প্রেম ও অসুখ পর্ব ৯

প্রেম ও অসুখ পর্ব ৯
নবনীতা শেখ

সাদা কলেজ ইউনিফর্ম, কাঁধে ব্যাগ, কোলে আচারের কৌটা। সব নিয়ে সে সাঁঝের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসতে লাগল। সাঁঝ কপাল উঁচিয়ে বলল,
-“কীও বান্দা? কে লাগো?”
-“দেওর লাগি।”
উদয়কে দেখেই সাঁঝের মনে পড়ে গেল ক্লিনিকের সেই লোকটার কথা! ডাঃ অনয় আহমেদ হৃদ! ক্লিনিকে হৃদকে দ্বিতীয়বারের মতো দেখে সাঁঝের কাছে নীলখেতের সেই পড়ন্ত বিকেলের সংঘর্ষ নেহাত কাকতালীয় মনে হচ্ছিল না। সেখানে যে ঘাপলা আছে, তা বুঝতে পেরেছে সেই মুহূর্তেই। আর তার বোঝাটা নিশ্চিত হলো দু’দিন পর স্বামী নামক প্রাণীর সাথে এক অদ্ভুত ফোনালাপে। সত্য খুঁজে নিতে বলেছে কি না!
অদিতি ও আয়াত খুবই চঞ্চল প্রজাতির প্রাণী। সাঁঝ তাদের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারেনি। তিলকে তাল বানাতে ওস্তাদ দু’জন। সাঁঝ কিছু গণ্ডগোলের আভাস পাচ্ছে, আজীব প্রাণী দু’জন এসব শুনলে দুষ্টু হাসির সাথে ঠাট্টায় লেগে যেত নিশ্চিত! ওদিকে রাঈন খুবই বাস্তবিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে চলে।
সাঁঝ দেড়দিনের অস্থিরতা কাটিয়ে ক্লাসের একফাঁকে রাঈনকে বলল,

-“তোমার সাথে একটু আলাদা কথা বলার প্রয়োজন আছে আমার। বিকেলে একটা ক্যাফেতে মিট করো।”
রাঈন টমবয় ক্যাটাগরির মেয়েমানুষ। ফরসা গোলমুখ, চুলগুলো ছেলেদের মতো কাটা, উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি, পরনে ঢিলেঢালা শার্ট, চাহনি অনমনীয় আর কণ্ঠ ভীষণ শক্ত। রাঈন খুব একটা মিশুক মেয়ে না হলেও তার বন্ধুসংখ্যা নেহাত কম নয়। সাঁঝ ও আয়াত বাদে তার বাকি সব বন্ধু ছেলে। সেখান থেকেই এক বুঝদার ছেলেবন্ধুকে নিয়ে সে সাঁঝের সাথে আলাদা কথা বলতে চলে এলো।
রাঈন পরিচয় করিয়ে দিলো,
-“শোনো সাঁঝ! ও আমার বন্ধু, প্রহর। তাহসিন প্রহর। ছাগলের মতো বেকুব, তো ছাগলের চোখে দেখবা।”
এটুকু বলে প্রহরের দিকে তাকাল,
-“আর প্রহর! শোন ব্যাটা, ও হচ্ছে আমার বন্ধু সাঁঝ। বোনের চোখে দেখবি।”
প্রহর অতিষ্ঠ ভঙ্গিমায় দু’ধারে মাথা নাড়ল। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক ছেলেমানুষের সামনে কিছু বলতেও ভীষণ ইতস্তত লাগছে তার। প্রহর তার জড়ত্ব টের পেয়ে নিজ থেকেই বলল,
-“যেসব কথা নিজের মানুষদের বলা যায় না, তা দূরের মানুষদের বলে লাভ আছে। অপরিচিতরা সহজে জাজ করে না।”
সাঁঝ মিহি হাসল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“মেবি আমরা খুব বেশিদিন অপরিচিত থাকব না।”
পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রহর। সাঁঝের কথা শুনে চোখে হাসল সে,
-“তাই মনে হচ্ছে।”
রাঈন দেখতে পেল দু’জন খুব জলদিই একে-অপরের সাথে সহজ হয়ে উঠেছে। তারা একটা গোল টেবিলে বসল। খুবই শর্ট-কার্টে সাঁঝ নিজের বিয়ের ঘটনা জানিয়ে এরপর বলা শুরু করল,
-“আমি বরাবরই খুব রেস্ট্রিকটেড একটা মেয়ে। কখনো বাইরের ছেলেদের সাথে মিশিনি, কথা বলিনি, তাদের সামনে অবধি যাইনি। নিজের প্রতি আমার অসম্ভব সেল্ফকন্ট্রোল। এমন না যে প্রেমের প্রস্তাব আমি পাইনি। অসংখ্য পেয়েছি। কিন্তু কোথাও জড়াইনি। লাভ এট ফার্স্ট সাইট ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর, আমি বিশ্বাস করি না। কাজেই এটা হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এই ডাক্তারটা..”
রাঈন কথার মাঝে ফোঁড়ন কাটল,

