প্রিয় বেগম সিজন ২ পর্ব ১৮
পুষ্পিতা প্রিমা
তটিনীর উত্তেজিত মস্তিষ্ক কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই লোহার দরজাটিতে পদাঘাত পড়তে লাগলো জোরে জোরে। হয়ত এবার দরজা ভাঙার প্রয়াস চলছে। তটিনী কিছু বলে উঠার পূর্বেই শেরহাম তটিনীকে ছেড়ে দিল, তটিনী ছাড়তে চাইলো না। তার চাওয়া অপূর্ণ রেখে শেরহাম তাকে রেখে দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। তটিনী কোনোমতে দাঁড়িয়ে পড়লো। দরজার করাঘাত সাথে ডাকাতগুলোর হৈহৈ শব্দে তটিনীর গায়ে ঘাম দিয়েছে। বুক ধড়ফড় করছে। মনেপ্রাণে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো সে। শেরহাম পাগড়ি খুলে ঝেড়ে কাপড়টা খুলে ফেললো প্রায়। তটিনীর গায়ে জড়িয়ে দিল সেটি। তারপর হাতটা শক্ত করে ধরলো। দরজার ওপাশ হতে ডাকাত সর্দার গুলজার বলল,
‘ দরজা খোল সাহস থাকলে। মুখোমুখি হ। ‘
শেরহামের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এল। তটিনী ওর দু’হাতে শেরহামকে ধরে রাখলো। দোয়াদরুদ পড়তে লাগলো। দরজার করাঘাত বাড়তে বাড়তে শেরহাম তার গায়ের চাদরের নীচ হতে দাহ্য বোমা বের করে ছুঁড়ে দিল দরজার নীচ দিয়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তটিনী স্তব্ধ। চিৎকার দিয়ে উঠলো সেও বাকিদের সাথে সাথে। বিকট শব্দ কান ঝালাপালা করে দিল। সাথে সাথে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো আগুনের লেলিহান শিখা। মুহূর্তেই আগুনের কালো কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল চারপাশ। দরজাটি পুড়তে পুড়তে ধপাস করে পড়ে যেতেঔ তটিনীকে নিয়ে সরে পড়লো শেরহাম। তটিনী কাশা শুরু করলো। তার চোখমুখ লাল হয়ে এল। শেরহাম তার হাত ধরে বেরিয়ে গেল সেই কামরার ভেতর থেকে। পায়ে আগুনের আঁচ লেগে গেল। অনেকগুলো ডাকাত আহত হয়েছে। আরও ছুটে এল দলে দলে। শেরহাম তটিনীর হাত ধরে দাহ্য বোমা আরও একটি ছুঁড়ে দিল বাসভবনের ভেতরে। বিধ্বংসী আগুন জ্বলতে লাগলো দাউদাউ করে। বাসভবন থেকে বেরিয়ে প্রবেশ মুখে আরও একটি বোমা ছুঁড়লো। যদিও তার ব্যাপ্তি বেশিদূর নয়। তবে চারপাশে আগুন জ্বলছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সামনে থাকিয়ে দেখলো সকলেই তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ডাকাত সর্দার আর চন্দ্রলাল গুরুতর আহত বিধায় তারা অন্য কামরায় ধরাশায়ী হয়ে পড়ে আছে।
সামনে দাঁড়ানো কয়েকজন একসাথে ছুটে এল তলোয়ার নিয়ে। শেরহাম তটিনীকে পেছনে নিয়ে গিয়ে বুক বরাবর লাতি বসালো তাদের। পরপর দুটো দাহ্য বোমা ছুঁড়ে দিল সামনে আর পেছনে। ব্যস! ছিটকে পড়লো সকলে। ধোঁয়ায় কাশতে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে থাকলো। তটিনী খুকখুক করে কাশা শুরু করলো। শেরহাম তার হাত ধরে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের পাশ দিয়ে লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে আস্তানার প্রবেশ অভিমুখে ছুটে চললো একটা মশাল তুলে নিয়ে।
