প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৩
জান্নাত নুসরাত
ঠান্ডা হাওয়া বইছে এসি থেকে। থাই গ্লাস আটকানো। এসির পাওয়ার আঠারো এর ঘরে। রুমের আবহাওয়া এতটা ঠান্ডা যে অতিরিক্ত শীতলতায় নাক বন্ধ হয়ে গিয়েছে নুসরাতের। ইসরাত ঠোঁটের উপর হাত রেখে মিটিমিটি হাসছে। আহান ম্যাগনিফাইং গ্লাসের উপর এক চোখ রেখে বারবার নুসরাতের মুখের পরিবর্তন লক্ষ করছে। একবার এদিক থেকে এসে দেখছে তো একবার ওদিক থেকে দেখছে। নুসরাত কয়েকবার বিরক্ত হয়ে তাকে চোখ দেখাল। এতে সে থেমে যাওয়ার পাত্র না, কারণ সে এই ঘরের ভবিষ্যৎ সাইন্টিস্ট। এখন এখানে একটা কিন্তু আছে। নুসরাত আপু মানতেই চায় না যে সে ভবিষ্যতে বড় সাইন্টিস্ট হবে। আজ ও যখন ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে নুসরাত আপুর মুখ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল তখন মুখ দিয়ে সবসময় তিতা কথা বের হওয়া আপু বলেছে, “এত আমার উপর রিসার্চ করে কী হবে, সেই তো নুসরাত নাছিরের পেছন পেছন ছাতা ধরে হাঁটবি।
এরপর থেকে সে আরো বেশি করে রিসার্চ করছে নুসরাত আপুর উপর। সে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বুঝতে চাইছে, আল্লাহ তায়ালা এই মহিলাকে তৈরি করার সময় কী একটু মিষ্টি মুখে দেননি! যখনই কথা বলে শুধু কর্কশ কন্ঠে ধমকায় না হয় তিতা কথা বলে।
নুসরাত অনেকক্ষণ সহ্য করল আহানের এক চোখ বড় করে এসে তার মুখের সামনে ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা ঘোরানো। ক্রোধে দাঁতে দাঁত চাপল। কড়মড় করে আহানের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে ঠাস করে কানের কাছে একটা থাপ্পড় বসাল। হিসহিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,” তোর মায়ের হ্যাঙ্গা হচ্ছে এখানে শালা, বাল একখান এনে আমার মুখের সামনে ঝুলাই রাখছোস?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আহান থাপ্পড় খেয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসল। নুসরাত একে দাঁত কেলাতে দেখে দ্বিগুণ রেগে গেল। বলল,”বোকাচন্দ্রবিন্দুর মতো হাসবি না বাল।
আহান আবার হাসল নুসরাতের পাশে দাঁড়িয়ে। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে সকল জিনিস বড় বড় করে দেখতে দেখতে অস্ফুষ্ট সুরে আওড়াল,”বড় আপুর মুখের সকল পিম্পল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখানে।
ইরহাম গ্লাস টেনে নিয়ে নিজের চোখের মধ্যে চেপে ধরল। মুখ দিয়ে উচ্চারিত হলো,”দেখি দেখি!
ইরহাম নিজে দেখা শেষে আহানের পানে তাকাল। অতঃপর নিজেদের সিগনেচার স্টাইলে দু-জনে দু-জনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল। ইরহাম নুসরাতের দিকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠল,”তুই ও দেখ, ওগুলো কাছে না দাঁড়ালে ভালো করে দেখা যায় না।
নুসরাত অবজ্ঞার ভঙ্গিতে ম্যাগনিফাইং গ্লাস হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল। তারপর এক ঠোঁট উপরের দিকে কুঁচকে নিয়ে দাম্ভিক সুরে আওড়াল,”ওসব বালের ম্যাগনিফাইং গ্লাস আমার দরকার নেই, আমি এখানে বসেই স্পষ্ট ইসরাতের মুখের পিম্পল পিম্পলের আন্ডা বাচ্চা সব দেখতে পাচ্ছি। মনে রাখিস আমার চোখের কাছে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ফেইল। তাছাড়া আমি এখানে বসেই পনেরো মাইল দূরে কী হচ্ছে তা স্পষ্ট দেখতে পাই।
ইসরাত নুসরাতের ধাপ্পাবাজি কথায় বিরক্ত হলো। ইরহাম চ সূচক শব্দ মুখ দিয়ে বের করে বসে গেল সোফার উপর। আর আহান যথারীতি ম্যাগনিফাইং গ্লাস হাতে নিয়ে নুসরাতকে ভালো করে পরিক্রমা করতে শুরু করল। আর বলতে লাগল,”তোমার চোখ গুলো চোখ নয়, মনে হয় দূরবীন!
নুসরাত মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে আহানের কথা অবজ্ঞা করল। তারপর আবার সহমত পোষণ করে বলল,”তা তুই ঠিক বলেছিস।
ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠল,
“আজ না রাতে তোর মেহেদি সন্ধ্যা, তাহলে তুই এখানে বসে আছিস কেন? যা গিয়ে রুপচর্চা কর গিয়ে। মুখে দেখ কীসব পিম্পেল ডিম্পেল হয়েছে।
আহান নুসরাতের কথায় সহমত পোষণ করে মাথা নাড়াল। ইরহাম নুসরাতকে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শুধাল,”তুই আজ রাতে কী পরিধান করবি?
নুসরাত যেন আকাশ থেকে পড়ল। কী তাকে ও কিছু পরতে হবে! সবার দিকে একবার চেয়ে মেকি হাসল। ইসরাত আঙুল তুলে নিশ্চয়তা দিয়ে বলল,”নির্ঘাত কিছুই কিনেনি। এক্ষুণি দেখবি চুরি ধরা পড়ার জন্য হা হা করে দাঁত বের করবে।
ইসরাতের কথা শেষ হতেই নুসরাত দাঁত বের করে সত্যি সত্যি হাসল। ঠোঁট টিপে বলে ওঠল,”আহানের কিছু একটা পরে নিব।
আহান আঁতকে উঠল। দু-হাত তুলে আগেই না করে দিল,”আমার কাছে কোনো কাপড় নেই। এর আগেও তুমি আমার দুটো জামা নিয়ে ফেরত দাওনি। আমি কোনো প্রকার শার্ট, গেঞ্জি, টিশার্ট, ড্রপ সোল্ডার, কিছুই দিব না তোমাকে।
নুসরাত হেসে হেসে ইরহামের দিকে তাকাতেই ইরহাম ও দু-হাত তুলে বলে ওঠল,”এ্যাঁহ তোকে টাকা দেওয়া হয়েছে না, তাহলে কিনলি না কেন? সাবধান নুসরাত আমার জিনিসের দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলে তোর হাত আমি কেটে ফেলব।
নুসরাত তীক্ষ্ণ চোখে ইরহামকে উপর নিচ অবলোকন করল। শক্ত কন্ঠে বলে ওঠল,”নুসরাত নাছিরের হাত কাটা এত সহজ?