-“কোন ডাক্তার?”
সাঁঝ কপাল চুলকালো,
-“বলিনি..না?”
-“নাহ।”
-“নীলক্ষেতে দেখা হয়েছিল। বই কিনতে গেছিলাম। বলা নেই কওয়া নেই, হুট করে এসে হাজির! আমার বইয়ের দামাদামি করে দিলো। এরপর গায়েব হয়ে গেল। আমি একটু অসুস্থ ছিলাম, আমার হাজব্যান্ড কীভাবে কীভাবে যেন তা জেনে গেছে জানি না। আমাকে ওইযে বাসার ওইদিকে একটা ক্লিনিক আছে না? ওখানের একজন ডাক্তারের এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে দিলো। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দেখি, সেই নীলক্ষেতের বান্দাটাই! আমাকে দেখে মোটেও রিয়্যাক্ট করল না। এত নরমাল!”
সাঁঝ থামল, রাঈন বলল,
-“শুধু এটুকুই? তুমি কি বেশি বেশি ভাবছো না?”
-“না, রাঈন। বেশি ভাবছি না। সেদিন আমাকে দেখে তার সামান্য হলেও প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত ছিল। তা না করে শান্ত কণ্ঠে বলল, সে আমাকে মনে রাখেনি, ভুলে যেতে পারেনি.. দুটো আলাদা ব্যাপার! আমি জানি না, সে আমার সাথে কোনো ট্রিকি গেইম খেলছে নাকি অন্য কিছু.. আমার বার বার তার ওই কথাগুলোই মাথায় ঘুরছে। আমি কোনোকিছুতে ফোকাস করতে পারছি না। কেন যেন মনে হচ্ছে, আমি কোথাও কিছু মিস করে যাচ্ছি। কিছু তো হচ্ছেই, যা আমি বুঝতে পারছি না।”

কফি এলো তিনজনের। প্রহর নিজের কাপ হাতে তুলে বলল,
-“তোমার হাজব্যান্ডের ব্যাপারে কতটা জানো?”
সাঁঝের চোখ-মুখ কুঁচকে এলো,
-“কিচ্ছু জানি না। তার নাম, প্রফেশন.. কিচ্ছু না।”
-“আচ্ছা। তুমি কি জানো, তুমি একটা ভুল করেছো?”
-“জানি।”
-“কোনটার কথা বলছি, বলো তো!”
সাঁঝ নতমুখী হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
-“আমার বাবা-মা, ভাই, স্বামীসহ আপন সবাইকে অবিশ্বাস করে আধ ঘন্টার স্বল্প পরিচিত এক মেয়ের কথা শুনে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে আসাটা।”
-“এক্সাক্টলি!”
রাঈন কিছু একটা ভেবে বলল,

