প্রেমঘোর পর্ব ১০৫+১০৬
নার্গিস সুলতানা রিপা
আহ্নিক গতির প্রভাবে কেটে যাচ্ছে দিন।
আবার এক নিয়মেই রাতের আগমন।
আর দিন রাতের এই খেলায় এগিয়ে যাচ্ছে সাদাদ-নৌশিনের ভালোবাসার সংসার।
নৌশিনের বাচ্চা আজ-কাল পেটে ফুটবল খেলে।
বাচ্চা টা মনে হয় সাদাদের মতো শক্তিশালী।তা না হলে এতো জোরে লাথি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না।
আজকে আবার চেকআপ করানোর তারিখ।সকাল থেকে সাদাদের মা সাদাদকে তাড়া দিচ্ছে।
সাদাদও যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ই করছে।
তবে নৌশিন যে খুব অসুস্থ আজকাল,তাই ঠিকমতো হাঁটাহাঁটিও করতে পারে না।
সেজন্য সব কাজ সাদাদকেই করতে হয়।
তাই দেরী হয়ে যায় আর কি।নৌশিন করতে গেলে আরও দেরী হয়ে যায়।
তা ছাড়া একটু হাঁটলেই সে ক্লান্ত হয়ে যায়।কি থেকে কি হয় তাই সাদাদ অফিসের সব কাজ করেও সারাদিন নৌশিনের পেছন পেছন তো আছেই।আর বাড়ীর সবাই তো চোখে চোখে রাখছে।
নৌশিনের মা-বাবা প্রতি সপ্তাহেই আসে মেয়েকে দেখার জন্য।ভাই-ভাবীও আসে মাঝে মাঝে।
“নৌশিন,উঠো জান….”
সাদাদের ডাকে নৌশিন দু হাতে ভর দিয়ে উঠার চেষ্ঠা করছে।কিন্তু পারছিলো না।
সাদাদ দ্রুত গিয়ে শুয়া অবস্থা থেকে বসালো নৌশিনকে।
বড্ড শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।
শুকাবেই না কেনো!বাচ্চার পজিশন নষ্ট,পুরো পেট উপরের দিকে ফুলে গেছে।
বুকের কাছাকাছি।স্বাভাবিক তো নিঁচের দিকে ফুলে।
আর নৌশিনের সেই এক্সিডেন্টের জন্য এমনটা হয়েছে।
বাচ্চা টা বড় হওয়ার সাথে সাথে বেচারী না ঠিক মতো খেতে পারে,না বসতে শান্তি না উঠতে।আর সাদাদের যেনো প্রতিটা সেকেন্ড কাঁটে ঘোর চিন্তায়।নৌশিন ঘুমিয়ে থাকলেও তাঁর চোখে ঘুন আসে না।এভাবেই কাঁটে আজকাল ওদের।তবে দুজনের মনে বিশ্বাস আছে,তাঁরা পারবে বলে।
আল্লাহর উপর ভরসা আছে দুজনেরই।সাদাদ তো রোজ রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে।
দোয়া করে যেনো ওর স্ত্রী সন্তান ভালো থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদাদের মা এসে নৌশিনকে ফ্রেস করিয়ে রেডি করে দিলো।এরমধ্যে সাদাদ সব কাগজ-পত্র গুছিয়ে নিলো।
ডাক্তার যে কত রকমের রিপোর্ট! তবে রিপোর্ট করে ট্রিটমেন্ট নেওয়া টা বেস্ট।
“মা চলো…..”
“হ্যাঁ খাওয়া টা শেষ প্রায় দাঁড়া।”
“ও আচ্ছা,ঠিক আছে।খাওয়ানো শেষ করো।আমি গাড়ি বের করতে বলি।”
“হ্যাঁ যা…..”
