাক করে দিন।
মেয়েটা হেসে বলল,
“ইয়েস স্যার!
এরপর মেক-আপ এর ওখানে জায়িন ইসরাতকে নিয়ে গেল। তাদের জুতোর ব্যাগগুলে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে নুসরাত আর মমো। অনিকা মুগ্ধ হয়ে দেখছে জায়িনকে। কেয়ারিং একজন পার্সন। একহাতে ইসরাতকে আগলে রেখেছে নিজের বাহুর সাথে লোকটা। গ্লাস দ্বারা আবৃত শো-রুমে ঢুকে গেল জায়িন। নুসরাত আর মমো দু-জন দু-জনের দিকে তাকাল। নুসরাত খ্যাঁক করে উঠে শুধাল,” আমাদের কী এরা জামাই বউ কাজের ঝি নিয়ে আসছে?
মমো ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
“জানি না।
নুসরাত দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
” তুই কী জানিস আমার মা?
মমো কিছু বলতে নিল নুসরাত বলল,
” চুপ আর কোনো কথা না। কথা বললে বল বানিয়ে পার্কিং লটে সটাবো।
জায়িন ভেতরে ঢুকেই ইসরাতকে জিজ্ঞেস করল,
“কোন ব্র্যান্ড এর স্কিন-কেয়ার মেক-আপ ইউজ করেন আপনি?
ইসরাত শান্ত সুরে বলল,
“লরিয়াল এর।
জায়িন স্টাফের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রোডাক্টের নাম বলল,”Niacinamide serum, Revitalift, Pure Clay Mask, White Perfect Clinical,Hydra Fresh,আর মেয়েদের যা যা প্রয়োজনীয় সব দিয়ে দিন।
লোকটা সব প্যাক করে দিল। এরপর ড্রেস আর শাড়ি কিনার জন্য অন্য দোকানে ইসরাতকে নিয়ে চলে গেল। তাদের সব জিনিস নুসরাত আর মমো হাতে নিয়ে ঘুরছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে দু-জনকে নিয়ে আসছে কাজ করানোর জন্য। জায়িন এরপর কয়েকটা শাড়ি বাছাই করে নিল ইসরাতের জন্য। নিজের পছন্দের কিনলেও সে বারবার জিজ্ঞেস করে নিল কম্ফোটেবল কিনা..! ইসরাতের একই উত্তর সব কম্ফোটেবল।
বিয়ের শপিং প্রায় শেষের দিকে আরশ, ইরহাম, আহান, ভিক্টর, মাহাদি এসে হাজির হলো সেখানে। ইরহাম নুসরাতের হাতের সব ব্যাগ গুলো নিজের হাতে নিয়ে নিল। তারপর ভিক্টর আর সে মিলে সবগুলো ব্যাগ গাড়িতে নিয়ে রেখে আসলো।
এতক্ষণ ঘুরতে ঘুরতে নুসরাতের হাত পা অসাড় হয়ে গিয়েছে। কোনোরকম উড়ে গিয়ে বাড়িতে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করল তার। হাত দিয়ে ব্যাগ ধরে রাখায় হাতে রেশ রেশ পড়ে গিয়েছে। এসব জিনিসে তাকে কে পাঠিয়েছে! নিজেকে কয়েকটা গালি দিল কেন আসতে গিয়েছিল। পানির পিপাসা পাওয়ায় আশেপাশে চোখ ঘুরাল, ইরহামকে নিয়ে ফুড কর্ণারে যাওয়ার জন্য, প্রতিমধ্যে একটা ছেলে এসে নুসরাতের পাশে দাঁড়াল। নুসরাত ছেলেটাকে দেখেই চিনে ফেলল, এটাকে সে দেখেছে ওই নেতা ফেতার সাথে। চ্যালাটা এখানে কী করছে প্রশ্ন জাগল মনে। বিরক্তি নিয়ে পাশ কাটাতে নিলে ছেলেটা ঠান্ডা পানির বোতল নুসরাতের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,” ভাবী, ভাই পাঠিয়েছে!
নুসরাত তীক্ষ্ণতার সাথে ছেলেটাকে দেখল। চোখা চোখে তাকিয়ে জানতে চাইল,”কে ভাবী?
“আপনি!
নুসরাত ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল,
” আমি কোনো ভাইয়ের ভাবী না, অন্য কেউ!
ছেলেটা নুসরাতের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কানের কাছে জেদি সুরে বলল,”জ্বি না আপনিই ভাইয়ের ভাবী!
নুসরাত থেমে গিয়ে আঙুল তুলে শাসাল। কাটকাট কন্ঠে বলল,” আমি ভাবী না, ভুল হচ্ছে!
ছেলেটা সম্মানের সহিত চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল,
“আপনিই ভাবী, কোনো ভুল হচ্ছে না!
নুসরাতের মাথার উপরী ভাগ খা খা করে উঠল রাগে। তারপরও মেকি হাসির বাহার ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলল,”বালডি বোঝো না কেন তুমি, আমি তোমার ভাবী না। অন্য কেউ ভাবী, অন্য কেউ ভাবী, অন্য কেউ ভাবী!
ছেলেটা ও নুসরাতের মতো করে বলল,
“আপনি কেন বুঝছেন না, আপনিই ভাবী, আপনিই ভাবী, আপনিই আমার ভাবী।
নুসরাতের জ্ঞান বুদ্ধি প্রায় লোপ পেল। পা থেকে স্লিপার খুলে হাতে নিয়ে চোখ রাঙিয়ে রাঙিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,” আরেকবার ভাবী বল শালা, জুতোর বারি একটাও মাটিতে পড়বে না।
ছেলেটা ভয় নিয়ে তাকাল নুসরাতের দিকে। তবুও কোমল কন্ঠে ডাকল,”ভাবী..!
নুসরাত কিৎকাল ভয়ে শঙ্কিত হওয়া ছেলেটাকে দেখল। স্লিপার আবার পায়ে পরে নিয়ে বলে ওঠল,
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৮ (২)
” ভাবী ডাকার চেয়ে ভালো আম্মা ডাক ব্যাটা..!
ছেলেটা কন্ঠে মোলায়েমতা এনে ভদ্রতার সহিত ডেকে উঠল,”ভাবী আম্মা..!
নুসরাতের পেছনে ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে আরশ। নুসরাত রেগেমেগে কিছু বলার পূর্বেই সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আরশ গাম্ভীর্যপূর্ণ কন্ঠে শুধাল,”কে ভাবী আম্মা?