প্রেমঘোর পর্ব ৭১+৭২+৭৩+৭৪+৭৫

প্রেমঘোর পর্ব ৭১+৭২+৭৩+৭৪+৭৫
নার্গিস সুলতানা রিপা

“তা তো হবেই……বাট,”
“বাট??”
“না কিছু না……..পরশু কিন্তু বের হচ্ছি আমরা…..”
“বাট কি সেটা তো বললা না…..আর আমরা যে পরশু বের হবো সেটা শুধু তুমি না আমিও জানি…….”
“আরে পিচ্চি জাস্ট এমনি বলছিলাম…….ইসসস…..আমার তো ভাবতেই কেমন লাগছে নিজের বউকে নিয়ে চার দিনের সফর!ইশশশশ বউ রে এঔ চার দিনে তুই শেষ……..”
“যাহ্…….”

নৌশিন ড্রেসিং টেবিলের সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সাদাদ হাত ধরে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দেয়,
“ওহহহ….সাদাদ!!!তুমি না সব সময়……”
“হুপপপ…..একটু আগে কি বললেন আপনি???যাহ্?????হাজবেন্ডকে তুই করে বলো???”
“আরে আমি তো সেটা এমনিই বলে ফেলছি তুই করে কখন বললাম??আজিব তো…….”
“এমনি বলিস আর যেমনিই বলিস শাস্তি তো পেতেই হবে তোকে……”
“সাদাদ!!!ভালো হবে না কিন্তু….এই কথা তুমি এভাবে ধরতেছো কেন???আমি কবে তোমাকে তুই তুকারি করি???শুধু শুধু😞😞😞।।।।এখন যদি এটা নিয়ে পেচাও তাহলে আমি কালকে তোমার ব্যাগ গুছিয়ে দিবো না……সব তুমি নিজে করবে…..”
“আচ্ছা!!!আসছে আমার শাস্তিদাতা…….তা আর কি শাস্তি দিতে পারেন আপনি??”
“আমি অনেক কিছু করে শাস্তি দিতে পারবো আপনাকে,।।।।।বাট দিবো না…….ছাড়ো তো এখন….সারা দিন খুব প্রশার ছিলো……”
“ইসসসস……আজকের সারাদিনের প্রেশারে আমার আদরের মুটি বউ টা শুটকি হয়ে গেলো একদম…………

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হা হা হা হা হা…..”
নৌশিন সাদাদের বুকে ঘুষি দেওয়া শুরু করে…..
“খারাপ,আসলেই খুব খারাপ তুমি…….”
সাদাদ উল্টো হয়ে যায়…..এতক্ষণ নৌশিনের চুলগুলো সাদাদের দুপাশে ঢেকে রেখেছিলো এখন সেই পর্দা টা আর নেই।
নৌশিনের উপর সাদাদ…..
“কি হলো???”
“নেশা ধরে গেছে বউ……প্লিজ……”
“সরো তো…..আমি চুল ঠিক করে বাঁধবো।।।এলোমেলো চুলে ঘুমানো যায় নাকি!!”
“ঠিক করে কি লাভ।।।।।এই সুঠাম দেহী পুরুষটা তো তোর সব সাজসজ্জা নষ্ট করে দেয়……”
“সেটা দেয়!!!কিন্তু আপনাকে না এখন উঠতেই হবে……”
“কেনননো???”

“আরে উঠো না………দরজা খোলা তো……”
“থাকুক না…..রাতের বেলা আমরা কি করতে পারি সবারই তো জানা তাই আসবে না……..”বলেই সাদাদ নৌশিনের গলায় মুখ ডুবায়…….”উমমউমমমমমম….উমমমমমমমম…….”
নৌশিনের চুল আকড়ে ধরে বলে,
“সাদাদ,প্লিজ দরজা টা লাগাই…..একটু সরো না…….”
সাদাদ গলা থেকে মুখ তুলে,নৌশিন আজও সাদাদের চোখে বরাবরের মতো তীব্র নেশা দেখতে পারছে……..নৌশিনেরও যে এই চাহনীতে নেশা ধরে যায়………নৌশিন আবারও বললো,তবে এই স্বর টা যেন খুব মৃদু…..নেশাকন্ঠী একদম,
“দরজা টা লাগিয়ে আসি??”
সাদাদ কিছু না বলেই নৌশিনের উপর থেকে সরে গেলো……নৌশিনও ধীরে উঠে দরজাটা লাগিয়ে,ড্রমি লাইট অন করে ঘরের বড় বাতিটা নিভিয়ে দিলো।।।।।
বিছানায় আসার জন্য পেছন ফিরতেই সাদাদকে দেখতে পায়…….খোলা,এলোমেলো চুলে মৃদু আলোয় এক অপসরীকে দেখছে সাদাদ।।।

কোনো কথা না বলেই কোলে তুলে নেয় তার প্রাণপ্রিয়াকে…………..
বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের শার্ট টা খুলে ফেলে….শাড়ির আচল টা খুলতে যাবে সেখানে তো পিন করা……..খুলতে পারছে না সাদাদ….ব্যর্থ হয়ে মুখ গুজে দেয় গলায়……
বুজতে পারে নৌশিন….মুচকি হেঁসে পিন টা খুলে দিয়ে বলে,
“এখন পিন নেই….”

মুখ তুলে চায় সাদাদ,চোখাচোখি হতেই লজ্জায় দু চোখ বন্ধ করে ফেলে নৌশিন……সাদাদ কিছুক্ষণ পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে….এমন লজ্জা মাখা মুখের প্রেমে পড়ে যায় আবারও…..মুচকি হেসে পিন হীন শাড়ীর আচল টা সরিয়ে নেয়……কমড়ে গোজা শাড়ির বাকী অংশ টাও নিমেষেই খুলে নিলো সাদাদ……ঘন হয়ে আসছে নৌশিনের শ্বাসগুলো….শরীরে তীব্র থেকে তীব্র শিহরণ………
সাদাদ আর অপেক্ষা করলো না……নৌশিনের আঙ্গুলের প্রতিটি ফাঁকে নিজের আঙ্গুল ডুকিয়ে দিয়ে চেপে ধরলো বিছানার সাথে…….আস্তে আস্তে ঠোঁট দুটোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে….আরও কাছে,আরও তীব্র শিহরণ….এক সময় দু জোড়া ঠোঁট এক হয়ে যায়…
দুজনেই মেতে উঠে তীব্র প্রতিযোগীতায়….ভালোবাসার প্রতিযোগীতা💜💜💜💜💜..
একটা ভালোবাসার মাতলামোতে মেতে উঠেছে দুজনেই💜💜💜💜 একটা প্রেমের ইনফিনিটিভ ঘোর জুড়িয়ে রেখেছে দুটি প্রাণকে………………………………

ফজরের আযান ভেসে আসছে।নৌশিন সাদাদের বুকে ঘুমিয়ে আছে।সাদাদও নৌশিনকে বুকে জড়িয়ে বেভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।
আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নৌশিনের।মিটমিট করে চোখ খুলে তাঁকায়।সাদাদের উন্মুক্ত বুকে মাথা রাখতে যেন পৃথীবির সব চেয়ে সুখময় কাজের মধ্যে পড়ে,নৌশিনের কাছে।সাদাদেরর মায়া ভরা ঘুমন্ত মুখের দিকে তাঁকিয়ে থাকে নৌশিন…..বেশ খানিক সময় পাড় হয়ে গেলো…………
নৌশিন খুব সাবধানে সাদাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।
বেশ কিছুদিন ধরে নৌশিন সাদাদকে আগে ডাকে না।নিজে উঠে ফ্রেস হয়ে নিয়ে তারপর সাদাদকে ডাকে।না হয় সাদাদ যে ওকে ছাড়তেই চায় না।বরং দুষ্টুমি আরও বেড়ে যায়।

নৌশিন সাওয়ার টা সেরে নিয়ে চুল মুছতে মুছতে রোমে ডুকে।
সাদাদের পাশে বসে,চুলে হাত ডুকিয়ে আস্তে করে ডাকতে থাকে সাদাদকে।রোজ রোজ সকালে সাদাদকে ডাকা নৌশিনের বিশাল বড় একটা কাজ।এক দু ডাকে সাদাদ মহাশয়ের ঘুম কখনো ভাঙে না।
আজও একই কাহিনী।ব্যর্থ হয়ে নৌশিন ভেজা চুল গুলো ধরে সাদাদের মুখের উপর ধরে……চুল থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে সাদাদের চোখে মুখে………..চোখ মিটমিট করতে থাকে সাদাদ।
ঘুম ভেঙে যায় সাদাদের,চোখ খুলে নৌশিনকে দেখতে পায়….
মেরুন রঙের একটা শাড়ি পড়ে,সদ্য ভেজা কমল শরীরে দেখতে একটা ফুটন্ত গোলাপ তার সামনে বসে আছে…………
পাপড়ির উপর পরে থাকা শিশিরের মতো কালো ঘন চুল গুলো থেকে যেন শিশিরের বৃষ্টি পড়েছে।

সাদাদ নৌশিনকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের বুকে আনে।মুগ্ধ হয়ে দেখছে সাদাদ তার প্রিয়তমাকে।নৌশিনও চেয়ে আছে সাদাদের দিকে কিন্তু মেয়েটা বেশিক্ষণ তাঁকিয়ে থাকতে পারে না,লজ্জায় রাঙা হয়ে চোখ দুটো বেটে নেয়।
ছড়িয়ে থাকা ভেজা চুলগুলো কানের পাশে গুছে দেয় সাদাদ।কপালে ভালোবাসার এঁকে দিয়ে কমড়ে আরও শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে আরও কাছে আনতে চাইলে বাঁধা দেয় নৌশিন।সাদাদের নাক টা টেনে দিয়ে বলল,
“সাহেব,নো দুষ্টুমি উঠুন…..সাওয়ার নিন…..আর নামাযের জন্য তৈরী হন……”
“হবোই তো…..বাট তার আগে……..প্লিজ(নিজের ঠোঁটে লিক করে)…..”
“জ্বি না……উঠো তো……”
চোখ দুটু বন্ধ করে সাদাদ আবারও ঘুমের ভান করে বলল,
“তাহলে,সাদাদ ঘুমাবে এখন আর উঠবে আট টায়…….নামায পড়তে পারবে না সাদাদ…..আর তার জন্য দায়ী থাকবে তার একমাত্র বিয়ে করা বউ…….কারণ সে তার বরকে সাওয়ারের জন্য ইচ্ছা করেই উঠায় নি……….”
“আরেহ……আজব…..এটা কি ধরনের কথা???…….সাদাদ,এই উঠো না প্লিজ…..নামাযের সময় চলে যাবে তো……..”
“সাদাদ ঘুমাচ্ছে……”
“ঘুমালে কথা কি করে বলছো??”
“…………”

“ওফফফ……………”বলেই নৌশিন হুট করে সাদাদের ঠোঁটে আস্তে করে একটা লিপ কিস করে দেয়।চোখ মেলে তাঁকায় সাদাদ,ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,”কি ছিলো এটা????”
“ধ্যাত……উঠো না এবার…..প্লিজ….নামাযের সময় হয়ে গেছে……”
“আগে ডাকো নি কেন??সাওয়ার নিয়ে তারপর ডাকলে!!কয়েকদিন ধরেই তো দেখছি….নিজে আগে ভাগে উঠে তারপর আমাকে ডাকো……..হোয়াই??”
“কারণ আপনি যে খুব ভালো মানুষ তাই………”
সাদাদ এখনও আগের মতোই শুয়ে আছে….চোখ দুটো নৌশিনের দিকে……….. নৌশিনের আর কি করার!!শেষ মেষ সাদাদের দু কাধেঁ হাত দিয়ে টেনে উঠানোর চেষ্ঠা করছে নৌশিন…….কিন্তু তবুও যেন উঠাতে পারছে না বেচারী….”সাদাদ,বেশি হচ্ছে কিন্তু……প্লিজ উঠো…….”
“টেনে উঠাও……দেখি কত শক্তি আমার চড়ইপাখিটার….”
“প্লিজ জান…..এমন করে না…..উঠো।।।।নামায পড়তে হবে তো…….প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ………”
“হেয়……আস্তে….এতো প্লিজ…..,
(শুয়া থেকে উঠে বসে বলল,)গায়ে শক্তি নেই বাট মন গলানোর শক্তি ঠিকই আছে…..”
মুঁচকি হাঁসে নৌশিন,

“হ্যাঁ….সেটা আছে…..”
সাদাদের হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বলছে,
“তোমাকে ঘুম থেকে উঠানো যে এতটা প্যারা জানা ছিলো না…….আল্লহ্ ই জানে তোমার বাচ্চাদের উঠাতে যে কত কি করতে হবে……..”
“আচ্ছা!!!!বাচ্চা হোক একবার দেখো দুজনে মিলে কি হাল কি তোমার…….”
সাদাদের চোখের দিকে তাঁকায় নৌশিন,
চোখে স্পষ্ট চোখ রেখে বলে,
“দাও না একটা এনে…………যত খুশি পারো জ্বালিও দুজন মিলে…….কিচ্ছু বলবো না……….”
সাদাদ নৌশিনের ঘাড়ের পেছনে দু হাত বেধেঁ মৃদু স্বরে বলছে,

“বলেছিলাম তো দিবো……”
“এক্সাম তো শেষ আমার…….”
“আই নো বিউটিফুল লেডি…..এখন থেকে নো প্রটেকশন…….শুধু,……..”
নৌশিন খুশিতে দিশেহারা পুরো…..”সত্যি????তুমি রাজি??”
“রাজি তো ম্যাম…..তোমাকে জ্বালানোর জন্য…….বাট ভয় হয় সোনা,তুমি তো খাও না কিছু……”
“খাবো খাবো…..প্লিজ মা হবো আমি…….”
নৌশিনের এমন বাচ্চামো দেখে মুঁচকি হাঁসে সাদাদ……….
আর নৌশিন মহাখুশিতে আর লজ্জায় মুখ লুকায় সাদাদের বুকে…..আবার পর মুহুর্তেই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে,সাদাদকে উল্টো ঘুরিয়ে দিলো…..পিঠ ধরে ঠেলে দিয়ে বলছে,”এখন যান আগে সাওয়ার টা নিন…..একসাথে নামায পড়বো……..”
সাদাদ ই বা কি করবে!!!বাধ্য ছেলের মতো সাওয়ারেরর জন্য ডুকে যায়।

নৌশিন বিছানা টা সুন্দর করে গুছিয়ে নিলো এই সময় টুকুতে।সাদাদ বের হলে,ওযু করে এলো নৌশিন।দুজনে একসাথে নামায টা পরে নিলো………..এখন আর নৌশিন নামায পড়ে ঘুমায় না….পরীক্ষার আগে থেকে সাদাদ রাত দুটো অবদি পড়া আর সকালে জোর করে না ঘুমাতে দিয়ে পরিয়েছে তাই সকালের ঘুমানোর অভ্যাস টা এখন মুটামুটো চলে গেছে বললেই হয়।
নামায শেষে সাদাদ বিছানায় গা মেলিয়ে দেয়,নৌশিনকেও আবারও ঘুমাতে বলে কিন্তু নৌশিন না জানায়।কত দিন ধরে এ বাসায় এসেছে….কিন্তু সে রকম ভাবে কখনও কোনো কাজ করে নি….তাই পরীক্ষার পর থেকে রোজ সকালে কাকি শাশুড়ি আর রাফসার সাথে হাতে হাত লাগায় একটু।সকালে কাজের চাপ টা একটু বেশি থাকে,ওরা দুজনে মিলে সামাল দিতে একটু কষ্টকর হয়ে যায়।আর তার উপর তো রাফসার হাসবেন্ডের হাঁকাহাঁকি,অরূপের হাজার টা বায়না,প্রাপ্তির খাবারের তাগাদা আছেই।

সাদাদ বিছানা থেকে উঠে কোরআন শরীফ পাঠ করা শুরু করে।নৌশিন যায় সাদাদের জন্য কফি আনতে।
যেহেতু কোরআন পড়তে বসছে তাই আর ঘুমাবে না সাদাদ।সেজন্য কফি করা জরুরি তা না হলে সকালে সাতটার পর কফি খেতো সাদাদ।
!
নৌশিন সাদাদকে কফি দিয়ে চলে যায় আবার রান্না ঘরে।
রাফসা অলরেডি সকালের নাস্তা বানানো শুরু করে দিয়েছে।সকালে আবার এত লোকের আলাদা আলাদা খাবার বানাতে হয়।অরূপের টিফিন!!!এটাও করতে হবে রাফসার।কেউ রুটি তো কেউ পড়টা,কেউ সবজি খাবে তো কেউ গোস্ত আবার কেউ ডিম ভাজাও চায়।সকাল টা এরকম ই হরেক রকম রান্না করতে হয়……।দু জা মিলে রান্না করছে।প্রাপ্তির মা ও হেল্প করছে বউদের এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে,কাটা কাটি করে।
এমন সময় উপর থেকে দৌঁড়ে আসে অরূপ,পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর মা কে………
রাফসা বুঝতে পারে এই কমল ছোট্ট হাতের স্পর্শ টা কার…..প্রশ্ন করে অরূপকে,

“কি আব্বু,খুদা পেয়েছে তাই না???এই তো হয়ে গেছে…..”
“না….পায় নি তো……আমি কালকে বললাম না পাপড় খাবো….করেছো??”
চুলার আঁচ টা কমিয়ে দিয়ে ছেলের দিকে ঘুরে তাঁকায় রাফসা,মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে,
“আব্বু বলেছি তো করে দিবো……তুমি যাও একটু হোম ওয়ার্ক টা চেক করো করেছো কি না সব…….স্কুলে যেতে হবে তো……আমি আজকেই তোমাকে পাপড় ভেজে দিবো…..”
“আমি তো করে ফেলেছি সব আম্মু…….তুমি তো কালকেই রাতে দেখেছো……এখন করে দাও না আম্মু…..স্কুলে তো সবাই কালকে পাপড় খেলো ঐ দাদুটার কাছে কিনে…..তুমিই তো খেতে দিলে না।।।।এখন করে দাও….আমি খাবো…..না হলে আমি কিন্তু স্কুলে গিয়ে টিফিনও খাবো না………”
“বাবু,এমন করে না…..এই সকাল বেলা….কত কাজ বলো তো সোনা….আমি তোমাকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে তারপর করে দিবো…..ওকে??”