ইরহাম বলে ওঠল,
“অবশ্যই সহজ।
নুসরাত এক চোখ টিপে সামান্য হেসে শীতল কন্ঠে হুমকি দিল,”তুই আমার হাত কাটতে যাবি আমি তোর ব্যঙুই কেটে রেখে দিব। তখন উপলব্ধি করবি সাপের লেজে পা দেওয়ার ফল।
আহান নুসরাতের কথায় হইহই করে ওঠে বলে,
” তাহলে আপু তুমি না চাইতেও মানলে তুমি একজন বিষধর সাপ যার লেজ আছে।
নুসরাত চুটকি বাজিয়ে আহনকে নিজের দিকে ফিরাল। তারপর আহানকে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়ে ঘাড় ধরে ঝুঁকিয়ে ধুমধুম করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিল পিঠে। হিসহিসিয়ে আহানের কথার উত্তর দিল,”আমি যদি বিষধর সাপ হতাম সকলের আগে তোর ওই বাপের বড় ভাইকে কামড় দিতাম। তারপর তোর ওই আরশ ভাইকে, আর তারপর তার ধামড়ি বাচ্চাকে।
ইসরাত শব্দ করে হেসে উঠল। নুসরাতের কথার জবাবে বলে ওঠল,”ভাই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, নুসরাত নাছির নামক জেদি আপা ও একজন পুরুষের জন্য কোনো নারীর উপর জেলাস। হাহ..! আমি তো ভাবিনি এই জন্মে এতকিছু দেখব। রবের কী লীলাখেলা।
ইরহাম ইসরাতের কথা শোনে হেসে দিল। সবাই তার দিকে ফিরে চাইতেই সে বলল,”আপির কথা শোনে একটা গান মনে পড়ে গেল। যেটা নুসরাত আপার সাথে বর্তমানে একদম খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে।
ইসরাত এক ভ্রু উচিয়ে নিল। হাস্যরস কন্ঠে শুধাল,
“কোন গান?
আহান ইসরাতের কথা শেষ হতেই বলে ওঠল,
” আমি হয়তো মোটামুটি ধরে ফেলেছি কোন গান।
ইসরাত ইরহামের দিকে চাইতেই সে ইশারায় কিছু একটা বলল। ঠোঁট নাড়িয়ে গানের লাইন বলতেই ইসরাত হা হা করে হেসে গড়াগড়ি খেল বিছানায়। ওই অবস্থায় থেকে বলল,”গেয়ে নে ইরহাম, কোনো সমস্যা নেই।
ইরহাম ব্যগ্র কন্ঠে বলে ওঠে,
“আহাইন্না যা তো নুসরাত নাছিরের গিটার নিয়ে আয়, গিটার ছাড়া জমবে না।
আহান দৌড়ে গিয়ে গিটার নিয়ে আসলো। ইরহাম তা নিজের কোলে রেখে আসন পেতে বসল। আহান নিজেও মেঝেতে বসল। যাকে নিয়ে মজা নিবে বলে এত আয়োজন, সে নির্লিপ্ত। কোনো উদ্যোগ তার ভেতর নেই। নির্বিকার চিত্তে বসে বসে দেখছে সকলের কান্ড। ইরহাম নিজের চুল সব হাত দিয়ে অগোছালো করে দিল। বিভিন্ন দরগায় থাকা পীরের মতো মাথা দু-দিকে পাগলের মতো ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে গিটারে সুর তুলল। সৈয়দ বাড়ির একটা ও সুন্দর করে গান গায় না। নিজেদের মতো কিছু গায় আবার কিছু গানের আসল লিরিক্স থাকে। ইরহাম তেমন একজন। আঙুল গিটারে রেখে পাগলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে গেয়ে উঠল,”হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা
বাবা হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা,
সৈয়দ বাড়ির পাগলা খানায় সব পাগলদের খেলা।
সন্ধ্যা থেকেই রমরমে ভাব ছেয়ে আছে পুরো বাড়ি জুড়ে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লুক এসে দুই বাড়ি ডেকোরেশন করে গিয়েছে। চারিদিকে লাল নীল আলো জ্বলছে। বাড়ির ভেতর সাজগোজ করছে সবাই। ইসরাতেদের নানা বাড়ির লোক এসেছে। পুরো ড্রয়িং রুমের অবস্থা রমরমে। আরশের নানি অসুস্থ থাকার ধরুন কেউই মেহেদি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেনি। আরশের নানি রুমানা খাতুন নিশ্চিত করেছেন উনি চেষ্টা করবেন বিয়েতে আসার তবে এটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছেন। শরীর সুস্থ থাকলে তিনি কোনো বাঁধা ছাড়াই চলে আসবেন। নুসরাতের নানি ছালিমা বেগম গীত গাচ্ছেন। তার সাথে মিলে কিছু বয়স্ক মহিলারা ও গীত গাচ্ছেন৷ একদল মধ্য বয়স্ক মহিলারা নাচছে সাথে ধামাইল দিচ্ছে৷ ক্যামেরা ম্যান একপাশে দাঁড়িয়ে তা খুবই সন্তপর্ণে নিজের ক্যামেরার মধ্যে আটকে নিচ্ছে। সৌরভি ও সেজেগুজে এসে হাজির নাছির মঞ্জিলে। নিজাম শিকদার তাকে প্রচুর টানাটানি করেছেন সৈয়দ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কিন্তু তার একটাই কথা,ওই বাড়িতে ছেলে মানুষ সব থাকে, ওদের মধ্যে গিয়ে আমি কী করব! নিজাম শিকদার শেষ মুহুর্তে এসে ঝাড়ি মেরে চলে গিয়েছেন। আর সৌরভি নাচতে নাচতে চলে আসছে এখানে।
নাজমিন বেগম সকল কিছু সামলে চলে গেলেন নুসরাতের রুমের দিকে। ঢুকেই নুসরাতকে শুধালেন,”কী পরছিস? প্রায় সবাই তো চলে আসছে।
নুসরাত নিজের ভেজা চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে নিয়ে হেলতে দুলতে চলে গেল বিছানার কাছে। সেখানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা কাপড়গুলো নাজমিন বেগমের মুখের সামনে তুলে ধরে খুশি মনে বলল,”এই সাদা শার্ট আর এই আব্বার কালো প্যান্ট পরব।
নাজমিন বেগম শীতল চোখে নুসরাতের দিকে কিৎকাল চেয়ে রইলেন। অতঃপর পায়ের মধ্যে থাকা নিজের রোবটিক্স জুতো হাতে নিয়ে মেকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে কর্কশ গলায় না জানার ভান করে জানতে চাইলেন,”কী পরবি তুই?
