প্রিয় বেগম সিজন ৩ গল্পের লিংক || পুষ্পিতা প্রিমা

প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ১+২
পুষ্পিতা প্রিমা

শাহানার স্বামী প্রবাস থেকে ফিরছেন। এ নিয়ে সুলতান মহলে আনন্দের ধুম পড়েছে। আয়শা আর শবনমের আনন্দের শেষ নেই। তটিনীও ভীষণ উত্তেজিত বহুদিন পর আব্বাকে দেখবে বলে। শোহরাবের সাথে তার নানাজানের প্রথম সাক্ষাৎ! তবে মনের ভেতরে একটা খচখচানিও রয়েছে। তার এত অস্বস্তি আর চিন্তার কারণ শেরহাম। বাবা দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর বিদেশ থেকে ফিরছেন। শেরহাম সুলতান মহল ছাড়ার পরপরই আব্বা বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন। বড় মামীর সমস্ত কুকীর্তি আব্বা স্বচক্ষে দেখেছিল। স্বাক্ষী ছিলেন শেরহামের সমস্ত অপরাধ সম্পর্কে, মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধের তাড়নায় যে সে পথভ্রষ্ট হয়েছিল তার চাক্ষুস প্রমাণ তটিনীর পিতা সোলেমান মাহমুদ।

শেরহাম সুলতানের অপঘাতের সংবাদ শুনে তিনি প্রবাস গমন করলেও দীর্ঘ পনের বছর পর ফিরে আসার কথা জানতে পারেননি। জানানো হয়নি উনাকে। কিন্তু যখন সে নিজেই সেই মানুষটার সাথে জড়িয়ে পড়লো, তার জীবনের আধ্বান হয়ে উঠলো, হয়ে উঠলো তার সন্তানের পিতা তখন চিঠির মাধ্যমে সেই খবর দূর প্রবাসে না পৌঁছে থাকেনি। চিঠিতে উনি কি জেনেছেন তা সম্পর্কে তটিনী অবগত নয় তবে তটিনী এতটুকু জানে যে সেই থেকে কোনো চিঠিতে তার কথা বাবা উল্লেখ করেননি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শাহানা জোরপূর্বক তার কথা, শোহরাবের জন্মের কথা, শোহরাবের আব্বার প্রত্যাবৃত্ত হওয়ার কথা সমানে উল্লেখ করলেও উনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি উনার ফিরতি চিঠিতে। তা থেকে তটিনী স্পষ্ট ধারণা পেয়েছিল যে, আব্বা খুশি নন। যেখানে পুত্রবধূ সায়রা, নাতি সামির, এমনকি কাজের মেয়ে ফুলকলির কথা পর্যন্ত তিনি বাদ রাখেন না সেখানে উনার বড়কন্যা সম্পর্কে দুটো লাইন লিখার ফুরসত উনি পেলেন না কেন?
তটিনীর জীবনে সমস্ত আঁধার কেটে গিয়েছে। কিন্তু তা পুরোপুরি নয়। তার জীবনে ঝড়ের মতো যে মানুষটা সব লন্ডভন্ড করে দেয়ার জন্য এসেছিল সেই মানুষটাকে ঘিরে যখন সে বাস করতে শুরু করেছে তখন চারপাশ থেকে বিষবাক্য ছুটে এসেছে অগণিত। এখনো আসে। হাঁটে-বাজারে, মেলা মজলিশে, আচারে-অনুষ্ঠানে মানুষ ইনিয়ে বিনিয়ে বক্রভাবে বিষতীর ছুঁড়তে সংকোচ করে না। তটিনী স্বাক্ষী সবকিছুর। তবে তার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন সবার ধারণাকে বদলে দেবে শেরহাম সুলতান।

অপরূপা তার ভিটেবাড়ি দেখতে ইন্দিরাপুর এসেছে। আলিজাকে নিয়ে আসেনি শুধু শোইয়াবকে নিয়ে এসেছে। কারণ আলিজা তার আব্বার সাথে বেশি সময় কাটায়। তার আব্বা যেদিকে সেও সেদিকে। শোইয়াব মায়ের পিছু ছাড়ে না। তাই অপরূপা শোইয়াবকে নিয়ে এসেছে। সাথে ফুলকলিও এসেছে।
বাবুদের আকীকার সময় চাচী আর চাচাকে চিঠিতে আমন্ত্রণ করে অপরূপা সুলতান মহলে নিয়ে এসেছিল। চাচা চাচীর মুখে তখন কোনো কথা ছিল না। তারা যেন তখন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ফেরার সময় অপরূপার হাত ধরে বলেছেন ভিটেমাটিতে যেন সে একবার পা রাখে। অপরূপা পিতৃতুল্য চাচার কথা রাখতেই ছেলেকে নিয়ে ভিটেমাটি দেখতে এসেছে। তাকে দেখার জন্য দূর-দূরান্ত হতে অনেকেই ছুটে এসেছে। অপরূপা সবাইকে পেয়ে ভীষণ খুশি। তার বিপুল পরিবর্তন দেখে পাড়াপড়শিরা হতভম্ব। কেউ কেউ জানতে চাইলো , তোর সুলতান এদিকে পা দেবে না?
অপরূপা জানালো, আগামী যাত্রাপালায় উনি ইন্দিরাপুরে আসবেন। তখন এদিকে একবার আসতে বলব। তোমরা কিন্তু জামাই আদর করতে ভুলবে না। ”