“ওকে।”
সাদাদ দরজা থেকে আবার ফিরে এসে,নৌশিনকে উদ্দশ্য করে বলল,
“আস্তে আস্তে খাওয়ার চেষ্ঠা করো।তা না হলে কাঁশি এসে গলায় আটকে যাবে।”
নৌশিন হাঁসি মুখে মাথা নেড়ে জবাব দিলো,”হুম।”
প্রতিত্তুরে সাদাদও মুঁচকি হাঁসলো।
“মা,খাওয়ানো শেষ হলে ওকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করো না একা একা।আমি আসছি….”
“হ্যাঁ রে বাবা,আমি জানি।তুই যা তো যা…..”
নৌশিনের প্রেগন্যান্সির যখন সাড়ে চার মাস তখন রাফসা ওদের রোম টা নিচতলায় শিফ্ট করে দিয়েছে।যাতে নৌশিনের উঠা-নামায় কোনো কষ্ট না হয়।তবুও যে কোনো দরকারে একটু আধটু হাঁটাহাঁটি সাদাদ নিজে ধরে ধরে হাঁটায় নৌশিনকে।খুব ভালোবাসলে বোধহয় ভয় টাও বেশি লাগে।
তাই সাদাদেরও খুব ভয় হয়।
যদি ওর মা নৌশিনকে ঠিক মতো ধরে রাখতে না পারে??
তাহলে তো সর্বনাস।নৌশিনের যা কন্ডিশন!নিজে কখনই ব্যালেন্স রাখতে পারবে না।
এজন্য সাদাদ হাঁটাহাঁটির জন্য আর কারও উপর ভরসা করে না।
বিপত্তি ঘটলে বোধহয় সব দিক থেকেই হয়।গত মাসে নৌশিনের ওজন ছিলো আটচল্লিশ কেজি।আর এ মাসে সে ওজন তেঁতাল্লিশ কেজি।নরমালি ই তো নৌশিন পঁয়তাল্লিশ কেজি।
সাদাদ পুরো ভিমরি খেয়ে বসে আছে।কি করবে সে?
এখন তো বাচ্চাও পরিপূর্ণ ওজন বেশি হওয়ার বদলে দিন দিন কমছে।
নৌশিন বুঝতে পারছে সাদাদের মনে কি চলছে।
ডাক্তারের কেবিনে কেউ আর কোনো কথা বলল না।
সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে গাড়িতে বসলে,রাফসা ডাক্তারের সাথে টুকটাক করে বলে এলো।
আর সাদাদ নৌশিনকে ঠিক করে বসিয়ে সামনের সিটে এসে বসলো।রাফসা একহাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে নৌশিন।
সিটে গাঁ মেলে বসে আছে নৌশিন।
শরীর খারাপ হওয়ার একটা বড় কারণ হচ্ছে নৌশিন ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে না।
পারার কথাও নয়,ডাক্তার প্রথমেই বলেছিলো এমনটাই হবে।বাচ্চার সমস্ত চাপ উপরের দিকে।তাই খাবার তো আগের চেয়ে আরও কম নিতে পারে তার উপর না আসে বসে শান্তি না আছে শুয়ে।
এখন তো প্রায় রাতেই সাদাদের খাটে হেলান দিয়ে ঘুমায় আর নৌশিন সাদাদের বুকে হেলে শুয়ে থাকে।
বালিশে মাথা দিলেই কাঁশি হয়।তারপর তো!!বমি আছেই।
বাড়িতে পৌঁছেই সাদাদ নৌশিনকে কোলে করে রোমে নিয়ে আসলো।
এদৃশ্য দেখে সাদাদের মা ছুটে আসে।কারণ এমনি এমনি সবার সামনে সাদাদ তো আর বউকে কোলে নিবে না।
“কি হয়েছে??বাবা….কি হয়েছে??”
সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে ব্যস্ত।রাফসা জবাব দিলো,
“গাড়ির গন্ধে চার বার বমি করেছে ও মা।শরীর ছেড়ে দিয়েছে একদম।তাই সাদাদ কোলে করে নিয়ে এলো।”
সাদাদের মুখের দিকে তাঁকানো যাচ্ছে না।
চিন্তায় চোখ-মুখের যাতা অবস্থা।সাদাদের মা তো পারছে কেঁদে দিচ্ছে।
রাফসা নৌশিনের শরীর টা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিলো।
ভালো করে তাঁকাতেও পারছে না মেয়েটা।বাজে অবস্থা হলে যা হয় আরকি!
“রিদি,আমার ওয়ালেট কোথায়?”
……….
“রিদি…….”
রান্না ঘর থেকে দ্রুত আসে রিদি।
“আসছি তো।কি হয়েছে??ডাকছো কেনো??”
“ওয়ালে…..”
রিদি বালিশের তলা থেকে পরশের হাতে ওয়ালেট টা ধরিয়ে দিলো।
কিন্তু পরশের নজর ওয়ালেটের দিকে না।
রিদির দিকে।
কমড়ে কাপড় গুজে,রান্না করছিলো সে।একদম পাক্কা গিন্নী হয়ে উঠেছে আজাকাল।
পরশ যত দেখে আজকাল ততই অবাক হয়।
যেনো নতুন এক রিদি।
“কি হলো??নাও……”
“সুন্দর লাগছে…..”
“কি??”
“তোমাকে…..”
অবাক হয় রিদি।পরশ টা যে কি!!কখন কি হয় ওর বুঝা দায়।
রিদির ভাবনার শেষ না হতেই পরশ রিদির কমড়ে হাত রেখে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
“আরে,কি করছো??”
“হুসসসসস……….সব সময় এতো কথা বলতে হয় না।”
বেণুনী করা চুলগুলো একপাশে।কপালে ছোট ছোট কিছু চুল।কানের ছোট্ট ঝুমকা।নাকে ডায়মন্ডের ছোট একটা পিন।রূপের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলতে এগুলোই যথেষ্ঠ রিদির জন্য।
পরশ রিদির কমড়ের দিকে রাখা হাতদুটো শাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে চেপে আরও কাছে আনলো রিদিকে।
ফুঁ দিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিলো।চোখ বন্ধ করে ফেললো রিদি।
পরশ একটা হাত রিদির গালে রেখে প্রিয়তমার কানের নিঁচে একটা চুমু খেলো।
কেঁপে উঠলো রিদি।আর তাঁর সাথে সাথে পরশও যেনো বেশি আসক্ত হয়ে উঠলো নীল ভালোবাসায়।
“কি করছো?ছাড়ো…..”
পরশ অবাক!!কি বললো রিদি!!তুমি!!এ কয়েকমাস কত জোর করেও কোনো কাজ হয় নি। আর আজ কি না!!
রিদি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে পরশের অবস্থা।
মিটিমিট হাঁসছেও বটে।
পরশের কাঁধের পেছনে হাতদুটো বেঁধে বলল,
“দেরী হচ্ছে না??”
“দেখছি তো।”
“পরে দেখো।।।আর এতো অবাক হওয়ার কি আছে??আমার স্বামী আমি কি বলে ডাকবো আমার ব্যাপার।তবে বেশিরভাগ সময় আপনি বলেই বলবো।
পরশ কোনো জবাব না দিয়ে রিদির কপালে একটা চুমু এঁকে বলল,
“অফিস যাবে না??”
“উমহু……..”
“কেনো??”
রিদি মাথা নিঁচু করে লজ্জামাখা হাঁসি দিলো।
পরশ এ হাঁসির কোনো মানে খুঁজে পেলো না।সে কি কোনো হাঁসির কথা বলেছে নাকি!যে রিদি হাঁসছে???
“কি হলো হাঁসছো কেনো??”
“কই??”
“ওয়াট হ্যাপেন রিদি??আমার ড্রেস আপে তো মনে হচ্ছে না কোনো প্রব।তাহলে??”