নুসরাত এক মুহুর্তে নিজের মায়ের মতিগতি ধরে নিল। পেছনের দিকে সরতে সরতে বলল,”আরে সিরিয়াস হচ্ছো কেন আম্মা, আমি তো মজা করছিলাম।
নাজমিন বেগম নিজের পা থেকে জুতো হাতে নিতে নিতে বললেন,”কিন্তু আমি তো সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছি এই কথা।
নুসরাত দৌড়ে গিয়ে কাবার্ড খুলল। অগোছালো হাতে কাপড় খুঁজতে খুঁজতে বিড়বিড় করল,”গেল কই! বালডা তো এখানেই রেখেছিলাম।
সবকিছু চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শেষ পর্যন্ত কালো রঙের গ্রাউন হাতে পড়ল নুসরাতের। সে সেটা হাতে নিয়ে নাজমিন বেগমের দিকে ফিরে বোকার মতো হাসতে হাসতে বলল,”এইটা পরব, এতক্ষণ মজা করছিলাম।
নাজমিন বেগম নিজের পায়ে জুতো পরে নিলেন। ওড়না কানের পেছনে গুজে নিয়ে বলে ওঠলেন,”আমি ও মজা করছিলাম।
নুসরাত তড়াক করে বলে ওঠল,
“তাহলে আর এটা পরার দরকার কী রেখে দেই!
” শুধু রেখে দেখ, তোর বাপ চাচার নাম ভুলিয়ে দিব।
নাজমিন বেগমের মারের ভয়ে নুসরাত কাপড় পরেনি। মেহমানদের সামনে যদি তাকে পিটানো হয় সেটা অনেক বেশি লজ্জা জনক হয়ে পড়বে তার জন্য। তাই ভবিষ্যৎ সৈয়দ চয়েসের ওনার হিসেবে তার একটা প্রেস্টিজ বলে কিছু আছে তো। মা নামক ভদ্র মহিলার হাতে জুতোর বারি খেয়ে অকালে তা ঝড়াতে চায় না নুসরাত। মানসম্মান বেঁচে গেল ও যেই বাল একটা পরছে এইটা পরে জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে গিয়েছে। এই নিয়ে দু-বার পায়ে ভেজে আল্লাহর বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছিল। আরেকটা সমস্যার দেখা দিয়েছে। যেদিকে যাচ্ছে সবাই থামিয়ে থামিয়ে গোল গোল চোখে তাকে পরখ করছে। তারপর অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করছে,”তুই নাছিরের দ্বিতীয় মেয়ে?
নুসরাত ভেবে পায় না এতে এত অবাক হওয়ার কী! হ্যাঁ সে কালো রঙের একটা আলখাল্লা পরে নিয়েছে মায়ের ভয়ে, আই মিন মানসম্মান হারানোর ভয়ে তাই বলে তাকে এমন করে ঘুরে ঘুরে দেখবে আর এসব আজব প্রশ্ন করবে। নুসরাতের কাছে মনে হলো এইসব মেয়েলি বস্ত্রের তুলনায় পুরুষদের লুঙ্গিটাই ভালো। কোমরে গিট্টু দিলেই হয়! এদিক দিয়ে বাতাস ঢুকে ওদিক দিয়ে বাতাস ফরফর করে বের হয়ে যায়। কিন্তু এই সাউয়ার কাপড়ের কোনোদিক দিয়েই বাতাস ঢুকে না। গরমে সে আলু ভুনা হয়ে যাচ্ছে। বালের মেয়েলি কাপড়! তার মনে হলো ত্রিকোণোমিতির সূত্র এর থেকে সহজ, যতটা কঠিন এসব আলখাল্লা জাতীয় কাপড় পরা। আবার গলার কাছে কীসব পাথর টাথর লাগিয়ে রেখেছে। এগুলো নাকি কারচুপির কাজ। তাহলে তাকে খোঁচাচ্ছে কেন! সমস্যা কী এদের ভাই! নুসরাতের সাথে কোন বাপের জন্মের শত্রুতা খুঁচিয়ে মিটাচ্ছে। নুসরাত গলায় চুলকাতে চুলকাতে নেমে আসলো সিঁড়ি বেয়ে। এর মধ্যে আহান এসে বাড়িতে প্রবেশ করল। নুসরাতকে মাথার মাঝখানে খোপা করে, এরকম মেয়েলি কাপড় পরে হাঁটতে দেখে আকাশ থেকে টুপ করে সে পড়ে গেছে মনে হয়। চোখ মুখ বিশাল আকৃতির করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠল,”ও মেঝ মা, ছোট আপুকে জীনে ধরছে। তাড়াতাড়ি হুজুর এনে ঝাড় ফুক করাও। তোমার বিশ্বাস যোগ্য কবিরাজ এনে ঝাটার বারি মারো আপুকে।
আহানের কথায় বিরক্তির পরিশিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছে গেল নুসরাত। এমন গলা ফাটিয়ে নাটক করার মানে কী! সে তো ছোটবেলা এসব মেয়েলি পোশাক নামক আলখাল্লা পরত। এতে এমন আকাশ থেকে পড়ার ভান করার ই বা মানে কী! নুসরাত বিরক্তি সুরে বলল,”হইছে আর নাটক করতে হবে না।
আহান নাটকীয় ভঙ্গিতে হেলে পড়তে পড়তে বলল,
“আল্লাহর কসম আপু আমি তোমাকে দেখে মনে করেছি প্রথমে জীনে ধরছে, এখন আমি শিওর তোমাকে পেত্নী ধরছে। নাহলে তুমি এমন কাপড় পরতেই পারো না।
নুসরাত আহানের কথায় আর পাত্তা না দিয়ে গিয়ে বসল সোফার উপর। এর মধ্যে ইসরাত কুর্তি একটা গায়ে জড়িয়ে এসে বসল তার পাশে। নুসরাত আবেগে ঠেলায় ভেসে যেতে যেতে আওড়াল,” ইয়া আল্লাহ এত সুন্দর মেয়ে এখানে আসলো কীভাবে! মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ! ইসরাত তুই দেখতে পাচ্ছিস?
নুসরাতের কথায় সকলে সহমত পোষণ করে বলে ওঠল,”সত্যি অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
নুসরাত চোখ উলটে নিল। সবাইকে অবজ্ঞা করে হাসতে হাসতে অস্পষ্ট সুরে আওড়াল,”আপনারা ওদিকে কী দেখছেন, আমি আমার নিজের কথা বলছি। নিজেকে নিজের কাছে এটম বম লাগতাছে, মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ! নাজার না লাগ যায়ে থুথু থু..
