প্রেমঘোর পর্ব ১১৪+১১৫+১১৬+১১৭

প্রেমঘোর পর্ব ১১৪+১১৫+১১৬+১১৭
নার্গিস সুলতানা রিপা

সাদাদ-নৌশিন রাইসাকে নিয়ে সবাইকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
গাড়িত উঠে বসতে না বসতে রাইসা নৌশিনের হিজাব ধরে বলে,
“আম্মু এটা আমি পড়বো।”
“না সোনা…..”
“না আমি পড়বো…..”
সাদাদ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,
“বাবাই,ওটা তো তোমার আম্মু পড়ছে তাই না??”
রাইসা নৌশিনের কোলে বসে ছিলো।সাদাদের কথায় চোখগুলো বড় বড় করে তাঁকাল।
তারপর অভিমান করে নৌশিনের কোল থেকে নেমে দুই সিটের মাঝখানে বসে মাথা নিঁচু করে বলল,
“আমি তো বলেছি আমি পড়বো।আম্মুকে কত্ত সুন্দর লাগছে।আমি পড়লে আমাকেও লাগবে….”
সাদাদ নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি হাঁসলো।
নৌশিনও হেঁসে মেয়েকে কোলে নেওয়ার চেষ্ঠা করল কিন্তু পারল না।অনেক জেদ এই বাচ্চাটার!!!একদম সাদাদের মতো হয়েছে।

“বাবাই,স্কুলে যাচ্ছো আজকে মন খারাপ করে না।”
“না বাবাই,আমার তো মন খারাপ হয়েছে।”
“মামনি,বাসায় ফিরে এসে তোমাকে পড়িয়ে দিবো।এখন তো আমি এটা খুলতে পারবো না সোনা।তুমি তো বুঝো??”
“কেনো পারবে না আম্মু??”
“মা আমার,তুমি বড় হও তারপর রোজ রোজ বেঁধে দিবো।আর তখন তুমি বুঝবে আমি কেনো হিজাব পড়ি।আর তুমি যদি এখন হিজাব পড় তাহলে তো তোমার সুন্দর এই ঝুটি দুটো দেখা যাবে না।পঁচা লাগবে তোমায়।বুঝলে??”
“কিন্তু বাবাই যে তোমাকে আসার সময় বলল তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তাই তো আদর করল।”
সাদাদ নৌশিন তো পুরো হা।
কি বলে এই মেয়ে??
আসার সময় নৌশিন রেডি হয়ে নিচে নামে ব্রেকফাস্ট করার জন্য।তো তখন ডাইনিং এ কেউ না থাকায় সাদাদ নৌশিনের হাতটা ধরে বলেছিল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“খুব সুন্দর লাগছে।”
তারপর দুগালে হাত রেখে মুঁচকি হেঁসে বলেছিল,
“আদর করতে মন চাইছে।”
তারপর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়েছিল।
তখন তো রাইসা ছিল না।
সে যাই হোক হয়তো সাদাদ-নৌশিন মেয়কে দেখে নি কিন্তু মেয়ে তাদেরকে ঠিক দেখেছে।
নৌশিন ঝটপট মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।
জড়িয়ে ধরে আদর করছে।
“আম্মু।একদম না আমার আম্মুটাকে তো সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে।”
“হুমমমম।লাগে না তো।লাগলে তো বাবাই শুধু তোমাকে কিসি কেনো করলো??”
“এই মেয়ে।চুপ,কি সব বলো??”
“আহ্।নৌশিন!!কি হচ্ছে??বি কুল….”

সাদাদ মেয়েকে আদর করে কোলে নিয়ে সারা মুখ চুমুতে ভরিয়ে দিলো।
তারপর কাঁতুকুঁতু দিয়ে বলল,
“আমি যে সারাক্ষণ আমার বাবাইকে আদর করি,আমার বাবাই তবুও অভিমান করে!!!হুম!!!”
এবার খিলখিল করে হাঁসছে রাইসা।
সাথে সাদাদ নৌশিনও।
সাদাদ রাইসাকে নৌশিনের কোলে দিয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট করল।
রাইসা নৌশিনের দিকে ফিরে গলা জড়িয়ে বলল,
“আম্মু তুমিও কিসি করো….”
নৌশিনও তাই করল সাদাদের মতো মেয়ের সারা মুখে চুমু খেল।বিশেষ করে কপালে সব চেয়ে বেশি।
মেয়ে তো মহা খুশী।এই হাঁসিমুখ খানা দেখলে সাদাদ-নৌশিনের মনে হয় ওরা জান্নাতে আছে।মেয়ের চোখের পানি তো এরা কেউ সহ্য করতে পারে না।
এমন হাঁসিমুখ দেখে যে তারা সারা জীবন নির্বিকার চিত্তে কাঁটিয়ে দিতে পারবে।

আলিভাকে কিছুতেই খাওয়াতে পারছে না রিদি।
পরশ রেডি হচ্ছে আর মা মেয়ের কাহিনী দেখে যাচ্ছে।
“মাম্মাম এমন করে না বাবা।হা করো….খাও….”
আলিভা দু পাশে মাথা নেড়ে যাচ্ছে খাবে না সে।
রিদি জোর করায় সে দু হাতে নিজের মুখ চেপে ধরল।
এবার রেগে গেলো রিদি।
চোখ রাঙিয়ে মেয়েকে ধমক দিয়ে বলল,
“আলিভ!!!!চুপচাপ খেয়ে নাও।দিন দিন বেশী দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো।নাও খাও…..”
মায়ের চোখ রাঙানি দেখে ভয় পেয়ে যায় আলিভা।
“কি হলো??হা করো….”
এবারের ধমকে কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলো বাচ্চাটা।
পরশ রিদির পাশে বসে বলল,

“কি ব্যাপার ম্যাডাম??এতো সাহস কোথায় পান??মেয়ের পাপাইয়ের সামনে মেয়েকে বকছেন??”
রিদি রাগী চোখে পরশের দিকপ তাঁকালো শুধু।
পরশ মেয়কে কোলে তুলে বলল,
“আমার পাপাইকে বকার সাহস করবে না একদম….”
ক্ষেপে গেল রিদি,
“আহা রে….কি আদর!!!তো খাওয়ায় না তোমার মেয়েকে।রোজ রোজ এতকিছু করে খাওয়াতে হয় তোমার মেয়েকে।আমি পারবো না।”
আলিভা পাপাইকে জড়িয়ে ধরেছে ভয়ে।মায়ের রাগের সময় একদম শান্তশিষ্ট হয়ে যায় আলিভা।ভীষণ রকমের ভয় করে তখন তার মাকে।
“রিদি!!আস্তে ভয় পাচ্ছে তো….”

রিদিও দেখল মেয়ে সত্যিই ভয় পাচ্ছে।মাথাটা কিছু ঠান্ডা করে বলল,
“পরশ!!ও রোজ রোজ এমন করে।কিচ্ছু খেতে চায় না।এমন করলে অসুস্থ হয়ে যাবে……”
“আচ্ছা আমি ট্রাই করছি……”
রিদি আর কিছু বলল না।
মেয়ের খাবার টা পরশের সামনে রেখে চলে গেল।
পরশের খাবার দিতে হবে তো।
সেটাই রেডি করতে থাকে।
আর এদিকে পরশ মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে খাওয়ানোর চেষ্ঠা করে যাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর পরশ আলিভাকে নিয়ে ডাইনিং এ এল।
রিদি তাঁকিয়ে আছে বাবা-মায়ের দিকে।
“পেরেছো??খেয়েছে সে??”
অসহায় রূপে তাঁকাল পরশ।
রিদি হাফ ছাড়ল।বলল,

“পনেরো-ষোল দিন যাবত এমন করছে সে।আগে কম খেলেও টাইমলি খাওয়াতে পারতাম।বাট এখন পারি না।আমার মনে হয় ওকে ডাক্তার দেখানো উচিত।”
“তাই তো করা উচিত মনে হচ্ছে।”
“হ্যাঁ।তুমি খাওয়া শুরু করো।”
“তুমি খাবে না??”
“পরে খাবো….”
“মাইর চিনো??চুপচাপ তোমার প্লেট নাও….”
“পরশ!!মেয়ে কিচ্ছু খায় নি সকাল থেকে….”
“তো!!তুমিও খাবে না??ওকে,প্লেট নিতে হবে না তোমার।”
পরশ নিজের প্লেটে ভাত বেশী করে নিল।মাখিয়ে প্রথমে রিদির মুখের কাছে ধরে বলল,
“হুম হা করো….”

রিদি বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিল।পরশ এবার নিজের মুখে খাবার দিল।মায়ের কোলে বসে আলিভা খুব ভালো করে তার পাপাই-মাম্মামের কান্ড দেখে যাচ্ছে।
পরশ একবার নিজে তো আরেক রিদির মুখে তুলে দিচ্ছে।হঠাৎ করে আলিভা আধো আধো সুরে বলল,
“আমিও খাবো….”
রিদির মুখে খুশির ঝিলিক।পরশ হাঁসি মুখে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে খাচ্ছিল।
রিদি হাত ধরে ফেলল,
“আরে কি করছো??এই খাবার খাবে ও??ঝাল লাগবে তো।”
“ওহ্ সরি।খেয়াল ছিল না।”
“হুম।বাকী টা তুমি খেয়ে নাও।আমি ওকে খাওয়াচ্ছি।”
“ওকে।”
আলিভা এবার নির্ধিদায় মাম্মের হাতে খেয়ে নিল।
“রিদি??”
“হ্যাঁ….”

