প্রিয় বেগম পর্ব ৩২
পুষ্পিতা প্রিমা
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঠুরের সাথে জঙ্গলের মধ্যে ঘুরতে গিয়েছিল শেহজাদ। কাঠুরের ছোট ভাইটি নদীর পাশে সকাল বাজারের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিল। ঘুরেফিরে এসে শেহজাদ দেখলো বাদশাহ আপনমনে ঘাস চিবোচ্ছে। বাচ্চা দুটো তার পাশে। শেহজাদ হাত ঝাড়া মেরে বাচ্চাদুটোর সাথে টুকটাক কথা বলতে এগিয়ে গেল। তাদের আড়ষ্টভাব কমেছে। খোলামেলা কথা বলছে শেহজাদের সাথে। শেহজাদ ঘাড় ফিরিয়ে তেরপাল টাঙানো ঘরের দিকে তাকালো। রূপা এখনো ওঠেনি।
কাঠপোড়ার আগুনের ধোঁয়া আসছে। চুলোয় হয়ত আগুন জ্বালা হয়েছে। শেহজাদ বাদশাহ’র মাথায় হাত বুলিয়ে বাচ্চাদের বলল, ‘তোমরা চড়বে?’
বাচ্চারা খুশি মনে একে অপরের দিকে তাকালো। শেহজাদ বাদশাহ’র পিঠে তাদের বসিয়ে দিল। বাদশাহ গা ঝেড়ে দাঁড়াতেই দুজনেই ভয় পেয়ে চিল্লিয়ে উঠলো। তাদের চিৎকারে চোখ ছুটে গেল অপরূপার। সে হামি দিয়ে শোয়া থেকে উঠতেই শুনতে পেল দরাজ গলার হাসি। হাসির কারণ জানতে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এল ঘর থেকে। এসেই দেখলো শেহজাদ বাদশার পিঠে বাচ্চাদুটোকে বসিয়ে ধরে রেখেছে আর ওদের ভয়ার্ত মুখ দেখে হাসছে। অপরূপা তার প্রাণখোলা হাসি দেখে শৌচাগারের দিকে চলে গেল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাঠুরে চড়া দাম দিয়ে বন্য মোরগ কিনে এনেছিল এক পাহাড়ি লোকের কাছ থেকে। তা রান্না করেছে কাঠুরে বউরা। রুটি আর মাংস রেঁধেছে তাড়াহুড়ো করে। সম্রাট খুব ভোরে উঠেছেন। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ক্ষিদে পেয়েছে। অপরূপা মুখহাত ধুঁয়ে তাদের সাথে চুলোর পাশে এসে বসলো। ওদের রান্না দেখতে দেখতে অল্পস্বল্প গল্প করলো।
জঙ্গলের প্রকান্ড গাছপালার ফাঁক গলে সূর্যরশ্নি এসে আছড়ে পড়ে জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে জঙ্গলের ভেজা মাটিতে। রোদ দেখে খুশি হলো অপরূপা। যাক পোশাক শুকিয়ে যাবে। আর তারা রওনা দিতে পারবে।
রান্না হয়ে আসতেই গরম গরম খাবার নিয়ে এল সে শেহজাদের জন্য। বলল,
‘ ওদের মা ওদের ডাকছে খাওয়ার জন্য। ওদের যেতে দিন। আপনিও আসুন। খাবার প্রস্তুত। ‘
শেহজাদ ফিরে তাকালো। বলল,
‘ আচ্ছা । ‘
বাচ্চা দুটোকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়ে সে পুরু তেরপালের পর্দা সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। অপরূপা রুটি মাংস বেড়ে দিল। বলল,
‘ আমরা কোথায় যাব? ‘
শেহজাদ ওর সামনে এসে বসলো। বলল,
‘ কেন? রূপনগরে। ‘
অপরূপা চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো। তার চোখে সংশয়, আড়ষ্টভাব। শেহজাদ রুটি ছিঁড়ে মাংস ছিঁড়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ আমার উপর ভরসা রাখো। আজ না হোক কাল সবাই জানবে। তাছাড়া সুলতান মহল তাদের ছোটে বেগমের অপেক্ষায় মুখিয়ে আছেন। ‘
