প্রেমঘোর পর্ব ১০৭+১০৮

প্রেমঘোর পর্ব ১০৭+১০৮
নার্গিস সুলতানা রিপা

কেটে গেছে আরও কয়েকটা দিন।
আর তেরো দিন পরেই নৌশিনের ডেলিভারী ডেট দিয়েছে ডক্টর।
আগের চেয়ে পেট টা উপরের দিকে আরও বেশী ফুলে গেছে।
যার জন্য শ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হয়।
“সাদাদ……”
“হুম……”
“মন খারাপ তোমার???”
সাদাদ নৌশিনের মাথায় হাত রেখেই বলল,
“কি??না তো…..”
“উমহু…মোটেই না।তুমি ইদানিং আগের মতো হাঁসো না।তেমন কথা বলো না কারো সাথে…….”
এবার যেনো সাদাদের ভেতরটা বেরিয়ে আসলো,
“তোমাকে আমি কত রিকোয়েস্ট করলাম জান??
কি দরকার ছিলো এতো টাফ প্রেগন্যান্সি বেয়ার করার।আমি তোমার মুখের দিকে তাঁকাতে পারি না।কষ্ট হয় খুব।না তুমি খেতে পারছো??না ঠিক মতো উঠতে-বসতে??শুয়ে শান্তিতে ঘুমাতেও পারছো না।এখন ও শ্বাসও ঠিক মতো নিতে পারো না।

আমি আর পারছি না এভাবে তোমাকে দেখতে।
আরও তেরো টা দিন তোমাকে এভাবে দেখতে হবে আমায়।আমি নিতে পারছি না…….. কেনো এমন জেদ করেছিলে???
আমার কথাটা কেনো শোনো নি???”
নৌশিন কি বলবে??
সত্যিই তো সাদাদ কত্ত বুঝিয়েছে ওকে।
কিন্তু সে এতটাই বাচ্চা পাগল ছিলো যে!!!!
যার জন্য এতো ভোগান্তি হচ্ছে তাঁর নিজেরই।
পরমুহুর্তেই আবার ভাবলো নৌশিন,
‘না না!!যা করেছি ঠিক করেছি।একটু কষ্টের জন্য আমার অনাগত বাচ্চা টাকে মেরে ফেলতাম আমি???
না অসম্ভব…..’
সাদাদকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো নৌশিন।
বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমরা তো পারবো আমাদের বেবীকে একটা সুন্দর পৃথিবীর দৃশ্য দেখাতে।একটু কষ্টের জন্য আমি কি করে আমার সোনামানিক টা কে মেরে ফেলতাম??বলতে পারো??”
সাদাদ কিছু বললো।
সত্যিই তো যে নৌশিনের পেটে বেড়ে উঠছে তাঁর তো একটা জীবন আছে।যে জীবনের সূচনা তাদের দুজনের অংশ।
ভালোবাসার প্রতীক।
তাঁকে মেরে ফেলা কি আদৌ ঠিক!!!উপরওয়ালা তো আছেন।তাঁর লিলা আমরা কে বা বুঝি!!!হয়তো ওনার ইচ্ছা তেই নৌশিন-সাদাদের ভালোবাসা এই দুনিয়ায় আনার জন্য নৌশিনের এতো কষ্ট হচ্ছে।
সাদাদ জানে না কি হবে।
তবে শুধু পার্থ্যনা করতে পারে সে।আল্লাহ্ যেনো তাঁর নৌশিনকে এতো কষ্টের ফল দেয়।সব যেনো ঠিক ঠাক রাখেন।
সাদাদকে ভাবতে দেখে নৌশিন আহ্লাদি সুরে বলল,

“এই….কি ভাবছো???”
সাদাদ নৌশনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
“তোমার কথা…..”
“শুধু আমার কথা???”
“না তোমার কোলে আমাদের বাবুর কথাও ভাবছিলাম…..”
“আচ্ছা,আমাদের বাবুর নাম তো ঠিক করি নি আমরা…..সবাই তো আগে আগেই করে…..”
“উমম…আমরা তো আর সবার মতো না।আমরা সবার চেয়ে আলাদা।তাই আমরা বাবুর মুখ দেখেই বাবুর নামকরণ করবো…..”

“ওওও….ঠিক আছে…..”
“হুম।এবার ভালো মেয়ের মতো চোখ বন্ধ করো…..”
“না….”
“কেনো??”
“আদর খাবো আমি…..”
“কিহ??”
“হুম।এতো অবাক হওয়ার কি আছে।আদর করো না তুমি আজকাল।শুধু বেবীকেই কিসি করো…..”
“এই মেয়ে।রোজ তো তোমাকেও চুমু দিচ্ছি…..”
“ইশশ….শুধু কপালে।
আর কোথায় তো না……”
“আচ্ছা!!তুমি তো ইল সোনা…..”
নৌশিন সাদাদের শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে বলল,
“আজ এক মাস যাবত আমাকে লিপ কিস করছো না তুমি……”
নিজের গলায় হাত রেখে আবারও আবেগময়ী সুরে নৌশিন বলল,