বাচ্চাটা মন খারাপ করে,মায়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
“আমার তো এখনি খেতে ইচ্ছে করছে….পরে কি আর খেতে ইচ্ছে করবে…….”
ছেলের এমন মুখ দেখে কোন মায়ের ভালো লাগে…..তাই তাড়াতাড়ি বলল,
“আচ্ছা,আচ্ছা আর মন খারাপ করতে হবে না করে দিবো…..তুমি যাও রোমে যাও আর তোমার আব্বুকে বল তোমাকে গোসল করিয়ে দিবে….তারপর আমি এসে রেডি করে দিবো……..”
“ওক্কে আম্মু……উমমমমমম্মা…….”
“ওলে বাবা….উমমমমমম্মা….যাও এখন…….”
“ওকে, নতুন বউ তুমিও খেও কিন্তু পাপড় ভাজা…খুব মজা….”
“আচ্ছা,বাবু খাবো…..তুমি যাও সাওয়ার টা করে ফেলো……”

সকাল সাড়ে সাত টা………….
দরকারি সব রান্না শেষ,এর মধ্যে যে কত বার সাদের জন্য রাফসাকে উপরে যেতে হয়েছে!!!গননার বাইরে,
বেচারা সব সামনেই থাকে তবুও যেন চোখে পড়ে না তার।সব কাজেই রাফসাকেই চায় ই চায় ই।
“ভাবী…..এতো তেল???পুরো পাঁচ লিটার মনে হচ্ছে……”
“লাগবে না কি???কতগুলো পাপড় ভাজতে হবে ঠিক আছে??”
“হুম…এতো পারো কি করে তুমি??”
“কই…কি এমন….. তুইও পারবি আস্তে আস্তে কর সংসার দেখবি না করলে ভালোই লাগবে না………”
“তোমার মতো আমি কোনো দিন ই পারবো না……”

এরমধ্যে রান্না ঘরে একজন সার্ভেন্ট আসে,রাফসাকে বলে,
“বড় ভাবী,ভাই বললো কালকে রাতে নাকি একটা ফাইল দিছে ঐ টা বের কইরা দিয়া আসতে……..”
বলেই সার্ভেন্ট টা নিজের কাজ করতে চলে যায়……
“আল্লাহ্…..এদের বাপ_বেটার জ্বালায় আমি শেষ……..”
“আহা….যাও না বউ মা…দেখো কি লাগে,ছোট বউ মা আর আমি তো আছি এখানে……”
“যাচ্ছি কাকি,এক কাজ করো তুমি এদিকে আসো….আর নৌশিন প্লিজ একটু অরূপের টিফিন টা ভরে দে….দেখ সব করা আছে আমি বাচ্চা টার ব্যাগ টাও গুছিয়ে দিয়ে আসছি……..”
“আরে যাও তুমি…..দেখছি বললাম তো……”(প্রাপ্তির মা)

রাফসা উপরে চলে যায়।ফাইল টা আলমারিতেই ছিলো,সাদ ইচ্ছে করেই নেয় নি……রাফসা না দিলে নিতোও না……..আর অরূপকে যে ওর আব্বু গোসল করিয়ে দিয়েছে এই পর্যন্তই….এখনো টাওয়েল প্যাঁচিয়ে বিছানায় বসে আছে………….সেটা কেও সামলাতে হবে এখন☺☺☺

খাবারগুলো টেবিলে রাখছে একজন সার্ভেন্ট……নৌশিন সাদাদের টিফিন টাও রেডি করে রেখেছে………রিদি রান্না ঘরে এসেছে নিজের রোজকার লেবু আর মধুর শরবত টা নিতে…….মেয়েটার সব কিছুতেই যেন তাড়াহুড়া……এসেই সার্ভেন্টদের সাথে রাগারাগি শুরু করে দিয়েছে……..একটু দেরী হয়েছে লেবু আর মধু দিতে তাই……..রাগে আগের শরবত টা ফেলে দিয়ে নিজেই বানাতে শুরু করলো…………….
কেউ কিছু বলে না ওর এই ব্যবহারে…সবাই জানে এই মেয়ে টা একটু এমনি…………….
বেশ কয়েকটা পাপড় ভেজে ফেলেছে প্রাপ্তির মা…………..
এর মধ্যে প্রাপ্তি কলেজে যাবে খাবারের জন্য তাড়া দিচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে পাপড়ের দায়িত্ব টা নৌশিন কে দিয়ে যায়………
চুলার আঁচ তো কমানো…কিন্তু পাঁচ লিটার ফুটন্ত তেল যে টগবগ করছে খুব……নৌশিন খুব সাবধানে কাজ করছে,ফুটন্ত তেল একবার যদি গায়ে পরে এক ফোটাতেই কাজ সারবে……….আর তারউপর যে বড় কড়াই পাপড় ভাজার!!!!!

হঠাৎ কিছু একটা পড়ার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়….তার সাথে বিশাল একটা আর্তনাদ,”আললললল্লাহ্ গোোোোোোোোো…………”
মুহুর্তেই আবারও কিছু শব্দ….কাঁচের শব্দের মতো…..সাথে আরও একটা চিৎকার,
“ও মমমমমমমমমমাাাাাাাাাাা………..”
!

অরূপকে ঠিক ঐ সময় টাতেই ওর মা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী করে নাস্তা কারা জন্য নিচে পাঠায়।আর বাচ্চাটা তার নতুন বউয়ের কাছে যাচ্ছিলো রান্নাঘরের দিকে।এমন চিৎকার আর আতঁকে উঠার ঘটনা দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে যায়।

রান্নাঘর থেকে আসা চিৎকার শোনে রাফসা,সাদ,প্রাপ্তির মা দৌঁড়ে আসে।এরমাঝে অরূপও কান্না শুরু করে দিয়েছে।
রাফসা কোনো মতো তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরের দিকে যেতে নিলেই নিজের ছেলেকে রান্নাঘরের দরজায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করতে দেখে।
রাফসার প্রাণ যেন সাথে নেই।ছেলে যেভাবে কাঁপছে!
ছেলের কাছে ছুটে যায়…পেছনে সাদও,
অরূপকে জড়িয়ে ধরবে,তার আগ চোখ যায় রান্নাঘরের মেজের দিকে।
সারা ফ্লোরে তেল ছড়িয়ে গেছে তার উপর একটা কাঁচের বাটিও ভাঙে পড়ে আছে।আর তার পাশে হতবিম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে রিদি।
কিন্তু পাশেই যে নৌশিন ফ্লোরে বসে আর্তনাদ করে যাচ্ছে তার হুঁশ মনে হয় রিদি র নেই।দর্শক আয়নের মতো গরম-ফুটন্ত তেল,ভাঙা কাঁচ আর নৌশিনের পায়ের বিক্রিয়া দেখে যাচ্ছে সে।
রাফসার কি আর ছেলের প্রতি নজর দেওয়ার সময় আছে নাকি,ছেলেকে রেখেই নৌশিনের কাছে ছুটে যায়।
এত গরম তেল পুরোটাই ডান পায়ের উপর পড়ে গেছে।আর তার উপর কাঁচের বাটি টাও পায়ের উপর কড়াই সহ পরেছে।
গরম পানি পড়লেই তো জীবন চলে যায়।আর এটা পাঁচ লিটার ফুটন্ত সয়াবিন,তাহলে কি অবস্থা হতে পারে!!!
কাঁচের বাটি নিয়ে কড়াই টাও পায়ের উপর পড়ায়,পুরে যাওয়া পা টা তে ব্লেডিং ও হচ্ছে।

প্রাপ্তির মা চর সাদও যেন নিজেদের মধ্যে নেই।
পা টা পুরো কালো হয়ে ফুসকার মতো হয়ে গেছে আর সেটা কাঁচ ভাঙা-কড়াইয়ের চাঁপে থতলে গেছে একদম।

রাফসা জড়িয়ে ধরে নৌশিনকে।নৌশিন ঢলে পড়ছে একদম……..চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে………..একটু আধটু পা না পুরো পা যেটুকু শাড়ির বাইরে থাকে সব টার অবস্থা মারাত্মক।
“ও…..মা……..মা…… উহুুু।।।।।……..”কাঁদতে থাকে নৌশিন……….
সার্বেন্ট রাও ছুটে আসে……
প্রাপ্তির মা নৌশিনের কাছে গিয়ে কাঁপা গলায় বলছে,
“আল্লাহ্ গো…….মা রে তুল ওকে…..সাদ ধর ওকে……হাসপিটালে নিতে হবে……উঠা উঠা……..”
সাদ অরূপকে একজন সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে কোনো কথা না বলেই নৌশিনকে কোলে তুলে রান্না ঘর থেকে ড্রয়িং রোমে নিয়ে আসে।

ছুটে আসে সাদাদের বাবা মাও……।
“আল্লাহ্ গো…….কি হলো এটা…….” এক চিৎকার দিয়েই ছেলের বউয়ের পাশে বসে পরে………..
নৌশিনের সারা শরীর ঘেমে গেছে….শুধু পুরলে না হয় কথা ছিলো এ যে পুরা জায়গাটাতে থতলে গিয়ে অনবরত রক্তও পড়ছে।
“আরে কেউ একজন সাদাদকে তো ডাকো…….”(রাফসা নৌশিনের পাশে বসে)
সাদাদ ওয়াশরোমে গোসল করছিলো সে সময় তাই বাড়ির এতো চিল্লাচিল্লি ওর কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি।
প্রাপ্তি যায় সাদাদকে ডাকতে,বুঝতে পারে যে সাদাদ ওয়াশরোমে………
ডাকা ছাড়াই ওয়াশরোমের দরজায় থাপ্পর দিতে থাকে………
ভেতর থেকে সাদাদের আওয়াজ আসে,
“আরে সাওয়ার নিচ্ছি নৌশিন,ওয়েট করো……”
আরোও জোরে বারি দেয় প্রাপ্তি……সাদাদ ভাবে নৌশিন তাই টাওয়েল পেঁচানো অবস্থাতেই হাঁসি মুখে দরজাটা খুলে দেয়….

প্রাপ্তি হাঁপাচ্ছে…..
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে সাদাদ,
“কি রে বোন???কি হয়েছে এমন দেখাচ্ছে কেন???”
প্রাপ্তির মুক দিয়ে কথা বের হচ্ছে না…….
সাদাদ আবারও বললো,
“কি হয়েছে বল???এনিথিং রং????”
“ভা….ভা….ভা….ববব…..”
“কি??ভালো করে বল….”
“পু রে গে….. ছে…..”
“পুরে গেছে???”
মাথা নাড়ায় প্রাপ্তি…..
“কি পুরে গেছে???”
“ভা……বী…..”
চমকে উঠে সাদাদ….”মানে???”
“ছোট ভাবী পু পু রে গেছে……”
“ওয়াট????”
“আসো তুমি “বলেই প্রাপ্তি দৌঁড়ে রোমের বাইরে চলে আসে……..সাদাদও নৌশিনের পুরার কথা শোনে সে অবস্থাতেই নিচে নেমে আসে প্রাপ্তির সাথে।

কিন্তু এসে যা দেখলো তারজন্য সাদাদ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না………….
নৌশিনের পা একদম দেখা যাচ্ছে না,যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।আর এতটুকু সময়ের মাঝে সবকিছু মিলিয়ে নৌশিনের সেন্স নেই বললেই চলে…..শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর পা দিয়ে রক্ত…..নিতিয়ে পড়ে আছে রাফসার বুকের উপর।
সাদাদ পাগলের মতো নৌশিনের কাছে যায়….
“এই কি করে হলো এটা???”
নৌশিন মিটমিট করে চোখ খুলে সাদাদের দিকে এক নজর দেখলো শুধু……….
সাদাদ জড়িয়ে ধরলো নৌশিনকে,
“এই কিচ্ছু হবে না……সব ঠিক হয়ে যাবে…….ভাবী করো কিছু…”
কাঁপতে কাঁপতে বললো সাদাদ………
“হাসপাতাল এ নিতে হবে….কাঁচ আছে ওর পায়ে….গাড়ি বের করতে বলো কেউ…..”
সাদাদ বাবা নিজেই গাড়ি বের করার জন্য বের হয়ে যান।
পুরো বাসায় কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেছে।
“সাদাদ,ছাড় ওকে যা শার্ট পেন্ট টা জলদি পড়ে আয়…..”
সাদাদ যেন দিকবিদিগ শুন্য হয়ে গেছে।নৌশিনের এমন অবস্থা সাদাদ কখনো মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত না।
প্রাপ্তির রোম থেকে শার্ট আর পেন্ট নিয়ে এলে সাদাদ ড্রয়িং রোমেই সেগুলো পরে নেয়।
নৌশিনের সেন্স চলে গেছে আর অরূপ ওর বাবার কোলে থেকেও রীতিমতো কাঁপছে,সাথে কান্না তো থামছেই না।

সাদাদ নৌশিনকে কোলে করে নিয়ে পাগলের মতো দৌঁড়ে গাড়িতে উঠায়।
রাফসাও যাচ্ছে……অরূপকে ওর বাবা আর প্রাপ্তির মা সামলাচ্ছে।
সাদাদের মায়ের অবস্থা আরও বেশি খারাপ…..বিলাপ শুরু করেছেন তাঁর আদরের বউ মায়ের জন্য,সার্ভেন্টরা তাঁকে সামলাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে।
“ও জেঠি মনি…..কিচ্ছু হবে না ভাবীর দেখো……প্লিজ কেঁদো না এভাবে….তোমার তো শরীর খারাপ করবে এমনিতেই প্রেসার ঠিক নেই……..”

“আল্লাহ্ গো….ওর মা-বাবার কাছে আমি কি জবাব দিবো…..আল্লাহ্…..মেয়ে টার কত কষ্ট হচ্ছে…….. ”
কান্নায় ভেঙে পড়েছে সাদাদের মা…..ঠিকমতো কথাও বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে…….আবারও বলা শুরু করলেন…..,
“বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকেই একটা না একটা দুর্ঘটনা ওর সাথে হচ্ছেই……আমি মা হয়ে মেয়েকে সামাল দিয়ে পারতেছি না….খেয়াল রাখতে পারতেছি না………এর্লাজি হয়,বেঁহুস হলো কিচ্ছু জানানো হয় নাই ঐ বাড়িতে এখন আমি কি জবাব দিবো……..”
“ভাবী,তুমি এমন অবুঝ হইয়ো না……বুঝার চেষ্ঠা করো…..”
“কি বুঝবো…… আমি কি জবাব দিবো আমার ছেলের কাছে…….আমি তো কিছুই বুঝতেছি না…..কি কষ্ট টাই না পাইতেছে গো মেয়েটা……..একটু তেল ছিটা গেলেই তো শরীরে জ্বালা শুরু হয় আর পা টা কি হইছে…..মা আমার ঙ্গানও হারাই ফেলছে……আল্লাহ্……প্রাপ্তি শরীফ কে বল গাড়ি বের করুক…..আমি যাবো এখনি…..আমাকে নিয়ে কেন গেলো না ওরা…..আমার কোনো কথা শোনে না……….তাড়াতাড়ি যা……..”
“ভাবী,ভাবী…..শুনো বসো আগে।।।।কোথায় যাবে তুমি???গেলো তো ভাইজান,সাদাদ আর রাফসা তো আছে সাথে….আমি প্রাপ্তির বাবাকে ফোন করে দিয়েছি সে ও যাবে……তুমি চুপচাপ বসো তো……..”
“কি ব্যথা পাইতেছে গো……..দেখ ফ্লোরে কত রক্ত……..আল্লাহ্….ও আল্লাহ্ তুমি কেনো এত বড় ব্যথাটা দিলা আমার মা টা রে………”

মায়ের মন মানে না…..কোনো ভাবেই কেউ সাদাদের মা কে সামাল দিতে পারছে না…….
প্রাপ্তির মা জোর করে রোমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়…………
অরূপকে ওর বাবা আর প্রাপ্তি অনেক সলাকলা করে আয়ত্বে আনার চেষ্ঠা করছে।।।।।কিন্তু ছেলের যে এক বুলি,
“নতুন বউ যাবো……..আম্মু যাবো……..নতুন বউ যাবো,আম্মু যাবো…….”