সবাই খুব হেসেছিল সেদিন। ইনিয়েবিনিয়ে রহমানের কথা অনেকে জানতে চেয়েছে ঠিকই কিন্তু অপরূপা এড়িয়ে গিয়েছে। সবার সবটা অজানা নয়, আবার সবটা জানে এমনও নয়। সবকিছু জানতেই হবে এমন কোনো কথাও নেই। সে সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে চায় না।

অপরূপা বাড়িঘর ঘুরেফিরে দেখে শোইয়াবকে নিয়ে হাজির হলো সুভাদের বাড়িতে। সুভার মা কাকীরা সকলেই তাকে দেখে যতখানি আশ্চর্য হলো তার চাইতে বেশি আবেগি হয়ে পড়েছিল। সুভা শ্বশুরবাড়িতে। তাই সেই বাড়ির আঙিনা, পথঘাট সবগুলো চোখে পড়ার সাথে সাথে অপরূপার শুধুই সুভার কথা মনে পড়েছে। সুভার জন্য একটা চিঠি লিখে তা সুভার মায়ের হাতে দিয়ে সে রূপনগরে ফিরে এসেছে।
যদিও চাচী তাকে কয়েকটা দিন থাকতে বলেছে কিন্তু সে আলিজার জন্য থাকতে পারেনি। সৈন্যরা সে গ্রামে আসার পরেরদিন ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে হাজির। জানালো, আলিজার কান্না থামানো যাচ্ছে না। তার আম্মাকে প্রয়োজন। আম্মাকে মহলে না পেয়ে সে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে।
অপরূপার আর কিছু করার ছিল না। মা সামনে থাকলে সে বাবার কোল থেকে নামবেও না। কিন্তু চোখের আড়াল হলেই মা মা করে কেঁদে বেড়াবে।

সে মহলে ফেরার পর আলিজা অন্দরমহল থেকে ছুটতে ছুটতে মহল প্রাঙ্গনে চলে এল। গাড়ি থেকে অপরূপা নামার সাথে সাথেই আলিজা ছুটে এসে মায়ের পা দুটো আঁকড়ে ধরে মুখ তুলে চাইলো। অপরূপা নিকাবের আড়ালে হাসলো। কোলে তুলে নিতেই আলিজা নিকাব তোলা মাত্রই মায়ের চেহারা দেখে ফিক করে হেসে ডাকলো, আম্মা!
অপরূপা তার কোমল গালে ঠোঁট চেপে চুমু খেয়ে বলল, ” মা ভালো আছে? ”
আলিজা দু’পাশে মাথা নেড়ে জবাব দিল, ” ভানা নাই।”
” আপনার আব্বা কোথায়?”
” আব্বাও ভানা নাই। ”

সায়রা, শবনমরা এসে দাঁড়িয়েছিল তার পেছনে। আলিজার কথা শুনে তারাও হেসে উঠলো।অপরূপা তাকে বুকে জড়িয়ে মহলে প্রবেশ করলো। শোইয়াব সায়রার কোল বেয়ে মহলে চলে গিয়েছে ইতোমধ্যে। শাহানা শোইয়াবকে কোলে নিয়ে সদরককক্ষে এসে বলল,
” মাকে বোরকা পড়া অবস্থায়ও চিনে ফেলেছে। বাবাগো। কাল সারারাত তো শেহজাদকে ঘুমাতেই দেয়নি।”
খোদেজা বলল,
” এরপরের বার থেকে তোমার মেয়ে তুমি নিয়ে যেও তো। শেহজাদকে জ্বালিয়ে মেরেছে কাল সারারাত। কারো কোলেও আসে না। বজ্জাত মেয়ে। ”

