প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১১ (২)

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১১ (২)
সাইয়্যারা খান

মুখে মুখে জানাজানি হলো উমায়ের শিকদারই জয়ী হয়েছে। কোনরূপ সাড়াশব্দহীন এক নির্বাচনের ফলাফল যা কেউ জানে না কিন্তু সকলের ভেতরেই এক চাপা উত্তেজনা। বালিকা বিদ্যালয়ের কেন্দ্র বাদে অন্য কোন কেন্দ্রেই যে উমায়ের যথাযথ ভোট পায় নি তা সকলে আন্দাজে হোক বা চ্যালাপ্যালাদের মুখে মুখে খবর রটতে সময় লাগে নি। জয়নাল ক্ষেপে আছে ভয়ংকর ভাবে। তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে সরব। ঐ এলাকায় সরবের পরিবার গরু পালন করতো এক কালে। সরকার পরিবর্তন হওয়ার বেশ পরে সরব যখন এদিক ওদিক নেতাদের পা চাটতে ব্যস্ত ছিলো তখনই তাকে জয়নাল সভাপতিত্ব দিয়ে দিলো৷

বেগুনি রঙের বাড়ীটা সকলের চোখ কাড়ে যেন। এক বছরের ব্যবধানে বাড়ি সহ দামী মোটরসাইকেল সরব করেছে। এখনও বিয়ে-শাদি করে নি সে। বাড়ীতে মা আর এক বোন। বোনও অবিবাহিত। বয়স তাদের যথেষ্ট হলেও বিয়ে হচ্ছে না। সরব যে কি কারণে আগ বাড়িয়ে বিয়ে করছে না তা কেউ জানে না অবশ্য। ভাইদের সাথে তার যোগাযোগ নেই অথচ একই গলিতে থাকে। নিজের আপন ভাইকে দল থেকে বের করেছে ও। এক ভাই প্রায় দশ বছরের বেশি জেল খেটেছে। সরবকে অবশ্য এত পদে দাঁড় করানো হতো না। তাকেও দাঁড় করানোর কারণ সম্রাট। সরবের বড় ভাইয়ের খুব খাতির ছিলো সম্রাটের সাথে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেই সুবাদে জয়নাল সম্রাটের সম্মানে সরব’কে রেখেছিলো এলাকার কাছে। আচমকা বাম গালে কান সহ সজোরে এক চড় পড়লো সরবের গালে। এক পুরুষ হাতের চড়ে আরেক পুরুষ ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো৷ কান ভোঁ ভোঁ করলেও তার মাথাটা নিচু করা। এখানে নানান পরিচিত। এত এত পরিচিত মুখের সামনে এভাবে নেতার হাতে থাপ্পড় খাওয়াটা মুখের কথা না। সরবের মনে হলো ওর ইজ্জত ধরে বুঝি টান দিলো জয়নাল। এদিকে আবার ভয়ে তাকানোর সাহসটুকুও পাচ্ছে না ও৷ জয়নালের দ্বিতীয় চড় গালে পড়ার পরপরই বাজখাঁই গলায় জয়নাল বলে উঠলো,

“*য়োরের বাচ্চা, যত টাকা চাস আমি শুধু ঢালি। ফলাফল তো দেখি না। এক পেটে আর কত ভরবি। গলা পর্যন্ত ডুবে আছিস টাকায়। দলের ছেলে-পুলেদের খাওয়ালে আজ বাকি কেন্দ্র থেকে ভোট পেতাম। তোরা কি করলি এতগুলো বছর? ঐ দিকে একা তৌসিফ তালুকদার সবাইকে টেক্কা দিয়ে উমায়েরকে জিতিয়ে দিয়েছে।”
সরবের মুখ কথা নেই। জয়নাল ওর বুকে ধাক্কা দিলো দু’টো। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“ভাগ এখান থেকে নাকি কু’ত্তা ডেকে ধাওয়া খাওয়াব?”
নেতা মানুষ। প্রতিমন্ত্রী সে। তাদের মুখের ভাষা অতি জঘন্য সেই হিসেবে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার জয়নাল করলো। সম্রাটের এলাকার লোক। চাইলেও এগুলোকে হাত-পা ভেঙে টুন্ডা করা যায় না। নরম গদির সোফায় গা এলিয়ে দিতেই সামনের গদিতে বসা উমায়ের বললো,

