প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৬

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৬
জান্নাত নুসরাত

সকাল এগারোটা। ঘড়ির কাটা টিকটিক করে চলছে নিজ গতিতে। শেওলা পড়া এক জেলের ভেতর রাখা হয়েছে নুসরাত, ইসরাত, ইরহাম, আহান, মমো, সৌরভিকে। লোহার শিকলের আড়ালে, আড়ালে বললে ভুল হবে বাদর যেমন গাছের ডাল ধরে বসে থাকে তেমনি নুসরাত ভেটকি মাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এক কোণে মাথায় হাত রেখে ইসরাত বসে আছে। মুখের স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। অন্যপাশে ইরহাম আর আহান বসে আছে। সৌরভি আর মমোর তখনো জ্ঞান ফিরেনি। সবাই উদ্বিগ্ন বটে তাদের নিয়ে। সাতঘন্টার মতো হয়ে যাচ্ছে এদের জ্ঞান না ফিরায় ইমারজেন্সি ডাক্তারের নাম্বারে কল দিতে যাবে মৃন্ময়, এমন মুহুর্তে নুসরাত শুধাল,”কাকে ফোন দিচ্ছেন?
মৃন্ময় তুষার কানের কাছে মোবাইল রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলল,”ডাক্তারকে।

নুসরাত মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ডাক্তারকে দূরে উড়িয়ে দিল। মুখে চ ক্রান্ত শব্দ বের করে বলল,”কী হেডার ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছেন, এখানেই তো আপনাদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে।
মৃন্ময় কানের কাছে ধরে রাখা ফোন নামিয়ে নিল। ঘাড় বাঁকিয়ে নুসরাতের পানে চেয়ে অবাক সুরে জানতে চাইল,”আপনাদের মধ্যে কে ডাক্তার?
নুসরাত নিজের গায়ের টি-শার্ট উপরের দিকে তুলে ভাবসাব নিয়ে বলে ওঠল,”আমি ডাক্তার।
মৃন্ময় শব্দ করে শ্বাস ফেলল। নুসরাতকে হেও করে বলে ওঠল,”ডাক্তারির কোনো কিছু জানেন?
নুসরাত মাথা নাড়াল। বলে ওঠল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এককালে আমি সাইন্সের ছাত্রী ছিলাম। নাপা এক্সাট্রা এদের ধরে ধরে খাওয়ালেই এরা একদম চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
মৃন্ময় ভ্রু তুলে বাহবা দিল। ঠোঁট গোলাকৃতি করে ও আকার করল। ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে ওঠল,”গত তিনদিন যাবত আমার মাথা ব্যথা, প্লিজ মহামান্য ডাক্তার নুসরাত নাছির আমাকে প্রেসক্রাইব করুন।
নুসরাত দু-হাতের তালুতে শক্ত করে লোহার শিক চেপে ধরল। হেলে দুলে বলে ওঠল,”দিনে চারটা করে নাপা এক্সাট্রা খাবেন, আর দেখবেন একদম সাথে সাথে সুস্থ হয়ে যাবেন।
হাবিলদার নুসরাতের কথা বিশ্বাস করে নিলেন। নিজের টেবিল ছেড়ে দৌড়ে এসে শুধালেন,”আমার হাড়ে ব্যথা কয়েকদিন যাবত কোন ওষুধ খাওয়া উচিত?
নুসরাত আবারো হেলেদুলে বলে ওঠল,

“একসাথে পাঁচটা নাপা এক্সাট্রা, সাথে দুটো প্যারাসিটামল, আর ছয়টা এইচ টেবলেট খেয়ে নিবেন, তাহলে দেখবেন একদম হাড়ের ব্যথা সেড়ে যাবে।
মৃন্ময় হাবিলদারের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাল। সেই তাকানোতে রুহ কেঁপে ওঠল ভদ্রলোকের। আলগোছে চলে গেলেন নিজের জায়গায়। মৃন্ময় একই দৃষ্টি নুসরাতের দিকে ছুঁড়ে ফেলল। নুসরাত থোড়াই পাত্তা দিল, সে হেলেদুলে গিয়ে মমোর পাশে বসল। স্বাস্থ্যবান শরীরে চামড়া চেপে ধরে লুকিয়ে চিমটি কাটল। পরপর নিজের জুতো মমোর মুখের সামনে তুলে ধরে বলল,”শালী ভঙ্গ ধরে পড়ে আছে।
পরপর ঠোঁট হুঁশবিহীন মমোর কানের কাছে নামিয়ে নিয়ে জানতে চাইল,“ওই শালী বাঁইচা আছস নাকি টপকাই গেছস?

মৃন্ময় নুসরাতের এসব ডং দেখা বাদ দিয়ে কল দিল। অতঃপর ইমারজেন্সি ডাক্তার পাঠাতে বলল। ফোন রাখতেই ইরহাম উঠে এসে আকস্মিক মৃন্ময়কে শুধাল,”পানি আছে?
মৃন্ময় ঘাড় বাঁকিয়ে ছেলেটার দিকে তাকাল। না শোনার ভঙ্গি করে বলে ওঠল,”হু..!
ইরহাম আবারো কোমল কন্ঠে শুধাল,
“পানি পাওয়া যাবে?
মৃন্ময় মাথা নাড়িয়ে পানির বোতল এনে দিল। ইরহাম তা ইসরাতের হাতে দিয়ে বলল,” পানি ছিটা দিয়ে দেখো তো আপু জ্ঞান ফিরে নাকি!

