প্রেমসুধা পর্ব ৬৩

প্রেমসুধা পর্ব ৬৩
সাইয়্যারা খান

তৌসিফ পৌষ থেকে দিন দুই সময় চাইলেও তা মিললো না। টিকেট কাটা শেষ। শেষমুহুর্ত পর্যন্ত তৌসিফ চেষ্টা করেছে যাতে এখানে টিকা যায়। আর কিছুদিন হানিমুন কাটাতে তার বড়ই ইচ্ছে। কপালে বউ জুটেছে জাঁহাবাজ। একে হাজার ফন্দি করেও আঁটকে রাখা যাচ্ছে না। উল্টো ফন্দি আঁটিয়ে সে তৌসিফ’কে আটকে নিবে। তৌসিফ নারাজ এতে। তার মন চায় বউ নিয়ে পাখি হয়ে উড়াল দিতে। প্রসস্ত আকাশের বুকে বিচরণ করতে তার তোতাপাখি নিয়ে। সারাটাক্ষন ঐ পাখিটাকে আদর, যত্ন করতে। আপাতত পৌষ’কে নিয়ে রাত্রি বিলাস করতে বাইরে এসেছে তৌসিফ। সুন্দর রাস্তায় সুন্দর একটা জুটি। পৌষ অবশ্য সোজা হাটছে না। ও হাটছে এদিক ওদিক হয়ে। তৌসিফ হাত ছাড়া করে না। তার ডান হাতের ভাজে পৌষ’র হাত ধরা। ছোট্ট একটা পাথর দেখে পৌষ এগিয়ে গিয়ে লাথি মা’রলো। বললো,

— এভাবে যদি সতিন টাকে শর্ট মা’রতে পারতাম। আহা, আমার কলিজাটা জুড়িয়ে যেতো।
তৌসিফ মুখ ভার করে। এই মেয়ে’র কি খারাপ লাগে না? সতিন ডাক শিখেছে নতুন নতুন। ঠিক যেন সদ্য বুলি শেখা এক তোতাপাখি যাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে এই ডাক। ডাক আয়ত্ত করে এখন সে বারংবার এটাই ডেকে চলে। তার আর কোন চাওয়া নেই। পাওয়া নেই। শুধু ডাক কেন্দ্র করেই সে তৌসিফে’র বুকে হুল ফুটাচ্ছে। ঠিক যেন এক ভোমরা। মনে মনে তৌসিফ উচ্চারণ করলো,
“কালো ভোমরা।”
পৌষ কপাল কুঁচকে তাকালো৷ তৌসিফ ভরকালো। মনে হচ্ছে পৌষ শুনে নিয়েছে সবটা৷ তৌসিফ অবাকই হয়। ও কি না বউ ভয় পায়? এটাই কি বাকি ছিলো জীবনে? পৌষ শিষ বাজালো। তৌসিফ তাকাতেই ভ্রু উঁচু করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— কি ভাবেন?
— তোমাকে।
— আমি তো কাছে।
— আরো কাছে চাই আমি।
— কতটা?
— যতটা পারা যায়।
বলতে বলতে কিছুটা দূরত্ব কমায় তৌসিফ। পৌষ চট করে ওর নাকের ডগায় চুমু খেয়ে সরে গেলো। তৌসিফ হেসে ফেললো। চঞ্চলা পৌষ তখন এদিক ওদিক দেখছে। তৌসিফ কাছে টেনে হাটা ধরে। পৌষ শান্ত হয়। তৌসিফে’র বাহুতে মাথাটা রেখে হাটতে থাকে তাল মিলিয়ে। বুক ভরে শ্বাস টানে৷ তারা বিদায় নিবে। এই দেশে আসবে না আর পৌষ। কখনোই না৷ যেই দেশে অতীত থাকে সেই দেশ ত্যাগেই সুখ। এসব দেশে অভিশাপ বয়ে আনে। ঐসব পিয়াসী শুধু ধ্বংস করতে জানে। তারা গড়া জিনিস নষ্টে বিশ্বাসী। নষ্ট করতে তারা পছন্দ করে।
পৌষ এসব চায় না৷ সে চায় সুখে থাকতে। সে প্রেমে পড়েছে। এই তৌসিফ তালুকদারের প্রেমে পড়েছে। গভীর সেই প্রেম। সেই প্রেমের অতলের তলা নেই। পৌষ ভাবে, যেই পুরুষের সাথে তার মানানসই বলতে শুধু বিপরীত লিঙ্গ বৈ কিছুই না সেই পুরুষ’কে কিভাবে সে এতটা চাইতে লাগলো? কিভাবে প্রেম সাগরে ডুবতে লাগলো। এখনও পৌষ ভেবে কুল পায় না, এই অসমবয়সী, দাম্ভিক, গম্ভীর কণ্ঠের অধিকারী পুরুষটাকে কিভাবে এতটা ভালোবাসলো পৌষ।