“তৌসিফ’কে ডাকা দরকার আজ।”
জয়নালের মুখটা চিন্তিত। উমায়ের তার সামনে কাঁচের গ্লাসে বিয়ার এগিয়ে দিয়ে বললো,
” চিন্তার কিছু নেই। ওদের খুঁটি নড়বড়ে। নড়বড়ে খুঁটি নিয়ে তো দালান গড়তে পারবে না তাই আমাদের সাহায্য করছে।”
জয়নাল বিয়ার দিয়ে গলা ভেজালো। চোখের চশমা খুলে সেন্টার টেবিলে রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“খুঁটি তাও কি না তালুকদারদের? গোটা গাছের শিকড়ই ঐ তালুকদার বাড়ী। খুঁটি নড়বড়ে তোমার উমায়ের। বিপক্ষের গাড়িতে বো’মা ছুঁড়ে হুট করে হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তুমি। ভুলো না এই এলাকায় আজও চেয়ারম্যান বাড়ী বলা মাত্র মানুষ তালুকদার বাড়ীই চিনে।”

উমায়ের জানে প্রতিটি কথা সত্য। সত্য প্রতিটি অক্ষর। ওর দৃষ্টি দেখে জয়নাল সামান্য হেসে বলে,
“তৌসিফের চোখে ক্ষমতার লোভ নেই। না আছে বাকি দুই ভাইয়ের চোখে। এত দিনের অভিজ্ঞতা এই রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে, ওদের মতো নেতা দেখিনি। এখন পর্যন্ত নিজ দলেও পদ নেয় নি৷ সাধারণ সদস্য বলে চলছে। সম্রাট নিজেও একই ধাঁচের। এলাকার উন্নয়ন ওর মোটিভ ছিলো। জনগণ সম্রাট ভক্ত। নিজেকে সম্রাট চেয়ারম্যান ওভাবেই গড়েছে। কারো বুকের পাটা নেই যে সম্রাট চেয়ারম্যান নিয়ে টু শব্দ করবে।”
উমায়ের কাঁচের গ্লাসের চারপাশে গোল আঙুল বুলালো। তৌসিফ তাহলে তাকে এতবড় সাহায্য কেন করলো? শুধু মাত্র জয়নালের কথায় নাকি এখানে আরো রহস্য লুকিয়ে?

দুপুর ২ টা,
তপ্তপোষ পৌষ ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের গার্ডেন পেড়িয়ে পানির কলের দিকে এগিয়ে গেলো। নদীর ওপারে বাসা হওয়ার দরুন ফিল্টারের পানি খাওয়া যায় না। একদিন আদিত্য খোঁজ দিলো তাদের ভার্সিটিতেও নাকি মাটির নিচের পানি আছে। পৌষ সেদিন এই কলের খোঁজ পেয়ে জীবনে প্রথম সহজসরল ভাষায় আদিত্য’কে ধন্যবাদ দিয়েছিলো। চারপাশে চ্যাপচ্যাপে ভেজা। পৌষ সামলে এগিয়ে গেলো ভেতরে। পানি ভর্তি করে সামনে গিয়ে বসে ঢকঢক করে আধ বোতল পান করে মুখটা মুছতে মুছতে দেখলো ওপাশে ক্যানটিনের দিকে যাচ্ছে আদিত্য। সাথে তার কিছু বন্ধু। পৌষ মুখ ভেঙালো। গলা উঁচিয়ে ডাকলো,