ইসরাত উঠে দাঁড়াল নিষ্প্রাণহীন দেহ নিয়ে। এসে হাঁটু গেড়ে বসল মমোর কাছে। হাতে সামান্য পানি নিয়ে মমোর মুখের উপর ছিটা দিল। পরপর অনেকবার এমন করে দেওয়ার পর মমো চোখের চামড়া কুঞ্চন করল৷ নুসরাত ততক্ষণে বাদরের মতো লোহার শিক ধরে আবার ঝুলে পড়ছে। ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে বলে ওঠল,”একটা নাপা এক্সাট্রা খাওয়া ওই মেয়েকে।
ইসরাত দাঁতের পাটি চেপে মোটা মোটা চোখে করে ঘাড় ঘোরাল। চোয়াল শক্ত করে চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলে ওঠল,”কেন ইউ জাস্ট শাট আপ ফর ফাইভ মিনিট।

নুসরাত মাথা নাড়াল। শেষবারের মতো একবার মিনমিনিয়ে বলল,”নাপা এক্সাট্রাটা খাইয়ে দিলে ভালো হতো।
মৃন্ময় দু-হাতে নিজের মাথা চেপে ধরল। এর মধ্যে পুলিশের কাপড় পরিহিত মহিলা অফিসার এসে প্রবেশ করলেন হাজতে। বাহির থেকে গমগমে আওয়াজ ভদ্র মহিলা ভেসে আসলো,”শুনলাম বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া কিছু, বিটকেল, খারাপ, বদমায়েশ, ছেলে মেয়ে ধরে নিয়ে এসেছেন?
মৃন্ময় হাসার চেষ্টা করল সৌজন্যতা রক্ষার্থে। ভদ্রমহিলা এসেই থু করে মুখ থেকে এক দলা পিক ফেলে দিলেন৷ হাতের ঢান্ডাখানা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এসে তাকালেন নুসরাতের দিকে। ঘাড় বাঁকিয়ে সরাসরি জানতে চাইলেন,”পুলিশের লাঠির বারি কখনো পড়েছে পশ্চাৎদেশে?
নুসরাত তাচ্ছিল্য করে হু হু করে হেসে উঠল। কান খুঁচিয়ে বিস্ময়পূর্ণ কন্ঠে বলে ওঠল,”আপনি কী বলেছেন, ঠিক বুঝতে পারিনি…

সামান্য থেমে গেল। বুকের কাছে লাগানো কার্ডের দিকে চেয়ে টেনে টেনে বলে ওঠল,”শান্তা সরকার।
ভদ্রমহিলা সামান্য এগিয়ে আসলেন৷ সুপারি চাবানো জারী রেখে বলে ওঠলেন,“এখন যদি তোমার এই থোবড়ায় কেউ একটা থাপ্পড় মারে তাহলে তুমি কী করবে?
“যে থাপ্পড় মারবে, সে অনেক বেশি আমার হাতে পিটবে। কারোর ঋণ রাখা আমি বিশেষ পছন্দ করিনা, শোধবোধ করে দেই সাথে সাথে। মানবতার ফেরিওয়ালা তো তাই..!
সেই সময় মমোর হকচকানো গলার আওয়াজ পাওয়া গেল পেছন থেকে। সে আশেপাশে না তাকিয়ে আবারো মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে। চোখটুকু খুলে আশপাশ নজরটুকুও বুলায়নি। অস্ফুটে বলছে,”আপু ও আপু…!
আপু ও আপু বলে আর কোনো শব্দ বের করল না, নাই হয়ে গেল আহাজারি করে। ভেতরে ভেতরে গুমরে মরল। হু হু শব্দের কান্নার আওয়াজে বিরক্ত হয়ে আহান বলে ওঠল,”কী হইছে তোমার?
মমো হতবিহ্বল চোখ তুলে আহানের দিকে তাকাল। চোখে তখনো পানিতে টলমল করছে। হকচকানো কন্ঠে শুধাল,”মরিসনি তুই?

