প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৯

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৯
সাইয়্যারা খান

“আপনি পৌষকে বিয়ে করলেই পারতেন।”
এত বড় একটা কথা অবলীলায় বলে উঠলো শ্রেয়া। হেমন্ত নির্বাক। দুপুরের বেশ খানিকটা সময় পর বাড়ী ফিরেছে সে। শ্রেয়া একবার ফোন দিয়েছিলো। হেমন্ত তুলে জানিয়েছে তার দেড়ী হবে। সত্যিই দেড়ী হলো। সে বাড়ী ফিরলো দেড়ী করে। এলোমেলো পায়ে। কিছুটা অগোছালো ভাবে। বাড়ীতে ঢুকতেই তার ঘাড়ের ওপর ইনি,মিনিকে ফেলে হেঁটেছে কিছুক্ষণ। দুপুর থেকে ওদের খাওয়ানো যায় নি। ছোট চাচি ওদের পেলেছে কম। ছোট চাচার সাথে এখনও বেশ প্রেম প্রেম সম্পর্ক তার। আচার-আচরণ নব্য বিবাহিত দম্পতির ন্যায়। ছোট চাচি মেয়েদের একপ্রকার দুধ ছাড়ার সাথে সাথেই পৌষের কাছে দিয়েছিলেন। দুধের থাকতেও পৌষ বেশ সামলেছে ওদের। রাতে কাঁদলে ছোট চাচা পৌষের কাছে দিয়ে হাসি-হাসি মুখে বলতেন,

“রাখিস তো পৌষ পাখি, তোর চাচির ঘুম হয় না তিন রাত।”
পৌষ মুখ ঝামটা দিতো ঠিকই কিন্তু দুটোকে কোলে তুলে খাটে শুয়ে দিতো। মাঝেমধ্যে যোগ দিতো চৈত্র আর জৈষ্ঠ্য। পিহা তখন ওদের কোলে নিতে পারতো না। আধ রাতে হেমন্ত যখন জাগ্রত হতো তখন নিজে এসে দুই বোনের সাথে কথা বলতো। তাদের রাত জেগে থাকার এই নিয়ম কড়ায়গণ্ডায় একদম চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইনি,মিনিকে পেলেপুষে। তাদের নিজেদেরও অভ্যাসটা থেকে গিয়েছে। মায়ের থেকে ভাই-বোন তাদের বেশি প্রিয়। তাই আজ ছোট চাচি খাওয়াতে পারলেন না। এমনি সময় হলে খাবারের বাটি সহ ইনি, মিনিকে পৌষের কাছে দিয়ে যেতো কিন্তু আজ তা সম্ভব হয় নি যার দরুন শেষমেষ রেগে দুই মেয়েকে ধমকেছেন তিনি। সেই ধমকে কান্না তাদের বেড়েছে। পিহা একা সামলাতে পারে নি। হেমন্ত তখনই ঢুকেছে। তাকে দেখেই দুই নাদুস-নুদুস দৌড়ে এসেছে। মা তাদের বকেছে, বিচারটা দিতেও ভুলে নি। ছলেবলে-কৌশলে ওদের খায়িয়ে হেমন্ত ঘরে এসেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শ্রেয়া তখন মায়ের সাথে কথা বলছিলো। নিঃশব্দে ফোন রেখে হেমন্তকে গোসলে যেতে বলেছে। কোথায় ছিলো জিজ্ঞেসও করে নি৷ হেমন্ত গোসল করে বের হতেই শ্রেয়া খাবারের কথা বলে। হেমন্ত নাকচ করে। শ্রেয়া নিজেও না খেয়ে ছিলো। অপেক্ষা করছিলো হেমন্ত এলে খাবে কিন্তু শাশুড়ীর জোড়াজুড়িতে খেতে হয়েছে। এই বাড়ীতে নতুন ও। কারো মুখের উপর তেমন কথাও বলতে পারছে না৷ হেমন্ত সেই থেকে বিছানায় শুয়ে আছে। কপালে হাত ঠেকিয়ে পা দুটো বিছানার বাইরে ঝুলিয়ে রেখেছে। বেশ সময় পর গিয়ে শ্রেয়ার হঠাৎ মনে হয়েছে হেমন্তের উচিত ছিলো পৌষকে বিয়ে করা। অন্তত মেয়েটা চোখের সামনে থাকতো। নড়বড়ে থেকে শক্ত একটা খুঁটি হতো। এতটুকু তো শ্রেয়া জানে, বুঝে নিজের বাবার বাড়ীতেও পৌষর খুঁটিটা যথেষ্ট নড়বড়ে ছিলো অথবা ছিলোই না। যদি হেমন্ত ওকে নিজের করে নিতো তাহলে তো আজ এতগুলো বাচ্চা ভুগতো না। ভুগতো না হেমন্ত নিজেও।