-“তোমার বর্ণনা মতে মেয়েটা নরমাল ছিল না। আচ্ছা.. এমনও তো হতে পারে সে তোমার হাজব্যান্ডকে পছন্দ করে?”
সাঁঝ মাথা নাড়ল,
-“স্বাভাবিক। করতেই পারে। আর এজন্যই আমি মানতে পারছি না, হৃদের আরেকটা সংসার আছে।”
টেবিলে শব্দ করে হাত ফেলে রাঈন বলে উঠল,
-“তুমি কি নোটিস করছো, কী বলেছো?”
থতমত খেয়ে গেল সাঁঝ। ওপর-নীচ মাথা নেড়ে বলল,
-“হ্যাঁ। কেন?”
-“তোমার হাজব্যান্ডের নাম কী?”
-“আমি জানি না তো! বিয়ে পড়ানোর সময় খেয়াল করিনি।”
হেসে ফেলল প্রহর,
-“তুমি এই মাত্র তোমার স্বামীর নামের জায়গায় হৃদ বলেছো।”
সাঁঝ মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়ল নিজের মুখের সামনে,
-“আরেহ নাহ! তোমাদের ভুল হচ্ছে।”
রাঈন সাঁঝের বলা বাক্যটা পুনরায় বলল,

-“আর আমি এজন্যই মানতে পারছি না, হৃদের আরেকটা সংসার আছে।”
নিজের অন্যমনস্কতায় বলা কথাটা সাঁঝের মাথায় ধরল এবার। দু’হাতে মুখ ঢেকে সে বিড়বিড় করল,
-“ডাক্তারটা আমার মন-মস্তিষ্কে এমনভাবে কাবু করে ফেলেছে, আমার মাথায় আঁটছে না কিছু। তাই ভুলভাল বকছি।”
প্রহর রাঈনের থেকে একটা নোটপ্যাড নিয়ে সেখানে কিছু লিখল। এরপর সাঁঝকে দিয়ে বলল,
-“বাসায় গিয়ে দেখবে এটা।”
সাঁঝ পালটা প্রশ্ন করল,
-“এখন কেন নয়?”
প্রহর বলল,
-“নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া বলে একটা ব্যাপার আছে।”

সাঁঝ মাথা নাড়ল। টুকিটাকি আরও কিছু কথা শেষে সে বের হয়ে গেল ক্যাফে থেকে। বাসায় যেতে যেতে এসবই ভাবল। কিছু একটা হচ্ছে। আর সেই কিছু একটা বোঝার জন্য তাকে একদম সূচনা থেকে ভাবতে হবে। যেদিকে গল্পের ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে, সেদিকে যেতে হবে। যেতে যেতে পথিমধ্যে থেমে গেল সে।
সন্ধ্যার আগ দিয়ে একটা সময়৷ রাস্তার এক কোণায় দাঁড়িয়ে প্রহরের দেওয়া চিরকুটটা পড়া শুরু করল। অল্প কিছু বাক্য লেখা ছোট ছোট হাতের লেখায় –
“নিজের আঠারোটা বছর যেই নারী একজন নির্দিষ্ট পুরুষের জন্য সুরক্ষিত রেখেছে, সেই পুরুষকে পাবার পরও নারী অন্য এক পুরুষের প্রতি দূর্বল হচ্ছে। আচ্ছা, নিজের মানুষটার ছায়ার প্রতিও তো অনুরাগ জন্মে। হতে পারে না, এমন কিছু?”

