প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩৩

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩৩
সাইয়্যারা খান

সাদা ধবধবে পাঞ্জাবির মধ্যে বুকের দিকটায় সামান্য হাতের কাজ করা। বোতাম গুলো যত্ন করে লাগাচ্ছে পৌষ, সেই সাথে বিরক্তও হচ্ছে বটে। চারকোনাকার বোতাম লাগাতে তার বেগ পেতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে নখগুলো ভেঙে যাবে। সবগুলো লাগিয়ে সরে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হওয়া কণ্ঠে বললো,
“এমন বোতাম দেয়া পাঞ্জাবি আর আনবেন না৷ নখ ভেঙে গেলো সব। উফ।”
তৌসিফ চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করতে করতে বললো,

“সামান্য কাজেই তোমার কত বাহানা হানি অথচ বাইরে গেলেই মারামারি, হানাহানি লাগিয়ে রাখো। সকল অভিযোগ শুধু মাত্র আমার ক্ষেত্রেই খাটে?”
“অভিযোগ দিয়ে যেই সম্পর্কের শুরু তার দিন রাত তো অভিযোগেই কাটবে।”
তৌসিফ দাঁড়ি ব্রাশ করতে করতে আয়নায় নজর দিলো। পৌষের সামান্য একটু দেখা যাচ্ছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“জুলুম করেছি আমি?”
“করলেই বা কি? বিচার চাইবার মানুষ আছে আমার? এতিমদের জন্য বিচার চাওয়া নিষিদ্ধ যদিও এই প্রথম আপনার সামনে অভিযোগ তুললাম মনে হচ্ছে।”
বলেই পৌষ গিয়ে তৌসিফের জুতা রাখার সেল্ফ খুলে। কালো চটি জুতা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“এটা পরবেন?”
“তোমার চিন্তাভাবনা মিলে যাচ্ছে আমার সাথে। নিয়ে এসো।”
পৌষ এতদিন আয়ত্ত করেছে টুকটাক। তৌসিফ ধীরে ধীরে নিজের কাজ গুলো চাপিয়ে দিচ্ছে পৌষের উপর। পৌষও অবশ্য কিছু বলে না। হাঁটু গেড়ে বসে জুতা পরিয়ে দেয়। নিজের মাথায় তৌসিফের হাতের স্পর্শ পেতেই যখন চোখ তুলে তাকায় তখনই তৌসিফ বলে উঠে,

“জুলুম হলেও আমাকে মেনে নাও পৌষরাত। আমার চাইতে সুন্দর জুলুম আর কোথাও পাবে না।”
পৌষ ফিক করে হেসে দিয়ে পাল্টা বললো,
“জুলুম কখনো সুন্দর হয় না যদিও আপনি সুন্দর। বিশেষ করে আপনার চোখ দুটো।”
তৌসিফ একটু ঝুঁকল। পৌষটা তখনও তার পায়ের কাছে বসা। হাতের উল্টো পিঠ পৌষের গালে ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আমাকে এত গভীর ভাবে দেখো তুমি হানি?”
“আপনাকে দেখার আগে থেকে এই চোখ আমার প্রিয়।”
কপালে সহসা ভাজ পড়লো তৌসিফের। ওকে দেখার আগে কিভাবে চোখ দেখলো। হঠাৎই পৌষের মুখের দিকে তাকিয়ে লাজুক ভাব যখন দেখলো তখনই মস্তিষ্কে কিছু দংশন করলো তাকে। এই দফায় তৌসিফ অবাক হয়েই বললো,
“ভাইজানের চোখের সাথে মেলাচ্ছো?”
“হুঁ।”

