প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১২

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১২
মিমি মুসকান

প্রিয়তা ইদানিং যেন একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। সেদিন প্রান্তিকের নতুন রূপের সাথে তার পরিচয় আলাপ তেমন ভালো ছিলো না। প্রান্তিকের সিরিয়াস থমথমে মুখ দেখলেই সে ভয়ে কেঁ’পে উঠে। সামলে উঠতে হয় বেশ কষ্ট হয় তার।
সকাল বেলা প্রান্তিক আর দাদাজান বসে নাস্তা করছে। প্রিয়তা রান্না ঘর থেকে একটু বাদে বাদে গরম গরম পরোটা এনে ভেজে রাখছে। সাথে গরুর গোশত। দাদাজান খেতে খেতে প্রিয়তার প্রশংসায় অস্থির। এদিকে প্রান্তিক একবার বলল ভালো, এরপর চুপ। আসলে সে প্রিয়তার উপর বির’ক্ত। চেয়েছিলো সবাই একসাথে বসে খাবে। অযথা প্রিয়তার এমন ছোটাছুটি তার ভালো লাগছে না। বাড়িতে কি কাজের লোকের কমতি আছে কোনো? একটু বাদেই তো অফিস চলে যাবে। তখন কি বউয়ের মুখটা দেখতে পারবে সে? আদর সোহাগ তো করতে পারবে না। এভাবে কিভাবে হবে?

প্রিয়তার খুব দ্রুত হাতের কাজ শেষ করছে। বর মশাইয়ের থমথমে মুখ তার চক্ষু আড়াল হয়নি। কিন্তু সে কি বুঝবে? বরকে নিজের হাতের রান্না খাওয়ার আনন্দ বোঝাবে কি করে। ধোঁয়া উঠা গরম চা কাপে ঢালল। মেয়েটা এসে নিয়ে গেল। প্রিয়তা বলেছিলো এক কাপ নিয়ে যেতে। কেবল দাদাজান কে দিতে। কিন্তু মেয়েটা ভুলে গেলো। চায়ের দুটো কাপ না দেখতে পেয়ে হম্বিতম্বি করে রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরুলো সে। ঠিক ধরেছে। মেয়েটা ধ’মক খাচ্ছে। প্রান্তিক ও যেন ফ্রি ফ্রি একজনকে পেয়ে গেল রা’গ ঝাড়ার জন্য। মেয়েটা সরস মুখে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ফেরত এলো। কাঁদো কাঁদো ভাব চোখেমুখে। প্রিয়তা হাসার চেষ্টা করল। সেই চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ফিরে গেল।
তার বর মশাই মোটেও চা খান না। এই জিনিসের প্রতি তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। চা কফি কোনোটার প্রতি তার আগ্রহ নেই। একদম কম! প্রিয়তা নিজ থেকে বানিয়ে দিলে খাবে, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে তার কাছে চাইবে না। এমন মানুষ প্রিয়তা দেখেনি। কেবল তার বউ বানায় বিধায় সে আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। সকাল থেকেই মেজাজ তু’ঙ্গে। এর মধ্যে মেয়েটার হাতে চায়ের কাপ দেখেই মাথা করো গ’রম করে ফেলল। ঝারি দিয়ে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়তা চায়ের কাপ সামনে এনে রাখল। প্রান্তিক আড়চোখে তাকাল। কিছু বলল না! দাদাজান তাদের দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছেন। তার মনে হচ্ছে তার নাতি শুধরে গেছেন। হ্যাঁ এটাই চেয়েছিলেন সে। প্রিয়তাকে প্রথমবার দেখেই মনে হয়েছিলো, এই মেয়েটা খুব করে পারবে তার নাতিকে জব্দ করতে। মেয়েটা সহজ সরল, মায়াবী মুখ, ভীষণ সুন্দর করে কথা বলে। এমন গোছানো একটা নাতবউ যেন দরকার ছিলো তার!
প্রান্তিক চুপচাপ বসে পুরো চায়ের কাপ শেষ করল। পাশাপাশি দাদাজানের সাথে দু একটা কথাও হলো। দাদাজান শহরের বাইরে যাবেন। রাজশাহীতে! সেখানে তাদের নতুন ফ্যাক্টরি হচ্ছে। তাকে যেতেই হবে। প্রান্তিকই যেত কিন্তু এখানকার কাজ ফেলে যাওয়া সম্ভব না। দাদাজান সাথে এটাও বললেন,