আহান একে মশার উৎপীড়নে বিরক্ত। দুই মমোর ন্যাকি কান্নায়, আর এখন তাকে জিজ্ঞেস করছে সে মরেনি! চিড়বিড় করে ওঠে বলল,”তো তোমার মতামতে কী মরে যাব! আমরা বেঁচে আছি বলে তোমার কষ্ট হচ্ছে! একে তো পশ্চাৎদেশে মশার কামড়ে জ্বলে যাচ্ছে দ্বিতীয়ত তোমার কান্না, আমি জাস্ট বিরক্ত হয়ে গিয়েছি, আর নিতে পারছি না ভাই..! দু-মিনিটের জন্য তুমি অফ যাও..!
মমো আবারো হু হু করে কেঁদে ওঠল। শান্তা সরকার ভদ্র মুখ করে পালালেন। মনে মনে বাহবা দিলেন মৃন্ময় সরকারের ধৈর্য শক্তি আছে বলে।। এমন পাখির বাসার সাথে থাকছেন কীভাবে ভদ্রলোক।

নাছির সাহেব মোবাইল দেখা শেষে হেলেদুলে রিমোর্ট হাতে নিয়ে সামনে রাখা টিভিটা অন করলেন। কারোর চোখ রাঙানো পাত্তা না দিয়ে খুঁজে খুজে দিয়ে সংবাদ চলছে যে চ্যানেলে ওইটা চালালেন। তখনো শিরোনাম দেখেননি তিনি। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের পানে চেয়ে থেকে আক্ষেপ মিশ্রিত সুরে বললেন,”কোন বাপের জান আগুনে পুড়ছে এক আল্লাহ ভালো জানে..!

নাছির সাহেবের গাড়ির প্রতি এমন হাপিত্যেশ দেখে ড্রয়িং রুমের সবাই থমকে গেলেন। তাদের বাচ্চাগুলো নেই, আর উনি আছেন গাড়ি নিয়ে! এই লোক কোন ধাতুর তৈরি, এর উত্তর কেউই খুঁজে পেলেন না। নাছির সাহেবের দৃষ্টি তখনো সামনের স্ক্রিনে স্থির, কোনো হেরফের হওয়ার সম্ভবনা নেই। হঠাৎ নাছির সাহেবের চোখ গুলো ছোট ছোট হয়ে আসলো। ঠোঁটের ফাঁক গলে মিনমিনিয়ে অস্ফুটে সুরে বের হলো,”গাড়িটা দেখে, আমার গাড়ির মতোই তো মনে হচ্ছে..!

তখনই উপরে চলতে থাকা শিরোনামে চোখ পড়ল। সেখানে মোটা মোটা অক্ষরে লিখা, “বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে ল্যাম্পপোস্টের সাথে ধাক্কা, সাথে ইঞ্চিন বক্স গরম হয়ে গাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছে।
এরপর এক ভদ্রমহিলা টিভির সামনে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে দাঁড়ালেন। প্রফেশনাল কন্ঠে বলে ওঠলেন,”গাড়ির রেজিস্ট্রার হতে তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িটি সৈয়দ চয়েসের মালিক সৈয়দ নাছির উদ্দিনের।
এইটুকু কথা বলতেই নাছির সাহেব বুক ধুক করে উঠল। সামনের স্ক্রিনে দেওয়া ভিডিও এ অন্য কারোর নয়, উনার নিজের গাড়ি পুড়ছে এটা শোনার পর বুকে দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় বারের মতো মোচড় দিল। একহাতে বুক চেপে ধরে, মুখ দিয়েহু হু হু শব্দ উচ্চারণ করলেন।। বলে ওঠলেন,” আমি জানতাম, আমি জানতাম, এরা আমার গাড়িটা উড়িয়ে ফেলবে। দেখেছ আমার কথা একদম মিলে গিয়েছে..! আমার গাড়ি..!
পরপর ভদ্র মহিলা বলে ওঠলেন,

“গাড়িতে অবস্থান করা লোক সম্পর্কে এখনো কোনোকিছু জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে গাড়ির ভেতর আগুনে পুড়ে তাদের দেহ ছাই হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে। পরবর্তী কী হচ্ছে জানতে চাইলে আমাদের সাথে থাকুন, চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলে।

ভদ্রমহিলার কথা শেষ হতেই এইচডি ডিসপ্লে বিশিষ্ট টিভির স্ক্রিনে এসে বারি খেল কাচের গ্লাস। নিমেষে তা ভেঙে গুড়িয়ে গেল নিচে। কারোর মুখে টু শব্দটি নেই, হয়তো কান্না করার জন্য যে শব্দ উচ্চারণ করতে হয় তা ও ভুলে গেছেন তারা। হেলাল সাহেব উঠে দাঁড়াতে গিয়ে অনুভূত হলো নিজের পায়ের নিচের মেঝে কেঁপে উঠছে। শোহেব সাহেব আর সোহেদ সাহেবের অবস্থা নাজেহাল। এক হাতে বুক চেপে ধরে উঠে দাঁড়ালেন তারা ও ভাইয়ের সাথে। চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে। হাঁটতে গিয়ে ভীমড়ে খেয়ে পড়লেন দু-য়েকবার। হেলাল সাহেব নিজের আবেগকে গা ঝাড়া দিয়ে ফেলে হাঁটা ধরলেন। কঠোর কন্ঠে বলে ওঠলেন,”কোনো কিছু না জেনে উল্টোপাল্টা ভাবাই হলো তোমাদের কাজ। এখনো কোনো কিছু পরিস্কার হয়নি..! গাড়িতে যে ওরা ছিল, তার নিশ্চয়তা কী..!
ধুপধাপ পায়ে বের হয়ে গেলেন নাছির মঞ্জিল হতে। সাথে নিয়ে গেলেন শোহেব সোহেদকে। অর্ধেক রাস্তা থেকে ফিরে আসলেন বাড়িতে। নাছির সাহেবকে চোখ রাঙিয়ে ধমকে ধামকে বললেন,”চুপচাপ আয়..! হাই হুতাশ করতে বসে গেছে।

