প্রেমতৃষা পর্ব ৭
ইশরাত জাহান জেরিন
প্রেম বাসায় এসে গোসল সেরে নিল। ভেজা চুলের ডগা থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। সুঠাম দেহের সঙ্গে কালো রঙের টাওয়ালটা কেমন করে জড়িয়ে আছে! এই প্রেমকে দেখে কার না প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করবে?
আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ গেল বুকের দিকে। ডান পাশের বুকের ওপর একটি হৃদপিণ্ডের অসম্পূর্ণ ট্যাটু। অথচ হৃদপিণ্ড তো থাকে বাম পাশে। তবে প্রেম কেন ডান পাশে ট্যাটু করালো? সে কি বোঝাতে চাইছে অন্ধকারের ছায়াদের হৃদপিণ্ড ডান পাশে থাকে?
প্রেমের বয়স তখন ২১। সেই সময়ই এই ট্যাটু করিয়েছিল। আর এই ট্যাটু করিয়েছিল ওই নাইটক্লাবের ইরিন নামের মেয়েটির কাছ থেকেই। ইরিনের বয়স তখন আঠারো। ক্লাবে তাকে জোর করে আনা হয়েছিল। কিন্তু তার ট্যাটু করার হাত ছিল দারুণ। যদিও সবকিছুই তখন ইরিনের জন্য নতুন ছিল, তবুও সেই দিন প্রেম হঠাৎ কী ভেবে এই ট্যাটুর সিদ্ধান্ত নিল তা সে নিজেই ভালো বলতে পারবে। জন্মদিন প্রেমের কাছে অভিশাপ ছাড়া কিছু নয়। আসলে নিজের জন্মকেই সে অভিশাপ বলে মনে করে। তাই জন্মদিনের দিন বাসায় থাকে না সে। প্রচুর নেশা করে, বাইক রাইড করে, আর প্রতি বছর ক্লাবে একটা পার্টি দেয়। আসলে অন্যদের আনন্দ দেওয়ার আড়ালে সে যেন বলতে চায়, কারো সুখ অন্যের দুঃখের কারণও হতে পারে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নেশাখোরদের জীবনে সুখ বলে কিছু থাকে না। অথচ যারা আজ নেশার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে, তারাও একদিন সুস্থ মানুষ ছিল। তারাও হাসতো, স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু জীবনের একেকটা অতীত, দুঃখ আর যন্ত্রণা মানুষকে খারাপ করে দেয়। কেউ দুঃখ ভুলতে নেশার দারস্থ হয়, কেউ ভালোবাসায় ছলনার শিকার হয়ে, কেউ পারিবারিক চাপে, কেউ বা পরীক্ষায় ব্যর্থতার আক্ষেপে নেশাকে বেছে নেয়। অথচ নেশা হচ্ছে বিশ্বাসঘাতক বন্ধু, ক্ষণিকের সুখের বদলে কেড়ে নেয় পুরো জীবনটাকে।
প্রতি জন্মদিনে প্রেম আসে ইরিনের কাছে— শুধু এই ট্যাটুটাকে ভরাট করার জন্য। বাকি সময়ে সে আর ইরিনের কাছে যায় না। প্রেমের জীবনে কোনো সঙ্গী নেই, সে নারী কিংবা সংসার কিছুই চায় না। প্রেম মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তার মধ্যে ভালোবাসার অনুভূতি জন্মাতে পারে না। ভালোবাসাকে সে ঘৃণা করে। ইরিনের সঙ্গে একসময় বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু যখন প্রেম বুঝল ইরিন তাকে অন্যভাবে দেখতে শুরু করেছে, তখন ধীরে ধীরে সরে যায়। এখনো প্রতিবছর শুধু ট্যাটুর জন্যই যায় সেখানে। উপরের রুমটায় বসেই ইরিন ট্যাটু ভরাট করে। প্রেমও ভরাট করিয়েই চলে আসে। হয়তো যেদিন ট্যাটুটি পুরোপুরি শেষ হবে, সেদিন থেকে আর কোনোদিন ইরিনের কাছে ফিরবে না।
প্রেম সাদা রঙের শার্ট পরে বাগানে গেল। নিজের হাতে গড়া ফুলের বাগান। গাছভর্তি নানা রঙের ফুল। দেখলেই মনে শান্তি নামে। তবে সবচেয়ে প্রিয় তার লাল গোলাপ। অনেকগুলো গাছ আছে। সে কয়েকটা গোলাপ কেটে ঘরে নিয়ে গেল, ফুলদানিতে পানি ভরে তাতে সাজিয়ে রাখবে। ফুলগুলো রেখে প্রেম গেল কিচেনে। ফ্রিজ থেকে বিফ বের করে যত্ন করে কাটতে শুরু করল। বড় একটা হাড়সহ মাংস। হাতে সদ্য কেনা ধারালো চাপাতি। কাটতে হবে তো! কিন্তু তবুও কেমন যেন চাপাতি চালাতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। তাই ফোনে গান ছেড়ে দিল। গান ছাড়া কাজ করতে প্রেমের বোরিং লাগে।
ফোনে তখন বাজছে,
“প্রেম আমার… ওওও প্রেম আমার…”
সুরের সঙ্গে মিলিয়ে প্রেমও গুনগুন করে গাইছে। আর সেই সুরের ছন্দে মাংসে কোপ বসাচ্ছে চাপাতি দিয়ে। এটাই তো প্রেমের কাছে আসল ফিলিংস।
প্রত্যুষ সরাসরি এখান থেকে শাওয়ার নিয়েই তৈরি হয়। তারপর তৃষাকে নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে। এই মেয়ের নামটাই জিজ্ঞেস করা হয়নি। তবে বারবার এর সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যুষ বিনয়ের সঙ্গে তৃষাকে জিজ্ঞেস করল, ‘নাম কী তোমার? বাসা কোথায়?’