“এখানে দুষ্টুমি করছো না……”
সাদাদ মুঁচকি হাঁসলো।
নৌশিন ঘুম ঘুম গলায় সব বলছে।বেচারীর ঘুম না পেলে এসব কখনোই বলতো না।
“এই তুমি হাঁসছো কেনো???আসো না প্লিজ……”
সাদাদকে টেনে নিজের উপরে নিতে চাইছে নৌশিন।বাঁধা দিচ্ছে সাদাদ।এই মুহুর্তে নৌশিনের উপর ওর ভর দেওয়া মানে বেবী-নৌশিন দুজনেরই চাপ লাগা।তাি সাদাদ যাচ্ছে না নৌশিনের উপর।
নৌশিন রেগে গেলো এতে।
আওয়াজ করে বলল,
“আসছো না কোনো???আসো……”
“জান….এখন ঘুমাও প্লিজ…..”
নৌশিন কান্নাস্বরে বলল,

“ও….আমি বুঝে গেছি।আমি তো অসুস্থ হয়ে গেছি তাই আমাকে আর ভালো লাগে না তোমার।তাই তো কিসি করো না,সুরসুরি দাও না,সেক্স করো না কতদিন হলো……সব বুঝি আমি…..”
“এই পাগলী।চুপ…..এই তো কিসি করছি…..”
বলে সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেলো।
এতে যেনো নৌশিন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো।
“আআআআ……একটু কিস??সান্ত্বনা চুমু দিচ্ছো তুমি আমায়???আআআআআআ……..”
সাদাদ নৌশিনের মুখ আস্তে করে চেপে ধরে,
“চুপ,চুপ।কি করছো???বাইরে আওয়াজ যাবে……”
সাদাদের হাত টা সরিয়ে নৌশিন বলল,
“তাহলে আরও আদর করো।আজকে সেক্স করবো আমরা।”
সাদাদ তো মহা বিপদে পড়েছে।কি সব বলছে নৌশিন।
কোনো কথা বললে কিছুতেই শুনবে না নৌশিন।
তাই সাদাদ নৌশিনকে নিজের দিকে পাশ করে ঘরিয়ে নৌশিনের গলায় আলতো করে মুখ রাখলো।
খুব সাবধানে চুমু দিচ্ছে।

শরীরে পানি আসায় সাদাদ শক্ত করে ধরছে না নৌশিনকে।কিন্তু নৌশিন সাদাদের উষ্মতা পেয়ে সাদাদকে সর্বশক্তি দিয়ে নিজের কাছে টানছে।
গলা থেকে কানের আশেপাশে….ঠোঁটে….কপালে সাদাদ চুমু দিচ্ছে নৌশিনকে।
ওর কেমন একটা ঘোর কাজ করছে।নেশায় পড়ে যাচ্ছে নৌশিনের।
“প্লিজ….হাগ মি স্ট্রংলি…..”
সাদাদ নৌশিনের এই কন্ঠ শোনে বুঝতে পারছে নৌশিনের ঘুম কেটে গেছে।
নৌশিন সত্যি সত্যি আজ সাদাদকে চাইছে।
সাদাদ যথাসম্ভব আকড়ে ধরলো নৌশিনকে।
তাতে নৌশিনের ঠিক হয় নি।
তাই নিজেই শক্ত করে সাদাদের মাঝে থাকার চেষ্ঠা করছে।
সাদাদ উঠার চেষ্ঠা করতেই নৌশিন সাদাদের কানে কামড়াতে শুরু করলো।
সাদাদও আর পারছে না।
নৌশিনকে টেনে নিজের উপরে উঠিয়ে নিলো।
ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

নৌশিন আজ এতোটাই পাগল যে নিজেই নিজের জমাটা খুলে ফেললো।
সাদাদ নৌশিনকে থামাতে বলল,
“নৌশিন,কষ্ট হবে তোমার।”
“না হবে না…..আমি চাই……প্লিজ লাভ মি…..”
“প্রবলেম হবে তোমার…..”
“ছাই হবে।আমার এক ফ্রেন্ড ডেলেভারীর আগের দিনও সেক্স করেছে।তুমি জানো আগেকার মানুষ করতো এসব।আমি একটা বইয়ে পড়েছি,”আজকাল মানুষ বেবী পেটে আসলে সেক্স করে না তাই সিজার করতে হয়।এই অবস্থায় মাসে দুই-তিন বার সেক্স করলে সিজার করার সম্ভাবনা কমে যায়……”…..”
“বাট ইউ আর ইল…..”
নৌশিন সাদাদের নজর ঘুরাতে সাদাদের নজর টা নিজের উন্মুক্ত বুকের দিকে নিয়ে আসলো।বলল,
“আমি কিন্তু আগের চেয়ে মোটা হয়ে গেছি…..”
সাদাদ বুঝতে পারছে নৌশিন সোজা কথা টা ঘুরিয়ে বলল।
তাই সে ও নৌশিনকে লজ্জা দিতে বলল,