‘ কিন্তু। ‘
শেহজাদ ওকে খাইয়ে দিয়ে বলল,
‘ কোনো কিন্তু নয়। নিজের দুর্বলতা কিংবা অসহায়ত্ব কখনোই মহলের কারো সামনে প্রকাশ করবে না। শেরহাম সুলতানের সামনে একদমই না। আম্মা কোনো প্রশ্ন করলে যেটা সত্যি সেটা বলবে। বাড়তি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। ‘
‘ আপনি সত্যি সত্যি আপনার ভাইজানের হাতে সবটা তুলে দেবেন? ‘
‘ আমি তুলে দিলেও কি উনি তা নিতে পারবেন? সমগ্র রূপনগরের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া কি এতই সহজ? উনি যদি শর্ত মানেন তবেই রাজত্ব পাবেন। নয়ত তা উনার স্বপ্নই থেকে যাবে। ‘
‘ উনি আপনার উপর জুলম শুরু করবেন আমাকে আপনার সাথে দেখলে। ‘
‘ জুলুম তো উনি আগেও করেছেন। আমি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য, মানুষের দুরাবস্থা দেখার জন্য মহল ছেড়েছিলাম। আরও একটা কারণ ছিল। সেই কারণটা তুমি। সে যাহোক। তুমি আমার কাছে থাকবে তাই তোমাকে নিয়ে আমার আর চিন্তা থাকবে না। আমি নিশ্চিন্তে কাজে মনোনিবেশ করতে পারব। তুমি এসব নিয়ে এত ভেবো না। আমি থাকতে তোমার আর বিপদ হবে না। ঠিক আছে? ‘
‘ জ্বি।’
খাওয়া শেষ হতেই শেহজাদ বলল,
‘ আমি বাইরে যাচ্ছি। পোশাক শুকিয়ে এলে বেরিয়ে পড়ব। ‘
অপরূপা ওকে থামিয়ে দিল। বলল,
‘ তটিনীর কথা বললেন না। উনার সাথে আপনার নিকাহ হওয়ার কথা ছিল। আমি উনার কষ্টের কারণ হয়ে গেলাম না?’
শেহজাদ ওর নিকটে এগিয়ে এল। ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে তার দুগালের পাশে হাত দিয়ে আগলে ধরে বলল,
‘ ওর সাথে নিকাহ হওয়ার কথা ছিল ভাইজানের সাথে। যদি ভাইজান কুপথে না যেতেন তাহলে ভাইজানের সাথে ওর নিকাহ হতো। দাদাজান বলে গিয়েছেন তটিনীকে যেন বাইরে নিকাহ দেয়া না হয় কারণ সম্পত্তিতে আর ভাগের দরকার হবে না। দাদাজান মারা যাওয়ার পরপরই ভাইজান উন্মাদের মতো হয়ে গেলেন। তারপর অরাজকতা শুরু করলেন নগরে। আর একসময় বড়চাচা উনাকে তাজ্যপুত্র করলেন। আর তটিনীকে নিকাহ করার দায়িত্বটা এসে পড়লো আমার উপর। আমি ওকে সবসময়ই বোনের চোখে দেখে এসেছি।
হ্যা এটা সত্যি আমি মত দিয়েছিলাম। কারণ তখন তুমি আমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলে। আমি ভেবেছি, মনকে বুঝিয়েছি হয়ত পথের মায়া পথেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরে বুঝলাম, না আমিই ঠিক ছিলাম। ও তোমাকে যা তা বলতেই পারে কিংবা কষ্ট দিতে পারে তুমি কষ্ট পেও না। সবসময় মনে রাখবে আমি সবসময় তোমার সাথে আছি। তাই কে কি বললো, করলো কিছুতেই কানে দেবে না। ঠিক আছে? ‘
অপরূপা উপর-নীচ মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ জ্বি। কিন্তু আমার শেরহাম সুলতানকে নিয়ে ভয় হচ্ছে। উনি জাদু জানেন। যদি আমাদের একসাথে দেখে উনি উনার জাদুবল দ্বারা মহলে কিংবা নগরে অরাজকতা বাড়িয়ে দেন তখন কি করবেন?