এদিকে নৌশিনকে অলরেডি ক্লিনিকে এডমিট করা হয়ে গেছে……..
ডাক্তার তো পা দেখে শকড!
পুরা টা এক ব্যাপার ছিলো কিন্তু এ যে থেতলে একদম শেষ……ঐ যে কড়াই টা পড়েছিলো পুরা পায়ের উপর তার জন্য এমন থেতানো অবস্থা….আর সব চেয়ে বড় সমস্যা পুরা জায়গাটাতে কাঁচ ও ডুকে আছে যেটা সব চেয়ে বেশি কষ্ট দায়ক নৌশিনের জন্য…………..
সাদাদের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,ভাবতেই পারছে না একটু আগের হাঁসিখুশি মুখ টা…………কেনো এমন হলো!!
ওর কষ্ট তো সাদাদ দেখতে পারে না……..সাদাদের বাবা তো শুধু আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছেন আর ছেলেকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন…………………
নৌশিনকে ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে তাই ডাক্তারা শুধু রাফসাকেই কেবিনের ভেতরে এলাও করেছে….সাদাদ,সাদাদের বাবা কাউকে ভেতরে ডুকতে দেয় নি বিশেষ করে রাফসা জোর টা বেশি করেছিলো যেন ওরা ভেতরে না ডুকে….

নৌশিনকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
পা যতটুকু কেটেছে সেটুকু নরমালি কাঁটলে তিন থেকে চারটা সিলি লাগাতো।কিন্তু পা তো পুরে গেছে ভয়াবহ ভাবে তাই সেখানে সিলি করার কোনো উপায় নেই।
ঢুকে যাওয়া কাঁচের টুকরাগুলো বের করে জাস্ট ড্রেসিং করে দিয়ে মেডিসিন লাগানো হয়েছে তার উপর।
পুরা+কাঁটা….পুরার কারণে বেন্ডেজও করা সম্ভব না।
অনেক আগেই তো নৌশিন ভয় আর ব্যাথায় অঙ্গান হয়ে গেছে।তাই যেন আপাতত ব্যাথার সম্মুখীন হতে না হয় সে জন্য ঘুমের ইনজেকশন।

সাদাদ নৌশিনের বেডের পাশে মাথা নিঁচু করে বসে আছে।
আর নৌশিনের কাল রাতের কথাগুলো ভেবে তাঁর ভেতর টা চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে……….
“””আচ্ছা,সাদাদ শোনো না পরশু তো রাঙামাটি যাবো…..আমি তো আগে কখনো যাই নি…….তুমি কিন্তু বারণ করতে পারবে না যে ওখানে যেও না এখানে যেও না…..আমি সব ঘুরে ঘুরে দেখবো…….”
“সেটা আমি পরে দেখে নিবো……..”
“এই না…..প্লিজ প্লিজ…….আর আমার কিন্তু সেখানকার বাঁশ কোরল চাই ই চাই…….”
“সেটা দেওয়া যাবে……”
“এই তুমি এমন করে কথা বলছো যেন তোমার কোনো আগ্রহ ই নেই………”
নৌশিনের দিকে চেয়েছিলো সাদাদ,মুঁচকি একটা হাঁসি দিয়ে বলেছিলো,
“আমার তো একটা জিনিসেই যত আগ্রহ…..”
বুঝতে পেরেছিলো নৌশিনও….তাই তো সাদাদের বুকে ঘুষি দিয়ে বলেছিলো,
“ধুর….আমি বলি কি আর সে বলে কি……তোমার খালি…..”
সাদাদ জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,

“আমার খালি তুই রে নৌশিন……..”
“বলছি যে…….. আজ তো কোনো প্রটেকশন হয় নি…..তো আজকের জন্য তো আমি মা হয়ে যেতে পারি……..”
“হেয়…….এতো বাচ্চা চাই তোমার???”
“হ্যাঁ চাই…..তুমি জানো আমি বিয়ের আগে ফ্রেন্ডসদের বলতাম’আমার বিয়ে না হোক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু বেবী তো চাই চাই……'”
সাদাদ তো অবাক………চোখ কপালে তুলে বললো,
“বিয়ে ছাড়াই বাচ্চা!!!”
“আরে না না তুমি যা ভাবছো তা না,আমি তো ওদের জাস্ট এটা বুঝাতে চেয়েছিলাম যে আমি বাচ্চা কতটা ভালোবাসি…….”

“তাই বলে এই কথা বলবা…….আচ্ছা!ধরো তোমার বিয়ে যদি না হতো তবে বাচ্চা কোথা থেকে আসতো??”
“উহু….সাদাদ তুমি না…….এখন চাইলে যে কেউ মানে যে কোনো এডাল্ট মেয়ে মা হতে পারে তবে সেটা হবে টেস্টটিউব বেবি……..বুঝলা??”
“হায় আল্লাহ্…….বলে কি বউ আমার…..শেষ মেষ টেস্টটিউব বেবী নিবে নাকি!!!”
“ধ্যাত……থামবে তুমি…..যেটা বলি আগে শোনো সেটা…….ধরো কারও হাসবেন্ড আনএবল তো ক্ষেত্রে তো হয়….নাকি???আর আমি তো জাস্ট কথার কথা বলছিলাম……….”
“তারমানে আমি অক্ষম নাকি??”
“আল্লাহ্।কি সব বলো না বলো।।।।।আমি বলছি বিয়ে না হলে বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে……..আর তুমি……..”
“হুম।।।।।বুঝলাম আর মন খারাপ করতে হবে না।।”
“ওকে…..এই শুনো না।।।।”
“বলো না…….”

“বলছি যে আমি না পাহাড়ে খুব বেশি উঠতে পারি না।।।।উইল ইউ কেরি মি?”
“ওয়াট ইউ সে মাই ডিয়ার আম এলোয়েজ রেডি ফর দেট…….ইউ নো না?”
“হুম।তা জানি…..বাট সাদাদ আমার না এবার একটা বেবি চাই ই চাই……এই যে আজ যেমন কোনো প্রটেকশন ছাড়া ই হলো সবকিছু।।।।।তুমি তো সেখানে গিয়েও তোমার দুষ্টুমি গুলো ছাড়বে না সো আমি চাই……..”
“এই ওয়ান মিনিট,ওয়ান মিনিট……কি বললি তুই….??সেখানে গিয়ে আমি দুষ্টুমি ছাড়া থাকবো না মানে কি?আমি কি সেখানে সাধু বেশে যাবো…???… ”

সাদাদ নৌশিনকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,”যাবো তো তোকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবাসা দিতে………..আর আমাদের প্রেমঘোরে ছোট্ট একটা ভালোবাসার আগমনের জন্য………”
“আমি খুব করে চাই…….দুটো নরম হাত,ছোট্ট দুটো পা……আমাদের দুজনের মাঝখানে হামাগুড়ি দিয়ে যখন আসবে,কতটা মায়া কাজ করবে তার প্রতিটা ছোয়াতে!!!!”
“পাগলী একটা…….তোমার মতোই কিউটি হবে দেখো…..”
“উমহু…..তোমার মতো ডেসিং আর সুঠাম হবে আমাদের ছেলে টা……..”
“নো ওয়ে……আমার তো মেয়েই চাই……….”
“যাও তো…..দোয়া করো যেন ছেলে হয়……”
“দোয়া যদি করতেই হয় তবে এটা কবর যে ‘আল্লহ্ আমার ঘরে একটা জান্নাত দিও না'”
নৌশিন আর কিছু বলে নি……
পরশ সুখে সাদাদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো……….

কিছুক্ষণ পর নৌশিন আবার বলা শুরু করলো,
“সাদাদ,তুমি যে কালো মেকাপ টা এনে দিলে অনেক দিন হয়ে গেলো……..আমি রাঙামাটি গিয়ে কালো সাজবো…….”
“ওরে আমার হুরপরি….মনে আছে তোমার??আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোমার কালো সাজের কথা……”
“হুম….সারা দিন মাথায় কাজ ডুকিয়ে রাখলে তো ভুলে যাবেই…….বাট আমার ক্ষেত্রে তো তা না-তাই আমার সবি মনে থাকে……”
“আচ্ছা!!!…….”
“হুম……”
“ঘুম পাচ্ছে??”
“একটু একটু…..আর তুমি তো মাথায় মাথা বুলিয়ে দিচ্ছো তাই বেশি বেশি পাচ্ছে……”
“আচ্ছা…..ঠিক আছে….অনেক রাত হয়ে গেছপ আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন…….”
“তুমিও ঘুমাও…..”
“ঘুমাবো…..আমার হুরপরি টার ঘুমন্ত ঘুম আমার বুকের উপর দেখতে যে আমার খুব ভালো লাগে……….”
“পাগল……..”
“তোর জন্য……..”
“আচ্ছা….একটা কোয়েশ্চেন…..”
“সিউর……”

“আমরা যে দিন ফরজ গোসল করি……আমি খেয়াল করেছি তুমি অফিসে যাওয়ার আগে আবার গোসল করো….কেন???সকালে দু বার করার কি দরকার??”
“সেটা অভ্যাস হয়ে গেছে অফিসে যাওয়ার আগে গোসল করা…..আর এখন গরমকাল সকালে দুবার ব্যাপারি না…..”
“তোমার জন্যই সম্ভব এক বেলাতে দুবার গোসল করা….আমি তো ঠান্ডা লেগেই ভুতুম হয়ে যেতাম…..”
“হা হা হা হা হা……পাগলী ঘুমা এখন……”
“হুম……”
তখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো নৌশিন সাদাদের বুকে…..সাদাদ নৌশিনের ঘুমন্ত মুখটা নিজের বুকের উপর রেখেই কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে নিজেও তলিয়ে গিয়েছিলো ঘুম রাজ্যে……………………….

কল্পনা থেকে ফিরে আসে সাদাদ…….যে মেয়ে কাল রাতেও কতটা হাঁসি মুখে ঘুমাচ্ছিলো আর আজ সকালে!!
কত আশা করেছিলো নৌশিন কালকের রাঙামাটি ভ্রমণ টা নিয়ে……..ঘুম থেকে উঠেই তো আপসেট হয়ে যাবে,ভাবতেই সাদাদের এলোমেলো লাগছে….আর তার উপর পায়ের কনডিশন দেখে তো ভেতরে স্লাইকোন বয়ে যাচ্ছে….

ঐদিকে সাদাদের বাসায়…….
সকাল এগারোটা বেজে গেছে কেউ পানি টা পর্যন্ত খায় নি…..শুধু মাত্র রিদি ব্রেড আর বাটার খেয়ে সবার আগে নিজের কর্মস্থলে চলে গেছে…..
তার কাছে রোজকার দিনের মতো আজও একটা সাধারণ দিন বরং তার চেয়েও অনেক ভালো একটা দিন……………….
অরূপকে খাওয়ানোর জন্য ওর বাবা অনেক রকম চেষ্ঠা করে যাচ্ছে কিন্তু বাচ্চা কোনো রকমেই খাচ্ছে না…..প্রাপ্তি রান্না ঘর থেকে ভাজা পাপড় গুলো এনে দিলেও মুখে পর্যন্ত তুললো না অরূপ…..বরং পাপড় দেখে কেমন একটা ভাব নিয়ে ওর বাবাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যেন খুব ভয় পেয়ে গেছে……কেউ আর জোর করলো না…..স্বাভাবিক করার জন্য টিভিতে কার্টুন অন করে দিলো সাদ,প্রাপ্তির কোলে দিতে চাইলে গেলো না সে…..বাবার কোলে বসেই বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টিভির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে আছে-অন্যদিনের মতো লাফালাফি করছে না আজ……না হলে এমনিতে তো কার্টুন দেখে সারা বাড়ি হাঁসতে মাতিয়ে রাখে…………….

ঘড়ির কাঁটা একটা ছুঁই ছুঁই সাদাদ এখনও আগের মতোই বসে আছে….ওর বাবাকে জোর করে অফিসে পাঠিয়ে দেয়….প্রাপ্তির বাবাও এসেছিলো – নৌশিনের এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যান খুব….তবে সাদাদের জোরাজোরিতে তাঁকেও অফিসের দিকে ছুটতে হয়…….
সাদ ফোন করে অরূপের অবস্থা জানানোতে রাফসা সাদাদকে সবকিছু বলে বাসায় চলে এসেছে………….
মা কে দেখা মাত্রই অরূপ ওর বাবার কোল থেকে নেমে মায়ের কোলে চড়ে বসে…….
গলায় জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে…….ঘাবড়ে যায় রাফসা,তাঁর ছেলে তো এমন করে কখনও কাঁদে না…..
হাতে রাখা ব্যাগটা সাদের হাত দিয়ে….ছেলের মুখ উপরে তুলার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে রাফসা,
“বাবা,দেখি……. বাবা আমার কাঁদে না……….সোনা বাবা…..দেখি দেখি……”
অনেক ছলাবলায় মায়ের কাঁধ থেকে মুখতুলে অরূপ………..

“আল্লাহ্…..আব্বু….কি হয়েছে তোমার???এতো কেঁদেছো তুমি???মানিক আমার খাও নি কেন এখনও…..”চুমু দিয়ে ভরে তুলছে ছেলের মুখ…………
ছেলেকে নিয়ে সোফায় বসে রাফসা,
মাকে পেয়ে আগের চেয়ে অনেক টা স্বাভাবিক সে….কাঁদছে না কিন্তু চোখে মুখে কেমন একটা ভয়ের ছাপ দেখতে পারছে তার মা……….
“আব্বু,খাবে না???”
মাথা নাড়িয়ে না জানায় অরূপ……
“কেন আব্বু?সেই সকাল থেকে তো কিচ্ছু খাও নি……… ”
“খাবো না……”
“কেন বাবা……আমি তো খাইয়ে দিবো……”
“উমহু…..নতুন বউ আসলে খাবো…….”
“তুমি খেয়ে নাও তোমার নতুন বউয়ের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে……..”
“আগে নিয়ে যাও…..”
“তুমি যদি না খেয়ে যাও সেখানে তাহলে তোমার নতুন বউ তো তোমার সাথে কথাই বলবে না…….আচ্ছা,তুমি পাপড় খেয়েছো.?”

“না খাই নি….ঐ পাপড় পঁচা খাবো না আমি…….আমার খুদা পেলো যে ভাত খাবো একটু পরে নতুন বউ যাবো…..”
“এই তো আমার সোনা বাবা……..মিতু(সার্ভেন্ট) আমার সোনাবাবার জন্য ভাত আর ডিম পোস নিয়ে আয় তো……”
বলতে বলতে ভাত আর এগ পোস নিয়ে হাজির হয় মিতু…..
অনেক চেষ্ঠা করে তিন চার নোলা ভাত খাইয়ে…..ঘুম পাড়িয়ে দেয় অরূপকে…………

নৌশিনের ঘুম ভাঙলে…..উঠে বসতে চায়….সাদাদ আস্তে করে ধরে বসিয়ে দেয়…….নিজের পায়ের দিকে তাঁকিয়ে ভয় পেয়ে যায় নৌশিন…..অনেক জ্বালাও করছে……সাদাদকে ধরে ডুঁকরে কেঁদে উঠে সে…………..
“জান,জান…..প্লিজ কেঁদো না…..”
“আমার পা……”
“কিচ্ছু হবে না…..সব ঠিক হয়ে যাবে……..”
নৌয়িনকে শান্ত করে সাদাদ জোরপূর্বক খাবার খাইয়ে দিলো তাঁকে……ডক্টর এসে মেডিসিন দিয়ে যায়………….
আবারও শুয়ে আছে নৌশিন..
পা টা নাঁড়াতেই পারছে না……
সাদাদ টুলের উপর বসে নৌশিনের সাথে গল্প করছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে যাতে করে নৌশিনের মনোযোগ তার পায়ের দিকে না থাকে………..

