প্রেমতৃষা পর্ব ১৮

প্রেমতৃষা পর্ব ১৮
ইশরাত জাহান জেরিন

কাছে আসতে বলে প্রেম নেওয়াজ তৃষাকে দিয়ে জোর করে বিছানাটা গুছিয়ে নিয়েছে। সেই মহারাজ এখন আমার গোসলে গেছেন। এই বৃষ্টির মধ্যে কে এত সকাল সকাল গোসল করে? এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে তো তৃষা এক মাসও গোসল না করে থাকতে পারবে। এই প্রেমকে যে করেই হোক শায়েস্তা করতেই হবে। রাতে কী করে উপরে গেল মনে পড়ছে না। তবে খুব ভালো করেই মনে পড়ছে প্রেম ভাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সে চোরের মতো ফ্রিজ থেকে একটা কোক নিয়ে গটগট করে পান করেছে।

কোকাকোলাই তো ছিল তবে স্বাদ বড্ড অন্যরকম। তারপর কী হয়েছে মনে নেই। কোকাকোলা খেয়ে আবার মাতাল হয়ে যায়নি তো? আর তখন মনে হয় প্রেম ভাই তাকে বিছানায় শুইয়েছে। কিছু হয়েছে কী তাদের মধ্যে? শরীরটা ব্যথা করছে। বমি বমিও লাগছে। চক্কর দিচ্ছে মাথা। সে আবার কোনো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল নাতো? তৃষা রুমের মধ্যে পায়চারি করে পেছনে হাত দিয়ে। কী করবে ভাবতে ভাবতে শেষে গিয়ে বেসিনের সামনে থেকে হ্যান্ডওয়াশ এনে ফেনা করে বাথরুমের সামনে ঢেলে দেয়। আজকে প্রেম ভাই বের হবে আর তার কোমড়টা যাবে। ব্যাটা হাইব্রিড করলার মুখ তো নয় লাগাম ছাড়া ঘোড়া। আর একটা শরীর আছে বলে যা তা করবে নাকি? কিসের প্যাক ফ্যাক বুকের মধ্যে গজিয়েছে তার জন্য কী এখন জামা কামড় ছাড়া ঘুরতে হবে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওই প্রত্যুষ তো এমন নেংটু চলাফেরা করে না। জন্মের সময় হয়তো এই প্রেম পাতলাখানকে তার মা চোখের নিচে কাজল দেয়নি। কাজলের অভাবে হয়েছে একটা নিলর্জ্জ হতচ্ছাড়া। প্রেম গোসল খানা থেকে বের হয় কালো রঙের একটা তোয়ালে নিচে পেঁচিয়ে। গলায় সেই কালো কাইটনের মতো দেখতে চেইনটা ঝুলছে। সম্ভব ওটা কাইটনই হবে। কেবল তার মাথায় একটা গিটারের লকেট আলাদা করে এডজাস্ট করা। প্রেম ভাইয়ের ঝাঁকড়া ঘাড় ছুঁইছুঁই চুল গুলো থেকে টুপটাপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। চুলের সেই পানি সুঠাম দেহে গড়িয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আকর্ষণের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে এই পুরুষ হয়ে উঠেছে মাত্রাহীন সুপুরুষ। তার বাদামি রঙের চোখের মণিতে অদ্ভুত আকর্ষণ লুকিয়ে। চাহুনি নেকড়েদের মতো। এগুলোকে ফক্সআই বলে তাই না? প্রেম গোসল খানার দরজার সামনে আগে দাঁড়ায়। বাইরে আর পা রাখে না। তৃষা সঙ্গে সঙ্গে বলে, ‘আসেন প্রেম ভাই। দেখেন আমি আপনার জন্য জামা কাপড় বের করে রেখেছি। সঙ্গে দেখেন কালো রঙের একটা জাঙ্গিয়া। কম্বিনেশনটা জোস না?’