“ধুর…..তেমন কিছু না….অফিস যাও তো তুমি।”
“কি ব্যাপার??এনি গুড নিউজ??”
রিদি নিজেকে পরশের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে পরশের টাউজার-টিশার্ট এসব গুছাতে গুছাতে বলল,
“আচ্ছা বাবা!!ওকে।আপনাকে আমি আপনি বলেই সব সময় ডাকবো।তুমি বলে ডাকলে তো আপনার কত কি মনে হয়….”
পরশের কাছে রিদির উত্তর টা ঠিক যুতসই মনে হয়নি।
তাই রিদির হাত ধরে আবারও নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
বলল,
“তা নয় রিদি।আমি তোমাকে এই কয়েক মাসে কতবার বুঝানোর চেষ্ঠা করেছি আমাকে ‘তুমি’ বলে সম্ভোধণ করার জন্য।বাট তুমি??একবারের জন্যও করো না।আমি বারবার বলার পরও যেটা হয় নি।আজ হঠাৎ তুমি!!ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না…..”
“ওফফফ….আপনার না অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে???দেখি,ছাড়ুন।আর ভালো ছেলের মতো অফিস যান….প্লিজ…..”
পরশ এবার নিজের আসল রূপে এলো।রিদির হাতে খুব ভালো ভাবেই চেপে ধরে বলল,
“এই মেয়ে!!বলো…..”
রিদি আল্লাদি কন্ঠে আওয়াজ করলো,
“ওহুহু……”
আজকাল পরশের এই শক্ত হাতের ধরা-ছোঁয়া রিদিকে একদম ব্যথা দেয় না।বরং মনের কোণে হাজার ফুলের সুখময় স্রোত বইয়ে নিয়ে যায়।
ভালো লাগে পরশের জোর-জবরদস্তিগুলো।তাই তো নিজেকে আরও কমল করে তুলতে ইচ্ছে হয় পরশের সামনে।
“ছাড়ুন….লাগছে…..”
“বলবে না??”
“ওহুহু……কি গো আপনি!!কথায় কথায় নিজের শক্ত টা হাত টা আরও শক্ত করেন।এমনিতেই লোহা।আর শুনোন….আমাকে এই কয়েকমাস যা শক্ত ভাবে সর্প্শ করেছেন আপনি তো করছেনই।আজ থেকে না একদম এতো হার্ড ভাবে ধরবেন না আমায়।বুঝেছেন??”
এই বলে রিদি পরশের হাত টা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
পরশ রিদির কথার আগামাথা কোনো কিছুই ধরতে পারলো না।কি হলো কি এই রিদির এটাও ধরতে পারছে না।
রিদি রোমের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িচ্ছিলো কিন্তু পরশ সেটা হতে দিলো না।
রিদির সামনে গিয়ে রিদিকে এক ঝটকায় সোফায় ফলে দিলো।বেসামল হয়ে ইচ্ছাবসতই রিদির উপর শুয়ে পড়লো।
রিদি এবার সত্যি সত্যি চিৎকার করে।
ভয় পেয়ে গেছে অনেকটা।
তবে হয়তো সেটা অন্য কোনো কারণে।নিজের জন্য হলে তো এতো ভয় পাওয়ার কথা ছিলো না।
ভয় টা রাগে পরিণত করে বলল,
“আপনি!!!আসলেই যা তা।কমন সেন্স বলতে কিছু নেই আপনার।নিজে যেমন লোহা-ইস্পাতের তৈরী সবাইকে তেমন ভাবেন নাকি আপনি???”
“রিদি!!!!”
“সরুন তো সরুন আপনি।পারেন তো শুধু ধমকাতে আর জোর খাটাতে।বুদ্ধি করে কিছু করতে জানেন আপনি??”
“মানে??কি বলতে চাও তুমি?”
