প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩০
সাইয়্যারা খান
আজ এক প্লেট ভরে ভাত খেয়েছে তৌসিফ। খাবে এটাই যেন নির্ধারিত ছিলো। তার বউ চমৎকার হাতে রান্না করেছে। কচু খেয়েছে পুরোটা বিশ্বাসের উপর। গলায় ধরে নি একটুও। এক কচু দিয়ে পৌষ তিন পদ রেঁধেছে। ইলিশ কচু, কচু ভর্তা আর শাক আলাদা করে রান্না করেছে। তৌসিফের অতি প্রিয় গরুর চাকা গোস্তের ভুনাও তাকে ততটা টানে নি। শেষে গিয়ে ডাল আর গোস্ত দিয়ে শেষ করেছে। পৌষ ওকে যেই যত্ন করে আজ খাওয়ালো, এমন যত্ন আজ পর্যন্ত মা বাদে কেউ করে নি। মা এভাবে জোর করে করে খাওয়াতো।
প্লেটে সরাসরি তুলে দিতো। এক চামচ বলে তিন চামচ দিতো। খেয়ে তৌসিফ সোফায় বসেছে। পৌষ বুয়ার সাথে গোছগাছ করে একটা পেয়ালা হাতে এগিয়ে এলো। তৌসিফ মাত্রই ঢেকুর তুলে খাবার হজম করে ভাবছিলো একটু পর ঘন্টা খানিক ওয়ার্ক আউট করবে। তার জীবনের অন্যতম রেকর্ড হলো বিগত ছয় বছর ধরে একই ওজন মেইনটেইন করে আসা। এই কাজটা অবশ্য অতটাও সহজ না। খাবার সবসময় মেপেঝুপে খাওয়া হয় তার কিন্তু পৌষের জন্য ইদানীং এদিক ওদিক হয়ে যাচ্ছে যার দরুন অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে হচ্ছে। মাথায় যখন এসব ঘুরছিলো তখনই পৌষ ওর সামনে পেয়ালা এগিয়ে দিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ঠান্ডা হয়েছে। খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।”
তৌসিফ তাকালো। সাবুদানা দিয়ে দুধ জাতীয় কিছু বানিয়েছে পৌষ। তৌসিফ ঢোক গিললো। দেখেই ভালো লাগছে। হাত বাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“আমার হঠাৎ এত খাওয়া ঠিক হচ্ছে না পৌষরাত। এক চামচ খাই। বাকিটা তুমি খাও।”
“আশ্চর্য! আমি কেন খাব? বানালাম আপনার জন্য। আর ফলমূল, সাবুদানা তো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।”
“চিনি দিয়ে করা না? প্রচুর ক্যালরি।”
“চিনি দেই নি। মধু দিয়েছি।”
তৌসিফ ওর দিকে তাকিয়ে মুখে দিলো। প্রশংসা না করেই পুরোটা শেষ করলো। পৌষ হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে তখনও। তৌসিফ কেঁশে উঠলো কিছুটা। পৌষের হাবভাব ঠিক লাগছে না ওর কাছে। এই মেয়ে তো এত শান্ত না। হঠাৎ আবার কি হলো? ওর ভাবনা চিন্তা আজ পৌষ ডিঙ্গিয়ে যাচ্ছে বারবার। তৌসিফের থেকে খালি বাটি নিয়ে রেখে এসে বললো,
“মাথা ব্যথা করছে আপনার? টিপে দিব?”
এত সুন্দর প্রস্তাব তৌসিফ ফিরিতে দিতে পারলো না৷ ব্যথা না থাকা সত্ত্বেও বললো,
“আচ্ছা।”
দুই লাফে পেছনে গেলো পৌষ। তৌসিফের চুলে হাত দিয়ে ভীষণ মজা পেলো। নরম আর ঝরঝরে চুল। মেয়েদেরও বুঝি এমন চুল হয় না। পরক্ষণেই পৌষ ভাবলো যেই হারে ঘষামাজা এই তৌসিফ মুখে করে তার কিছুটা তো চুলেও করে সুতরাং এই ঝরঝরে চুল তার হবেই। এদিকে তৌসিফ আরামে চোখ বুজেছে। অনেকদিন না বহু বছর পর মাথায় এভাবে হাত বুলাচ্ছে কেউ। আরামে যখনই তৌসিফ শরীর ছেড়ে দিলো তখনই কানে এলো পৌষের ডাক,
“অ্যই মামাতো ভাই?”
