প্রেমঘোর পর্ব ২৫
নার্গিস সুলতানা রিপা
নৌশিন সাওয়ার নিতে নিতে শুধু সাদাদের কথাই ভেবে যাচ্ছে…….আর আল্লাহ কাছে ওর তো আজ চার বছর যাবত একটাই পার্থনা ‘যেন সাদাদ আর ও কখনও আলাদা না হয়’ আর এই বাসনাটা গত ছয় মাসে আরও অনেকগুন বেড়ে গেছে…..মানে যে দিন সাদাদ নৌশিনকে নিজের বাবা মায়ের সামনে বিয়ে করে নেয়……আর সেই একটা বাসনাই আজ দু দিন আগে থেকে যেদিন নৌশিন সর্বসমক্ষে সাদাদের সাথে সারাজীবনের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাদাদের হাত ধরে নিজের চিরচেনা সবকিছু ত্যাগ করে সাদাদের বাড়িতে প্রবেশ করে…..
অপরদিকে সাদাদ বিছানায় শুয়ে তার প্রিয়তামার কথা ই ভেবে চলেছে………….
সাওয়ার ছেড়ে নৌশিন রোমে ডুকে সাদাদকে এক রকম জোড় করেই ওয়াশরোমে পাঠায়……
আর সাদাদ সাওয়ার নেওয়ার সময় টুকু তে নৌশিন বারান্দায় গিয়ে চুল ভালোভাবে ঝড়ে নেয় এ দুদিন চুলে স্প্রে করা হয়েছে সাজানোর সময়,আর কাল তিন বার গোসল করেছে অথচ একবারও চুল ভালোভাবে শুকানো হয়ে উঠে নি আর দুপুরে তো ড্রায়ার ই করেছিলো-তাই চুলের অবস্থা মোটামুটি খারাপ,সেজন্য এখন শেম্পু টাও করে এসেছে………চুল ঝড়ে বারান্দার গ্লাস উঠিয়ে রেলিং ধরে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে আছে……বারো তলার উপর থেকে ব্যস্ত শহর টা খুব ভালোভাবে দেখা যায়……কিন্তু ব্যস্ত শহরের ব্যবস্থা এখনও হয় নি…….ভোরের হালকা আভা বুজা যাচ্ছে কেবল তবে সূর্য মামা এখনও উঠে নি-কাক ডাকা আওয়াজ বুজিয়ে দিচ্ছে ঘুমন্ত মানুষ কুলকে ‘আর এক নতুন সকাল আসতে চলেছে….’সকালের এই মৃদু বাতাস টা তে গাড়ির অদাহ্য কার্বন মনোঅক্সাইডের গন্ধ পাওয়া যায় না,কলকারখানার সীসা ভেসে আসে না……………
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নৌশিন রোজ সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই সীসা মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়………….
রোজ সকালে এমন দৃশ্য দেখতে আর ভেজাল মুক্ত ফুরফরে বাতাসে একরকম হারিয়ে যায় নৌশিন………….
!
সাদাদ সাওয়ার সেরে ড্রেস আপ করে বারান্দায় গিয়ে নৌশিনের পেছনে দাঁড়ায়…আলতো করে জড়িয়ে ধরে নৌশিনকে…
আকাশের দিকে তাঁকিয়ে নৌশিন সজোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে “দেখো সাদাদ আকাশ টা কেমন হালকা দেখাচ্ছে….আবছা আকাশ দেখতে কিন্তু বেশ!….”
“হুম……..”
“একটু জোরে শ্বাস নাও,বুজতে পারবে বাতাস টা কি ফ্রেস!!!…..অন্য রকম একটা গন্ধ,জাস্ট ওয়াও………..”
সাদাদও নৌশিনের মতো সজোরে একটা শ্বাস নেয়……..তারপর মুচকি হেঁসে বলে “কেস টা কি হলো?তুমি তো বললে ফ্রেস বাতাস আসবে……কিন্তু আমি আমি তো অন্য কিছুর সুভাস পাচ্ছি……”
সাদাদের কথা শুনে নৌশিন মুখে একটা বিরক্ত ভাব এনে সাদাদের দিকে ঘুরে তাঁকায়….
“চুলে নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিলে শেম্পুর গন্ধ ই পাবা………..”
সাদাদ মুচকি হেঁসে ফেলে….
“ঘ্রাণ টা কিন্তু যে সুগন্ধিকে হার মানায়………”
আবার নৌশিনের চুলের দিকে নাক দিয়ে শব্দ করে শ্বাস নিতে থাকে……..”আহা……ওয়াট আ স্মেইল………”
নিমেষে ই নৌশিনের মুখের বিরক্তিকর ভাব উধাও হয়ে যায়……….আসলে বিরক্তি না আসলে শুধু দেখানোর জন্য ভাব নিলে যা হয় আর কি…….
“হয়েছে,আপনার আর সুগন্ধ নিতে হবে না……চলুন নামায পড়তে হবে…….তুমি কি মসজিদে যাবা??”
“মসজিদে নামায পড়লে কতগুন বেশি নেকী হবে ভাবতে পারছো???……”
“আচ্ছা দাঁড়াও,আমি দেখছি ভাইয়া চলে গেছে কি না…….”