“মায়ের সাথে কথা হয়েছিল তোমার??”
“হ্যাঁ।বাতের ব্যথা বেড়েছে তাই জার্নি করে আসতে চাইছে না।”
“আমি গিয়ে নিয়ে আসবো??”
“যাবে??”
“তুমি কি বলো??”
“আলিভা তো সন্ধ্যা হলেই চিৎকার চেঁচামেচি করে ‘দাদু’ ‘দাদু’ বলে।আমারও একা ভালো লাগে না…..”
“তাহলে কাল যাবে??”
“আলিভাকে নিয়ে??”
“মানে??”
“আরে আলিভাকে নিয়ে তো দূরে কোথাও যায় নি এখনো।আর সিলেটে যা পানি চারপাশে এখন।”
“আরে বোকা কিচ্ছু হবে না।কাল সকালে বের হবো….”
“আচ্ছা যা ভালো মনে করে তুমি।”
“আলিভা কোথায়??”
“কার্টুন দেখছে।”

রিদি পরশের টাই লাগিয়ে দিল।
তারপর আবদারের সুরে বলল,
“শোন না….”
“বল…”
“বলছি যে….”
“কি ব্যাপার??এতো আনইজি??”
রিদি মনে অনেক সাহস এনে বলে ফেলল এবার,
“রাইসার বার্থ ডে ছিল দুদিন আগে।তুমি তো গিয়েছিলে।আলিভা ইল ছিল তাই যাওয়া হয়নি।আজ যদি যাই??মানে অনেক দিন ধরে তাদের সাথে দেখা হয় না আর কি!!”
পরশ তাঁকিয়ে রইল রিদির দিকে।রিদি কেমন যেনো একটু ভয় পেয়ে গেলো।
পরশ অন্য কিছু মনে করে নি তো!!!
“পরশ!!আমি আসলে……”

“যাবে??”
“না মানে…তুমি ভুল ভাবছো….”
“কিহ??”
রিদি ঝাপটে ধরল পরশকে।
আকুতির সুরে বলল,
“প্লিজ পরশ।মনে কিছু এনো না।আমি সব ভুলে গেছি পরশ।আমার সবটা জোরে শুধু তুমি এখন।আমায় ছোট করো না প্লিজ।আমি মানতে পারবো না।”
কেঁদে ফেলল রিদি।পরশ তো অবাক।তার নিশ্চুপ থাকায় রিদি যে এতকিছু ভেবে ফেলবে সে কি আর জানতো নাকি!!
“এই বোকা মেয়ে দেখি।।।হেয়??কাঁদছো কেনো??”
“তুমি তো…”
“চুপ।চোখে পানি আসলে থাপ্পর দিয়ে না শেষ করে ফেলবো একদম।তুই যে আমার এটা আমি অনেক আগে থেকেই জানি।আর আমার বউকে কি করে সম্মান দিতে হয় সেটাও আমার জানা।এতটা চিপ মাইন্ডের না তোর বরটা।আজও বুঝিস না??”

“ভয় করছিল আমার।আমি ভেবেছি তুমি সাদাদকে মিন করছো…”
“এবার কিন্তু সত্যিই থাপ্পার খাবা রিদি।বেশি বেশি না??
কে সাদাদ??একসময় সে তোমার মাথায় ছিল কিন্তু মনে কোনো দিন ছিল।বাট তোমার মন মাথা সবটা এখন আমার সেটা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না…..”
রিদি জড়িয়ে ধরল পরশকে,
“আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ সো মাচ……”
পরশ শক্ত করে আকড়ে নিল রিদিকে।জবাবে বলল,
“আলিভার মাম্মাকেও তো আমি অনেক ভালোবাসি।”
“আচ্ছা হয়েছে এবার যাও।দেরী হয়ে যাচ্ছে……”
“আগে তো একটু…..”
“এই না প্লিজ….”
“হুসসসস…..”
“না….উমমমম……….”
পরশ পাঁচ মিনিটে নিজের কাজ টা করে ফেলল।
রোজ অফিসে যাওয়ার আগে রিদির ঠোঁটের পরশ না পেলে হয় না তার।
আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।

পরশ অফিসে চলে যাওয়ার পর রিদি হাতের কাজ সব গুছিয়ে নিলো।
আলিভা এর মধ্যে ঘুমিয়ে গেছে।
রোজ খুব সকাল বেলা উঠে রিদিকে জ্বালানো একটা অভ্যাস এই বাচ্চাটার।
তারপর আবার সেই আট টা বা নয়টায় ঘুমিয়ে যায়।
আজও তাই হয়েছে।বরং এতে রিদির ভালোই হয়।সকালের কাজগুলো ইজিলি করে নিতে পারে।
সাওয়ার সেরে এসে মেয়েকে ঘুম থেকে উঠায় রিদি।
ঘুমু ঘুম বাচ্চা আলিভা মায়ের কোলেও হেলেদোলে শুয়ে আছে।
রিদি মেয়েকে একটু আদর করে ঘুম কাটানোর জন্য বললো,
“মাম্মি….আমরা রাইসা আপুদের বাসায় যাবো।এই মাম্মি,তুমি যাবে না??মাম্মি??”
আলিভা বুঝার চেষ্ঠা করলো মা কি বলছে।
তাই জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো।

রিদি হেঁসে বললো,
“রাইসা….যাবে না রাইসা আপুর কাছে??”
আলিভা কি বুঝলো কে জানে!
তবে হেঁসে মুহুর্তেই হেঁসে ফেললো।
রাইসার ছবি দেখতে আলিভা খুব ভালোবাসে।
রিদি অবশ্য প্রায় সময়ই ঐ বাড়ির সবার ছবি দেখায় মেয়েকে।
তাই আলিভারও এক রকম সুপ্ত ভালোলাগা হয়তো সৃষ্টি হয়েছে তাদের প্রতি।
আলিভা পানি পাগল একটা মেয়ে।
ওকে চোখে মুখে পানি দেওয়ানোর জন্য ওয়াশরোমে নিয়ে গেলে রিদি খুব সাবধান থাকে।
কখন আবার বাথ টবে উঠে বসে থাকে!
আজও তাই হলো।

তবে রিদি শুধু টাওয়াল নামানোর সময়টুকুতেই আলিভা বেশ খানিক পানি ছিটিয়ে ভিজে গেলো
রিদি আজ আর কিছু বললো না।
সরাসরি গোসল-ই করিয়ে দিলো।
মেয়েও এতে বেশ খুশি।
রিদি মেয়েকে রেডি করিয়ে খেলনা সামনে বসিয়ে রাখলো।
তারপর পরশকে ফোন করে।
“হ্যালো….”
“হ্যাঁ…বলো।চলে গেছো?”

“না বের হয় নি এখনো।কাজ ছিলো।বাবু আবার ঘুমিয়েছিলো।”
“কখন বের হবে??দশটার বেশী বাজে।থাকা যাবে না কিন্তু….”
“তা তো জানিই।কিন্তু তুমি কখন যাবে??”
“আমি অফিস শেষ করে ড্রপ করে নিবো তোমাদের।”
“রাত করবে না কিন্তু আসতে।বিকালের মাঝেই চলে আসবে।তারপর আলিভাকে ডক্টর দেখিয়ে ফিরবো।”
“আজকে ডক্টর??”
“হ্যাঁ রাফসা ভাবীকে বলে রেখেছি।ভাবী তার কোনো এক ফ্রন্ড নাকী চাইল্ড স্পেশালিষ্ট তার সাথে কথা বলে বিকালে দেখানোর ব্যবস্থা করে দিবে।”
“ওহ্!আচ্ছা তাহলে আমি পাঁচটার মধ্যে সাদাদের বাসায় থাকার চেষ্ঠা করবো।”
“লান্স বাইড়ে করবে??”

“হ্যাঁ করে নিবো।সাবধানে যাও তুমি।”
“আচ্ছা রাখছি।”
“রিদি শোনো….”
“হুম।বলো??”
“একটা পিক দিও শাড়ি পড়ে।”
রিদি মুঁচকি হেঁসে বললো,
“ধুর।কাজ করো।”
“ওয়েট করবো কিন্তু।আর শোনো চুল বাঁধার আগে পিক দিও আমাকে।”
“পারবো না….”
“তাহলে কিন্তু….”
“আচ্ছা আচ্ছা দিবো।রাখছি লেট হচ্ছে…..”