মেরুদণ্ড সোজা করে বসলো তৌসিফ। এমন কথা শুনতে হবে কখনো ভাবে নি। সম্রাটের সাথে তার চোখের অদ্ভুত এক মিল রয়েছে। দু’জনের চোখের মনি এক। চাহনিও কিছুটা এক। খুব সাধারণ ভাবে তাকালেও তার সাথে সম্রাট ভাইজানের চোখের দৃষ্টি মিলে। এজন্যই বোধহয় চাচি এখনও তৌসিফকে দেখলে তার থেকে সম্রাটের ঘ্রাণ নিতে চায়। মাঝেমধ্যে মুখটা হাতড়ে দেখে। তৌসিফ তাকে না করে না। চাচির সন্তান নেই, তৌসিফের মা নেই। খুব তো অন্যায় হতো না যদি তাকে কেউ মায়ের মতো আদর করতো। যাদের জন্য জীবন ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যু দেখতে প্রস্তুত তৌসিফ সেই মানুষ গুলো তাকে হারিয়ে দিয়েছে এই বারবার অথচ সেদিনকার পৌষরাত তার মতো মানুষকে মনের অজান্তেই বেশ খানিকটা জায়গা দিয়েছে নিজের মাঝে। তৌসিফ বেশ অবাক হয়ে লক্ষ করেছে পৌষের এই স্বভাব গুলো। মা মা ধরণের স্বভাব। তৌসিফ কতোগুলো বছর পর আগের মতো খাচ্ছে। কত গুলো বছর পর কেউ তার জন্য রাতে অপেক্ষা করছে। তৌসিফ সংসার করছে। কথাটা ভাবতেই তো মনটা ভালো হচ্ছে যাচ্ছে তার বারবার। এই মন ভালোর মাঝে একজন মৃত ব্যাক্তিকে টেনে তৌসিফ আর মন ছোট করলো না। পৌষের হাত ধরে টেনে তুললো মেঝে থেকে। দুই গালে হাত রেখে বেশ রোমন্থিতস্বরে বললো,

“আজকে ফিরতে একটু দেড়ী হবে। খেয়ে নিও রাতে। আমি চলে আসব।”
“দেড়ী কেন হবে?”
“সভা আছে আজ।”
“আপনারা তো বিপরীত দল৷ আপনাদের কিসের কাজ?”
তৌসিফ সামান্য হাসলো। ঝুঁকে আলগোছে চুমু দিলো পৌষের থুতনিতে। পৌষ দৃষ্টি নামাতেই তৌসিফ বললো,
“আমি চলে আসব।”
ও বেরিয়ে গেলেও ঘরটায় তখনও রয়ে গেলো তৌসিফের ঘ্রাণ। এই লোকটা মারাত্মক রকমের সুগন্ধি ব্যাবহার করে। চলে যাওয়ার পরও ঘ্রাণ থেকে যাচ্ছে। পৌষ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো তৌসিফ গাড়িতে উঠছে। যখনই উপরে তাকালো পৌষ সাময়িক ভড়কালো তবুও হাত নেড়ে বিদায় জানাতেই তৌসিফ ইশারায় ঘরে যেতে বললো। পৌষ বুঝে না কি সমস্যা হয় বারান্দায়? সন্ধ্যার পর বারান্দায় আসাও নিষেধ তার জন্য। শুরু শুরুতে তৌসিফ বেশ খারাপ ব্যবহারও করেছে এজন্য।

আসরের নামাজ পড়েই পৌষ তারাতাড়ি নেমে পরলো। আকাশে তখন বেশ উজ্জ্বল খয়েরী একটা রঙ দেখা যাচ্ছে। পৌষ একা একা বাড়ীর পেছনে এলো। গরু গুলো আজও এখানে আছে। আদিত্যর অপেক্ষা করতে করতে পৌষ এদিক ওদিক ভালো মতো দেখলো। আজকে আদিত্যর আসার কথা৷ দু’জন একসাথে ঐ বাগান বাড়ী ঘুরে দেখবে। তাহমিনা আপার থেকে বাগান বাড়ীর বর্ণনা শুনার পর থেকেই পৌষের মন বেশ বিচলিত হয়ে আছে। সম্রাটের সেই লাল গাড়িটার কথা অবশ্য পৌষ সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারে নি। সেই লাল গাড়ি করে সম্রাটকে যে কতবার পৌষ কল্পনা করেছে তার ইয়াত্তা নেই। সম্রাট নামটাই তার কাছে এক জীবন্ত চরিত্র। এমন একটা মানুষ যার কথায় গোটা এলাকাবাসী এক হয়ে যেতো। কি হতো পৌষ তাকে দেখলে? কেন যে এত দেড়ীতে জন্মটা হলো? পৌষের পায়চারীর মাঝেই আদিত্য এলো। পৌষ তাড়া দিলো,

“তারাতাড়ি চলো। সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এমনিতেই দিন ছোট।”
সময়টা হেমন্ত কাল। চারপাশে এক শান্তিময় বাতাস বইছে। শীত আসবে আসবে বলে ভাব জমাচ্ছে। আজ সারাদিন গা ঝলসানো রোদ থাকলেও এখন বিকেলটা বেশ সুন্দর। মৃদু মৃদু বাতাস অথচ থামছে না এক মূহুর্তের জন্য। দু’জন হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে বাগান বাড়ীর দিকে। যাওয়ার পথেই পৌষ জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে কেউ আসে না কেন? তাহমিনা আপাকেও তো আসতে দেখি না।”
“কি জানি কেন আসে না। কেউ জানতে পারলে কপালে শনি আছে এটা আমি গ্যারান্টি দিতে পারি।”
“ভীতুর ডিম৷ তোমার সাথে আমি মুরুব্বি মানুষ আছি না, ভয় কিসের?”

