প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২০

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২০
মিমি মুসকান

প্রিয়তা ঘুম ঘুম চোখে ফিরে তাকাল। নরম বিছানার আরামে চোখ বুজে আসছিলো বারবার। বহুকষ্টে চোখ মেলে তাকাল সে। আশপাশ থেকে কিছু চিনতে পারছে না। কোথায় সে? বদ্ধ, গুমোট অন্ধকার রুমে প্রিয়তার শ্বাস নিতেও বড্ড কষ্ট হচ্ছে। বিরাট বড় একটা বেড রুম। সে কি কোনো বাড়িতে আছে? কার বাড়ি?
মারা চক্কর দিচ্ছে। কতোক্ষণ ধরে আছে এখানে? কারাই বা ধরে আনলো তাকে। গায়ের উড়না ভালোভাবে জড়িয়ে নিল সে। বেসামাল হয়ে হাঁটতে লাগল। পা কাঁপছে বড্ড। নিয়তি কোথায় এসে ঠেকালো তাকে। সে তো পালিয়ে যাচ্ছিল প্রান্তিকের কাছ থেকে। তাহলে এখানে কিভাবে এলো? কারাই বা আনল। রাস্তার উপর পড়ে গিয়ে হাত পা জখ’ম হয়ে গেছে। জ্ব’লছে খুব! শেষবার রাস্তার উপরই পড়ে ছিল সে। এরপর একটা গাড়ি এলো। আর মনে নেই। কি হলো? কিভাবে এলো কিছু মন করতে পারছে না।

ঘরের মধ্যে কেবল একটা দরজা। বিশাল সাইজের একটা বিছানা। আলমারি, ওয়াল্ড্রব, ড্রেসিন টেবিল, শোপিস সবকিছুতে সাজানো পুরো ঘর। কেউ বাজে কিছু করার উদ্দেশ্যে নিয়ে এলে নিশ্চিত এতো ভালো রুমে তাকে রাখতো না। প্রান্তিক আবার…
না! মনের চিন্তাকে সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলল প্রিয়তা। প্রান্তিক হলে নিজ বাড়িতেই নিয়ে যেত। এমন অচেনা জায়গায়, অচেনা পরিবেশে নিয়ে আসতো না। প্রিয়তা দরজা খোলার চেষ্টা করছে। বাইরে থেকে বন্ধ দরজা। বেশ কিছুদিন ধাক্কা ধাক্কি করল, চিৎকার করল। কোনো লাভ হলো না। শরীর ভীষণ ক্লান্ত হওয়ায় হাঁপিয়ে উঠল দ্রুত। আবারো বিছানায় এসে বসল। পানির তৃষ্টা পেয়েছে খুব।
ড্রেসিন টেবিলের পানির জগ আর গ্লাস চোখে পড়ল প্রিয়তার। উঠে গিয়ে পানি খেল। প্রান্তিক ছাড়া কেউ তাকে কেন আটকে রাখবে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলো না প্রিয়তা। আর কারো কোনো লাভ আছে এতে আদৌও। নিজের এমন শত্রুর কথাও মনে পড়ে না তেমন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

৩০ মিনিট পর দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেল। দুটো ছেলে ঘরে ঢুকে বিছানার উপর খাবার রাখল। প্রিয়তার দিকে ঘুরে ফিরেও তাকাল না। প্রিয়তা অবাক হলো ভীষণ। এরা কারা? তাদের কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই চলে গেল। প্রিয়তা ও পিছন পিছন ছুটতে গেল। দরজার কাছে এসে থেমে গেল। স্বাস্থ্য ভালো লম্বা করে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে দরজার সামনে। দেখে মনে হচ্ছে এটাই নাটের গুরু। দুই পা পিছিয়ে গেল সে।
ভ’য় করছে না তা না তবু সবটুকু ভ’য় গিলে ফেলল। মনে সাহস সঞ্চয় করে অস্ফুট স্বরে বলল, “আপনি কে?”
“বসে কথা বলি আমরা। বসুন!”
নিতান্ত ভদ্রসুলভ আচরণ। প্রিয়তার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই লোকটা কে? তার সাথেই বা এমন কেন করছে? ছেলেটা এবার ভিতরে ঢুকল। পরনে সাদা রঙের পাজামা পাঞ্জাবী। ভদ্রসুলভ চেহারা। চাপ দাড়ি ছাটা আছে। মুখের উপরিভাগের আস্তরণ দেখে যেকেউ তাকে ভালো মানুষ মনে করবে। প্রিয়তার দিকে ফিরে স্মিত হাসল। তার হাসি প্রিয়তার ভয় বাড়াল দ্বিগুণ। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল। এবার একটু শক্ত কণ্ঠেই বলে উঠলো,

