প্রেমতৃষা পর্ব ২২

প্রেমতৃষা পর্ব ২২
ইশরাত জাহান জেরিন

তৃষার ঘুমটা পাতলা হলেই সে নড়েচড়ে উঠল। পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। উঠে বসতেই দেখল বারান্দার পর্দা গুলো নড়ছে। বাইরে বাতাস ছেড়েছে নাকি? ইদানীং আবহাওয়া কেমন রঙ বদলাচ্ছে। অসময়ে আগমন ঘটা জিনিসগুলোর প্রতি মানুষের কেমন যেন বিরক্তি কাজ করে। তবে এই অসময়ে আসা বৃষ্টির প্রতি বিরক্তিবোধ হচ্ছে না। সে কি একটা ভেবে পেটে হাত দেয়। নাভির কাছটায় পিঁপড়া কামড় দিলো নাকি? চুলকে আবারও বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। ঘুমের মাঝে এত জ্বালা একেবারে সহ্য হয় না তার।

যুবরাজের সঙ্গে রাজনীতিবিধ ফাহাদ শেখের ঝামেলা অনেক আগ থেকেই। ব্যাটা খচ্চরের বংশ শেখ অথচ দল করে বিএনপির। সব কাজে বাম হাত ডুকানো তার পছন্দের কাজ। যুবরাজের পেছনে না লাগলে তার পেটের ভাত হজম হয় না। এবার যুবরাজ সরকারও বুঝাবে সে কি জিনিস। সরকার বংশের ছেলে সে। যেন-তেন মানুষ না। বংশগত ভাবে সেও রাজনীতি করে আসছে। এই রাজনীতির মঞ্চে পাক্কা খেলোয়াড় হয়েই সে নেমেছে। যুবরাজ শুনেছে ফাহাদের একটা মেয়ে আছে। কখনো মিডিয়ার সামনে তিনি সেই মেয়েকে আনেননি। কেন আনেননি জিজ্ঞেস করলেই বললেন আমার মেয়ে এসবে অস্বস্তি বোধ করে। মেয়েটা দেখতেও নাকি একটুও সুন্দর না। কোনো কাজেরও না তবে ফাহাদের অতি প্রিয়। শত্রু অনেক দেখে মেয়েকে আড়ালেই রেখেছেন। আর কোনো সন্তানও নেই। যুবরাজ শেখ বাড়ির পেছন গাড়ি থামাতে বলে রাফসানকে বলল, ‘সব ব্যবস্থা আমার করা আছে। মেয়েটাকে আমার চাই।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘মেরে ফেলবেন?’
‘সুন্দর হলে না হয় ভেবে দেখতাম।’
‘আপনি দেখেছেন?’
‘না শুনেছি।’
‘শোনা কথায় কান দিতে নেই।’
‘তাহলে জলদি তুলে এনে দেখার ব্যবস্থাটা করে দাও মিস্টার গবেট।’

সামনে পরীক্ষা। ক্লাস মিস করা যাবে না এখন। সকাল সকাল প্রেম নেওয়াজের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল তৃষা। পেল না তাকে। ভালোই হয়েছে একটা দিন শান্তিতে থাকা যাবে। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে কানে এয়ারফোন গুজে পছন্দের বয় ব্রান্ড প্রিমরোজের গান শুনছে তৃষা। প্রিমরোজ ব্রান্ডে মেইন ভোকালিস্টকে সবাই আঁধার নামেই চিনে। সকল ধরণের গান গায় এই ছেলেটা। তবে কখনো পরিচয় জানা যায় নি। আদৌও আঁধার নামক কেউ আছে নাকি তা তৃষার জানা নেই। তবে তৃষার এই কণ্ঠস্বরের ব্যক্তিকে দেখার খুব ইচ্ছে। কবে যে এই লুকায়িত কণ্ঠের জাদুকর সামনে আসবে। শিমলা এসে পাশে বসতেই জিজ্ঞেস করল, ‘আঁধারের গান শুনছিস?’