বুকের একদম মধ্যিখানে এক তীব্র ধাক্কা খেলো তৌসিফ। মাথাটা ধপ করে সকল শান্তি ভুলে গিয়ে অশান্তিতে পরিপূর্ণ হলো। এই শব্দ দুটো কে শেখালো তার বউকে? কে বললো? কিভাবে বললো? তৌসিফ কয়দিন ছিলো বাড়ীর বাইরে। তার মধ্যেই কিনা এতসব জেনেছে পৌষ? এজন্যই তখন ব্যাঙ্গ করে তুসু ভাই ডেকেছিলো। তৌসিফের সন্দেহ হয়েছিলো তখনই। এখন তা আর সন্দেহ না বরং একদম ঝকঝকে পরিষ্কার। চোখ দুটো ফট করে খুলে তৌসিফ তাকাতেই চোখাচোখি হলো পৌষের সাথে। এই দিকটা থেকে পৌষ একধাপ পিছিয়ে। তৌসিফের চোখে চোখ ও রাখতে পারে না। ওর হাত ধরে তৌসিফ টেনে আনলো ওকে নিজের সামনে। বেশ উদ্বীগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি ডাকলে?”
“ভুল ডাকলাম?”
পৌষের হাসি মুখ দেখে তৌসিফ চিন্তিত হলো। পুণরায় শুধালো বেশ ঠান্ডা স্বরে,
“তোমাকে একথা কেউ তো বলেছে পৌষরাত। সেই মানুষটা কে?”
“যেই বলুক। আগে আপনি বলুন আপনি আমার মামাতো ভাই কিভাবে হলেন? এটা তো অসম্ভব।”
“অসম্ভব কেন হবে?”
“না মিলে আগা, না মিলে মাথা।”
“মিলার কথা কেন আসছে? তোমাকে কে বলেছে এই কথা আর তার চাইতেও বড় কথা, তুমি ঠিক কতটুকু জানো?”
“কি জানি?”
“আমি তোমার মামাতো ভাই।”
“আল্লাহ! এরমানে এই কথা সত্যি?”
তৌসিফ এবারে যেন হতভম্ব হয়ে গেলো। ওর মাথায় ঢুকলো না কি হচ্ছে। কিছুটা রেগে এবার সামান্য ধমক দিলো,
“প্রচুর কথা বলছো তুমি পৌষরাত। কোথায় শুনেছে এই কথা?”
পৌষ এবার শব্দ করে হাসলো। হাসতে হাসতেই বললো,
“আমি গতকাল আপনার আত্মীয়দের মধ্যে কথা শুনে ফেলেছিলাম। তারা আমাকে দেখে নি অবশ্য কিন্তু আমি আড়াল থেকেই বুঝেছিলাম আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। তখনই শুনলাম একজন বললো, তৌসিফ সোহাকে রেখে কেন যে ঐ ফুপুর মেয়ে ধরে আনলো? না আছে যোগ্যতা আর না আছে শিক্ষা। বেয়াদব একটা মেয়ে।”
এতটুকু বলেই পৌষ থামলো। তৌসিফ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে হাওয়াতে খবর শুনে কিভাবে বুঙ্গি দিয়ে তৌসিফের পেট থেকে কথা বের করে নিলো। তৌসিফ হতবুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে দেখে পৌষ এবার ওর মুখোমুখি বসে বললো,
“আমার আম্মুকে আপনি চিনতেন? কেমন ফুপি হতো আপনার? খুব দূর সম্পর্কের? আচ্ছা, শুধু বলবেন আপনার কাছে কোন ছবি আছে আমার আম্মুর? না থাকলে অন্তত বলুন দেখতে কেমন ছিলো। আচ্ছা, আমার আব্বুকে দেখেছেন? সে কেমন ছিলো? কার চেহারা কার সাথে বেশি মিলে?”