কিভাবে সে অধিকার পেলো ঐ চাপ দাঁড়িতে হাত রাখতে? কিভাবে সে অধিকার পেলো তার চিকন ওষ্ঠাধর ঐ হালকা কালচে গোলাপি ওষ্ঠাধরে রাখতে? কে দিলো ঐ বিশাল বুকে মাথা রাখতে?
পৌষ’র চোখ ভিজে উঠলো। হঠাৎ বুকে ভয় চাপলো।আচমকা পানিও গড়িয়ে পড়েছে। তৌসিফ দেখার আগেই পৌষ মুছতে নিলো তবে অপারগ ও। তৌসিফ দেখে নিয়েছে। ডান হাতে চোখ মুছতে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে তৌসিফ প্রশ্ন করলো,
— কিসের পানি?
— ভয়।
— আমাকে?
— ভাগ্য’কে।

তৌসিফ পৌষ’কে বুকে জড়ালো। অসমবয়সী অথচ সবচাইতে সুন্দর এক দম্পতি যাদের এক আঁচল পরিমাণ আছে শুধু সুখ। যারা পাশাপাশি হাঁটছে। হয়তো এটা একটা সুন্দরতম রাত। হয়তো পৌষের মন তাকে আগাম বানী শুনালো তার ভবিষ্যতের। হয়তো তার ভালোবাসার অথৈ সাগরে খুব শিঘ্রই আগমন ঘটবে জলচ্ছাসের। হয়তো তারা বেখবর।
তৌসিফ পৌষ’কে নিয়ে বসলো। সামনে কিছু ক্যাফে খোলা। তৌসিফ কফি আনতে যেতেই পৌষ দুই হাতে মুখ চেপে ধরে। তার কান্না পাচ্ছে। তার মন বলছে সামনে আজকের রাত আসবে না৷ ঝরঝরে কেঁদে ফেললো পৌষ। শব্দহীন। দাবালো নিজেকে ও। তৌসিফ জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিবে? অকারণেই কাঁদছে। পৌষ জানে না তার মন খারাপের কারণ।

ও চোখ মুছলো। গলা ঠিক করলো। তৌসিফ ততক্ষণে ফিরে এসেছে। তার মুখে হালকা আভায় হাসি। পৌষ তাকিয়ে রইলো। তার যেন তর সয় না৷ মন চায় নিজের মাঝে একে লুকিয়ে নিতে। একান্ত নিজের করে রাখতে।
তৌসিফ এসেই আন্দাজ করে ফেললো। তার বউ কেঁদেছে কিন্তু কারণ জানা নেই। তৌসিফ আচমকা পৌষ’কে এক হাত আদর দিলো। সারা মুখ ভর্তি আদরে আহ্লাদী হয় পৌষ। তৌসিফ জিজ্ঞেস করে,
— কেন কাঁদে আমার তোতাপাখি?
— জানি না তো। শুধু মনে হয় আপনাকে ভালোবাসি।
— আমিও তো ভালোবাসি।
— আজকে ভালোবাসবেন?
— শুধু আজকে না, রোজ প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমাকে ভালোবাসি আমি পৌষরাত। কিভাবে বুঝাই?
পৌষ শান্তি পায়। তার মন শান্ত হয়। দূরে অচেনা পাখি গান করছে। রাস্তায় ভায়োলিনের সুরে সবটা ভুলে পৌষ। সবটা। আজ তাদের মাঝে শুধু আনন্দ আর এক বুক ভালোবাসা। তৌসিফ ওর কপালে চুমু দিলো। পৌষ মুখ তুলে তাকালো। বললো,

— একটা নামতা বানিয়েছি। শুনবেন?
তৌসিফ বুঝি না করে? সে মাথা নেড়ে সায় দিলো। পৌষ বললো,
“চুম্মা একে চুম্মা
চুম্মা দ্বিগুণ এ উম্মা
তিন চুম্মায় পাপ্পি
চার চুম্মায় ঝাপ্পি”
হঠাৎ এহেন নামতা শুনে তৌসিফ হতবাক। কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলো অতঃপর সেকেন্ডের ব্যবধানে গা কাঁপিয়ে হেসে ফেললো। তার হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে। পৌষ মুগ্ধ নয়নে তাকায়৷ তৌসিফে’র যেন হাসি থামে না৷ পেটে হাত চেপে বলে,

প্রেমসুধা পর্ব ৬২

— না জানি আমার বাচ্চাদের কোন নামতা তুমি শিখাও হানি৷ আই কান্ট….
বেচারা হাসির দাপটে বলতে পারলো না। তার হাসি দেখে পৌষও হাসলো। মুচকি হাসি।

প্রেমসুধা পর্ব ৬৪