‘রাতে এত কিছু হলো তুমি গোসল করবে না? এদিকে আসো।’
‘হলো মানে?’
‘থাক লজ্জা পেতে হবে না। কাম।’
‘আসব না। লজ্জা নেই আপনার। আপনাকে আমি ভাইয়ের চোখে দেখি।’
‘ভাইয়ের চোখে দেখেও কাল রাত নিজের কার্য উসুল করলে, না জানি স্বামীর চোখে দেখলে কী করতে।’
‘আপনি বের হন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’
‘আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনব। তারপর এক মুহূর্ত জাস্ট দেরি হলে ভিডিও কিন্তু সোজা ভাইরাল।’
‘ভিডিও মানে?’
‘সেটা ভাইরাল হলেই বুঝবে। রাতে ফ্রিজ থেকে কোক চুরি করে খাওয়া। ওই কোকের সঙ্গে মদ মিশ্রিত ছিল। ওইসব খেয়ে আমার সঙ্গে কী করেছো দেখাব? আমি কাউন্ট শুরু করলাম। এক…..দুই…..ত’
‘আসছি ওয়েট।’
‘দ্যাটস মাই গার্ল।’

তৃষা ফেনাযুক্ত স্থান থেকে খানিকটা দূরেই থাকে। তা দেখে প্রেম সরু চোখে বলে, ‘এখন কী কাছে আসার জন্য ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প শোনাতে হবে?’ বলেই সে তৃষার হাত ধরে টান দিতেই তৃষা ফেনার সঙ্গে পিছলা খেয়ে ধপাস করে পড়ে যায়। প্রেম ভাই তো তাকে সাহায্য করলই না উল্টো হাতটা ছেড়ে দিলো। তৃষা মাটিতে পড়ে, ‘ওওওওওও মাগো বলে চেঁচিয়ে উঠতেই প্রেম ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে পুনরায় ভেতরে ঢুকে যায়। যাওয়ার আগে বলে, ‘জাস্ট দুই মিনিটের মধ্যে যেন এই ফেনা পরিষ্কার করা হয়। নইলে এবার মান্দার গাছ থেকে পিটিয়ে বাকি হাড় গুলো ভাঙবো সোনা।’

নেওয়াজ কুঠিরে প্রেমের বাইকটা ঢুকতেই তৃষা যেন শান্তি ফিরে পায়। তার অনেক ক্ষুধা পেয়ছে। প্রেম একা একা খেয়েছে। তাকে একটু সাধল না। কেবল বলল, ‘খাবার সামনেই আছে সাধতে পারব না। মন চাইলে খাবে না মন চাইলে অনাহারে মরবে।’ এই কথা শোনার পর কার খেতে মন চায় । ব্যাটা ডিম আর পাউরুটিগুলো নিজের পেটে সেটিয়েছে। আর অদ্ভুত মানুষ সে। সারাদিন খালি স্ট্রোবেরি খায়। একটা মানুষ এত স্ট্রোবেরি কেমনে খায়? তাও আবার ডার্ক চকলেটের মধ্যে চুবিয়ে? বাড়ির মধ্যে তৃষা ঢোকার আগেই প্রেম বাইক থেকে নেমে পেছন থেকে তার ওড়না টেনে ধরে বলে, ‘এই যে মিস এলার্জির ঔষধ যে এতগুলো খেতে হলো আপনার জন্য। ঔষধের টাকা কিন্তু রাতে উশুল করে ছাড়ব।’
‘দূরে গিয়া মর লুইচ্ছা বেডা। রাতে তোকে আমি বিষ দেব বুঝলি।’
‘ভিডিও ভাইরাল করব নাকি তোর? মুখে কিন্তু খই ফুটছে।’
‘এই না! সরি।’

তৃষা বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দেখল খাবার টেবিলে বসে সবাই নাস্তা করছে। প্রত্যুষও সেখানে বসে আছে। তৃষাকে দেখতে পেয়ে হেতিজা বলে উঠলেন, ‘এখন তোমার বান্ধবীর বাবা কেমন আছেন? সুস্থ হয়েছেন তো?’ তৃষা একবার পাশ ফিরে প্রেমকে দেখল। প্রেম তখন টেবিলের ওপর থেকে একটা স্ট্রোবেরি নিয়ে মুখে দিয়ে তৃষাকে চোখ মারতেই রাগে তৃষা চোখ সরিয়ে হেতিজাকে হাসি মুখে উত্তর দিলো, ‘জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।’ এই প্রেমের জন্য এখন তাকে মিথ্যাও বলতে হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্ট লাগছে প্রত্যুষকে মিথ্যা বলতে। লোকটা যদি কখনো শুনে পুরো একটা রাত সে তার ভাইয়ের সঙ্গে কাটিয়েছে তবে কখনো কী তৃষাকে আপন করবে। এই একটা কথা ভাবলেই কেমন কান্না পাচ্ছে তৃষার। সিদ্দিক নেওয়াজ টেবিল ছেড়ে উঠতেই হেতিজা বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য উঠে যায়। প্রেমা আজকে না খেয়েই কলেজে গেছে। তৃষা প্রত্যুষের পাশের টেবিলে বসেছে। আর প্রেম বসেছে একেবারে তৃষার মুখোমুখি। নজটা বাজপাখির মতো। তৃষা কমলার জুসটা হাত বাড়িয়ে নিতে গেলেই প্রত্যুষ তার হাত চেপে ধরে বলল, ‘আল্লাহ হাতে কী হয়েছে?’