“জিজ্ঞেস করলাম তো কে আপনি?”
“আমি ইজান। ইজান শিকদার!”
“সে যেই হোন না কেন, আমায় তুলে এনেছেন কেন? আপনাকে তো আমি চিনি না।”
“আপনি না চিনলেও আপনার বর খুব ভালো ভাবে চিনে। বসুন না মিসেস চৌধুরী। আমরা বসেই কথা বলি। অসুবিধা হচ্ছে না তো আপনার।”
প্রিয়তার মনে হলো মাথার মধ্যে কেউ যেন ধিরিম ধিরিম শব্দ করে ড্রা’ম বাজিয়ে যাচ্ছে। লোকটা বলে কি? অসুবিধা হচ্ছে না তো! সে কি এখানে ঘুরতে এসেছে। তাকে তুলে আনা হয়েছে। রীতিমতো কিড’ন্যাপ। তবুও রাগ সংযত করল। কারণ সামনের মানুষটি ভীষণ ঠান্ডা ভাবে তার সাথে কথা বলছে। তাই উত্তেজিত হলে চলবে না। কিন্তু মানুষ উপরে যত ঠান্ডা থাকে ভিতরে ততোই হিং’স্র। এই হিসেবটুকু প্রিয়তার জানা।
“আপনার কি মনে হয়? আমার অমতে আমায় এখানে তুলে এনেছেন। কিডন্যাপ করে জিজ্ঞেস করছেন অসুবিধা হচ্ছে কি না? মগের মুল্লুক নাকি?”

ইজান শিকদার হাসল। নিঃশব্দ হাসিতে উপরের এক পাটি দাঁত দেখা গেল।
“আপনি চিন্তা করবেন না মিসেস চৌধুরী। আপনি আমার পুরনো বন্ধুর বিবাহিতা স্ত্রী। আপনার কোনো অসুবিধে হবে না এখানে?”
প্রিয়তা আড়চোখে ফিরে তাকাল। তার মনে হলো লোকটি ভীষণ ধুরুন্ধর। তবুও বোকার মত জিজ্ঞেস করে ফেলল, “প্রান্তিক আপনাকে বলেছে আমায় কি’ডন্যাপ করতে?”
ইজান শিকদার অবাক হলো। তার চাহনি দেখেই প্রিয়তা বুঝে ফেলল সে ভুল করেছে। বোকামো করেছে। প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা উচিত হয়নি। ইজান শিকদার হেসে বলল,
“আপনি প্রান্তিকের থেকে পালাচ্ছেন?”
প্রিয়তা জবাব দিল না। অস্বস্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। লোকটার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছে না। ইজান শিকদার এবার জোরে হেসে উঠলো। কি ভয়ং’কর হাসি। শরীর কাটা দিলো প্রিয়তার। শুকনো ঢোক গিলল সে। ভ্রু জোড়া কুঁচকে সামনে চেয়ে রইল।
ইজান শিকদার হাসি থামাল বহু কষ্টে। জীবনেও যেন এর চেয়ে ভারী মজার কিছু সে শোনে নি।

“মাই গুডনেস! কি বলেন আপনি? যেখানে প্রান্তিক চৌধুরী মেয়েদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করে আপনি সেখানে তার থেকেই পালাচ্ছেন। স্ট্রেঞ্জ! প্রান্তিক চৌধুরীর থেকে মেয়েরা পালায় বুঝি। তারা তো চুইংগামের মতো চিপকে থাকে। আর আপনি কি না বউ হয়ে…
রহস্যের খোলস ধীরে ধীরে খুলছে। প্রিয়তা বুঝতে পারল তাকে এখানে আনার কারণ একমাত্র তার বর মশাই। বিছানায় ধীরে সুস্থে বসে পড়ল। তার সামনেই চেয়ার টেনে বসে আছে ইজান শিকদার। এবার একটু সামনে সামান্য ঝুঁকে শুধাল,

