প্রেমসুধা পর্ব ৩৪ (২)
সাইয়্যারা খান
বালিশে র’ক্ত দেখে চমকালো তৌসিফ। হঠাৎ ই মনে পরলো রাতের কথা। বউটার কপাল কেটে গিয়েছিলো। ভোরে যদিও পুণরায় তাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে তাও একবার ডাক্তার দেখাতে হবে। গলার দাগ গুলো ও লাল হয়ে আছে। তৌসিফ নিজেই বালিশের কভার খুললো। পৌষ বারান্দায় বসে আছে। তোতাপাখি কথা কয় না। তৌসিফে’র বুকটা কেমন জানি লাগে। লজ্জায় নাকি অন্য কিছু? তৌসিফ রুমে থেকেই উচ্চস্বরে ডাকলো,
— বুয়া? বুয়া?
মিনিটের মাথায় বুয়া আসতেই তৌসিফ বললো,
— চাদর পাল্টে দাও। রুম পরিষ্কার করো। ফাস্ট। আর হ্যাঁ, সাদা আর ভায়োলেন্ট কালারের মিক্স চাদরটা বিছাবে।
বুয়া মাথা নাড়লো। তৌসিফ এক পলক দেখলো বারান্দায়। পৌষ ঐ পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। পুকুর কচুরিপানায় ভর্তি। তাতেই পা ডুবিয়ে দুটো ছাগল আর একটা গরু খাচ্ছে কিছু। পাশেই পালে হয়তো কেউ। ছুটে এখানে এসেছে। এমনি সময় হলে হয়তো তৌসিফ লোক পাঠাতো কিন্তু এই মুহুর্তে পাঠালো না পৌষ দেখছে বলে।
তৌসিফ চলে গেল সেখান থেকে। পা বাড়ালো বাইরের দিকে। ড্রয়িং রুমে সোফায় বসলো আয়েসি ভঙ্গিতে। গম্ভীর কণ্ঠে ডাকলো,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
— সোহা?
তৌসিফে’র এই ডাকের গুঞ্জন যেন চারদিকে ছড়িয়ে পরলো। মিনু কিচেনে ছিলো। ওখানেই চমকে উঠলো ও। হঠাৎ এভাবে আপা’কে ডাকলো কেন? খারাপ কিছু কি ঘটলো?
তৌসিফ সিনা টানটান করে বসা। সোহা টিপটিপ করা বুক নিয়ে সম্মুখে হাজির হতেই তৌসিফের উদ্দেশ্যে বলতে চাইলো,
— ডেকে…
আর কিছু বলার আগেই ধমকে তৌসিফ জানালো,
— আগামী কাল তৈরী থাকবে। মেহেদী আসবে। আগামী কাল ই কাবিন হবে। আর হ্যাঁ, আগামী কাল ই তুলে নিয়ে যাবে। ওখানেই থাকবে তুমি। আর এটা ভেবো না সৎ বলে আমি অবহেলা করছি। ধুমধাম করেই অনুষ্ঠান করব। আপাতত মেহেদীর পরিবার তোমাকে তুলে নিতে চাইছে।
ডাহা মিথ্যা। মেহেদী’র মতো ভদ্রলোকের কপালে শুধু ব’ন্দুক ঠেকানো বাকি ছিলো। তৌসিফ নিজে লোক পাঠিয়ে তাকে জানিয়েছে। জানিয়েছে বললেও পাপ হবে। এককথায় মহা পাপ কারণ তৌসিফ মানুষ দিয়ে ধমকে ধামকে মেহেদীকে বলেছে সে যাতে তৌসিফে’র কাছে প্রস্তাব রাখে। এর অবশ্য কারণ আছে, তৌসিফ তালুকদার মাথা নুয়াবার নয়। শিরদাঁড়া উঁচু করে চলার মানুষ সে।
সোহা আশ্চর্য হলো। এটা তো হওয়ার কথা না। ও তো এমন কিছু ভাবে নি। গতরাতে তাহলে কি হলো? সোহা তো কান্নার শব্দ ও শুনেছিলো পৌষ’র। প্রতিবাদ করে উঠে সোহা,
— আমার অনুমতি ছাড়া…..