“প্রিয়তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসো। বিয়ের পর তো এখন অবধি কোথাও গেলে না!”
প্রান্তিক চা শেষ করে উঠে দাঁড়াল। নরম স্বরে বলল, “যাবো!”
এরপর পেছন ঘুরল। প্রিয়তা এসে দাঁড়িয়েছে। দরজা অবধি প্রান্তিকের পিছন এসে দাঁড়াল সে। প্রান্তিক সদরদরজা দিয়ে বেরিয়ে আবারো পিছন তাকাল। প্রিয়তা দাঁড়িয়ে। মুখটা শুকিয়ে গেছে, হাতে হলুদের দাগ। প্রান্তিকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি শীতল হয়ে উঠল। তার বউ এতো কেন খাটে সে বুঝে না। কি দরকার এতো খাটাখাটুনির। প্রিয়তার ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসি। প্রান্তিককে ফিরে আসতে দেখে অবাক হয়ে বলল,
“কি হলো?”

প্রান্তিক জবাব না দিয়ে তাকে টেনে কাছে নিল। কপালে চুমু খেল হুট করে। প্রিয়তা ভাবল ছেড়ে দিবে তাকে। না! তা না করে আচমকা ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বসল। প্রিয়তা তাকে ধাক্কা মেরে চোখ রাঙা’লো।
“কি হচ্ছে? আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে পিছনে দাদাজান। পাগল হলেন আপনি?”
প্রান্তিক কিঞ্চিত হেসে বলল, “আমার দাদাজান তোমার থেকে বুদ্ধিমান। কাজ ছেড়ে এখন গিয়েই নাস্তা করবে। এখুনি! তোমার কাজ চুলোয় যাক। অফিসে পৌঁছেই আমি ফোন দিবো বুঝলে!”
একটু ধম’কের সুরেই বলল কথাগুলো। আবার আদুরে ছোঁয়ায় প্রিয়তা দ্বিধায় হেসে উঠল। প্রান্তিকের শুকনো মুখে হাসির রেখা দেখা গেল। রাফি গাড়ি বের করে দাঁড়িয়ে আছে। “আসছি, বউ ” বলে বেরিয়ে গেল সে।

প্রিয়তা চটপট হাতের কাজ শেষ করল। নাস্তা খেতে বসে মনে পড়ল বেলকনির ফুল গুলোতে পানি দেয়নি। চট করে উপরে উঠে গেল। ফুলে পানি দিয়ে নিচে নামল। টেবিলে গিয়ে আর আগাতে পারল না। এর আগেই তার বুকশেলফ এসে হাজির। প্রিয়তা অন্য কাজে লেগে পড়ল। অফিসে পৌঁছেই প্রান্তিক ফোনের উপর ফোন। সাইলেন্টে থাকায় প্রিয়তার কানেও গেল না। শেষমেষ বাড়ির ল্যান্ড লাইনে কল করল প্রান্তিক। সেই ফোন ও প্রিয়তা না ধরে আরেক মেয়ে ধরল। প্রান্তিক রাগ সং’যত করল। ইদানিং সে খুব জলদিই রে’গে যাচ্ছে। আগে এমনটা হতো না। কেন হতো না? কারণ তাকে রাগা’নোর মানুষ ছিল না। এখন আছে! অল্প কিছুতেই প্রান্তিক প্রিয়তার উপর রে’গে যায়। যাবে নাই বা কেন? প্রিয়তা কে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হয় তার। সর্বক্ষণ ছোটাছুটি করতে থাকে। প্রান্তিকের কানে এখনো টেলিফোন। ছুটে আসার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নিশ্চিত উপর থেকে ছুটে নামছে। আচ্ছা ছোটাছুটির কি দরকার? পড়ে গেলে তখন কি হবে?
প্রান্তিক ভেবে দেখল সে আবারো রে’গে যাচ্ছে। মানুষ প্রেমে পড়লে বুঝি এমন ছোট ঘটনায় রেগে যায়। প্রিয়তার উৎসুক কণ্ঠ,

