প্রিয় বেগম পর্ব ১৮

প্রিয় বেগম পর্ব ১৮
পুষ্পিতা প্রিমা

সবার গায়ে রাজকীয় পোশাক। তাদের দেখলেই বুঝা যাচ্ছে তারা মহলের কন্যা। মাথায় জমকালো ঝালর বাঁধাই করা। চোখের পর থেকে ঝালর দিয়ে মুখ ঢাকা। রূপার দিকে সাদা গোলাপি রঙের একটা পোশাক বাড়িয়ে দিয়ে তটিনী বলল,
এটা পড়ে নাও। সম্রাটের আদেশ।
অপরূপা পোশাকটি হাতে নিল। বলল, কিন্তু আমি তো প্রস্তুত।
সায়রা হেসে বলল,
ভাইজান এইমাত্র এসে বললো তোমাকে একটা নতুন পোশাক দিতে। আর আমাদের মতো করে প্রস্তুত হয়ে নাও। মহলের কন্যাবেশে যাবে। ওখানে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারো।

কিন্তু…
কোনো কিন্তু নয় রূপা। তাড়াতাড়ি যাও।
অপরূপা ভেবেছে আজ পালা দেখতে যাবে না। কিন্তু তাকে যেতেই হচ্ছে। তার উপর এসব পোশাক পড়তে ইচ্ছে করছেনা তার।
অপরূপা পোশাক পড়ে নিল। তটিনী এসে তাকে মাথায় হিজাব পড়িয়ে ঝালর পড়িয়ে দিল। শুধু চোখদুটো দৃশ্যমান। দর্পনের সামনে দাঁড়িয়ে নতুন এক রূপাকে আবিষ্কার করলো অপরূপা। তাকে রাজকন্যাদের মতো দেখাচ্ছে। সিভান এসে ডাকলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সুন্দর বউ!
অপরূপাকে চিনতে বেগ পেতে হলো তাকে।
সুন্দর বউ কোনটা?
অপরূপা হাত বাড়িয়ে ঢাকলো।
এইতো আমি। বলো কি বলবে?
সিভান এগিয়ে এসে তার হাত ধরলো খপ করে। টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
ভাইজান কখন থেকে ডাকছে। চলো।
রূপাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। শেহজাদ তার দলবল গাড়ি আর ঘোড়ার আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সিভান ওর হাত ছেড়ে আবারও মহলের ভেতরে চলে গেল।
প্রাঙ্গন তেমন আলোকিত নয় তাই শেহজাদ অপরূপাকে তটিনী ভেবে বলল,
ওদের ডেকেছ?

অপরূপা কোনো উত্তর দিল না। এককোণায় দাঁড়িয়ে থাকলো। শেহজাদ কথা বলা শেষে অপরূপার দিকে ভালো করে না তাকিয়ে গাড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলল
বাকিরা কোথায়? গাড়িতে উঠে বসো। সাফায়াত সবাইকে ডাক দাও।
সাফায়াত সবাইকে ডাকার জন্য ভেতরে চলে গেল। শেহজাদ ঘোড়ার পানি খাওয়া বালতিটা রূপার সামনে রেখে বলল, একটু পানি নিয়ে এসো দ্রুত।
রূপা নড়াচড়া করলো না। শেহজাদ বলল, দ্রুত যাও।
অপরূপা পানির আনার জন্য কূপের দিকে চলে গেল। পানি এনেও দিল। শেহজাদ তার অশ্বের যত্ন নিতে মত্ত।
মহলের ভেতর থেকে সবাই চলে এল। তটিনী ডেকে বলল,
রূপা তুমি এখানে?
শেহজাদ সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। একদম চোখ বরাবর তাকাতেই নিজেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। অপরূপা মুচকি হাসলো যদিও তা শেহজাদ টের পেল না। শেহজাদ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
তোমরা গাড়িতে উঠে বসো।

সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে দুটো ঘোড়ার গাড়িতে উঠে বসলো। রূপা পুরোটা পথজুড়ে মুগ্ধনয়নে রূপনগরের রূপের ঝলকানি দেখলো। নদীর পাশ দিয়ে জঙ্গলের সড়ক ধরে বড় সড়কে উঠতেই দৃশ্যমান হলো দূরপাহাড়, ধূ ধূ করা বিল, বিশাল প্রান্তরের পাশে প্রকান্ড এক বটগাছ, আরও আরও দূরে জনবল পেরিয়ে চোখের সীমানা পেরিয়ে অবস্থিত সবচাইতে বড় মসজিদ, ওলি-আউলিয়ার মাজার, আল্লাহু আল্লাহু জিকিরে তা মেতে থাকে সর্বদা। যদি মহলের কাছাকাছি হতো রূপা একদিন ঠিক যেত সেখানে।

শেহজাদ তার দলবল নিয়ে অশ্বারোহণে পৌঁছেছে যাত্রাপালায়। ঢাকঢোল পিটিয়ে শিল্পীদের মঞ্চে যাতায়াত শুরু হচ্ছে। নির্দিষ্ট আসনে অপরূপাদের বসার জায়গা হলো। আজ বিন্দুবাসিনীর শেষ যাত্রা। যেখানে স্বয়ং বিন্দুর শেষ যাত্রা দেখানো হয়। পতিদেবের কাছেই যার প্রাণবধ হয়। নিষ্ঠুরপ্রিয়াকে ছলনা করা জন্য নিষ্ঠুরতম প্রিয় তার প্রাণবধ করে ভেঙে পড়ে গগনবিহারী ক্রন্ধনে। চুপ করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শিল্পীদের অভিনয় দেখতে দেখতে কোমলপ্রাণ দর্শকের অক্ষিকোটর চোখের জলে ভেসে উঠে। প্রিয় স্বামীর হাতে মৃত্যুবরণ করা বিন্দুবাসিনীর গভীর নিস্তব্ধ অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতে আচ্ছন্ন হতে হতে মঞ্চের আলো নিভে আসে। পতিদেব পরমের ভাঙা হৃদয়ের আর্তনাদ হাহাকারে মেতে উঠে চারপাশ। ভেসে আসে শব্দমালা,

প্রাণনাশিনী! আমার বিন্দুবাসিনী।
অপরূপার চোখজোড়া জলে চিকচিক করে উঠে কোনো এক বেদনাবিধুর দুঃখে। দুঃখটা রহমানের জন্য নয়। নিজের জন্য। নিজেকে সে চিনতে পারছে না। এই অপরূপাকে সে নিজেই চেনে না।
সুষ্ঠুভাবে পালা দেখা শেষ হওয়ার পর মঞ্চ আলোকিত করে দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য মঞ্চে এসে দাঁড়ালো শেহজাদ। দর্শক মন তখনো আচ্ছন্ন বিন্দুবাসিনীতে। তারা স্তব্ধ হয়ে আছে। দ্বেষ ফুটে উঠেছে সকলের চেহারায়। এ যেন এক লেখকের কলমের নিদারুণ কেল, আর এক পরিচালকের অসাধারণ বিস্ময়কর সাফল্য।
মঞ্চ কাঁপিয়ে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরটি যখনি আপামরজন সাধারণের উদ্দেশ্য কয়েকটা কৃতজ্ঞতাসূচক বাক্য বলা শুরু করলো ঠিক তখনি কোথাও বজ্রপাত হলো যেন। গোলাগুলির বিকটশব্দে ভয়ে শঙ্কিত প্রাণ নিয়ে ছুটছে মানুষ। গোলাগুলি ছুঁড়ছে শেহজাদের লোকবলও। ডাকাতদের লক্ষ্য ছিল মঞ্চে দাঁড়ানো শেহজাদ। কিন্তু ভুলক্রমে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। শেহজাদের সৈন্যরা গোলাগুলি থামিয়ে লোকজনকে মাইকে ডেকে আশ্বস্ত করলো আপনারা পালাবেন না। নিরাপদ জায়গায় দাঁড়ান। নয়ত বিপদে পড়বেন।