গত সময়টুকুতে এদের বিক্ষিপ্ত অবস্থার চাক্ষুষ সাক্ষী শ্রেয়া নিজে। কিছু ঘন্টা পর চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে যাবে। পৌষ এখন পর্যন্ত ফোন দিয়ে কথা বলে নি৷ মেয়েটা ফোন নিয়েছে কি না তাও সন্দেহ। হেমন্তের অবস্থা দেখেই উপরিউক্ত বাক্যটা শ্রেয়া উচ্চারণ করেছে। নিজের মুখের কথায় শ্রেয়া নিজেই চমকায়। মুখ ফসকে খুব বেশিই বেফাঁস সে বলে ফেলেছে। যেখানে হেমন্ত ওকে বলে এসেছে ও পৌষের বাবা হতে চায় সেখানে এই বাক্যটা জঘন্য ঠেকলো কিন্তু পরিস্থিতি সাপেক্ষে যুক্তিযুক্ত বটে। শ্রেয়া ভাবলো হেমন্ত রাগ দেখাবে কিন্তু নাহ। ও চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো। শ্রেয়ার মনে হলো ও ঘামছে। ভয়ে ঘামছে। ভয়টা কিসের তাও অজানা এখন। খালি ঘরটায় তখন শুধুই নিঃস্তব্ধতা। সেই নৈঃশব্দ্য ভাব ভেঙে হেমন্তের শীতল কণ্ঠে শোনা গেলো,

“এটা কোন ভাবেই সম্ভব ছিলো না শ্রেয়ু।”
শ্রেয়ার কপাল কিছুটা কুঁচকে গেলো। হেমন্ত না দেখেই ওর প্রশ্নাত্মক চাহনি বুঝলো বোধহয়। নিজ থেকেই বললো,
“যদি এটা সম্ভব হতো তাহলে কখনো ওর বাবা হতে চাইতাম না শ্রেয়ু। ওর শক্ত কাউকে দরকার ছিলো, যা ও পেয়েছে। যেভাবেই হোক পেয়েছে। আমি ওর সুখ চাই। ঐ সকল সুখ ওর নামের খাতায় লিখিত হোক যা আমি ওকে দিতে পারি নি।”
“আপনারা চাচাতো ভাই-বোন হেমন্ত। অসম্ভব কিছু ছিলো না।”
“ওর আমার আরেকটা সম্পর্ক আছে শ্রেয়ু।”
শ্রেয়া থমকে গেলো যেন। পৌষের সাথে হেমন্তের আর কি সম্পর্ক থাকবে? আকাশ-পাতাল ভেবেও তো শ্রেয়া উত্তর খুঁজে পেলো না। হেমন্ত তাচ্ছিল্য হাসে বললো,
“পৌষ আমার দুধ বোন।”
শ্রেয়া চুপ করে গেলো। এমন কিছু তার মাথায় আসে নি। আস্তে করে শুধু বললো,

“আপনার আম্মুর… ”
ওকে সম্পূর্ণ না করতে দিয়ে হেমন্তই বললো,
” উহুঁ, ওর আম্মুর দুধ আমি পান করেছিলাম।”
“কিহ! এটা কিভাবে সম্ভব হেমন্ত? পৌষর তো কোন আপন ভাই-বোন নেই।”
হেমন্ত ফাঁকা দৃষ্টি ফেলে তাকালো। শ্রেয়া দেখলো সেই মায়া মায়া চোখ দুটো পানিতে ভরপুর। শ্রেয়া দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিছানায় বসলো। হেমন্তের কাছে গিয়ে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো। হেমন্ত ক্ষুদ্র শ্বাস ফেললো। শ্রেয়া ওর পিঠে হাত বুলিয়ে শুধু বলে,
“কষ্ট বা অনুভূতি চেপে রাখতে নেই হেমন্ত। নিজেকে হালকা করুন। আমাকে বলুন। পৌষর ভাই-বোন আছে?”
“আছে তো। এই যে আমরা ছয়জন।”