“হ্যাঁ হ্যালো হ্যালো, বলুন। ফোনটা সাইলেন্ট ছিল!”
“নাস্তা করেছো?”
প্রিয়তার চোখ টেবিলে গেল। তার নাস্তা ঠান্ডা হয়ে পড়ে আছে। প্রিয়তা চাঁপা স্বরে বলল,
“হু!”
“তুমি কখনো আমার হাতে চ’ড় খেয়েছো প্রিয়তা?”
“হু হ্যাঁ কি বললেন?”
“বলছি তোমায় চ’ড় মারার কথা। একবার চ’ড় খেলে তিনদিন বিছানায় পড়ে থাকবে। তাও ভালো রেস্ট নিতে পারবে।”
“আপনি আমায় মে’রে বিছানায় পাঠাবেন বলছেন?”
“তর্ক করো না। আমি এসেছি ১ ঘন্টার বেশি। আর তুমি এখনো নাস্তা করতে পারোনি!”
“করব করব। সকালে নাস্তা করার স্বভাব নেই তো এমন। ওই চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। চায়ের পানি বসিয়ে আপনাকে কল করছি।”

প্রান্তিক ফোন কেটে দিল। প্রিয়তার প্রতি তার দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এরকম দুশ্চিন্তা কেবল দাদাজানের প্রতিই আসত। আর আসত কেবল একজনের প্রতি। সে কথা থাক! দাদাজানের কথা সে ভাবছে। বিয়ের এক মাস হয়ে এলো। সে এখনো বউয়ের সাথে হানিমুনে যেতে পারছে না। যাবে যাবে করে যাওয়া হচ্ছে না। এবার ভেবেই নিল দাদাজান রাজশাহী থেকে ফিরলে বউকে নিয়ে সবার আগে হানিমুন সারবে।
যাবে কোথায়? দেশের বাইরে! শ্যালিকাদের থেকে ভালো ভাবে জেনে নিয়েছে সে। প্রিয়তার খুব শখ দেশের বাইরে ঘুরার। প্রান্তিক সেই ভাবেই সবটা করে রাখছে। প্রিয়তার পাসপোর্ট ইতোমধ্যে করতে দিয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আরো লাগবে বোধহয়। তারপর যেখানে যাবে সেখানেও একটা গোছগাছের ব্যাপার আছে। প্রান্তিক নিশ্চয়ই চাইবে না, হানিমুনে গিয়েও তার বউ ছোটাছুটি করুক।
প্রান্তিকের ফোনের স্ক্রিনে প্রিয়তার ছবি জ্বলজ্বল করছে। ইদানিং তার মস্তিষ্কে সর্বক্ষণ প্রিয়তা বিচক্ষণ করে। এমন গভীর ভাবে প্রেমে পড়ে যাবে আগে তো ভাবেনি। এর ও কারণ আছে। প্রিয়তা যত্ন আর ভালোবাসা। এতো যত্ন করে একদম মায়ের ম…