কিন্তু কে শোনে কার কথা? প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সবাই হৈ হৈ করে ছুটলো।
তটিনী সবাইকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেল। শেহজাদ তাদের কাছে ছুটে গিয়ে বলল,
আমি আসা পর্যন্ত কেউ সরবে না এখান থেকে। রূপা তুমিও না।
অপরূপা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। কি ঘটছে এসব!
শেহজাদ লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল।
দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথিরা, শিল্পীরা বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করে বলল,
গতবারও এমন হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এখানে আর আসা সম্ভব না। বেয়াদবি মাফ করবেন আপনার নগর দিনদিন কেমন উচ্ছিষ্টে পরিণত হচ্ছে সম্রাট।
শেহজাদের চোখমুখ ক্রোধের অনলে লাল হয়ে উঠলো। রক্তলাল চোখ আর শক্ত চোয়াল। কপালের পাশ বেয়ে অজস্র গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছে ধপাস করে এসে বসে পড়লো কেদারায়। হাতের বন্দুকটি ছুঁড়ে ফেলে ক্রুদ্ধ গলায় বলে উঠলো,

সাফায়াত এত এত সুরক্ষাব্যবস্থা থাকা স্বত্তেও কি করে ডাকাতদল নগরে প্রবেশ করলো?
সৈন্যরা চুপ করে থাকলো। সাফায়াত বলল, আয়শা কাঁদছে। বাকিরা আতঙ্কিত হয়ে আছে। আমার মনে হয় এখন আমাদের মহলে ফেরা উচিত। তারপর এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনায় বসা উচিত।
শেহজাদ উঠে দাঁড়ালো। বলল,
সবাই গমনের জন্য প্রস্তুত হও।
সায়রাদের কাছে আসতেই সায়রা উৎকন্ঠিত গলায় বলল,
ভাইজান ওরা কেন তোমার দিকে গুলি তাক করলো?
তার চোখে জল। শেহজাদ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।

কান্না নয়। মহলে গিয়ে আম্মাকে এসব বলবে না। মনোবল আনো নিজের মধ্যে। দুর্বলদের পিঁপড়েও লাতি মারে।
সায়রা কান্না চেপে রাখলো। অপরূপার চোখেমুখে প্রাণ নেই, ভাষা নেই। এমন গোলাগুলির মতো বীভৎস ঘটনা সে আর দেখেনি। সে স্তব্ধ হয়ে আছে। শেহজাদ তার চাউনি দেখে কিছু বলল না। কিছুপরে এসে বলল,
সবাই গাড়িতে উঠে বসো। আমরা রওনা দেব।
সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। শেহজাদ তাদের পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে।

গাড়িতে বসা সকলেই আকস্মিক ঘটনায় বিহ্বলিত কারো মুখে কোনো কথা নেই। নীরবতায় কেটে গেল অর্ধেকটা পথ। শেহজাদের চিন্তিতবদন দেখে অপরূপার খারাপ লাগলো। ভালো মানুষের পেছনে লাগার মানুষের অভাব হয় না। এই একটা মানুষের উপর পুরো একটা নগরের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নির্ভর করছে, যে মানুষটা নগরের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য উছিলাসরূপ সেই মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ার কেন এত শখ সে বুঝে পেল না।
কিন্তু তাদের আর শেষ রক্ষে হলো না। নদী ও জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কপথে পুনরায় ডাকাত আক্রমণ হলো। কালোপোশাকে ঢাকা ডাকাতসৈন্যগুলোর অশ্ববাহিনীর তীব্র হুংকার ছেড়ে থামলো তাদের সামনে। সবার মুখ ঢাকা। জ্বলজ্বল করছে চোখজোড়া। সাফায়াত বোনদের আশ্বাস দিল।