রাইসাকে নিয়ে স্কুলের সমস্ত কাজ শেষ করে সাদাদ-নৌশিন বের হয়ে আসলো।
রাইসার নাকি স্কুল টা খুব ভালো লেগেছে।
বার বার সে তার আম্মু আর বাবাইকে এই কথাটাই বলছে।
নৌশিন রাইসাকে নিয়ে এগিয়ে গেলো।
সাদাদ গাড়ি পার্ক করে নিয়ে আসছে।
নতুন যারা এসেছে তারাও সবাই এক এক করে বেরিয়ে যাচ্ছে।
নৌশিন কোনো বাচ্চার মায়ের সাথে কথাও বলছে।
সাদাদ গাড়ি নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ায়।
দরজা খোলে গাড়িতে উঠতে বললো তাদের।
নৌশিন রাইসার হাত ধরে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় রাইসা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো।
নৌশিন রাইসার দিকে সে বললো,

“আমি গাড়িতে যাবো না।”
“কি বলো??”
“গাড়িতে যাবো না।”
“কেনো আম্মু??”
হাতের ইশারায় কিছু একটা দেখিয়ে বললো,
“আমি পরকম করে যাবো আম্মু।”
রাইসা দিকল ইশারা করেছে নৌশিন সেদিকে তাঁকিয়ে দেখলো রাইসার বয়সী একটা মেয়ে বাইকে বসে স্কুল থেকে বের হচ্ছে।সামনে তার বাবা মাঝখানে মেয়ে আর পেছনে তার মা।
নৌশিন মুঁচকি হাঁসলো।
আসলেই দৃশ্যটা খুব সুন্দর।
তবে এখন কি করে ওভাবে যাবে ওরা!
তাই নিঁচু হয়ে মেয়েকে বললো,

“আম্মু কাল তো স্কুলে আসবো আমরা।কাল তুমি আমি আর তোমার বাবাই মিলে ঐরকম করে যাবো।”
“না আম্মু আমি আজকেই যাবো।চলো না চলো না।”
নৌশিন মেয়েকে বুঝাচ্ছে।
কিন্তু এই মেয়ে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।বাইরে তো আর ধমকও দেওয়া যাবে না।
সাদাদ এতক্ষণে নেমে আসলো।
“কি হলো তোমাদের??বাসায় যাবে না নাকি??”
“দেখো তোমার মেয়ে কি বলে??”
“কি বলে আমার বাবাই??”
রাইসা নৌশিনের হাত ছেড়ে সাদাদের কাছে চলে গেলো,

“বাবাই,আমি গাড়িতে করে যাবো না।”
“তাহলে কি ভাবে যাবে আমার বাবাই?প্লেনে করে??”
“না বাবাই।আম্মু জানে আমি আম্মুকে দেখিয়েছি।”
সাদাদ মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে নৌশিনের দিকে তাঁকালো।
নৌশিন অসহায় ভঙ্গিতে বললো,
“বাইকে করে যাবেন ওনি….”
সাদাদ হাঁসলো।
মেয়ের গালে চুমু খেয়ে বললো,
“কালকে আসবো আমরা বাইকে করে।”
রাইসার উত্তর পাল্টালো না।
সে বললো,
“আজকে যাবো…”

নৌশিন রাগী চোখে তাঁকালো এবার।রাইসা সাদাদের কাঁধে মুখ লুকালো যেনো তার মা ভয় না দেখাতে পারে!
সাদাদ নৌশিনকে আশস্ত করে বললো,
“আচ্ছা দেখছি।”
তারপর কাউকে ফোন করে বাইকের কথা বললো।
নৌশিন জানতে চাইলো,
“কাকে বললে??”
“রফিক(স্টাফ)কে বললাম।ও বাইকেই আসা যাওয়া করে।ওর বাইক টা দিয়ে যাবে।”
“গাড়ি??”
“ও ই নিয়ে অফিস যাবে।”
“আল্লাহ্!!এই মেয়ের জন্য কত কি!এতক্ষণ এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো??গাড়িতে গিয়ে বসি।”
“হ্যাঁ চলো।”

রাইসা বলে উঠলো,
“বাবাই আইসক্রিম খাবো….”
নৌশিন গাড়িতে উঠেই পরেছিলো রাইসার কথা শোনে থামলো,
“না আম্মু।তাহলে কিন্তু গাড়ি করে নিয়ে যাবো।”
“একটু খাবো আম্মু্…..”
“সোনা মনি জ্বর হলে কিন্তু স্কুলে আসতে পারবে না।”
রাইসা চুপ করে রইলো কিছু বললো না।
সাদাদ নৌশিনকে বললো,
“নৌশিন!বাবাইয়ের তো চকলেট আছে।সকালে না ওর ভাইয়া গিফ্ট করলো।”
নৌশিন মেয়ে খুশি করতে দু হাতে দুটো চকলেট ধরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
কিছুক্ষণ পর সাদাদের স্টাফ বাইক নিয়ে হাজির।
সাদাদের মুখে রাইসার কাহিনী শোনে হাঁসলো।

রাইসা যে কারও কোলে যায়।
নৌশিন তাঁকে শিখিয়েছে এটা।
তবে সেটা পরিচিত মুখ হলে তবেই বা অপরিচিত কিন্তু বাসার কেউ বললে।
তাই রফিকেরও কোলেও গেলো সে।
কেউ কিছু তাঁকে বলে নি।
সে নিজে থেকেই রফিককে বললো,
“থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কেল।”
রফিক একটু অবাক হলো।
বললো,
“কেনো বলো তো মামনি??”

“আমাদেরকে যে তুমি তোমাদের গাড়িটা দিয়েছো সেজন্য।না হলে তো আমি কখনো এটাতে উঠতেই পারতাম না।”
“হা হা হা।এটা বাইক মা।মোটরসাইকেলও বলতে পারো।”
“ওও…তুমি আমাদের গাড়ি টা নিয়ে যাও হ্যাঁ??বাবাই আমাকে বাসায় দিয়ে আসুক পরে বাবাইয়ের টা দিয়ে দিও।বাবা অফিসে যাবে যে।তোমার টা আমি রেখে দিবো।কাল স্কুলে আসবো।দিবে???”
“আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু তোমাকে যদি আমি আমার গাড়িটা দিই আমি কি করে অফিসে আসবো বলো।তারপর তো তোমার বাবাই আমাকে চাকরি নট করে দিবে মা….”
“তাহলে তুমি বাবাইয়ের গাড়ি টা রেখে দিও।বাবাই অন্য গাড়ি কর যাবে।হ্যাঁ??”
“হা হা হা।পাকনী বুড়ি একটা….”

“হি হি হি…..”
সাদাদ ওদের কান্ড দেখে বললো,
“রফিক ভাই দে ওকে।সারা দিনেও ওর কথা শেষ হবে না।”
“জ্বি স্যার সরি ভাই……।”
“হআচ্ছা তাহলে গাড়িটা নিয়ে যা।আর আমি ওদের নামিয়ে দিয়ে আসি।”

রিদিকে বাসায় দেখে সবাই বেশ খুশি।
রাইসা বাসায় এসে প্রথমে এদের চিনতে পারে নি।তাই নৌশিনের দিকে হা করে তাঁকিয়ে আছে।
রাইসাকে কোলে নিয়ে নৌশিন রিদিকে দেখিয়ে বললো,
“মামনি,ইনি তোমার রিদি আন্টি।আর এই বাবু টা তোমার ছোট্ট বোন,আলিভা।”
“ওওওওও……”
“হুম পাকনী।আমি আন্টি তোমার।আসো আমার কোলে আসো।”
রাইসা মায়ের দিকে তাঁকালো।
নৌশিন মুঁচকি হেঁসে বললো,
“যাও…..”

রিদি আলিভাকে সোফায় বসিয়ে রাইসাকে কোলে তুলে নিলো।
রাইসা রিদির কোলে উঠে আলিভার দিকে তাঁকিয়ে বললো,
“ও কি হয় তোমার??”
“ও!ও তো আমার মেয়ে।তুমি যেমন তোমার আম্মুর মেয়ে।”
“ওওওওও……।ওর নাম টা সুন্দর।”
“তাই!!!”
“হ্যাঁ।ও চকলেট খায়??”
“খায় তো।একটু একটু….”
“আমাকে ছেড়ে দাও।আমি ওর সাথে খেলবো।”

রাইসা কোল থেকে নেমে গেলো।
আলিভার পাশে বসায় আলিভা রাইসাকে দেখে খিলখিল করে হেঁসে দিলো।
রাইসা হেঁসে আলিভার গাল ধরে টানছে।
এতে আলিভার হাঁসি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
দুজনের কান্ড দেখে সাদাদ-নৌশিন,রিদি না হেঁসে পারছে না।

রাইসা আলিভার সাথে খেলছে।
অন্য সোফায় নৌশিন-রিদি আর আরেকটাতে সাদাদ।
সাদাদ সহাস্যে রিদিকে বললো,
“তারপর রিদি বলো,কেমন আছো??”
“আলহামদুলিল্লাহ।তুমি??”
সাদাদ রাইসার দিকে চোখ ফিরিয়ে আবার নৌশিনের দিকে তাঁকালো,
“এই তো এদের নিয়ে ভালোই আছি।”
“নতুন ব্যবসা!নৌশিন বলেছিলো….”
“হ্যাঁ।এটার ইচ্ছাই ছিলো।”