“আদি? অ্যই আদিত্য? শালা বয়রা শুনেও না। ও আদিত্য, এখানে তাকাও।”
আদিত্য এদিক ওদিক তাকিতুকি করে বাম পাশে তেঁতুল গাছের নিচে পেলো পৌষ’কে। বন্ধুদের বললো,
“তোরা যা। পুষি ডাকছে। দেখা করে আসি।”
বাকিরা এগিয়ে গেলো ক্যান্টিনের দিকে তাদের মাঝে একজন বললো,
“আদি কি ঐ মেয়েটাকে ভালোটালো বাসে নাকি?”
আরেকজন তিক্ত গলায় উত্তর দিলো,
“ঐ মেয়ে একটা জাঁহাবাজ। যেই পরিমাণ ত্যান্দোড়, আদিত্য কেন ওকে কেউই ভালোবাসতে পারবে না। যথেষ্ট বিগড়ে যাওয়া। সেদিন সিনিয়র একজনের সাথে গলাবাজি করছিলো। আমি আর আদিত্য থামিয়েছি।”
পাশ থেকে আরেকজনও সায় দিলো,
“বন্ধু দু’জন কিন্তু স্বীকার করে না। পৌষ দেখতে পারে না আবার একেবারে ছেড়েও দেয় না।”
আদিত্য এসে বসলো তেঁতুল গাছটার নিচে। পৌষ’র হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে বাকিটা শেষ করতেই পৌষ বললো,

“কে জিতলো?”
“উমায়ের শিকদার।”
চোখ দুটো রসগোল্লা করে পৌষ চাপা স্বরে জানতে চাইলো,
“কিভাবে সম্ভব হলো? তোমার চাচার মুখ দেখেই মানুষ ভোট দিলো?”
আদিত্য একটু হেসে বললো,
“ক্রেডিট কিছুটা সম্রাট চাচ্চুরও।”
যাহ! গেলো তো পৌষ গলে। এই তপ্ত দুপুরে আগুন জ্বলা মোমের মতো গললো পৌষ। গরমে গাল দুটো লাল হয়ে এলো। উষ্ণ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বললো,
” শাহরিয়ার তালুকদার তোমার কেমন আত্মীয় হন?”
আদিত্য’র মুখটার পরিবর্তন যেন যে কেউ ধরতে পারবে। পৌষও পারলো। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আদিত্য বললো,

“তাকে কি দরকার?”
“বলো না।”
“ক্ষুধা লেগেছে পুষি। কিছু খেয়েছো?”
পৌষ মানুষটা কাজে বিশ্বাসী। নিজের ব্যাগ থেকে ডিমসেদ্ধের বক্স বের করে খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
“একটা ডিম খাবে আর আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে।”
আদিত্য একটু ফেঁসে গেলো। পৌষ’র ব্যাগে ডিম থাকেই। আজ হেমন্ত নিজে সেদ্ধ করে ওর ব্যাগে দিয়েছে। এই মেয়ের মাথা ঘুরে। তারমধ্যে খাওয়া দাওয়ার নেই ঠিকঠিকানা। পৌষ ডিম দিলো আদিত্য’র হাতে। আদিত্য দুই কামড়ে খেয়ে বললো,
“শাহরিয়ার চাচ্চু সম্রাট চাচ্চুর আপন ভাই।”
“কিহ!”

জোরে কথাটা বলে দাঁড়িয়ে গেলো পৌষ। ওর চোখে মুখে অবাকতা। ছোটখাটো এক ঝটকা পৌষ খেয়েছে। মুখের ভাবভঙ্গি দেখে তা বুঝা যাচ্ছে। আদিত্য দেখলো আশেপাশে কয়েকজন তাকিয়ে আছে ওদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে। পৌষ’র দিকে তাকিয়ে বললো,
“পুষি, বসো তুমি। আগে শুনবে না?”
পৌষ ধপ করে বসলো। এলোমেলো ভাবে বললো,
“রাখো মিয়া তুমি আগে আর পরে। ভাসুর না দেবড় কে পাঠালো এই বিয়ের প্রস্তাব?”
আদিত্য থতমত খেলো। ভাসুর না দেবড় কথাটা বুঝতে সামান্য বেগ পেতে হলো। বুঝা মাত্রই হেসে ফেললো ও। পৌষ তাকালো কটমট দৃষ্টি দিয়ে। আদিত্য হাসতে হাসতেই বললো,
“দেবড়।”