“আমি কিচ্ছু বলতে চাই না।সরুন আপনি আমার উপর থেকে।লাগে আমার।আর এখন থেকে হুটহাট আমার উপর এভাবে ঝেঁকে বসবেন না।প্রবলেম হবে আমার……”
পরশের এবার আরও খটকা লাগছে।’এখন থেকে’,’আজ থেকে’ কিসব বলছে এগুলো রিদি।
“কি হলে সরুন….উঠতে দিন আমায়।ব্যথা পাচ্ছে তো ও…..”
রিদিও হা!!!কি বলে ফেললো!!
পরশ ধরে ফেলে নি তো।
পরশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“ব্যথা পাচ্ছে মানে???’ও’….মানে???”
“কিছু না আমার শরীরের কথা বলছিলাম…..”
“রিদি!!ক্লিয়ার কর….তুমি ব্যথা পাচ্ছো মানে ও পাচ্ছে……রিদি!!!!তুমি কি মিন করছো???”
মুঁচকি হাঁসছে রিদি।হাঁসবেই বা না কেনো??পরশ যে বোকার মতো তাঁর দিকে তাঁকিয়ে।গভীর মনোযোগে কিছু একটা বুঝার চেষ্ঠা করছে ছেলেটা।
মুহুর্তেই পরশের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।রিদি বুঝে উঠার আগেই আচমকা রিদিকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে শুরু করলো পরশ।
“রিদি!!!তুমি?????”
রিদি বুঝতে পেরেছে পরশের মাথায় তাঁর ইঙ্গিতগুলো ডুকেছে।তাই চারদিক থেকে লজ্জারা এসে আষ্টেপিষ্টে ধরছে তাঁকে।
পরশের খুশি যেনো ধরছে না।
রিদিকে নিয়ে চৌকোণে মতো বৃত্তে ঘোরছে সে।
রিদি পরশের গলা জড়িয়ে ধরে হাঁসছে।হাজারো সুখ….লজ্জা…ভালোবাসা লুকিয়ে আছে এই হাঁসিতে।
“আরে বাবা!!এবার তো থামো……”
“নো ওয়ে….আম সো হ্যাপি…..”
“আমি জানি তো।কিন্তু এবার তো থামাও….মাথা ঘুরছে তো আমার।”
পরশ সাথে সাথে থেমে যায়।
কিন্তু কোল থেকে নামায় নি রিদিকে।অপলক চেয়ে আছে রিদির মুখের দিকে।
“কি হলে নামান??”
“এই জন্যই কি আমার ম্যাডাম এতো খুশি??অফিস যাচ্ছে না আজ??হঠাৎ তুমি বলে ডাকার কারণ কি এটাই??”
কতগুলে প্রশ্ন!!কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিবে রিদি!!!
লজ্জা লাগছে খুব।পরশের বুকের চেয়ে পারফেক্ট কোনো জায়গা না পেয়ে সেখানেই মুখ লুকায় সে।
পরশ রিদিকে একটু উপরে তুলে রিদির কানের পাশে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে বলল,
“থ্যাস্ক এতো বড় একটা উপহার দেওয়ার জন্য।”
মুখ তুললো রিদি।
অনুনয় স্বরে বলে উঠলো,
“আপনি কেনো দিচ্ছেন??দিবো তো আমি।আপনার জন্যই আমার নারীরূপী জন্ম সার্থক হতে চলেছে……”
পরশ এতোটাই খুঁশি যে সে আবারও রিদিকে বেসামালভাবে ঘুরাতে শুরু করছিলো।
কিন্তু তাঁর আগেই রিদি ভয় পেয়ে যায়।
“আওওওও…….পড়ে যাবো…..”
“সরি সরি…আর হবে না।আসলে আম সো এক্সাইটেড……. ”
“এবার তো নামান……”
“আমাকে ডিরেক্ট বলো নি কেনো??আর কবে থেকে??”