‘তা কিছু না।’
‘কিছু না হলে কী ব্যান্ড এইড লাগানো?’
প্রত্যুষ তার হাত ধরে বলল, ‘চলো ডাক্তারের কাছে যাই।’ তৃষা আড়চোখে সামনে বসে থাকা প্রেমের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। কেমন ভয়ানক ভাবে তাকিয়ে আছে। প্রেম উঠে যায়। সে উঠে যেতেই প্রত্যুষ তাকে পেছন থেকে ডাক দেয়, ‘এই তোর সঙ্গে কথা আছে।’
প্রেম গিয়েও থমকে যায়। বাঁকা হেসে পেছন ফিরতেই বলল, ‘আইনের লোক আবার বেআইনের লোককে কেন ডাকে?’
প্রত্যুষ গলার টাই ঠিক তৃষাকে বলল, ‘তৃষা চাবি নিয়ে তুমি আমার গাড়িতে উঠে বসো।’

‘তার দরকার নেই।’
‘যাও উঠে বসো গিয়ে।’
তৃষার মনটা আজকে কেমন যেন লাগছে। এই যে প্রত্যুষ তার হাতে ব্যান্ড এইড দেখে কেমন বিচলিত হলো। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করল। অন্যদিন হলে এসব নিয়ে তৃষার খুশির সীমা থাকত না। তবে আজকে কেমন জানি একটা না চাইতেও লাগছে। তৃষা বাইরে চলে যেতেই প্রত্যুষ প্রেমের কাছে এসে বলল, ‘আমি অনেক কিছুই লক্ষ করছি প্রেম। বি কেয়ারফুল।’
‘কেয়ার ফেয়ার তোমায় মানায় আইনের লোক।’
‘একটু আগে তৃষার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিলি কেন?’
‘আল্লাহ চোখ দিয়েছে সৌন্দর্য দেখার জন্য।’
‘প্রেম তৃষার জীবন যেন নষ্ট না হয়।’

‘জীবন নষ্ট করার মালিক আল্লাহ। আমরা তো কেবল উছিলা। বাই দ্যা ওয়ে মেয়ে মানুষ নিয়ে তোমার এত মাথা ব্যথা কেন? শুনলাম ওই সাইকোটাকে নাকি এখনো ধরতে পারোনি? পারবেও না। চেষ্টা চালাতে থাকো। প্রমাণ পাবে না। কারণ ওমন যোগ্যতা তোমার ভেতর নেই। আমার রাস্তায় পা না দিয়ে নিজের ডিউটি মন দিয়ে করো। খালি মাসে মাসে সরকারি মাইনে আর রেশন নিলেই তো হবে না, ঠিক করে কাজটাও করতে হবে।’
প্রত্যুষ রাগে কটমট করে চোখে চোখ রাখল প্রেমের। প্রেম তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল। সে দাঁত পিষে বলল, ‘তোকে টেনে জেলে ফেলতে আমার এক সেকেন্ডের খেল। কেবল নানাভাইয়ের কারণে এখনো দুনিয়ার হাওয়া খাচ্ছিস। তবে ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে।’

‘দেখো ভাই যেটা প্রেম নেওয়াজের সেটার দিকে অন্য কারো নজর আমার সহ্য হয় না। তবে সমস্যা হলো যা প্রেমের ভালো লাগে তার দিকে আবার অন্যকারো নজর বেশি যায়। আই ডোন্ট লাইক ইট ব্রো। যেটা আমার সেটা আমি ছিনিয়ে হলেও নিজের করে নেই। আমার জিনিসে অন্যকারো নজর পড়লে আমি জিনিসটাও নষ্ট করি আর যে নজর দিয়েছে তাকেও। মাইন্ড ইট।’ বলেই প্রেম টেবিল থেকে পুরো স্ট্রোবেরির ঝুড়িটা হাতে তুলেই প্রত্যুষের সামনে থেকে বেড়িয়ে যায়।