“দোয়া করি আরো ভালো কাটুক সবকিছু…”
“পরশ এলো না??”
নৌশিনও সাদাদের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
“হ্যাঁ,পরশ ভাইয়া কোথায়??আমি তো ওনার কথা ভুলেই গেছিলাম….”
রিদি মুঁচকি হাঁসলো,
“পরশ বিকালে আসবে।অফিসে আছে।”
“ও আচ্ছা।”
তারপর নৌশিন-রিদি টুকটাক সাংসারিক আলাপ করতে বসে গেলো।
সাদাদ কিছুক্ষণপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“তাহলে থাকো তোমরা।আমার একটু জরুরি কাজ আছে।আশা করি লান্স টাইমে আবার দেখা হবে।”
সাদাদ চলে গেলে নৌশিন রিদিকে নিয়ে গল্প জোড়ে দেয়।
এতদিন কি হয়েছে ন। হয়েছে।
রাইসা-আলিভা এদের অবস্থা নিয়েও দুজনে নানা রকম গল্প করছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে নৌশিনের মুখে সাদাদকে নিয়ে কথাবার্তার পরও রিদির একফোটাও খারাপ লাগছে না।
বরং রিদিও নৌশিনকে এতটাই আপন ভেবেছে যে সে নৌশিনের কাছে পরশকে নিয়েও নানা রকমের গল্প করছে মন খোলে।

রাফসা হসপিটাল থেকে আসার সময় অরূপকে স্কুল থেকে ড্রপ করে নিয়েছে।
অরূপ আলিভাকে দেখে মহাখুশি।তিনজনে মিলে খেলছে।
এদিকে প্রাপ্তির আম্মু-জেঠি মনি রান্না শুরু করে দিয়েছে।
কতদিন পর বাড়ির মেয়ে এসেছে।তাদের প্রত্যেকের কাছে রিদি এ বাড়ির মেয়েই।
“রিদি,তুমি ডাক্তারের কথা বলেছিলে বাবুর জন্য
আসবে সেটা বললে না তো??”(রাফসা)
“ভাবী সারপ্রাইজ দিলাম….”
“আচ্ছা আচ্ছা ভালো করেছো।তবে এতো দিন পর এলে….”
“ভাবী!!বাসায় আব্বু-মা কেউ নেই।ওরা সিলেটে।আর আলিভা ওকে আমার একাই সামলাতে হয়।তাই…..”
“একদম সাংসারিক হয়ে উঠেছে রে পাগলী টা……”
“কি যে বলো না ভাবী!!”

“আচ্ছা আচ্ছা।তোরা দুজন মিলে গল্প কর।আমি আসছি।”
রাফসা রান্না ঘরে চলে গেলে-নৌশিন রিদিকে নিয়ে তার রোমে চলে গেলো।
রিদি রোমে বসে দেখলো সাদাদ-নৌশিনের রোমের অনেক পরিবর্তন এসেছে।
রিদি হেঁসে বললো,
“নৌশিন,রোমের সব সাজ চেন্স করে ফেলেছো।”
“রাইসার জন্যই বেশীর ভাগ করা হয়েছে।বড় হচ্ছে না!!আর ওর যা বায়না।”
“হি হি হি।বাচ্চা তো।”
“আরে আজকে কি করেছো জানো।বাইক দেখে গাড়ি করে বাড়ি আসবেই না।কোনো ভাবেই এলো না।শেষ মেষে সাদাদ কার একটা বাইক নিয়ে এসে তারপর স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে এলো।”
“আল্লাহ্!!কি বলো!!মেয়ে তো পুরো বাবার মতো….”
“তা আর বলতে……”

“আর আমার মেয়ে যে কি গো নৌশিন!!খেতে চায় না একদম।আর ভীষণ পানি পাগল।কোনো কোনো দিন দু বারও গোসল করে ফেলে।আমি একবার করিয়ে রাখি সপ আবার চালাকি করে অন্য কারো সাথে করে নেয়…..”
নৌশিন হাঁসলো।এরকম আরো অনেক কথা চললো তাদের।
তারপর হঠাৎ কিছু একটা ভেবে রিদি নৌশিনের হাতটুকু ধরে ফেললো।
তারপর মায়াভরা চোখে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে বললো,
“জানো নৌশিন আজ তোমার জন্যই তুমি আমি এতো সুখী।হ্যাঁ আল্লাহর রহমত আছে।
সেটা ছাড়া কোনো ভাবেই সম্ভব হতো না।তবে তুমি যে ভাবে সবকিছু সামাল দিয়েছো তাতে যেনো আমার তোমার সাথে সাদাদ-পরশের জীবনটাও মধুময় যাচ্ছে।”

নৌশিন অবাক হলো।
রিদি কি বলছে এসব।
নৌশিন কিছু বলতে চাইলো তবে পারলো না।
রিদি আবারও বললো,
“দেখো না আমি কতটা পাগলামী করেছি!!তোমার আর সাদাদকে আলাদা করে সাদাদকে আলাদা করার জন্য কত নিচুঁ খেলায়ও মেতেছি।আর শেষ বারের ঘটনা টা মনে আছে তোমার??”
নৌশিন অপলক দৃষ্টিতে রিদির দিকে তাঁকিয়ে আছে।
রিদির চোখ দুটো ছলছল করছে।এটা কোনো আনন্দের বা কৃতঙ্গাগার যা নৌশিনেরও মনে দাগ ফেলে দিচ্ছে।
রিদি নৌশিনের বিছানায় হাত রেখে বললো,

“এই যে এই বেডেই তুমি সাদাদ আর আমাকে একসাথে দেখেছিলে।তুমি চাইলেও সাদাদকে ছেড়ে দিতে পারতে।ভাবতেই পারতে সাদাদ আমার সাথে……”
রিদি আর কিছু বলার আগেই নৌশিন বললো,
“থাক না আপু।আমরা তো….”
“না নৌশিন।একটু বলতে দাও।আমার মন টা হালকা হোক।”
নৌশিন আর কিছু বললো না।
রিদি বললো,

“যদিও আমি সেদিন খারাপ কোনো ইনটেনশনে আসি নি।তবুও কিন্তুতু খারাপ ছিলো ঘটনা টা।তুমি চাইলেও সাদাদকে অবিশ্বাস করতে পারতে।তোমার ভাইয়ার সাথে মিলে সাদাদ আর আমাকে শাস্তিও দিতে পারতে।সে ঘটনার জন্য তোমার আর তোমার বেবীর জীবনও ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছিলো।অথচ তুমি??
যে কিনা নিজের ভালোবাসার প্রতি অঢেল বিশ্বাস রেখে চোখের দেখাটুকুকে অবিশ্বাস করলে।আর যার ফলস্বরূপ তোমার আর সাদাদের ভালোবাসা টা টিকে গেলো সেদিন।আর শুধু টিকে কেনো!!সাদাদের মনে তো তোমার প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি সম্মান টাও বহুগুন বড়ে গিয়েছিলো সেদিন।”
অনেক কিছু শোনার পর এবার নৌশিনেরও ইচ্ছা হলো কিছু বলার।সে বললোও,
“আপু।ভালো তো অনেকেই বাসে।সংসার শুরু করে।এই যে আজকাল কত রিলেশনের বিয়ে হচ্ছে দেখো তাদের মধ্যেই বিচ্ছেদ টা বেশি হচ্ছে।

কেনো জানো?বিশ্বাস।তাদের মধ্যে পরষ্পরের বিশ্বাস কাজ করে না।দুজন মানুষ যারা কিনা পৃথিবীর সব চেয়ে আপন তারা যদি এক জন অপরজনকে বিশ্বাস না করে,শ্রদ্ধা না করে তাহলে তাদের সম্পর্ক কি করে টিকে থাকবে??আপু,এক খুটিতে শুধু খড়ের পালা টিকে থাকে সংসার নয়।সংসার হচ্ছে ছাতার মতো যার মূল ভিত্তি ভালোবাসা।আর ছোট ছোট স্টিলগুলো সেই ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার মতোই…তাদের পারষ্পরিক বিশ্বাস,সম্মান,শারীরিক চাহিদা,যত্ন,সময় দেওয়া এমনি অর্থও এক্ষেত্রে বহুমূল্যবান।কোনটা ছাড়াই টিকে থাকা যায় না।আর তুমি আমার কথা শুধু কেনো বলছো।পরশ ভাইয়া??”