হসপিটাল থেকে জানায় নৌশনকে বেশ কয়েক দিন এখানে ভর্তি থাকতে হবে।
না হলে পায়ের যা অবস্থা যে কোনো মুহুর্তেই সেফটি ধরে যাবার ভয় আছে।
বিকালের দিকে সাদাদের মা,প্রাপ্তি,রাফসা আর অরূপ নৌশিনকে দেখার জন্য আসে।
ভিজিটিং আওয়ার জেনেই এসেছে সবাই…….তাছাড়া হসপিটালের বেশির ভাগ ডাক্তার রাফসার চেনাশোনা হওয়ার কোনো প্রকার জোরাজোরি ছাড়াই সবাই একসাথে কেবিনে ডুকতে সক্ষম হয়।
নৌশিন ঐ সময়েও ঘুমাচ্ছিলো।
পায়ের ব্যাথার জন্য পেইন কিলার দেওয়া হয়েছে এজন্যই এতো ঘুম।সাধারণত যে কোনো ব্যথার ঔষধ,এর্লাজির ট্যাবলেট এগুলো খেলে ঘুম একটু বেশিই হয়।
সাদাদের মা তো পা দেখে হুড়মুড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে….
প্রাপ্তির চোখেও পানি এসে গেছে……আসার কথাই তো!

সকালে তো জাস্ট কালো দেখা গিয়েছিলো আর রক্ত….আর এখন পুরা জায়গাটা মিনিমাম দুই ইন্সি ফুলে গেছে,সাথে কাঁটা অংশ বিশাল হা হয়ে আছে……ভেতরের লাল চামড়া ভেদ হয়ে সাদাদ গোস্তও ফাঁক হয়ে আছে জাগয়াটুকুতে………
সবার এমন অবস্থা দেখে অরূপও কান্না শুরু করে………..
রাফসা তাড়াতাড়ি ছেলেকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে…………
একজন নার্স এসে সাদাদকে কিছু প্রেসক্রাইব করে যায়……
রাফসা সেগুলো একজন কমপাউন্ডারকে দিয়ে আনিয়ে নিলো এমন সময় প্রাপ্তির বাবা,সাদ এরাও আসে……..
এক এক করে সবাই নৌশিনকে দেখে যাচ্ছে………

সবাই বাইরে ওয়েটিং রোমে বসে আছে…..কি থেকে হয়ে গেলো…..যা অবস্থা নৌশিনের মিনিমাম দশ-পনেরো দিন হসপিটালে থাকতে হবে…..পুরা তার উপর সিলাইছাড়া কাঁটা টা বাসায় নেওয়া মানে সেফটি ধরানো পায়ে…..আর পুরুপুরি সুস্থ হতে দেড় মাস তো লাগবেই…….
“আচ্ছা,আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝলাম না….এত দিন হলো নৌশিন তো এমন হালকা কাজ কখনো করে না…..সব কাজ গুছানো ওর….তাহলে এত বড় একটা কড়াই ওর পায়ে কি করে???”(প্রাপ্তির বাবা)
“আমারও এক প্রশ্ন…..নৌশিন তো গা ছাঁড়া কাজ করে না….আর ধরলাম হঠাৎ হয়ে গেছে তবুও সবটা তেল ওর পায়ে দেন আবার ঐ জায়গাতেই কাঁচের বাটি পড়লো তারউপর এত ভারী একটা লোহার কড়াই……ভাবা যায়!!!!হাউ কেন ইট পসিবল???”(সাদ)
“আমার মাথায় কিচ্ছু ডুকছে না…..কড়াই টা তো আর পাতলা না যে হাতের একটু ছোঁয়া লেগে অসাবধানতার কারণে পরে যাবে……আর সাদ,তোমার মনে আছে দাদী গ্রামের বাড়ি থেকে যে কড়াই টা গতবার আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিলো??”(রাফসা)
“হ্যাঁ,আসার সময় কড়াই টা তো মেপেও আনলাম আমি…বড় মায়ের রেখে যাওয়া কড়াই……সাড়ে তিন কেজি ওজন…… ”

“হ্যাঁ…সেটাতেই পাপড় ভাজা হচ্ছিলো……আর তাতে আমি পুরো পাঁচ লিটারের গেলন টা ঢেলেছিলাম…..তাহলে সাড়ে তিন কেজি প্লাস পাঁচ লি. টোটাল ওজন ছিলো সাড়ে আট……তোমাদের কি মনে হয় নৌশিনেরর মতো মেয়ের একটু হাতের ছোঁয়াতেই সেটা পড়ে যাবে????”
“মানে কি বউ মা,তুমি কি বুঝাতে চাইছো???”
“আমি কিছু বুঝাতে চাইছি না কাকা….আমি নিজেই তো কোনো হিসাব মিলাতে পারছি না……….”
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ালো সাদ………
রাফসা ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিলেই সবাই বাসায় চলে যাবে……..সবাই সে জন্যই বসে আছে…………….
রিদও সরাসরি অফিস থেকে নৌশিনকে দেখার জন্য হাসপাতালে এসে যায়……..
ওয়েটিং রোমে সবাইকে দেখে বেশ চিন্তিত একটা ভাব নিয়ে প্রশ্ন করে,
“নৌশিন কেমন আছে???”
“কেমন আর থাকবে……যাও দেখে আসো……”(রাফসা)
রিদি কেবিনের দিকে পা বাড়াতেই অরূপ হঠাৎ কি মনে করে ওর মায়ের কোল থেকে বিদ্যুৎ গতিতে নেমে এসে পথ আগলে দাঁড়ায় রিদির………

মুহুর্তেই বাচ্চা ছেলেটার মুখের সমস্ত ভয়ের ছাপ রাগে পরিণত হয়েছে….এই ভয়-রাগের ক্রিয়া টা আর কেউ বুঝুক না বুঝুক রাফসা বুঝে গেছে……….
অরূপ চোখ দুটো বড় করে তাঁকিয়ে আছে রিদির চোখের দিকে….এমন একটা ভাব যেন রিদি মস্ত বড় কোনো ক্রিমিনাল আর তার তদন্তকারী হচ্ছে এই ছোট্ট বাচ্চা ছেলেটা…………
অরূপকে এমন করতে দেখে রিদি একটু নিঁচু হয়ে….অরূপের মুখের সামনে মুখ এনে বললো,
“আব্বু,যেতে দাও আমায়….তোমার নতুন বউকে একটু দেখে আসি……..”
কথা বলা শেষ হতেও একটু সময় লাগলো কিন্তু ওর মুখে অরূপের দু হাতের খামচি পড়তে একবিন্দু সময়ও লাগলো না……….
দু হাতে বেজির মতো খাঁমচে ধরেছে অরূপ রিদিকে…………

“তুমি পঁচা….তুমি পঁচা…….পঁচা…..পঁচা………”
রিদি কোনো মতো নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো অরূপের কাছ থেকে…..দু হাতে রিদির গালে,গলায় খামচি দিয়ে লাল করে দিয়েছে অরূপ…..
অরূপের মা তো ছেলের এমন রূপ দেখে রীতিমতো সাত আসমানে উঠে গেছে……….
ছেলেকে সামলাতেই পারছে না কোনো ভাবে……..
রিদি এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে,অরূপ আবারও ওর মাকে সরিয়ে দিয়ে রিদির কাছে ছুটে যায়……রিদি দাঁড়িয়ে আছে তাই মুখে আর খামচি দেওয়া সম্ভব না সেজন্য পড়নের টপ ধরে টানছে আর উরুতে ওর সব শক্তি দিয়ে চড় বসাচ্ছে………..
“পঁচা….পঁচা……..যাও যাও……..পঁচা যাও……….. “…..
“নতুন বউয়ের কাছে যাবে না তুমি……যাও যাও পঁচা তুমি……খুব বাজে……পঁচা তুমি……..বেড গার্ল………চলে যাও,যাও………..”……………!!
!

রাফসা অরূপকে নিয়ে বাইরে চলে আসে।
মায়ের কোলে উঠেও অরূপ রিদির দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে বলছে,
“যাবে না তুমি…..পঁচা মেয়ে যাবে না নতুন বউয়ের কাছে……পঁচা…. পঁচা……”
“বাবা,বাবা,কি হয়েছে তোমার??? এমন করে না সোনা………শান্ত হও….”(রাফসা)
অরূপ বারবার কোল থেকে নেমে পড়তে চাইছে…….কিন্তু পেরে উঠছে না-বাচ্চা তো……..
“আব্বু তুমি না গুড বয়….তাহলে এমন কেন করছো??”
“রিদি আন্টি যাবে না নতুন বউয়ের কাছে…..ও পঁচা একটা….”
“না বাবা,রিদি আন্টি তো অনেক ভালো…..কত ভালোবাসে তোমায়….”

“না ও পঁচা মেয়ে একটা…..”
“এই একটা চড় খাবি…..”(পেছন থেকে সাদ)
বাবার কথা শোনে অরূপ ঠোঁট উল্টিয়ে দেয়……….
“বেশি ফাজিল হয়ে গেছিস তুই…..বড়দের মারতে শিখে গেছিস…….”
এবার কেঁদেই দিলো বাচ্চাটা……..
রাফসার হয়েছে যত জ্বালা…
“আহ্,সাদ প্লিজ……..”
“হ্যাঁ সামলাও তোমার ছেলেকে….দুষ্টুমির সাথে সাথে বাজে ব্যবহারও করছে আজ কাল…..”
“সাদ,প্লিজ…..বাচ্চা ও……”
“দেখি বাবা,এই বাবা……তাঁকাও না আমার দিকে…..কাঁদে না সোনা….বকে দিবো তোমার আব্বুকে…….. কাঁদতে নেই তো বাবু…..”

ছলে বলে ছেলের কান্না থামায় রাফসা…..পরম আদরে সাদ কোলে নেয় ছেলেকে………..
“বকলেই কাঁদতে হয়??”
ফিক করে হেঁসে দেয় অরূপ…
“আবার হাঁসিও পায়…..দুষ্টু হয়ে গেছো খুব…..মারলে কেন তোমার আন্টিকে….সরি বলবে তোমার আন্টিকে…..”
আবারও মুখে একই রাগের চিহ্ন…… একই রকম জেদ এনে বললো,
“না বলবো না সরি…..ও একটা পঁচা……”
“অরূপ!!!!”(চোখ রাঙিয়ে)
ভয় পেয়ে যায় অরূপ ওর বাবার রাগী চোখ দেখে….
“ইশশশ….সাদ প্লিজ…এমন করো না…..দাও ওকে আমার কাছে……”
দিলো না সাদ,রাফসার দিকেও রাগী লোক করে বললো,

“দেখতে দাও আমাকে……”
“বড় রা পঁচা হয় না…..বুঝতে পেরেছো????”
“না ও পঁচা……”
“অরূপ!!!!!!!!!!!!”
রাফসা এবার জোর করে ছেলেকে নিজের কোলে টেনে নেয়,কি শুরু করছে সাদ বাচ্চাটার সাথে…..ও কি এতো কিছু বুঝে নাকি…
শান্ত করাচ্ছে ছেলেকে রাফসা……কাঁদতে কাঁদতেই বারবার বলছে,
“ও পঁচা….ও পঁচা…….”
“আব্বু…কাঁদে না এভাবে……”
সাদ বিরক্ত হয়ে চলে আসছিলো সেখান থেকে….
ওর মাকে বলা অরূপের কথা শোনে দাঁড়িয়ে যায়….

“ও তো পঁচাই আম্মু…..রিদি আন্টি নতুন বউয়ের কাছে গেলে আবার মারবে নতুন বউকে…..আবার ব্যথা দিবে……..”
ফিরে আসে সাদ,মনে প্রশ্ন জেগে উঠেছে ‘আবার’ কেন বললো ছেলে???
শান্ত গলায় প্রশ্ন করে অরূপকে,
“আবার কেন মারবে???তোমার রিদি আন্টি কেনো মারতে যাবে???”
সাদ সহজে রাগ করে না কিন্তু নিজের ছোট্ট ছেলে যদি তারই আন্টির গায়ে হাত তুলে তাহলে যে কোনো বাবার একটু রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।
অরূপ বাবার কাছে বকা খেয়েছে তাই এখন আর ওনার সাথে কথা বলবে না কিছুক্ষণ।😂
জেদ একদম সাদাদের মতোই😂😂

অরূপ মায়ের কোলেই আছে…..কাঁদছে না আর…কাঁধে মাথা রেখে মায়ের শাড়ির পুতি ধরে খেলছে……
ছেলের অবস্থা দেখে সাদ মুঁচকি হেঁসে বললো,
“আব্বাজান,বকলে কথা বলতে হয় নাকি!!!আব্বু তো বকতেই পারে…….”
কাঁধ থেকে মুখ তুলে সাদের দিকে তাঁকিয়ে উত্তর ছুড়ে দিলো অরূপ,
“আমি তো কত্ত বড় হয়ে গেছি তবুও বকো……আম্মু তো রোজই বকে…..আর এখন তুমিও বকো………”
ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রাফসা,পিচ্চি ছেলে ওর কোলে থেকেই ওর নামে নিজের বাবার কাছে নালিশ করছে,
“এই তোকে রোজ বকি তাই না???আদর করি না……”
“বকোই তো,খাওয়ার জন্য বকো….জোর করে সাওয়ার করাও…..পড়া না পাড়লে বকো…..”
“দেখেছিস তোর মা তোকে কত বকা দেয় তবুও তুই তোর মায়ের কোলেই আছিস,আর আমি তো খালি আজকে বকা দিলাম তাতেই এতো!!!আয় আমার কাছে………”

অরূপ দু হাত বাড়িয়ে দেয় ওর বাবার দিকে,কান্ড দেখে হাঁসতে শুরু করে রাফসা।
“আইসক্রিম খাবো আব্বু……”
“ও এজন্যই এতো কাহিনী করে কোল চেন্জ করা হলো….”
মায়ের কথার দাম না দিয়ে আবারও বাবার কাছে আবদার করলো,
“আব্বু,খাবো……”
“আচ্ছা খেয়ো…….এখন বলো তো,তুমি তো তোমার আম্মুকে বলছিলে কি জেনো বলছিলে???”
“কি??”
“ঐ যে তোমার রিদি আন্টি নাকি তোমার নতুন বউকে ব্যাথা দিবে আবার কেন বললো??”

“হুম….দিবেই তো……আন্টি সকালে কনুই দিয়ে এম্নে করে(ওর বাবার বুকে আস্তে করে কনুই মেরে দেখিয়ে দিলো) কড়াইয়ের তেল ফেলে দিয়েছি আমি দেখেছি…….আর তখনি তো নতুন বউ ফ্লোরে বসে পড়লো……..তখন পরে কড়াইটাও ফেলে দিয়েছে,চুলার পাশে একটা বাটি ছিলো সেটাও নতুন বউয়ের পায়ে ফেলে দিয়েছে তার উপরে যখন কড়াই পড়েছে বাটি টা ভেঙে গেছে পায়ের উপরেই………কি রক্ত বের হয়েছিলো জানো আব্বু…..”
রাফসা খেয়াল করলো কথাগুলো বলার সময় অরূপ কেমন একটা কাঁপছে……সাদ তো অবাক এসব শোনে….সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার…..কিন্তু রাফসার যা বুঝার সে সব বুঝে গেছে এতক্ষণে…..
সে ও যে এমন একটা কিছু সন্দেহ করছিলো………………….
“আব্বু,রিদি আন্টি না ইচ্ছা করে ফেলে নি……তোমার আন্টিও কাজ করতে গিয়েছিলো তখন হাত লেগে পড়ে গিয়েছিলো…….”

“না আম্মু…..আমি দেখেছি তো……”
“হ্যাঁ তুমি দেখেছো কিন্তু সেটা তো ইচ্ছাকৃত হয় নি…..একটা দুর্ঘটনা সেটা……”
“দুর্ঘটনা???”
“মানে একসিডেন্ট আর কি…..”
“ও…..তাহলে নতুন বউ যখন চিৎকার করলো তাহলে রিদি আন্টি হাঁসলো কেন??আমি যখন মারুফ(পাশের বাসার পিচ্চি)কে মারি তখন আমিও তো হাঁসি…..আর ও যখন আমাকে মাথা ফাটিয়ে দিলো সেদিন আমি কান্না করছিলাম আর ও হাঁসছিলো……..”