“আমায় বলুন তো সিক্রেট কি? আপনি কেন পালাচ্ছেন তার থেকে। সামথিং রং?”
“এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার। আপনার না জানলেও চলবে!” একটু কঠোর হয়েই জবাব দিল প্রিয়তা। আবারো নিজের বোকামোর জন্য সহস্র গা’লি ঢুকল নিজের কপালে। এতো বড় গাধা কি করে হয় সে। ইজান শিকদার পায়ের উপর পা তুলে থিতুনির উপর হাত রেখে আড়চোখে প্রিয়তাকে পরখ করছে। তার চাহনিতে প্রিয়তার বড্ড অস্বস্তি লাগছে। গায়ের উড়নাটা আরেকটু ভালো করে জড়িয়ে নিল সে। ইজান দৃষ্টি নামিয়ে বলল,
“সরি সরি, অন্য কিছু ভাববেন না। আমার কোনো খারাপ মতলব নেই।”
“ভালো মতলব ও তো নেই।”

“ভালো কথা বলেন আপনি। আরিনার পর আপনাকে দেখছি এমনভাবে চটপট উত্তর দিতে।”
প্রিয়তা চমকে উঠে আরিনার নাম শুনে। হতভম্ব হয়ে শুধায়, “আপনি আরিনাকে চিনেন?”
ইজান শিকদার আরিনার প্রসঙ্গে গেলো না। বরঞ্চ বলতে লাগল, “বিয়ের পর নাকি প্রান্তিক চৌধুরী শুধরে গেছে। এ কথা শোনার পর আপনাকে দেখার আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে গেছিল। আমিও দেখতে চেয়েছিলাম সেই রহস্যময়ী রমণী কে। প্রান্তিকের মতো একটা ধাব্বাবাজ ছেলের মনে একাই রাজত্ব করছে ‌। কিন্তু রাণীর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ তেমন ভালো পরিস্থিতিতে হলো না বলে মাফ করবেন!”
কি নিখুঁতভাবে আরিনার প্রসঙ্গ ছেড়ে দিল লোকটা। কথা ঘুরাতে ওস্তাদ। প্রিয়তা বুঝতে পারছে এই লোকের সঙ্গে আরিনার পরিচয় আছে কিংবা তারা বন্ধু। আরিনার কথায় আবার তাকে আটকে রাখেনি তো। কি হচ্ছে ওখানে? তারা প্রান্তিকের সাথে কিছু করে বসবে না তো আবার!
মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। মুখটা শুকিয়ে আসছে চিন্তায়। ইজান শিকদার বলে উঠলো, “আপনি বরং খেয়ে নিন। আমরা পরে আবার কথা বলব।”
বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ইজান শিকদার। প্রিয়তা বলে উঠলো, “পরে মানে? আপনি আমায় এখানে আটকে রাখবেন।”

“কিছুদিনের জন্য। আটকে রাখছি না মনে করুন আপনি বেড়াতে এসেছেন। আর এখানে বেড়াবেন। ব্যস, এই তো।”
“পাগলের মতো কিসব বকে যাচ্ছেন। আর আমি আপনার কথাই বা কেন শুনছি।”
“কারণ আপনি শুনতে বাধ্য ম্যাডাম। আপনি কিছু করতে পারবেন না। কিছু করার নেই আপনার। আপনি কোথায় আছেন তা নিজেও জানেন না। এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না। বাড়ি ছেড়ে বের হয়েও লাভ নেই। এই পুরো অঞ্চলে আমি বাদে আর কেউ নেই। আশপাশের পুরো এলাকা কেবল ঘন জঙ্গল। মৃ’ত্যুর ইচ্ছা থাকলে যেতে পারেন। আপনি কিন্তু কোথাও লুকাতে পারবেন না‌। তাই আমার সাথে কো অপারেট করুন!”
“কিসের কো অপারেট? আপনারা কি করতে চাইছেন? আপনি আর আরিনা তো। দুজন মিলেই করছেন আমি জানি। কি চাইছেন প্রান্তিকের ক্ষ’তি করতে?”