“মোটা কেনো বলছিস রে পাগলী??বল বুবস গুলো দুধ এসে ফুলে গেছে…….”
নৌশিন লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো।সাদাদের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
সাদাদের কাছে দৃশ্য টা খুব ভালোই লাগছে।
তাই আবারও বলল,
“আগে তো খুব ছোট ছিলো।বিয়ের পর আমার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিলো।আর বেবী আসার ছয়-সাত মাস থেকে আরোও বড় হচ্ছে।
আসলে বেবী আসার পর থেকে তোঁকে আরও সেক্সী সেক্সী লাগে…..বলতে গেলে দ্বিগুণ……”
নৌশিন সাদাদের বুকের উপর মুখ লুকালো।
সাদাদ বলল,
“কি লাভ???আমি তো চুপই ছিলাম।তুই তো নিজেই ঘি দিলি পাগলী……”
নৌশিনের ভালো লাগছে।সাদাদের কথায় লজ্জা পেতে এতো কেনো ভালো লাগে নৌশিন নিজেও জানে না।
সাদাদ তো সরাসরি ই সব বলে,নৌশিনের কেনো জানি সাদাদের মুখে এসব শোনতে ইচ্ছা করে।
হয়তো ভালোবাসে বলে।

সাদাদ নৌশনকে বেডে শুইয়ে দিয়ে নৌশিনের উপর আস্তে করে শুয়ে পড়লো।পুরো ভর টা দিলো না।
ঠোঁটে ঠোঁট করে দুজন দুজনের পিপাসা মিটাচ্ছে।
সাদাদের হাত দুটোর প্রতিটি আঙ্গুলের ভাঁজে হাত ডুকিয়ে নৌশিন সাদাদকে নিজের আরোও কাছে টানছে।
সাদাদের বুকে একের পর এক কামড় দিচ্ছে নৌশিন।
সাদাদও ঠোঁট থেকে গলায় আস্তে আস্তে বুকের দিকে নেমে আসছে।
হয়তো জৈবিক তাড়না দুটি মানুষকে গ্রাস করে নিচ্ছে।
তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই সাদাদের হাত দুটো নৌশিনের বুকে খেলা করতে থাকে।
আর নৌশিনও মাতাল হয়ে আওয়াজ দিতে শুরু করে।
বেশ কিছুক্ষণ পর সাদাদ বলল,

“একটা জিনিস ই আমরা বাপ-বেটি খাবো রে নৌশিন।শুধু পার্থক্য একটাই বাচ্চার বাবা দুদু টা খাবে না।বাট মুখে কিন্তু আমরা দুজনেই নিবো….ইশশশ…কিভাবে সহশ করবে তুমি??দুজনেই যদি…..”
সাদাদকে আর বলতে দিলো না নৌশিন।
মুখে হাত চেপে ধরলো।
এবার খুব বেশী বলছে সাদাদ।
এই ছেলেটার অসভ্যতামী একবার শুরু হলে আর যেনো থামতেই চায় না।
সাদাদও আর কিছু বললো না।
নৌশিনের ডাকে আবারও সারা দিতে লাগলো।
একসময় দুজনে হারিয়ে গেলো গভীর ভালোবাসায়।
নৌশিনের সত্যিই কোনো কষ্ট হচ্ছে না।যতটা হচ্ছে সেটা খুবই স্বাভাবিক।নৌশিন যেনো মহা সুখ পাচ্ছে সাদাদের কাছে।
সাদাদের কানের আশের পাশের প্রতিটা কামড় আর উন্মুক্ত পিঠে প্রতিটা আঁচড় সাদাদকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সেটা।

রিদি বেশ ভালোই আছে।
দাদী শাশুড়ীর টোটকা টা কাজে দিয়েছে।
যে দিন থেকে ওর শাশুড়ী জানতে পেরেছে রিদির পেটে তাঁর ছেলের অংশ আসছে সে দিন থেকেই সব কিছু বদলে গেছে মহিলার।
পরশও আজকাল খুব ভালোবাসছে রিদিকে।
আগেও বাসতো তবে আগে যেমন শক্ত প্রেম ছিলো এখন সেটা নরম হয়ে গেছে।
রিদি বাবা-মা ও মেয়ের খবর টা শোনে খুব খুঁশি।
মানুষের জীবনে তো কত কিছুই হয়।
হয়তো রিদির জীবনেও তেমন কিছু হয়েছিলো।
তাই সেটা ধরে বসে থাকার তো কোনো মানে নেই।
সেজন্য রিদি বাবা আর ভাইও নিজেদের রিদির সাথে আগের মতোই স্বাভাবিক।
আর এই সব টা খুব দ্রুত হয়েছে শুধুমাত্র রিদি প্রেগন্যান্ট বলে।
রাতে ঘুমের ঘোরে পরশ রিদির পেটের উপর নিজের শক্ত হাত টা দিয়ে চেপে ধরছে।
রিদির আবার রাতে একটুতেই ঘুম ভেঙে যায়।
পরশ শুধু পেটেই না।