‘তৃষা নুজায়াত। বাসা এই তো এদিকেই।’ তবে মনে মনে সে বলে উঠল, ‘বাসা যেখানেই হোক না আপাতত তোমার মনের মধ্যেই বানাতে চাই।’
প্রত্যুষ হেসে বলল, ‘এখানে কেন আসা? মানে জিম লাভার নাকি?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ একেবারে ছোটকাল থেকে। কিন্তু আমার মনের মতো কোনো জিম সেন্টার বাংলাদেশে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।’
‘কিন্তু ওই জিমটা কিন্তু আহামরি ছিল।’
‘আসলেই?’
‘হুম।’
‘ওহ আচ্ছা তাহলে বোধহয় আমার দেখতে একটু সমস্যা হয়েছে।’
প্রত্যুষ জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার ট্রেইনার আছে? মানে জিম ট্রেইনার?’
‘নেই তবে আপনি চাইলে হতে পারেন।’
প্রত্যুষ হাসল। তারপর বলল, ‘হতে পারতাম তবে আমার আরো অনেক কাজ আছে।’
‘আপনি কাজ কী করেন?’
‘মানুষ খুন।’
তৃষা চোখ বড় করল, ‘কী! মানুষ খুন?’
‘মানে যারা মানুষ খুন করে তাদের খুঁজে বের করি।’
তৃষা বলল, ‘ওমা পুলিশের লোক?’
‘না। ইন্টেলিজেন্স অফিসার।’
‘তার মানে তো আপনার মাথায় অনেক বেশি বুদ্ধি।’
‘বলা যায়।’
‘আপনার নামটাই তো জানলাম না।’
‘প্রত্যুষ দেওয়ান।’
এক মুহূর্তে প্রেমের নামটা মাথায় এলো তৃষার। আজকাল খালি প অক্ষরের নামের মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে। তবুও দেখো না কোথায় ওই প্রেম আর কোথায় এই প্রত্যুষ দেওয়ান। হঠাৎ ঠিক তৃষার সামনের সিটে বারবার দুজন ছেলে এসে বসল। এতক্ষণ দু’জনে পেছনে ছিল। প্রত্যুষ বিষয়টি লক্ষ করে। তবে সে কেবল একবার তাকিয়ে আবারও ফোনের দিকে তাকায়। এখানে সে এমনি এমনি আসেনি। তৃষা তো অজুহাত ছিল। একটা বিষয়ে তদন্তের জন্য আসা। তবে তদন্ত হবে কী করে? ক্রিমিনাল যে ডিল করতে এখনো এলো না। হঠাৎ তৃষা ফোনের অফ স্ক্রিনে দেখল ঠোঁটের লিপস্টিক কেমন যেন একা ফিকে হয়ে গেছে। সমস্যা একটাই। কিছু খেলেই লিপস্টিক পেটে চলে যায়। হোক তা অনেক দামী লিপস্টিক কিংবা ওয়াটার প্রুফ। এখন এই হ্যান্ডসামের সামনে তো আর লিপস্টিক লাগানো যাবে না। তাকে তো বোঝাতে হবে তৃষার ঠোঁট জন্ম থেকেই এমন। বিড়ি খাওয়াদের মতো নয় বরং জন্মের দিনই লিপস্টিক দেওয়া সহ পয়দা হয়েছিল। এখন খালি কালার চেঞ্জ হয়। সে প্রত্যুষকে বলল, ‘আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি। জাস্ট দুই মিনিট।’
‘হ্যাঁ সিউর।’
মেইল আর ফিমেল ওয়াশরুম পাশাপাশি। তবে ওয়াশরুমে তৃষা গেল না। গেল বেসিনের আয়নার সামনে। সে উঠে যেতেই ছেলে দু’টো উঠে গেল। যেতে যেতে বলল, ‘হাব্বে হালা কড়ক জিনিস একখান। এরে হাতছাড়া করি ক্যালা ক তো?’