তোমাদের কিচ্ছু হবে না।
শেহজাদকে অতি শান্ত দেখালো। ঘোড়ার পিঠে বসেই রইলো সে । সাফায়াত বিড়বিড়িয়ে ডাকলো,
ভাইজান!
শেহজাদ বলল
‘পেছনে আমাদের বাহিনী আসছে। আপাতত শান্ত থাকো।
ওদিকে সায়রা সোহিনী কেঁদেই উঠলো ভয়ে। সায়রা ডাকলো,
‘ ভাইজান আপনি এগোবেন না। ‘
‘ওরা আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না। কতবার বারণ করেছি না কাঁদার জন্য।

সায়রা কান্না গিলে নিল। অপরূপা পূর্ণ দৃষ্টিতে দম না ফেলে তাকিয়ে রইলো ডাকাতগুলোর দিকে। জীবনের সমস্ত বাজে অভিজ্ঞতা যেন আজই হয়ে যাচ্ছে। তাদের গাড়ির পেছন পেছন আরও কয়েকটা ঘোড়া টগবগিয়ে এসে থামলো। মুহূর্তেই শুরু হলো তীর ছোড়াছুড়ি। তবে বেশিক্ষণ না হতেই তীর ছোড়াছুঁড়ি বন্ধ হতেই শেহজাদ বজ্রগম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
কি চাও তোমরা?
বাকবিভূতিহীন ডাকাতদলের একজন প্রচন্ড ক্রোধের দাবানলে আছড়ে পড়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
‘ এই রাজ্য। এই নগর। তোর ধ্বংস। ‘
‘তা কখনোই পাবে না। আমার দেহের শেষ রক্তবিন্দু থাকা অব্দি পাবে না।’

নরদানবের মতো অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তারা। ঠিক সেই সুযোগে ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফ দিয়ে নেমে সৈন্যদের সাথে বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে শেহজাদ এগিয়ে গেল। ডাকাতদের হাত থেকে তীর ধনুক পড়ে গেল। তাদের অশ্বগুলোর পায়ে গুলি লাগলো। অশ্ব ছেড়ে প্রাণ নিয়ে পালাতে লাগলো তারা। এদিকে গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছে অপরূপা। শেহজাদ ফিরে এসে তাকে না দেখে বলল,
‘ রূপা! রূপা কোথায়? ‘

ঠিক সেই মুহূর্তে হাতের বাহুর মধ্যে এসে বিঁধে গেল একটি তীরের ফলা। শেহজাদের লোকজন বন্দুক নিয়ে এগিয়ে যেতেই ডাকাতরা পিছিয়ে গেল। বাহু চেপে ধরে গাড়ির সাথে লেগে বসে পড়লো শেহজাদ। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে নেমে পড়লো সায়রা তটিনীরা। শেহজাদ বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে শুকনোমুখে জিজ্ঞেস করলো,
একটা মেয়ে তোমাদের পাশ থেকে নাই হয়ে গেল কি করে?
সায়রা বলল,
রূপা কখন নেমে গেল বুঝতে পারিনি ভাইজান। আমরা মাথা নামিয়ে বসেছিলাম।
তটিনী বলল, শান্ত হও। তোমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে প্রচুর।
ঝাড়া মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল শেহজাদ।
রূপা আমার তত্বাবধানে ছিল। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। কোথায় ও? ধিক্কার তোমাদের।
তটিনীরা সবাই মাথা নামিয়ে ফেললো।

দৌড়াতে দৌড়াতে পায়ের চটি খুলে পড়ে গেল রূপার। পায়ের তলায় কাঁটা বিঁধে গেল। রক্তে মাখামাখি হলো পা জোড়া। বন্দুক আর তীর হাতে নদীর ঘাটের উদ্দেশ্য ছুটে যাওয়া ডাকাত সৈন্যদের সামনে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ালো সে। ডাকাত সৈন্যগুলো ভয়ংকর দৃষ্টি দিয়ে আপাদমস্তক দেখে নিল অপরূপাকে। অপরূপার মুখ তখনো ঝালর দিয়ে ঢাকা। তার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এগুতে থাকা সৈন্যগুলোর পা জোড়া থেমে গেল জলদগম্ভীর এক ভয়ংকর এক আদেশে। পা পিছিয়ে নিয়ে গেল, বিপরীতদিকে মেয়েটি এগিয়ে এল তাদের দিকে। এগিয়ে আসতে আসতে নিজের ঝালর তুলে দিয়ে মুখটা অনাবৃত করে টেনে ধরলো কালো পোশাকে আবৃত ডাকাত সর্দারের কাঁধের পোশাক। অন্য হাতে মুখের মুখোশ সরিয়ে দেয়ামাত্রই বহুদিন পর সুপরিচিত মানুষটার এমন ভিন্নরূপ দেখে ভেঙে পড়ে আশাহত হয়ে হু হু করে কেঁদে উঠে বলল,