তটিনী ঘাড় ঘুরিয়ে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে থাকা ডাকাতগুলোকে দেখতে দেখতে শেরহামের সাথে সাথে পা বাড়ালো। খেয়াল করলো তার গায়ের শাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছে। আগুন দেখার সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠতেই শেরহামের পা থমকে গেল। শাড়ির আঁচলে আগুন দেখে দিশেহারা হয়ে পড়লো, হাত দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু নিভলো না। এক সময় খেয়াল করলো দলেদলে ছুটে আসছে ডাকাতদল। হাতে মস্তবড় ধারালো তলোয়ার। আরও একটি দাহ্য বোমা ছুঁড়ে তটিনীর হাত ধরে পুনরায় দৌড়াতে শুরু করলো সে। তটিনী হাঁপিয়ে উঠলো।
শেরহাম বাঁধা নৌকায় তটিনীকে নিয়ে উঠলো । তারপর শাড়ির আঁচলটি ভিজিয়ে দিল পানিতে। আগুন নিভে যেতেই বৈঠা তুললো দ্রুত।
তারপর বোমা নিয়ে ছুঁড়ে মারলো ঘাটের দিকে, ডাকাতদের বেঁধে রাখা নৌকাগুলোর দিকে। গনগন করে আগুন প্রসারিত হলো চারপাশে। শেরহাম বৈঠা তুলে দ্রুতবেগে নৌকা টানলো। নৌকা এদিকওদিক হেলে পড়তেই তটিনী একপ্রকার হাঁমাগুড়ি দিয়ে তার কাছে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে চুপটি করে বসে রইলো।
পরিস্থিতি এখনো বিপদমুক্ত নয় তাই শেরহাম বৈঠা চালাতে লাগলো দ্রুতগতিতে। এদিকে নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে এল ডাকাতদল। তাদের উদ্দেশ্য করে গোলাগুলি করতে লাগলো। তটিনী সেদিকে তাকিয়ে শেরহামকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শেরহাম তাদের নৌকাকে উদ্দেশ্য করে অবশিষ্ট থাকা বোমা ছুঁড়তেই পানি থেকে ছলকে উঠলো আগুন। তটিনী চোখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে কানচাপা দিল দু’হাতে।
নৌকা ঘাটে এসে ভীড়তেই শেরহাম তটিনীকে নিয়ে অন্য হাতে মশাল নিয়ে ছুটতে ছুটতে পাহাড়ের পাদদেশে জঙ্গলে বেঁধে রাখা ঘোড়ার কাছে ছুটে গিয়ে দঁড়ি খুললো। তার ঘোড়াকে দেখে তটিনীর ঠোঁটে হাসি ফুটলো। শেরহাম ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ আয়। ‘
তটিনী হাত বাড়িয়ে বলল,
‘ কিন্তু আমি তো..
বলার আগেই শেরহাম তাকে টেনে তুলে নিল তার পেছনে। দড়িটা দিয়ে তটিনীকে নিজের সাথে বেঁধে নিতেই তটিনী তাকে জড়িয়ে ধরলো। পিঠে মুখ লাগিয়ে বলল,
‘ ও আল্লাহ! আমি তো পড়ে মরে যাব। ‘
শেরহাম ধমকে বলল,
‘ একদম চুপ। তুই সহজে মরবি না। মরলে আমি আসার আগে মরে যেতি। অযথা ফটরফটর করবি না। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব। ‘
সারা দুনিয়ার মানুষ এসেও যদি তাকে একথা বিশ্বাস করতে বলে তটিনী করবে না অন্তত আজকের ঘটনার পর। সে মৃদু হেসে পিঠে মুখ চাপলো। শেরহাম গা ঝাড়া মেরে বলল,
‘ এমনি ধর। মুখ ঘষাঘষি করছিস কেন? ‘
তটিনী সাথে সাথে বলল,
‘ তুমিও তো আমার গালে মুখ ঘষেছ। এখনো জ্বলছে। ‘
শেরহাম তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে লাগাম টান দিল।
তটিনী তাকে দু’হাতে শক্ত করে ধরে রেখে যেতে যেতে দেখে পাহাড়ি পথ চাঁদের নীলাভ মিটিমিটি আলোয় হেসে ওঠেছে। সরু পথের দুই পাশ হতে লতাপাতা ও নাম না জানা নানা বৃক্ষের তাজা ঘ্রাণ ভেসে আসছে। শীতল বাতাস গায়ে লাগতেই অদ্ভুত পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু বৃক্ষরাজি ও দমকা হাওয়া নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে তাদের। এমন ভয়ংকর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এর পূর্বে হয়নি তার।
মশালের আলো অনুসরণ করে গহীন অভয়ারণ্যের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে ঘোড়াটি ছুটতে লাগলো। কিছুটা দূরেই কয়েকটা আগুনের মশাল দেখতেই ঘোড়াটি থেমে গেল। শেরহাম লাগাম টেনে বলল,
‘ কি হলো? চল। ‘