“আপনি জানেন আমি কিসের কথা বলছি।”
হেমন্ত চুপ করে গেলো। বেশ কিছুটা সময় নীরবে থাকার পর শ্রেয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
“মেঝ চাচির প্রথম একটা সন্তান মা’রা গিয়েছিলো শ্রেয়ু। জন্মের সাথে সাথেই। কিভাবে মা’রা গেলো কেউ জানতো না। বাচ্চার কান্না শুনেছিলো মেঝ চাচি। আমার তখনও একটা পৌষ হয়েছিলো। সেই পৌষকে কখনো আমি ছুঁয়ে দেখিনি। সেই পৌষটা জানতো এই বাড়ীতে সে শান্তি পাবে না। পালিয়ে গেলো ওর ভাগের সবটুকু খাবার, আদর আমাকে দিয়ে। তার কত বছর পৌষটা আবার এলো। এবারের পৌষর সাথে আমার দুধ বোনের সম্পর্ক আগে। চাচাতো বোন পরে। আমার কি মনে হয় জানো শ্রেয়ু, আমার মনে হয় ওর হৃদয় নেই। পৌষর কোন হৃদপিণ্ড নেই। আমার বুকের ভেতরই ওর হৃদপিণ্ড ধুকপুক শব্দ করে।”

শ্রেয়ার চোখ দুটো দিয়ে পানি গড়াচ্ছে। পানি মুছার তাড়া নেই কারো। হেমন্ত আবারও বললো,
“তুমি একদিক ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে শ্রেয়ু। ভেবো না আমার বোন বলে বলছি। ওর মুখে আমি এক অদ্ভুত মায়া পাই। যখন হাসে না শ্রেয়ু আমার মনে হয় এমন নিস্পাপ হাসি আমি কখনো দেখি নি। একদিন খেয়াল করে দেখো। ওর হাসিটা সবার থেকে ভিন্ন। এত সুন্দর একটা হাসি অথচ ওকে বেশি কেউ হাসতেই দিলো না। আমার বাচ্চাটা হাসতো কিন্তু বেশিরভাগ হাসিই থাকতো দুঃখে, কষ্টে। ও কাঁদতে পারে না শ্রেয়ু। ও কাঁদতে পারে না।”
হাহাকার করে ওঠে হেমন্ত। শ্রেয়া ওর হাত দুটো ধরে বসেই রইলো। দরজায় তখন চৈত্র ডাকছে। সে খাবার নিয়ে এসেছে। তাদের জানা আছে, তাদের হেমু ভাই যে খায় নি।

সন্ধ্যা গড়িয়ে তখন রাত। আকাশে আজ চমৎকার এক চাঁদ উঠেছে। এতক্ষণ পরিষ্কার দেখা গেলেও এখন মেঘের আড়ালে কিছুটা ঘোলাটে। তৌসিফ বাড়ী ফিরেছে মাত্র। ও আসার কথা টের পেতেই পৌষ বারান্দায় চলে এসেছে। কেন জানি তৌসিফের মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করে না। ওর চোখ দুটো জ্বালায় বেশি। হুবহু সম্রাটের মতো। আজ বিকেলে ঘুম দিতেই সম্রাট হাজির হলো। বলা নেই, কওয়া নেই পৌষকে গু’লি করে লাল গাড়িতে করে চলে গেলো। পৌষর মনে হলো গুলিটা করেছে কারণ পৌষ সম্রাটের চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেছে। এছাড়া তো কারণ দেখছে না পৌষ।

“পৌষরাত, আর ইউ দ্যার?”
যাহ, টের পেয়ে গেলো। মুখোমুখি হতে না চাইলেও তৌসিফ নিজের মুখ নিয়ে এগিয়ে এলো। পৌষকে বারান্দায় দেখে ওর মুখটার আদল পরিবর্তন হলো যা স্পষ্ট টের পেলো পৌষ। কণ্ঠে গম্ভীরতা এনে তৌসিফ শুধু বললো,
“ভেতরে এসো।”
এই দুটো শব্দে কিছুতো ছিলো। পৌষ কোন তর্ক না করেই বারান্দা থেকে ভেতরে আসে। তৌসিফ এদিক ওদিক দেখে থাই লাগিয়ে পর্দা টানলো। কণ্ঠে সেই ধাঁচ রেখেই বললো,
“রাতবিরেত বারান্দায় যাবে না।”
“কেন?”
“কারণ আমি না করেছি।”

পৌষ আগ বাড়িয়ে কথা বললো না তবে মুখ ভেঙালো ঠিকই। তৌসিফ তা দেখেই হাসলো। পৌষর মাথায় হাত দিয়ে বললো,
“এত সুন্দর মুখটা বাকা-চোখা করলে কেমন দেখায়?”
পৌষ মনে মনে উত্তর দিলো,
“চমৎকার দেখায়।”
তৌসিফ ওর উত্তর না পেয়ে বললো,
“রাতে তুহিন আর পলক আমাদের সাথে খাবে। পলক তো এখনও তোমাকে দেখে নি।”
“কি দেখবে আবার? সেদিনের মতো দেখবে আমাকে?”

শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তৌসিফ। চোখে চোখেই উত্তর দিতে চাইলো কিন্তু সম্ভব হলো না। পৌষ ওর চোখে তাকায় না। এই মেয়েটা ভীষণ চালাক। চোখে তাকালে তার মুখ দিয়ে কথা তো দূর ক, খ ও বের হবে না। সামনের জনের ভীতি দূর করতে এই উপায়টা সুন্দর। চোখে তাকাবে না, ভয়ও পাবে না। তৌসিফ কথা কাটালো।
“তুমি দুপুরে খাও নি কেন পৌষরাত? আমি বলেছিলাম না খেতে? মিনু বললো তুমি খাও নি।”
“মন চায় নি।”
“মন না চাইলেও আমাদের অনেক সময় অনেক কিছু করতে হয়। তুমি তার জলজ্যান্ত সাক্ষী পৌষরাত।”
পৌষ কথা না বলায় তৌসিফই বললো,

“আমি গোসল করে আসছি। মিনু ফ্রুটস নিয়ে আসবে। চুপচাপ খেয়ে নিবে।”
তৌসিফ গেলো তবে দরজা বন্ধ করলো না। মিনু ফল দিতেই পৌষ একটা মুখে দিলো। বরাবর বাথরুম। সেখানে দাঁড়িয়ে মুখে কিছু একটা করছে তৌসিফ। উল্টো ঘুরে থাকায় পৌষ বুঝলো না। টানা আধ ঘন্টা, আধ ঘন্টা কি যে করলো তৌসিফ পৌষ জানে না। বুঝার উপায়ও নেই যেন।
তুহিন পলককে নিয়ে এসেছে। পৌষ তখনও ঘরে। তৌসিফের দিকে তাকিয়ে পলক জিজ্ঞেস করে,
“পৌষ কোথায় মেঝ ভাইয়া?”
“রুমে আছে।”
“আমি কি যাব?”
“যাও।”

অনুমতি পেতেই পলক পা বাড়ালো। সেদিন রাতে এসেছিলো আর আজ এলো। ঘরের সকল ফার্নিচার বদলেছে তৌসিফ। আগে এমন ছিলো না। তার রুচির তারিফ করতে ভুললো না পলক। নিজের সামনে অপরিচিত এক মেয়েকে দেখেই পৌষ কপাল কুঁচকে তাকালো। বুঝলো এটাই পলক। অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে। পা থেকে মাথা পুরোটাই যেন চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য বহন করছে। লাবন্যময়ী এক নারী পলক। যাকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। পৌষও হলো তবে মুখে কিছু বললো না। মনে মনে ভাবলো আজ পলক আউলফাউল কিছু করলে এই বাড়ীতে এক অঘটন পৌষ ঘটাবে। পলক হাসি মুখে এগিয়ে এসে বললো,
“মাশা আল্লাহ, কত সুন্দর তুমি পৌষ। আমাকে চিনেছো? আমি পলক। সম্পর্কে তোমার দেবরের বউ তবুও তুমি বলছি কারণ বয়সে তুমি ছোট।”

পৌষর মনে হলো সুন্দর মেয়েদের এটা অন্যতম গুন তারা অন্যদের সুন্দর বলে। পৌষ পলকের সৌন্দর্যের কাছে কিছুই না৷ হালকা করে পৌষকে জড়িয়ে ধরে পৌষ। পৌষ সৌজন্য বজায় রাখে। পলক একটা বক্স খুলে স্বর্ণের ব্রেসলেট পরাতে নিলেই পৌষ হাত গুটায়। ধীরে শুধায়,
“দুঃখীত আপু। এটা নিতে পারলাম না৷”
“ওমা, কেন পৌষ? তোমার পছন্দ হয় নি?”
“অপরিচিত কারো থেকে হুট করে স্বর্ণ নিতে পারছি না আর আমি এগুলো পরিও না।”
“এখন পরবে। কার বউ তুমি দেখতে হবে না।”
“স্যরি আপু।”
“নাও।”