‘না তোর ভাতারের গান শুনছি শালী।’
‘মুখের কি ছিড়ি। সুন্দর করে কথা বলতে পারিস না?’
‘সুন্দরের নানির পেছন ফাঁকা তো তাই আমার দিয়ে ওসব আসে না।’
‘তোর জন্য একটা খবর নিয়ে এসেছি। সেই রকম একটা খবর।’
‘কেডা মরলো? চল্লিশায় কিন্তু মাস্ট বি খালি তেহারি করতে বলবি।’
‘আরে কি সব অলক্ষুণে কথা? কেউ মরবে কেন? তোর ওই যে আঁধার আছে না? সে এইবার ফেইস রিভিল করবে। ঢাকাতেই তার প্রথম লাইভ কনসার্ট হবে। ভাই আমি তো এখনি আধাঁর কে দেখার জন্য ছটফট করছি। আধারের প্রেমরোজ ব্রান্ডের কনসার্ট। তাও সোলো কনসার্ট। ওর কত কত ভক্ত। শুনেছি টিকেট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। যেই হারে মানুষ তাকে দেখার জন্য টিকিট কিনছে আমরা পাবো তোর মনে হয়?’

‘টিকিটের দাম কত?’
‘২৫০০ এক একজন।’
‘শালার কপাল। এই বোন তুই আমায় ২৫০০ টাকা ধার দে। মাইনে পেলে ফেরত দিয়ে দেব। যদি মাইনে না পাই ফুটপাতে ভিক্ষা করে হলেও চুকিয়ে দেব।’
‘আচ্ছা বাবা বুঝেছি। তাহলে অংকুরকে বলি টিকিটের ব্যবস্থা করতে?’
তৃষা সরু চোখে শিমলার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে মিটিমিটি হাসতেই শিমলা লজ্জা পেল। তৃষা ফের জিজ্ঞেস করল, ‘ওমাগো আমার আগে চশমিস তোর প্রেমও হয়ে গেল? উহুম উহুম! চুমু-টুুমুও হয়েছে নিশ্চয়ই? তলে তলে এতকিছু? এই দেখ তোর বরের জুতা কিন্তু বিয়ের সময় আমিই চুরি করব।’
শিমলা লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল, ‘আরে বাবা এতদূর যাওয়ার কিছু নেই। আমরা কেবল কথা বলেছি। সে আমায় একবারও বলেনি ভালোবাসে আমিও বলিনি। এমনি আমাদের কথা হয় আরকি।’

‘শুন কেউ কেউ আছে মুখে ভালোবাসি বলতে পারে না। তবুও যেন বিশ্ব উজার করে ভালোবাসতে জানে। পুরুষ মানুষ বুঝলি তো এমনই। সব কিছু প্রকাশ করতে পারে না। তবে দেখবি কাজে কর্মে বুঝিয়ে দেবে সে কতখানি ভালোবাসতে জানে।’
‘হয়েছে হয়েছে আর প্রেমের বাণী শুনতে চাই না। তোর ওই বাড়িতে কেমন দিন কাটছে।’
‘কাটছে মোটামুটি।’
‘এই শুন তুই কিন্তু প্রেম ভাইয়ের সঙ্গেই প্রেমটা করতে পারিস। এই তোর তুই প্রেম ভাইয়ের বউ হলি আর আমি অংকুরের। তারা দুই বেস্ট ফ্রেন্ড আর আমি তুই। সবাই মিলে একসঙ্গে বিয়ে করব। ঘুরতে যাব ভালো হবে না?’
তৃষার শরীর শিরশির করে উঠল। ওই হারে বজ্জাতের সঙ্গে আবার প্রেম? ভাবলেই তো ভয় ভয় করে। তৃষা শিমলার আরেকটু কাছে এসে বলল, ‘প্রেম ভাইয়ের ওইখানে সমস্যা আছে।’

‘কোথায়? ওমা সেকি রে তুই কেমন করে জানলি?’
‘না থাকলে এতদিনে বিয়ে করে এতগুলো বাচ্চার বাবা হয়ে যেত। প্রেমও তো করতে পারে না। করবে কেমন করে? সমস্যা ওইখানে।’ বলেই তৃষা মিটিমিটি করে হাসল। হেসে বলল, ‘এই খবর তুই ভার্সিটির সবাইকে বলে দিস। সেই মজা হবে।’ শিমলা হাসবে কি হাসবে না ভাবতে ভাবতে তার চোখ গেল তৃষার পেছনে। সে মুহূর্তেই চুপসে গেল। তৃষা ফের বলল, ‘আমি এআই দিয়ে তার মুখ লাগিয়ে একটা ভিডিও বানাবো। ভিডিওতে সে বলবে কোন বিশেষ কারনে তার নাম প্রেম হয়েও এখনো হচ্ছে না।’ শিমলা চোখের ইশারা দিয়েও তৃষাকে সামাল দিতে পারছে না। তৃষা বলেই যাচ্ছে। হো হো করে হাসছে আর শিমলার গায়ের ওপর লুটিয়ে পড়ে কষিয়ে চড়-চাপড় দিচ্ছে। হেসে আবার বলে উঠল, ‘অংকুর ভাই যদি তোকে বিয়ে না করে, প্রেম না করে তাহলে তারও এআই দিয়ে ভিডিও বানিয়ে তাকেও বদনাম করে দেব।’