রিদির সারা শরীরে নিজের শরীর টা আষ্টেপিষ্টে রেখছে।
রিদির ইদানিং একটা সুযোগ হয়েছে পরশকে যতই রাগ দেখাক বা ঝাড়ি দিক না কেনো পরশ কিছুই বলে না।
উল্টো আরও বেশী আদর করে।
রিদি পরশের হাত টা পেটের উপর থেকে সরিয়ে পরশের হাতে বেশ কয়েকটা ঘুষি দিলো।
জেগে উঠে পরশ।
“উমমম….কি হয়েছে??”
“হম্বুলের মতো হাত টা আমার পেটে চেপে ধরেছেন কেনো আপনি??আমার ঘুম ভেঙে গেছে……”
পরশ মুঁচকি হেঁসে রিদিকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“সরি বাবু….আর হবে না…..”
“মনে থাকে যেনো???”
“ওকে……”
রিদির কপালে একটা চুমু দিয়ে পরশ বলল,
“ঘুমিয়ে পড় এবার।সত্যি বলছি আর হবে না…..”
“হুমমমম……”

পর দিন সকালে সাদাদ নৌশিনকে নিজে ফ্রেস করিয়ে দিয়েছে।
কাল রাতে সাদাদকে এতো কাছে পেয়ে নৌশিন খুব খুঁশি।
হাব-ভাব অনেকটাই চেন্স মেয়েটার।
সাদাদ নৌশিনের ফুড়ফুড়া মেজাজ দেখে নিজেও বেশ কমফরটেবল ফিল করছে।
নৌশিনকে সকালের খাবার+ঔষধ দিয়ে সাদাদ একটা দরকারী কাজে বাইরে চলে যায়।
যাওয়ার সময় নৌশিন বার বার করে বলে দেয়,
“আমার জন্য যেনো একটু তেঁতুল আনা হয়।আমার খুব খেতে ইচ্ছা করছে।একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না।প্লিক এনো,না হলে মন খারাপ হবে আমার…..”
সাদাদ প্রথমে না বললেও পরে নৌশিনের পীড়াপীরিতে বলতে বাধ্য হয়েছে,
“আচ্ছা,দেখা যাবে……”

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলল।সাদাদ এখনো বাসায় আসে নি।
আজ নৌশিন খুব করে মিস করছে সাদাদকে।
সাদাদ তো খুব হলে দুই-তিন ঘন্টা বাইরে থাকে।কিন্তু আজ বেশী সময় পাড় করছে।
নৌশিনের একটু ভালো লাগছে না।
সাদাদকে এরমধ্যে অনেকবার ফোন করে কথাও বলছে নৌশিন।
সাদাদ অফিসের জরুরী কাজে আটকে পড়ছে।
তাই আসতে পারছে না।
নৌশিন রিমোট হাতে টিভির চ্যানেল পাল্টাছে।
টিভি তে কি সব হচ্ছে!!

নৌশিনের কিছুই ভালো লাগছে না।
হঠাৎ নৌশিন অনুভব করলো তার কমড়ের পাশে চিনচিন ব্যথা করছে।টিভি বন্ধ করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে ব্যথা হচ্ছে,স্বাভাবিক ভেবে নৌশিন কাউকে ডাকে নি এতক্ষণ।
কিন্তু এবার অনেকটাই খারাপ লাগছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
উঠার শক্তি পাচ্ছে না শরীরে।
খুব অসহায় লাগছে।
ফোন টা হাতে নিয়েও সাদাদও ফোন করলো না।
কল করলো ওর মায়ের কাছে।
ওপাশ থেকে ওর মা কিছু বলার আগেই নৌশিন এপাশ থেকে বলে উঠলো,
“আম্মু,আমার ব্যথা করছে……”

মেয়ের কথা শোনে মায়ের বুকটা ধুক করে উঠলো।
উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলেন,
“ও মা,সেকি!!কখন থেকে??”
কান্না জড়িত কন্ঠেঠে নৌশিন জবাব দিলো,
“ঘন্টা খানেক…..”
“হায় আল্লাহ!!সাদাদ কে বলিস নি???”
“উমহু…ও তো বাসায় নেই।”
“তোর শাশুড়ী বা রাফসা কে বলিস নি??”
“না…..”
“হাই রে পাগলী মেয়ে রে!!আমি আসতে আসতে এক ঘন্টা লাগবে….এই গাড়িতে উঠতেছি।তোর শাশুড়ীকে বল।তা না হলে রাফসা কে।
বল মা।আমি ফোন দিলে বলবে,’তুই ওদের না জানিয়ে আগে আমাকে ফোন করেছিস’…আগে তো ওরা জানবে মা।তারপর আমি জানবো………”