পরশের কথা উঠতেই রিদি নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।তারপর চোখ মুছে বললো,
“সত্যি।ওর মতো মানুষ!!আসলেই আমি অনেক ভাগ্যবতী।লোকে অনেক সময় বলে না যারা বেশী রাগী তারা অনেক ভালো মনের মানুষ!পরশকে না দেখলে সেটা বিশ্বাসই করতাম না আমি।জানো পরশ এখনোও রাগে।রেগে গিয়ে আমাকে খুব বকেও।আমি বকি তবে বলতে নেই তবুও বলি জানো রিদি সে রাগ হলেও আমাকে ঠিকই সকালে লিপ করে অফিস যায়।কি করে যেনো আমার সবটা জোরে তার-ই অস্তিত্ব।আর সেও যে আমাকে এভাবে মেনে নিবে তা ভাবি নি সেদিন।ভেবেছিলাম বিয়ের পর হলেও আমাকে সব সময় ঘৃণা করে যাবে। কিন্তু না সে তা করে নি।বরং আমাকে এতোটাই ভালোবেসেছে যে আমি আমার এই মাথা থেকে সব কু চিন্তা দূর করতে পেরেছি।”

“সম্পর্ক তো তাই আপু।সম্পর্ক কি শুধুই সংসার??সংসারে যদি সুখ-ই না থাকে ভালোবাসা না থাকে তাহলে তো সেটা সংসারের মতো দেখতে একটা ভিত্তি মাত্র কিন্তু প্রকৃত সংসার নয়।”
“দোয়া করো নৌশিন।যেনো সারা টা জীবন পরশের সাথে এমন ভাবেই কেটে যায় আমার।”
“অবশ্যই আপু।আরো ভালো কাটুক তোমাদের সময়।”
“তোমারও নৌশিন।”
তারপর রিদি চোখ মুখ মুছে হঠাৎ কি ভেবে হাঁসলো।
তারপর নৌশিনকে টিম্পানি দিয়ে বললো,
“তা সে দিন যে আপনার মনের একটা তীব্র আশা বলেন!তার কি হলো??আপনার বর বুঝি এখনো রাজি হয় নি??”
নৌশিন যেনো খানিক লজ্জা পেলো।তবুও মুখে হাঁসি বজায় রেখে বললো,

“হয় না রাজি।”
“আহা রে।বেচারী….”
নৌশিন হঠাৎ উচ্ছ্বাসের সাথে বললো,
“তবে দেখো আপু আমি ওকে রাজি করবোই।তুমিই বলো একটা ছেলে হলে কত ভালো হতো।একদম পরিপূর্ণ সংসার হয়ে যেতো আমার।এক মেয়ে-এক ছেলে।অথচ সে রাজিই হয় না।”
“আরে সে তো তোমার জন্যই।মনে নেই রাইসার সময়….”
হঠাৎ রিদির মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেলো।সে বললো,
“যদিও সেটা আমার জন্যই…।”

“না আপু!!একদম না।সেটা তো আমার কপাল।আর দেখো কত কষ্টের পরও আমি আর রাইসা কত ভালো ভাবে ব্যাক করেছি এটাই আসল কথা।আর শোনো তখন যদি আমার ওজন কম না থাকতো আর আমি ঠিকমতো খেতাম তাহলেই হতো।দোষ তো আমারও ছিলো।ছোট বেলা থেকে খাওয়া ফাঁকি দিলে যা হয় আরকি!!”
“হি হি হি।এখন তো আর পারো না….”
“কি করে পারবো।তোমার সাদাদ ভাইজান তো জোর করে মুখে পুরে দেয় না খেলে।”

পরশকে ফোন করে আগে ভাগেই আনা হয়েছে।
সে এসে লান্স করেছে সবার সাথে।অনেকদিন পর সবাই একসাথে হলে যেরকম আনন্দ হয় আর কি!!!
বিকালের দিকে রিদি-পরশকে জোর করলেও ওরা রইলো না।একে তো ওরা কাল সিলেট যাচ্ছে আর দ্বিতীয়ত মেয়েকে ডাক্তার দেখাবে।
সাদাদ কাজ শেষ করে চলে এসেছে একদম।আর অফিসে যায় নি।সারা বিকাল রাইসা আর অরূপকে নিয়ে পাশের পার্কে ঘুরে এসেছে।
বাসায় আসা মাত্রই নৌশিন বাবা-মেয়ের উপর খেপে গেছে।কারণ তারা আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে।

অথচ নৌশিনের খুব চিন্তা লাগায় সে ফোন করেছিলো কিন্তু সাদাদ ফোন তুলে নি।
একজন সার্ভেন্টকে পাঠাতে চাইছিলো রাফসা সে সময় তারা বাড়ি ফিরে এসেছে।
রাফসা তো এক চোট বকা দিলোই সব কটাকে।
আর তারপর তাদের দুজনকে রোমে নিয়ে ধরেছে নৌশিন।
নৌশিন তো আর এতো রাগতে পারে না সহজেই।
তবে মেয়েকে দেখেই সে বুঝে গেছে এরা সবাই পার্কের পাশে আইসক্রিম পার্লারে বসে আইসক্রিম খেয়েছে ইচ্ছামতো।
রাইসাকে বিছানায় দাঁড় করিয়ে নৌশিন তার জামায় লেগে থাকা একটুখানি আইসক্রিম দেখিয়ে বললো,

“এটা কি রাইসা??”
রাইসা দেখলো তার জামায় কি!!তবে যখন বুঝলো ভয়ে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
সাদাদ রোমে এসেছে তখন।
তাই বাবাকে দেখা মাত্রই সে ঠাস করে বলে ফেললো,
“আম্মু,বাবাই বললো আইসক্রিম ভালো।তাই আমি আর ভাইয়া খেয়েছি।”
নৌশিন এবার একটু ধমকে উঠলো,

“রাইসা!!তুমি মিথ্যা কেনো বলছো??তোমার বাবাই তোমাকে বলতেই পারে না যে আইসক্রিম ভালো।এমন হতে পারে তোমরা আইসক্রিম চেয়েছো তবে তোমার বাবাই কিছু বলে নি।তার মানে এই না যে বাবাই নিজে থেকে…..”
এই কঠিন কথাগুলো রাইসা বুঝে না।এইটুকু তো বয়স।
তবে সে বুঝেছে তার আম্মু তার উপর রেগে গিয়েছে।
তাই সে তার বরাবরের পদ্ধতিই কাজে লাগালো।
ঝাপটে ধরলো নৌশিনকে।
আর নৌশিনের ঠিক এই মুহুর্তটা যে কি হয়!!!
আর একটি শব্দও মেয়েকে বকা দেওয়ার জন্য বব্যহার করতে পারে না সে।
রাইসা নৌশিনকে জড়িয়ে ধরেই বললো,

“আর হবে না আম্মু…”
নৌশিন মুঁচকি হাঁসলো।
তারপর মেয়ের মুখ তুলে বললো,
“এমন আর করবে না কিন্তু।কেমন??”
“আচ্ছা…..”
সাদাদের উপর কি আর করা যায়।নৌশিন তো এসব করার ধারে কাছে যায় না।
তবুও সে বললো,
“আন্দাজে চলতে পারো তো!!অরূপকেও আইসক্রিম দিয়েছো!!ছেলেটার জ্বর হলে তখন আমি এই রোমে এনে তোমার পাশে শুয়াবো।ওর মা সেবা করবে না।তুমি করবে…..।”
সাদাদ হাঁসলো।সে যেন নৌশিনের কথা শুনলোই না।
রাইসাকে নিয়ে দুষ্টুমিতে মেতে উঠলো।

রাতের খাবারের পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই যে যার ঘরে চলে গেলো।নৌশিন সব কাজ সেরে যখন রোমে এলো সাদাদ তখন সোফায় বসেছে কিছু কাজ করবে বলে।
রাইসা ঘুমাচ্ছিলো তখন।
নৌশিন দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরোমে গেলো।
তারপর ঘুমানোর জন্য রেডি হয়ে বিছানায় না গিয় সাদাদের পাশে বসলো।
“কি হলো??এখন আবার লেপটপ??”
সাদাদ মনিটরে চোখ রেখেই বললো,
“জাস্ট মে-ইলগুলো টেস্ট করছি।”
নৌশিন সাদাদের কাঁধে মাথা রাখলো।সাদাদ নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি হাঁসলো।
নৌশিন আদুরে সুরে ডাকলো তাঁকে,

“এই….”
“হুম…..”
“ইশশ…ইমেইল গুলো পরে চেক করা যাবে তো।”
সাদাদ আর কথা বললো না।
লেপটপ টা বন্ধ করে দিলো।
তারপর নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে বললো,
“হুম।পরে চেক করবো….”
“ধন্যবাদ….”
“কি ব্যাপার!!এতো খুশি কেনো তুমি??”
নৌশিন কিছু বললো না।
সে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো।
তারপর সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে বললো,
“এসিটা টা একটু কমিয়ে দিয়ে আসো ঘুমাবো….”

সাদাদ করলোও তাই।
নৌশিনের পাশে শুতেই নৌশিন সাদাদের বুকে মাথা রাখলো।
সাদাদও রোজ দিনের মতো নৌশিনের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ সাদাদের মনে হলো নৌশিন আজ নিজের সুগন্ধি টা বদলে নিয়েছে।
একটা মাতাল টা সুবাস ভেসে আসছে নৌশিনের শরীর থেকে।আর নৌশিনও বারবার সাদাদের শার্টের বোতাম খুলছে আর লাগচ্ছে।
সাদাদ বুঝলো নৌশিন কিছু বলতে চায় তবে পারছে না।
কিন্তু সাদাদ কিছু বলার আগেই নৌশিন বললো,
“শোনো না…”
“হুম।বলো…”
“একটা কথা বলবো….”