জায়িন নিজের বুকের শার্ট চেপে ধরে রাখল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলাল। নিচের দিকে স্থির রাখা চোখ তুলে তাকাতেই দেখা গেল অক্ষিপটে ভেসে ওঠা টানটান শিরা। ঢিপঢিপ করে চলতে থাকা নরম মাংস পিন্ডে আঘাত হানল নিশ্চুপে। পরপর উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠল,”ওদের কিছু হবে না চল আরশ।
জায়িন নিজের বাঁ-পাশে তাকাল না নেই আরশ! ডান-পাশে, সামনে এমনকি পেছনে তাকাল কোথাও নেই সে! প্রশ্ন জাগল আরশ কোথায়! চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ অবলোকন করল। লিপি বেগম কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,”আরশ চলে গিয়েছে।

জায়িন ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রইল। কোনো প্রশ্ন ছাড়াই নিজেও দৌড়াল বাড়ির বাহিরে। মনের ভেতর চাপা প্রশ্নের সঞ্চার হলো, আদৌও কী আরশ ঠিক আছে..! সৈয়দ বাড়ির গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করল সএ। একহাতে হুইল ঘুরিয়ে অন্যহাতে ফোন দিল মাহাদির নাম্বারে। তখন মাহাদিকে দেখেনি ড্রয়িং রুমে। নিশ্চয়ই আরশের সাথে গিয়েছে। প্রথমবারেই অপাশের ব্যক্তি কল পিক করল। জায়িনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে ওঠল,”ভাই, ভাই বাঁচাও, আজ মনে হয় এই পৃথিবীর বুকে আমার শেষ দিন।

বাতাসের শো শো শব্দ আসছে আশপাশ হতে৷ মাহাদি গাড়ির সাথে প্রায় ঝিমিয়ে বসা। আরশের চোখে মুখে কঠোরতার ভাব। একহাতে গাড়ির হুইলে চেপে আছে, অন্যহাতে নিজের কপালে ঘষছে। ঠোঁট টিপে কিছু একটা বিড়বিড় করছে। এর ভেতর থেকে মাহাদির সামান্য কথা কানে আসলো,”কোন সাহসে তুই এই রাতে বের হয়েছিস? বেয়াদবের বাচ্চা হাতের কাছে পেয়ে যাই থাপড়ে গাল লাল করে দিব!
মাহাদি দু-পা সিটে তুলে বসা ছিল, নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,”ভাই , আরশ পাগল হয়ে গিয়েছে, উল্টাপাল্টা কথা বলছে।
জায়িন শুধু বলল,

“লোকেশন পাঠা আমাকে..!
তারপর ফোন রেখে দিল। মাহাদি ঠোঁট চেপে আরশকে মিনমিনিয়ে বলে ওঠল,”ভাই তুই মরার হলে একা মর গিয়ে, আমাকে প্লিজ নামিয়ে দেয়। আমি এখনো কুমার, বিয়েটা পর্যন্ত করিনি। এই অসময়ে মরে গেলে, আমার বেচারা রুহ বিয়ের জন্য আহাজারি করবে।
আরশ দ্রুতগতিতে চালানো গাড়ির বেগ আরো বাড়িয়ে দিল৷ মাহাদি সামনের দিকে চেয়ে আঁতকে উঠে বলল,”এ ভাই, সিগনাল ভাঙিস না, পুলিশ কেস হয়ে যাবে।
কার কথা কে শুনে এই কথা শেষ হতেই গাড়ির বেগ বৃদ্ধি পেল আরো বেশি। বেপরোয়া গতিতে গাড়িটা চলাতে মনে হলো হাওয়ায় উড়ছে। মাহাদি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল,”ভাই আমাকে নামিয়ে দিয়ে তুই যেখানে ইচ্ছে সেখানে যা। যদি ইচ্ছে হয় তোর বউয়ের কাছে পৌঁছে যা, আমি থামাব না।
আরশের মুখ কঠিন। ড্রাইভিং হুইলে এক হাত রেখে মাহাদির দিকে চাইল। দাঁতের কপাটি চেপে কড়মড় শব্দে শুধাল,”ক্যান ইউ স্টপ দিজ ফাকিং ননসেন্স শিট?
মাহাদি হাহাকার করে উঠল। বলে ওঠল,