ঘোড়া চললো না। শেরহাম দেখতে পেল মশালগুলো। সেগুলো ধরে রাখা মানুষগুলো হেঁটে আসতে লাগলো তাদের দিকে। শেরহাম উল্টো পথে ফেরার প্রস্তুতি নেবে তার আগেই বাতাসের গতিতে শাঁ করে একটি তীর এসে বিঁধে গেল তার বাম হাতের বাহুতে। সাথেই সাথেই গর্জে উঠলো সে। তটিনী ভড়কে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই শেরহামের হাত থেকে মশাল পড়ে গেল। লাগাম ছেড়ে দিল সে। তটিনীকে সাথে নিয়ে পড়ে গেল জঙ্গলের মাটিতে। তটিনী স্তব্ধ, বাকহারা। দড়ি খুলে শুধুই ঝাঁকাতে লাগলো শেরহামকে। তীরটা দূরে ছুঁড়তেই দেখতো পেল তীর গাঁথা অংশ হতে গলগল করে রক্ত নির্গত হচ্ছে। হাতের তালু আগুণে পোড়া। তটিনী দিশেহারা, পাগলপারা। বোবার মতো শেরহামের মুখ দু’হাতে আগলে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে অস্ফুটস্বরে কেঁদে উঠলো। শেরহাম কিছু বলতেও চাইলো কিন্তু বলতে পারলো না। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা চোখদুটোর সাথে মশালটিও নিভে গেল। অন্ধকার আর ওই লোকগুলোকে এগিয়ে আসতে দেখে তটিনী কেঁদে উঠলো সশব্দে। রক্ত দেখে কাঁদতে কাঁদতে নিজেও চেতন হারালো।
বয়স্ক অতি বেঁটেমতো দুটো লোক মশাল হাতে ছুটে আসতেই শেরহামের ঘোড়াটি হামলা করে উঠলো তাদের উপর। তারা সেটিকে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে এগিয়ে এসে দেখতে পেল এক রমণী তার নিজ পুরুষের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।
শেহজাদ আর সাফায়াত কাউকেই ফিরতে না দেখে শাহানা আরও ভেঙে পড়লো। মহলে উপস্থিত অতিথিরাও একেকজন এমন ঘটনায় হতচকিত। রাত বাড়ায় যে যেই কক্ষে পেরেছে ঘুমিয়ে গিয়েছে। অপরূপা শাহানার মাথার কাছে বসে রইলো। কোনোমতে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। সকলেই বসে আছে শাহানার পাশে। সিভান ঘুমে ঢলে পড়েছে। বাকিরা সদরকক্ষে। সায়রা বিয়ের পোশাকআশাক বদলে সোহিনী আর শবনমের সাথে মহল আঙিনায় কেদারায় বসে আছে। আয়শার চোখ ফুলে গিয়েছে মায়ের সাথে কাঁদতে কাঁদতে। কারো মনে দুদন্ড শান্তি নেই।
শেহজাদ আর সাফায়াত ফিরলো একরাশ হতাশা নিয়ে। মহলের আঙিনায় বসে রইলো। সৈন্যদের পাঠিয়ে দিল আরাম করার জন্য। তারা ফিরেছে দেখে সকলেই ছুটে এল। অপরূপা এসে শেহজাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ কোনো খোঁজ পাননি? ‘
শেহজাদ দু’পাশে মাথা নাড়ায়। বলে, ভাইজান আমাদের পথ ভুলিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন। ‘
‘ আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আমার মনে হয় উনি উনার বেগমের সাথে অতটা কঠোর হতে পারবেন না। ঠিকই উদ্ধার করবেন। ‘
শেহজাদ বলে,
‘ কি করে বুঝলে? ‘
অপরূপা আমতাআমতা করে বলে,
‘ উনাদের মধ্যেকার সম্পর্ক অতটাও নড়বড়ে নয়।’
সাফায়াত শাহানার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
‘ আল্লাহর উপর ভরসা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই আম্মা। আল্লাহকে ডাকুন। ‘
তাকে খালি হাতে ফিরতে দেখে শাহানার কান্না আরও বেড়ে যায়। অনেক কষ্টে তাকে শান্ত করিয়ে ঘুম পাড়ায় সাফায়াত। আয়শা মায়ের বুক জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। সাফায়াত তাকেও ঘুম পাড়ায়। তারপর আঙিনায় এসে শেহজাদের পাশে বসে বলে,
‘ উনি কাজটা ঠিক করেননি। নাই বা গেলাম ওখানে। অপেক্ষা তো করতে পারতাম তার আশেপাশে!’