“লজ্জা লাগছিলো খুব।কাল রাতে আমি জানতে পেরেছিলাম।অফিস থেকে আগেই ছুটি নিয়ে নিয়েছিলাম।যেনো আপনার সাথে ব্যাক করতে না হয়।আপনি থাকলে তো ফার্মেসিতে যাওয়া হতো না।আর আমার বারবার মনে হচ্ছিলো আমাদের মধ্যে আরও একজন আসতে চলেছে।তাই…….”
পরশ রিদিকে একটু উপরে তুলে পরম আদরে কপালে একটা চুমু দিলো।
“রির্টান দাও…..”
“কি??”
“এই যে আমি তোমাকে কিস করলাম….তার রির্টান দাও….”
“ইশশস।।।বয়ে গেছে আমার।আপানকে কি আমি দিতে বলেছিলাম??”
“আরে দে না……”
“উম হু…..”
দুষ্টুমির হাঁসি হাঁসছে রিদি।
পরশও মুঁচকি হেঁসে বলল,
“পরশকে দিতে হয় না।পরশ নিজের পাওনা ঠিক আদায় করে নিতে পারে।”
রিদিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরশ রিদির কমল-চিকন ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।
আচমকা এননটা হওয়ায় রিদি ভয়ে পরশের ঘাড় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর তারপর সেও তাল মিলাতে লাগলো পরশের সাথে।
পরশ সেই অবস্থাতেই রিদিকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
রিদি রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছে।তবুও পরশ তাঁর ঠোঁট ছাড়ে নি।
বাধ্য হয়ে একটা কমড় বসিয়ে দিলো পরশের ঠোঁটে।
বিনিময়ে অসংখ্য কমড় পড়লো রিদির ঠোঁটে সাথে অজস্র ভালোবাসা।
বেশ খানিকপর পরশ ক্লান্ত হয়ে ঠোঁট জোড়া ছাড়লো রিদির।
ইশশশ!!আর একটু হলে রিদি টা শ্বাস আটকে মরেই যেতো।
দুজনেই হাপাচ্ছে।
রাগে-দূঃখে পরশের দিকে বাঁকা চোখে তাঁকায় রিদি।
বদ টা হাঁসছে।
রিদি বসিয়ে দিলো কয়েকটা কিল-ঘুষি।
“খারাপ,লুচু….মেরে ফেলছিলেন আমায়…..”
পরশ রিদিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।
আহ্লাদি স্বরে বলল,
“সরি,বউ…..’ও’ কি কিছু মনে করেছে??”
“উমহু…..তবে ভাবছিলো ‘আমার পাপা টা কি দুষ্টু আমার মাম্মির শ্বাস আটকে দিচ্ছিলো’….”
দুজনেই হেঁসে উঠলো।
পরশ রিদির পেটে হাত রেখে বলল,
“বাবু সোনা,তোমার পাপাই তোমার মাম্মিকে আদর করছিলো…..শ্বাস আটকানোর জন্য সেসব করে নি…..”
রিদি পরশের হাত একটা চিমটি কেটে বলল,
“এই,আপনি ওকে কিসব বলছেন??ও কি আপনার আমার মতো এসব বুঝে নাকি??”
“ও তাই তো।….”
আবারও তাদের অনাগত ভবিষ্যৎ টাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“পাপাই না খুব সরি।আর এমন হবে না…….”
খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠলো রিদি পরশের কথায়।
পরশ খুব শান্ত ভাবে রিদির কপালে ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে উঠে পড়লো।
রিদি উঠতে নিলেই-প্রায় ধমকের সুরে বলল,
“একটু আগে না বললে মাথা ঘুরছে!!তাহলে উঠছো কেনো???চুপচাপ শুয়ে থাকো…..এসময় আমাকে তো শক্তভাবে ধরতে বারণ করলে।ঠিক তেমনি এসময় নিজে একটু কেয়ারফুল থাকবে।সো আমার সব কথা শুনতে হবে।
ক্লিয়ার??”