“তুমি আসো।আমার খুব পেইন হচ্ছে…..”
“আচ্ছা তুই যেভাবে আছিস ওভাবেই থাক মা।কোনো রকম ভয় পাবি না কিন্তু।আমি দেখছি….আল্লাহ আল্লাহ কর,মা-আল্লাহ আল্লাহ কর…..”
নৌশিন কিছু বলার আগে ওর মা ফোন কেটে দিলো।
তারপর কিছু একটা ভেবে সাদাদকে ফোন করলো।
কারণ এখন যদি ওনার শাশুড়ীকে পোন করেন তাহলে ওরা ভাবতে পারেন তাদের ছেলের বউ এখনো তাঁদের আপন করতে পারেন নি।
মেয়ের মা তো!!তাই সব দিকে একটু বেশীই ভাবেন।
সাদাদ নৌশিনের খবর শোনা মাত্রই মিটিং ক্যান্সেল করে দেয়।
যেই মিটিং এর জন্য টানা তিন মাস যাবত কাজ করছে ও।
আর মাত্র পাঁচ মিনিট পর ফোন করলেই নৌশিনের মা সাদাদকে ফোনে পেতো না।
সাদাদ যে মিটিং এ চলে যেতো।
সাদাদ নিজের কেবিন থেকে বের হতেই ম্যানেজার সামনে এসে দাঁড়ায়।
চিন্তিত হয়ে বলেন,

“স্যার,এই মিটিং টা অনেক জরুরী….”
“তার চেয়ে জরুরী কাজ আমার আছে….”
আর কিছু বলে নি সাদাদ।
দ্রুত বেরিয়ে আসে।
এদিকে নৌশিন আর পারছে না।
ঐ মুহুর্তে রাফসা আসে সাদাদের ঘরে।নৌশিনকে রোজ ঐ সময় রাফসাই কিছু না কিছু খাইয়ে যায়।
নৌশিনের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় সে।
সব কিছু যেনো খুব দ্রুতই হচ্ছিলো।
নৌশিনের মা পৌঁছানোর আগে সাদাদ বাসায় পৌঁছে যায়।
সাদাদকে দেখা মাত্রই নৌশিনের কলিজাটা আরোও মোচড় দিয়ে উঠে।
পারবে তো ও সাদাদের মুখে হাঁসি ফুটাতে!!
নাকী,সাদাদকে একা রেখে চলে যাবে ও??
না অন্য কিছু??কোল টা খালি হয়ে যাবে না তো ওর??
ভয়ে আঁতকে উঠে নৌশিন!!!
দুচোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে।
ভয় আর তীব্র ব্যথায়।

হসপিটালে আনা হয়েছে নৌশিনকে।ওর শশুড় বাড়ির সবাই এসেছে শুধু প্রাপ্তির মা,প্রাপ্তি,অরূপ আর তুবা বাসায়।বাচ্চারাও খুব বায়না ধরেছিলো কিন্তু ওদের এনে আরও ঝামেলা হবে তাই বাসায় রেখে আসা হয়েছে।
নৌশিনের অবস্থা খুব বেশী ভালো না।ভীষণ ব্যথা হচ্ছে ওর।
বাসা থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সাদাদের হাত টা শক্ত করে ধরে রেখেছে।
সাদাদ যথাসম্ভব শান্ত করার চেষ্ঠা করছে নৌশিনকে।
নৌশিনকে কেবিনে রাখা হয়েছে-ডক্টর এসে দেখে গেছে।
বেবী হতে নাকী এখনও তিন-চার ঘন্টা।এতক্ষণ নৌশিনকে কিছু ঔষধ আর ইনজেকশন দিয়ে রেখেছেন ওনারা।
ডক্টরা বলছে নরমাল ডেলিভারী হবে না,তাই ও.টি এর ব্যবস্থা করতে।
কিন্তু নৌশিন সাদাদের দু হাত ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে।

“সাদাদ,নাআআ…….”
“শান্ত হও প্লিজ।এমন করো না…..”
“নরমালী ই হবে।করবো না অপারেশন। প্লিজ…..আমার খুব ভয় করে…..”
“কিচ্ছু হবে না।আমি আছি তো…..আল্লাহ আল্লাহ করো…..”
“ওরা তো বলেছে তিন ঘন্টা পর ও.টি তে নিবে।তুমি দেখো,তাঁর আগেই আমার ছেলে এসে যাবে……”
সাদাদ নৌশিনের কপালে চুমু দিয়ে বলল,
“কেনো পাগলামী করছিস??
নরমালী বেবী ডেলিভারী দিতে পারবি না তো তুই।খুব দুর্বল হয়ে আছিস যে……”
নৌশিন সাদাদকে খুব শক্ত করে ঝাপটে ধরে বলল,
“ভয় করে……”
আর পারলো না নৌশিন।

প্রথমত শারীরিক এত খারাপ অবস্থা আর দ্বিতীয়ত তীব্র মানসিক চাপ।দুটো মিলিয়ে মুহুর্তেই জ্ঞান হারালো নৌশিন।
সাদাদ পুরো পাগল হয়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার এসে নৌশিনকে দেখে সিধান্ত নিলো অপারেশন আরও পরে নয় এখনি করবে।
সব রেডী করা হলো শুধু ডাক্তার ভেতরে ডুকবেন।
ডাক্তার ভেতরে ডুকার আগে পথ আগলে দাঁড়ায় সাদাদ।
ডাক্তার হাত দুটো ধরে বলে,
“বেবী চাই না….শুধু নৌশিনের যেনো কিছু না হয়…..”
ডাক্তার অবাক হয়ে সাদাদকে দেখছে।হয়তো ওনি এই প্রথম কোনো বাবাকে নিজের মুখে বলতে শুনছেন এমনধরনের কথা।সাদাদ আবারও বলল,
“অবাক হওয়ার কিছু নেই।আমার নৌশিন ঠিক থাকলে এরকম বাচ্চা আরও অনেক আসবে।কিন্তু যদি নৌশিনেরই কিছু হয়ে যায়!!তাহলে বাচ্চা দিয়ে কি হবে আমার??…নৌশিন যেনো ঠিক থাকে প্লিজ ডক্টর….”
ডাক্তার কিছু বলল না।শুধু মুঁচকি হেঁসে সাদাদের কাঁধে হাত রেখে ও.টি তে প্রবেশ করলো।