“আব্বু……মারুফ তোমার সেম এইজ….তোমাদের ব্যাপার টা আলাদা….তোমরা দুই ফেন্ডস…খেলতে খেলতে কত কি হয়….আর তুমিই বলো তুমি তো মারুফকে ছাড়া থাকতেই পারো না কত লাভ করো ওকে….ওর বার্থ ডে তে কত্ত সুন্দর গিফট দাও……ও তো কত কি দেয়……….তাহলে একটু ব্যাথা দিলেই সে কি পঁচা হয়ে যায়??যদি হতো তাহলে তুমি তো মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পরের দিন ওর সাথে খেলতে যেতে না….আর সে ও তোমাকে সরি বলে তোমার জন্য চকলেট আনতো না……”
“তাহলে রিদি আন্টিও কি এখন নতুন বউকে চকলেট দিয়ে সরি বলবে???”
“হ্যাঁ সোনা বলবে…..আর তুমিও তো রিদি আন্টিকে খাঁমচি দিয়েছো,ব্যাথা দিয়েছো তাহলে তোমার কি করা উচিত বলো তো??”

“তাহলে আমিও সরি বলে দিবো…..কিন্তু চকলেট দিবো না আন্টি তো বড়……তাই…..”
রাফসা হেঁসে দিয়ে বলছে,
“আচ্ছা তোর চকলেট দিতে হবে না…..শুধু সরি বললেই হবে……”
“ওকে……ও আব্বু এখন আইসক্রিম খাবো…….চলো না আব্বু……”
“চলো যাই……..”
“সাদ,সন্ধ্যা হয়ে গেছে….তুমি ওর কথায় সায় দিচ্ছো এখন?”
“আমার বাবা আমি যা খুশি খাওয়াবো তাতে তোমার কি???তাই না ফাদার…..”
অরূপ মুখে আঙ্গুল ডুকিয়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
“হুম….হুম……”

“আচ্ছা!!!বাবা ছেলে মিলে এখন এগুলো করবে তাই না….ঠান্ডা লাগুক তারপর দেখবো কার কি হয়…….”
“আব্বু চলো…….খাবো তো…..”
“হ্যাঁ…..এই তো……..”
“বাবা,বেশি খেও না কিন্তু…..পরে গলা ব্যাথা হবে….”
“নো টেনশন আমি আছি তো….”
“আচ্ছা…তাড়াতাড়ি এসো….আমি ডাক্টরের সাথে কথা বলে সবাইকে নিয়ে বের হচ্ছি……..”
“হুম….যাও…..”
“বাই বাই আম্মু…….”
“বাই বাই সোনা……দুষ্টুমি করবে না একদম…..”
“হি হি হি হি হি হি হি হি…….”

রাফসার ডাক্তারের সাথে কথা বলা শেষ হলে সবাই বাসায় চলে আসে।
সাদাদকে ফ্রেস হওয়ার জন্য জোর করে বাসায় আসতে বলা হলেও কারও কোনো কথা শোনে নি সাদাদ।ঠাঁই বসে রয়েছে।দুপুরে নৌশিনের বায়নার অল্প ভাত ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কিছু খায় নি বেচারা।

শুয়ে আছে নৌশিন….একটু আগে সাদাদ ড্রেস চেন্জ করিয়ে দিয়েছে।
খুব জ্বলছে পা টা।আর কাঁটা অংশটুকু ব্যাথা করছে খুব।
নড়াতে পারছে না একটুও।
উঠতে চাইলে সাদাদ ধরে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো…..
“খারাপ লাগছে খুব,তাই না???”
মাথা নেড়ে না জানালো নৌশিন……..
“মিথ্যা কেন বলছো?আমি কি বুঝি না…… ”
“অল্প তো……”
জড়িয়ে ধরলো সাদাদ নৌশিনকে।চোখ দিয়ে পানিও গড়িয়ে পড়ছে…….

“এই…..কাঁদছো কেন তুমি??ঠিক হয়ে যাবে তো…..দেখো বেশি দিন লাগবে না তোমাকে আগের মতোই জ্বালাবো……”
“কতটা কষ্ট হচ্ছে…….আসলে কি বলো তো আমার এখন মনে হয়,’আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারি না’…..”
আর কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের মুখে আগলে ধরে আঙ্গুল দিয়ে……
“একদম না….এটা একটা এক্সিডেন্ট….তোমার এখানে করার কিছু নেই….আর আমি কত ভাগ্যবতী যে তোমার মতো স্বামী পেয়েছি…না হলে কটা মেয়ে আছে যার হাজবেন্ড তাদের অসুস্থতার সময় এতো সেবা করে……!!!”
“তুমি কিন্তু একদম মোড অফ করে থাকবে না……কখন কি কষ্ট হচ্ছে সেটা সাথে সাথে আমাকে জানাবে…….ডক্টর নার্স তো আছেই…….”
“বলবো তো……খেয়েছো কিছু???আর আমি সকাল থেকেই দেখছি একটা শার্ট পরে আছো চেন্জ করো নি কেন??”
“করবো……..তুমি রেস্ট করো…..”
“হুম….পা টা ফেলতেই তো পারছি না……দেখেছো তোমার মনের আশা পূরণ হলো…..”
“মানে????”

“তুমি না ঐ বললে আমার কমড় ভাঙলে ভালো হতো….যেন আমার সব কাজ তুমি করে দিতে পারো সেজন্য আজ পায়ের এই অবস্থা হলো যাতে করে শাস্তি পাও তুমি…..হা হা হা…..”
“চুপ….একদম চুপ….আমি তো এমনিতেই তোর সব কাজের ভার নিতে চাই…….তোর কষ্ট আমার পোষায় না….একদম না……..”
নৌশিন সাদাদের কপালে পড়ে থাকে চুলগুলোতে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
“ভালোবাসি……..”
মুঁচকি হাঁসেসে সাদাদ…..”ভালোবাসি না শুধু অনেক ভালোবাসি……”
“হুম…..আমি জানি তো…..”
“আচ্ছা!!!”

“হুম…..আচ্ছা রাতে তো পেসেন্টের বাড়ির কাউকে কেবিনে এলাও করে না….তাহলে তুমি কি করে আছো???”
“একা থাকবে তুমি??পাগল আমি!!!!আমার পক্ষে সম্ভব না…..আর বাসার সবাই এসে দেখে গেছে তোমার সন্ধ্যার একটু আগে……মা তো কোনো মতেই যেতে চায় নি…..থাকবে নাকি ওনি….অবশেষে কাল সকালের দোহাই দিয়ে বাসায় পাঠিয়েছি………আর ভাবী বলে দেওয়ায় আমাকে এখানে সব সময় এলাও করা হয়েছে….”
“কি বলো??সবাই এসেছিলো….”
“হ্যাঁ তুমি ঘুমাচ্ছিলে……..তাই আর ডাকে নি কেউ……..”
একজন নার্স ঘরে ডুকে…….
“স্যার আপনাকে এখন একটু বাইরে যেতে হবে……”
“কেন???”
“ম্যাডামের পায়ের ড্রেসিং করানো হবে এখন তাই……স্যার ড্রেসিং করানোর সময় অন্য লোক এলাও করেন না……”
নৌশিনের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।সাদাদ উঠে বাইরে চলে যেতে চাইলে হাত ধরে ফেলে নৌশিন,
করুণসুরে বলে,

“না যাবে না ও……সাদাদ তুমি যাবে না প্লিজ….আমার ভয় করছে…….”
“এই পাগলী ভয়ের কিচ্ছু নেই….আর আমি তো দরজার বাইরেই আছি…….তা ছাড়া আমার শরীরে কত রকম জীবাণু পাওয়া যাবে সেজন্য ড্রেসিং এরসময় সমস্যা হবে…..”
“না প্লিজ যেও না……..”
“হেয়….কাঁদছো কেন??ওকে যাচ্ছি না…..চুপ……”
নৌশিনের চোখ মুছে দিলো সাদাদ……….বের হলো না আর কেবিন থেকে।
নার্স বলে উঠলো,
“স্যার এটা নিয়ম তো…….”
“আমি দেখে নিচ্ছি সেটা……আপনার কোনো প্রবলেম হবে না,নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন…….”

ডাক্তার এসে সাদাদকে দেখে বাইরে যাওয়ার কথা বলেন,
“যা বাইরে এখন…….ভাবীর ডেসিং করবো এখন…….”
সাদাদ কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের ধরে থাকা হাতটা শক্ত করে খামচে ধরে বললো,
“না ও থাকবে……..”
“ভাবী,আপনি ভয় কেন পাচ্ছেন…..ভয় পাওয়ার কিছু নেই….আমি খুব ইজিলি কাজটা করবো…..আর বন্ধুর বউকে শুধু শুধু কষ্ট দেওয়ার কোনো ইনটেনশন নেই আমার…….এগুলো কাজে বাইরের লোক না থাকাই ভালো……”
নৌশিন সাদাদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে,বুঝতে পারছে সাদাদ নৌশিন কি চায়,
“আচ্ছা,দোস্ত….কর না রে ভাই….আমি থাকি কোনো প্রবলেম হবে না আমার….তুই তো এজন্য বলছিস যেন ডেসিং দেখে আনএজি ফিল না হয়!!আর ওর করা হবে ওর কেমন লাগবে!!….”
“ওকে থাক তাহলে……..”

ডাক্তার ডেসিং করার জন্য তৈরী হয়ে যায়।ডেসিল এর আসল কাজ মূলত পরিষ্কার করা যেন জীবাণু না থাকে আর এ জন্যই ডেসিং করার সময় অবসাধকরণ কোনো ইনজেকশন দেওয়া হয় না শরীরে,যেটা সেলাইয়ের সময় দেওয়া হয়। তাই ডেসিং করলে জীবাণুনাশক আর ঘষাঘষার ক্রিয়ার জীবন যায় অবস্থা হয়ে যায়।
আর এর উপর নৌশিনের পায়ের যা অবস্থা….ডেটল/সেভলন পুরার উপর পরলে তবু কথা হা করে কেটে যাওয়া জায়গাও আছে।
“উহু……উহু…..উহুহুহুহুহুহুহুহু……”

কষ্ট হচ্ছে নৌশিনের…..জ্বলে যাচ্ছে পা টা……ডাক্তার খুব ভালো করেই কাজ টা করছে…….সাদাদ হাত যতটা সম্ভব জোরে চেপে ধরে,চোখ বেটে,ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করছে নৌশিন তবুও চোখ বেয়ে পানি পড়ছে আর মুখ দিয়ে অনায়াসেই কাতর আওয়াজ বেরিয়ে আসছে।
সাদাদ জাস্ট নিতে পারছে না এসব……মনে তো হচ্ছে ওর বুকে কেউ ডেসিং করে দিচ্ছে।
তবুও নৌশিনকে জোর দেওয়ার জন্য নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্ঠা করছে।
ডেসিং শেষে চলে যায় নার্স।ডাক্তার টা সাদাদকে ঔষধের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে নৌশিনের সাথে কথা বলে বেরিয়ে যায়।পরিচিত হলে যা হয় আর কি!!

সাদাদ নৌশিনের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মুখটা শুকিয়ে গেছে একদম মেয়েটার।চোখের নিচে এই কয়েকঘন্টার ব্যবধানেই কালি পড়ে গেছে।আল্লাহ যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ করে এই আশায় করছে সাদাদ।
চোখের কোণা বেয়ে এখনো পানি আসছে নৌশিনের।আসবেই তো জ্বলছে যে😞😞.
সাদাদ চোখের পানি মুছে দিয়ে,কপালে ভালোবাসার উষ্মতা দিয়ে দিলো।
“জান কেঁদো না,তুমিই তো বলো উপরওয়ালা ঠিক করে দেয় সবকিছু…..তাই না??”
নৌশিন এমন কথায় আবারও ডুকরে কেঁদে উঠে,”জ্বলছে খুব…..”

আসলে কি অনেক কষ্টের সময় যদি নিজের সব চেয়ে আপন মানুষটা সামনে বসে সাত্বনা দেয়,তখন মনে হয় ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলে বোধহয় সব কষ্ট নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।নৌশিনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর সাদাদ নৌশিনকে মাথায় বিলি কাটতে কাটতে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর ডেকে খাবার আর ঔষধ টা খায়িয়ে দিবে।আপাতত জ্বলা টা কমুক।জেগে থাকলে জ্বালা টা নিতে কষ্ট হবে খুব।
সাদাদ এই ফাঁকে এশার নামায আদায় করতে বসে যায়।কেবিনের ভেতরেই পড়বে,বাইরে যেতে চায় না নৌশিনকে ছেড়ে।

সাদাদদের বাসায়,
সবাই একসাথে ডিনার করছে,কারও মুখে কোনো কথা নেই।বাসার প্রাণ টাই যেন হারিয়ে গেছে কোথাও।
“রাফসা মা,কি অবস্থা ঐদিক কার??”
“বাবা,আমি ফোন করছিলাম মিনিট পাঁচেক আগে…..ডেসিং করে গেছে ডক্টর……”
“ও…..কি অবস্থা যে মেয়েটার…..আচ্ছা ওর মা-বাবাকে জানানো হয়েছে??”
“না বাবা,কি করে বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না…..যে মেয়েকে এতো যত্নে মানুষ করেছেন ওনারা ঐ মেয়ে কি না আমাদের বাড়িতে এসে এই অবস্থা!!!”
দীর্ঘশ্বাস ফললেন সাদাদের বাবা।
“এতে ভয় পাওয়ার কি আছে??একটু দেখে শোনে কাজ করলেই হয়….আর তা ছাড়া কোন বাড়ির মেয়ে মা-বাবার বাড়িতে আদরে বড় হয় না….তাই আমার মনে হয় ওদের ফোন করে সবটা বলা উচিত……”
খাবার মুখে দিতে দিতে বললো রিদি।
রাফসার শরীর রাগে ফেটে যাচ্ছে।নেহাত শশুড়-শাশড়ী সামনে না হলে উল্টা পাল্টা কিছু বলে দিতো।তবুও রাগ চাঁপা দিয়ে বললো,

“দেখো রিদি,সবাই যে তাদের মেয়েকে আদরে মানুষ করে আমরা সবাই জানি,আর নৌশিন ওর বাড়ির কি সেটাও আমরা জানি,এই যে দেখো না আমাদের নিপা আর প্রাপ্তি….নিপার জন্য কিন্তু আমাদের এতো বেশি চিন্তা হয় না যতটা প্রাপ্তির জন্য হয়….নিপাকে একা ছেড়ে দিলে অনায়াসেই সে দুইশত দেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশে ঠিক ফিরে আসতে পারবে…ব্যবসা আর ভ্রমণের কার্যকলাপে সে এখন দক্ষ একজন মানুষ….আর প্রাপ্তিকে একা যদি দশ নম্বর সেক্টরেও পাঠানো হয় না আমাদের বুক টা ধুক ধুক করতে থাকে…..আর সে জায়গায় নৌশিনও পড়ে….বাবা মায়ের আদর ছেড়ে জাস্ট কয়েক মাস হলো এ বাড়িতে এসেছে…তবুও বাপ-ভাইয়ের চোখে মনি সে….যেমন টা প্রাপ্তি ছোট বলে সাদ আর সাদাদের কাছে ঠিক ও তো বাড়ির ছোট মেয়ে তার উপর বংশের একমাত্র মেয়ে সে ওর ডিমান্ড টা ভাবতে পারছো তাহলে??”

কিছু বললো না রিদি চুপচাপ খেতে লাগলো।
সবার খাওয়া প্রায় শেষ।
খাওয়া শেষ করে যে যার ঘরে চলে যাচ্ছে।সাদ,প্রাপ্তির বাবা আর রিদির খাওয়া এখনো শেষ হয়নি…..রাফসা কাকা শশুড়ে পাতে তরকারী উঠিয়ে দিতে গিয়ে বললো,
“রিদি তোমার কনুই এ কিসের দাগ গো এটা??আগে তো দেখে নি কোনো দিন……”
চমকে উঠে রিদি,মনে পড়ে সকালের কথা……যখন কড়াইয়ের তেল নৌশিনের উপর ফেলতে যায় কনুই দিয়ে কড়াইয়ে ঠেলা দেয় আর লোহার কড়াই আগুনে তপ্ত ছিলো খুব সেজন্য ওর কনুইয়ের ঐ জায়গাটুকুতে তখন ছেঁকা লেগে পুরে গেছে।
সেই দাগ টা নজর এড়ায় নি রাফসার…..এড়ানোর প্রশ্নই উঠে না,রাফসা তো আগে থেকেই রিদিকে সন্দেহ করছে আর ওনার ছেলে সেই সন্দেহ টা মিটিয়ে একদম ঠিকঠাক করে দিয়েছে………..!
রিদি পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

“ও……এটা???”
“হ্যাঁ……”
“আসলে কি বলো তো ভাবী,সকালে যখন নৌশিনের এক্সিডেন্ট টা হলো আমি তো ছিলাম তখন তাই ওকে বাঁচাতে গিয়ে আমারও একটু লেগে গিয়েছিলো এই জায়গাটুকুতে……”
“বাঁচাতে গিয়ে????”
“মানে কড়াই টা ফিরাতে গিয়ে আর কি!!……….”
“ও আচ্ছা…….বার্নাল লাগিয়ে নিও ঠিক হয়ে যাবে……..”
“হ্যাঁ সিউর………..”