ইজান বাঁকা হাসল। তার হাসিতে প্রিয়তা চুপসে গেল। তার হৃদয়ে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। কি করতে যাচ্ছে তারা। ইজান শিকদার প্রিয়তাকে অবাক করে দিয়ে বলল, “আপনি ভালোবাসেন তো প্রান্তিক কে?”
প্রিয়তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল। এখানে একটা খেলা চলছে। জীবন মৃ’ত্যুর খেলা। তার রক্ত’শূন্য মুখ থেকে ইজান ঠাওর করতে পারল প্রিয়তা কতোটা ভালোবাসে তাকে। সে অবাক না হয়ে পারে না। আরিনাও তো অনেক ভালোবাসে প্রান্তিক কে। সবাই কেন তাকেই ভালোবাসতে চায়।
প্রিয়তার থমথমে স্বরে বলল, “আপনারা কি করতে চাইছেন?”
“আপনারা না কেবল আমি!”
প্রিয়তার চঞ্চল মনি দুটো চলাচল বন্ধ করে নিল। চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠছে। ইজান শিকদার মুখ ঘুরিয়ে নিল। মেয়ে মানুষের কান্না তার ভালো লাগে না। আরিনার কান্না দেখতে দেখতে বড্ড ক্লান্ত সে। পা বাড়াল বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রিয়তা আচমকা বলে উঠলো, “আরিনাকে ভালোবাসেন আপনি?”
ইজান থমকে দাঁড়াল। এমন কথা তো একবারও বলেনি সে। তার কোনো কথায় এমন ইঙ্গিত ও ছিলো না। পিছন ফিরে বলে উঠলো,

“কি বললেন?”
“আপনি আরিনাকে ভালোবাসেন। তাই প্রান্তিক তার সাথে যা করেছে এ জন্য আপনি প্রান্তিক কে শা’স্তি দিতে চাইছেন। তাই তো!”
ইজান অবাক না হয়ে পারল না।‌ এই মেয়ে কি মানুষের মাথার ব্রেইন পড়তে পারি নাকি? না মানে কিভাবে সম্ভব? মেয়েটাকে যতটা বোকা ভেবেছিলো ততোটাও বোকা সে নয়। ইজান নিজেকে হতভম্ব ভাব দ্রুতই সামলে উঠে বলল, “আমি এখন বুঝতে পারলাম প্রান্তিক কেন আপনার প্রেমে পড়েছে। এমন মেয়ের প্রেমে না পড়ে থাকা যায় নাকি?”
কথা ঘুরাতে ওস্তাদ ইজান শিকদার। কিন্তু প্রিয়তা এবার আর তাকে সুযোগ দিল না। স্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো, “আরিনার সাথে যা হয়েছে তাতে কি প্রান্তিক একাই দোষী? আরিনার দোষ কি নেই?”
ইজান মৃদু হেসে বলল, “ভালোবাসায় আমরা দোষ যে খুঁজি না ম্যাডাম।”
“এতে আদৌও কি কোনো লাভ আছে? সবটাই তো ক্ষতি?”

“ভালোবাসা একটা জ্ব’লন্ত অগ্নি’শিখা তাতে কি আমরা পিছু পা হই? লাফ তো দিই তাই না ম্যাডাম। তাহলে? প্রান্তিক চৌধুরী কে আমি আজ থেকে চিনি না। ওদের সাথে আমাদের পুরনো হিসাবনিকাশ আছে। সেসব কিছু এড়িয়ে গেলেও আরিনার ব্যাপারটা এড়ানো যায় না। বর্তমানে প্রান্তিক সাধু সন্ন্যাসী হয়ে যাক কিন্তু তাই বলে অতীত তো মুছে ফেলা যাবে না। অ’ন্যায় তো অন্যা’য়। যা করেছে তার প্রাপ্য শাস্তি যে পেতে হবে!”
প্রিয়তা কেঁদে উঠল আচমকা। চেয়েও চোখের অশ্রু কে বাধ মানাতে পারছে না। অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, “শাস্তি কি ও একাই পাবে? আরিনা পাবে না?”