“অবশ্যই হাজার টা বলো।তার আগে বলো এতো সুবাস???”
“ধুর সেটা পরে….আগে আমার কথা শোনো…”
সাদাদ নৌশিনের গলায় গাল ঘষতে ঘষতে বললো,
“বলো…শুনছি…..”
নৌশিন সাদাদের মাথা টা নিজের গলায় আকড়ে ধরে বললো,
“আরেকটা বাবু চাই…..”
সাদাদ নৌশিনের মুখের দিকে তাঁকালো।বললো,
“না বলছি কিন্তু আমি….”
নৌশিন মন খারাপের ভঙ্গি করে বললো,

“কি হয় আরেকটা বেবী নিলে??”
“নৌশিন!!!”
এবার খানিক অভিমান হলো নৌশিনের।সে কত দিন ধরে সাদাদকে এই কথাটা বলতে চাইছে কিন্তু সাদাদ একদম-ই রাজি হয় না।
“এই যে গাল ফুলালে একটা থাপ্পর খাবা….”
“সরো। ঘুমাও…”
“নৌশিন তোমার মনে নেই রাইসার সময় কি কষ্ট টা করেছো??তারপর আবার কেনো??”
নৌশিন মৃদু গলায় বললো,
“এবার আর হবে না…এবার সেফলি হবে সব….প্লিজ….”
“নৌশিন বায়না করো না…..”

“ছেলে হলে কিন্তু ভালো হবে খুব।”
“মাইর খাবা মাইর।শুধু বেবী….”
নৌশিন সাদাদের বুকে খেলো।
এক,দুই অসংখ্য।
তারপর বললো,
“আদর করো না প্লিজ….”
সাদাদ কথা বললো না আর।

সেও যেনো একটা ঘোর লেগে আছে।নৌশিনের শরীরের সুবাস টা আজ তাঁকে প্রথমেই তীব্র জালে ফেলে দিয়েছে।
সাদাদ নৌশনকে আদর করছে।খুব করে-যা নৌশিনকে ঘােয়েল করার জন্য পরম এক পাওয়া।
সাদাদ কিছু সময়পর ফিসফিস করে নৌশিনকে বললো,
“সুগন্ধি টা কিন্তু খুব আবেদন ময়ী।কোথায় পেলে??”
নৌশিনও মৃদু সরে জবাব দিলো,
“আগে একদিন ইউজ করেছিলাম।”
সাদাদ নৌশনের কথা কি শোনলো নাকি শুনলো না ঠিক জানে না।তবে সে ডুবে যেতে লাগলো রাতের গভীরতার সাথে গভীতম এক ভালোবাসায়।যে ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো আকাশের নিংসঙ্গ ঐ তারা,রাতের ল্যাম্পপোস্টের আলো বিহীন নির্জন রাতটা।💜💜💜💜💜

“সাদাদ,উঠো…..”
“এই সাদাদ…..”
ভোর রাতের দিকে ঘুমিয়েছিলো সে।
তবুও নৌশিন ডেকে নামায পড়িয়েছে।
আর এখন আট টা বাজে তবুও সে উঠে নি।
অথচ মেয়ের স্কুল নয়টায়।
নৌশিন সব কাজ ছেড়ে এসে ডাকাডাকি করেও কোনো ফয়দা নিতে পারছে না।
“সাদাদ,উঠো না রে।রাইসার স্কুল…..”
সাদাদ শুধু পাশ ফিরে “উ” শব্দ করলো।
নৌশিন সাদাদের পাশে বসে চুলের ভেতর হাত দিয়ে বললো,”উঠো….দেরী হয়ে যাবে।”

“হুম….”
“কি হুম হুম করছো বল তো!আমি কি একা যাবো মেয়েকে নিয়ে??যাবে তোমার মেয়ে??”
সাদাদ কিছু বললো না তবে নৌশিনের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।
“আরে!!কি হচ্ছে…..”
সাদাদ কথা বললো এবার,
“যেতে হবে না স্কুলে…”
“কিসব বলো??”
“ঘুম হয় নি সারা রাত…..”
নৌশিন সাদাদের গালে হাত রেখে বললো,
“যদি সারা রাত এমন পাগলামী করেন।তাহলে কি করে হবে??”
“উমমমম…..”
“কি উমমম??”
সাদাদ চোখ খুললো।
নৌশিনের গলাটা জড়িয়ে ধরে মুখটা নিজের মুখের কাছে এনে বললো,

“তোর জন্যই তো এলেমেলো আমি….”
“আহা রে….”
“সত্যি বলছি কেমন নেশা লেগে যায়…..”
“ধ্যাত উঠো…..”
“উঠতেই হবে??”
“তো!!!”
“আর একটু আদর করি??”
“যাহ্…উঠো তো….”
সাদাদ উঠে বসলো।
নৌশিন বিছানা গুছাতে গুছাতে বললো,
“যাও ওয়াশরোমে।এখন বেডেই বসে থাকবে নাকি??”
“হুম।যাই…..”

সাদাদ উঠলো ঠিকই।তবে ওয়ারোমে না গিয়ে নৌশিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
সকালে সাওয়ার নেওয়ায় এখনও চুলগুলো অল্প অল্প ভেজা তার।তাই ছেড়ে রেখেছে।
সাদাদ নাক ঘষতে লাগলো নৌশিনের চুলে।
দু হাতে কমড় জড়িয়ে আকড়ে ধরেছে নৌশিনকে।
“আ…কি করছো….”
“ভালোবাসছি…..”
নৌশিন কিছু বলবে তার আগেই সাদাদ ওর চুলগুলো সরিয়ে উন্মুক্ত পিঠে চুমু দিতে লাগলো।
নৌশিনের হাত রাখা রাইসার বালিশ টা ফ্লোরে পড়ে যায়।সে দু হাতে নিজের শাড়ি আকড়ে ধরলো।
সাদাদ নৌশিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গলাও চুমু দিচ্ছে।
নৌশিন না পারছে না বাঁধা দিতে না পারছে কিছু বলতে।তবে সহজাতভাবেই ওর হাত দুটো সাদাদের চুলগুলো আকড়ে ধরলো।
সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে দিকে তাঁকালে নৌশিন চোখ রাখে সাদাদের চোখে।
সাদাদ ঠোঁটে দিকে এগিয়ে আসতেই নৌশিন অস্ফষ্ট স্বরে বললো,

“এখন না।প্লিজ….”
“কেনো??”
“সব সময় শুধু তাই না??”
“কোথায় সব সময়?কাল রাতে তো অনেকদিন পর….”
“ইশশশ।সাধু টা আমার!!অনেকদিন???”
“দু-তিন দিন মানেই অনেকদিন…..”
“হয়েছে।এখন ছাড়ো….”
“আরে আমি তো জাস্ট একটু আদর করছি।এতেও এতো না না??”
“ইশশ…ছাড়ো তো।”
“জোর করলে কিন্তু তখন বুঝবে……”
“সাদাদ!!!…..”
“চুপ….একটু দেখছি তো।নাকি??”
“কি এমন দেখছো???”
“তোকে……”

“হয়েছে।তোমার দেখা তো সারা জীবনেও শেষ হবে না।পরে না হয় আবার দেখো??”
“পরের টা তো পরে দেখবোই।এখন একটু……. ”
দরজার ধাক্কা পড়তেই দুজনে সাদাদ নৌশিনকে ছেড়ে দাঁড়াল।নৌশিন মুঁচকি হেঁসে শাড়ি-টাড়ি একটু ঠিক করতেই দরজায় ধাক্কার শব্দ পড়ল।নৌশিন এবার বুঝে ফেলেছে রাইসা ছাড়া এমন থাপ্পর কেউ দেয় না।
নৌশিন যেতে যেতেই রাইসা বাইরে থেকে বললো,
“আম্মু!!!!খোলো….।আম্মু……”
নৌশিন জলদি গিয়ে দরজা টা খোলে।
রাইসা ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে থেকে বললো,

“আম্মু,আমি কখন থেকে ডাকছি…..”
“আর হবে না বাবু…..”
“স্কুলে যাবো না আজকে??”
“হ্যাঁ তো।যাবে।দেখি আসো…”
রাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে রোমে ডুকলো নৌশিন।
বিছানা ফাঁকা দেখে রাইসা বললো,
“বাবাই কোথায়??”
“ওয়াশরোমে……”

“আম্মু।আজকে বাইক করে যাবো?”
“কেনো আম্মু?গাড়ি করে যাবো।”
“না না আম্মু।বাইকে মজা লাগে।”
“বাবু।গরম তো।রোদ লাগবে।কালকে তো বাইকে এসেছি আমরা।”
“আম্মু!!!বাতাস লাগে তো বাইকে।গরম না তো।”
“উফফ!!রাইসা!!মা জেদ কেনো করিস???বল তো???”
রাইসা হঠাৎ চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে বললো,
“আম্মু!!!”
নৌশিন খেয়াল করলো মেয়ের চোখ ছলছল করছে।