রাফসা সবার খাওয়া শেষ হলে সব কিছু গুছিয়ে রেখে রোমে চলে যায়।সাদ লেপটপে কাজ করেছে আর অরূপ ঘুমাচ্ছে…..
রাফসা ওয়াশরোম থেকে এসে সাদ কে উদ্দশ্য করে বললো,
“তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো???এখন বলবো নাকি ইম্পরটেন্ট কোনো কাজ করছো???”
“না না তেমন ইম্পরটেন্ট কিছু না……বলো কি বলবে??”
“রিদি তো সাদাদের সম বয়সী তাই না??”
“হ্যাঁ……তো??”
“তো মানে???একটা মেয়ের উনত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেছে ওর বিয়ের কথা কেউ ভাবছো না কেন???আর বয়স টা ফেক্ট না যদিও এর পরে অনেকের বিয়ে হয় এস্টাববিস হওয়ার জন্য কিন্তু রিদি তো এস্টাবলিস এলরেডি তাই না??কেরিয়ার গড়ে ফেলেছে….নিজের ভালো টাকা পয়সাও আছে,আল্লাহর রহমতে দেখতেও মাশাল্লাহ….আমার মনে হয় এবার ওর বিয়ে নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত……”

সাদ লেপটপ টা বন্ধ করে খাটের রেলিং এ মাথা রেখে বললো,
“হ্যাঁ ভাবা যায়……”
রাফসা সাদের এমন গাছাড়া উত্তরে একটু রেগে যায়….ধমকের সুরে বললো,
“আম সিরিয়াস সাদ…..”
হাঁসলো সাদ,”আচ্ছা ওকে ওকে…..কিন্তু ওর ও তো আলাদা কোনো বিষয় থাকতে পারে………”
“আলাদা বিষয় মানে???”
“আলাদা বিষয় বলতে যদি কাউকে লাইক করে থাকে…..”
“সেটা সম্ভব না……”
“ঠিক বুঝলাম না……”
“না কিছু না…….”

বিছানায় বসে চুল বাঁধতে বাঁধতে বললো রাফসা।
সাদ টান দিয়ে রাফসাকে নিজের বুকে ফেলে দিলো,
“আরে,চুল বাঁধছিলাম তো…..”
সাদ রাফসার চোখে চোখ রেখে বলছে,
“কি লুকাচ্ছো আমার থেকে??”
রাফসা চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
“কি লুকাবো??”
“রিদির ব্যাপারে……আমার তো মনে হচ্ছে তুমি রিদি আর নৌশিনের সর্ম্পকে এমন কিছু জানো যা আমি জানি না……নৌশিনের মতো মেয়েকে রিদি কেন এতটা কষ্ট দিবে???”
“সাদ,তুমিও না…..তোমার ছেলের কথা ধরে বসে আছো….রিদি কেন নৌশিনকে ব্যাথা দিতে যাবে…….”
“কি লুকাচ্ছো রাফসা…..তোমার ছেলেকে তুমি ভদ্রতার শেখানোর জন্য ইচ্ছাকৃত ঘটনাকে ওর মতো করে বুঝাতে পারলেও আমাকে কিন্তু পারবে না……”
“দেখি ছাড়ো,চুল বাঁধবো……”
“সেটা পরেও করা যাবে,আমি করে দিবো…..আগে তুমি আমায় এটা বলো,রিদির কি সম্ভব না??আর আমি কেন বাসার সবাই খেয়াল করে রিদি নৌশিনের সাথে এডজাস্ট না….”
“রিদি তো সবার সাথে এডজাস্ট হতে পারে না তাই হয়তো…..দেখো না সব সার্ভেন্টদের সাথে কেমন একটা করে….সব সময় রাগারাগী……..”

“নৌশিন কিন্তু এ বাসার সার্ভেন্ট না….তাই সার্ভেন্ট আর নৌশিনের মধ্যে ব্যাপার টা এক না……তাছাড়া নৌশিন রিদির চেয়ে বেশ কয়েক বছরের ছোট……এজন্য যে কেউ ই রিদির কাছে নৌশিনের জন্য ভালো কিছু আশা করবে……এখন তুমি আমায় এটা ক্লিয়ার করো কি জানো তুমি??”
“সাদ,প্লিজ…..”
“ওকে আমি বলছি প্লিজ…..প্লিজ বলো…..প্লি….”
রাফসা সাদের মুখের উপর হাত দিয়ে আটকে দিলো,
বুকে মাথা রেখে সাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“প্লিজ কেনো বলছো আমায়??আদেশ করো……আমি তোমার মুখে প্লিজ শুনতে চাই না…..কতবার বলবল এ কথা….”
সাদ রাফসাকে আগলে নিয়ে বললো,
“তাহলে কেন বলছো না আমায়???আমার তো এটা মনে হয় না রিদির অসাবধানতার কারণে ঘটনা টা হয়েছে…..রিদি তল ভুলেও চুলার আশ পাশ যায় না যে পরিমাণ স্কিন কেয়ার করে ও…..আর যদি এমন হতো তাহলে আমাদের ছেলে তো বললো ‘ও হাসছিলো’…..আর ছেলেকে তুমি যেভাবে মানুষ করেছো ও ফেন্ডসদের সাথে দুষ্টুমি মারামারি যাই করুক কখনও বড়দের সাথে বেয়াদবি করে না,আর আজ?সারা মুখ গলায় খামচি?তারপর বেশ কয়েকটা থাপ্পরও দিলো…..আমি আর কাকা তো অবাক….কাকা বিশ্বাস ই করতে পারছিলো না অরূপের এই রূপটা……..”

“আসলে………”
“হুম বলো……”
“রিদি নৌশিনকে নিতে পারে না……”
“সেটা আমার কাছেও ক্লিয়ার…..কারণ টা বলো….”
“সাদ……”
“আমার কাছে কোনো কিছু লুকাও নি তুমি এই সাত বছরে….আশা করছি আজও লুকাবে না-যেখানে আমি নিজে কিছু জানতে চাইছি…..”
কিছুক্ষণ নীরব থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলা শুরু করে রাফসা,
“রিদি ইচ্ছা করেই নৌশিনের সাথে এমন টা করেছে আজ….আর মনে আছে তোমার নৌশিন যে অন্ধকারে থাকার কারণে কতবড় সমস্যায় পড়েছিলো নৌশিন!!সে দিন তুমি প্রশ্ন করেছিলে যে সব ঠিক করার পরও লাইট কি করে নিভে যেতে পারে…….উত্তর টা আমি সাদাদের কাছ থেকে পেয়ে ছিলাম,রিদি ইচ্ছাকৃত ভাবে সে কাজ টাও করেছিলো……”
সোজা হয়ে বসে সাদ,
“মানে???”

“হ্যাঁ….রিদি সঙ্গানে সাদাদের রোমের সব লাইটিং কানেকশন কেটে দিয়েছিলো যার কারণে এসি চলছিলো সে দিন কিন্তু একটা বাল্বও জ্বলছিলো না….আর শুধু তাই না কাজটা করার পর নৌশিনকে নিয়ে যখন হাসপাতাল থেকে বাসায় আসা হলো সাদাদ ওদের রোমের বারান্দায় রিদির নিজের হাতের লেখা একটা চিরকুট পায়….যেখানে রিদি নিজের কাজের স্বীকারউক্ত দিয়ে নিজের মহাসুখ প্রকাশ করে……..”
সাদ অবাক না হয়ে পারছে না,যে রিদিকে এতো কাছ থেকে এতো দিন ধরে চিনে সে এমন কোনো কাজ করতে পারে!!মাথায় ধরছে না সাদের………………….
“আর এসব কিছুর মূলে হলো ‘সাদাদ’……..”
কথাটা শোনা মাত্রই বিশাল একটা শকড খায় সাদ……
ভ্যাবাচেকা খেয়ে প্রশ্ন করে রাফসাকে,
“কি বলছো তুমি??”
“হ্যাঁ….আমি একদম ঠিক বলছি……রিদি সাদাদকে ভালোবাসে…..”
চমকে উঠে সাদ,”ওয়াট?????”

“অবাক হচ্ছো তো….আমিও হয়েছিলাম….তবে আমার অনেক আগে থেকেই রিদির ব্যাপার টা ভালো লাগতো না…. সব সময় সাদাদের সামনে নিজেকে তুলপ ধরা….সাদাদের গা ঘেষে চলা,প্রথম প্রথম আমি এটা ভেবেছিলাম যে দুজন সমবয়সী তাই হয়তো এত কাছাকাছি……কিন্তু এক সময় বুঝলাম যে না ওদের সর্ম্পকটা একপাক্ষিক মানে আমি কোনো দিন এটা দেখি নি যে সাদাদ ইচ্ছে করে রিদির সাথে কথা বলছে বা ওর পাশে বসছে ইভেন সাদাদ তো সব সময় রিদির থেকে দূরে থাকার চেষ্ঠা করে…..তখন আমার মনে হয়েছিলো নিশ্চয় রিদি আর সাদাদের মধ্যে কোনো গন্ডগোল আছে……..আর যেদিন নৌশিনের বাড়ি থেকে লোক আসে ওদের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে ঐ দিন তো রিদির মুখ টা দেখার যোগ্য ছিলোই না…..বিয়ের দিনও সবার সামনে ভালো থাকার চেষ্ঠা করলেও পারে নি….আর তারপর থেকে তো জানোই নৌশিনকে একদম নিতে পারে না…..আমি এসব আগে থেকে সন্দেহ করলেও ঠিকঠাক কিছু জানতাম না,ওদের বিয়ের পর জেনেছি….যখন রিদি বার বার সাদাদকে কাছে পাওয়ার চেষ্ঠা করতো আর সাদাদ সব সময় বাঁধা দিতো আগের মতো করেই কিন্তু রিদি বোকার মতো নৌশিনের ক্ষতি করার জন্য লেগে পড়লো,ও জানতো অন্ধকারে নৌশিনের কত কষ্ট হয় আর এতে এধরনের রোগীর বিশাল বড় বিপদ হতে পারে জেনে শোনে এই কাজ করেছে ও……..”
“আমার তো মাথা কাজ করছে না…….তুমি আগে কেনো বলো নি??”

“কি বলতাম??তোমার বোনের ননদ তোমার ভাইয়ের সাথে প্রেম করতে চায় সেটা বলতাম???যেখানে তোমার ভাই ভালোবাসে অন্য জনকে….আর তারর উপর সাদাদ এখন ওর ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছে…..রিদি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না………….ওর তো বুঝা উচিত,’ভালোবাসা একজনে হয় না’……আর আমার মনে হয় কি বলো তো!!!রিদি ভালোই বাসে না সাদাদকে,এটা সাদাদের প্রতি ওর একটা মৌহ…..মিথ্যা জেদ,কোনো দিন কোনো কিছুতে হার মানে নি তো তাই এই আবেগের কাছেও ও হারতে চাইছে না,না হলে নৌশিনের মতো অল্প বয়সী একটা মেয়ের সাথে ও কখনো এমন করতে পারতো না……..”

সাদ কিছু বলবে,তার আগেই ওদের মহারাজা মানে অরূপ কাঁশতে শুরু করে ঘুমের মধ্যে…………
“কি হলো এটার আবার???”
সাদের পাশ থেকে উঠে ছেলের কাছে যায় রাফসা…..এখনও কাঁশছে,এসি টা বন্ধ করে শরীরে কাঁথা দিতে যাবে…..গায়ে হাত লাগতেই গরম অনুভব করে,
কপালে হাত দিয়েই চমকে উঠে রাফসা……….”ও মা গো…….হায় আল্লাহ্…..”
রাফসার এমন বাক্যে সাদ সাদাদ আর রিদির চিন্তা ফেলে রাফসার দিকে তাঁকায়,
“কি হয়েছে???”
ছেলেকে কাঁথা মুরি দিয়ে,জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় রাফসা উত্তর দিলো,
“গা তো জ্বরে পুরে যাচ্ছে ছেলেটার…………….”

সাদ কপালে হাত দিয়ে দেখে এতো শুধু জ্বর না বিশাল পরিমাণ জ্বর………………….
রাফসা তাড়াতাড়ি ওঠে গিয়ে জলপট্টি দেওয়ার জন্য বাটিতে করে পানি আর রুমাল নিয়ে আসে………..
ছেলের মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করে সাদকে,
“এই তুমি কয়টা আইসক্রিম খাইয়েছো ওকে???”
থতমত খেয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে সাদ………
রাফসা বিরক্ত নিয়ে বলা শুরু করে,
“কতদিন বলেছি,আইসক্রিম খাওয়ানোর কোনো দরকার নেই,খেলেই ঠান্ডা লাগে,গলা ব্যাথা শুরু হয়….আমার কোনো কথার তো দাম দাও না………..”

রুমাল দিয়ে ছেলের মুখ মুছে দিচ্ছে আর বলছে,
“ইশশশশশ কি জ্বর টাই না উঠেছে বাবা টার………”
এমন সময় কাঁশতে কাঁশতে উঠে বসে অরূপ,কাঁথা পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরে রাফসা…..এই মুহুর্তে সাদাদ,রিদি,নৌশিন কারও কথার সামন্য সময় নেই রাফসার কাছে…………
মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমস্বরে অরূপের বক্তব্য,
“আম্মু শীত করে……..

“শীত করবে না??কি জ্বর টাই না উঠেছে কতবার বলি আইসক্রিম খেও না শোনো না আমার কথা…..এখন তো তোমারি কষ্ট হচ্ছে…….”
আবারও কাঁশতে থাকে অরূপ।
রাফসা ছেলে কোলে বসিয়ে সাদ কে উদ্দেশ্য করে বললো,
“একটু ছাদে যাও না গো….”
“এত রাতে আবার ছাদে??”
“আজব তো এত রাত কোথায়??সাড়ে দশ টা বাজে…..যাবে আর কয়েকটা তুলসী পাতা আনবে……”
সাদ বিরক্তি নিয়ে বললো,
“যাচ্ছি……”
“দেখি আব্বু….একটু নেমে বসো তো ঔষধ আনবো….”
ভাঙা গলায় ছেলের জবাব,

“আম্মু আমি ঔষধ খাবো না…….”
“হায় আল্লাহ্ গলাটাও গেছে……দেখি নামো…..”
“আম্মু খাবো না……”
রাফসা আর কথা বড়ালো না….অরূপকে কোলে নিয়েই ঔষধ আনার জন্য উঠে গেলো………..
অরূপ বার বার কান্নাস্বরে বলছে,
“খাবো না আম্মু,খাবো না….খাবো না।।।।আমি ঔষধ খাবো না……..”
রাফসা ছেলেকে বুকে জড়িয় ধরেই এক হাত দিয়ে ঔষধের প্যাকেট খুলে নিলো…….বিছানায় বসে,
টি টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিতেই অরূপ দু হাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো।
সাদ ছাদ থেকে এসে দেখে মা আর ছেলে ঔষধ নিয়ে জোরাজোরি করছে……..
“অরূপ,আব্বু খেয়ে নাও,তাহলে কাল আবার আইসক্রিম খাওয়াবো”
চোখ গরম করে সাদের দিকে তাঁকায়…………….

রাগে ছেলেকে বলছে,
“খাবে না তুমি???”
মুখ চেঁপে ধরেই মাথা নাড়িয়ে সারা দেয় অরূপ,
“উমহু উমহু……..”
“ওকে খেয়ো না,নামো আমার কোল থেকে……….নামো বলছি….”
অরূপ আরও জড়িয়ে ধরলো ওর মাকে,নামা তো অনেক দূরে।
রাগ করে কোনো লাভ নেই।একে তো বাচ্চা আর দ্বিতীয়ত ভীষণ জ্বর।
রাফসা ঔষধের জন্য আর জোর করলো না,ছেলেকে বুকে নিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসলো।
“দেখি,চোখ মুছতে দাও……..”

চোখ মুছে দিয়ে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রাফসা।
এমন সময় ফোন আসে………..
“তোমার ফোন…..”(সাদ)
“একটু দাও না…….”(রাফসা)
রাফসা ফোন টা হাতে নিলে দেখলো ওর বাবা ফোন করেছে,
“হ্যালো,পাপা…….আসসালামু আলাইকুম…..”
ওপাশ থেকে…..”ওয়ালাইকুম আসসালাম……কেমন আছো??”
“হ্যাঁ পাপা,ভালো…..তুমি কেমন আছো??”
“এই তো,নানুভাই আর জামাইয়ের কি অবস্থা??”
“সেটা আর বলতে হয়!দুজনে মিলে ইচ্ছামতো আইসক্রিম খেয়েছে এখন ছেলের কাঁশি,জ্বর এত যে আমার শরীরও পুরে যাচ্ছে…….”