পৌষ ওখানে থাকলো না আর। দ্রুত পা ফেলে চলে আসলো। পেছন থেকে আদিত্য ডাকলো। শুনলো না। আদিত্য নিজে ওর পিছু নিতে গিয়েও নিলো না। ফোন তুলে ডায়াল করলো মেঝ চাচ্চু লিখা নাম্বারটায়। তৌসিফ প্রথমে রিসিভ না করলে আদিত্য আবার যখন আবার দিলো তখন রিসিভ হলো। সালাম দিয়েই আদিত্য বলে উঠলো,
“চাচ্চু কাহিনী তো ঘটে গিয়েছে।”
কপাল কুঁচকে তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো,
“মানে? কি হয়েছে?”
“শাহরিয়ার চাচ্চুর জন্য মেয়ে দেখছে।”
তৌসিফ চুপ করে গেলো। আদিত্য সাড়াশব্দ না পেয়ে বলতে লাগলো,
“চাচ্চু কিছু করো। বিয়েটা হতে দিও না। মেয়েটা আমার পরিচিত। আমার সাথে পড়াশোনা। তুমিও চিনবে। সেদিন মসজিদের সামনে হেমন্ত ভাইদের বাড়ীতে প্রচার করতে গেলাম না, যে মেয়েটা দরজা খুললো। ওর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্লিজ চাচ্চু, এই বিয়ে হতে দিও না৷ আমার পুষির… ”
লাইন বিচ্ছিন্ন হলো। আদিত্য মাথা চেপে সেখানেই বসে রইলো। তেঁতুল তলায়।

বিকেল নাগাদ হক বাড়ীতে হাজির হলো দু’জন মহিলা। তাদের সাথে করে পেছনে ডালা সমেত দু’জন লোক এসেছে। সেঝ চাচি গলা ফাটিয়ে সবাইকে জড়ো করলেন। তালুকদার বাড়ী থেকে এসেছে সব। এদিকে বাড়ীতে হেমন্তের বিয়ের আয়োজন চলছে। আজ বাদে কাল হলুদ। ছোট চাচি হাসতে হাসতে বললেন,
“এক সানাইতে দুই বিয়ে করিয়ে দিব আমরা।”

মহিদা দুজন পরিচিত। তাদের বসিয়ে নাস্তা দেওয়া হলো। তারা জানালো আনুষ্ঠানিক ভাবে মেয়ে দেখতে আসবে তালুকদার বাড়ী থেকে। আজই আসতো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ থাকায় আসতে পারে নি তাই ডালা পাঠিয়েছে।
উপর থেকে সবটা শুনে পৌষ সহ বিচ্ছু বাহিনি খুশিতে যখন হাত তুলে হাই ফাইব দিলো তখনই কানে চাপা ধমক এলো। ধমক দিয়েছেন বড় চাচি। পৌষ মুখ ভেঙালো। বড় চাচি নীচ থেকেই চোখ রাঙালেন। পৌষ সেসবে পাত্তা দিলো না। ওর ঈগল দৃষ্টি শুধু মহিলাদের ব্যাগে। কখন তারা ব্যাগে হাত দিবে আর টাকাপয়সা কিছু বের করবে কিন্তু আফসোসের বিষয় এমন কিছু ঘটলো না। তারা দিন তারিখ জানিয়ে চলে গেলেন। হতাশ! পৌষ ভীষণ হতাশ।
হেমন্ত তখন মাত্রই বাড়ীতে ঢুকলো। তার পেছনেই ঢুকলো একজন পরিচিত চাচি। ওনাকে চিনে পৌষ। ওনার নাতনি পড়তো পৌষ’র সাথে কিন্ডারগার্টেনে।