“দেখবি গিয়ে তোর বউয়ের কিছু হইনি ভাই। এমন করে গাড়ি চালালে আমাদের দু-জনেরই কিছু হয়ে যাবে।
আরশ শীতল চোখে তাকিয়ে হঠাৎ ব্রেক চেপে গাড়ি থামিয়ে দিল। মাঝরাস্তায় চলাচল রত গাড়ির মধ্যে থেকে মাহাদিকে হিসহিসিয়ে বলল,”গেট দ্যা ফাক আউট মাহাদি এহসান খান..!
মাহাদি গ্লাসের অপারে একবার চাইল। বড় বড় ট্রাক শো শো করে চলে যাচ্ছে তাদের গাড়ি পেরিয়ে। চোখ মুখে অগাধ বিরক্তি চেপে বলে ওঠল,”তুই কী আমাকে ইন্ডায়রেক্টলি এখানে ছেড়ে দিয়ে মরে যাওয়ার কথা বলছিস?
আরশ মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল। নিজের পরণের হুডির টুপি ফেলে দিয়ে শুধাল,”তুই যাবি নাকি আমি তোকে গাড়ি থেকে লাথি দিয়ে রাস্তায় ফেলব?
মাহাদি দু-পাশে মাথা নাড়াল। বলে ওঠল,

“ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মরার থেকে তোর সাথে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে টপকে যাওয়া ভালো। তাহলে একসাথে পরপারে দু-জন সিঙ্গেল কুমার পোলা থাকব।
আরশ মাহাদির বেহুদা কথায় কান দিল। গাড়ি স্টার্ট করে টান দিয়ে শো করে চলে গেল। মাহাদির মনে হলো এই সিট থেকে উলটে পড়ে নিজের মাথা ফাটিয়ে ফেলবে সে, তেমন কিছুই হলো না..! সিটবেল্ট বাঁধা থাকায় নিজের জায়গা থেকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ আগালো না। আরশের কানের কাছে গিয়ে আবারো শুরু করল নিজের কথার ঝুড়ি। কথা শেষ হলো যখন লক্ষ করল সামনে থেকে ধেয়ে আসছে একটা মোটা মালবাহী ট্রাক। আরশ সরু চোখে সেদিকে তাকিয়ে অ্যাক্সিলারেটর এ চাপ দিল। মাহাদি আতঙ্কিত চোখ মুখ নিয়ে রক্ত শূণ্য গলায় বলে ওঠল,”ভাই মারা পড়ব দু-জন গাড়ির গতি কমা, এটা বাংলাদেশ তোর প্যারিস না.. ভাই আমার দু-হাত দিয়ে ড্রাইভিং কর..!

আরশকে শোনানো গেল না কোনো কথা। মাহাদি গলার আওয়াজ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেল। পাগলের পাগলামি থামাতে বলে ওঠল,”আমি তুই মারা পড়লে এখানেই কিন্তু শেষ সবকিছু। ধর আরশ নুসরাত বেঁচে আছে, তুই আজ মরে গেলি, তুই মরার পরপর তোর বউ আরেকটা বিয়ে করে নিল তখন তুই কী করবি! রুহ হয়ে আশেপাশে ঘুরবি আর বলবি, কেন যে সেদিন গাড়ি ধাক্কা দিলাম..!

মাহাদি ভয়ার্ত চোখে সামনে চেয়ে রইল। মনে হলো এই শেষ দিন তাদের এই পৃথিবীতে। মনে মনে কালিমা পাঠ করে নিল। নিজের সকল জানা অজানা গুণাহ এর জন্য মাফ চেয়ে নিল আল্লাহর কাছে। এমনকি এই সময়ের ভেতর মাথায় টুপি পরে নিল। ঠোঁট টিপে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল, হয়তো শেষ সময়ের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে লাগল, তখনই শব্দ করে ট্রাকের সাথে গাড়ির ঘর্ষণ লেগে স্ফূলিঙ্গের সৃষ্টি হলো। ক্যাচক্যাচ আওয়াজ করে গাড়ির পাশ দিয়ে ধমকা হাওয়ার ন্যায় উড়ে গেল ট্রাক। মাহাদি চোখ খোলার পূর্বেই আরশের কন্ঠ কানে লাগল তার। আরশ কিড়মিড়িয়ে বলছে,”আমি এত সহজে নুসরাত নাছিরকে ছাড়ছি না। আমি মরব আর সে বিয়ে করবে, এমন অবস্থাই আমি কোনোদিন রাখব না, একদম রাখব না, মরার আগে সব ব্যবস্থা করে, তবেই মরব।
মাহাদি সহমত পোষণ করল। ভয়ের মাত্রা এত বেশি যে তার সারা শরীর কাঁপছে থরথর করে। আর এক সেকেন্ড হেরফের হলে তো আল্লাহর বাড়ি থাকতো তারা। শঙ্কিত চোখে আসমানের দিকে চেয়ে আক্ষেপ করল,”কোন পাগলে বলেছিল এই পাগলের সাথে আসতে..!