ডাক্তার ভেতরে যাওয়ার পর থেকে ও.টি এর বাইরে উপস্থিত মানুষগুলো আরও অস্থির হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে সাদাদ আর নৌশিনের মা।ওদের দুজনের মুখের দিকে তাঁকানো যাচ্ছে না।
সাদাদ বারবার পাইচারী করছে।সাদ ওর পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলল,
“এভাবে পাইচারী না চুপ করে বস এখানে…..”
“ভাইয়া!!…..”
“আরে এতো কেনো ভয় পাচ্ছিস??কিচ্ছু হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে…..”
“অরূপ হওয়ার সময় কিন্তু ভাবীর কানডিশন এতো খারাপ ছিলো না…..”
“সবার তো এক রকম হয় না।রাফসা নৌশিনের চেয়ে শারীরিক ভাবে অনেক শক্ত এবং সুস্থ ছিলো…..”
“নৌশিনের কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো রে….”
“আরে ধুর,তেমন কিছু হবে না দেখিস।দেখবি তোর রাজকন্যা আর রাণী দুজনেই ঠিক থাকবে…..”
সাদাদ এতো টেনশনের মাঝেও মুঁচকি হেঁসে বলল,

“তুমি বোধহয় জানো??যে আমার রাজকন্যা আসবে!!”
“তুই তো তাই চাস…….”
“নৌশিন রাজপুত্র চায়….অরূপের মতো…..”
“আরে রাজপুত্র বা রাজকন্যা হলেই হলো….রানী যা নিয়ে আসে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ…….”
হয়তো নৌশিনের উপর আল্লাহ তা’আলার বিশেষ রহমত আছে।
তা না থাকলে মাত্র পনেরো মিনিট-ই সবার কানে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চার কান্নার স্বর ভেসে আসতো না।
সাদ বাচ্চার কান্না শোনা মাত্রই সাদাদের কাঁধে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
“কি রে!!ভাই???বাবা হয়ে গেলি তো……”
সাদাদ শুধু সাদের দিকে তাঁকালো একবার।সাদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।
কিন্তু সাদাদ এখনো খুশি না।
বরং আগের চেয়ে মুখটা ওর আরোও বেশী গম্ভীর হয়ে গেলো।
“নৌশিন!!!”

বলে চিৎকার করে উঠে সাদাদ।নৌশিনের মা সাদাদের মায়ের সাথে হাঁসিতে মেতে উঠেছে বাচ্চার কান্নার আওয়াজে সাথে সবাই খুব খুশি শুধু সাদাদ বাদে।
বাচ্চার কান্নার আওয়াজ সেও শুনতে পাচ্ছে কিন্তু সে তো এখনো জানে না তাঁর নৌশিন কেমন আছে!!!
তাই হাঁসতে পারছে না।ভেতর থেকে আনন্দগুলো সারা দিচ্ছে না।প্রথম বাবা হওয়ার অনুভুতিগুলো ধরা দিচ্ছে না এখনো।শুধু নৌশিনের জন্য।
সাদাদ ও.টি এর সামনে দৌঁড়ে যায় আর ঠিক ঐ সময়েই ডাক্তার বেরিয়ে আসেন।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে সাদাদ প্রশ্ন করেন,
“নৌশিন!!!নৌশিন কেমন আছে??”

“আমাদের অপারেশন করতে হয় নি মি.সাদাদ।আপনার ওয়াইফকে অচেতন করার ঔষধ দেওয়ার আগেই ওনার জ্ঞান আসেন আর ন্যাচারাল পেইনে-ই ওনার বেবী হয় আমরা জাস্ট হেল্প করেছি ওনাকে।আর কনগ্রেচুলেশন!!!আপনার ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে…….”
সাদাদের এবার যেনো আরোও বেশী টেনশন হচ্ছে।
নৌশিন নাকী নরমালী বেবী!!!
সাদাদ ভাবতেই পারছে না।
“নৌশিন কেমন আছে এখন???সুস্থ আছে তো ও??”
“হ্যাঁ..হ্যাঁ…ওনি পুরোপুরিভাবে বিপদমুক্ত।বেবী হওয়ার পর পরই ওনার সেন্স চলে গেছে।তবে সেটা বিপদের কিছু না-ওনি যে এতো দুর্বলতার মাঝে এই বাচ্চাটার জন্ম দিয়েছেন এটাই একরকম অলৌকিক ব্যাপার ছিলো।ওনার জ্ঞান ফিরতে ঘন্টা খানেক লাগবে।