তারপর হা হা করে হাসতে হাসতে কিচেনে চলে গেল। এর মধ্যে সৈয়দ বাড়ি থেকে ডালা নিয়ে আসলো আরশ, অনিকা, ইরহাম, মমো। সাথে মেহেদির জন্য শাড়ি। ইসরাত শাড়ি পরার জন্য রুমে গেল। তার পিছু পিছু নুসরাত ও গেল। ইসরাত গায়ে শাড়ি জড়িয়ে মেকাপ করে নিচে নামতেই ক্যামেরা ম্যান চলে আসলো। বউয়ের বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তোলা হলো বাড়ির ভেতরে বাহিরে। শেষে বাড়ির বাহিরে সাজানো স্টেজে বউকে নীরবে বসিয়ে দেওয়া হলো। সকল প্রকার আলো নিভিয়ে দেওয়া হলো। কিছুক্ষণ পর নাচের অনুষ্ঠান শুরু হবে তাই।
ইরহাম আর আহান সেই সুযোগে সৈয়দ বাড়িতে দৌড়ে গেল, গিয়ে কাবার্ড থেকে কালো রঙের পাঞ্জাবী বের করে পরে নিল। যাতে নুসরাতের সাথে তাদের কাপড়ের মেচিং হয়। পারফিউম স্প্রে করে দু-জনেই রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসল দ্রুত পায়ে। ড্রয়িং রুম পার করতে নিবে হেলাল সাহেব থামিয়ে দিলেন তাদের৷ প্রথমে সোফায় বসে কিৎকাল দেখলেন আহান আর ইরহামকে। তারপর লিপি বেগমকে ডেকে উঠলেন,”ও লিপি, লিপি..!
লিপি বেগম দৌড়ে আসলেন। ঘামে ভিজে যবুথবু মুখে স্বামীর নিকট জানতে চাইলেন,”ডাকছেন কেন?
হেলাল সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“কাজল নিয়ে আসো।
লিপি বেগম কপালে ভাঁজ ফেললেন। হতবাক সুরে জানতে চাইলেন,” কেন?
হেলাল সাহেব মুখ দিয়ে বিরক্তিকর শব্দ বের করলেন। কিছুটা ধমক মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠেন, “এত প্রশ্ন কীসের? যা বলছি তা করো চুপচাপ।।
লিপি বেগম মুখ ফুলিয়ে চলে গেলেন কাজল আনতে। কিৎকাল অতিবাহিত হওয়ার পর হেলাল সাহেবের আবারো হাক ডাক শোনা গেল। আহান আর ইরহাম মুখ চুপসে দাঁড়িয়ে রইল। দু-জনেই উপলব্ধি করতে পারছে এরপরে তাদের সাথে কী হতে যাচ্ছে। লিপি বেগম কাজল এনে দিতেই হেলাল সাহেব দু-জনকেই ধরে টিকা দিয়ে দিলেন। লিপি বেগম হায় হায় করে উঠে বলেন,” এ কী করলেন আপনি?
হেলাল সাহেব গম্ভীর মুখে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। বললেন,”অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে আজ এদের তাই নজর টিকা দিয়ে দিলাম।
আহান আর ইরহাম হেলাল সাহেবের সাথে হাসি বিনিময় করে উল্টোদিকে ফিরতেই দু-জনে টিস্যুর সাহায্যে কপাল মুছে নিতে চাইল, হেলাল সাহেবের কন্ঠেস্বর তখন ভেসে আসলো,”চল তোদের নাছিরের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি। বাচ্চা মানুষ যেতে ভয় পাবি।
কপালের কাছে নেওয়া হাত আলগোছে দু-জনেই নামিয়ে নিল। আহান ভেবে নিল তাদের জীবনটা সিনেমা হলে পারত। এখন পেছনে একটা গান বাজতো দুঃখি সুরে।
নাছির মঞ্জিলে আসতেই নুসরাতের সাথে সর্বপ্রথম দেখা হলো ইরহাম আর আহানের। নুসরাত দু-জনের দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। খিলখিল করে হেসে দাঁত কেলিয়ে জানতে চাইল,”চাঁদের কপালে এই বিশ ফুটের গ্রহণটা কে লাগিয়েছে?
আহান নাক টেনে মিথ্যে কান্নার ভান করল। চোখে মুখে কান্না ভাব ফুটিয়ে বলে ওঠল,”আর কে করবে! তোমার বাপের একমাত্র গুণোধর ভাই আমাকে আর ভাইয়াকে ধরে নজর টিকা পরিয়ে দিয়েছেন। আপু একটা মানুষের কমনসেন্স কোথায় থাকলে বড় বড় এডাল্ট ছেলেদের বাচ্চা বলে নজর টিকা পরিয়ে দেয়?
ইরহাম তিক্ত বিরক্ত গলায় বলে ওঠল,
“কমনসেন্স আর কোথায় থাকবে, পশ্চাৎদেশে আটকে আছে।
নুসরাত দু-জনের কথায় হেসে লুটোপুটি খেল। আহান বলল,” একটু দেখো তো আপু মানুষ আমাদের দেখছে নাকি! আজ অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে আমাদের।
নুসরাত বলল,
“তোমাদের সাউয়ার মতো লাগছে। মুখ খোলাবি না বাল!! আজ আমি ভালো হয়ে গিয়েছি।
আহান আর ইরহাম নুসরাতের সাথে কথা বাড়াল না। চুপিচুপি বাড়িতে ঢুকে নিজেদের মুখ ধুয়ে পরিস্কার করে নিল। নুসরাত যখন ধিন তানা ধিন তানা করে নেচেকুঁদে বাড়িতে প্রবেশ করল, সেই মুহূর্তে এক ভদ্র মহিলা বলে ওঠলেন,” নাছিরের বড় মেয়ের তো বিয়া হই যাইতাছে ওই, মেয়ের রঙ পরিস্কার এইজন্য পোলা ও পরিস্কার রঙের পাইছে, কিন্তু এর কী হইব? পোলা কই পাইব?
নুসরাতের নেচে-কুঁদে চলা পা থেমে গেল। ঠোঁটে মারাত্মক হাসি ঝুলিয়ে সে নিজের বাঁ পাশে তাকাল। পাশাপাশি বসে থাকা দু-মহিলাকে একপ্রকার ঠেলে ধাক্কিয়ে সরিয়ে নিজে তাদের মধ্যে বসে গেল। তারপর পায়ের উপর পা তুলে বসে পা নাচিয়ে নাচিয়ে যিনি কথা বলছিলেন তার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল,”আপনার ছেলের রঙ পরিস্কার?
প্রথমত এমন ধাক্কিয়ে ঠেলে বসায় ভদ্র মহিলা শকে দ্বিতীয়ত এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলেন। হতবাক চোখে নুসরাতের দিকে চাইতেই নুসরাত ভ্রু উচিয়ে আবারো মনে করিয়ে দিল তার প্রশ্নটা। ভদ্র মহিলা হ্যাঁ ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেন,”হ্যাঁ! সাদা ফকফকা একদম।
ভদ্র মহিলার কথা শেষ হতেই নুসরাত ঝটপট বলল, “তাহলে আমার সাথে আপনার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিন।
ভদ্র মহিলা আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” তা কেন দিব?