শিমলা এবার চিমটি মারতেই তৃষা বলল, ‘শালী আমি তোমার অংকুর নাকি? যাও গিয়ে অংকুরকে জায়গা মতো চিমটি মেরে আসো।’
‘পেছনে দেখ।’
তৃষা ভাবলেশহীন ভাবে পেছনে ফিরতেই বরফের মতো জমে গেল। ওমা স্বয়ং যমদূত দেখি! প্রেম ভাই যে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই আবার অংকুর। দু’জনেই তৃষার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রেমকে যে কি হট লাগছে। লাগবে না কেন? হালকা আকাশি রঙের একটা শার্ট পড়েছে। তবে আজকে আর সাদা নয় বরং কালো প্যান্ট পড়া। হাতের ব্রেসলাইটটাও তো দারুন। বাদামী রঙের সরু ফক্সআই গুলো তারই পানে তাকিয়ে আছে। প্রেম ভাইয়ের বাম হাতটা প্যান্টের পকেটে গুঁজে রাখা। পাশের অংকুরটা কম কিসে যায়? বুক খোলা নেভীব্লু রঙের শার্টের সঙ্গে জিন্সের প্যান্টে চমৎকার লাগছে তাকে। প্রেমকে দেখে তৃষা ভাজা মাছটা খেতে জানে না এমন ভাব করে বলল, ‘আরে আসসালামু ওয়ালাইকুম প্রেম ভাই? দিনকাল ঝরঝরে ফকফকা যাচ্ছে তো? আচ্ছা যাই বুঝলেন তো। সামনে পরীক্ষা কিছুই পারি না গো।’

‘এত তাড়া কিসের। ডিপার্টমেন্ট তো আমাদের একই। আমি তো আছি তোমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। কি যেন সমস্যার কথা বলছিলে? ‘
তৃষা কি বলবে না বলবে ভাবতে ভাবতে শিমলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার বান্ধবীর একটা চ্যাপ্টারে সমস্যা। বুঝিয়ে দিবেন? তো দেন।’ তৃষা শিমলার দিকে তাকালো। বলল, ‘ যাহ প্রেম ভাই মার্কামারা বুঝানি দেয়। এবার প্রথমও হয়ে যেতে পারবি।’ শিমলা পড়েছে বিপদে। মাঝ থেকে তাকে এমন করে ফাঁসানো? কাজটা ঠিক হলো না একেবারে। তবে ঘটনা আগানোর আগেই অংকুর মাঝে ঢুকে বলল, ‘শিমলার সমস্যা আমি দেখে নেব। সব সাহায্য তুই একাই করবি নাকি? আমাকেও কিছু করতে দে?’ প্রেম পাত্তা দিলো না।

তার নজর এখনো তৃষার ওপরে। তৃষা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তার হোয়াটসঅ্যাপে একটা নাম্বার থেকে ভয়েজ ম্যাসেজ আসতেই সে ক্লিক করল। তাতেই শরীর জমে ক্ষীর। বুঝতে বাকি রইল না প্রেম ভাইয়ের যে এসব কাজ। শেষে কিনা ওই রাতের চুমুর শব্দ আর ঝগড়াঝাটি এই খারাপ লোকটা রেকর্ড করে রেখেছে? প্রেম এবার তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তৃষা তোমার সমস্যাটা আমি রাতে সমাধান করব। কোন চ্যাপ্টারে সমস্যা তখন না হয় বলবে।’
‘দেখুন রাতে ভার্সিটি আসতে পারব না। ঝিনঝিরা থেকে এখানে আসতে হেব্বি খরচা হয়।’
‘এখানে নয় বেডরুমে এসো আমার। কিছু সমস্যা বেডরুম ছাড়া সমাধান করা যায় না।’
‘আরে যায় যায় সব খানেই যায়।’
‘চলো তাহলে ট্রাই করে দেখি।’