দূর্ঘটনার জায়গায় সবার আগে গিয়ে পৌঁছাল আরশ আর মাহাদি। উদভ্রান্তে মতো দৌড়ে যেতেই পুলিশ অফিসারেরা আরশকে দু-হাতে আটকে দিল।। কর্কশ কন্ঠে শুধাল,”এখানে কী চাই?
নিমেষেই আরশের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। মাহাদি তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে নমনীয় সুরে বলে ওঠল,”আমরা এক্সিডেন্ট হওয়া গাড়ি ও মানুষের পরিবারের লোক।
পুলিশ অফিসার সামান্য শীতিল হতেই, পরপর মাহাদি জানতে চাইল,”গাড়িতে কোনো লাশ পাওয়া গেছে?
আরশের অবস্থা খুবই নমনীয়, যেকোনো সময় মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে পারে৷ শরীর নড়বড়ে অবস্থা..! একহাতে নাকের মধ্যে সামান্য স্পর্শ করতেই রক্ত বের হয়ে আসলো। মাহাদি সন্তর্পণে সেদিকে চেয়ে বলে ওঠল,”টিস্যু দিয়ে নাক মুছে ফেল, কিছু হয়নি ওদের। এখন আবার প্যানিক অ্যাটাক করে বসিস না, তোকে টানার শক্তি আমার নেই।
আরশ হাতের তালু দিয়ে নাকের ডগা হতে রক্তটুকু মুছে ফেলল। পুলিশ অফিসার মাহাদির কথার উত্তর রয়ে সয়ে দিলেন।

”এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি গাড়ির ভেতরের যাত্রী বাহিরে কী বেরিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে গাড়ির ভেতরের সবাই গাড়ির সাথে পুড়ে গিয়েছে।
কথাটা কানে সিসা ঢালার মতো শোনালো আরশের কাছে।। মুখে এতক্ষণ ভেসে থাকা কঠোর প্রতিচ্ছবি নিমেষে দুলিসাৎ হয়ে ভর করল অসহায়ত্বের। চোখের নড়বড়ে পাতা ফেলল সে। জিজ্ঞেস করল,”কী বললেন আবার বলুন?
মাহাদি দু-হাতে আরশকে চেপে ধরতে যাবে আরশ নিজেকে সরিয়ে নিল৷ তখনো নাকের ছিদ্র দিয়ে সরু দ্বারায় রক্ত বের হচ্ছে। অফিসার আবারো বললেন,”ধারণা করা যাচ্ছে গাড়ির ভেতর থাকা যাত্রী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
আরশ নিজের শরীর ছেড়ে দিল। অবশ হওয়া শরীর নিয়ে রাস্তায় ধুপ করে পড়ে গেল। অফিসার নিজের কথা শেষ করে ততক্ষণে দূর্ঘটনার জায়গায় পৌঁছেছেন।
আরশ হাঁটুর উপর ভর দিয়ে কংক্রিটের রাস্তা বসল। ওভাবে থেকেই বিড়বিড় করে আওড়াল,”ও আমায় ছেড়ে যেতে পারেনা, ও কীভাবে যেতে পারে আমায় ছেড়ে মাহাদি!
পরপর নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে আওড়াল,

“ওর কিছু হয়নি, রিলাক্স আরশ, কিছুই হয়নি।
নিশ্চুপ মাটির দিকে তাকিয়ে রইল সামান্যক্ষণ। কিৎকাল অতিবাহিত হতেই দেখা গেল আরশের নাক হতে টিপটপ করে রক্তের দ্বারা মাটিতে পড়ছে। থরথর করে কাঁপা হাতে পকেট হাতড়াতে লাগল আরশ। মুখে বিষন্নতার ছাপ। পুরুষালি দেহটা মনে হচ্ছে ভেঙে চুড়ে গিয়েছে। সাথে বিড়বিড় করল,”নুসরাত কোথায় তুই? এত জ্বালাচ্ছিস কেন আমায়? চলে আয় না, যেখানে আছিস সেখান থেকে। বিশ্বাস কর আর তোকে মারব না, ব্যথা দিব না, কষ্ট দিব না, গড প্রমিস। প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা ঘন্টা তুই আমায় চিন্তার উপর রাখছিস, আমি তো দিন দিন ছোট হচ্ছি না! এত টেনশন কী নিতে পারি আমি তোকে নিয়ে! তোকে বিয়ে করার পর থেকে আমার সুন্দর জীবনটা পুরো অশৃঙ্খল হয়ে আছে। তেরো বছর ধরে জ্বালাচ্ছিস, এখনো কী কম জ্বালানোর বাকি রয়েছে! তুই এত নির্দয় কেন!
মাহাদি নীরবে শুনল সবকিছু। দু-পা এগিয়ে গিয়ে আরশের পাশে বসতে বসতে শুধাল,“কী খোঁজছিস?
আরশ নিজের পকেট হাতড়ানো জারী রেখে চোখের পাতা ঝাপটাল। ঝাপসা চোখ আশপাশ বুলিয়ে নিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলে ওঠল,”ইই ইনহেলার, ইনহেলারটা..!

মাহাদি আরশের কথা শুনতেই হাত বাড়িয়ে নিজেও পকেট হাতড়াল, না খুঁজে পেল না। আরশ শ্বাস চলাচল কমে এসেছে সামান্য। হা করে দু-ঠোঁটের মাঝ দিয়ে শ্বাস ফেলল। শরীরে অবস্থা নাজুক দেখে মাহাদির কাঁধের উপর নিজের মাথা ঠেকিয়েছে সে। মাহাদি আরশের মুখ হাতের আজলায় চেপে ধরে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জানতে চাইল,”রেখেছিলি সাথে?