সাঁঝের বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। কিছু হিসেব যেন এখন মিলতে লাগল। মস্তিষ্কে ছুটতে লাগল এলোপাথাড়ি সব প্রশ্ন। সে সব প্রশ্ন একপাশে রাখল। ফেসবুকে গিয়ে সার্চ দিলো, “Anay Ahmed” নামটা। একাধারে বেশ কিছু একাউন্ট পেল। সাঁঝ ঢাকার সেই বড়ো রাস্তার এককোণায় দাঁড়িয়ে সেগুলো দেখে যেতে লাগল। অবশেষে ডাক্তার অনয় আহমেদকে সে পেল। লিভ ইন ঢাকা, ফ্রম টাঙ্গাইল। আর মিউচুয়াল ফ্রেন্ডে গিয়ে অর্ণব! তার ভাই!
সাঁঝের আর বোঝার কিছু বাকি রইলো না। সে শান্ত হতে পারল না। বুকের ধুকপুকানি যা শুরু হয়েছে, তা থামার নাম নেই। তার পা দুটো চলতে লাগল অনির্দিষ্ট পথ ধরে। চোখের সম্মুখে ভাসতে লাগল লম্বাদেহী লোকটার শীতল চাহনি, কঠিন মুখটা। কানে ভাসতে লাগল লোকটা থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে শোনা কথাগুলো। আমাদের মস্তিষ্ক যুক্তি খোঁজে, আর মন সকল অযৌক্তিক ব্যাপারগুলোর সাথে সমঝোতা করে।
সাঁঝ এক মুহূর্তেই ধরতে পারল, এই সম্পূর্ণ অপরিচিত লোকটার প্রতি সে কেন এত দূর্বলতা দেখাচ্ছে! তিন কবুলে নিজের করে নেওয়া লোক তার। তার মাথা থেকে বের হয়ে গেলেও, মন থেকে বের করে ফেলা এত সহজই নাকি! আনমনে হেসে ফেলল সাঁঝ। লুকোচুরির যে খেলাটা সে শুরু করেছে, তা না-হয় এবার দুপাক্ষিকভাবে খেলা যাক!

সেসব মনে পড়তেই সাঁঝ মুচকি হেসে উদয়কে বলল,
-“বাহ! অনয় আহমেদ হৃদ, উদয় আহমেদ রোদ! ভালোই তো!”
উদয় আচারের কৌটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“মা পাঠিয়েছে। খাও।”
-“আচ্ছা।”
-“তুমি কি ভাইয়ার সাথে থাকো?”
-“হ্যাঁ।”
-“ভাইয়া যেই বাসায় থাকত, ওটাতেই? নাকি নতুন বাসা নিয়েছো?”
-“তোমার ভাইয়া যেটাতে থাকত, ওটাতেই।”
-“ও আচ্ছা..”
সাঁঝ উদয়ের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলো,
-“তেল নাও না?”
-“না, ভাবি।”
উদয়ের সহজ-সরল স্বীকারোক্তি। সাঁঝ চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলল,
-“কেন?”
উদয় শক্ত কণ্ঠে বলল,

-“তেল নিতে ভালো লাগে না আমার। শ্যাম্পু করতে ভালো লাগে। দিনে দুইবার গোসল করলে দুইবারই শ্যাম্পু।”
-“আর তেল?”
-“হ্যান্ডসাম ছেলে হয়ে আমি তেল চিপচিপে কাকু হতে পারব না, ভাবি।”
সাঁঝ অতিষ্ঠ ভঙ্গিমায় মাথা নাড়ল,
-“তোমার ভাইও কি এমন?”
ওপর-নিচ মাথা নেড়ে উদয় বলল,
-“ভাইয়া আরও বেশি।”
-“তোমার ভাইয়ের কপালে অশান্তি আছে রে, দেওর। আর কয়টা দিনই শান্তিতে থাকতে পারবে।”
উদয় হেসে ফেলল। রাতে খাওয়ার পরও দাদাশ্বশুরের সাথে কথা বলার সুযোগ সাঁঝের মেলেনি। তিনি নাকি সন্ধ্যের পরই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সাঁঝ সকালের অপেক্ষায় রইলো। ভোরে উঠে ওনার সাথে আগে কথা বলা লাগবে। এসব চিন্তা-ভাবনা করতে করতে সাঁঝ হৃদের পুরো রুমটা এবড়োখেবড়ো করে ফেলল। একটা কোণাও বাদ রাখল না দেখে নিতে। মুচকি হাসি যেন ঠোঁট ছেঁড়ে যাচ্ছেই না। কী অদ্ভুত না! স্বপ্ন ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব ঠিক যেন মৃদু কাঁচ! অন্যদিকে রহস্যময়ী প্রকৃতির খেলাই ভিন্ন। নিমিষেই কাঁচের ন্যায় হাজার খণ্ডে স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারে, ভাঙা স্বপ্নকে ইস্পাত ন্যায় দৃঢ়ও বানিয়ে তুলতে পারে…