অপরূপা হাসলো। আলিজাকে জিজ্ঞেস করলো, “সত্যি? সবাইকে জ্বালিয়েছেন?
আলিজা অপরূপার বুক থেকে মুখ তুলে চোখ রাঙিয়ে বলল, ” ডাডুউউ সুপ ”
” দেখো দেখো আমায় চোখ রাঙায়। তার দাদা জীবনে চোখ রাঙায় নাই আমাকে। ”
অপরূপা আলিজার ছোট্ট মাথাটা বুকে চেপে কপালে চুমু দিয়ে বলল, ” আমার মেয়ে তো ছোট আম্মা। ”
কক্ষ থেকে তটিনী এল শোহরাবকে নিয়ে। শোহরাব সবে ঘুম থেকে উঠেছে। কান্না করছিলো। শোইয়াব এসেছে শুনে তটিনী তাকে নিয়ে এল। বলল,
” শোয়েব সোনা এসেছে? ভাইজানের কত মন পুড়ছিলো তোমার জন্য। ওই দেখো তোমার ভাই চলে এসেছে। ”
শোহরাব শোইয়াবকে দেখে শান্ত হয়ে গেল। তার কান্না থেমে গেল। কান্নাচোখে হেসে তটিনীর কোল থেকে নেমে শোইয়াবের কাছে ছুটে গেল সে। শোইয়াবও এগিয়ে গেল। দুজনেই গলাগলি করে হাসতে লাগলো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।

তটিনী অপরূপার সাথে জড়াজড়ি করে বলল,
” মেয়ে রেখে গিয়ে আমার ভাইটাকে কি বিপদে ফেললে ভাই। মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পরও দেখি আলিজা কাঁদছে। ”
অপরূপা বলল,
” সবাইকে নাস্তানাবুদ করে ফেলেছেন মা। এমনটা কেউ করে? আব্বাকে কষ্ট দিয়েছেন?”
আলিজা দু’পাশে মাথা নেড়ে বলল, ” না’না “।
তটিনী গাল টেনে দিয়ে বলল,

” না’ না। এখন মাকে পেয়ে সে সাধু। ”
সবাই একসাথে হেসে উঠলো। শাহানা বলল,
” তোমাদের মামু আসছে। শুনেছ সে খবর? ”
অপরূপা আগ্রহভরে জানতে চাইলো,
” ওমা কবে? এ তো খুশির খবর। ”
শাহানা হেসে বলল,
” হ্যা, সন্ধ্যা নাগাদ মহলে হাজির হবে। শেহজাদ আর সাফায়াত সেখানে গিয়েছে। তাই তো সৈন্য পাঠিয়ে দিয়েছে তোমাকে নিয়ে আসার জন্য। ”
” আমিও থাকতাম না। আমার মেয়েকে রেখে গিয়েছি আর আমি ওখানে নিশ্চিন্তে বেড়াবো? যাইহোক ফুলি আপা আমি পোশাক পাল্টে আসি।”

শেরহামের ঘোড়া মহল প্রাঙ্গনে হাজির হতেই তটিনী বারান্দা দিয়ে উঁকি দিল। শোহরাবকে ডেকে বলল,
” শোহরাব কোথায় তুমি? তোমার আব্বা এসেছে। দেখে এসো। ”
শেরহাম মহলে প্রবেশ করার সাথে সাথেই শোহরাব কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। শোহরাবকে কোলে তুলে নিয়ে সে বলল, ” কি অবস্থা? ”
শোহরাব বলল, ” ভাই এছেছে। ”
” এসেছে? ভালো হয়েছে। ”
আলিজা পিলারের পেছন হতে উঁকি দিয়ে ডাক দিল,
” অ্যাইই!”
শেরহাম যেতে যেতে থমকালো। পিলারের পাশে ছোট্ট মেয়েটিকে দেখে ভুরু উঁচাতেই আলিজা লুকিয়ে গেল। শোহরাব আঙুল দেখিয়ে বলল,

” বুন। ”
আলিজা পুনরায় উঁকি দিল। আবারও ডাকলো,
” অ্যাইইই!”
শেরহাম আবারও তাকালো। আলিজা হেসে বলল,
” কালু ভাইচান। ”
শোহরাব তা শোনামাত্রই ঠোঁট টানলো। আলিজা বলামাত্রই দৌড় দিয়েছে রসাইঘরের দিকে।
শেরহাম মৃদু হেসে শোহরাবকে নিয়ে কক্ষে হাজির। তটিনী তৎক্ষনাৎ এসে বলল,
” এই জানো আজ..
তার আগেই শোহরাবের দিকে নজর গেল। বলল,