‘হাঁচা কইচোস কাদের। তবে মাইয়া মনে হয় না পুরান ঢাকার।’
‘তাতে কী? জিনিস তো জব্বর।’
তারা উঠে ওয়াশরুমের দিকে যায়। প্রত্যুষ একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা পকেটে রেখে তাঁদের পেছনে ওয়াশরুমের দিকে যায়। ছেলে দুটোর মধ্যকার একজন তৃষার পেছনে এসে দাঁড়াতেই তৃষা আয়নার দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গে দৃষ্টি মেলায়। তার হয়তো বুঝতে বাকি নেই। ছেলে দু’টো তাকে দেখে বিশ্রী হাসি দেয়। সেই হাসি দেখে আস্তে করে ব্যাগের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়। সেখান থেকে কাটার বের করার আগেই দরজার সামনে প্রত্যুষ এসে দাঁড়ায়। ছেলেদুটোর উদ্দেশে বলে, ‘বলো কোন হাসপাতালে যেতে চাও? আর কেমন থেরাপি লাগবে?’
তৃষা ততক্ষণে আর কাটার বের করল না। তবে ভেবেছিল বিষয়টা শেষ হবে এখানেই। কিন্তু না, প্রত্যুষ কাদের নামক ছেলেটিকে বলল, ‘কোন হাসপাতালে যাবা বলো? সেখানকার সিট বুকিং দিতে হবে তো?’
ছেলেটার কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রত্যুষ তার গায়ে হাত তুলল। নাক বরাবর কয়েকটা ঘুষি দিতেই রক্ত বেরিয়ে এলো। পাশের ছেলেটার শক্তি হচ্ছে না প্রত্যুষের হাত থেকে তার বন্ধুকে রক্ষা করার। ওদিকে তৃষা তো কেবল হা হয়ে রইল। এত জেন্টলম্যান এই ছেলে? এই ছেলের মার দেওয়ার স্টাইল কী জোস! সে জানে কোথায় মারলে শত্রুকে সহজেই নাজেহাল করা যাবে। ছেলেগুলো দৌড়ে পালিয়ে যেতেই প্রত্যুষ নিজের কলার ঠিক করে বলল, ‘ধ্যাৎ সকালেই তো আয়রন করেছিলাম। যাক, ব্যাপার না। তৃষা তুমি ঠিক আছো?’
তৃষার তো কোনো পাত্তা নেই। সে হা করে প্রত্যুষকে দেখছে।
‘ঠিক আছো তৃষা? কথা বলছো না যে?’
তৃষা প্রত্যুষের দিকে ওইভাবেই তাকিয়ে রইল। এতদিনে মনের মতো ছেলে পেয়েছে। বউ হলে এর বউই হবে। কিন্তু পটাবে কেমন করে? হঠাৎ তৃষার মাথায় বুদ্ধি এলো। এই বুদ্ধি হলো ছেলে পটানোর বুদ্ধি নাম্বার এক। কাজে না লাগলে বাকি গুলোও ট্রাই করবে। তৃষা চোখ পিটপিট করে, কপালে হাত দিয়ে বলল, ‘ঠিক নেই আমি। আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো। মাথাটা ঘুরছে। ওমা গেলাম পড়ে। কেউ প্লিজ আমায় কোলে নিয়ে সাহায্য করুন।’ বলতে না বলতেই ধপাস করে প্রত্যুষের গায়ে হেলে পড়তে যাবে, তার আগেই প্রত্যুষের কল এলো। সে সাইড হতেই ধপাস করে আবারও তৃষা পড়ে গেল। তা দেখে প্রত্যুষ তার দিকে চেয়ে বলল, ‘এখানেও বুঝি চিৎপটাং জিম করছেন? নাকি এটা বাথরুম জিম?’