নুসরাত আবারো মনেকরিয়ে দিতে বলে ওঠে,
“এই না বললেন আমাকে কে বিয়ে করবে! তাহলে আপনার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিলেই দোষ বা কোথায়।
ভদ্র মহিলা চোখ মুখ কুঁচকে নিলেন। বিস্ময় মাখা কন্ঠে বললেন,” তাই বলে আমার ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিব?
নুসরাত মুখ দিয়ে শব্দ করল। নিরুদ্বেগ গলায়, নির্বিকার চিত্তে বলল,”সমস্যা কোথায়? পাত্রী হিসেবে আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ। ওই সামান্য কালো আর কথা একটু বেশি বলি।
ভদ্র মহিলা অবাক। কন্ঠ থেকে ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে অবকতা। বিরশ কন্ঠে জানতে চাইলেন,”একটু বেশি কথা বলো নাকি দ্বিগুণ বেশি?
নুসরাত হাসি মুখে বলল,
“ওই তো সামান্য এদিক সেদিক হলে দুটো কথাই বলি। যৌতুক চাইলে বলতে পারেন আন্টি, আমার বাপ আমার বিয়ের জন্য মোটা অংকের যৌতুক জমা করছে। আপনার ছেলে আমাকে বিয়ে করলে এই যৌতুকের টাকা আপনাকে দিবে।
ভদ্র মহিলা চকচকে চোখে জানতে চাইলেন,
” কত টাকা?
নুসরাত কন্ঠ স্বর নিচু করে নিল। অত্যাধিক সতর্কতার সহিত ভদ্র মহিলার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,”ওই ধরেন লাখ খানেক টাকা। এবার বলুন আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন?
ভদ্র মহিলা মাথা নাড়ালের হ্যাঁ ভঙ্গিতে। নুসরাত মেঝের দিকে ইশারা করে আক্ষেপ করে উঠল। ভদ্র মহিলাকে ওদিকে ইশারা করে বলে ওঠল,”আন্টি দেখুন তো আপনার কিছু একটা নিচে পড়েছে।
ভদ্র মহিলা নিচের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার আগে প্রশ্নাত্মক চাহনি নুসরাতের দিকে নিক্ষেপ করে বললেন,”কী?
নুসরাত মেঝে থেকে কিছু একটা তুলে দেওয়ার ভঙ্গি করে দু-হাত ভদ্র মহিলার মুখের সামনে তুলে ধরল। হাসতে হাসতে অস্পষ্ট সুরে বলল,”আপনার লাঞ্চিত, পচে যাওয়া চিন্তা ভাবনা পড়ে গিয়েছিল নিচে, আমি আবার তুলে দিচ্ছি।
নুসরাত ভদ্র মহিলার অপমানে থমথমে হওয়া মুখ দেখে হা হা করে হেসে উঠল। আড় চোখে মহিলার মুখ দেখল তারপর আবারো হাসল। সোফার উপর যেখানে বসেছিল সেখানে থাপ্পড় মেরে মেরে দাঁত কেলাল ভদ্র মহিলার গা জ্বালানোর জন্য।
নুসরাত বাড়ির বাহিরে বের হতেই সেখানে ভাবী আম্মা ভাবী আম্মা বলে মুখে ফেনা তুলে হাজির হলো আয়ান, তৌফ। তাদের পিছু পিছু সঙ্গ পঙ্গ নিয়ে হাজির হলো নাহিয়ান। নাহিয়ানকে হঠাৎ এমন ফ্যামেলি ফাংশনে উপস্থিত হতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ল নুসরাতের। এমনভাবে এসেছে যেনো দলবল নিয়ে সমাবেশে আসছে। যত্তসব গরীবস! কপাল কুঞ্চন করে চোখ তীক্ষ্ণ করে নুসরাত যখন নাহিয়ানকে দেখতে ব্যস্ত তখন নাহিয়ান এসে চেয়ার টেনে বসল নুসরাতের পাশে। নুসরাত স্টিল টেপ বের করে নাহিয়ানকে নির্দেশ দিয়ে বলে ওঠল,”গণে গণে তিন ফুট দূরত্বে বসুন পূর্ব পশ্চিম।
নাহিয়ান বিগলিত হেসে দূরে সরে বসল। জিজ্ঞেস করল,”আপনি কী হাতে স্টিল টেপ নিয়ে ঘুরছেন, আমি আসব বলে?
নুসরাত ঠোঁট উপরের দিকে তুলে অবজ্ঞা করল নাহিয়ানকে। সামনের দিকে চোখ রেখে বলে ওঠল,”আপনার মতো ছোটখাটো মাছির জন্য আমি অপেক্ষা করব, এটা ভাবনায় আনাই তো বিলাসিতা। নুসরাত নাছির কারোর জন্য অপেক্ষা করে না, তার জন্য সবাই অপেক্ষা করে।
নাহিয়ান অপমানিত হয়ে হাসল। মৃদু সুরে কোমলতার সহিত বলে ওঠল,”আপনার সূক্ষ্ম অপমানের প্রতিবা দেখে আমি আবার আপনার প্রেমে পড়ে গেলাম।
নুসরাত বলে ওঠল,
“এই তো আবার ছ্যাবলামো করে ফেললেন নাহিয়ান আবরার পশ্চিম। কথায় কথায় মানুষের প্রেমে উলটে পড়া আবার কী ধরণের ছোটলোকি কাজ?
নাহিয়ান নুসরাতের দিকে এগিয়ে বসতে নিবে, নুসরাত ঠুস করে ছুরি বের করে নিল। চোখা অংশ নাহিয়ানের দিকে তাক করে বলে ওঠল,” উঁহু, সামনে আগাবেন না, পেট ফুটো করে দিব।
নাহিয়ান নিজের জায়গায় বসে গেল। নুসরাতের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে ওঠল,”আপনার কথা শুনলে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।
নুসরাত উপহাস করে হেসে উঠল অধরের কোণ উচিয়ে। নাহিয়ানকে ঠাট্টা করে, ব্যগ্রতার সহিত বলল,”মাল পানি খেয়ে এসেছেন? আমার কথা শুনে আবার কোন ষুদানির ফুত মুগ্ধ হবে?
নুসরাত পরের মুহুর্তে ঠোঁটে হাত চেপে ধরল। তওবা কেটে নিয়ে বলে,”অহ স্লিপ অফ ঠ্যাং করে গালি দিয়ে দিয়েছি। তা বিনা দাওয়াতে কী মেহেদি অনুষ্ঠানে চলে এসেছেন?
নাহিয়ান হাসল। সাদা পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে নিয়ে নুসরাতের দিকে তাকাল। রাশভারী গলায় আওড়াল,”আপনার বড় চাচা দাওয়াত দিয়েছেন আমাকে।
নুসরাত বাহবা দিল নাহিয়ানকে। বলল,
“বাহ! আমার বাপ চাচাকে ও দেখি চিনেন?