“ওয়াট দ্যা,খেয়াল রাখতে পারো না তুমি???এতো বেখেয়ালী কেন??”
রাফসা সাদের দিকে রাগী লোকে তাঁকায়,ওর জন্যই তো বাবার কাছে বকা শোনা লাগছে এতো রাতে,
“পাপা,আমি কি করলাম….ওরা তো আমার কোনো কথাই শোনে না……”
“শোনাতে হবে,বাচ্চা মানুষ তো বায়না করবেই…….ঔষধ খাইয়েছো???নাকি সেটাও করো নি??”
“………..”
“কি হলো??আন্সার কোথায়??ঔষধ দাও নি…….?”
“পাপা,ও খাচ্ছে না ঔষধ…….”

“কাঁশছে ও আবার তাই না?আর ঔষধ খাও নি তুমি???কেন তোমাকে যে ডাক্তারী পড়াতে গেলাম কে জানে???কোনো কাজ ডিডটি নিয়ে করতে পারো না………বোরিং একদম………”
রাফসার ভেতর টা ধুক করে উঠলো,আজ অনেক দিন পর নিজের যোগ্যতা নিয়ে কেউ ওকে এভাবে বললো,লাস্ট বলেছিলো কোর্টে বিবাদী পক্ষ……..আর আজ নিজের বাবা বললো!!!চোখ দুটো নিজের অজান্তেই ছলছল করছে রাফসার,অস্ফুষ্টস্বরে মুখ দিয়ে ভেসে আসলো,

“পাপা!!!!!”
ফিরে তাঁকায় সাদ,রাফসার চোখে পানি দেখে অবাক হয়।
কাছে এসে চোখের পানি আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিয়ে,চোখের ইশারায় জানতে চায় কি হয়েছে,রাফসা কিছু বললো না,ফোন যে এখনো কানে,
ওপাশ থেকে আবারও বাবার বলা শুরু,
“নিজের খেয়াল রাখছো তো???নাকী সেটাও ভুলে গেছো???”রাফসা কিছু বলার আগেই বুঝতে পারলো ওর মা ওর বাবার কাছ থেকে জোর করে ফোন নিয়ে নেয়,
“হ্যাঁ…..মা কেমন আছিস???”
রাফসার ঠোঁট কাঁপছে,জোরে কাঁদতেও পারছে না….ঐ একটা কথাই যে তাঁকে সব থেকে বেশি কষ্ট দেয়।
“কি রে মা…..কথা বলছিস না কেনো??”
অনেক কষ্টে বললো,
“মাম্মাম আমি পড়ে কথা বলি??অরূপ আমার কোলে ঘুমিয়ে গেছে শুইয়ে দিই…..”
“হ্যালো,তুই কাঁদছিস???…..হ্যালো হ্যালো…..”
ফোন কেটে দিয়েছে রাফসা।ওর মা যে বুঝে গেছে ও কাঁদছে তাই তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিলো।
“কি হলো???কাঁদছো কেন??”
রাফসা অরূপকে শুইয়ে দিলো,কোনো কথা বললো না সাদের সাথে……ছেলের পাশেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো…………..

ততক্ষনাৎ ফোন টা আবারও বেজে উঠে,চোখ মুছে হাতে নিয়ে দেখে সাদাদ,ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে সাদাদ বললো,
“ভাবী,নৌশিনের তো খুব জ্বর উঠেছে….ডেসিং করার কিছুক্ষণ পর থেকেই প্রচুর জ্বর…..কী করবো এখন?”
“আমাকে কেনো বলছিস??আমি কি ডাক্তার???না নার্স?কিছুই না আমি??আসামী একজন বুঝতে পেরেছিস???”
“ভাবী,কি হয়েছে তোমার???প্লিজ এমন করে বলো না….”
“একজন ডাক্তার ডাক,আর এ জ্বর পায়ের ক্ষত আর ব্যথার জন্যই উঠেছে…..টেনশনের কিছু নেই……”
আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিলো রাফসা।ঘুমায় নি অরূপ প্রশ্ন করে মাকে,
“আম্মু,তোমার চোখে পানি কেনো?”
“রাফসা,কি হয়েছে কেন বলছো না??”
“আবারও কাঁশছো তো…..(সাদকে উদ্দশ্য করে বললো)তুলসী পাতা গুলো দাও তো…..”
সাদ তুলসী পাতাগুলো একটু ধুয়ে রাফসার হাতে দিতেই রাফসা সেগুলো কচলিয়ে রস করে জোর করে অরূপকে গলা চেঁপে খাইয়ে দিলো।
কান্না কি আর থামে নাকি!!!

এমন ভাবে চিল্লাছে বাড়ির সবাি সজাগ হয়ে গেছে বোধহয়………………..
“রাফসা,এমন করছো কেনো ওর সাথে??শান্ত করাও…..” আরও রাগ উঠে যায় রাফসার,
বরং রাগের চেয়ে খারাপ টাই বেশি লাগছে,
“আমি না,পারি না,আমার তো দায়িত্ববোধ নেই তাই…..মা রা কিভাবে সন্তানদের শান্ত করে আমি সত্যিই জানি না গো………না ডাক্তার হিসেবে ভালো হতে পারলাম না মা হিসেবে”
সাদ অরূপের আরও কাছে এসে অরূপের ওপর রাখা রাফসার হাতে হাত রেখে বললো,
“কি হয়েছে???বাবা কি বললেন??…..”
রাফসা চোখের পানি মুছে,অরূপের পিঠে হাত বুলিয়ে জবাব দিলো,
“আমি সত্যিই ভালো মা না,আর ডাক্তার হওয়ার যোগ্য না সাদ…….”
“না,কি বলছো তুমি এসব?কেন ই বা বলছো??”
রাফসা কিছু বলার আগেই অরূপ বললো,

“আম্মু,গলা ব্যাথা করছে……”
গলায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলো,টনসেল বাড়েছে কি না,
“দেখেছো,গলাও ফুলে গেছে……..তোমার আব্বুর কাছে যাও একটু…….”
“কেনো??তুমি কোথায় যাবে??”
“একটা কিছু বেঁধে দিই গলায়??হুম???ব্যাথা কমে যাবে…….দিই আব্বু….”
“আচ্ছা……”
সাদ অরূপকে নিজের কাছে নিয়ে গেলে রাফসা ড্রয়ার থেকে মাফলার নিয়ে এসে অরূপের গলায় বেঁধে দিলো।তারপর হসপিটালে ফোন করে নৌশিনকে এক্সট্রা কেয়ার করার জন্য বলে দেয়।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে,সাদ ঘুমাচ্ছে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলো….আর রাফসা সারা রাত জেগে থেকে এখনও ছেলের মাথায় জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছে।
রাত ভোর সাদাদেরও একি অবস্থা,সারা রাত বসে থেকে নৌশিনের মাথায় জলপট্টি দিয়েছে আর এখন ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিচ্ছে।
অরূপের জ্বর বেশ খানিক টা কমে গেছে।কিন্তু নৌশিনের জ্বর যেনো বেড়েই যাচ্ছে।পা টাও খুব পরিমাণ ফুলে গেছে।
আর জ্বরের ঘুরে শুধু “মা, মা, মা……”জব করছে।

সারা রাত কোনো হুশ ছিলো না মেয়েটার।ডাক্তার এসে আপেক্ষ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন নি…..শুধু ধৈর্য ধরতে বলছেন।কাটা টা সেলাই করতে পারলে ভালো হতো কিন্তু পা সেলাই করার কোনো উপায় নেই।
রাফসা সাদকে নামাযের জন্য ডেকে তুলে,নিজেও নামায পড়ে নিলো……রান্না ঘরে গিয়ে অরূপের জন্য গরম গরম স্যুপ করে নিয়ে জোর করে খাইয়ে দিলো।খেতে চাইছিলো না,গলা ব্যথায় খেতেও পারছিলো না।
“দেখেছো খেতে চাইছিলে না,কার কষ্ট হতো বলো তো….এখন চুপচাপ শুয়ে থাকবে আর তোমার আব্বু কাজ করবে একদম গা থেকে কাঁথা ফেলবে না…..”

“আম্মু,স্কুলে যাবো না??”
“না আব্বু আজকে যেতে হবে না,একটু জ্বর যে এখনও আছে……”
“কালও তো গেলাম না,মিস বকবে না??”
“আমি ফোন করে বলে দিবো,আচ্ছা তুমি এখন আমাকে এটা বলো তো তোমার কালকে কয়টা আইসক্রিম খেয়েছো??”
“একটা আম্মু…..”
সাদ কাঁশি দিচ্ছে,রাফসা বুঝতে পারছে সাদ উল্টা পাল্টা কিছু বুঝাতে চাইছে অরূপকে……….
“আব্বু,মিথ্যা কথা বলবে না সকাল বেলা…….সত্যি সত্যি বলো তো কয়টা খেয়েছো……”
“আম্মুমুুমুমু……আমি খায় নি,আব্বু জোর করে খাইয়ে দিয়েছে…….”
সাদ রাফসার দিকে থতমত খেয়ে তাঁকায়,রাফসা চোখ বড় বড় করে একবার অরূপের দিকে তো একবার সাদের দিকে তাঁকাচ্ছে…………….

“তুমি!!!!!!সাদ???”
“আমি কি জানি,বায়না করছিলো ও…….”
“আব্বু,তুমি মিথ্যা বলো??”
“ঐ চুপ কর,শুয়ে থাক…..”
“এই তুমি ওকে বকছো কেন??নিজের দোষ টা ডাকার চেষ্ঠা??”
“আজব,ছেলেকে মাথায় তুলো না,মাথায় তুলো না……”
“আব্বু,আমি কিন্তু মাকে বলে দিবো…..”
“ঐ কি বলবি তুই??চুপ চাপ রেস্ট নে না হলে স্কুলে পাঠিয়ে দিবো…….”
“আম্মুমুমু……জানো কাল আব্বু ধোঁয়া খেয়েছে……হি হি হি হি হি…..বলে দিয়েছি…..হি হি হি হি…….”
রাফসা চোখ বড় করে তাঁকিয়ে আছে,অরূপ আবার বলা শুর করলো,

“আম্মু,জানো আব্বু না আমাকে কাল একাই চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে কোথায় জানি চলে গিয়েছিলো,পরে আমি একটা আইাক্রিম খেয়ে আব্বু কে খুজতে গেছি দেখি আব্বু রিসেশপনের পেছনে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া খাচ্ছে……আমি বললাম আব্বু আমিও খাবো আব্বু দিলো না……..পরে আমাকে বললো,”এটা নাকি ছোট রা খায় না……বড়রা খায়…..”পরে আমি বলেছি’আম্মুকে বলবো তুমি আমাকে ছাড়াই খেয়েছো’।পরে আব্বু আমাকে বললো কি জানো??”
“থামবি অরূপ,তোকে কিন্তু এখনি স্কুলে পাঠাবো……”
“আব্বু তুমি বলো তো কি বলছে তোমার আব্বু??”
সাদ অরূপের মুখ চেপে ধরলো এবার,”থাম…পাকনা ছেলে”

“উমমমমমম……আমমমমমমম……”
“সাদ,কি করছো,ছেলের গলা ব্যথা তো গালে লেগে যাবে…….”
“আমমমমমমমমমমমমম……..”
“সাদ,ছোট হয়ে গেলে তুমি??লাগছে তো ওর ছাড়ো……”
ছেলের মুখ ছেড়ে সাদ বললো,
“চুপ থাকবি একদম…..দুষ্টু কোথাকার…… ”
“আম্মু…….”বলেই অরূপ ওর মায়ের কোলে চড়ে বসে………
“কি বাবু,লেগেছে???”
“আব্বু পঁচা,ব্যথা পাই আমি…..”

“আল্লাহ্ না বাবা,তোমার আব্বু তো মজা করছিলো তোমার সাথে……আব্বুরা কখনো খারাপ হয় না……”
“জানো আম্মু……আব্বু পরে আমাকে বলেছিলো আমাকে অনেকগুলো আইসক্রিম খাওয়াবে যেন আমি তোমাকে না বলি…..পরে আমাকে আমার ফেবারিট তিনটা আইসক্রিম খেয়েছি তাইলে আব্বু তো খাওয়ালো…..তাই না আম্মু??”
রাফসা সাদের দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাঁকাতেই সাদ হাত জোড় করলো ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে……….চোখ ফিরিয়ে নিলো রাফসা……….ছেলেকে বললো,

“আব্বু,এর পর থেকে আব্বু যেদিন ই ধোঁয়া খাবে তুমি যদি দেখো আমাকে বলে দিবে….আর শোনো আইসক্রিম খেয়ো না সোনা,তোমার কত শরীর খারাপ হয় দেখেছো??কত কষ্ট হয় তো??তাই না??এই যে এখনো গলাটা ফুলে আছে??তিনটা আইাক্রিম কেউ খায় বলো???”
“ওকে আম্মু…..খাবো না……”
“গুড বয়…….এখন শুয়ে থাকো চুপটি করে,আমি রান্না করবো…….”

সাদাদ নৌশিনের এই অবস্থা আর সহ্য করতে পারছে না
জ্বরের ঘুরে সেই রাত থেকে শুধু মা মা করে যাচ্ছে।আর পায়ের কথা নাই বললাম আর যত সময় যাচ্ছে তত বেশি খারাপ হচ্ছে…………
সাদাদের মা আর রাফসা নৌশিন আর সাদাদের জন্য খাবার নিয়ে এসে তো পুরো শকড।
“সাদাদ,তুই বললি জ্বর….বাট এটা কে কি জ্বর বলবো নাকি আমি বুঝতে পারছি না…..আল্লাহ্…..”
সাদাদেরর মা তো পা দেখে ঙ্গান হারানোর অবস্থা প্রায়।
রাফসা আবারও ডক্টরদের সাথে কথা বলে…..হাই পাওয়ার ঔষধও দেওয়া হচ্ছে কাল থেকে নৌশিনকে।কিন্তু কাজ হচ্ছে না…………

“মা,আমার মনে হয় ওর বাড়িতে একটা খবর দেওয়া উচিত…….কিভাবে মা মা করছে ও…..জানানো দরকার……”
“জানাও জানাও…..আসুক ওরা….যা হবার হবে…..সাদাদ ফোন কর আমি নিজে বলবো ভাবীকে……”
সাদাদ নিশ্চুপ…..মুখ শুকিয়ে গেছে…..ছেলে হয়ে ঠকেছে বোধহয়…..মেয়ে হলে না হয় ইচ্ছা মতো কাঁদতে পারতো ছেলে হয়েও তো সেটাও করতে পারছে না………….
শাশুড়ির নম্বর টা ডায়েল করে মায়ের কাছে দিলো শুধু।কান্না চাপা দিয়ে হাসপাতালে আসতে বললো নৌশিনের মাকে সাদাদের মা।নৌশিনের অবস্থা যে এতটা খারাপ সেটা বলার আর সাহস হয় নি……….

ঐ দিকে সাদ বেশ রেগে আছে রিদির প্রতি…এতো এডাল্ট একটা মেয়ে এধরনের কাজ করতে পারে!!!শরীফ চাচার মতে সেদিনের এর্লাজির ঘটনা টাও রিদির ই করা বলে জানায় সাদ আর রাফসাকে।
চিংড়ি বাটা মিশিয়ে দিয়েছিলো রিদি চটপটিতে রাফসার আড়ালে।সব কিছু শোনে কাল রাতেই সাদ রিদির সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু ছেলের শরীর খারাপ তাই যেতে পারে নি।সাদ অরূপকে প্রাপ্তির মায়ের কাছে রেখে নৌশিনের কাছে গেছে।অরূপের শরীর বেশ খানিক টা ভালো তাই সাদও অফিসে গেছে।কিন্তু রিদির ব্যাপারে মন শান্ত করছে না……রিদিকে কল করে নিজের অফিসে ডেকে পাঠায়……….একজন আরেক জনকে পচ্ছন্দ করতেই পারে তাই বলে একজন মানুষের সাথে এমন বাজে আচরণ করা যায় নাকি!!!!!!!

সাদাদের নৌশিনকে নিয়ে এতো টেনশনের মধ্যে এগুলো না জানানোই ভালো বলে মনে করে সাদ।তাই রাফসাকে জানিয়ে দিয়েছে সে যেন পায়ের ব্যাপারে রিদির ঘটনা টা আগেই না বলে।
প্রায় আধা ঘন্টা পর রিদি সাদের অফিসে আসে……
কেবিনে ডুকে বলেে,
“ভাইয়া,কি ব্যাপার এতো জলদি ডাকলে যে???”
“হ্যাঁ বসো…..একটু কথা ছিলো তোমার সাথে……..”
চেয়ার টেনে বসলো রিদি,বললো,
“জ্বি ভাইয়া বলো…….”
“চা বা কফি কিছু নাও……”
“না ভাইয়া সেগুল বাদ দাও না।।।।।বলো কি বলবে???কোনো দরকার??”
“দেখো রিদি,তোমার কেরিয়ার তো মাশাল্লাহ পারফেক্ট……”
“ভাইয়া!!!!”

