প্রেমসুধা পর্ব ৪৭
সাইয়্যারা খান
“মৃ’ত্যু এসেও যখন আসে না তখন মানুষ তড়পায়। ছটফট করে। শ্বাসরুদ্ধকর স্বপ্নের মতো লাগে সবটা। ঘোলাটে, আবছা কুয়াশায় জড়ানো। চারপাশে তখন ঘোর কালো মেঘ যার আড়ালে লুকিয়ে সূর্য। তার দেখা মিলে না। চোখের পানি তখন হার মানে। পরিস্থিতি শুকিয়ে দেয় চক্ষুদ্বয়। দয়ামায়া দেখায় না কেউ। কালো স্তর যখন চোখের নিচে জমা হয় তখন আকাশ পানে দৃষ্টি দেয় মানবী। তার ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।”
টানা তিনদিন পাড় হলো। পৌষ’র মুখটা চুপসানো। বিধ্বস্ত এক অবস্থা যাকে দেখার কেউ নেই। যেই পৌষ’কে সামান্য কষ্টে দেখলে তৌসিফের বুকের ভেতর থাকা হৃদপিণ্ডটা থমকাতো সেই পৌষ’র করুন এক অবস্থা। প্রথম দিন চেতনা হারিয়ে পরে থাকলেও জ্ঞান ফেরা মাত্র পৌষ পাগলের মতো আচরণ শুরু করলো। দৌড়ে সব ভুলে আগে গিয়েছিলো তৌফিক তালুকদারের কাছে। কঠোর অথবা তুচ্ছ কিছু একটা তো ছিলো যা তৌসিফ তালুকদার দেখালো। বুয়া দিয়ে বের করে দিলো পৌষ’কে। অপমানটা চরম মাত্রার অথচ স্বামী সোহাগির মন মানে না। সে দরজায় ক্রমাগত ধাক্কা দেয়। বেশখানিকটা সময় পর তৌফিকের বউ দরজা খুলে। পৌষ’কে ভেতর নিয়ে বসাতেই পৌষ খপ করে তার হাতটা ধরে। বিনয়ের সাথে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— উনি কিছু করেননি। কিচ্ছু করেন নি। আমি জানি। দয়া করে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করুন না।
ঝুমঝুম করে কেঁদে ফেলে পৌষ। তৌফিকের বউ ততটা গায়ে মাখে না। হাত ছাড়িয়ে একটা নাম্বার দিয়ে বলে,
— এটা ডিআইজির নাম্বার। যোগাযোগ করে দেখো। তৌসিফ টাকার বান্ডিল কোথায় রাখে তা নিশ্চিত তোমার জানা।
পৌষ এতকিছু বুঝলো না। উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে বললো,
— আমি যাব?
— সম্পূর্ণ ভাবে তোমার ইচ্ছে।
পৌষ এক ধ্যানে নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে এলো। নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে ঢুলুঢুলু পায়ে বোরকা পরতেই নার্স সহ বুয়া এগিয়ে এলো। পৌষ’কে উদ্দেশ্য করে কেউ কিছু বলার সাহস পেলো না। ওরা বাঁধা দিতে আসলেই গরম চোখ দিয়ে তাকালো পৌষ। আলমারি খুলে মাঝের ড্রয়ারটা থেকে দুটো টাকার বান্ডিল নিলো পৌষ। ব্যাগে ভরে বেরিয়ে এলো ফ্ল্যাট থেকে। ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি বের করে তাতে বসেই ফোন লাগালো সেই নাম্বারে। রিসিভ হতেই যেন পৌষ’র ভাষা ফুরিয়ে এলো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। শুধু নিজের পরিচয়ে বলেছিলো, “পৌষরাত তালুকদার, ওয়াইফ অফ তৌসিফ তালুকদার”।
জীবনে প্রথম পৌষ জেলখানায় পা রেখেছিলো। অসুস্থ শরীরটা তখন ভেঙে আসতে চায়। চারপাশে এত এত পুলিশ দেখে গা কেমন ভয়ে ছমছম করে। পৌষ শক্ত রয়। একজনকে সাহস করে জিজ্ঞেস করতেই তারা ডিআইজির রুম দেখালো। পৌষ দেখলো ও ভেতরে ঢুকে নিজের পরিচয় দিতেই সবাই অদ্ভুত চোখে তাকালো। সম্মান সহিত ওকে বসতে দেয়া হয়। ডিআইজি জিজ্ঞেস করলেন,
— ম্যাম আপনি আসার কারণ জানতে পারি?