তৌসিফ এবারে একেবারেই নির্বিকার হয়ে গেলো। শুধু জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার কাছে তাদের ছবি নেই?”
পৌষ মাথা নাড়ে। তৌসিফ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ভাবলো। কি বলা উচিত তার, সত্যি নাকি মিথ্যা? তৌসিফ খুব ভেবেচিন্তে নিলো। পৌষের একটা হাত ধরে বললো,
“তুমি সত্যিই কখনো দেখো নি?”
এবারেও মাথা নাড়ে পৌষ। তৌসিফ ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে বললো,
“তুমি নিজেকে আয়নায় যেভাবে দেখো তোমার আম্মুও ঠিক তেমনই ছিলো পৌষ। একই নাক, একই ঠোঁট, একই চোখ শুধু থুঁতনিটা তোমার আব্বুর মতো। গায়ের রঙটা তোমার আব্বুর মতো। এবার দেখেছো তাদের?”
“দেখেছি।”
তৌসিফ খুব করে চাইলো পৌষ ওর বুকে এসে একটু কাঁদুক কিন্তু কোন ভাবান্তরই দেখা গেলো না পৌষের মাঝে। মেয়েটার কি একটুও কান্না পাচ্ছে না?
তৌসিফ নিজেই বললো,
“বসন্ত ফুপি আমার দাদার তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান ছিলো। মানে আমাদের সৎ ফুপি ছিলেন। তোমার বাবা প্রলয় হক আমার ফুপা ছিলেন। সেই সুবাদে তুমি আমাদের খুব কাছের কেউ। ফুপির নামে জায়গা জমি যা ছিলো সব তোমার নামে আজও আছে পৌষরাত। হেমন্ত আজ-কাল তোমার বাবার ভাগ আলাদা করে নিতে চাইছে। মনে হয় শিঘ্রই তোমার কাছে দিয়ে দিবে। তুমি ওকে না করে দিও। তোমার নামে যা আছে তা তোমার জন্য খুব যথেষ্ট। সব বাদ দাও আমি তৌসিফ একাই যথেষ্ট। হেমন্ত কোন ভাবেই কুলাতে পারছে না। তুমি কাল ওকে নিজে বলবে যাতে এসব ঝামেলা না করে। বলবে তোমার কিছু চাই না।”
“একশত বার চাই আমার। যা আমার তা অবশ্যই আমার চাই।”
তৌসিফ চোখে হাসলো। পৌষ তা দেখলো। বললো,
“যা আমি এত বছরে পাই নি, যা আমার ছিলো অথচ আমি পাই নি তার এক কোনাও আমি ছাড়ব না।”
“এখন তো আমি আছি পৌষরাত। সবটা আছে তোমার।”
“থাকুক তবুও চাই আমার।”
“হেমন্ত কোর্টে দৌড়াচ্ছে পৌষরাত। কাজ সামলে এসব করা খুব ঝামেলা। তুমি বুঝবে না।”
“দৌড়াক। সাথে তার মা, চাচি নিয়ে দৌড়াক। আমিও দৌড়েছি জীবনে। প্রচুর দৌড়েছি।”
শেষটুকু পৌষ বিরবির করে বললেও তৌসিফ শুনলো অল্প৷ পৌষ কপাল কুঁচকে বললো,
“আপনার দাদা কয়টা বিয়ে করেছিলো?”
“ছয়টা।”
“বাব্বাহ। বুড়োর টাকা ছিনিমিনি খেলতো নাকি? কার পিছনে লুটাবে খুঁজে পেতো না৷”
“এভাবে বলে না হানি। তোমার নানা হন।”
“আমি অনেকবার ভাবতাম আমাকে কেন নানু বাড়ীর কেউ দেখতে আসে না। কেউ কেন আমাকে তাদের কাছে নেয় না। আচ্ছা, সৎ বলে নিতো না?”
“তুমি তাদের কাছেই ভালো ছিলে…. ”
তৌসিফকে থামিয়ে পৌষ বললো,
“ভালো ছিলাম না তো। আমাকে কেউ ভালো রাখে নি। আমি একা একাই ছিলাম। নানু বাড়ী যেহেতু বড়লোক নিশ্চিত আমাকে আদর করতো। আচ্ছা আমার নানু কোথায় থাকে?”