” ওমা কি হয়েছে আব্বা? ঠোঁট টানছো কেন?”
” বুন কালু ভাইচান বুলেছে। ”
তটিনী একগাল হাসলো। বুকে টেনে নিয়ে বলল,
” তো কি হয়েছে? কালো আমার কোলের আলো।”
শেরহাম পাগড়ি রাখতে রাখতে বলল,
” ওকে এত কথা কে শেখালো? ”
” আরেহ কে শেখাবে? ও এমনিতেও পাকা বুড়ি। যে যা বলে তা শিখে ফেলে। তারপর নিজে নিজে বলে। ”
” ওকে কালো ডেকেছে কে? তুই ডেকেছিস? ”
তটিনী অবাক গলায় বলল,
” আজব ব্যাপার? আমি আমার ছেলেকে কালো ডাকবো? আর ডাকলেও তাতে কি যায় আসে? ও পাতিলের তলার মতো কালো কুচকুচে হলেও আমার বাচ্চা। সবসময় আমার দোষ দিতে তোমার ভালো লাগে? ”
” প্যানপ্যানানি শুরু হয়ে গেছে তোর? ”

শোহরাব কোল থেকে নেমে গেল। খেলনা নিয়ে বেরিয়ে গেল। তটিনী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলো। শেরহামের কাপড়চোপড় গুছিয়ে বিছানায় রাখলো। শেরহামের মুখটা শুকনো দেখাতেই জগ থেকে পাত্রে পানি ঢেলে শব্দ করে জগটা রাখলো। শেরহাম ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তটিনী পানির পাত্র বাড়িয়ে দিল অন্যদিকে মুখ করে। শেরহাম পাত্র হাতে নিয়ে তটিনীর মুখে দৃষ্টি স্থির রেখে পানি খেল। খাওয়া শেষে বা হাতে মুখ মুছে বলল,
” কি যেন বলতে চেয়েছিলি? ”
তটিনী পানির পাত্রটা সশব্দে রেখে বলল,
” বলার ইচ্ছে নেই। ”
” ইচ্ছে আবার কোথায় গেল? ”
” সেটা তোমাকে বলতে হবে? ”
” আমাকে না বলে যাবি কোথায়? ”
তটিনী অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে রেখে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। শেরহাম বলল,
” গোসল করে আসি। খাবার এনে রাখ। ”
তটিনী সাথে সাথেই বলল,

” না তুমি খাবার ঘরে সবার সাথে খাবে। আজ আব্বা আসবে। তোমাকে টেবিলে বসেই খেতে হবে। ”
শেরহাম তার বাবার আগমনের কথা শুনে স্তম্ভিত চোখে ক্ষণকাল চেয়ে রইলো। তারপর ফুঁস করে শ্বাস ফেলে বলল,
” তোর বাপ কি রাষ্ট্রদূত যে সে আসছে বলে আমাকে আমার নিয়মকানুন বদলাতে হবে? টেবিলে খাব না। দরকার পড়লে বাইরে গিয়ে খাব। আর না খেলেও মানুষ মরে না। অভ্যাস আছে। ”
তটিনী ফিরে তাকালো তার চোখাচোখি। শেরহাম আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না।

তটিনী চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ক্ষণকাল পরে ছাড়লো। এ কেমন জেদ তার? আজ পর্যন্ত সবার সাথে বসিয়ে তাকে খাওয়ানো গেল না। বাপ ভাইদের সাথে বসে খেলে কি এমন হবে? এমন তো না যে তারা সবাই তাকে হাঁটতে বসতে কথা শোনাচ্ছে আগের মতো। সবাই চাইছে যাতে সে সবার সাথে স্বাভাবিক হয়। বিশাল এই মহলে শুধুমাত্র বাচ্চাগুলো আর তটিনীই যেন তার নিজের মানুষ। বাকিরা কেউ না। তাদের সাথে কথা বলা যাবে না। একসাথে বসে খাওয়া যাবে না। আলাপ-আলোচনা করা যাবে না। তটিনী কতকিছু করলো তারপরেও তাকে টেবিলে খাওয়াতে বসাতে পারলো না। তটিনীর চোখের কোণা ভিজে উঠলো। আব্বা যদি এসে দেখে সে কারো সাথে দু-দন্ড কথা বলে না, আলগা আলগা থাকে, এই মহলের কারো সাথেই তার ভালো বনিবনা হয় না তাহলে কি মনে করবেন উনি? তার একরোখা জেদ যে তাকে ঘিরে তটিনীর করা উচ্চঅহমিকাকে ভেঙেচুরে শেষ করে দেয় তা কি সে বুঝে না? আয়শা কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে বলল,