পৌষ ঢোক গিলে। উত্তর করে,
— আমার স্বামী…
আর বলতে পারে না৷ কণ্ঠনালী চেপে আসে। ডিআইজি নিজেই বললেন,
— ম্যাম আপনাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে। পানিটা নিন।
পৌষ নিলো না। ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল দুটো বের করে টেবিলে রেখে বললো,
— আরো লাগলে আরো দিব। শুধু ওনাকে এনে দিন। আমি দেখব একটু।
ডিআইজির ঘাম ছুটার অবস্থা। ঢোক গিলে বললো,
— ম্যাম, স্যার এখানে নেই।
— আমি দেখব বললাম তো।
— বুঝার চেষ্টা করুন…
— টাকা কি আরো লাগে? আমি তো জানি না। আপনি বলুন। কত টাকা লাগবে?
ডিআইজি মাথা নিচু করে কিছু ভাবলেন অতঃপর বললেন,
— ম্যাম আপনি বাসায় যান।
— আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই। কথা কেন বুঝতে চাইছেন না?
— স্যার এখানে নেই….
— তো কোথায়? মিথ্যা কেন বলছেন?
— ম্যাম, স্যার সত্যিই নেই। ওনাকে এখানে রাখার সাধ্য কার আছে?
— খবরে সরাসরি প্রচারটা নিশ্চিত মিথ্যা নয়।
ডিআইডির কপালে ঘাম জমা হলো। টিস্যু দিয়ে তা মুছে নিলেন অবলীলায়। বললেন,
— ঐ পর্যন্তই ছিলেন স্যার এখানে….
— কোথায় আছে সেটাই বলুন। দয়া করে বলুন।
পৌষ অস্থির হয়ে উঠলো। এই দফায় মেয়েটা হাত জোর করে কেঁদেই ফেলল। ডিআইজি বিব্রত। মুখটা দেখেই তা বুঝা যাচ্ছে। তিনি পৌষ’কে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতেও পারছেন না। অনুমতি নেই৷ ফোনটা তুলে ডায়াল করে শুধু বললেন,
— ম্যাম এসেছেন। বোঝানো যাচ্ছে না।
ওপর পাশ থেকে কিছু বলতেই ডিআইজি সস্তির শ্বাস ফেললেন। হাসি মুখে জানালেন,
— ম্যাম আপনি বাসায় যান। স্যার যোগাযোগ করবেন আপনার সাথে।
পৌষ বোকা চোখে তাকালো। উঠতে উঠতে আবারও বললো,
— টাকা কি কারো লাগে দেখা করতে?
ডিআইজির এবার মায়াই লাগলো। তার মেয়ের থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের বড় হবে পৌষ। নিজের মেয়ের মতোই লাগলো তার কাছে। এতটুকু মেয়ে যে এসবে কোনদিনে জড়ায় নি তা আচরণেই বুঝা যাচ্ছে। ডিআইজি উঠে দাঁড়ালেন। টাকার বান্ডিল দুটো পৌষ’কে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
— দেখা করতে বান্ডিল প্রয়োজন হয় না। বাসায় যাও বাবা।
পৌষ বিমূর্ত রূপে বেরিয়ে এলো৷ গাড়িতে উঠে কিছুক্ষণ গেটের দিকে তাকিয়ে রইলো। এখানেই শেষ বার তৌসিফ ছিলো। পৌষ দেখেছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে পৌষ। কার কাছে যাবে ও?