হঠাৎ পেছন থেকে তৌসিফের গলা শোনা গেলো। পৌষের দিকে তাকিয়ে এবার পলক ওর বাম হাতে পরালো ব্রেসলেটটা। সাইজ মতো হওয়াতে খুশি হয়ে বললো,
“দেখলে, একদম মাপ মতো হয়েছে।”
“বাইরে এসো তোমরা।”
কথাটা বলে তৌসিফ বেরিয়ে গেলো। পৌষ ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানালো পলককে।
খেতে বসে পলকের সাথে টুকটাক কথা হলো পৌষর। পলক মেয়েটাকে ভালোই মনে হলো। এই বাড়ীতে হয়তো অদিতি আর পলক বাদে কেউ জুতসই না আর তৌসিফকে পৌষ বুঝতে পারে না। পলক খেতে খেতেই বললো,
“কাল আমাদের বাসায় দাওয়াত মেঝ ভাইয়া। পৌষকে আমি সকালে এসে নিয়ে যাব, ঠিক আছে? আপনি দুপুরে চলে আসবেন। না শুনব না।”
“যেও।”
ছোট করে কথাটা বলে। তুহিন এতক্ষণের নীরবতা ভাঙলো। তাকে বেশ খুশি দেখালো এখন। পৌষের ওকে পছন্দ না। এই লোকের যথেষ্ট কীর্তিকলাপ এলাকা জুড়ে বিখ্যাত।

ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায় দু’জন। পলককে ঘরে দিয়েই বেরিয়ে যেতে নেয় তুহিন। পেছন থেকে আতঙ্কিত হয়ে ওর শার্ট খামচে ধরলো পলক। ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হলো? কোথায় যাচ্ছেন?”
তুহিন পেছনে ঘুরে। সামান্য হাসে। পলক কেঁদে ফেললো। কান্নার স্বর বাড়লো তার। তুহিনকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
“এখন কেন? এখন যাবেন না তুহিন। এখন তো যাওয়ার কথা না আপনার। আপনি… আপনি এটা করতে পারেন না আমার সাথে। আমি ম’রে যাব। ছেড়ে দিন তুহিন। আমার আগের তুহিন হয়ে যান।”
তুহিন হাসলো। পলকের কপালে গাঢ় চুমু খেয়ে বললো,
“ছাড়ব তো কিন্তু এখন ছাড়তে পারছি না পলক। তবে কথা দিচ্ছি, ছাড়ব।”
“না না আজ না তুহিন। প্লিজ।”
ওর কাকুতি শোনে না পলক। ওকে বিছানায় রেখে কিছুটা দৌড়েই বেরিয়ে যায়। পলক দুই হাতে মুখ ঢেকে কাঁদে। হিচকি তুলে কাঁদে।

বাড়ীর পেছনে মড়মড় শব্দ হচ্ছে। চারপাশে ঘন গাছপালা। শুকনো পাতা রোজ ঝাড়ু দেওয়া হলেও পেছন দিকটায় দেওয়া হয় না রোজ। পাতা গুলো শুকিয়ে জমলে মাসে একদিন একত্রে করে আগুন লাগানো হয়। মাসের শুরু, পরিষ্কার করা হয় নি এখনও। তুহিন বেরিয়েছে আবার ঘন্টার ব্যবধানে ফিরেও এসেছে। শুকনো পাতায় পা দিতেই শব্দ হলো। ওর মনে হলো পেছনে কেউ আসছে। দমকা হাওয়ায় গায়ে শিরশির করলো কিছুটা। এবারে যেন স্পষ্ট দেখলো ওর পেছনে কেউ আসছে। ঘুরে তাকাতেই দেখলো নেই। কেউ নেই। আচমকা তুহিন দৌড় লাগালো কিন্তু সুবিধা বোধহয় হলো না। ধপ করে পড়লো মাটির উপর।

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৮

কেউ এই দৃশ্য দেখে হাসলো। ভরা চাঁদ আকাশে। ঘোলাটে ভাব সরে তা লাল রঙ ধারণ করছে ক্রমশ। পেছন খাটের মাগুর গুলো আজ পেটপুরে খাবে। মানুষের গোস্তো তাদের খুব প্রিয়।

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ২০