ভার্সিটির ফাঁকা জায়গায় তৃষা এই গরমের মধ্যে একটা মেয়ের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলায় মাতোয়ারা। কে নাকি তাকে বলেছে এই গরমে এসব খেললে নাকি ডায়েট হয়। শরীর হলিউডের নায়িকদের মতো জিরো ফিগার থাকে। তাই সে আপাতত সেই চেষ্টাই করছে। এক কোণে কিছু ছেলে বাইকে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তার কিছুটা দূরে প্রেম ফোন টিপছে। মাঝে মাঝে আবার তৃষাকে দেখছে। এই মেয়ের কপালে দুঃখ আছে বিরাট। এমন বানরের মতো নাচন-কুদন না করলেই কি নয়? মন তো চাইছে জামার মধ্যে ছাড়পোকা ছেড়ে দিতে। যখন কামড় খাবে তখন বুঝবে নাচার মজা কেমন! কোণে আড্ডা দেওয়া ছেলে দুটোর মধ্যে চিকন করে ছেলেটি বলল, ‘দেখ দেখ হেব্বি মাল! কোন ডিপার্টমেন্টরে?’

“আমি কি জানি।’
‘যা গিয়ে নাম্বার জোগাড় কর।’
‘মনে হয় না পাত্তা দিবে। চালু মেয়ে লাগছে।’
‘কি বলিস? আমি রনি এর থেকেও সুন্দরী মেয়ে আমার টাকায় কিনেছি। আমার মুতের স্পিডের থেকেও জলদি আমি মেয়ে মানুষকে বিছানায় আনতে পারি।’ বলেই দু’জনে আবার হাসল। প্রেম উঠে দাঁড়াতেই অংকুর বলল, ‘কই যাস ভাই?’
‘মুততে। মুতের প্রতিযোগিতায় নামব বুঝলি! দেখতে হবে না আমার স্পিড আলালের ঘরের দুলালকে টেক্কা দিতে পারি কিনা।’

অংকুর জবাব দিলো না। কেবল হেসে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলে দুটোকে ডেকে বলল, ‘এই ভাই চলো মুতে আসি।’
রনি জিজ্ঞেস করল, ‘কই যাব?’
‘আরে চিপায় আসো না। পিরিতের আলাপ করি।’
রনির আর তার বন্ধুকে না চাইতেও উঠে আসতে হলো কারণ সিনিয়র বলে কথা। অবাধ্য হলে জীবন তেজপাতা।’
রনি আর তার সাথের ছেলেটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রেম হঠাৎ করে পিস্তলটা বের করে রনির কপালে ঠেকাতেই সে কেঁদে উঠল, ‘ভাই কি করেছি ভাই? এমন করছেন কেন?’
‘তোর মুতের স্পিডটা দেখালি না যে। তাই কষ্ট পেলাম। সোজা বুকে এসে লাগল রে জানেজিগার।’
রনির আর বুঝতে বাকি রইল না। প্রেম ভাই যে সবটা শুনেছে। সে প্রেমের পা ধরে বসে ক্ষমা চাইতেই প্রেম পা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘তুই যদি এখান থেকে একচুল নড়িস তাহলে মূত্রবিসর্জন তো দূরের বিষয় ওই মূল্যবান সম্পদও আর জায়গায় থাকবে না।’

বলেই সে প্যান্টের জিপার খুলতেই অংকুর হেসে দিলো। তাকে রঙ রাঙিয়ে প্রেম রনিকে বলল, ‘এই রনি একটা গান ধর। গানের সুরে আমি আবার ভালো কাজ সারতে পারি। আই মিন স্পিডটা আমারও বারে।’ বলেই সে রনির গায়ের ওপর কাজটা সারল। রনি ভয়ে সবটা সহ্য করে নিলো। জীবন বাঁচলেই হয়। কাজ শেষ করে প্যান্টের জিপার লাগাতে লাগাতে প্রেম হুমকির স্বরে রনিকে বলল, ‘ওই তৃষা তোর মা লাগে। কি লাগে তোর?’
‘ম…মা।’
‘হ্যাঁ ঠিক তাই। আর বাজে কথা বলবি ওকে নিয়ে?’

প্রেমতৃষা পর্ব ২১

‘না ভাই জীবনেও না।’
‘বললে কি হবে?’
‘আপনি আমাকে আরেকবার খৎনা করাইয়া দিবেন।’
‘দ্যাটস মাই বয়। এই অংকুর আমি দুই মিনিটে হাতটা ধুয়ে আসছি। তুই তৃষাকে গিয়ে বল আমার বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। ওর খবর বাসায় গিয়ে নিচ্ছি।’

প্রেমতৃষা পর্ব ২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here