আরশ মুখ দিয়ে টু শব্দটি করল না, শুধু মাথা নাড়াল। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। মাহাদি বেমালুম ভুলে বসল তার নিজের পকেটে আরশের ইনহেলার রাখা। আরশের প্যান্টের পকেট খোঁজা শেষে, টনক নড়ল তার পকেটে রাখা ইনহেলার। জরুরি প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে ভেবে নিজের সাথে এটা রাখে সে সবসময়। প্যান্টের পকেট থেকে ইনহেলার বের করে এগিয়ে দিল। আরশ তা চেপে ধরার আগেই শরীর ছেড়ে ঢলে পড়ল মাহাদির গায়ে। বন্ধুকে দু-হাতে সামলাতে সামলাতে, কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠল,”আরশ এই আরশ, শুনতে পাচ্ছিস, এই, এই চোখ খোল..!
গালে দুটো থাপ্পড় মারল মাহাদি, তবুও অপাশ হতে কোনো সাড়াশব্দ আসলো না। মাহাদি একহাতে আরশের গালে থাপ্পড় দিল অন্যহাতে ঠোঁটের মাঝখানে ইনহেলার চেপে ধরে রেখে চিৎকার করে বলে ওঠল ,”এই আরশ শ্বাস টান। এই, এই চোখ খোল..! চোখ বন্ধ করিস না..! কুত্তা ইনহেলার সাথে রাখিস না কেন তুই! এই আরশ, এই..!
মাহাদি যথাসাধ্য আরশের গালে লাগাতার চাপড় মারল। অস্পষ্ট সুরে উচ্চারণ হলো,”তুই মরবি, আচ্ছা মর, মনে রাখ তোর বউ ওই পূর্বকে বিয়ে করে সংসার করবে, তারপর ওদের ফুটফুটে দুটো বাচ্চা হবে। এই আরশের বাচ্চা তাকা, এই কুত্তা, এই..! বলে দিচ্ছি, হুঁশ হারাবি না একদম!

নুসরাত লোহার শিকল চেপে ধরে মাছুম মুখে বসে আছে। সৌরভি আর মমোর জ্ঞান ফিরার পর থেকে দু-জনেই এক দৃষ্টিতে তাদের স্টক আউট করছে। নুসরাত নিজেও পাল্টা তাদের দিকে গোল গোল চোখে চেয়ে আছে। কয়েক মিনিট পাড় হওয়ার পর মমো নাক ফুলিয়ে বলে ওঠল,”ফাস্ট টু লাস্ট সব খুলে বল নুসরাতের বাচ্চা।
আহান,ইরহাম, নুসরাত একে অন্যের পানে চোরা চোখে তাকিয়ে হেসে ফেলল। হাজতের ময়লা পড়া দেয়ালের সাথে একদম ঠেসে বসে দাঁত কেলাল সবগুলা। তাদের হাসির দমকে পুরো হাজত কেঁপে উঠল। মমো, সৌরভি, ইসরাত এত হাসির মানে বুঝল না, কিন্তু ইরহাম, নুসরাত, আহান জানে তাদের হাসির পেছনে লুকায়িত রহস্য। ইসরাত চোখ রাঙিয়ে ধমকে উঠল। কন্ঠে শক্ততা এনে শুধাল,”এত হাসির কী আছে? হঠাৎ করে গাড়ি ফেলে মুরগী চুরি করতে গেলি কেন?

নুসরাত হাসার জন্য কোনো কথা বলতেই পারল না। হাসি থেকে ফুরসত মিললে তো সে দুটো বাক্য ব্যয় করবে। আহান নিজেও ব্যাঙের মতো খিকখিক করে হাসছে। ইরহাম কোনোরকম নিজের হাসি ভেতরে চাপা দিয়ে বলে ওঠল,”আমরা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম সামনে, কিছু বুঝতে পারলাম না, হঠাৎ গাড়ির ধাক্কা লাগল ল্যাম্পপোস্টের সাথে। যখন নিজেদের সামলে সামনে তাকালাম দেখলাম চারিদিকে চুল ছড়ানো এক পেত্নী ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। গগণবিধারী চিৎকার দিয়ে উঠলাম আমরা দু-জন। তখন ভ্যাম্পায়ারের মতো মাথা তুলে পিছু ফিরে চাইল এই মেয়ে। হতবাক চেহারা নিয়ে আমরা চাইতেই চুলগুলো সুন্দর করে বেঁধে বলে ওঠল,মুরগী চুরি করতে যাবি? আমি তো ভাই মনে করেছি নির্ঘাত পেত্নী ভর করেছে এর উপর তাই এমন বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে। যদি সত্যি পেত্নী ভর করে থাকে, আর আমরা যদি তার কথা না শুনি তাহলে আমাদের ঘাড় মটকে সেই ভয়ে আমরা দু-জনে মাথা নাড়ালাম, চলে গেলাম মুরগী চুরি করতে। সেখানে গিয়ে মুরগীর ঘরে মাথা ঢোকানোর সময় ব্যথা পেলাম মাথায়। মুরগী চুরি করে পালাচ্ছিলাম এমন মুহুর্তে মুরগী চিৎকার শুরু করল, এর মধ্যে কিছু মানুষের গলার আওয়াজ ভেসে আসলো চোর চোর বলে। আমরা পালাতে যাব এমন মুহুর্তে কাদার সাথে পা পিছলে ধুম করে আহান পড়ল ,তারপর আমি, আমার উপর এই ভোটকি পড়েছে। পড়ে কী বলে জানিস?
ইসরাত অবাক কন্ঠে জানতে চাইল,