রাইসা টলটল চোখে মায়ের দিকে তাঁকিয়ে রইলো।
নৌশিন ঝপ করে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেতে খেতে বললো,
“মামনি আমার।তুই করে বলি নি তো।ও মা,কেঁদো না।আমি কি তোমায় তুই করে বলি কখনো।”
রাইসা মায়ের চোখ টিপটিপ করতেই একটু পানি ঝড়লো।
নৌশিন শাড়ির আঁচলে চোখটা মুছে নিয়ে বললো,
“তুই করে বললে এতো কষ্ট পায় আমার মা টা!!!!”
এই রকম টাই হয়।রাইসাকে নৌশিন তুই করে ডাকতে পারে না।যদি কখনো বলে তাহলে রাইসা কেমন যেনো অসহায়ের মতো মুখ করে।

একবার তো নৌশিন রাগে তুই করে বকাবকি দিয়েছিলো সেবার কি কান্না!!!
“আমার সোনা মানিক।আমার কলিজাটা।”
“উমমমম।লিপস্টিক লাগছে আম্মু….”
নৌশিন হাঁসলো।
“বা রে।একটু চুমু দিলাম তাই তোমার লিপস্টিক লাগলো?”
“লাগে তো আম্মু।আচ্ছা আমি তুমি আর জেঠিমনি লিপস্টিক পড়ো কেনো??”
“তুমি বড় হলে তুমিও পড়বে…..”

“ওও…তাহলে ভাইয়াও কি পড়বে??”
“নাহ সোনা।তোমার বাবাই আর জেঠামনি তো পড়ে না।ভাইয়াও পড়বে না।”
“ওও।আমি আজকে পড়বো লিপস্টিক???”
“পড়বে???”
“তুমি-ই বলো…..”
“আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার এই ছোট্ট গোলাপি ওষ্ঠে লিপস্টিক দিয়ে দিবো আজ।”
“ওষ্ঠ!!”
“মানে ঠোঁট।ইংরেজীতে লিপ বলে।বুঝলে??”
“হুমমম….”
“তাহলে তো ভালোই হলো।এবার রেডি করিয়ে দিবো তারপর ব্রেকফাস্ট করে আমরা স্কুলে যাবো।”
“আচ্ছা।”

শাশুড়ীকে বলে নৌশিন রাইসাকে নিয়ে বের হলো।
কিন্তু গাড়ি দেখেই রাইসা আবার বায়না ধরেছে সে গাড়িতে যাবে না।
নৌশিন বারবার বুঝাচ্ছে তবুও কাজ হচ্ছে না।
শেষে নৌশিন একটু রাগ দেখে মেয়েকে গার্ডেনে রেখেই বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো।
আসার আগে বললো,
“তুমি শোনবে না তো আমার কথা??আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে শোনো তোমার আম্মু যাচ্ছে না তোমার সাথে।তুমি কিভাবে যাবে সেটা তোমার ব্যাপার।”
নৌশিন সত্যি সত্যি বাড়ির ভেতর ডুকে যায়।রাইসা ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো।সাদাদ তখন ব্যাগ হাতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে।

নৌশিনকে দেখে বললো,
“কি ব্যাপার??চলে এলে??”
নৌশিন অসহায় ভাবে বললো,
“খুব জেদী হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা দিন দিন।”
“আরে কি করেছে ও??”
“কোনো ভাবেই গাড়িতে উঠতে পারি নি।তাই চলে আসলাম।দেখি কি করে…..”
“কি বলছো।না কাঁদলেই হয়!”
“কাঁদুক।তবুও জেদ টা তো কমলো!!এমন করলে হয়?”
“আচ্ছা ঠিক আছে চলো…..”
নৌশিন সাদাদের সাথে বাইরে গিয়ে দেখলো রাইসা গার্ডেনে নেই।বুক টা ধুক করে উঠে তার।
সারা বাগান খুঁজেও রাইসাকে পেলো না ওরা।
নৌশিন কেঁদে ফেললো,
“আমি ওকে বলছি,’তুমি কিভাবে যাবে সেটা তোমার ব্যাপার’ ও কোথায় গেলো??”
“নৌশিন!!কুল।”

এতক্ষণে বাসার ভেতরের সবাই জেনে গেছে।
সবাই তো পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যেই ঘাবড়ে গেছে একদম।
আর তালে তালে দাড়োয়ান টাও নেই আজ।
এই সুযোগেই হয়তো রাইসা রাস্তায় বের হয়ে গেছে।
সাদাদ নৌশিনকে কান্নারত অবস্থায় রেখেই দৌড়ে রাস্তায় চলে যায়।পেছন পেছন নৌশিনও ছুটে আর সাথে রাফসাও।
বাড়ির পাশেই মোড়।
দুটো রাস্তা দু দিকে চলে গেছে।
নৌশিনের ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।

ওর মনে হচ্ছে-রাইসা যেমন মেয়ে নিশ্চয় কোনো মটরসাইকেল আরোহীকে পথ আটকে বলছে স্কুলে নামিয়ে দিতে।কিন্তু ও তো ওর স্কুলের নাম-ই জানে না।এই সুযোগটাই হয়তো কেউ নিয়েছে।আর এতো ফুটফুটে বাচ্চা দেখেই বুঝা যায় কোনো বড়লোক বাড়ির মেয়ে।সুযোগ বুঝে লোভে পড়েও নিতে পারে।
ভাবতেই নৌশিনের গা শিউড়ে উঠলো।
মোড় অবদি গিয়ে রাইসাকে দেখা যায় নি।
রাফসা বললো,
“সাদাদ!তুই ঐ রাস্তায় দেখ।আমি আর নৌশিন এইদিকের রাস্তায় যাচ্ছি।”
“আমার মেয়ে!!!”
বলেই নৌশিন ডুকরে কাঁদতে লাগে।
সাদাদ কপালের ঘাম মুছে ধমকে উঠে,
“চুপ।কান্না থামাও।”

“আহ্ সাদাদ।থাম।তুই ওদিক দেখ।আমি এদিকে সামলে নিচ্ছি।”
সাদাদ পাগলের মতো আশে-পাশে দেখছে।দোকানদারগুলোকেও বলছে।
সমস্যা টা হচ্ছে সাদাদদের বাড়ি টা একদম মেইন রোডের সাথে।বাড়ি থেকে বের হওয়া মানে মিরপুর মেইন রোডেই পা রাখা।
নৌশিন ছুটতে ছুটতে এবার ভাবলো,
‘মেয়ের যদি এক্সিডেন্ট হয়!!”
না!!!তা কি করে হবে!!নৌশিনের কত সাধনার ফল এই রাইসা।কত কষ্টের ধন।
নৌশিন কাঁদতে কাঁদতে রাফসার সাথে নৌশিনকে খোজচ্ছে।
কোনো গাড়ি বা কারও সাথে না গেলে রাইস এই দুটো রাস্তাতেই আছে এখনো।
এই অল্প সময়ে সে তো বেশী দূর যেতে পারে নি।

সাদাদের হৃৎপিন্ড কাঁপছে।
কি হয়ে গেলো।
মিনিট দশেকেই মেয়ে কোথায় যেতে পারে।তারও মাথায় ভয়ানক চিন্তা ডুকছে।
তবুও শক্ত রেখেছে নিজেকে।
হঠাৎ করে রাস্তার পাশের আইসক্রিৃ বারের দিকে চোখ পড়লো সাদাদের।
কাঁচ ভেদ করে নিজের জীবনের সবচেয়ে ভালোবাসার ছোট্ট মায়া মুখ টা চিনতে ভুল করলো না তার চোখ জোড়া।
যেনো এতক্ষণে প্রাণ টা কোথা থেকে দেহে ফিরে এলো।
সাদাদ “আল্লাহ” শব্দ করেই কোনো রকম রাস্তা পাড় হয়ে ছোটে গেলো সেখানে।
দরজা খোলে ভেতরে যেতেই পরশ পাওয়া হলো তার।

রাইসা চুপ চাপ বসে আছে একটা টেবিলে। সকাল হওয়া লোকজন নেই বারে।
দুজন কর্মচারী রাইসাকে টেবিলের উপর বসিয়ে কিসব জানতে চাইছে।
সাদাদ ছুটে গিয়ে রাইসাকে কোলে তুলে নিলো,
“আল্লাহ্!!বাবাই!!আমার মামনি!!!!”
মেয়েলে কোলে নিয়ে সাদাদের অশান্ত বুক টা শান্ত হলো।
চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো মেয়েকে সে।
“বাবাই,একা একা এসেছো কেন?”
রাইসা গাল ফুলিয়ে জবাব দিলো,