হঠাৎই মনে পরে হেমন্তের কথা। শ্রেয়ার খবর ওর জানা নেই। বুকটা খামচে উঠলো হঠাৎ। শ্রেয়া আছাড় খেয়েছে এটা আবছা শুনেছে পৌষ। গাড়ি থামতেই পৌষ নামলো। শরীর চলে না তখন। একজন বুয়া ধরে রুমে নিয়ে আসতেই পৌষ দেখলো হেমন্ত বসা ওখানে। ভাইকে দেখা মাত্র হু হু করে কেঁদে ফেলে পৌষ। হেমন্ত উঠে এসে ধরে বসালো ওকে। পৌষ কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
— হেমু ভাই, ওনাকে পাচ্ছি না আমি। কোথায় গেলো? আমাকে কেউ সাহায্য করছে না হেমু ভাই। কেউ করছে না।
— কাঁদে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
পৌষ খাটে মাথা এলিয়ে দিলো। ভাঙা গলায় বললো,
— ভাবী….
— তিন দিন হলো অবস্থা খারাপ ছিলো। আজ সকাল থেকে কিছুটা ভালো। ছেলে হয়েছে পৌষ।
পৌষ চোখ তুলে তাকালো। খুশির এই খবরে পৌষ হয়তো দৌড়ে ছুটতো কিন্তু পরিস্থিতি ওকে ভেঙেছে এবার খুব দারুণ ভাবে। হেমন্ত পৌষ’র মাথায় হাত রেখে বললো,
— বাসায় নিতে এসেছি তোকে।
— আমি যাব না।
— পা’গলামো করবি না পৌষ। এখানে কেউ নেই তোকে দেখার।
— আমার সংসার ছেড়ে আমি কিছুতেই যাব না। উনি এসে খালি বাসা পেলে…
— মাথা গেছে তোর। তৌসিফ এখন আসবে না।
— আমি যাব না।
— কে দেখবে তোকে?
— উনি আমার যত্নে কখনোই কমতি রাখে নি ভাই। এবারেও রাখে নি।
হাজার জোর করেও পৌষ’কে নিতে পারে না হেমন্ত। পৌষ ঠাই বসে রয়।
হেমন্ত হাল ছেড়ে প্রস্থান করতেই পৌষ ফোনটা হাতে তুলে। তৌসিফের ফোনে কল লাগায়। রিসিভ হয় না। ওপাশ থেকে আসে তিক্ত কথা, “এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না”।
হা করে শ্বাস টানে পৌষ। উঠে আলমারি খুলে। পরিপাটি করে সাজানো তৌসিফের কাপড় গুলো। পৌষ’র সাথে এ নিয়ে কম তো ঝগরা লাগে না। মানুষটা এত পরিপাটি আর পৌষ হলো অগোছালো। কাপড়ের উপর মাথা রাখে পৌষ। ওর মনে হয় তৌসিফের বুকে মাথাটা রাখা। পৌষ নাক টানে। ফিসফিস করে বলে,
— জলদি চলে আসুন না। আপনার তোতাপাখির অনেক কষ্ট হচ্ছে।
মাথাটা ঘুরাতেই পৌষ বিছানায় যেতে চায়। আফসোস যাওয়ার সময়টা সে পায় না। দুই কদম বাড়াতেই ক্লান্ত শরীর হেলে পরে। নার্স সহ বুয়া তারাতাড়ি ধরে বিছানায় উঠালো ওকে। মিনু কপালে হাত দিয়ে দেখলো।
সকালেও সোহা ফোন দিয়ে খবর নিয়েছে। মিনু সবটা বলে নি৷ যতটুকু জানে ততটুকুই বলেছে। পৌষ’র গুঙিয়ে উঠায় মিনুর চোখে পানি জমে। তারও মামার জন্য কষ্ট হচ্ছে।
পৃথিবীর ক্রুরতম ক্ষণ হলো অপেক্ষা। কাটে না। বিরহের এই সময়টা যেন আরো বিষাক্ত। বিষে ভরা বানে পৌষ ভেঙে চুরমার হলো। নীল ব্যথায় তার চোখ, মুখের রুপ লাবন্য ফিকে পরলো। আজ সূর্য উঠেছে। কুয়াশার আড়ালে উঁকি দিলো মাত্র। পৌষ বারান্দায় বসে আছে। সারাটা রাত এখানেই ছিলো সে। হাত-পা হিম ধরে গেছে। গেট দিয়ে তখন কালো রঙের একটা গাড়ি ঢুকেছে। পৌষ তাকিয়ে দেখলো। সে শুধু দেখেই গেলো। পেছনে দুটো সাদা গাড়িও ঢুকেছে। কলিং বেল বাজতেই হয়তো বুয়া খুলেছে। মিনুর গলা শুনলো পৌষ সেই সাথে শুনলো অতি পরিচিত প্রিয় কণ্ঠ। সেই কণ্ঠ শুরুতেই ” পৌষরাত” বলে ডাকলো। পৌষ উঠবে কিন্তু কিভাবে? ওর হাত-পা নড়ছে না৷ পৌষ’কে না পেয়ে হয়তো মানুষটা খুঁজেই চলেছে। তার ডাক শোনা যাচ্ছে। আচ্ছা, পৌষ উঠবে কিভাবে? মানুষটা তো ডাকছে তাকে। উঠার শক্তি বিলীন। হাত বাড়িয়ে রেলিং ধরে পৌষ। না উঠলে যদি না পেয়ে মানবটি চলে যায়?