রিদি পুরো হা।এই লোক বেবীর এক মাস হতে না হতেই শুয়ে থাকতে বলছে!!!
“আরে,আমি তো বলেছি-আপনি যেভাবে ঘুরাচ্ছিলেন আমায় তাতে আমার মাথা ঘুরবে…..মাথা ঘুরছে সেটা তো বলি নি….”
“স্টপ।আজকে অনেক ঘুরিয়ে ফেলেছি তোমায়।হুঁশ ছিলো না তো তাই।আর হবে না।
সো রেস্ট নাও যেনো মাথা না ঘুরে….”
“পরশ আমি ঠিক আছি…..”
“রিদি!!কি বলছি আমি???”
রিদি একদম চুপ।শান্ত মেয়ের মতো বিছানায় গা মেলিয়ে শুয়ে থাকলো।
জানে সে কথা বাড়িয়ে বা জোর করে আর কিচ্ছু করা যাবে না।পরশ যে ধাচের মানুষ!!তাঁর সাথে রিদি কোনো দিন ই পেরে উঠবে না।
তাই সোজাসোজি সবটা মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আজ নৌশিনকে সাদাদের বস মানে সাদাদ যাকে বাবা বলে ডাকে তিনি আসছেন।
দেশের বাইরে গিয়েছিলেন জরুরি কাজে তাই নৌশিনের অসুস্থতার খবর শোনেও আসতে পারে নি।
এদিকে নিপা-ওয়ালিদও সিলেট থেকে ঢাকা চলে এসেছে।
ওয়ালিদের বাবা-মা সিলেটেই রয়ে গেছেন।
নৌশিন শুয়ে আছে।তার একপাশে অরূপ আর অন্য পাশে তুবা।সাদাদ সোফায় বসে অফিসের ফাইলগুলো চেক করছে।ইদানিং তো সাদাদ অফিসে খুব বেশি দরকার না হলে যাচ্ছে না।
দিনে দুই-তিন ঘন্টা সময় দিচ্ছে অফিসে।তবুও তার বস দেশে থাকলে এতটুকুও দিতো না।বাধ্য হয়ে যায়।আর বাকী টা বাসাতেই করে।তবে কাজের চেয়ে নৌশিনের প্রতি নজর টা বেশী।
তুবা আর অরূপ নৌশিনের সাথে কথা বলতে বলতে তুবা মাঝে মাঝে নৌশিনের পেটেও হাত রাখছে।
অরূপ এরকম করে না।বেশী ছোট তো তাই সাদাদ,রাফসা তাঁকে খুব ভালো করে বুঝিয়েছে নতুন বউকে যেনো কম সর্প্শ করে।অরূপও তাই করে।
তুবা বারবার পেটে আলতো করে হাত রাখছে দেখে অরূপের মনটাও আকুবাঁকু করছে।
তাই সেও আবদার করল,
“কাকাই,আমি একটু ধরি……আপুর মতো আস্তে ধরবো…..”
অরূপের কথা শোনে সাদাদ-নৌশিন দুজনেই মুঁচকি হাঁসলো।
সাদাদ ফাইল রেখে ওদের পাশে এসে বসলো।অরূপকে পায়ের উপর বসিয়ে বলল,
“দাও……”
“সত্যি??”
“হ্যাঁ….তবে আস্তে।তোমার আপু আস্তে করে রেখেছে যে……”
“ওকে……”
অরূপ সাদাদের কোলে বসেই নৌশিন পেটে হাত রাখলো।
আর ওমনি নৌশিনের বেবী টা নড়ে উঠলো।
অরূপ ভয়ে পেয়ে গেছে খুব।
“ওওওওুু…..”
সাদাদ-নৌশিন হেঁসে ফেললো অরূপের ভয়ার্ত মুখ দেখে।
“বাবাই,ও তো খেলে পেটে।তাই এমন হয়…..”