ভাবতে গিয়ে প্রান্তিক থেমে গেল। এটা কি বলতে যাচ্ছিল সে? আনমনে কথাটা ভেবেই বি’রক্ত হলো সে। মায়ের যত্নের কথা তার মনে নেই। আর ভালোবাসা থাকলে নিশ্চিত তাকে ছেড়ে যেত না।
প্রান্তিক ছোটবেলায় মোটেও চঞ্চল ছিলো না। সে ছিলো খুব ঠান্ডা আর শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তাই মা কে বি’রক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। তার সাথে কাটানো মূহুর্তে ও মনে পড়ে না। স্মৃতি থেকে তার মায়ের অস্তিত্ব একদম যেন মুছে গেছে। বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল।
ফোন বাজছে। প্রিয়তা কল করেছে। ভিডিও কল অন করে প্রিয়তা সামনে রাখল। প্রান্তিক তাকে দেখছে। প্রিয়তা তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে। প্রান্তিক ফোনটা টেবিলে রেখে হাতে ফাইল নিয়ে বসে পড়ল। দু একবার প্রিয়তার দিকে নজর দিয়ে আবারো কাজে মনোযোগ দিল সে!

দুপুরে লাঞ্চের দিকে প্রান্তিক কেবিনের মধ্যে হাতে ফাইল নিয়ে পাইচারি করছে। গায়ের কালো রঙের সুট টা খুলে রেখেছে সে। গলার টাই ও লুজ করা। সাদা রঙের শার্টের হাতা কনুই অবধি গোঁজা। তাকে দেখতে বেশ ক্লান্ত লাগছে আবার সুদর্শন ও। এসির মধ্যে ও ঘামছে সে। এই নিয়ে তিনটে মিটিং সেরেছে। কাজের চাপ তো আছেই। এরই মধ্যে একটা মেয়ে ফোন করে জানাল ম্যাম এসেছে। প্রিয়তার কথা শুনে প্রান্তিকের মন ফুরফুরে হয়ে গেল। তবুও ব্যস্ততার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সে। দরজা খোলার শব্দে পিছন ফিরে তাকাল। শব্দ করে বলে উঠলো, “বউ!”
অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে প্রান্তিকের হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিমিয়ে গেল। সরস মুখে তাকাল সে। আরিনা কে এখানে আশাই করেনি সে। আরিনা মুচকি হেসে গুটি গুটি পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল। এসির মধ্যেও ঘামছে প্রান্তিক। ওড়না দিয়ে তার কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দিয়ে শুধাল,

“বউয়ের অপেক্ষা করছিলে বুঝি?”
“তুমি? হঠাৎ এখানে?”
“দেখতে এলাম, কেমন সংসার করছো। বাড়িতে তো যেতে পারব না। তুমি যেতেও দিবে না আমি জানি। তাই ভাবলাম অফিসে এসে দেখা করি!”
প্রান্তিকের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। সে এগিয়ে গেল টেবিলের কাছে। বিরক্ত তার স্টাফের উপর। তারা কেন বলল, ম্যাম আসছে! এরা কি মাথামোটা? এদের চাকরি যদি না খেয়েছে সে।
ঠকঠক করে পানির গ্লাস পুরোটা শেষ করে বলল, “শরীর কেমন তোমার?”
“যেমন রেখে গেছিলে!”
“হেয়ালী করো না আরিনা। এখানে কেন এসেছো?”
“বললাম তো তোমায় দেখতে। জানো তো, আগে তোমাকে একনজর না দেখে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। কতো গুলো দিন পেরিয়ে যাচ্ছে বলো, তোমায় দেখি না!”
প্রান্তিকের মুখ থমথমে! আরিনাকে এই মূহুর্তে কোনোভাবেই আশা করেনি সে। টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে আরিনার দিকে ফিরল সে। দুই হাত বাহুতে গোঁজা। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ। আরিনা হেসে এগিয়ে এলো।