” আপু রান্না শেষ হয়েছে। ভাইজানের জন্য ভাত আনবো? ”
তটিনী ওড়নার কোণায় চোখ মুছে গলা পরিষ্কার করে বলল, ” আমি নিয়ে আসবো। ”
আয়শা কক্ষের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখলো ভাইজান নেই। সে বলল,
” শোহরাবকে খাইয়ে দেই তাহলে? ও কি ভাইজানের সাথে খাবে? আম্মা বলছিল আলিজা আর শোইয়াবের সাথে ওকে খাইয়ে দেবে কিনা। ”
” খাইয়ে দিতে বলো। ”
” আচ্ছা। ”
আয়শা চলে গেল। তটিনী পালঙ্কে বসে রইলো পা ঝুলিয়ে। শেরহাম গোসল সেড়ে এসে ভেজা কাপড়গুলো বালতিতে রেখে বলল,

” এগুলো শুকোতে দে। ”
তটিনী কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কাপড় শুকোতে দিয়ে ফিরে এসে শেরহামের পেছনে দাঁড়ালো। শেরহাম গায়ে পোশাক জড়ালো। তটিনীর উপস্থিতি দেখে শেরহাম কিছু বলে উঠার আগেই তটিনী পেছন থেকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল,
” খেতে চলো। দয়া করে জেদ করো না। আমাকে ছোট করো না সবার সামনে। সবাই চায় তুমি তাদের সাথে খেতে বসো। আজ আব্বা আসবে, তুমি এমন করলে আমি আব্বার সামনে কিভাবে মুখ দেখাবো? ”
শেরহামের পেটের কাছে এসে তটিনীর দুহাত জোড়া বেঁধেছে। সে ধীরহস্তে হাতজোড়া ছাড়িয়ে নিল। তটিনীর মুখোমুখি হয়ে বলল,

” ওরা কেউ বলেছে, ওদের সাথে খেতে বসতে? আমাকে নিয়ে মাতব্বরি করতে কে বলেছে তোকে? ”
তটিনী মুখ খুললো বলার জন্য। শেরহাম হাত তুলে বলল,
” হয়েছে। পথ ছাড়। ”
তটিনী তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আচ্ছা রাগ করো না। একটু বুঝার চেষ্টা করো তুমি সহজ না হলে ওরা কিভাবে তোমার সাথে সহজ হবে? এতদিন হয়ে গেল, আর কত? ”
শেরহাম তটিনীকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করলো। তটিনী দু’পাশে মাথা নেড়ে বলল,
” না না। আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো। ”
তার চোখে জল। শেরহাম একদৃষ্টে চেয়ে থাকলো কয়েকপল। কন্ঠস্বর নরম করে বলল,
” খাবার নিয়ে আয় নয়ত যাচ্ছি। ”
তটিনীর গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। শেরহামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,
” এখন যাহ। আমিও খাব না, তুইও খাবি না।যাহ।”
” তুই তুকারি করছিস কেন বেয়াদব? ”
” একশোবার করব। ”

দরজার কাছে কে এসে যেন দাঁড়ালো শেরহাম তাই উচ্চবাচ্য করলো না। আঁড়চোখে তটিনীর মুখপানে চেয়ে বেরিয়ে গেল গায়ের চাদর নিয়ে। সে বেরিয়ে যেতেই তটিনী হুহু করে কেঁদে উঠে বলল,
” পাষাণ লোক। ”
কক্ষে শবনম প্রবেশ করলো তক্ষুণি। বলল,
” আপু ভাইজান তো বেরিয়ে গেল। আবার কি হয়েছে? না খেয়ে বেরিয়ে গেল তো? ”
তটিনী কান্নাজড়ানো গলায় তেজ দেখিয়ে বলল,
” যাক। ”
কিছুক্ষণ পরে শাহানাও এল। বলল,
” তনী কি হলো? শেরহাম না খেয়ে বেরিয়ে গেল কেন? ওকে আজ মহলে থাকতে বলোনি? তোমার আব্বা আসছে একথা বলোনি? ”
তনী মাকে পিছু করে দাঁড়িয়ে শুকনো কাপড়গুলো ভাঁজ করতে করতে বলল,
” বলেছি। সে খাবে না। খিদে নেই বলেছে। ”
শাহানা সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো।