পৌষ’র পা ঝিনঝিন করে উঠে। এক পা দুই পা করে বেরিয়ে আসে রুমে। রুমে তখন স্বয়ং তৌসিফ ঢুকেছে। পৌষ থমকে গেলো। ওর সম্মুখে আজ ঠিক আটদিন পর তৌসিফ। পৌষ মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখলো। দাঁড়ি গুলো একটু বেড়েছে। তার ঠোঁটের সাইডে কাটা আর গালে একটা আঁচড়। পৌষ’কে দেখে তৌসিফের বুক জ্বলে উঠে। হাহাকার করে হৃদপিণ্ডটা। এটা পৌষ না। তৌসিফ মানে ও অসুস্থ বউ রেখে গিয়েছে যার চোখ, মুখ শুকিয়ে ছিলো কিন্তু এহেন রুপে তো তৌসিফ রেখে যায় নি। না খাওয়া, না ঘুম শুধু ছিলো তীব্র অপেক্ষা। প্রেম জিনিসটাই খারাপ। এটা ভোগায়। ভুগতে ভুগতে মৃত্যু দুয়ারে আসে মানুষ তবুও যেন প্রেম তারা ভুলে না। এটা যে ভুলা দায়। তৌসিফে’র চোখের কোণে পানি জমতেই ও ডাকলো,
— পৌষরাত।
দুই এক পা করে এগিয়ে এলো পৌষ। তৌসিফের গালে নিজের হাতটা রেখে উত্তর দিলো,
— হু।
তৌসিফ খেই হারালো। কথা বলতে পারলো না৷ পৌষ গাল দুটো হাতিয়ে পুরোটা মুখ হাতালো। গলা, বুক সবটা হাতিয়ে নিশ্চিত হলো এটাই তার তৌসিফ। অতঃপর? অতঃপর একজন অপেক্ষারত স্ত্রী স্বামীর হাত টেনে ধরলো। দরজা লাগিয়ে দিলো তড়িৎ বেগে। পৌষ’র ভেতরের দাবানো চঞ্চলতা হুরহুর করে বেড়ে গেলো। তৌসিফ’কে বসালো বিছানায়। গায়ের শার্টের বোতাম গুলো খুলে বুক পিঠ দেখলো। পিঠে বুকে শুধু আচড়। পৌষ’র মনে হচ্ছে উসপিস করা মানুষটার গোসল দরকার। তৌসিফ’কে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে বসিয়ে কোনরূপ বাক্য ব্যায় না করে পৌষ ওর গায়ে পানি ঢাকলো। তৌসিফের কোন খেয়াল নেই। সে শুধু পৌষ’র কাঁপা হাতটা দেখছে। মাথাটা টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে পৌষ বলতে লাগলো,
— প-পিঠে আঁচড় লেগেছে। মলম লাগাতে হবে। উঠুন। চলুন।
খাটে বসিয়ে তৌসিফে’র গালে, পিঠে, বুকে মলম লাগালো পৌষ। টাউজারটা হাঁটু পর্যন্ত তুলতেই পায়ে একটা ক্ষত দেখলো। ঢোক গিললো পৌষ। আলতো করে ছুঁয়ে দিলো সেখানে। তৌসিফ’কে বসিয়ে দেয়াল ধরে ধরে বাইরে চলে গেলো ও। ফিরে এলো মিনিটের ব্যবধানে। হাতে খাবারের প্লেট। নিজে তৌসিফে’র মুখে তুলে খাওয়াতে খাওয়াতে ভাঙা গলায় ফ্যাচফ্যাচ করে বলতে লাগলো,
— গরুর ভুনা করে দিব রাতে ঠিক আছে? কি দিয়ে খাবেন? নাকি হাসের মাংস খাবেন? চালের রুটি করব?