‘“কী বলেছে?
ইরহাম ব্যথিত সুরে, অগাধ দুঃখ নিয়ে বলে ওঠল,
“ বলে নাকি তোলার বস্তার উপর পড়েছে। মুরগী সহ আমাদের জান যাচ্ছে, তন্মধ্যে ও বলে ওর কাছে তোলার মতো মনে হচ্ছে৷ যখন দেখলাম কাছে আসছে ওরা লাঠি নিয়ে এই কুত্তি সবার আগে মুরগী নিয়ে পালিয়েছে আমাদের রেখে। আমি বললাম আমাদের নিয়ে যা, বলে নিজে বাঁচলে বাপের নাম..!
নুসরাত হাসতে হাসতে দেয়াল হাত দিয়ে থাপড়ে প্রায় ভেঙে ফেলছে। ইসরাত, সৌরভি, মমো এতক্ষণ পর হাসল। সৌরভির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠতেই ইরহামের মনে হলো বুকের ভেতরে এতক্ষণ চাপা রাখা সকল দুঃখ, কষ্ট সবকিছু দুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। তার ঠোঁটের কোণেও দেখা গেল কিঞ্চিৎ হাসি। সৌরভির হাসি মিলিয়ে গেল আবার নিমেষে। হাসি হাসি মুখে নুসরাতের পানে নিজের নেত্র নিবিষ্ট করতে গিয়ে দেখল, আবারো সেই পুরুষালি চোখগুলো তার উপর খেলা করছে। অস্বস্তিতে ঘাট হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিল, মুখের উজ্জ্বলাত্বক প্রতিবিম্ব ক্ষীণ সময়ে ফিকে হয়ে গেল।

নুসরাত কিছু বলতে নিবে দেখল প্রথমে সুঠাম দেহি শরীর নিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করছেন হেলাল সাহেব। পরপর নাছির সাহেব, শোহেব সাহেব, সোহেদ সাহেব। যেখানে কাপড়ে সামান্য ভাঁজ থাকলে কাপড় পরেন না তারা আজ সবার কাপড়ের জায়গায় জায়গায় ভাঁজ। পাঁচমাথা বাপ চাচাকে দেখে খুশিতে ডগমগিয়ে উঠল। যে যেখানে ছিল সেখান থেকে এসে লোহার শিকের সামনে দাঁড়াল৷ হেলাল সাহেব মৃন্ময়ের টেবিলের দিকে না গিয়ে সর্বপ্রথম বাড়ির বাচ্চাদের সামনে দাঁড়ালেন। এসেই আহানকে উপর নিচ দেখে শুধালেন,”মেরেছে ওরা তোকে?
আহান দু-পাশে মাথা নাড়াল। ইসরাতের সামনে দাঁড়িয়ে শুধালেন,”কোনোপ্রকার মারধর করেছে ও?
ইসরাত দু-পাশে মাথা নাড়াল। ইরহাম, মমো, এমনকি সৌরভির নিকট একই প্রশ্ন জানতে চাইলেন। সবাই না করল। সবার শেষে এসে দাঁড়ালেন নুসরাতের কাছে। আড় চোখে নুসরাতের মুখ লক্ষ করলেন, সচারাচরের মতো কপালে ভাঁজ ফেলে রেখেছে। দু-জনের দু-জনের পানে কপাল কুঞ্চন করে চেয়ে থাকল। অপাশের ব্যক্তিবর্গরা ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে তাদের দিকে। পরবর্তীতে কী হয় দেখার আশায়! হেলাল সাহেব তিরিক্ষি মেজাজে শুধালেন,”ঠিক আছিস তুই?

নুসরাত উত্তর দিল,
‘“ঠিক আছি বলেই দাঁড়িয়ে আছি।
“অহংকারী..!

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৫

হেলাল সাহেব নুসরাতকে মনে মনে দুটো ভেংচি কাটলেন। বিড়বিড় করলেন এমনভাবে বাহিরে হাবিলদার পর্যন্ত শুনে ফেলল তার কথা। নুসরাত সেই কথার বিপরীতে নিজের চুল উড়িয়ে উত্তর দিল,”এত বড় ট্যালেন্ট থাকতেও কোনোদিন অহংকার করিনি। মাশাআল্লাহ বলেদিন এই কথার বিপরীতে, নাহলে আমার অহংকার করার ট্যালেন্টে নজর লেগে যাবে।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here