মাগরিবের পরপরই ঘোড়ার গাড়ি এসে থামলো মহলের সিংহদ্বার পার হয়ে। মেয়ে, বাচ্চা কাজের বুয়া সকলেই সদরদরজার সামনে ভীড় জমিয়েছে। আয়শা, শবনম আগেভাগেই গাড়ির কাছে ছুটে গিয়েছে। শেহজাদ আর সাফায়াত হাসিমুখে অন্দরমহলে প্রবেশ করলো। শোইয়াব শেহজাদের কোলে ঝাঁপ দিয়েছে। শেহজাদ তাকে আদর করে বলল,
” চলে এসেছেন? আম্মা কোথায়? ”
শোইয়ান আঙুল তাক করে বলল,
” উ”খানে। ”
শেহজাদ তাকে আদর করে নামিয়ে দিতেই সে দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে গেল শোহরাবের সাথে। শেহজাদ কক্ষের দিকে এগুতে এগুতে বলল,
” তনী! মামা চলে এসেছে। ”
তটিনী উঁচু স্বরে বলল,
” হ্যা হ্যা যাচ্ছি। ”
অপরূপা কক্ষ থেকে মাত্রই বেরিয়েছে মাথা ঢেকে। শেহজাদের বউ হিসেবে মামা তাকে প্রথম দেখবে তাই খোদেজা ভালো একটা শাড়ি ওড়না গায়ে দিতে বলেছিল। তা পরিধান করে তড়িঘড়ি করে বেরোতে গিয়ে শেহজাদের মুখোমুখি পড়তেই হেসে ফেললো। শেহজাদও হাসলো। বলল,

” এসে পড়েছেন? ”
” একরাতের মধ্যেই চোখ বসে গেছে। কি অদ্ভুত! ”
” মা ছাড়া দিন কাটানো যায়, রাত কাটানো যায়? তোমার মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে ছেড়েছে। ”
অপরূপা আবারও হাসলো। বলল,
” মামা চলে এসেছে। আমি যাই। আপনি পোশাক-আশাক পাল্টে হাতমুখ গোসল সেড়ে নিন। আমি আসছি। সবাইকে একসাথে খেতে দেব। ”
অপরূপা চলে যেতে উদ্যত হতেই শেহজাদ তার হাত টেনে দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো। অপরূপা সংকুচিত হয়ে দরজায় চেপে গিয়ে বলল,
” আরেহ সবাই খুঁজবে আমাকে। ”
শেহজাদ বলল,
” খুঁজুক। ”

আয়শা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো সর্বপ্রথম। সোলেমান মাহমুদ চেয়ে রইলেন। চিঠিতে শাহানার বর্ণনা হেতু তিনি আন্দাজ করতে পারলেন এটা আয়েশা। আয়শা চোখ বুঁজে রইলো। তার শরীরের কাঁপুনি অনুভব করে সোলেমান মাহমুদ হেসে বললেন,
” এটা আমার ছোট ময়না দেখি। কত বড় হয়ে গেল! ভাইজান শবনমের সাথে সাথে একেও নিকাহ দিতে হবে। ”
শেরতাজ সাহেব হাসলেন। বললেন,
” হ্যা, দুজনেই বিবাহযোগ্য। তুমি যখন এসেই গিয়েছ, চিন্তা কিসের? ”
শবনমও এসে জড়িয়ে ধরলো। মাথা তুলে বলল,
” আমাকে চিনতে পেরেছেন আব্বা? ”
” আমার শবনম? ”
শবনমের চোখদুটো জলে ভরে উঠলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েদের চুলে আদর করতেই সাফায়াত বলল,
” আব্বা এইতো সামির। ”
সামির মাথায় হ্যাট পড়া কাঁচাপাকা চুলওয়ালা চশমা পরিহিত ভদ্রলোককে দেখে ভয়ে সিটিয়ে গেল।
” তোমাদের বউমা। ”

সায়রা কদমবুসি করলো। উনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,
” ছেলে তো মায়ের মতো হয়েছে। ”
সায়রা হাসলো। সামিরকে কোলে নিয়ে আদর করতেই সামির চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো। উনি তারপরও আদর করে গেলেন। শূন্যে ছুঁড়ে আবার খপ করে ধরে ফেলে বললেন,
” আমি দাদাভাই। ভয় পাওয়ার কি আছে ব্যাটা? ”
সবাই একসাথে হেসে উঠলো। হাসির একফাঁকে সোলেমান মাহমুদ দেখলেন উনার পোশাক টেনে ধরেছেন একটা ছোট বাচ্চা। উনি নীচে তাকিয়ে সাফায়াতকে জিজ্ঞেস করলেন,
” এটা কার? ”
শোহরাবের দিকে চোখ পড়া মাত্রই আচম্বিত কথা হারিয়ে বসলো সবাই। শোহরাব কোলে নেয়ার জন্য পোশাক টানছে।
বাচ্চাটির চেহারা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ঠাহর করে উঠার আগেই সবার দেখাদেখি উনি সদর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তটিনীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। তটিনীর চোখে জল টলমল করছে। উনি কপাল কুঁচকে মেয়ের মুখপানে চেয়ে রইলেন।