“তোমার নানু নেই পৌষরাত।”
“ওহ। আমার খালামনি নেই? মামা নেই?”
খুব আগ্রহ নিয়ে পৌষ জিজ্ঞেস করলো। তৌসিফ স্পষ্ট দেখলো মেয়েটার চোখে আদর খুঁজার তীব্র বাসনা। ও কি আদরই পায় নি ছোট বেলায়? ছোট্ট করে তৌসিফ বললো,
“তোমার নানুর একটাই মেয়ে ছিলো পৌষরাত। আর কোন সন্তান ছিলো না। এরপর থেকে দাদার আর ছেলে সন্তান হয় নি। আমাদের বাবা,চাচারাই ছিলো প্রথম স্ত্রীর সন্তান। বাকি কোন স্ত্রী তিনি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেন নি বা বিয়ে করেন নি। পরিস্থিতির চাপে করতে হয়েছিলো।”
“বাহ, কি উদারতা তার। আমার চোখে পানি চলে এলো। দেখুন তো ভিজেছে কি না।”
তৌসিফ এত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে অথচ এই মেয়েটার মাঝে সামান্য মায়াদয়া হচ্ছে না। নিষ্ঠুর বউ তৌসিফের। তৌসিফ হালকা স্বরে বললো,
“দাদা তো চেয়ারম্যান ছিলো পৌষরাত। আমার দাদী আর চার নাম্বার দাদী বাদে কেউই তেমন যোগ্য ছিলো না তালুকদার বাড়ীর বউ হওয়ার তবে তোমার নানুর বাবা যথাসম্ভব এলাকার মাস্টার ছিলেন। তিনি মারা যেতেই তোমার নানু একা হয়ে যান তাই দাদা বিয়ে করেন।”
“উফ, বহুত কাহিনি। এক মামাতো ভাই বাদে কিছুই পেলাম না৷ লাভ হলো কি আমার?”
“আমাকে পেয়েও লাভ খুঁজো তুমি? আমাকে পেয়ে খুশি হও নি?”
“খুশি হওয়ার মতো করে আপনাকে আমি পাই নি। নিজেকে লাঞ্ছিত করে আপনাকে পেতে হয়েছে। এই পাওয়াতে সুখ নেই।”
তৌসিফের তেঁতো সত্যিটা ভালো লাগলো না। পৌষ নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,
“এবার চলুন তাহলে।”
“কোথায়?”
“দেখাতে।”
“কি দেখবে?”
পৌষ মুখে সেই লজ্জা আনলো। বললো,
“সম্রাট চেয়ারম্যানকে।”
তৌসিফ কপালে চেপে ধরলো। পৌষ সাথে সাথেই বললো,
“চেপে দেই কপাল। ব্যথা কমলেই যাব ঠিক আছে?”
চারপাশ সম্পূর্ণ নিঃস্তব্ধতার চাদরে ঘেরা। বাড়ীর গেট বরাবর দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে তৌসিফ। এক হাতে পৌষের হাত। পৌষ খুব উৎফুল্ল। যাকে এতটা বছর কাগজে দেখে এলো তাকে আজ দেখবে সরাসরি। তৌসিফ যে রাজি হয়েছে তাই ঢের। তায়েফা আসার আগে জিজ্ঞেস করেছিলো কোথায় যাচ্ছে। তৌসিফ ছোট্ট করে বলেছে চাচির বাসায়। আপা আর কিছু বলে নি। দারোয়ান দুজন তৌসিফকে সালাম দিলো। পৌষের হাতে চাপ বাড়ালো তৌসিফ। পৌষের এত উচ্ছাস যেন ওর ভালো লাগছে না। লাগবার কথাও না। আজকালকার মেয়ে পৌষ। তার ভালো লাগবে তৌসিফকে কিন্তু নাহ তার নাকি ভালো লেগেছে সম্রাট ভাইকে।
একটা ছবি বাদে কিছু দেখেও নি। তৌসিফ যথাসম্ভব বুঝলো পৌষের মতো মেয়ে শুধু ঐ চেহারা দেখে এতটা পছন্দ করে না বরং ওকে আটকেছে সম্রাটের ব্যাক্তিত্ব। সম্রাট নামটা মানেই এই এলাকা জুড়ে শীতল আগুন, বজ্রনিঃশব্দ, পাথরপ্রাণ অথচ খুব অবিচল, মায়াময় সাথে অভেদ্য। তার দৃঢ় আর সংযত চরিত্রে আজও আটকে কত মানুষ। তার এই এত বছরের ব্যাক্তিত্ব আজও টিকে আছে শক্ত এক নিশানার মতো। কেউ ভুলে নি। ভুলবে না। এক স্বপ্ন পুরুষ কি না সে। তৌসিক কেন যে কেউ স্বীকার করবে কোন নায়ক থেকে কম না সম্রাট ভাই বরং বাংলা চলচিত্রের খুব বিখ্যাত এক ব্যাক্তির অনেকটা অংশ তার মুখাবয়ে ফুটে উঠে। যেমন বাচনভঙ্গি ঠিক তেমনই রসিক এক পুরুষ।
পৌষ হাঁটতে গিয়ে হোচট খেতে নিতেই তৌসিফ হাতটা ধরে নিজের দিকে টেনে চাপা স্বরে ধমক দিলো,
“আস্তে। এত তুরতুর করছো কেন?”