‘ আল্লাহ সহায় হবেন। এত চিন্তা করে এই ছোট মাথাটা নষ্ট করে লাভ আছে? এখানে আমি থাকলেই যথেষ্ট। আফসোস আমার জায়গা হলো না। হয়েছে এইসেই হাবিজাবি যত আজেবাজে ভাবনা। যাইহোক আমি বাইরে আছি। ‘
শেহজাদ চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই অপরূপা ছুটে এসে ওর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বলল,
‘ আমাকে সময় দিন। আপনি আমার জীবনে আলো হয়ে এসেছেন। আমি আপনাকে ঠিক একদিন ভালোবাসবো। আপনি আমার স্বামী। আমি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের কদর বুঝি। কালেমা স্বাক্ষী রেখে আমি আপনাকে গ্রহণ করেছি তাই আপনাকে ভালোবাসা আমার জন্য ফরজ। আপনি আমার জীবনে কেন আগে এলেন না? এত অনুশোচনা, অনুতাপ, আর নিজেকে এতটা পাপী বলে মনে হতো না। ‘
শেহজাদ চোখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকালো। সামনে ফিরে অপরূপাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল,
‘ আমি তোমার জীবনে আগেই এসেছি রূপা। সেই সন্ধ্যার পর আমি যখন তোমার ব্যাপারে প্রথম খোঁজ নিলাম তখন তোমার জীবনে কেউ ছিল না। ঠিক তারপর সুভার কাছ থেকে শুনলাম অন্য খবর। হ্যা আমি সময় নিয়েছিলাম, দেরী করেছিলাম। ওটাই আমার ভুল। নয়ত তোমার গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগতো না। না তোমার জীবনে ভুল কেউ এসে পড়তো। এই অনুশোচনায় এতদিন ভুগছিলাম। কিন্তু আজ আমার কোনো অনুশোচনা নেই। বরং সারা দুনিয়াকে আমি বলতে পারব ‘ তুমি আমার বেগম। ‘ সম্রাটের বেগম। ‘
অপরূপা ওর বুকের তীব্র সুগন্ধিতে মেখে একাকার হয়ে গেল। শেহজাদ হাসলো।
যেই কাঠুরে বাজারের দিকে গিয়েছিল তিনি ফিরলেন কাশীম আর সৈন্য দলের সাথে ঘোড়ায় চড়ে। কাশীম বাজারের প্রত্যেককে একে একে জিজ্ঞেস করছিলো এইপথে সম্রাট গিয়েছেন কিনা কাল সন্ধ্যায়। কেউ দেখেছে কিনা। সেখানে কাঠুরে ছিল। তিনি সবটা খুলে বলতেই কাশীম তাকে ঘোড়ার পিঠে তুলে নিয়ে চলে এল। শেহজাদ তাদের সবাইকে দেখে আনন্দিত হলো। খুশিতে চোখজোড়া চকচক করে উঠলো। কাশীম ছুটে এসে বুকে বুক মিলিয়ে বলল,
‘ সাহেব এইপথে অনেকবার এসেছি। জঙ্গলে প্রবেশ করলে হয়ত আপনাদের পেয়ে যেতাম কাল রাতে। শেরহাম সুলতান নগরে ফিরে গিয়েছেন আপনাদের না পেয়ে। পরশু অভিষেকের সময় ঘোষণা করেছেন। ‘
শেহজাদের কপালে ভাঁজ পড়লো। বলল,
‘আমার সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়া ছাড়া কি করে উনি অভিষেকের সময় ঘোষণা করলেন? আমার শর্ত না মানলে উনি কিছুই পাবেন না। ‘
‘ সেজন্য আপনাকে ফিরতে হবে। আমি আশঙ্কা করছি উনি আপনার ফেরার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ‘