হসপিটালে হৃদের কিছু কাজ ছিল। বাড়ি ফিরতে তাই দেরি হয়ে গেল, বাজল প্রায় দশটা। এরপর শাওয়ার নিয়ে, ইভকে খেতে দিয়ে, মেইডের বানিয়ে রেখে যাওয়া খাবার খেয়ে হৃদ পুরোপুরি ফ্রি হলো এগারোটার পর। প্রচণ্ড ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়েই কল লাগাল সাঁঝকে। ও-ধারে রিসিভ হলো তিনটা রিংয়ের পর। সাঁঝ সালাম দিলো। হৃদ সালামের জবাব দিয়ে বলল,
-“বলেন ম্যাডাম, কী অবস্থা?”
সাঁঝ প্রশস্ত হাসল,
-“ভালো। সবকিছু ভালোই ভালো।”
-“শ্বশুরবাড়ি কেমন লাগছে?”
-“দারুণ।”
-“শ্বশুরবাড়ির লোকেরা?”
-“অমায়িক!”
-“আর শাশুড়ির ছেলে?”
সাঁঝ ফিক করে হেসে ফেলল,
-“তাকেই তো মিস করছি।”
-“তাই না?”
-“জি।”
-“খেয়েছো?”
-“হ্যাঁ। আপনি?”
-“খেয়েছি।”
-“তারপর বলুন সাহেব, বউ-বাচ্চা ভালো আছে?”

হৃদ হাসবে না-কি কাঁদবে, তার দিশা পায় না। থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ পড়ে থাকে। তারপর ভাঙা শব্দে বলে,
-“খু-উ-ব ভালো।”
-“বাচ্চারা ছেলে নাকি মেয়ে?”
-“মেয়ে সম্ভবত।”
-“কত বছর।”
-“হবে স্কুলপড়ুয়া।”
-“তাই না?”
-“মেবি।”
তাদের কথা চলতে লাগল ঢের রাত অবধি। তারপর কলেই ঘুমিয়ে পড়ল সাঁঝ। হৃদ কল কাটল না, তার আর ঘুমও পেল না। ক্লান্ত শরীরটা যেন ভীষণ প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছে। মেয়েটার সংস্পর্শে আশামাত্র তার সমস্ত ক্লান্তি কীভাবে কীভাবে যেন হাওয়ায় মিশে যায়.. আর তারপর! তারপর মনটা হয়ে ওঠে অশান্ত।
হৃদ উঠে কিছুক্ষণ দুয়েকটা বই ওলটালো। তারপর রুম ও বারান্দায় পায়চারি করল। তাতেও ফায়দা না হওয়ায় সে রুমে এসে ফোনটা হাতে তুলল। ঘুমন্ত স্ত্রীর নিঃশ্বাসের ফিসফিসানো আওয়াজে স্মিত হাসল সে।
এরপর ফেসবুকে ঢুকে পড়ল। নিউজফিড স্ক্রল করতে গিয়ে আচমকা লক্ষ করল, একটা মেয়ে আইডি থেকে দুইদিন আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে। হৃদ খুব একটা আমলে না নিলেও, ম্যাসেজ রিকোয়েস্টটা চোখে পড়ায় দেখতে বাধ্য হলো। আইডির নাম, “সন্ধ্যাবতী”। একটা টেক্সট এসেছে গতকাল মধ্যরাতে। হৃদ একবার পড়ল, দুইবার পড়ল, বার বার পড়তেই থাকল। আইডিটা কার, তা বোঝার জন্য হৃদকে খুব একটা বেগ পোহাতে হলো না। বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। কপালে হাত রেখে, দু-চোখ বন্ধ করে হাসতে লাগল।
ও-ধারে ফোনে জ্বলজ্বল করতে থাকা শব্দেরা যেন হাওয়ায় ভাসতে লাগল –

প্রেম ও অসুখ পর্ব ৮

“মন্দতা মনকে গ্রাস করেছে,
সঞ্জীবিত সুরে সুখ ভেসেছে।
অস্তিত্বে এক অকস্মাৎ লহরী তুমি,
শোনো!
প্রেম ও অসুখের সন্ধি হয়েছে।”

প্রেম ও অসুখ পর্ব ১০