নাহিয়ান দাম্ভিকতা নিয়ে বলে ওঠল,
” আপনাকেও চিনি, আপনার থেকে বেশি।
নুসরাত কৌতুক করে হেসে উঠল। হতবিহ্বল হওয়ার ভান করে বলল,”কথাটা এমন হয়ে গেল না, মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। আমি নুসরাত নাছিরকে আপনি আমার থেকে বেশি চিনেন, এটা একটু বেশি ধাপ্পাবাজি হয়ে গেল না।
নাহিয়ান অন্তর্ভেদী দৃষ্টি নিবিষ্ট করল মেয়েলি মুখটায়। হাত বাড়িয়ে নোজ রিং স্পর্শ করতে যাবে নুসরাত ছুরির ধারালো প্রান্ত বের করে দেখাল। ইশারা করল হাত সরিয়ে নিতে। নাহিয়ান হাত সরিয়ে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,”আমার কথার সাথে মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি এমন প্রবাদ উপলব্ধি হলো কেন আপনার কাছে?
নুসরাত এক ভ্রু সামান্য উচিয়ে নিয়ে বলল,
“একদম সস্তা ফ্লার্ট করেন আপনি নাহিয়ান আবরার পশ্চিম।
নাহিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসল। বলল,
” জীবনে প্রথমবারের মতো আপনি আমাকে নার্ভাস করে ফেলেছেন নুসরাত নাছির।
নুসরাত দু-হাতে বুক চেপে ধরল। বিগলিত হয়ে উলটে পড়ে যাওয়ার মতো করে বলল,”আমি ধন্য হয়ে গেলাম আপনাকে নার্ভাস করতে পেরে। এই খুশিতে আপনি গলায় দড়ি দিয়ে মরে যান।
নাহিয়ান অবাক কন্ঠে বলল,
“আমি কোন খুশিতে গলায় দড়ি দিব?
” এই যে আমি ধন্য হলাম আপনার প্রতি, এই খুশিতে।
নাহিয়ান হু হু করে হেসে উঠল। নুসরাত নাহিয়ানকে ভেঙ্গিয়ে হে হে করে হাসল। ঠোঁট কুঞ্চন করে বলে ওঠে,”যত্তসব!
দূরে দাঁড়ানো আরশ দশ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে এসব লক্ষ করছিল। মাহাদি পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলাচ্ছে। সাথে ফিসফিস করে কানের গোড়ায় বকবক করছে,”এবার পাখি উড়াল দিবে। এই ব্যাটা হ্যান্ডুসাম তোর পাখি খাঁচা থেকে নিয়া পালাইবে। তারপর তুই বাপ্পারাজ হয়ে হাহাকার করবি আর গাইবি, প্রেমের সমাধি ভেঙে, পাখি শিকল ছিঁড়ে, উড়ে যায় উড়ে যায়।
আরশ মাহাদির দিকে তাকাতেই সে গলা খাঁকারি দিল। আরশের ক্ষোভ পূর্ণ চোখের দিকে নিজের চোখ নিবিষ্ট করে বেসুরা গলায় গেয়ে উঠল,”তুমি কাছে তব যে দূরে, কতো যে দূরে ওরে বঁধূয়া,
পরান যায় জ্বলিয়া রে,
পরান যায় জ্বলিয়া রে,
পরান যায় জ্বলিয়া রে।
আরশ দাঁতের পাটি চেপে আওড়াল,
“মাহাদি গাছের সাথে বেঁধে পেটাব।
মাহাদি আঙুল ঠোঁটে রেখে চুপ করে গেল। অতঃপর আবারো জ্বালানোর জন্য মুচকি মুচকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে আরশের কানের কাছে বিড়বিড়িয়ে বলল,” বেচারিকে এমন করে দেখছিস কেন?
আরশের কাঠখোট্টা জবাব,
“আমার বউ আমি যেভাবে ইচ্ছে দেখব।
মাহাদি সহমত পোষণ করে বলল,
” তা তো বটেই, তা তো বটেই। কিন্তু এমন দেখা দিস না,পরে দেখা গেল বউকে চোখ দিয়ে প্রেগন্যান্ট বানিয়ে ফেলেছিস।
আরশের দৃষ্টি ওখানেই স্থির আছে। সে ওইদিকে চোখ রেখে নিষ্প্রাণ গলায় বলে ওঠল,”আমার বউকে আমি চোখ দিয়ে প্রেগন্যান্ট করি আর যাই দিয়েই করি তোর সমস্যা টা কী?
মাহাদি বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হলো। সে ভাষণ দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে ওঠল,”আমি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক। একজন সচেতন নাগরিকের কাজ সবসময় সচেতন থাকা এবং নিজের আশপাশ সচেতন রাখা। একবার যদি তুই বউকে চোখ দিয়ে প্রেগন্যান্ট করে ফেলিস তাহলে দেশে জনগণের অভাব হবে না। তাই চোখ সরা বেচারির থেকে। একজন সচেতন নাগরিক হওয়ার স্বার্থেও এটা আমার কর্তব্য ও দায়িত্ব।
আরশ কঠোর সুরে বলল,
“ওকে নিয়ে তোর এত মাথা ব্যথা করতে হবে না, নিজের রাস্তা মাপ।
মাহাদি দমে যাওয়ার পাত্র না। সে বলল,
” একটা মানুষ কী পরিমাণ নির্লজ্জ হলে গত এক ঘন্টা যাবত একটা মেয়েকে চোখ দিয়ে ইভটিজিং করে!
আরশ মাহাদির দিকে চেয়ে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,
“আমার বউ আমি চোখ দিয়ে ইভটিজিং করি না গিলে খাই তোর তাতে কী?
” আমারই তো সবকিছু। তোর বাচ্চারা হাগু মুতু করলে ওসব সাফ সফা তো আমাকেই করতে হবে।
আরশ নিরেট সুরে বলে ওঠল,
“তোকে আমি আমার বাচ্চাদের বোয়া হিসেবেই রাখব না।
মাহাদি বলে ওঠল,
“আমি বেবি সিটার হয়ে ঢুকে যাব।
” আমি তোকে আমার বাচ্চার জুতো পরিস্কারের জন্য ও রাখব না।
মাহাদি এবার অগ্নিমানবের মতো ফুলে উঠল। এসব তো মানা যায় না। এত অপমান! এত অপমান! বন্ধু বলে কি সবসময় এমন অপমান করবে! সে রাগী সুরে হিসহিসিয়ে আরশকে অভিশাপ দিল,”আমি তোকে অভিশাপ দিলাম তোর বউ তোকে উঠতে বসতে খাটাবে। এমন কী তুই ঘুমালেও তোকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিবে।
আরশ হুংকার দিয়ে উঠল। মাহাদির কলার দু-হাতে চেপে ধরতে যাবে সে পালাল। যেতে যেতে আরশের বলা একটা কথা ভেঙ্গিয়ে ভেঙ্গিয়ে আওড়াতে ভুলল না। সেটা হলো,”ও আমার দায়িত্ব, এর বেশি কিছু না। হা হা..!