“পেটে খেলে??”
তুবা বলল,
“হ্যাঁ রে বোকা।খেলে……”
“তুমি কি করে জানো আপু??”
“আমি জানি রে জানি।বড় মামীর পেটেও তো আমি ধরতাম,তুই খেলতি।আমার মনে আছে…..”
“ওওওওও……”
নিপা তুবা আর অরূপকে ডাকার জন্য সাদাদের রোমে আসে।নৌশিনের হাঁসি মুখ দেখে বেশ ভালো লাগছে তাঁর।
তুবার পাশে এসে বসলো সে।
“কি ব্যাপার??কি নিয়ে এতো খুশী সবাই??”
“মম…..নতুন মামীর বাবুও না পেটে খেলা করে….”
“তাই নাকী??”
“হ্যাঁ পিপি…..”
“তা তো একটু করবেই সোনা।তুমি আর তোমার আপু তো সব সময় খেলছো সে ও দেখছে।তাই সে ও খেলছে পেটের ভেতরে।”
“ও দেখে???”
“হ্যাঁ তো বাবা।দেখে….এখন শোনো তোমরা যাও দাদুন খেতে ডাকছে।”
“এখন!!!”
“হ্যাঁ মা….যাও…..অরূপ,বাবা যাও….দুজনে খেয়ে নাও দাদুনের কাছে…..”
“মম,পড়ে খাই???”
“তুবা!!তুমি কেনো খেতে চাও না বলো তো??খেতে হয় মা….”
তুবা আর অরূপ চলে গেলো।
“এখন কেমন লাগছে??”
“ভালে আপু।”
“আচ্ছা….ঠিক আছে শুয়ে থাকো।সাদাদ,খেয়াল রাখিস।
আঙ্কেল আসছে কখন??”
“এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি আসবে।ভাইয়া,গেছে তো ড্রপ করতে।”
“ও,আচ্ছা।”
নৌশিন বলল,
“আমার না একটা প্রশ্ন…..”
সাদাদ জানতে চাইলো,
“কি??”
“তুমি বস কে বাবা বলে কেনো ডাকো??”
“মানে কি??তুমি এখনো জানো না??”
“নাহ্ তো।সাদাদের কাছের কানতে চেয়েছিলাম একদিন।ও তোমাকে জিঙ্গাসা করতে বলেছিলো।বাট আমার খেয়াল ছিলো না।”
“রাতে বলবো।এখন না।নিঁচে গিয়ে দেখি তুবা খাচ্ছে কিনা।
না হলে একটু খেয়েই উঠে যাবে আবার……”
প্রায় এক ঘন্টা পর সাদাদের বস বাসায় আসেন।
সাদাদের বাবা-কাকা সহ বাসার সবাই খুব খুশি এই মানুষের আগমনে।
মানুষ টা খুব অমায়মিক।
অত্যন্ত ভালো মানুষ।
প্রেমঘোর পর্ব ১০২+১০৩+১০৪
লোকে বলে না,”ভালো মানুষকে আল্লাহ্ পরীক্ষা করেন বেশী”!!
এই মানুষটাও হয়তো তেমনি।
আল্লাহ তা’আলা এর কাছে হয়তো খুব প্রিয়।তাই এতো কষ্ট দিয়েছেন তাঁকে।
বাসায় ঢুকেই মানুষটা সবার সাথে হাসোজ্জল মুখে কথা বলে সরাসরি নৌশিনের রোমে চলে যায়।বোধহয় তিনি আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না।
সাদাদের সাথে সাথে নৌশিনের জন্যও তিনি আজকাল পাগলপ্রায়।
নৌশিন অসুস্থ!!এই খবর টা যেনো তিনি দেশের বাইরে বসে সহ্য করতে পারছিলেন না!!তাই ছুটে এসেছেন।