“হ্যাঁ……তুমি নিশ্চয় পরশ চৌধুরী চিনো??”আলট্রা ফার্মা” এর মেনেজিক ডিরেক্ট?? ”
“হ্যাঁ…কেনো বলো তো??”
“কাল ওরা তোমাকে দেখতে আমাদের বাসায় আসবে……তুমি অফিস থেকে কাল ছুটি নিয়ে নাও….ছাড়ো,তোমার ছুটি নিতে হবে না আমিই তোমার বসকে বলে রাখবো……”
রিদির মাথায় বাঁশ…………..
বেশকিছুক্ষণ পর অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো “আমাকে??”
“হ্যাঁ আমি নিপা আর ওয়ালিদের(নিপার বর)সাথে কথা বলেছি ওরা তো এক মাসের মাঝেই আসবে……রাফসা ই বলতো তোমায় কিন্তু নৌশিনের এই অবস্থা তার উপর অরূপের শরীর খারাপ সব মিলিয়ে ওর প্রেসার টা একটু বেশিই তাই আমি তোমাকে বলে রাখলাম….”

“ভাইয়া আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না….আর এ বিয়ে করা আমার পক্ষে কোনো দিন সম্ভব না…..”
“মানে???আমি ওয়ালিদের সাথে নিজে কথা বলেছি রিদি….আর ওদের আসতেও বলেছি কাল….পরশকে তো তুমি ভালো করেই চিনো….দেখতে,শুনতে,টাকা-পয়সা,খ্যাতি কোনো টাই কম নেই।।।।তাহলে তোমার কি প্রবলেম??সব দিক দিয়েই তুমি পারফেক্ট কোনো কমতি নেই তোমার যেটা পূরণ করতে আরও সময় লাগবে তোমার??আর আমরা তো কাল ই তোমাকে বিয়ে দিচ্ছি না….আসুক ওরা,কথা বলো তুমি।।। দেখো পচ্ছন্দ হলে এগুবো না হলে ক্যান্সেল……”
রিদি বসে থেকে উঠে সাদকে বললো,
“ভাইয়া আমি উঠি এখন….মিটিং আছে আমার….”
সাদ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
“ওকে….বাট আমার কথা টা মাথায় রেখো……”
রিদি কোনো জবাব না দিয়ে হনহন করে সাদের কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
অফিসে না গিয়ে সোজা বাসায় চলে যায়।ইচ্ছে করছে সব কিছু শেষ করে দিতে…………
কোনো কিছু না ভেবে ফোন করে সাদাদকে,
সাদাদ কোনো ইনটেনশন ছাড়াই ফোন ধরলো,

“হ্যাঁলো রিদি বলো….”
রিদি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,
“আই লাভ ইউ সাদাদ…..আই লাভ ইউ…….আই কান্ট লিভ উইথ আউট ইউ……..”
সাদাদের মাথায় রাগ ধরে যায়।এ মেয়ে কেনো বুঝে না সাদাদকে সে কোনো দিন পাবে না।আর এখন সাদাদ যে মানসিক চাপে আছে তার মধ্যেও যে রিদি এাব বলবে সাদাদ ভাবতেও পারে নি…..
ওপাশ থেকে আবারও রিদি বললো,
“সাদাদ,প্লিজ মেরি মি…..সাদাদ প্লিজ শোনো না….এক কাজ করো নৌশিনকে তুমি ডিভোর্স দিয়ে দাও…..আমি না ভাইয়াকে বলে আমাদের যা কিছু আছে সব তোমার নামে করিয়ে দিবো….প্লিজ সাদাদ আমি থাকতে পারছি না তোমাকে ছাড়া……….”
“ওকে আমি সন্ধ্যায় বাসায় এসে তোমার সাথে কথা বলছি………”
“সত্যি????”
“হ্যাঁ,সত্যি……”

সাদাদ ফোন রেখে দিলো আর কথা বাড়ালো না এই মুর্হুতে নৌশিনকে নিয়ে সব চিন্তা ওর..
রিদিকে নিয়ে ভাবার কোনো ইচ্ছে নেই তার…..যা একটা বুঝা পরা করার ওর সাথে করতে হবে আজ…পাগল হয়ে গেছে সে না হলে বলে কি না সব দিয়ে দিবে বিয়ে করতে!!!
কোনো মেয়ে এতটা উল্টা পাল্টা কথা বলতে পারে সাদাদের জানা ছিলো না………

নৌশিনের মা মেয়ে হসপিটালে আছে শোনেই সাথে সাথে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেছিলেন।
ক্লিনিকে ডুকে নৌশিনের কেবিনের ভেতরে ডুকতেই মেয়েকে বিছানায় শয়নরত অবস্থায় দেখে কলিজা ধুক করে উঠেছে ওনার।আরও ভেতরে তুকেই সবার আগে চোখে পড়ে মেয়ের পা………
“ও আল্লাহ্………”বলে মেয়ের পায়ের কাছে বসে পড়েন………
ঔষধ হাতে কেবিনে ডুকে সাদাদ…………..দেখতে পান শাশুড়ীকে,নৌশিন এখনও আগের মতোই জ্বরের ঘোরে মা মা করে যাচ্ছে……………..
“ও মা…..আমার কলিজার কি হয়েছে এটা?কেমন করে হলো আপা এটা???আল্লাহ গো……মানিক আমার……..আল্লাহ্……”
কান্নায় ভেঙে পড়েন নৌশিনের মা।সাদাদ সাত্বনাদ দিতে চেয়েও পারছে না।সাদাদের মা নৌশিনের মাকে নৌশিনের মাথার কাছে বসিয়ে দেন,

“ভাবী,এমন করবেন না…….আল্লাহ্ আল্লাহ্ করুন….আমাদেরও কি কষ্ট কম হচ্ছে??বলুন…..”
“ও আপা,আমার মায়ের কি করে হলো এটা???”
“আসলে তেল পড়ে এমন হয়েছে….” কেবিনে ডুকার পথে জবাব দেয় রাফসা।
“ও মা…….সাত রাজার ধন আমার মা তো কেটেও গেছে……আমার মা তো এতো কাঁচা কাজ করে না…….”
কপালে চুমু দিতে যাবে…ঠোঁট ছোঁয়াতেই আরও বেশি অবাক হয়ে যায়।শরীর পুরো উতপ্ত লোহার মতো গরম…………
“হায় খোদা,কি হয়েছে ওর???এতো গরম শরীর???ও মা….মা…. মারে…..দেখ মা আসছি……..মা চোখ খুল মা…..”
নৌশিনও বুঝতে পারছে কি না কে জানে,কিন্তু জ্বরের তালে মা কেই ডেকে যাচ্ছে এখনও….
“মা এই তো আমি আসছি……ও মানিক আমার চোখ খোলো তুমি……কত কষ্ট পাচ্ছো তুমি…….”
কিছুতেই কান্না থামছে না নৌশিনের মায়ের।যে মেয়ে কোনো দিন একটা ফুলের টোকাও দেয় নি সে মেয়ের আজ এই অবস্থা দেখে কিছুতেই নিজেকে সংযত করেছে পারছেন না নৌশিনের মা।
রাফসা আর সাদাদের মা অনেক কষ্টে কিছুটা শান্ত করলেন।
ফোন করে নৌশিনের বাবা আর ভাইকে সবটা জানায় নৌশিনের মা।বাবা,ছেলে দুজনেই অফিসের কাজে সিলেটে ছিলো খবর পাওয়া মাত্রই সব কিছু ক্যান্সেল করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।

বিকালের দিকে নৌশিনের জ্বর বেশ খানিক টা কমে গেছে।হুশও আছে এখন।মা আর শাশুড়ীর সাথে কথাও বলতে পারছে।সাদাদের দিকে চোখ গেলে বুজতে পারে যে ‘সাদাদের চোখে পানি’….নৌশিনকে দেখে সেটা আড়াল করার চেষ্ঠা করলেও পারে নি।
নৌশিনের মা সাদাদের দিকে খেয়াল করে সাদাদের মাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে…..
ওরা দুজন বাইরে বের হওয়া মাত্রই সাদাদ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকে তৎক্ষনাৎ নৌশিনের কাছে ছুটে আসে…..
নৌশিনের সারা মুখে কাঁদতে কাঁদতে চুমু দিতে থাকে,
“এই কাঁদছো কেন???”
নৌশিনের গাল থেকে মুখ তুলে সাদাদ,কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
“আমি মরে যাবো…….সত্যিই মরে যাবো তোকে ছাড়া……”
নৌশিন সাদাদের মুখ চেপে ধরলো,”চুপ…….”
নৌশিনের হাত টা সরিয়ে হাতেও বেশ কয়েকটা চুমু খেলো………..
প্রশ্ন করলো নৌশিন,”বাসায় যাও নি???”
মাথা নাড়িয়ে না করলো সাদাদ.

“কেনো??”
“তুমি এখানে আর আমি বাসায়???”
“তার মানে সারা তুমি জেগে ছিলে???”
ঔষধ হাতে একজন নার্স কেবিনে ডুকে জবাব দিলো,
“স্যার তো সারা রাত জেগে আপনার সেবা করছিলো….কি জ্বর টাই না হয়েছিলো আপনার…….নিন স্যার এই ঔষধগুলো খাইয়ে দিন ম্যাডামকে……….এখন কেমন লাগছে ম্যাডাম??”
“এই তো ভালো……”
“আসি তাহলে…..স্যার তো আছেই আপনার পাশে……”
নার্স চলে গেলে ছলছল দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে নৌশিন সাদাদের দিকে…………..

“কি দেখছো??”
“তোমাকে……”
“হুম??”
“এতো ভালোবাসো কেন আমায়??”
“জীবন যে তাই….”
“একটা কথা রাখবে??”
“বলো শুধু…..দেখো করি কি না…..”
“আজ রাত টা এখানে থাকবে না তুমি….বাসায় যাবে এখনি,ভাবী তো চলে গেছে….দুই মা থাকুক আজ রাতটা…..তুমি বাসায় যাবে গোসল করবে….ভরপেট খেয়ে নামায পড়ে ঘুম দিবে একটা….তারপর কাল সকালে ব্রেকফাস্ট করে আসবে…….”
“সম্ভব না…….”
“কি!!!!”
“পারবো না আমি….তোমার এই অবস্থা আর আমি বাসায় শুয়ে ঘুমাবো???অসম্ভব…..”
“তুমি কিন্তু বললে একটু আগেই….আমি যা বলবো করবে…..তাহলে???”
“এটা ছাড়া অন্য কিছু বলো….”
“না…..আর তুমি যদি না যাও এখন আমি কিন্তু ঔষধ,খাবার কোনো টাই খাবো না…..”
“খেতে হবে না,আমি খাইয়ে দিবো……”

“শুনবে না আমার কথা?”
“কি শুরু করলে বলো তো….আমি ঠিক আছি তো…”
“কঁচু আছেন আপনি….কাল থেকে একটা শার্ট পড়ে আছে,সারা রাত ঘুমায় নি খায় নি ঠিকমতো……এখন আবার বেশি বেশি কথা বলে….”
“হয়েছে।।।।দেখি উঠো…ঔষধগুলো দেখে নাও….”
সাদাদ নৌশিনকে ধরে উঠাতে চাইলে নৌশিন সাদাদের হাত সরিয়ে দিলো…….
“কি হলো??”
“শুয়ে থাকবো আমি….”
“থেকো….আগে ঔষধ গুলো খেয়ে নাও……”
আবার উঠাতে গেলে আবারও সাদাদকে সরিয়ে দিলো নৌশিন……..
“খাবো না আমি বললাম তো…….”

“নৌশিন,কি হচ্ছে কি…..সারা রাত কি অসুস্থ ছিলে জানো তুমি….এখনো কতটা জ্বর….প্লিজ কথা শোনো আমার…..”
“শোনবো না, শোনবো না…. ব্যাস……তুমি শোনো আমার কোনো কথা???তাহলে আমি কেনো শুনবো???”
সাদাদ কোনো কথা না বলে,নৌশিনকে ঔষধ খাওয়ানোর জন্য অনেক জোড়াজোড়ি করলো।কিন্তু নৌশিন কোনো ভাবেই খাচ্ছিলো না।তাই শেষমেষ বাধ্য হয়ে বললো,
“আচ্ছা,বেশ…..তুমি ঔষধগুলো খেয়ে নাও….আমি বাসায় যাবো….”
নৌশিনের মুখে হাঁসি ফুটলো,”প্রমিস??”
“সুস্থ থাকলে না বুঝাতাম,অসুস্থ তাই মাইর থেকে বেঁচে গেলে….দেখি হা করো এবার……”
“হুম……দাও তারাতারি……”
সাদাদ নৌশিনকে ঔষধ,খাবার খাইয়ে দিলো,জামা পাল্টে দিয়ে বসতে চাইলে নৌশিনের জ্বালায় বসতেও পাড়লো না।
বাসায় চলে আসতে হলো।

আর বাসায় রাফসা সবার জন্য রাতের খাবার তৈরী করছিলো,এমন সময় সাদ রান্না ঘরে ডুকে,পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাফসাকে……
চমকে ওঠে রাফসা,
“আরে,কি করছো??কেউ দেখবে….”
“দেখুক……”

“আম্মুমমমম্মু…….”
সেরে দাঁড়ায় সাদ….মুঁচকি হাঁসছে রাফসা……
“আব্বু,তুমি এখানে রান্না করো??”
“হ্যাঁ তোর মাকে হেল্প করছিলাম…..”
“ওওও……আম্মু……নতুন বউয়ের কাছে যাবো…..”
“কাল যেও….”
“না আম্মু….আমি এখনি যাবো…….চলো আম্মু….”
“এখন অনেক রাত আব্বু……কাল সকালে নিয়ে যাবো….তোমার আব্বুও যাবে…..”
“ওফফ…….আম্মু কেউ আমার কথা শোনো না…..ভালো লাগে না আমার…..”
সাদ,রাফসা দুজনেই হাঁসলো…
সাদ অরূপকে কোলে তুলে কাঁতুকাঁতু দিয়ে হাঁসাতে শুরু করলো……ড্রেয়িং রোমে ডুকতেই দেখলো সাদাদ বাসায় এসেছে।
নৌশিনের খবর টা নিয়ে সাদাদকো বললো,ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিতে।
সাদাদ বলেছিলো আসবে,এসেছে দেখে রিদির মনে আনন্দ লেগেছে খুব।
সাদাদ ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে আসলে,রিদিও পেছন পেছন এসে সাদাদের পাশের চেয়ার টাতে বসলো।
অনেক সুন্দর করে সেজেছে রিদি।যে কোনো ছেলের নজর পড়বে,কিন্তু যার জন্য সেজেছে তার চোখ যে শুধু একজনকেই দেখে।

“সাদাদ,খাওয়া শেষ করে একটা লম্বা ঘুম দে যা….দু দিন ধরে বেশ চাপ যাচ্ছে….”
“হ্যাঁ…ভাবী…..”
“আর টেনশন নিও না….ওখানে তো তোমার মা আর শাশুড়ী আছেন….তুমি ভালো ভাবে ঘুমাও আজ….নামায পড়ে দোয়া করো ইনশাল্লাহ্ বউ মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে….”
“সেটাই তো বাবা….আর কি করার…..”
“কাকাই আমি যাবো কালকে নতুন বউয়ের কাছে…..”
“ওকে বাচ্চা যেও…..”
“ভাইয়া,আমিও যাবো…..”(প্রাপ্তি)
“ঠিক আছে যার যার যাওয়ার যেও……”(প্রাপ্তির বাবা)

প্রেমঘোর পর্ব ৬৬+৬৭+৬৮+৬৯+৭০

খাওয়া শেষ করে রোমে গিয়ে নামায সেরে নিলো সাদাদ।
বিছানায় গা মিলিয়ে দিতে রাজ্যেের ঘুম চোখে জমে আসছিলো……কিন্তু দরজার শব্দে তন্দ্রা টা কেটে গেলো।।।।
বালিশ থেকে মাথা তুললেই দেখতে পেলো,হাঁসি মুখে রিদি এগিয়ে আসছে সাদাদের দিকে।
দ্রুত বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় সাদাদ…..টি শার্ট টা পড়ে নিয়ে প্রশ্ন করে, “তুমি????”
কোনো কথা ছাড়াই রিদি জড়িয়ে ধরে সাদাদকে,
“হ্যাঁ….আমি……”……

প্রেমঘোর পর্ব ৭৬+৭৭+৭৮+৭৯+৮০