‘যাকে মন দিয়েছিলাম তার কন্ঠস্বর চিনতে তাহলে ভুল হয়নি। প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক। ভালোবাসা আজ এখানেই কবর দিলাম।’
তার নরম গালটা শক্ত দু’হাতে আগলে ধরে লোকটা বলল,
‘ আমার কথা শোনো অপা। আমার সাথে চলো। আমি তোমাকে নিয়ে যেতেই এসেছি। ‘
অপরূপা সজোড়ে চড় বসালো তার গালে। ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বলল,
‘ মরে যাব। তবু আপনার কাছে আর ফিরব না। আপনি আমার জন্য হারাম। ‘
‘আমাকে ভুল বুঝছো অপা। আমার কথা শোনো। ফিরে এসো।’

আর কিছু বলার সুযোগ হলো না। তন্মধ্যে শেহজাদের গলার স্বর শুনতে পেতেই রহমান পালিয়ে গেল তার লোকবল নিয়ে। ঘাটে রাখা তাদের জাহাজ। অপরূপা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। জাহাজ ততক্ষণে অনেক দূরে চলে গিয়েছে।
শেহজাদ দূর থেকে অপরূপাকে দেখে থমকে দাঁড়ালো। তারপর এগিয়ে এল। তার উপস্থিতি টের পেয়ে অপরূপা কান্না থামিয়ে দিল। চেহারা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।
শেহজাদ তার সামনে এসে হাঁটুমুড়ে বসলো। বজ্রগম্ভীর স্বরে ধমকে বলল,
‘এমন পাকামো করতে কে বলেছে তোমাকে? কেন এখানে এসেছ? ‘
অপরূপা নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। রোধ হয়ে আসা কন্ঠে বলে,
‘ভেতরের পথ দিয়ে ওদের পিছু পিছু এসেছি।

আমিও এককালে তাদের সদস্য ছিলাম কিনা জানতে এসেছি। আপনাদের মতো তো আমি ডা*কাত। ‘
শেহজাদ আর কিছু বলতে পারলো না। চেয়ে রইলো নিরুত্তর।
তখনি রক্তে ভিজে উঠা শেহজাদের বাহুর দিকে নজর পড়তেই আঁতকে উঠলো অপরূপা। তটিনী তেঁতো পাতা খুঁজে আনলো। দু’হাতের তালুতে পিষে শেহজাদের বাহুতে চেপে ধরে শবমনের কাছ থেকে কাপড় নিয়ে বাহুতে বেঁধে দিতে দিতে বলল,

ওঠো। তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
শেহজাদ দাঁড়িয়ে পড়লো। অপরূপার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
ওঠো। আর কখনো ওদের পিছু নেবে না। ওদের মনে দয়ামায়া নেই একটুও।
অপরূপা নিজে নিজে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল,
আপনার হাতের জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন।

প্রিয় বেগম পর্ব ১৭

শেহজাদের বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ওভাবে রয়ে গেল।
অপরূপা গাড়ির দিকে এগুতে এগুতে কেঁদে বুক ভাসালো। তার সাথে কেন এমন হলো?
শেহজাদ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকিদেরকে বলল, রূপার মতো সাহসী হও। অযথা ভ্যাঁ ভ্যাঁ কাঁদা আমার একদমই পছন্দ নয়।

প্রিয় বেগম পর্ব ১৯