“কে মুরুব্বি? তুমি?”
“আবার জিগায়, চাচি হই না আমি?”
বলেই ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিলো পৌষ। আদিত্য গা ঝাড়া দিয়ে বললো,
“তোমাকে তো চাচি হওয়ার আগে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম তাই চাচি লাগছে না আপাতত যদিও কেমন বন্ধুত্ব ছিলো বা আছে তা আমি এখনও বুঝি না।”
“এখন তোমার বন্ধু হতে গেলে কি করতে হবে? তোমার সাথে বসে বিড়ি টানতে হবে?”
“কিসব বলছো পুষি? আমি বিড়ি খাই না। এসব দুষ্টামি করেও বলো না। বাসায় শুনলে প্রচুর ঝামেলা হবে।”
“ওও, তাহলে তোমার মতোই একজনকে আমি দেখেছিলাম একদিন ভার্সিটির বাইরে চায়ের দোকানে বিড়ি টানতে৷ মুখ, নাক সব তোমার মতো।”

আদিত্য চোখ কপালে তুলে বললো,
“তুমি আমাকে টানতে দেখেছো?”
“কি জানি।”
পৌষ হেলামি করে বলতেই আদিত্য উত্তেজিত হলো। বললো,
“আমি শুধু হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ একটা টানও দেই নি।”
“নেশাখোড়দের মাতলামো দেখেই যেমন মানুষ তাদের নেশাখোর বলে তেমনই বিড়িখোড়দের হাতে বিড়ি দেখলেই তাদের বিড়িখোড় বলে। অতশত টান দিতে দেখার প্রয়োজন হয় না।”
আদিত্য বিরবির করলো তবুও,
“আমি বিড়িখোড় না।”

ঘাটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ই পৌষ একটু থমকে দাঁড়ালো। আদিত্যর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ল্যাদার লাশ যে এখানে পাওয়া গেলো তার কি হলো আদি? এরপর থেকেই তোমার ছোট চাচ্চুও উধাও। তোমাদের বংশে আবার খুনীটুনী নেই তো?”
“কি বলো এসব? ল্যাদার লাশ তাদের বাড়ীতে পাঠানো হয়েছিলো। এরপরের খবর জানি না তবে মেঝ চাচ্চু তাদের খরচ দিচ্ছে এরপর থেকে। ল্যাদা চাচা আগে আমাদের বাড়ীতে কাজ করতো। পুরাতন লোক।”
“এই মাছের ঘাট রাখার প্রয়োজন দেখি না আমি৷ কি ভয়ংকর ব্যাপার-স্যাপার।”
“তুমি ভয় পাও?”

“তোমাকে নিয়ে শ্মশান ঘাট ঘুরে আসতে পারব আমি৷ কি যাবে?”
” না না থাক। আগে তোমাকে তোমার ক্রাশের বাগান বাড়ী ঘুরাই।”
“খবরদার ক্রাশ বলবে না।”
“তাহলে কি বলব? এক্স তো বলা যাচ্ছে না।”
“কিছুই বলতে হবে না। আমার জামাই আছে না? ওসব আউফাউ কিছু বলবে না।”
আদিত্য মুখটা বাঁকা করে এগিয়ে এলো। দু’জন একদম দাঁড়িয়ে আছে বাগান বাড়ীর সামনে। পৌষ দেয়ালে হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,
“দরজা খুঁজো আদি। ঢুকার রাস্তা তো নিশ্চিত আছে।”
“তাহমিনা ফুপিকে জিজ্ঞেস করলেই তো পারতে পুষি।”
“উনি তো বলেছিলোই আসতে। এরমানে নিশ্চিত দরজা আছে। আচ্ছা, এখানে খুল যা শিমশিম ধরনের কিছু কি আছে?”