বাগান জুড়ে রাতের আবহাওয়া আজ অন্যরকম লাগছে। মৃদু শীতল বাতাস বইছে। পাতার ডগা নড়ে উঠছে টুপটাপ শিশিরে। দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে নীরবতা আরও গভীর হয়ে উঠছে। আকাশের গাঢ় নীল রঙে ছড়িয়ে আছে আধো আলো-আঁধারি, মাঝে মাঝে মেঘের আড়াল থেকে চাঁদের আলো গাছপালার ফাঁক গলে নেমে আসছে বাগানের সরু পথে। তৃষা ধীর পায়ে হাঁটছে প্রেমার পাশে। দুজনার পায়ের শব্দ নরম ঘাসে মিশে প্রশান্তি তৈরি করছে। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরে চাঁদের প্রতিফলন ঝিকিমিকি করছে। কথায় কথায় তৃষা প্রেমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা প্রত্যুষ ভাই আর প্রেম ভাইয়ের মধ্যে তেমন মিল নেই কেন?’
‘চোর আর পুলিশে কখনো মিল হয় শুনেছো? সময় হোক জানতে পারবে।’
‘প্রেম ভাই এমন অদ্ভুত কেন? বাবা-মা কোথায় তার?’
‘তারা নেই। তাই হয়তো এত অদ্ভুত।’

তৃষা আর কোনো প্রশ্ন করল না। হাতটার দিকে তাকালো। বার বার প্রত্যুষের স্পর্শ অনুভব করতে চাইলেও চোখের সামনে ভেসে উঠছে প্রেম নেওয়াজ। যার বুক সে এই হাতটা দিয়ে স্পর্শ করেছিল ঠিক সেই হাতটা। এমন কেন হচ্ছে? ওই অসভ্য লোকটার জন্য এত অনুভূতি কিসের? এসব তো মোটেও হওয়ার কথা নয়। গুড বয় কে রেখে বেড বয়ের প্রতি এত অনুভূতি সৃষ্টির কোনো দরকার নেই। তৃষা আরেকটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন প্রেমাকে ডাকল, ‘এই যে প্রেমা ডার্লিং শুনছো? তোমার জন্য পাবনা ছেড়ে চলে এলাম আর তুমি আমায় পাত্তাই দিচ্ছো না?’

প্রেমা পেছনে তাকাতেই বলল, ‘কালু তুমি আবার এলে? আমার ভাইয়ের কাছে বিচার দিব।’
‘দজ্জাল মহিলা তোরে আমি ভালোবাসি এটা মাথায় ঢুকে না। খালি ভাইয়ের ভয় দেখাস।’
তৃষার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তবে সামনের ছেলেটিকে সে চেনে। ওইযে সিদ্দিক নেওয়াজের ডান হাত মোখলেসের ছেলে এটা। নাম মেহরাব। কিন্তু সবাই কালু বলেই ডাকে। রঙটা একটু কালো। তাতে কম কোথায়? ঝাক্কাস দেখতে। মেহরাব পুনরায় প্রেমাকে বলল, ‘চিপায় আসো কথা আছে।’

‘যাব না তোমার সাথে চিপায়।’ প্রেমা মুখ বাঁকিয়ে উত্তর দিলো।
‘আরে তোমার জন্য কোরিয়ান একটা জিনিস এনেছি। আসো না দেখাই।’
সেই কথা শুনে প্রেমার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। সে তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শুনে আসি ওই মদন কী দেখাবে। নইলে এখানেই দাঁড়িয়ে নাটক করতেই থাকবে। তুমি একটু ওয়েট করো।’

প্রেমতৃষা পর্ব ১৭

তৃষা ইশারায় সম্মতি দিলো। ভালোই সময় চলে গেল কিন্তু প্রেমার এখনো আসার নাম নেই। হঠাৎ মনে হলো কেউ তার চুলে হাত দিয়েছে। একটা অসাধারণ সুগন্ধি নাকে আসে তৃষার। তৃষার এই সুগন্ধিটা পরিচিত। সে অনুভব করল কেবল তার চুলেই হাত দেওয়া হয়নি বরং তার চুলে মুখ গুঁজে কেউ একজন তৃপ্তি খুঁজে নিচ্ছে। পেছনে তাকানোর আগেই সেই ব্যক্তি তার থুতনিটা তৃষা কাঁধে রেখে বলল, ‘হ্যালো সুইটহার্ট।’

প্রেমতৃষা পর্ব ১৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here