মাহাদি অন্যদিকে চলে গেল। নুসরাত উঠে দাঁড়াতেই কাপড়ের সাথে পা পেঁচিয়ে গেল। উলটে পড়ে যেতে নিবে নাহিয়ান হাত বাড়িয়ে ধরার পূর্বেই নুসরাত নিজেকে সামলে দু লাফে দূরে সরে গেল। চোখ তুলে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,”আপনার স্বভাবটা একটু বেশি মেয়ে মানুষ ছুঁইছুঁই, ধরিধরি এমন না? একদম বদমায়েশদের মতো!
নাহিয়ান কপালের ভাঁজ উপরে তুলে নুসরাতকে বাহবা দিল। বলল,”আমি বারবার আপনার অপমান করার স্কিল দেখে মুগ্ধ হচ্ছি।
নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। কটাক্ষ করে বলে ওঠল,”মুরগী ধরার আগে শিয়ালেরা মুরগীর পেছন দেখেও মুগ্ধ হয়।। ধরার পর সাদা লুম দেখে ও নাক ছিটকায়।
নাহিয়ান অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি কী আমায় ইন-ডায়েরেক্টলি শিয়াল বললেন নুসরাত?
নুসরাত সততার সহিত উত্তর দিল,
” আমি আপনাকে ডায়েরেক্টলি শিয়াল বলছি। এবার সামনে থেকে সরেন। উৎ পেতে বসে থাকলেও আমাকে ধরতে পারবেন না।
নাহিয়ান চূড়ান্ত হতবাক হয়ে গেল। বিড়বিড় করে কিছু একটা আওড়াল। নুসরাত সেই সুযোগে কেটে পড়ল। বদমায়েশের মতো তার পিছে পড়ে আছে। খবিশটা।
এর মধ্যে সাউন্ড সিস্টেমে ডিজে গান বাজিতে লাগিল। স্টেজের উপরে এসে দলবল নিয়ে হাজির হলো নুসরাতের খালাতো ভাই মামাতো ভাইয়েরা। নিভে যাওয়া আলোর সামান্য রশ্মি তাদের উপর পড়তেই সকলের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হলো তারা। নিজেদের মতো গান বাজিয়ে তারা তাদের মতো হেলেদুলে নাচতে শুরু করল। ক্যামেরা ম্যানরা ড্রুনের সাহায্যে ভিডিও ক্যাপচার করছে। একেকজন একেকপাশ থেকে বিভিন্ন এঙ্গেলে ভিডিও করতে ব্যস্ত। ধীরে ধীরে স্টেজ থেকে সরে গেল তারা। তাদের পেছন থেকে বেরিয়ে আসলো জায়িন। এটা দেখে সবাই যতটা অবাক হয়েছে তার তুলনায় বেশি অবাক হলো যখন দেখল জায়িন ইসরাতের হাত চেপে ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছে ড্রান্স এড়িয়ায়। একহাতে কোমর চেপে ধরে ঘুরাতে লাগল ইসরাতকে। শীতল সুরে গান বাজছে সাউন্ড সিস্টেমে, সারা রাত ভোর,
চোখের ভেতর,
স্বপ্নে তোমার আনাগোনা!
নেমে আসে ভোর,
থাকে তবু ঘোর,
হাওয়ায় হাওয়ায় জানা শোনা!
জায়িন একহাতে তাকে গোল গোল ঘুরাতে লাগল। সাউন্ড সিস্টেমে তার স্বরে বাজছে,তুমি দেখা দিলে তাই, মনে জাগে প্রেম প্রেম কল্পনা
আমি তোমার হতে চাই
এটা মিথ্যে কোন গল্প না
সকলেই সকলের পার্টনার চুস করে ডান্স এড়িয়ায় গিয়ে নিজেদের কাপল হিসেবে নিজেদের জায়গা দখল করে নিল। নাহিয়ান নুসরাতকে খুঁজে খুঁজে এসে পেল এক কোণোয় দাঁড়িয়ে নীরবে সবকিছু পরিলক্ষিত করছে। নাহিয়ান এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠল,”উইল ইউ বি মাই ডান্স পার্টনার?
নুসরাত চুপচাপ নাহিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর তার বাড়ানো হাত আলতো হাতে চেপে ধরল। মেকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে ওঠল,”হুয়াই নট?
ইরহাম মমোকে নিজের পার্টনার চুস করেছে। অনিকা আরশকে টেনে নিয়ে এসেছে। আর মাহাদি সৌরভিকে। কনে আর বরকে মাঝে রেখে ধীরে ধীরে সবাই গা দুলাতে লাগল। সাউন্ড সিস্টেমে তার স্বরে গান বাজছে, ooo zalimaaaa…….
নাহিয়ান ঝুঁকে নুসরাতের হাতে চুমু খেতে নিল নুসরাত নাক কুঞ্চিত করে বলল,”হাতে ঠোঁটের স্পর্শ লাগলে, ঠোঁট সিলাই করে দিব পূর্ব পশ্চিম।
নাহিয়ান চুপসানো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। একহাতে নুসরাতের হাত চেপে গোল গোল ঘোরাতে ঘোরাতে বলে ওঠল,”আপনার ব্যবহার ভালো না।
নুসরাত বলল,
“সেটা সবাই জানে। এটা কী আপনি প্রথম জানলেন?
নাহিয়ান নুসরাতের কোমর চেপে ধরে নিচের দিকে ঝুঁকে আসলো। নুসরাত আর নাহিয়ানের নাকের মধ্যে ইঞ্চি পরিমাণ ফারাক রইল। নাহিয়ান আরেকটু ঝুঁকে আসতেই নুসরাত নিজের মুখ সরিয়ে নিল। এর মধ্যে পার্টনার বদলানোর স্টেপ আসলো। নাহিয়ান নুসরাতের কোমর চেপে ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে হাত ছেড়ে দিতেই সে অন্যপাশে চলে গেল। মুখ তুলে তাকাতেই খেপাটে নয়নে তাকে অবলোকন করা আরশকে অক্ষিপটে ধরা পড়ল। সে একহাতে নুসরাতের কোমরের কাছে চেপে ধরল। অন্যাহাতে নুসরাতের হাত মুচড়ে ধরে হিসহিসিয়ে শুধাল,” নাচানাচি করার খুব শখ?
নুসরাত এক ভ্রু উচিয়ে তাকাল। আরশ নুসরাতের কোমর চেপে ধরে নিজের বাহুতে তুলে নিল। তারপর গোল গোল ঘোরাতে ঘোরাতে শুধাল,”ওই লোক তোকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেছে?