‘ বেশ। প্রস্তুত হও। আমরা রওনা দেব। রূপার ঘোড়া কোথায়? ‘
কাশিম আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
‘ ওই যে। ‘
দেখলো রূপা ততক্ষণে তার গলা জড়িয়ে আদর করছে। সে মৃদু হাসলো সেই দৃশ্য দেখে। টিংটিং তাকে দেখে খুশিতে শূন্যে পা তুলে হুংকার ছাড়ছে। আর রূপা হাসতে লাগলো।
এগারোটার ক্ষণে তারা বেরিয়ে পড়লো সুলতান মহলের উদ্দেশ্য। রূপা কাঠুরে বউদুটোকে তার দু’হাতের দুটো কঙ্কন উপহার দিল। সম্রাট কাশীমকে বলে লোকালয়ে তাদের বাড়ি করার বন্দোবস্ত করে দেয়ার কথা বললো।
কৃতজ্ঞতায় তাদের চোখ চকচক করে উঠলো প্রায়। তাদের প্রস্থানে মন খারাপ হলো কাঠুরে বউ বাচ্চাদের । উনারা যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণ যেন আনন্দে ভরপুর ছিল।
অপরূপা টিংটিংয়ের পিঠে চড়ে শেহজাদের পাশাপাশি ছুটে চলেছে পাহাড়ি পথ দিয়ে। ছুটতে ছুটতে তাদের আহারের সময় হয়ে এল। সকলেই ক্ষুদার্ত। তখন রোদ কমে এসেছে। সন্ধ্যা হতে হতে তার পৌঁছে যাবে সুলতান মহলে। ভিন্ন পথে যাওয়ায় ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে। তারা পথিমধ্যে পাহাড়ের উপর আশ্রয় নিল। চারপাশে সবুজ গাছগাছালি। গতকালকের ঝড়ের তান্ডবে ভিজে উঠা পাহাড়ের মাটিতে রোদ পড়ায় সোঁদা মাটির গন্ধ উঠছে। অপরূপা গিয়ে থামলো একটা ঢালু জায়গায়। সেখানে সবুজ ঘাস আর ঘাস। ঢালু জায়গার খানিকটা নীচে নেমে অপরূপা টিংটিংকে খেতে দিল।
শেহজাদ তার বাদশাহকে নিয়ে ছুটে এসে দেখলো টিংটিং খাচ্ছে। আর অপরূপা পাশে বসে তার গায়ে, মুখে হাত বুলাচ্ছে পরম যত্নে।
শেহজাদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হলো। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এসে বলল,
‘ এতটা মহব্বত আমার প্রতিও নেই। সে কি এমন করেছে যে তাকে চোখে হারাও?’
অপরূপা বিস্মিত চোখে চেয়ে রইলো।
শেহজাদ ধপ করে তার কিছুটা দূরে গিয়ে বসলো। অপরূপা তার পাশে ঘেঁষে বসলো। শেহজাদ হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলল,
‘ নগরে পৌঁছে তোমাকে পালকিতে উঠতে হবে। ওর মায়া ছাড়ো। ‘
অপরূপা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ একটা অবলা পশুকে আপনি হিংসে করছেন সম্রাট? ‘
শেহজাদ ওর দিকে চোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে জেদ বজায় রেখে বলল,
‘ করব না? তুমি করতে না আমার জায়্গায় থাকলে? একটা পশুকে নিয়ে এতটা আহ্লাদী করার কি আছে? ‘
অপরূপা হাসতে হাসতে শেহজাদের বাহুতে মাথা ফেলে বলল,
‘ হায় আল্লাহ! রূপনগরের সম্রাটের এ কেমন অবনতি! উনি একটা পশুকে হিংসে করছেন?’