“ওকে……”
যাওয়ার আগে চুল টা খোপা করে নেয়……আর সাদাদ মুগ্ধ নয়নে তাঁকিয়ে থাকে খোপা করারর সময় অপূর্ব লাগছিলো নৌশিনকে একটু বেশি সময় ধরে দৃশ্য টা দেখার সুযোগ পায় সাদাদ কারণ ঐ যে লম্বা চুল……রাতের ড্রেস আপের মতোই একটা হালকা কালারের প্লাজো আর শর্ট জামা সাথে সাদা শিপন ওড়না আর মাথায় ভেজা চুলের খোপায় আবার নতুন এক রূপে সাদাদ দেখতে পারছে তার সহধর্মিনীকে………….
নৌশিন মাথায় ঘোমটা দিয়ে নেয়…..এতে যেন মেয়েটার সৌন্দর্য বহুগুন বেড়ে যায়…..
“কি ব্যাপার?হঠাৎ ঘোমটা দিলে যে?”
মুচকি হেঁসে জবাব দেয় নৌশিন,
“আরে,চুল ভেজা তাই খোপা করে ঘোমটা দিয়ে নিলাম নাহলে ভাইয়ার সামনে লজ্জা পাবো না??”
“আচ্ছা!!!!!বুদ্ধিমান বউ আমার…….”
“এতো টা না তবে অল্প……আর ভাইয়া না থাকলেও ভাবী যদি ভেজা চুলে দেখে হাজার টা প্রশ্ন করবে……তাই সাবধানের মার নেই……….আচ্ছা!আর বকবক না করে যাই তা না হলে ভাইয়া আবার চলে যাবে…….
নৌশিন গিয়ে ওর ভাবীর রোমে নক করে,এদের বাড়ির সবাই ফজরের নামায আদায় করার জন্য এই সময়ে উঠে…………..
ভাবীর রোমে লাইট অন দেখে ই নৌশিন বুজে ওরা উঠে পড়েছে,তাই ডাক দিতে কোনো সমস্যা নেই………”ভাবী,……ভাবী…..”
সারা দেয় নৌশিনের ভাই “তোর ভাবী ওয়াশরোমে,দরজা অন আছে আয়…….”
নৌশিন ভেতরে ডুকে….ওর ভাই মসজিদে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে……..
“ও তুমি যাও নি এখনও!!…..”
“যাবো এখন,কেন?”
নৌশিনের ভাবীও এতক্ষণে উযু করে বেরিয়ে আসে……
“কি ব্যাপার নৌশিন…..কিছু লাগবে?…”(ভাবী)
“না ভাবী,সাদাদ নামাযে যাবে তাই দেখতে এলাম ভাইয়া চলে গেছে নাকি…..”
“ও আচ্ছা,আমি ওয়েট করছি ড্রয়িং রোমে-ওকে আসতে বল…….”
“আচ্ছা……..”
নৌশিন রোমে গিয়ে সাদাদ কে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের নামায টাও আদায় করে ফেলে……….
ঘুম পাগল নৌশিনের ঘুম পাচ্ছে,আর ওর আসল ঘুম ই তো হয় ফজরের নামাযের পর থেকে সকাল দশ টা অবদি…..
তাই অভ্যাসবসত এই সময়ে একটু বেশি ই ঘুমিয়ে পড়েছে…….সাদাদ আসবে বলে দরজা অন করেই শুয়ে পড়ে……..শুয়েছে বুজতে পারলেও কখন যে ঘুমিয়ে গেলো সেটা নৌশিন নিজেও বুজতে পারে নি………………
সাদাদ নামায সরে এসে দেখে নৌশিন বেভোরে ঘুমিয়ে আছে,তাই আর ডাকাডাকি করে নি,এই বেচারাও ঘুম চলে এসেছে নৌশিনের ঘুম দেখে টানা দু রাত ঘুমায় নি ঘুম আসা টাই স্বাভাবিক……….তাই দরজা লাগিয়ে সাদাদও শুয়ে পড়ে………………
নৌশিনের মাথায় হাত রাখতে গেলে নৌশিন ঘুমরে ঘুরে ই সাদাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে…..
প্রেমঘোর পর্ব ২৪
আর খোলা ভেজা চুলগুলো সাদাদের মুখে গিয়ে পড়ে…….
সাদাদ চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে সাইডে মেলে দিয়ে নৌশিনকে আকড়ে ধরে দু চোখ বন্ধ করে নেয়…………..
আবার চোখ খুলে ঘুমন্ত নৌশিনের মায়বী মুখেরর দিকে কিছু সময় তাঁকিয়ে থাকে……
ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাঁসি নিয়ে ভালবাসার মানুষটার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে আবার দু চোখ বন্ধ করে ফেলে………………….
নৌশিনের মতো সাদাদও এক মুহুর্তেই হারিয়ে যায় গভীর নিদ্রায়…………………………
হারানোর তো কথাই……..তাই তো লোকে বলে ‘তৃপ্ত আত্মার নিদ্রা ছেদ ঘটানো দায়’!!!