প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ৩১
মিমি মুসকান
পুরো ১১ ঘণ্টার জার্নি শেষে তারা পা রাখল বিদেশের মাটিতে। প্রিয়তা প্রায় পুরোটা সময় জেগেই ছিল। জীবনে প্রথমবার প্লেনে চড়ছে। মনে বিরাট উত্তেজনা। এতো উপর থেকে পুরো শহরকে এতো ছোট লাগে সে বড়ই আশ্চর্যান্বিত! এমন নয় কখনোই শুনেনি কিন্তু দেখে অবাক না হয়ে পারেনি। লোচনে বিস্ময় ঘটিয়েছে মেঘের উপর আরেক মেঘের বাড়ি দেখে। সুবিশাল রহস্যময় আকাশকে কাছ থেকে এতো সুন্দর এতো দারুণ লাগে চোখ না সরিয়ে থাকা যায় না। রাতে এই আকাশকে কেমন লাগে? তারা গুলো কি আরেকটু বড় দেখা যায়? আচ্ছা চাঁদ কে কি খুব কাছ থেকে দেখা যাবে? মনে কতো কৌতুহল কতো উচ্ছ্বাস!
আবার একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছিল। প্লেনে মানুষ আহামরি নয়। যারা আছে তাদেরও পোশাক আশাকের কি বাহার। সে হিসেবে প্রিয়তার পোশাক আশাক একদমই সাধারণ। সে কি আর জানত এভাবে অন্য দেশে চলে আসবে। তৈরি তো হয়েছিল ভার্সিটির জন্য। স্বপ্নের মতো যেন এখানে চলে এলো। এতো মন খারাপ হতো না। এখানেই আবার প্রান্তিকের পরিচিত একজনের সাথে দেখা। তিনিও সুট টাই পরা ভদ্রলোক। প্রান্তিক টেনে নিয়ে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল এতো বারণ করল শুনলো না। লোকটা কি ভাববে এখন?
এসব ঘটনা ভাবতেই লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসে। কিন্তু অদম্য কৌতুহল তা আটকে রাখতে পারে না। ওদিকে প্রান্তিক কিছুক্ষণ জেগে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। তার তো এসবের অভ্যাস আছেই!
তারা নেমেছে অনেকক্ষণ। চেকিং এখনো হচ্ছে। প্রিয়তা কোথায় এসেছে নিজেও জানে না। কেবল জানে তারা হানিমুনে এসেছে। জিজ্ঞেস করল কোথায় এসেছে? ফের একই জবাব, হানিমুনে! এই লোকটা জীবনে সোজা ভাবে উত্তর দিতে শিখেনি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আশেপাশে বিদেশি মানুষজনের মাঝে এখন নিজেকেই বিদেশি বিদেশি লাগছে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না। এদের পোশাক আশাকের জন্য বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।
কোথাও দেখল বড় বড় লেখা লন্ডন! এটা দেখেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। ছোটবেলা থেকেই তার ভীষণ শখ লন্ডন শহর ঘুরে দেখবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে দেখতে পেরে একটু যেন থমকেই গেল সে। চোখে মুখে অদ্ভুত এক ঝলক। তৃষ্ণা মিটিয়ে যেমন মানুষ আনন্দিত হয় ঠিক তেমন। অতঃপর চেকিং শেষে তারা বেরুলো। নিজের নতুন পাসপোর্ট থেকে ভীষণ রকম ধাক্কা ও খেল। পাসপোর্টের ছবিটা জঘন্য। এ কথা বলতেই প্রান্তিক তাকে কাছে টেনে নিল। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, “আমার কাছে তোমার সবই সুন্দর!”