তৌসিফ কথা বলে না। এমনকি ও যে পৌষ’কে খেতে বলবে তাও বলতে পারছে না। এই কঙ্কালের মতো মেয়েটা কিভাবে তার তোতাপাখি হতে পারে। ওর সুন্দর চুলগুলো এভাবে জটলা কিভাবে পাকাতে পারে। কিভাবে উজ্জ্বল ভরা মুখটার চাপা ভাঙতে পারে। সুস্পষ্ট ভাবে কিভাবে দেহটা কাঁপতে পারে। কেউ কি তার পৌষ’কে একটু মুখে তুলে খাওয়ালো না। কেউ কি তাকে জোর করে মাথায় তেলও দিতো না। কেউ কি একটু যত্ন করে এক গ্লাস পানিও দিতো না। তৌসিফের এত টাকার মূল্য কোথায় তাহলে। টাকার তার এতই টান যে ওর তোতাপাখিটার গাল দুটো শীতে ফেটে আছে। ঠোঁট ফেটে ফেটে শুষ্ক হয়ে আছে। টাকা দিয়ে তবে সুখ কেনা যায় না। তৌসিফ মানুষ কিনে রেখেছিলো যারা কেনার মতোই আচরণ করেছে। কেউ আগ বাড়িয়ে বাড়তি যত্ন করে নি। তৌসিফের মন চাইলো নিজের বুকটা নিজেই ঝাজড়া করে দিতে।
পৌষ পানির গ্লাসটা তৌসিফে’র মুখের সামনে ধরলো। দুই হাত দিয়ে গ্লাসটা ধরেছে। কম্পমান হাতটা দেখে তৌসিফ। পানি খেতেই ওর মুখ মুছিয়ে দিয়ে পৌষ সব রেখে আসে। বিছানায় পা উঠিয়ে বসে। তৌসিফের খালি গায়ে হাত বুলায় আরেকবার। খুঁটে খুঁটে দেখে আর ব্যাথা আছে কি না। তৌসিফকে শুয়িয়ে দিয়ে পায়ে যত্ন করে তেল লাগালো পৌষ। পা দুটো শুকিয়ে আছে। এত সুন্দর মানুষ যে নিজের যত্নে কখনো ত্রুটি রাখে না তার যত্নহীনা পা দেখে পৌষ’র খারাপ লাগলো।
প্রেমসুধা পর্ব ৪৬
আস্তে ধীরে তৌসিফে’র বুকে আসে ও৷ মাথাটা বুকে রেখে আলতো ঠোঁট ছোঁয়ায় সেই বুকে। দুই হাত জড়িয়ে ধরে সময়, কাল, পাত্র আর নিজের অবস্থা ভুলে গগন কাঁপিয়ে কাঁদে পৌষ। ওর কান্না শুনা যায় পুরো তালুকদার বাড়ীতে। দরজার বাইরে বুয়ারা জমা হয়ছে হয়তো। এতদিন পর মেয়েটা কাঁদছে। সব ভুলে কাঁদছে। তৌসিফ শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো ওকে। ওর বুকটা ছটফট করছে। গলাটা যেন কেউ চেপে ধরেছে নাহয় কেন কথা বলতে পারছে না তৌসিফ?