এক কথায় ওকে থামিয়ে দিলো তৌসিফ,
— হয় বিয়ে করে স্বসম্মানে বের হবে নাহয় আজীবনকার মতো তালুকদার বাড়ী ছাড়বে। চয়েজ ইজ ইওর্স।
থমকে গেলো সোহা। চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। হাত দুটো মুঠ করে কিছু বলতে গিয়েও তৌসিফে’র দিকে তাকিয়ে আর বলা হলো না৷ সাহস ই হলো না। তৌসিফ উঠে দাঁড়ালো। এক বান্ডল সোহা’র পাশে রেখে বললো,
— শপিং এ যাও। ডু হোয়াট এভার ইউ ওয়ান্ট টু ডু। টাকা কম পরলে আমাকে জানাবে। আর তোমার পোশাক মেহেদীর পরিবার ই নিয়ে আসবে কাল। টুকটাক যা লাগবে তুমি নিয়ে আসো।
সোহা থমকে রইলো। তৌসিফ যেতে নিয়েও ফিরে এলো। থমথমে গলায় বললো,
— ধন্যবাদ।
সোহা চমকালো। চোখ তুলে তাকাতেই তৌসিফে’র চোখের রহস্যময় হাসিটা ওর দৃষ্টিতে বিঁধলো। ঠিক যেন কোন সূক্ষ্ম সূঁচ। অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হলো ওর। এটা তো চায় নি সোহা।
রুমে ঢুকা মাত্র ই ফটফটা, গোছালো রুম পেলো তৌসিফ। সব একদম টিপটপ করে রাখা তবুও যেন কিছু নেই আর তা হলো তৌসিফে’র বউ। পরণে থাকা শার্ট টার বোতম গুলো খুলতে খুলতে তৌসিফ বারান্দায় হাটা দিলো। তার তোতাপাখি আছে সেখানে। যেতেই দেখা মিললো তার কাঙ্খিত নারীর। উদাস ভঙ্গিতে সে তাকিয়ে আকাশ পানে। তৌসিফ এগিয়ে গেলো।
সময়টা সকাল এগারোটার মতো। তৌসিফ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পৌষ ক্ষুদ্র শ্বাস ফেললো। তৌসিফ বুঝলো অবশ্য। সামনে গিয়ে বসলো। সময় দিলো। সবসময় কথা মানুষ যদি হঠাৎ এমন চুপ করে যায় তখন তা মানাটা কষ্টের। তৌসিফ তবুও ধৈর্য ধারণ করলো। সময় পেরুলো কিছুটা। চোখ তুলে তাকালো পৌষ। তার একদম সামনেই বসা তৌসিফ তালুকদার। পরণে থাকা শার্টটার ও বোতাম গুলো খোলা। উদাম বুকটায় লোমগুলো উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।
তৌসিফ দুই হাত মেলে বুকে আহবান জানালো। আহ্বানে সাড়া দিতে অবশ্য দেড়ী হলো না। নিজেও দুই হাত বাড়িয়ে তৌসিফে’র বুকে নিজেকে সপে দিলো। লেপ্টে গেলো নিবিড় ভাবে। দুই হাতে পিঠ জড়িয়ে রাখলো। তৌসিফ ওকে আরেকটু বুকে জড়ালো। মাথায় চুমু দিয়ে আদর লাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— এখনও খারাপ লাগছে?
— একটু একটু।
— আসো গোসল করিয়ে দেই।
— উমম। পরে।
— কত পরে?
— অনেকক্ষণ।
— এতক্ষণ কি করবে?
— এভাবে থাকব।
— এভাবে তো থাকা যায় না হানি।
হঠাৎ এহেন কথায় বোকা বনে গেলো পৌষ। না বুঝে বুকেই মুখ ঘঁষে জিজ্ঞেস করলো,
— কেন?
তৌসিফ ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো,
— কারণ…. কারণ…
আর বলতে পারলো না। পৌষ’র মুখটা তুলে কারণ দেখিয়ে দিলো। পৌষ পুণরায় মুখ গুজলো তৌসিফে’র গলায়৷ বললো ফিসফিস করে,
— পঁচা জামাই।
— মধু বউ।
— হুউম।
— তাহলে মধু দাও।
— নেই।
— আমি খুঁজে নিব।
— লাগবে না খোঁজা। এভাবে থাকব তো আমি।
বুকের মধ্যে ঘাপটি দিয়ে রইলো পৌষ। তৌসিফ অনুভব করলো। পৌষ’র গালে হাত দিয়ে চুমু দিয়ে বলে উঠলো,
— একটা সারপ্রাইজ আছে হানি।
— হুম।
— জিজ্ঞেস করো কি?
— কি?
— আচ্ছা মুখে না বলি? কাল সরাসরি দেখাই।
— আচ্ছা।
তৌসিফ বুঝলো পৌষ’র উঠার কোন সৎ ইচ্ছে নেই তাই ওকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ালো তৌসিফ। পৌষ মৃদু চেঁচিয়ে বললো,
— যাব না।
— ইটস শাওয়ার টাইম হানি।
— নো।
— ইয়েস।
তৌসিফ ওকে নামাতেই পৌষ বললো,
— আচ্ছা গোসল করছি। আপনি বের হন।
প্রেমসুধা পর্ব ৩৪
কথাটা শুনেই যেন আকাশ থেকে পরলো তৌসিফ। আশ্চর্য গলায় প্রশ্ন করলো,
— কেন?
— কেন মানে? আপনার সামনে গোসল করব নাকি?
— অবশ্য ই।
— কিহ্! পা’গল লোক। বের হন।
— আজব! কি লুকাচ্ছো তুমি হানি? দেয়ার ইজ নাথিং হিডেন নাও। ইটস অল এক্সপোজ নাও।
লজ্জায় হা হয়ে গেলো পৌষ। সেই সুযোগ বুঝে তৌসিফ দরজা আটকে দিলো। তাদের সুখের অধ্যায় তো মাত্র শুরু।