“বিরক্ত হচ্ছো?”
“নতুন কিছু না। তোমায় নিয়ে আমি আগেও বিরক্ত থাকতাম।”
“ভালোবাসি তোমায়!”
“থামো এবার প্লিজ। কোনো কিছুই সম্ভব নয়।”
“তুমি নাই বা বাসলে। আমি ভালোবাসলে ক্ষতি কি?”
“ক্ষতি নেই। বাসতে থাকো। আমার কিছু যায় আসেনা।”
আচমকা তার শার্টের কলার ধরল আরিনা। প্রান্তিক মুখের কোনো ভাবান্তর হলো না। মেয়েটার চোখের কোণে অশ্রু এসে জমছে। গলা ভার হয়ে আসছে।
“কখনো ভালোবাসো নি আমায় তাই না।”
“আমি আগেও বলেছি তোমাকে আমি কখনোই ভালোবাসিনি। ভালোবাসতে পারব না।”
“কিন্তু আমি তো বেসেছিলাম। আচ্ছা মেয়েটিকে ভালোবাসো?”

প্রান্তিক নিরুত্তর। তার চোখ মুখ বলে দিচ্ছে প্রিয়তাকে সে অসম্ভব ভালোবাসে। সারা শরীর যেন জ্ব’লে উঠলো আরিনার। বুকের মধ্যে তীব্র যন্ত্র’ণা হচ্ছে। আরো কাছে এগিয়ে বলল, “তাকে কিভাবে ভালোবাসো? তুমি তো বলেছিলে তোমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। তাহলে? কিসের জন্য ভালোবাসো তাকে? তার মতো আমায় ভালোবাসতে কেন পারলে না প্রান্তিক। আমায় ভালোবাসলে কি ক্ষতি হতো?”
“সিনক্রিয়েট করো না। বাড়ি যাও!”
“সিনক্রিয়েট করছি আমি? তুমি কি জানো, কতোটা কষ্টে আমি আছি।”
“না, জানি না। জানার চেষ্টা ও করিনি। আমি খুব ব্যস্ত, বিরক্ত করো না।”
আরিনার হাত দুটো ছাড়িয়ে চেয়ারে গিয়ে বসল সে। আবারো ফাইল খুলে বসল সে। আরিনা কম্পিত কণ্ঠ। মনের ব্যাথা গুলো তীব্র হয়ে উঠছে।
“কি হলো? কথা বলছো না কেন? আমায় ভালোবাসলে কি হতো? ভালো কেন বাসলে না আমায়?”
প্রান্তিক তার চোখের দিকে চোখ রেখে বলল, “সব কিছুর উত্তর হয় না আরিনা!”

চোখাচোখি হলো। দীর্ঘক্ষণ চেয়ে রইল সে চোখের দিকে আরিনা। অতঃপর ব্যাগ হাতে নিয়ে চোখে সানগ্লাস পরে বেরিয়ে গেল সে। প্রান্তিকের সামনে বসে কান্না কাটি সে করব না। সে যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো প্রান্তিক!
তার আর আরিনার সম্পর্ক টা ভিন্ন রকমের। এখানে কোনো ভালোবাসা ছিলো না। কখনোই না! সে কখনো আরিনাকে ভালোবাসেনি। কেবল ছিলো চাহিদা! এই সহজ সত্য কথাটা আরিনা জানত। জেনেই নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল প্রান্তিকের কাছে। তাকে সবকিছু উজাড় করে দিয়ে একতরফা সে ভালোবেসে গেল। তাঁর মনে হয়েছিল প্রান্তিক হয়তো কখনো তার প্রেমে পড়বে। কখনো হয়তো তাকে ভালোবাসতে শুরু করবে। যেভাবে সে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল, প্রান্তিক ও তা অনুভব করবে। কিন্তু হলো না! প্রান্তিক কখনোই তার মায়ায় জড়ালো না উল্টো সে আরো গভীর ভাবে প্রান্তিকের মায়ায় জড়িয়ে গেল। আরো গভীর ভাবে তাকে ভালোবাসতে শুরু করল!
প্রান্তিকের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ। তার জীবনের এতো ভুল কিভাবে সামাল দিবে সে। এগুলো যেন ভুল নয়, সা’পের আকার ধারন করে তার পিছন ছুটছে। আগুন হয়ে এগিয়ে আসছে সবকিছু জ্বালি’য়ে দিতে। তার আর প্রিয়তার সম্পর্ক সবকিছু এই আ’গুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