ধুপধাপ পা ফেলে পৌষ যখন নামছে তখন তার পেছনে পাঁচজন সেনাবাহিনী। সেই চাচিকে অতিক্রম করে যেতে যেতেই এক জোটে থামলো সবগুলো। কানে এলো চাচির কণ্ঠ,
“পৌষটা তো মেলা বড় হইসে। আমাদের সরবের জন্য মেয়ে খুঁজছি। আমরা সবাই চাই পৌষ’কে তোমরা দাও।”
তিনজন বুঝলেও ইনি, মিনি বুঝে না। রাগে পৌষ’র মুখ লাল হয়ে এলো। হেমন্ত কিছু বলার আগেই দেখলো রান্নাঘরের পাশে দাঁড়িয়ে পৌষ সহ বাকিগুলো শুনেছে চাচির কথা। ও বুঝে গেলো পৌষ এখানে কান্ড ঘটাবে। দ্রুত ও গেলো সেখানে। পৌষ’র হাত টেনে নিলো রান্নাঘরের ভেতর। পৌষ হাত মুচড়ে উঠছে। বারবার বলতে,
“ছাড়ো হেমু ভাই। আজ আমি বেটিকে দেখাব পৌষরাত কে। তদামড়া, বুড়া, থুরথুরা এক ব্যাটার জন্য আমার জন্য প্রস্তাব আনে। কেন? আমি কি বুড়া নাকি লুলাটুন্ডা?”

“তুই খাবি থাপ্পড়। মুখ চলে বেশি। সোজা যেখানে যাচ্ছিলি যাবি। আমি কথা বলছি।”
“চিনি না আমি কাউকে? আমাকে এদের কারো গলায় শুধু ঝুলাতে চাইবে, দেখবে সবার গলায় দড়ি দিয়ে ঘুরাব আমি৷ শখ কত আমাকে বিয়ে করবে।”
পেছন থেকে সেঝ চাচি মুখ ভেঙিয়ে বলে উঠলেন,
“নিন্দে সোনা পিন্দে। দেখিস কবে না জানি বিয়েশাদি বুড়োর সাথেই হয়।”
“আপনার মুখে বাসি চুলার ছাই পড়ুক চাচি। সেই ছাইতে ছাল উঠানো কু’ত্তাটাও হিসু করুক। মধু পড়ার দোয়া করতে পারলাম না কারণ আপনার সইবে না।”

হেমন্ত পৌষ’র ডান গালে চড় দিলো একটা৷ শব্দহীনা, ব্যথা হীনা এক থাপ্পড়। সেঝ চাচির মুখ বন্ধ করতে হেমন্ত করলো কাজটা কিন্তু এদিকে দুটো মুখ, দুটো চোখ কেঁদে উঠলো। বাকি চারটা চোখে পানি টলমল করছে অথচ যাকে মা’রা হলো সে গাল ফুলিয়ে ফুঁসছে। ইনি, মিনি কাঁদছে পৌষ’র হাত টেনে। তারা কাঁদছে সুতরাং তাদের কোলে তোলা হোক। পৌষ টেনে দুটোকে কোলে তুললো। একসাথে দুটোকে নিতে পারে না ও তাও কান্না থামাতে নিলো। পিহার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। জৈষ্ঠ্য, হেমন্ত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হেমু ভাই চড়টা দিয়েছে হুট করে। বাঁচানোর সময় তারা পায় নি।
সেঝ চাচি খুশিই হলেন। সরে গেলেন সেখান থেকে। হেমন্ত পৌষ’র দিকে তাকিয়ে বললো,
” চুপচাপ ঘরে যা।”

“চাচি টাকা দিক এরপর যাচ্ছি।”
অবাক স্বরে হেমন্ত জিজ্ঞেস করলো,
“কেন দিবে টাকা?”
“তালুকদার বাড়ী থেকেও দিলো না। চাচিও দিবে না৷ তাহলে কোন *লে দেখতে এসে টাকা দিবে আমাকে?”
“তুই কি ভালো হবিই না?”
হেমন্ত ক্লান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে। পৌষ গড়গড় করে বলে,
” রাতে ছাদে পার্টি করব। তুমি আমন্ত্রিত। শুনো খালি হাতে এসো না৷ বাইরে থেকে নান আর গ্রিল আনবে। আমি পাটি বিছিয়ে বাকি সব গুছিয়ে রাখব।”
হেমন্ত পৌষ’র কপালে টোকা দিলো। পা বাড়ালো উল্টো পাশে। ইনি, মিনি ততক্ষণে বাড়ী ছড়ালো। তাদের মুখের বুলি সেই ঠাকুমার ঝুড়ির টুনটুনি পাখির মতো যে রাজার খবর ছড়াতো। তারা ছড়াচ্ছে তাদের আপার কথা। মুখের ছোট বুলিতে ফুটে উঠছে একটাই বাক্য,
“হেমু বাই মেলেতে আপাকে।”