“আম্মু তো বললো আমি যেভাবে পারি সেভাবে চলে যেতে।আমার স্কুল তো এই রাস্তাতেই ছিলো।”
রাইসা ঠিক বলছে। ওর স্কুল এই রাস্তা দিয়েই যাওয়া হয়।তবে সেটা এই রাস্তা দিয়ে গেলেও এই রাস্তাতেই নয় আর দূরে।তবে বাচ্চার মাথায় শুধু এতটুকু ছিলো বলেই সে এই পথ ধরে হেটেছে।
রাইসা আবার বললো,
“বাবাই!!স্কুল কোথায় গেলো??”
সাদাদ কিছু বলার আগেই কর্মচারী দুজনের মধ্যে একজন বললো,
“স্যার আমাদের শপের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সে আমাকে জিঙ্গাসা করলো ‘আঙ্কেল আমার স্কুল কোথায়?’ কিন্তু স্কুলের নাম বলতে বললে ও বললো,’আমি তো কাল ভর্তি হয়েছি নাম তো জানি না।’ আমাদের বুঝতে অসুবিধা হলো না ও হারিয়ে গেছে।তাই শপে নিয়ে এলাম।রাস্তায় কত কি হয় সে ভয়ে।যদি সাহায্য করতে পারি।”
“ধন্যবাদ ভাই।আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।”

এতক্ষণ সাদাদের খেয়াল ছিলো না নৌশিনের কথা।
মেয়েকে না পেয়ে নৌশিন তো শেষ এতক্ষণে।তাই দ্রুত ফোন করে রাফসার ফোন।
খবর টা জানায়।
সাদাদ ফোন রাখতেই অন্য জন কর্মচারী বললো,
“স্যার মেয়ে কি একা বের হয়ে ছিলো।মনে হচ্ছে রাগ করে।”
“ঠিক বলেছেন ভাই।একটু জেদী আমার মেয়েটা।”
“হ্যাঁ বুঝেছি সেটা।কারণ আমরা বার বার ওর বাবা-মা,বাসা এসব জানতে চাইছিলাম।কিন্তু ওর এক কথা,’আগে স্কুলে নিয়ে যাও আমাকে তাহলে বলবো না হলে বলবো না’।
সাদাদ রাইসার মুখের দিকে তাঁকালো,

“বাবা রে!!এমন করো তুমি??যদি হারিয়ে যেতে??”
রাইসা হঠৎ ই হাঁসলো।হয়তো পর রাত চলে গেছে।
বললো,
“কেনো বাবাই??আম্মু তো আমাকে সব শিখিয়েছে।
আমার বাবাই এর নাম:সাদাদ চৌধুরী।
আম্মুর নাম:ফারিহা আনজুম নৌশিন চৌধুরী।
জেঠামনির নাম:সাদ চৌধুরী।

জেঠিমনি:রাফসা চৌধুরী।
ভাইয়ার নাম:অরূপ চৌধুরী।
আর আমি তো রাইসা চৌধরী।”
উপস্থিত সবাই হেঁসে ফেললো।
সাদাদ মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
“আর বাসা কোথায় জানো না??”
“হুম জানি তো।আম্মু সব শিখিয়েছে।”
“বলো তো…”
“মিরপুর সাত-চলন্তিকা রোড-আবাসিক এলাকা-চৌধুরী বাড়ি।তারপর কি জানি একটা নাম্বার…আমমমম সাতশ কত??কত জানি……”
এর মধ্যে রাফসা নৌশিন এসে যায় সেখানে।

নৌশিন ছুটে গিয়ে মেয়েকে সাদাদের কোল থেকে নিয়ে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।
“মা রে কোথায় বেরিয়েছো একা একা।আম্মু তো মরে যাচ্ছিলো আর একটু হলে।ও মা এতো অভিমান তোমার!!এমন করে কেউ???কিছু হয়ে গেলে আমার বুক ফাঁকা হয়ে যেতো মা!!!”
রাইসা কিছু বুঝলো কি না কে জানে।এসব সব তো কঠিন কথা।তবে সে এইটুকু বুঝেছে ওকে না পেয়েই ওর আম্মু এতো কাঁদছে।

তাই কষ্ট লাগছে ওর ও।
তাই সে মায়ের মুখটা নরম হাতে ধরে বললো,
“সরি আম্মু।কেঁদো না।আমি তো স্কুলে যাচ্ছিলাম”
পাশ থেকে রাফসা বললো,
“রাইসা মনি!!!একা একা কেউ স্কুলে যায়??তুমি ভাবলে না তোমার আম্মু কষ্ট পাবে।”
নৌশিন এখনো মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁদছে।
কর্মচারীদের মধ্য একজন নৌশিনকে এক গ্লাস পানি এনে দিয়ে বললো,
“ম্যাডাম আপনি শান্ত হয়ে বসুন।পানি টা খান।বাচ্চা তো সেইফ ই আছে।”
নৌশিন রাইসাকে নিয়েই ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।
কান্না থামাতে পারছে না সে।
আজ যদি সত্যিই কিছু হতো!!

নৌশিন নিজেকে তো দোষ দিতেও সাথে সাথে পাগলও হয়ে যেতো।
“আম্মু আমি আর তোমাকে ছাড়া যাবো না কোথাও….প্রমিস।”
নৌশিন দু হাতে চোখের জল মুছলেও আবারও গাল ভিজে গেলো।সে সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে কান্না ভাঙা গলায়ই বললো,
“আজ বিকালের মধ্যেই বাইক বাসার পার্কিং এ এনে রাখবে তুমি।”
তারপর মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে বললো,
“আর কোথাও যেতেই দিবো না তোমাকে।বাইক করে স্কুলে যেতে চাও তো তোমার বাবাই বাইক-ই কিনবে।যদি ইচ্ছা হয় প্লেনে করে ঘুরতে যাওয়ার তাহলে তোমার এই পঁচা আম্মু টাকে বললে আম্মু প্লেনও কিনে দিবে। তোমার যদি ইচ্ছা হয় রিকশা করে যাওয়ার তাহলে আম্মু তাই করবে।যা বলবে আম্মু তাই করবে।শুধু আমাকে একা রেখে বের হ…..”
আর কিছু বলতে পারলো না নৌশিন।সারা শরীর অবশ হয়ে গেলো তার।রাইসার শরীর থেকে হাত দুটো আস্তে করে পড়ে গেলো।মাথাটা হেলে গেলো চেয়ারে।
রাইসা নৌশিনের গলা ধরে ছিলো তা না হলে সে কোল থেকে পড়ে যেতো।
নৌশিনের সেন্স নেই দেখে সাদাদ চিৎকার দিয়ে উঠে,

“নৌশিন!!!!”
রাফসাও ঘাবড়ে যায়।
রাইসা কোলে তুলে নেয় সে।
“নৌশিন!!!এই নৌশিন!!!ও মাই গড।ভাবী ওর তো সেন্স নেই।”
সাদাদ ভয় পেয়ে যায় ডিমনলশিয়ার ব্যথা যেনো না হয় আবার।
“স্যার আমাদের শপে কেবিন আছে পেছনে।ম্যাডামকে নিয়ে যেতে পারেন।”
সাদাদ তাই করলো।
রাইসা কাঁদছে,”জেঠমনি আম্মুর কি হয়েছে?আম্মু কথা বলছে না কেনো?”
রাইসার জবাব দিতে পারলো না রাফসা।ওকে সাদাদের কোলে দিয়ে নৌশিনকে দেখছে সে।
দেখে সাদাদকে বলল,
“ভয় নেই।টেনশনে এমন হয়েছে।প্রেসার ল তো তাই শরীর নিতে পারে নি এই টেনশন।”
চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ডাকছে নৌশিনকে।
কিছুক্ষন পর নৌশিন চোখ খুললো।সাথে সাথে উঠে বসে বলল,

“আমার রাইসা!!!”
সাদাদের কোলে রাইসাকে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সে।
সাদাদও নিশ্চিত হলো নৌশিনকে দেখে।
মেয়েকে নিয়ে তার পাশে বসলো।
“এই নাও তোমার রাইসা।”
নৌশিন মেয়েকে আবারও বুকে টেনে নিলো।
“ও মা!!কাঁদে না সোনা।কাঁদছো কেনো??”
“তুমি কথা বলছিলে না তো…..😭😭😭😭”

প্রেমঘোর পর্ব ১১১+১১২+১১৩

“এই তো মানিক আমার।আমি না তোমাকে খুব ভালোবাসি।কথা বলছি তো।”
রাইসাকে শান্ত করিয়ে নিলো নৌশিন।সাদাদ বাসায় ফোন করে জানালো সবাইকে।
ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে আসতে বললো।
শেষে সে দুইজনকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে আসলো আইসক্রিম বার থেকে।
রাইসাকে রাফসা কোলে নিয়ে এসেছে আর নৌশিন দুর্বল হয়ে পড়ায় সাদাদ ওকে ধরে ধরে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসলো।
বাসায় আসা মাত্রই রাইসাকে দেখে বাসার সবার আত্না শান্তি হয়।
যেনো খরা ফসলী জমিতে বান বয়ে যাচ্ছে।

প্রেমঘোর পর্ব ১১৮+১১৯+১২০

পরের কয়েকটা পর্ব নেই ওই কয়েকটা পর্ব ছাড়া বাকি পর্ব গুলো কি দিব কমেন্ট করে জানান