বাসায় আজ নয় কাল নিয়ে যেতে পারেন কারণ বাচ্চার কোনো কম্পিকেটেড নেই যে আমরা হসপিটালে রাখবো।
বাচ্চা অনেক সুস্থ-সবল ওর মায়ের তুলনায়। তাই কাল ই চলে যেতে পারেন।আর হ্যাঁ মাথায় রাখবেন বাচ্চার চেয়ে
কিন্তু বাচ্চার মা বেশী দুর্বল….তাই যেনো বাচ্চার সাথে সাথে মায়ের সেবাটাও বেশী হয়……”
সাদাদের খুঁশি এবার দেখে কে???
বুকের মধ্য জমে থাকা সমস্ত আনন্দগুলো বাইরে বেরিয়ে আসছে।নার্স বাচ্চা নিয়ে বের হওয়া মাত্রই সাদাদ হাত পেতে দাঁড়ায় বাচ্চা নেওয়ার জন্য।
কিন্তু নার্স বাচ্চা দিচ্ছে না।

“আগে তো মিষ্টি খাওয়ান….তারপর এমন পরী মেয়ে কোলে নিবেন…..”
সাদাদ ওর পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে নার্সের হাতে দিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
“এটা দিয়ে মিষ্টি আনিয়ে নিন।সবাই মজা করে খান।”
নার্সের কাছ থেকে ছো মেরে বাচ্চাটা নিয়ে নিলো এবার সাদাদ।
“মা,দেখো….কি বড় বাচ্চা!!!”
সাদাদের কথায় ওর মা আর শাশুড়ী হেঁসে ভেঙে পড়ছে একদম।
“এই সাদাদ দে না একটু….কোলে নিই…..কি ফুটফটে মেয়ে হয়েছে রে তোর……একদম পরীর বাচ্চা……”
“ভাবী গো!!!নাও নাও…..আমার রানীর রাজকন্যা!!!…….”
একে একে সবাই বাচ্চা টাকে কোলে নিচ্ছে।
বাসায় ফোন করা হয়েছে।
এবার অরূপ আর তুবা কিছুতেই আর বাসায় থাকবে না।
তাই প্রাপ্তি আসছে ওদের নিয়ে।প্রাপ্তিও আর থাকে নাকি বেবী হওয়ার খবর শোনে???সে তো কোনো রকম চেন্স ছাড়াই দৌঁড়ে শুধু গাড়িতে উঠেছে।

নৌশিনের জ্ঞান ফিরেছে।
ওকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।
প্রথমে সাদাদ ছাড়া আর কাউকে ডুকতে দেয় নি।
কিন্তু পরে একে একে নৌশিনকে দেখার জন্য সবাই ডুকে গেলো বলে সাদাদ আর আলাদা করে নৌশিনের সাথে কথায় বলতে পারে নি।
সবাই নৌশিনকে দেখছে।
ওর মা আর শাশুড়ী বেশীক্ষণ সময় নিয়েই মেয়েকে ঘিরে থাকালো।নৌশিনের বাবাও মেয়েকে দেখে বেরিয়ে যান,নাতনী দেখার জন্য।
নৌশিন সাদাদের দিকে ক্লান্তিভরা নজরে তাঁকিয়ে জানতে চাইলো,
“বাবু কই???”

“বাবু!!!আছে…..একদম রাজকন্যা…..”
“রাজপুত্র ই হতো।শুধু তোমার দোয়ায় রাজকন্যা এলো…..”
“আরে আনুক ওকে।দেখো তুমি।তুমি তোমার রাজপুত্রের আশা ছেড়ে দিবে তাঁকে দেখলে…….”
“কোথায়??আনতে বলো….দেখবো তো…..”
নৌশিনের উতকন্ঠা দেখে ওর মা বলল,
“দাঁড়া মা।আনবে আনবে…..”
নার্স এসে বেবীকে নৌশিনের পাশে শুইয়ে দিয়ে গেলো।
নৌশিন হা করে বাচ্চাটার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
ওর শাশুড়ী প্রশ্ন করলো,
“কি হলো???বেবী কেমন??”
নৌশিন হাবার মতো অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“এটা কার বাচ্চা???”
সাদাদ ধমকের সুরে বলল,
“মানে????”