শেহজাদ হতাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ঘাড় ফিরিয়ে সায়রাকে দেখতে পায়। ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
‘ তনীকে ফিরতেই হবে। কক্ষে যাও। বিশ্রাম করো। ‘
‘ আপনি? ‘
‘ আমার চিন্তা করো না। তুমি যাও। ‘
অপরূপাও মাথা নাড়লো। সাফায়াত কক্ষে চলে গেল। তার অগোছালো কক্ষ হঠাৎ করে সুশোভিত ঠেকায় হঠাৎই খেয়াল হলো এই কক্ষে তার বেগমের আগমন ঘটেছে।
গায়ের পোশাক পাল্টে মুখে পানির ছিঁটে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিছানার পর্দা সরাতেই সায়রাকে দেখতে পেল মাথার নীচে হাত দিয়ে চোখ বুঁজা অবস্থায়। ঘরের আলো নিভিয়ে, হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে পাশাপাশি শুইয়ে পড়তেই দেখলো সায়রা চোখ মেলেছে। কিছুক্ষণ নীরবে চাওয়াচাওয়ি শেষে সে এগিয়ে এসে সাফায়াতের বুকে মাথা রেখে ডুকরে উঠলো। সাফায়াত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কপালে দুঠোঁট চেপে জড়িয়ে ধরে রাখলো বুকের সাথে।
তাদের মন মনকে ছুঁয়েছিল সেই কবে, আজই তো প্রথম, বুকে মাথা ঠেকানো আর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ানো। নীরবে কেটে গেল সময়। ভালোবাসার অপর নাম নীরবতা।
তটিনীর যখন জ্ঞান ফিরে সে নিজেকে দেখতে পায় একটা অদ্ভুত জায়গায়। গুহার মতো জায়গা। আগরবাতি আর গোলাপজলের সুগন্ধি চারপাশে। জায়গাটা পরিষ্কার ঝকঝকে। দূরেই ছোটখাটো একটা চেরাগ জ্বলছে। কামরাটির চারপাশে ছোট ছোট নুড়িপাথর। জায়নামাজ, তজবী, কলস, হাতুড়ি, সোনালী রঙের পেয়ালা আরও নানান জিনিস। শোয়া থেকে উঠামাত্র সে দাঁড়িয়ে পড়লো শক্ত বিছানার উপর হতে। একছুটে বেরিয়ে গেল সেই কামরাটি হতে। সাথে সাথেই পা জোড়া থমকে গেল। মুখোমুখি গুহাটির সম্মুখপথে আগাগোড়া সাদা জুব্বাপড়া একজন বৃদ্ধকে একটি বিশালাপাথরের উপর নামাজরত অবস্থায় দেখতে পেল। ভয়ে জমে গেল সে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এল।
চাঁদের আলোয় ফকফকা আকাশ। দূরের ঝাপসা ঝাপসা উঁচুপাহাড় দেখা যাচ্ছে। কুয়াশাচ্ছন্ন বনজঙ্গল। এখন রাত কত হবে ভাবলো সে। ইনি কি তাহাজ্জুদ পড়ছেন? হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বাড়তে লাগলো তার। পদধ্বনি শুনতে পেয়ে পিছু ফিরতেই দেখলো তার কোমর সমান দুটো লোক এসে থেমেছে। তাদের দেখে পিছিয়ে গেল তটিনী। মোনাজাত শেষে বৃদ্ধ লোকটাও তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। লোকদুটোকে কি যেন ইশারা করলো তারা সরে পড়লো। তটিনী ভয়ে ভয়ে এগিয়ে বৃদ্ধ লোকটার দিকে এগোতে যাবে তিনি আঙুল তার করলেন সামনের দিকে। তটিনী কিছু বুঝলো না। বলল,
‘ আমার সাথে আমার….