কালুর বাপ লুঙ্গি হা করে বিছানায় শুয়ে আছে। খালি গায়ে হাওয়া-বাতাস লাগলেই হবে নাকি? দেহ-মন, সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য হাওয়া-বাতাস গুরুত্বপূর্ণ। ইদানীং কালুর বাপের বিয়ে বিয়ে ফিলিংস পায়। করেই ফেলবে নাকি? তাছাড়া এলাকার মেয়েগুলোও তো বিশাল জ্বালায় তাকে। সুন্দর হয়েও পড়েছে বিপদে। ইশ, মাঝে মাঝে নিজেরই লজ্জা লজ্জা করে। বউ নার্গিসের স্মরণে তার একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে। গাইবে নাকি? দরজাটা তখন খোলাই ছিল, হঠাৎ সিদ্দিক নেওয়াজ আচমকা ঘরের মধ্যে ঢুকে কালুর বাপকে এই অবস্থায় দেখেই তো মাথাটা তার গোল গোল ঘুরতে শুরু করল। মোখলেস জলদি উঠে বসে লুঙ্গি ঠিক করতেই সিদ্দিক বলল, ‘ওই পঁচে যাওয়া জোঁকটাকে গ্যালারির ফটোর মতো প্রদর্শন না করলেই কী নয়? বুড়ো বয়সে ভিমরতি।’
‘যা দুষ্টু। ওদিকে নজর দিলেই কী নয়?’
‘কালুর বাপ!’
‘ক্ষমা করবেন, সবাইকে তো আজকাল নার্গিস মনে হয়, কাকে যে কী বলে ফেলি। তবে আপনি কিন্তু আমার বিশেষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে অপমান করছেন।’
‘ঠেঙ্গা করছি। যাও গিয়ে আমার নাতির জন্য খাসা মেয়ে খুঁজে আনো।’
হেতিজা, প্রেমার চোখে শশা লাগিয়ে রাখতে বলেছিল। প্রেমা সেই শশা খেয়ে বসে আছে। এই রূপচর্চা কত কঠিন কাজ। আর তার এইসবের দরকার কী? সে তো এমনিতেই ঝাক্কাস আছে। সেদিন কালো গাড়িটা নিয়ে প্রেম ভাই লেদার জ্যাকেট পরে যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল, তখন তো প্রেমা আরো একবার তার প্রেমে পড়ল। উফস, চোখের চশমা, আর বডিটা কী আকর্ষণীয়। দেখলেই মন চায় বউ হয়ে যেতে। রাতে এই এমন একটা পুরুষ তখন তার পাশে থাকবে ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়। প্রেমার মা সেদিন প্রেমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘হ্যারে প্রেমা তোর কেমন ছেলে পছন্দ?’ প্রেমা ড্রাইভিং সিটে বসা প্রেমকে দেখে বলেছিল, ‘একটা ড্রাইভারকেই চাই। ওমন ছেলে হলেই হবে।’
রাত তখন দশটা বাজে। প্রেম ভাই ফিরবে আরো রাতে।
আজকে সবাই ঘুমালে চুপিচুপি প্রেম ভাইয়ের রুমে যাবে প্রেমা। প্রেম ভাই কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারে না। সে গিয়ে প্রেম ভাইয়ের কোলবালিশ সরিয়ে, না হয় স্বান্তনা স্বরূপ তার কোলবালিশ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রত্যুষ ভাই যেন এসব না জানে। ওই লোক প্রেম ভাইকে যে কেন এত অপছন্দ করে! মানে দু’জনের মধ্যে বনে না। বনবে কী করে? একজন ক্রিমিনাল, অন্যজন আইনের লোক। বাট ক্রিমিনাল হয়েছে তাতে কী? প্রেমার ওইসবই ভালো লাগে। রাগ করে প্রেম তাকে যখন ধমক দেয় তখন ডার্ক একটা ভাইব আসে। কিংবা কখনো যখন রাগের বশে একেবারে কাছে এসে শক্ত করে থুঁতনিটা চেপে ধরে, তখন তো লজ্জায় ব্যথা, যন্ত্রণা সব ভুলে যায়। কবে যে বিয়ে হবে। আচ্ছা, ওই ক্রিমিনালটার সঙ্গে তার বিয়ে হলে সে বাচ্চার নাম কী রাখবে? দু’জনের নামই তো প দিয়ে। আজকে ফেসবুক গ্রুপে একটা সাহায্য মূলক পোস্ট করতে হবে। দেখা যাক কে সুন্দর নাম সাজেস্ট করে। হঠাৎ হেতিজা রুমে ঢুকে বললেন,
‘হ্যারে প্রেমা তোর মন মতো একটা ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করেছি।’
প্রেমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেলে কী করে?’