বাইরে রাফি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে। রাফিও এসেছে তাদের সাথে। তারা গাড়িতে চড়ে রওনা দিল। স্বপ্নের শহরকে রাতের সোনালী আলোয় জ্বলতে দেখে মুগ্ধ হলো সে। তার মুগ্ধতা ছেয়ে গেল প্রান্তিকের হৃদয় অবধি।
এতোক্ষণ জার্নি করার পর এবার যেন একটু ক্লান্তই লাগছিলো। একটু একটু করে বোতলের সবটুকু পানি শেষ করে তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সে। যখন ঘুম ভাঙল তখন তারা পৌঁছে গেছে। গাড়ি থেকে নেমে আকাশছোঁয়া বিশাল হোটেলটি দেখল। সামনেই জ্বলজ্বল করছে নাম। রিভারস্টোন হোটেল! তাদের স্বাগত জানানোর জন্য কয়েকজন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আবার এখানে এসেও ফর্মালিটি। প্রান্তিক সবটা দেখছে একাই। ওদিকে প্রিয়তা ব্যস্ত হোটেলের চারদিক দেখতে। এতো বিশাল আর নামি দামি হোটেল সচরাচর তার দেখা হয়না। হোটেলের কারুকাজ চোখে পড়ার মত। ধনাঢ্য ব্যক্তি ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না এখানে থাকা!
নিজেদের রুমের চাবি তারা পেয়ে গেছে। কক্ষে পৌঁছাতেই অলৌকিক ভাবে ক্লান্তি এসে আগলে ধরল তাকে। খুব ক্লান্ত লাগছে এবার। চোখ বুজে আসছে ঘুমে। ইচ্ছে করছে নরম তুলতুলে বিছানার উপর ধপ করে গিয়ে শুয়ে পড়তে। বিছানাটা ও সাজানো তেমনি ভাবে। লাল রঙের কারুকাজ করা কার্পেট পুরো ঘর জুড়ে বিছানো। ঘর বিশাল বড়, মাঝবরাবর ডাবল সাইজের একটা বিছানা। এতো আরামদায়ক বিছানাটা! পিছনে বেলকনি আছে বুঝি, সাদা পর্দা হেলেদুলে নাচছে সেখানে। এছাড়া আকর্ষণীয় সোফা, টিভি টি টেবিল , সোনালী রঙের ফুলদানি যেন রাজকীয় ভাব দিচ্ছে। এর সাথে জড়িয়ে আছে ঘরেতে আলোর মাখামাখি কিছু দেওয়াল ছবি। প্রিয়তা বিস্ময় প্রকাশ করেছে সেই কখন। মূহূর্তের মধ্যেই তাদের রাতের খাবার ঢুকে পড়ল। এতো জলদিও সে আসা করেনি। এই হোটেলে একরাত কাটানোর জন্য কি পরিমাণ টাকা গুনতে হবে সে ভাবতেও পারছে না।
ওসব তার ভাবার কাজ নয়। প্রান্তিকের ডাকে হুঁশ ফিরল।
“ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও। যাও!”
বলেই বেলকনির কাছে এগুলো। প্রিয়তার একটু ও ইচ্ছে করছে না ফ্রেশ হতে। খাবারের ইচ্ছেও নেই। সে আসলে ঘুমাতে চায়। শরীর ম্যাচ ম্যাচ করছে। প্রান্তিক বেলকনির পর্দা সরিয়ে দিতেই স্বচ্ছ কাঁচের বাইরে এক টুকরো লন্ডন যেন দেখতে পেলো। কি ভারী সুন্দর নদী। তার উপর ঝুলে আছে ব্রিজটি। সোনালী আলোর রেখা উপচে পড়ছে নদীর উপর। ড্রামাটিক দৃশ্য। প্রিয়তার শরীরে রোমাঞ্চ ছেয়ে গেল। সে এগিয়ে এলো। প্রান্তিক মৃদু হেসে স্বচ্ছ কাঁচের দরজা খুলে দিল। হুঁ হুঁ করে ঠান্ডা বাতাসে ঘর ভরে উঠল।
“এটা হচ্ছে..