শাহানা অপরূপা আর হামিদাকে নিয়ে সোলেমান সাহেবের দিকে গেলেন। তটিনী সবার পেছনে দাঁড়িয়ে রইলো। শাহানা পিছু ফিরে তটিনীকে ডাকলেন,
” তনী এসো। তোমার আব্বার কাছে এসো। এসো না। ”
তটিনী ধীরপায়ে এগিয়ে গেল। শোহরাবকে সাফায়াত কোলে তুলে নিয়েছে। শাহানা অপরূপা আর হামিদার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল সোলেমান সাহেবকে।
তটিনীকে টেনে নিয়ে এসে শোহরাবকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
” আমাদের তনী। আর এটা আমার নানুভাই। ”
সোলেমান সাহেবের কোলে সামির এখনো কান্না করে যাচ্ছে। তটিনী কদমবুসি করলো। কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

” আমাকে চিনতে পেরেছেন আব্বা? ”
সোলেমান সাহেব তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলেন।
” চেনা যাচ্ছে না। ”
উপস্থিত সকলেই চুপ হয়ে গেল। প্রগাঢ় এক নিস্তব্ধতা ঢেউ খেলে গেল সেই মুহূর্তে। তটিনীর চোখের জলের পরিমাণ তরতরিয়ে বাড়তে লাগলো। নীরবতা ভেঙে পেছন থেকে শাহজাহান সাহেব বলে উঠলেন,
” আরেহ মানুষটাকে আগে মহলে ঢুকতে দে। কি আজব ব্যাপার! এখনো বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস। এই শাহানা! ”
শাহানা থতমত খেয়ে বললেন,

” হ্যা ভাইজান। সাফায়াত চলো তোমার আব্বাকে নিয়ে। ”
সাফায়াত করুণ চোখে তটিনীর দিকে একপলক তাকালো। তটিনী চোখ ঘুরিয়ে নিল। চোখের জল আড়াল করলো। সাফায়াত সোলোমান সাহেবকে নিয়ে গেল মহলে। সবাই চলে যেতেই শাহানা তটিনীর মুখপানে মমতার চোখে তাকালেন। অপ্রস্তুত হেসে শোহরাবের গালে চুমু দিয়ে বললেন,
” ভাই নানুভাইকে দেখেছ? ”
শোহরাব উচ্চারণ করলো ” নান্নুভাই?”
” হ্যা। আমার নানুভাইয়ের জন্য অনেক মিষ্টি এনেছে। অনেক খেলনা এনেছে। খেলনা নেবে? ”
শোহরাব মাথা দুলালো। তটিনী তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। শোহরাব কোলে ঝাঁপ দিতেই তটিনী পিঠে হাত বুলিয়ে তার গালে চুম্বন করে শাহানার উদ্দেশ্যে বলল,

” আমি কক্ষে যাচ্ছি ওকে নিয়ে। ”
” ওকে দাও। তোমার আব্বা ওকে..
আর কিছু বলতে দিল না তটিনী। সজলনেত্রে চেয়ে বলল,
” আব্বা তো আমাকে চিনতেই পারছেন না। সেখানে আমার ছেলে কি করবে? শোহরাব হাত বাড়িয়ে ছিল উনি কোলেও নিলেন না। আমার ছেলেটা কি দোষ করেছে আম্মা? ”
” উনি তো দেখেননি তুমি ভালো আছ শেরহামের সাথে। স্বচক্ষে দেখলে ভুল ভেঙে যাবে মা। বাবার উপর এমন অভিমান করতে নেই। কতগুলো বছর পর উনি এলেন। তোমাদের ভালো চাওয়া ছাড়া উনার আর কোনো স্বার্থ নেই। আর আমার নানুভাই! নানুভাইকে আদর না করে থাকতে পারবে? নানুভাই চলো নানুমণির সাথে। ”
শাহানা হাত বাড়িয়ে দিল। তটিনী শোহরাবের পিঠ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
” ওর খাওয়ার সময় হয়েছে আম্মা। আমি ওকে খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছি। ”
” বেশ। ওর খাওয়া হয়ে গেলে আসরকক্ষে চলে এসো। তোমার বাবাকে দেখিয়ে দেবে তুমি কতটা ভালো আছ। তোমার নানাজানের সিদ্ধান্ত-বিরোধী ছিলেন উনি। তুমি প্রমাণ করবে তোমার নানাজানের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। ”
তটিনী অকপট হেসে বলল,