নুসরাত কথা বলল না। আরশ নুসরাতের হাঁটুর নিচ দিয়ে হাত দিয়ে পাজো কোলে তুলে নিল। বলল,”গলা পেঁচিয়ে ধর।
নুসরাত বিনা বাক্যে গলায় হাত পেঁচিয়ে ধরল। আরশ ক্রোধপূর্ণ কণ্ঠে বলল,”সময় মতো তোমাকে বোঝাব আরশ হেলাল কী জিনিস!
নুসরাত মুখ খুলল এবার। বলল,
“আপনি কী জিনিস তা আমি খুব ভালো করে জানি।
আরশ চোখের আকার প্রকট করে অবাক হওয়ার ভান করল। অবিশ্বাস্য কন্ঠে আওড়াল,”অহ রিয়েলি, নুসরাত নাছির?
নুসরাত আরশকে ভেঙ্গিয়ে উত্তর দিল,
“অবসিয়েলি আরশ হেলাল।
আরশ নুসরাতের চোখের দিকে চোখ রেখে হাত শীতিল করে দিল। ধুপ করে ছেড়ে দিল নুসরাতকে। আকস্মিক ছেড়ে দেওয়ায় নুসরাত নিজেকে সামলাতে পারল না, সারা শরীর নিয়ে উল্টে পড়ে কোমরে ব্যথা পেল। হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে কঁকিয়ে উঠল ব্যথাতুর সুরে। ততক্ষণে সকলে নাচ থামিয়ে এসে জমায়িত হয়েছে সেখানে। আরশ এক হাঁটু গেড়ে বসল নুসরাতের পাশে। চোখ মুখে মেকি দুঃখ ফুটিয়ে তুলে শুধাল,”পায়ে ব্যথা পেয়েছেন মিসেস?
নুসরাত আরশের চোখে চোখ রেখে, কিড়মিড়িয়ে উত্তর দিল,” হু!
আরশের যেন বুক ফেটে যাবে দুঃখে। নিস্পৃহ ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,”হাঁটতে পারবেন?
নুসরাত দাঁতের পাটি চেপে কিড়মিড়িয়ে বলে ওঠল,
“জ্বি না।
আরশ এমনি জানতে চাইল,
” আমার কাঁধে ভর দিয়ে যাবেন?
সে শিওর নুসরাত তার সাথে যাবে না। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নুসরাত বলতে লাগল,”আপনি চাইলে কোলে তুলে নিয়ে যেতে পারেন, আমার কোনো সমস্যা নেই।
অনিকা নুসরাত পড়ে যেতে দেখে দূরে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছিল। নুসরাত ও অনিকার মতো দাঁত বের করে সকলের অগোচরে হাসল। তারপর অনিকাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আরশের গলা দু-হাতে পেঁচিয়ে ধরল। আরশ একহাত নুসরাতের পিঠে অন্যহাত উরুর নিচে চেপে ধরে পাজো কোলে তুলে নিল। নুসরাতকে নিয়ে সামনের দিকে বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে নিবে সে সারা শরীরের ভার ছেড়ে দিল তার উপর। এমন ভান করল এই অজ্ঞান হয়ে যাবে। নিভু নিভু চোখে আরশের পানে তাকাল। অতঃপর চোখের পাতা বন্ধ করে নেওয়ার আগে অনিকার দিকে চেয়ে কুটিল হাসি হেসে চোখ টিপ দিল। বিড়বিড় করল,”হেসে নে শালী, হেসে নে, এরপর শুধুই কাঁদবি। আমি নিজ দায়িত্বে তোকে কাঁদাব।
রেগে হনহনিয়ে হেঁটে সৈয়দ বাড়ির দিকে যাচ্ছে অনিকা। চোখের কাছে পানি বারবার জমা হচ্ছে আর তা বারবার মুছছে সে। দ্রুত পায়ে হাঁটায় সামনে থেকে হেঁটে আসা জলজ্যান্ত এক লোককে দেখতে পেল না অনিকা। অন্ধের মতো হাঁটতে গিয়ে লোকটার সাথে ধাক্কা লাগল তার। চোখ তুলে উপরে তাকাতেই ঝাপসা দেখল সবকিছু। কানের কাছ বয়ে কিছু বিশ্রী শব্দ চলে গেল। লোকটা বলছে,”কষ্টে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে, চোখে টইটম্বুর পানির অস্তিত্ব রেখে, উষ্টা খেয়ে মাটিতে না পড়ে, বিড়ালের মতো আমার গায়ে এসে পড়লে, কে তুমি এই যে কানা নারী!
অনিকার মেজাজ খিঁচে ছিল। এমন অদ্ভুত কবিতা শুনে তা আরো খিঁচে গেল। সে ক্রোধের দাবানলে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া কন্ঠে বিড়বিড়িয়ে উচ্চারণ করল,”এই বিলাতি বিড়াল আবার কোথা থেকে টপকাল। যত্তসব ফাউল মানুষ জনের বসবাস এই দেশে।
বিড়বিড় করে বললেও দু-ফুট দূরত্বে দাঁড়ানো আয়মান সব স্পষ্ট শুনলো।৷ এত বড় অপমান তার পুরুষ হৃদয় নিতে পারল না। সে বলে ওঠল,”নিজেকে কী মনে করো তুমি, প্রিন্সেস ডায়ানা! আমি ফাউল হলে তুমি ফাজিল।
অনিকা এক হাত তুলে তেড়ে গেল আয়মানের দিকে। প্রশস্থ গলায় চ্যাঁচাল,”এই যে মুখ বন্ধ করুন বিলাতিয়ানা বিড়াল!
আয়মান বলে ওঠল,
“আমি বিড়াল হলে তুমি বিড়ালের মেজাজ খিঁচানো সরদারনী।
অনিকা চোখ বড় বড় করে বলে ওঠল,
” আপনার এত বড় সাহস, আমাকে বিড়ালের সরদারনী বলছেন?
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩২
আয়মান অনিকাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যতে পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে ওঠল,”আপনাকে কুকুরের সরদারনী বলা উচিত ছিল, আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দিন!
অনিকা পিছন থেকে আয়মানের যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। চ্যাঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,”আমি কুকুরের সরদারনী?
আয়মান সামনের দিকে পা চালিয়ে যেতে থাকল। পিছু ফিরে চাইল না। ওদিকে যেতে যেতে আওড়াল,”অবশ্যই! কিছু বলার আগেই কামড় মারার জন্য তেড়ে আসেন মানুষের দিকে। আপনার সাথে কুকুরের সরদারনী নামটা বেশ মিলছে। কুকুরের সরদারনী, কুকুরের সরদারনী, কুকুরের সরদারনী আপনি।
এর পরপরই গলা ফাটানো মেয়েলি চিকন গলার চিৎকার আসলো,”ভিক্টওওওওওওররররররররর..!