প্রান্তিক চৌধুরী খুব ছলচাতুরি জানত। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কতো ছলচাতুরি করল সে। কিন্তু প্রিয়তার কাছে এসব এখন বেমানান লাগছে। সে প্রিয়তার কাছে ছলচাতুরি করতে পারছে না। তার দম’বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে ঝ’ড় আসতে চলেছে। এই ঝ’ড় আটকানোর সাধ্য তার নেই।
আরিনা যাবার দুই মিনিটের মাথায় প্রিয়তা টিফিন হাতে ঢুকল। মাঝে মাঝেই সে টিফিন নিয়ে আসে প্রান্তিকের জন্য। আকস্মিক তাকে দেখে ভয়ে আর ভালোবাসায় তার মুখের রঙ উড়ে গেল। ভাগ্যিস আরিনা চলে গেছিলো। কিন্তু তার ভাগ্য কতোই বা সাধ দিবে না। একসময় না একসময় সব জানাজানি হবে। তখন…

প্রিয়তা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। তার বর মশাই তার সামনে বসে খাচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে। লোকটাকে এভাবে প্রাপ্তি করে খেতে দেখবে বলে এতো তাড়াহুড়ো করে রেঁধে নিয়ে চলে এসেছে। এই ভালোবাসা কি তার বর মশাই আর বুঝবে? বুঝবে না হয়তো! প্রান্তিক ফাঁকে ফাঁকে ভাতের লোকমা তুলে দিচ্ছে প্রিয়তার মুখে। প্রিয়তা খেতে চাইছে না। খাবার তো কেবল বর মশাইয়ের জন্যই এনেছে। প্রিয়তা দুই হাত পায়ে রেখে বলল,
“এই সাত তলা উঠতে উঠতে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল!”.
“কেন? লিফট কি হয়েছিলো?”

“রাফি ভাইয়া বলল, চলছে না। কি নাকি সমস্যা হয়েছে। বলল, পাঁচ মিনিট সময় লাগবে একটু বসতে‌। আমারই তর সইলো না। সিঁড়ি বেয়ে চলে এলাম।”
প্রান্তিক মুচকি হাসল। এখন বুঝল তার ভালো ভাগ্যের পিছনের কারন! কিন্তু এভাবে আর কতোদিন?
প্রিয়তার মন আজ বেজায় খুশি। সেবার কথায় কথায় বলেছিলো, আপনার অফিসের মেয়েগুলোর মধ্যে কোনো ভদ্রতা নেই। কি অ’শ্লীল পোশাক পরে চলে আসে। আপনি কিছু বলেন না কেন?”

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১১

প্রান্তিক হেসে বলছিলো, আচ্ছা বলব! সেই কথা সে মনে রেখেছে। আজ অফিসের মেয়েগুলো একটু ভদ্র ভদ্র লাগছে। বেশিরভাগ থ্রি পিস আর গোল জামা পরে এসেছে। অফিস থেকে ড্রেস কোড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ আর টাইট টাইট জিন্স কিংবা ছোট টপস পরে আসতে পারবে না। প্রান্তিকের প্রাইভেট নিজস্ব কোম্পানি। কে আবার কি বলবে? পছন্দ না হলে চাকরি করবে না। তার এদিক দিয়ে কোনো কিছু যায় আসে না।
খাবার শেষে হাত ধুইয়ে টিস্যু দিয়ে মুছে নিল। অথচ মুখ মুছল প্রিয়তার ওড়নার আঁচল দিয়ে। প্রিয়তা একটু বিরক্ত ভাব দেখালেও তার খুশি আরো বেড়ে গেল। এই লোকটা এমন কেন? কি সূক্ষ্ম ভাবে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে। তাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিচ্ছে। কি আশ্চর্য!

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১৩