উনি ফের ইশারা করলেন সেদিকে। তটিনী সেদিকে পা বাড়ালো এইবার। যেতে যেতে পা থমকালো তার। আগুনের মশালের সামনেই বসা থাকা পুরুষের পিঠ আর মাথার পেছনের দিকটা দেখে ঠোঁটে তার হাসি ফুটলো। একমুহূর্তও দেরী না করে ছুটে গেল সে। শেরহামের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শেরহাম তাকে দেখে চোখ তুলে তাকালো। তটিনী তার নিকটে গিয়ে বসে গায়ের চাদরে নিজেকেও ঢেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখ বুঁজে বলল,
‘ ওরা কারা?’
শেরহাম তীর্যক চোখে বৃদ্ধ লোকটির দিকে তাকায়। উনি একপলক তাদের দেখে হাতে তজবী জপতে জপতে পুনরায় ফিরে যান পাথরের কাছে। শেরহামের দিকে ধীরেধীরে তাকায় তটিনী। বলে,
‘ উনি কি এখানে থাকেন? কে উনি? ‘
শেরহাম বলে,
‘ আমার নানা। ‘
তটিনী বড় বড় চোখ করে তাকায়। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে শেরহাম কঠিনস্বরে বলে,
‘ বেশিকথা বললে উনার কাছে তোকে রেখে চলে যাব।’
তটিনী তার গলা জড়িয়ে আরও শক্ত করে। বলে,
‘ তুমি যে এখন অসুস্থ। তোমার সেবা করবে কে?’
‘ দরকার নেই সেবার। ছাড়। ‘
তটিনী তার গলা টেনে ধরে গালের নখের আঁচড়ের ক্ষতে ঠোঁট ছোঁয়ায়। মুখটা তার দিকে টেনে ফিরিয়ে অজস্র চুম্বন আঁকে পুরুষালী মুখটায়। তারপর ঠোঁটের দীর্ঘ আলিঙ্গনে মত্ত হয়ে উঠে।
কয়েক মুহূর্ত পর নিজেকে ছাড়িয়ে শেরহাম রেগে জিজ্ঞেস করে,
‘ মরতে চাস তুই? ‘
তটিনীর স্পষ্ট জবাব।
‘ হ্যা। ‘
শেরহামের রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তটিনী একদৃষ্টে তাকিয়ে ভালোবাসা খুঁজে মরে। শেরহাম ওর দৃষ্টিজোড়ায় তারজন্য নিখাঁদ ভালোবাসা দেখে। সেই ভালোবাসায় সে তার হিংস্রস্বত্তার বিনাশ দেখতে পায়। তিলে তিলে গড়ে তোলা পাপের সাম্রাজ্যকে ভেঙে গুড়িয়ে যেতে দেখে। তৎক্ষনাৎ তটিনীকে সরিয়ে দিতে যাবে তখুনি তার পোশাক টেনে ধরে তটিনী বলে উঠে,
প্রিয় বেগম সিজন ২ পর্ব ১৭
‘ আরেকবার। আর চাইবো না। জীবনেও না। ‘
শেরহাম রোষাবিষ্ট চোখে চেয়ে থাকে।
ধীরেধীরে হার মানে তটিনীর জেদের কাছে। তার কোমল পেলব ওষ্ঠধর নিজের বলিষ্ঠ ঠোঁটের ভাঁজে লুকিয়ে নেয় । এই প্রথম স্বেচ্ছায় ঠোঁটের দীর্ঘ চুম্বনে রত হয় দুজন।
বেঁটেমতো লোক দুটো তাদের ডাকতে এসে এমন দৃশ্য দেখে ফেলায় একেঅপরের চোখ চেপে ধরে।