তৌসিফের বাড়ীর নিচের অফিসে বসা হেমন্ত। তৌসিফ’কে দাওয়াত করা হয় নি বিয়ের জন্য। আজ কার্ড নিয়ে সরাসরি এসেছে। তৌসিফ ওর সামনেই কার্ড খুলে দেখছে। কার্ডের নিচে হৈচৈ লিখে তাতে ছয়জনের নাম লিখা। তারমধ্যে সবার আগে লিখা একটা অশোনা, অদ্ভুত শব্দের গড়া নাম, ‘পৌষরাত’।
তৌসিফ হাসিমুখে বললো,
” আমাকে নাহয় এই কার্ড দিলে বাকিদের দিবে না?”
হেমন্ত ইতস্তত বোধ করে। তৌসিফ নিজ থেকেই বললো,
“বড় ভাই আর ছোটকে আলাদা কার্ড দিও। সাথে তালুকদার ট্রেডার্সে আলাদা করে কার্ড দিবে।”
হেমন্ত হেসে ফেললো। তৌসিফ দুষ্টামি করে বললো,
“আমার আগে কাজ সেরে ফেলছো।”
হেমন্ত সামান্য লজ্জা পেলো। তৌসিফ হাসিমুখেই জিজ্ঞেস করলো,
“সাইডে গিয়েছিলে? কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে?”
“জি, ভাই।”

হেমন্ত একটা ফাইল এগিয়ে দিলো। তৌসিফ তা না খুলেই বললো,
“তুমি মুখে বলেছো আমি শুনেছি হেমন্ত। ফাইলের সম্পর্ক তোমার আমার না।”
“তবুও ভাই। সবসময় তো থাকব না৷ যেই আসুক তার কাজ বুঝে নিতে সুবিধা হবে।”
তৌসিফ তবুও ফাইল ধরলো না। তার একটা সাইডের কাজ নতুন ভাবে গড়া হচ্ছে। প্রায় দশ বছর পর কাজটা ধরা হচ্ছে। বিশ্বাসযোগ্য কেউ ছিলো না বলে হেমন্তকে নিজে ডেকে কাজটা করতে বলেছিলো তৌসিফ। হেমন্তর নিজেরও ব্যাবসা আছে কিন্তু তৌসিফকে না বলতে পারে নি। ওদের কথার মাঝেই রনি নক করলো। তৌসিফ আসতে বলতেই রনি হেমন্তের সামনেই বললো,
“জয়নাল তো সবার সামনে সরবকে দুটো চড় দিয়ে পার্টি অফিস থেকে বের করে দিয়েছে বস।”
তৌসিফ বাঁকা হাসলো। রনিকে বললো,

“ফাইলটা নিয়ে যা।”
রনি যেতেই হেমন্ত আনমনে বলে উঠলো,
“আজই তো ওর বিয়ের জন্য ওদের ওখান থেকে এক চাচি এলো?”
তৌসিফ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো,
“কার সরবের জন্য? কার জন্য প্রস্তাব পাঠালো?”
“আমার চাচাতো বোন পৌষ’র জন্য।”

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১১

মূহুর্তেই কিছু একটা হলো। তৌসিফের মুখের আদল বদলালো। হেমন্ত চলে যেতেই তার চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারন করে। মাড়ি কামড়ে তৌসিফ বলে উঠলো,
“বিয়ের মেলা বসেছে। জনাবার তো প্রস্তাবের লাইন লেগেছে।”

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১২