শেহজাদ বাহু থেকে ওর মাথা সরিয়ে বলল,
‘ এমনিই বললাম। তোমাকে দেখে বলতে বাধ্য হয়েছি। অতটা জরুরি কিছু নয়। ‘
অপরূপা হাসতে লাগলো। বলল, ‘ এতদিন শেরহাম সুলতানের সাথে ছিলাম তখন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল? খুব জ্বলেছেন? হুম হুম। বলুন। বলুন। ‘
অপরূপার হাসি থামছেনা। শেহজাদ ভুরু কুঞ্চিত করে বলল,
‘ তোমার এসব বলতে হাসি পাচ্ছে? আমার কি অবস্থা হয়েছিল বুঝতে পারছো তুমি? তখনকার কথা ছাড়ো। এবার উনি উনার সামনে একদমই ভীত হবে না। আমি এবার কিছু সহ্য করব না। আমি কেন? পৃথিবীর কোন স্বামী তার বেগমকে নিয়ে টানাটানি করলে বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকবে না’।
অপরূপা হাসতেই থাকলো। হাসতে হাসতে তার চোখে জল দেখা গেল। হেসে দু’হাতে শেহজাদের গাল ছুঁতেই শেহজাদ সরে পড়তে যাবে ঠিক তখনি ও শেহজাদের গায়ের উপর ঢলে পড়লো। শেহজাদের পিঠ মাথা ঘাসের উপর ঠেকলো। অপরূপা তার উপর। সে শেহজাদের বুকে শুয়ে হাসি থামানোর চেষ্টা করে বলল,
‘ আচ্ছা আচ্ছা বেশ। শুধু আপনাকে নিয়েই উতলা হবো। আর কাউকে নিয়ে নয়। টিংটিংকে নিয়েও নয়। আপনি নিকাহ’র আগে বললেন আপনাকে ভালোবাসার তাড়াহুড়োর দরকার নেই। নিকাহ’র পরে তো অন্য কথা বলছেন। আপনি কিন্তু কথা রাখছেন না। নিকাহ’র আগে আমি তো এটাই জানতাম না যে আপনি একটা হিংসুটে। এখন আপনার আসল রূপ বেরোচ্ছে। খুব খারাপ, খুব খারাপ। ‘
বলেই শেহজাদের নাক জোরে চেপে দিয়ে দ্রুত সরে পড়লো সে। কিন্তু সরতে পারলো কই? শেহজাদ তার নরম শরীরটা হেঁচকা টানে নিজের বুকের নীচে নিয়ে এল। ঝুঁকে নাকে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
‘ সাবধান করছি মহলের ফেরার আগে। সবকথা মনে থাকে যেন। ‘
অপরূপার হাসি পেল পুনরায়। সে ঠোঁটের উপর হাত চেপে ধরলো হাসি আটকাতে। তারপরও তার চোখ হাসছে। তার হাসি দেখে শেহজাদও হেসে ফেললো। মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপরূপার মাথার নীচে হাত গলিয়ে দু’হাতে মাথাটা তুলে নিকটে এনে অধরে অধর রাখলো নিবিড়ভাবে।
রূপনগরে পৌঁছানোর সাথে সাথে অপরূপা মুখ আবৃত করলো। পালকিতে চড়ে বসলো। শেহজাদ তার পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে। টিংটিংকে নিয়ে আসছে কাশীম।
অপরূপা পালকি হতে পর্দা সরিয়ে শেহজাদকে দেখলো। শেহজাদ সেদিকে তাকাতেই অপরূপা ঝট করে পর্দা ছেড়ে দিয়ে দু-হাতে মুখ ঢাকলো হেসে।
শেহজাদের ঘোড়া টগবগিয়ে ছুটে গেল সুলতান মহলের দিকে। থামলো প্রাচীর ঘেরা সুলতান মহলের লোহার সিংহদ্বার পার করে। তার পেছন পেছন এসে থামলো পালকির বেহারারা।
সিভান হৈহৈ করে বলে উঠলো,
‘ ভাইজান এসেছেন। শেহজাদ ভাইজান। ‘
সে বলতে বলতে ছুটে এল। শেহজাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। শেহজাদ ওকে কোলে তুলে গালে ঠোঁট চেপে ধরলো। সিভান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
‘ আসসালামু আলাইকুম ভাইজান। ‘
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন আপনি? মহলের সবাই কেমন আছে? ‘
প্রিয় বেগম পর্ব ৩১
‘ সবাই একটুও ভালো নেই আপনি ছাড়া। বড়মা খুব কাঁদে। আর শেরহাম ভাইজান….
সে বলতে বলতে থেমে গেল শেহজাদের চোখ অনুসরণ করে। শেহজাদের চোখ থমকেছে সদর দরজা পার হয়ে সকলের পেছনে এসে দাঁড়ানো শেরহামের কাছে। তার চেহারা হিংস্র।