” আমার সুখ আমার মনে আম্মা। আর এটার কোনো প্রমাণ হয় না। আমি কাউকে প্রমাণ দিতে চাই না। আব্বার উপর আমার অভিমান নেই। শুধু আফসোস একটাই আমাকে প্রতিবারই ওই মানুষটার হয়ে সবার বিরুদ্ধে লড়তে হয়। কেউ আগ বাড়িয়ে একফোঁটাও তাকে বুঝতে চায় না, বুঝে উঠতে পারে না। ”
শাহানাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তটিনী চলে গেল। সদরকক্ষে সোলেমান সাহেবের সাথে শাহজাহান সাহেব আর শেরতাজ সাহেব বসা ছিলেন। শেহজাদ আর সাফায়াতও ছিল। সোলেমান সাহেবের কোলে ছোট্ট আলিজা। সে উনার চশমাটা টেনে নেয়ার জন্য কাড়াকাড়ি শুরু করেছে। তটিনীকে যেতে দেখে শেরতাজ সাহেব শোহরাবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

” ভাই দাদাভাইয়ের কাছে এসো।”
শোহরাব দু’পাশে মাথা নাড়তে লাগলো।
তটিনী তাকে নিয়ে কক্ষে চলে এল। কক্ষে আসামাত্রই দরজা লাগিয়ে হেলান দিয়ে শোহরাবের মুখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। অবিকল বাবার মতো চোখ, নাক, কপাল, গায়ের রঙ। সবটা। এত মায়া মুখটাতে। তটিনী চোখ ফেরাতে পারেনা সহজে। শোহরাব মাকে ওভাবে তাকাতে দেখে মায়ের নাকের সাথে ধুম করে নিজের মাথা ঠেকিয়ে বলল, ” আম্মা! ”

তটিনী তার দু-গালে আদর করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো।
সোলেমান সাহেব আসার সময় সবার জন্য কমবেশি উপহারসামগ্রী নিয়ে এসেছেন। শাহানা আর সায়রা সবগুলো একে একে সবাইকে বিলি করে দিল। বাদ যায়নি ফুলকলি, আর মতিবানুও। দুই নতুন বউ অপরূপা আর সায়রার জন্য আলাদা উপহার সামগ্রী এনেছেন উনি। বাড়ির মেয়েদের জন্যও পোশাক-আশাক সহ, অলংকরণ এনেছেন। বাচ্চা আর পুরুষেরাও বাদ যায়নি। তটিনী শোহরাবকে বুকে নিয়ে শুয়েছিল। চোখটা লেগে এসেছিল। হঠাৎ দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুনে চোখ ছুটে গেল তার। বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলতেই দেখলো আয়শা তার আর শোহরাবের জন্য বরাদ্দকৃত উপহারসামগ্রীগুলো নিয়ে এসেছে। সে দেখলো তার জন্য একটা শাড়ি, হাতের কাঁকন, আর শোহরাবের জন্য পাঞ্জাবি, কিছু খেলনা, আর কিছু মিষ্টান্ন। আয়শা হেসে বলল,
” বোঝা বেশি হয়ে যাচ্ছিলো তাই আব্বা আর বেশি কিছু আনতে পারেননি। ”
তটিনী বলল, ” আচ্ছা রেখে দাও ওখানে। ”
আয়শা টেবিলের উপর রেখে চলে গেল।

প্রিয় বেগম সিজন ২

শেরহামের ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি টের পেতেই শোহরাব সদরকক্ষের দিকে ছুটে গেল। সিভান ডেকে বলল,
” কোথায় যাচ্ছ বাবাই? দাঁড়াও। পড়ে যাবে। আস্তে দৌড়াও। ”
শোহরাব কথা শুনলো না। শেরহাম ঘোড়াশালে ঘোড়া বেঁধে গায়ের চাদর খুলে তা ঝাড়তে ঝাড়তে মহলে প্রবেশ করলো। এত জমকালো আয়োজন দেখে ভুরু কুঁচকালো। সদরকক্ষে পায়ের উপর পা তুলে বসে বাপ চাচার সাথে খোশগল্পে মেতে থাকা লোকটার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো তার কক্ষপথে। সাফায়াত আর শেহজাদ একে অপরের দিকে তাকালো। শেরতাজ সাহেব চোখ নামিয়ে রাখলেন। শ্বশুরের সাথে তার সম্পর্কটা পূর্বে স্বাভাবিক ছিল না। জানেন না এবার কি হবে?
সোলেমান সাহেবও তীক্ষ্ণ চোখে শেরহামের গমনপথে চেয়ে রইলেন।

প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ৩+৪