“থেমস নদী।
“তুমি জানো।”
প্রিয়তা প্রান্তিকের দিকে ফিরে মাথা নাড়ল। বিস্ময়ে তার আঁখি জোড়া চকচক করে উঠল।
উদাম বুকের উপর লেপ্টে আছে সে। চোখ জোড়া বুজে আছে অক্লান্ত ভাবে। অন্যজন তার মাথায় উপর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সেই কখন থেকে। প্রিয়তার উঠার নাম নেই। এই নরম বিছানা ছেড়ে তার উঠতে ইচ্ছে করছে না। প্রান্তিক উঠেছে সেই ভোরে। ভেবেছিল তাকে নিয়ে সূর্যোদয় দেখতে যাবে। ম্যাডামের ঘুম ভাঙলে তো। এরপর উঠে বলবে, আপনি উঠালেন না কেন?
প্রান্তিক কাত হয়ে এপাশ শুয়ে পড়ল। প্রিয়তার ঘুম তখনো ভাঙেনি। তার মুখে আলতো করে আদুরে ছোঁয়া দিলো সে। এবার তার নিজের একটু একটু ঘুম পাচ্ছে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগায় ঘুমটা যেন গাঢ় হয়ে গেল। সে তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে!
ঘুম যখন ভাঙল তখন অনেক দেরি। এক প্রকার চমকে উঠল সে। প্রিয়তা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। একটু আগেই একটা মেয়ে এসে সকালের নাস্তা দিয়ে গেছে। হ্যাঁ, সকাল তবে ভালোই হয়েছে। দরজা বন্ধ করে প্রিয়তা তার দিকে ফিরে তাকাল। পা অবধি লম্বা একটা কালো পোশাকে তার শরীর আবৃত। প্রিয়তা মৃদু হেসে বলল, “উঠে পড়ুন, নাস্তা সেরে নিন।”
অবশেষে নরম বিছানা ছেড়ে সে নামল। ফ্রেশ হতে গেল। এরই ফাঁকে প্রিয়তা কফির মগে চুমুক দিল। বেলকনির কাছে এসে পর্দা সরিয়ে দিল। দরজা খুলল না, কারণ বাইরে ভীষণ ঠান্ডা। ওপার থেকেই উপভোগ করতে লাগল। দরজা খোলার শব্দ। সে এসেছে। প্রিয়তা পিছন মুড়ল। প্রান্তিকের উদাম পিঠের অংশ তার চোখে বাজছে। চিক চিক করছে পিঠখানা। বাহুর রগ ফুটে উঠেছে আশ্চর্য ভাবে। পরনে কেবল একটা টাউজার কোমর অবধি নেমে গেছে। কফি হাতে এদিক ফিরল। তার সুঠাম বাহু দেখে একটু স্তব্ধা খেয়ে গেল সে। ছিপছাপ গায়ের গঠন, গভীর দুটো দৃষ্টি কফি মগে চুমুক দিয়ে এদিক ফিরে আছে। তার ঘন এলোমেলো চুল গুলো তাকে কাছে টানছে। ইচ্ছে করছে আলতো হাতে চুলগুলো ঠিক করে দিতে। সূর্যের আলোক রেখা আয়না ভেদ করে তীর্যক ভাবে এসে পড়ল তার শরীরের উপর। আরো সুদর্শন, আকর্ষণীয় হয়ে উঠল সে। বুকের উপর জুড়ে থাকা ঘন লোম গুলো চকচক করছিলো। ওই উদাম বুকের উপরই এতোক্ষণ লেপ্টে ঘুমিয়ে ছিল ভেবে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল। প্রান্তিক পা বাড়াচ্ছে দেখে উল্টো হয়ে দাঁড়াল।
পেছন থেকে আগলে ধরল সে। তার পেশিবহুল হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল কোমরটা। কফি মগটা রেখে পেছন থেকে গলায় শক্ত হাতের ছোঁয়া জড়িয়ে দিল। অন্যপাশে অধরের ছোঁয়ায় তাকে মাতাল করতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। প্রিয়তা খুব করে চাইছে ঠিক থাকতে পারছে না। ঘন,গভীর একেকটা চুমু তার হৃদয় তোলপাড় করে দিচ্ছে।