ইজান শিকদারের কণ্ঠ হঠাৎ করেই গাঢ় হয়ে উঠল। চোখ মুখ শক্ত করে সে জবাব দিল,
“ও তো পাচ্ছে ম্যাডাম। হাসপাতালে ভর্তি এখন। ব্রেইন স্ট্রো’ক করেছে গতকাল। এখন অবধি কোনো খবর নেই।”
মূহূর্তের মধ্যে প্রিয়তার অশ্রু থেমে গেল। কিছুক্ষণ মূর্তির মতো চুপসে থাকল। বলার মতো আর কিছু যে নেই। ব্যাপারটা এতো দূর গড়িয়ে গেছে। ইজান আবারো বলল, “আপনাদের বিয়ের দিনও সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সুইসা’ইড অ্যাডেন্ট করার চেষ্টা করছিল। এরপরেও কি আর শা’স্তি তার পাওনা থাকতে পারে!”
প্রিয়তা ঠোঁট কামড়ে ধরল। কি কঠিন পরীক্ষার মধ্যে বিধাতা তাকে ফেলো দিলো। কি হচ্ছে এসব। বারবার কেন তারই সাথে। এরপর আর কি বাকি থাকতে পারে। মনে হচ্ছে জ্ব’লন্ত কয়লার উপর দাঁড়িয়ে সে। তার সর্বস্ব জ্ব’লে পু’ড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। কম্পিত স্বরে বলে উঠলো, “আরিনার এখন আপনাকে দরকার!”

“হু জানি। আপনাকেও এখন একজনের খুব প্রয়োজন। প্রান্তিক আপনাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসতে শুরু করেছে। বোধহয় জীবনে প্রথমবার কাউকে মন থেকে ভালোবাসছে। আমি তাকে বুঝাতে চাই, ভালোবাসায় কেবল ভালোবাসাই থাকে না। এর সাথে যেই কষ্ট, যন্ত্রণা থাকে সেটাও তাকে মেনে নিতে হবে। প্রান্তিক এখন জ্ব’লছে। আমি চাই সে আরো জ্ব’লুক। যত জ্বল’বে ততোই তার মনে আফসোস বাড়বে নিজের কর্মফলের। কর্মফল তো একতরফা হতে পারে না তাই না ম্যাডাম!”
প্রিয়তা হাঁপিয়ে উঠল। তার কাছে জবাব দেবার মতো কিছু যে নেই। ইজান শিকদার বেরিয়ে গেল। বাইরে থেকে দরজা আটকে দিল আবারও।

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১৯

যাকে ভালোবাসা যায় তার সবটা নিয়ে নাকি ভালোবাসতে হয়। কিন্তু এ কি রকম ভালোবাসা। আরিনার জন্য আফসোস না করে পারছে না প্রিয়তা। বুকে হাত রেখে বসে পড়ল। ফুঁপি’য়ে কাঁদতে লাগল। কাঁদছে কার জন্য? আরিনার জন্য নাকি প্রান্তিকের জন্য! প্রান্তিক তো দায়ী এসবের পিছনে তবুও তার জন্য কেন এতো কষ্ট হচ্ছে তার। দুঃখ কখনো একতরফা হতে পারে না। এই পক্ষ কে দুঃখ দিয়ে অপরপক্ষ সুখী হতে পারে না। প্রিয়তা মনে প্রাণে এ কথা বিশ্বাস করে। প্রান্তিকের জন্য ও সামনে দুঃখ অপেক্ষা করছে। দুঃখের বিশাল ভান্ডার। এই কারণেই কি কাঁদছে প্রিয়তা। আবারো প্রমাণ হলো, ভালোবাসা স্বার্থপর। আমরা সবাই ভালোবাসার কাছে স্বার্থপর। নয়তো বা কেন? কেনই বা ভালোবাসার মানুষের শত অ’ন্যায় গুলো দেখেও তার জন্য কেবল দয়া আর ভালোবাসা ফিরে আসে। ঘৃণা আর অভিমানের পরিমাণ সেখানে তুচ্ছ। ভালোবেসে মানুষ এতোটাও স্বার্থপর হয়!

প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২১