“এতো বড় বাচ্চা!!!!আমার???”
নার্স সহ বাকীরাও নৌশিনের কথায় শুনে হাঁসছে।
নৌশিনের তাতে নজর নেই।
ওর পুরো নজর ওর বাচ্চার দিকে।
“শোনো মেয়ের কথা!!!নিজের বাচ্চা। একটু বড় হয়েছে বলে এই অবস্থা!!!!”
“না আম্মু।আসলেই অনেক বড় বেবী।ওর মায়ের পেটের তুলনায় ও কিন্তু বেশ বড়!!!”
“ঐ চুপ নৌশিন।আমার রাজকন্যাকে নজর দিচ্ছো কিন্তু তুমি……”
সবাই এবার সাদাদ-নৌশিনকে আলাদা সময় দেওয়ার জন্য কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
কেবিন খালি হওয়া মাত্রই সাদাদ টুল থেকে উঠে গিয়ে নৌশিনের যে পাশে বেবী রাখা তার বিপরীত পাশে বসে নৌশিনের কপালে একটা চুমু খেলো।
এতে সাদাদের লোভ আরও একটু বেড়ে যায়।তাই সাদাদ নৌশিনের সারা মুখে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।
ঠোঁটেও বারবার চুমু দিচ্ছে।

“উমমমমম…..আর কত???”
সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে বেশ খানিকখন ঠোঁট ডুবিয়ে রেখে তারপর বলল,
“তুমি জানো না আজ আমাকে কি দিয়েছো তুমি।তোমাকে যে কি দিয়ে খুশি করবো আমি???বলো তো কি দিলে খুশি হবে???আরও কিস করবো???তাহলে….. করবো??”
সাদাদ আবার এগিয়ে আসলে হেঁসে বাঁধা দিলো নৌশিন।
“আর না….ক্লান্ত হয়ে গেছি চুমু খেয়ে খেয়ে।তুমার এই হাঁসি মুখটা দেখেই আনি খুশি সাদাদ।আমি খুব খুশি তোমার মুখে আর চিন্তার ভাঁজ নেই বলে……..”
সাদাদ নৌশিনের কপালে চুমু এঁকে বলল,
“পাগলী আমার।”

বাচ্চার পাশে এসে বসলো সাদাদ।
বেবীর কপালেও আলতো করে চুমু খেলো।হাত-পা নাড়ছে বাচ্চা টা।
আসলেই বেশ বড় হয়েছে।
এটা যে নৌশিনের বাচ্চা ভাবায় যায় না।
লোকে দেখলে বললে ঠিকিই নৌশিনের বাচ্চা তবে দুই মাসের।
কি ফুটফুটে।একদম সাদা।
এ বাচ্চা ওর ফুপুদের মতো মানে প্রাপ্তির মতো ধবধবে সাদা হবে।নিপাও তো কন সাদা না।ওর মা জেঠি এর মতো হলদেসাদা হবে না এ মেয়ে।
প্রাপ্তির গায়ের রঙের মতো ইউরোপিয়ান রঙ হবে।
আর দেখতে ঠিক নৌশিনের মুখটা। তবে হাত পা সব সাদাদের মতো লম্বা লম্বা।
“সাদাদ,ও তো অনেক সুন্দর…….”

“একদম পরী….আমাদের পরী……রাজপুত্রের আশা আছে??”
“লাগবে না।এমন জাদু আগে সামলাই…..ওকে আমার ঘরে কি করে রাখবো গো???”
“দুজনে যত্ন করে পোষবো।খুব দামী যে……”
“সাদাদ,আমি একটা কথা ভাবছি…..”
“কি???”
“মেয়ে যে এতো রূপবতী হলো।বড় হলে ওকে কি দিয়ে বেঁধে রাখবো??লোকে যে নজরেই খেয়ে ফেলবে আমাদের পরীকে……”
“আরে সেটা পরে দেখা যাবে। পরীর জন্য আগে থেকেই রাজপুত্র রেডি করে রাখবো যে ওকে লোকের নজর থেকে বাঁচাবে…….”

“পরী আমার!!!সাত রাজার ধন…….”
বলে নৌশিন বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
আর ওমনি দুষ্টু বাচ্চা টা আওওও করে চিৎকার করে উঠলো।
“খুদা লাগছে ওর খাবার দাও…..”
নৌশিন সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি হাঁসলো।
তারপর মেঁচকির চেইন টা খুলে বাচ্চাটাকে নিজের বুকের আরোও কাছে নিয়ে আসলো। শাল দুধ খাওয়াবে বলে।
এটা যেনো নৌশিনের জন্য পৃথিবীর সব চাইতে খুশির মুহুর্ত।
বাচ্চার মুখে দুধ পুরে দিতে হচ্ছে নৌশিনের।ছোট বাচ্চা যে।মুখে দুধ পড়া মাত্রই কোনো শেখানো ছাড়াই কি সুন্দর চুষা শুরু করলো বাচ্চাটা।আর পরম সুখের আবেশে নৌশিন পাশে রাখা সাদাদের হাত টা এক হাতে চেপে ধরে অন্য হাতে বাচ্চার মাথায় হাত রেখে চোখ দুটো বেঁটে ফেললো ।
সাদাদ মুঁচকি হেঁসে জানতে চাইলো,

প্রেমঘোর পর্ব ১০৫+১০৬

“কেমন লাগছে??”
“সুরসুরি লাগে……”
দুজনেই দুজনের দিকে তাঁকিয়ে তৃপ্তির হাঁসি হাঁসলো।
আর অন্য জন তৃপ্তি করে নিজের মায়ের দুধ পান করছে।অমৃতের স্বাধ নিচ্ছে।
যে স্বাধ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বাধ।
ক্ষুদা নিবারণের সর্বোত্তম উপকরণ

প্রেমঘোর পর্ব ১০৯+১১০