‘বাসের ড্রাইভার।’
‘কী?’
‘কী মানে আবার কী? তুই না সেদিন বললি ড্রাইভারের সঙ্গে বিয়ে করবি? ছেলে একটু কালো, আর খাটো কিন্তু ওর দুইটা বাস আছে। একটা সে নিজে চালায়, অন্যটা ভাড়া দেওয়া। দেখিস একদিন কোটিপতি হবি তোরা। অমিতাভ বচ্চনের সূর্যবংশম ছবিটা দেখিস নি? হীরা কেমন বাস চালিয়ে কোটিপতি হয়। তুই আর ওই ড্রাইভারও হবি একদিন।’
‘আম্মুউউউউউউউউ!’
প্রেম সকালে ভার্সিটি এসে দেখে আজকেও তৃষা আসেনি। কত বড় সাহস ওই মেয়ের! পরপর দুদিন সালাম দেয়নি প্রেমকে। ওর তো উচিত ছিল দুদিনের সালাম একেবারে বাসা থেকে খামে ভরে কুরিয়ার করার। করল কী? কত রিডিকিউলাস একজন মেয়ে। মন তো চায় ধরে চুলগুলো কেটে দিতে। শালীর ঘরের তাড়ছেঁড়া একটা। আসুক এইবার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দেবে।
সারাদিন এইসব বলে নিজেকে চুপ করিয়ে রাখলেও শেষে গিয়ে শিমলাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে অ্যাড্রেস নিয়ে বাসায় গিয়ে হাজির হয়। শিমলার বাবা-মা গিয়েছে দাওয়াতে। বাসা তখন পুরো ফাঁকা। শিমলা যে আগ বাড়িয়ে কল করে তৃষাকে সতর্কবার্তা দেবে তার উপায়ও নেই। থাকবে কেমন করে? অঙ্কুরের দায়িত্বে শিমলাকে রেখে গেছে প্রেম। ফোনটা কেড়ে নিয়েছে সে।
তৃষা তখন মুখে বেসন লাগিয়ে বসে আছে। ইশ আবার কখন না কখন প্রত্যুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়! ফেসবুক আইডিও ছলে বলে কৌশলে নিয়েছে। এবার একটা নক দিলেই হয়। সে তো ব্যস্ত মানুষ। এখন দেওয়া যাবে না।
তৃষা মুখটা ধুয়ে বসতে যাবে রুমে, সঙ্গে সঙ্গে দরজায় কে যেন কলিং বেল প্রেস করল। “ধ্যাৎ! কোন ফাটা গোবিন্দ এমন সময় এলো? ওমা চোর নাকি?”
রান্নাঘর থেকে বটি হাতে আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো তৃষা। দরজা খুলতেই প্রেমকে দেখল।
প্রেম বলল,’ এই বালমার্কা বাসায় একটা লিফট লাগাতে পারো না? পাঁচ তলায় উঠতে গিয়ে পা ব্যথা হয়ে গেল।’
তৃষা চমকে জিজ্ঞেস করল, ‘ আপনি?’
প্রেম ঠোঁটে হাসি টেনে বলল, ‘না, তোমার ভাতার।’
তৃষা বিভ্রান্তে জিজ্ঞেস করল, ‘ প্রেম ভাইয়া, আপনি এখানে কী করে?’
প্রেম তৃষাকে ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকে পড়ল। পেছন ফিরে তৃষাকে দেখে বলল,’ গা এমন ভেজা কেন? খুব পরিশ্রমের কাজ করেছো মনে হচ্ছে? ঘরে কেউ আছে নাকি?’
তৃষা আতঙ্কে বলল, ‘ আপনি এখান থেকে যাবেন?’
প্রেম পাত্তা না দিয়ে সরাসরি বিছানায় গিয়ে বসে বসল। তারপর বলল,’ বিছানায় এসো।’
তৃষা ভয়ে বলল, ‘কেন, আপনি কী আমার ইজ্জত হরণ করতে চান নাকি? আইনের লোককে কল করব।’
প্রেমতৃষা পর্ব ৬
প্রেম ব্যঙ্গ করল, ‘ তোর ইজ্জত আছে? তুই ভালোয় ভালোয় বিছানায় আসবি? আমি আসলে কিন্তু পড়ে বিছানা থেকে উঠার শক্তিও পাবি না বলে রাখছি।’
তৃষা কাঁপা কণ্ঠে বলল, ‘ আরে আরে ভয় দেখাবেন না, আসছি তো।’
প্রেম তৃপ্তির হাসি হেসে বলল, ‘ এই তো আমার ব্যাড বিচ।’