হিচকে টেনে তাকে সামনে ঘুরাল। সামনের ফিতেটা খুলে দিতেই পিছলে শরীরের আবরণ টুকু মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। শিরশির করে উঠল পুরো শরীর। ঠান্ডা লাগছে এবার। প্রিয়তা পাশে তাকাল। কফি টুকু বোধহয় শেষ করে হবে না। তার কফি মগের পাশেই নিজের টা রেখে দিল। সবুর হলো না আরেকজনের। হিচকে টেনে বিছানার উপর ফেলে দিল তাকে। প্রিয়তা ঘোর থেকে বের হতেই যাচ্ছিল। কিন্তু সামনে ফিরতেই মোহনীয় আবেগ তাকে ফের চুমু খেয়ে উঠল। সে এগিয়ে আসছে তার দিকেই।
একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে সেও। পিছনে বালিশ ছাড়া আর পথ নেই। প্রান্তিক ততোক্ষণে তার সামনে এগিয়ে। নেশায় পুরোপুরি মাতাল সে। পরনে ছিল চিকন হাতার সাদা টপস টা। তার ঠোঁটে গভীর চুমু এঁকে দিয়ে সুযোগ বুঝে পিছের চেইন টা খুলে নিল। আপনাআপনি শরীর থেকে খুলে পড়ছে জামা। দুই হাতে সে আগলে ধরল। প্রান্তিক বুঝি হাসল। এখানে হাসার কি হলো?
সরু হাতা সরিয়ে চুমু গেল সেখানে। ওষ্ঠজোড়ার ঠান্ডা চুমু সাপের মতো পুরো এঁকেবেঁকে যাচ্ছে শরীরে। এরই মধ্যে প্রিয়তার মোহনীয় কণ্ঠে মাতাল হয়ে উঠল আরো দ্বিগুণ!
“এখন এসব না। ঘুমিয়ে সময় চলে গেছে চলুন ঘুরতে বের হই!”
“দোষ তোমার, হানিমুনে কেউ কি ঘুমাতে আসে!”
“তো?”
বোকার মতো প্রশ্নে জিহ্ব কা*মড়ে ধরল। প্রান্তিক তার মুখ বরাবর কাছে এসে জবাব দিল,“দেখাচ্ছি!” সহসা আঁকড়ে ধরল অধরজোড়া। দ্বিগুণ তোড়ফোড় করল সেখানে। একটি বার ছেড়ে দিতেই মেয়েটা দম নিল। সবুর করল না এক সেকেন্ড। ধৈর্য্য নামের ব্যাপারটা নেহাত ভুলে গেছে প্রান্তিক চৌধুরী!
প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ৩০
তৈরি হয়ে বের হতে হতে বেলা গড়িয়ে গেল। প্রিয়তা হলদে রঙের একটা গোল জামা পরেছে হাঁটু অবধি। নিচ দিয়ে ঠিক থাকলেও জামাটার হাতা কাটা। তাতে ব্যাপার না। সে এটার উপর কালো একটা জ্যাকেট পড়বে তাতেই হলো। কালো জ্যাকেট খানা পড়তে গিয়ে গলার আঁ*চড় দেখে থেমে গেল। হাতের ছোঁয়ায় দেখতে লাগল। লাল হয়ে ফুটে উঠেছে তার ফর্সা দেহে। একবার হাতে পেলে প্রান্তিকের একটু রহম নেই। মুখ ফিরিয়ে উল্টো দিকে তাকালো। প্রান্তিক তৈরি হচ্ছে। শার্টটা গায়ে জড়ানোর আগেই উদাম পিঠ চোখে পড়ল তার। সদ্য নখের আঁচড় ফুটে উঠেছে সেখানে। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠল। শরীর গরম হয়ে গেল পুরো। প্রান্তিক শার্ট পরে আয়নার সামনে হাজির। প্রিয়তার চোখ মুখ লালচে দেখে কপালে হাত রেখে প্রশ্ন করল, “কি হয়েছে? জ্বর এসেছে নাকি?”
প্রিয়তা মাথা নামিয়ে না করল। এ জ্বর এমন তেমন জ্বর নয়, ম*রণ জ্বর! এখন কে বুঝাতে যাবে সেই কথা!