“ওসব আপনি বুঝবেন না৷”
তৌসিফ আড়ালেই চোয়াল শক্ত করে। ও নাকি বুঝবে না। সম্রাটের বাড়ীতে প্রবেশ পথে দারোয়ান হিরু বসা। তৌসিফকে দেখেই সালাম দিলো। তৌসিফ বললো,
“চাচি আসে না আজকাল? দেখি না যে?”
কথাটা বলেই পৌষকে নিয়ে ঢুকে গেলো তৌসিফ। হিরুকে রাগাতে তার বেশ মজা লাগে। কেমন এক পুরুষ সে, নিজের স্ত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেই রেগে যাবে। বড্ড আদরের বউ তার।
তাহমিনা বাড়ীতেই আছে তবে তৌসিফ পৌষকে নিয়ে গেলো এই বাড়ীর মাঝখানে থাকা এক বিশাল গাছের নিকট। তার ঠিক পাশ থেকে বরাবর সামনে তাকালে সম্রাটের বাগান বাড়ী চোখে পড়ে। অন্ধকারে পৌষ দেখতে না পেয়ে তাড়া দিলো,
“কই? কই?”
“ধৈর্য ধরো।”
তৌসিফ ওকে নিয়ে সামনে যাচ্ছে। মাথাটা ওরনা দিয়ে আরেকটু ঢেকে নিলো পৌষ। লজ্জা না বরং অচেনা অনুভূতি হচ্ছে তার। চকচকে টাইলস করা দুটো সিঁড়ি। নিচ দিকে মোজাইক করা। চোখ আটকে যাওয়ার মতো খোদাই। নিখুঁত হাতের কাজ। উঁচু করে বাঁধাই করা জায়গাটা। একটু ধুলো নেই, শুধু শান্তিময় বাতাস। মাথার কাছে গেড়ে রাখা বড় টাইলস করা দেওয়ালে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা সম্রাট তালুকদার। পৌষের বুক অতটুকু পড়েই ধ্বক করে উঠে। দ্বিতীয় সালটা দেখে মনটা খুব খারাপ হলো ওর। ধীরে ধীরে শ্বাস নিলো পৌষ। মাটির উপর চারপাশে সুন্দর সুন্দর গাছ। একপাশে খেজুর গাছ। তৌসিফ আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ২৯ (২)
“আরো দেখবে?”
“দেখি?”
পৌষ জিজ্ঞেস করতেই তৌসিফ মাথা নাড়ে। দু’জন দাঁড়িয়ে রয় সেখানে। তৌসিফ আরেকটু এগিয়ে যায়। জিয়ারত করে। শুধু মনে মনে ভাবে, যেই ব্যাক্তিত্বের জালে এত এত মানুষ আটকে আছে, কেউ কি জানে তার অর্ধেক বুনন বানোয়াট। শুধুই চোখের ভ্রম বাকিটা সত্যি। এই আজকের রাতটার মতোই সত্যি।