“কি আজগুবি কথাবার্তা বলছো তুমি পুষি। দাঁড়াও দেখি।”
দু’জন এদিক ওদিক সমানে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ ব্যথাকাতুর শব্দ শুনে পৌষ চমকে একটা ইটের টুকরোর সাথে ধাক্কা খেলো। নিজেকে বাঁচাতে সামনের দেয়ালটা ধরা মাত্রই কিছু নড়ে উঠে। পৌষ ডেকে উঠে,
“আদি কি হয়েছে? ঠিক আছো?”
“পুষি, পায়ে কাটা ঢুকেছে।”
পৌষ তারাতাড়ি বিপরীত দিকে দৌড়ে এলো। আদিত্যর পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। পৌষের নিজের পা দুটোও চুলকাচ্ছে। আদিত্যর পায়ের আঙুলটা হাত দিয়ে চেপে ধরে পৌষ বিল্ডিংটার নিচে জমাট বাঁধা দূর্বাঘাসের এক মুঠি তুলে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে চেপে ধরলো আদিত্যর ওখানে। আদিত্যর চোখ-মুখই বলছে কতটা ব্যথা লাগছে তার। রক্ত থামা মাত্রই আদিত্য বললো,

“মনে হচ্ছে এডভেঞ্চারাস একটা জার্নিতে এসেছি পুষি। রহস্য উদঘাটনে যাচ্ছি এমন লাগছে।”
“ওখানে এসো আমার সাথে আদি। ওই দেয়ালে নিশ্চিত কিছু আছে। আমার হাত লেগে শব্দ হয়েছিলো।”
দূরে তখন মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে। আদিত্য তাড়া দিলো,
“আজ না পুষি। কাল আসব নে আবার। মাগরিব হচ্ছে। এখানে থাকা সেইফ না। চলো তারাতাড়ি। কেউ দেখলে খুব ঝামেলা হবে।”
পৌষকে কথা বলার সুযোগ দিলো না আদিত্য। ছোট থেকেই বাদ মাগরিব সব বন্ধ থাকে বাসার। জানালা কপাট খুলার অনুমতি নেই তখন থেকেই। পৌষ ওর পিছু পিছু যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু মন পরে আছে ঐ দেয়ালে। দেয়ালটার নকশাও সামান্য ভিন্ন। পোড়া মাটির কাজ করা। পৌষের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নিশ্চিত ওখানে কিছু আছে। কি আছে? গুপ্ত দরজা?

বাসায় ফিরেই পৌষ মাগরিবের নামাজ পড়ে। তায়েফা এসেছে এখানে। পৌষ চা নিয়ে বসবে আপার কাছে। হঠাৎ কিছু মনে হতেই বারান্দার ঠাই খুলে পৌষ বাইরে উঁকি দিলো। পকেট গেটাটও বন্ধ। তৌসিফ অবশ্য বলেছে দেড়ী হবে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে সামনে তাকায় পৌষ। বাগান বাড়ীটা পুরো না দেখা গেলেও রাস্তাটা দেখা যায়। গরুর দিকটায় থাকা সেদিনের ছেলেটাকে দেখে পৌষ কপাল কুঁচকে তাকালো। যখন পৌষ গেলো তখন তো ছিলো না। এখন রাত হচ্ছে এখন কেন যাচ্ছে? ছেলেটা চলে যেতেই পৌষ ঘরে যাবে তার আগেই শক্ত করে রেলিং চেপে ধরলো। একটা মেয়ে যাচ্ছে ওখানটায়। এটা তাহমিনা আপা না। উনি এমন কালো রঙের পোশাক পরেন না। পৌষ যতবার ওনাকে দেখেছে সাদা অথবা ক্রিম রঙের থ্রি পিসে আভিজাত্য রূপে দেখেছে। এই সন্ধ্যার পর তো ওখানে কেউ যাওয়ার কথাও না। পৌষ যতদূর দেখা গেলো তাকিয়ে রইলো। নারীটি বাগান বাড়ীর পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে।
“পৌষ?”
তায়েফার ডাকে পৌষ দৌড়ে চলে গেলো। থাই লাগিয়ে দিলো। চা নিয়ে বসলেও পৌষের মন বসলো না। আটকে রইলো ওই অচেনা নারীটির পানে। কে সে, কেন যাচ্ছে ওখানে?

তৌসিফ আজ ফিরলো বেশ রাত করে। টেবিলে বসে থাকতে থাকতে পৌষ আজ মিনুর সাথে গল্প করলো বেশ খানিকটা সময়। তায়েফা মাত্র রুমে গেলো। পৌষ এতক্ষণ তার সাথেই ছিলো। কলিং বেল বাজতেই পৌষ দৌড়ে গিয়ে খুলে। ওর পা দুটো খুব কম সময়ই স্থির থাকে। এদিক ওদিক ছুটন্ত পায়েই চলতে থাকে। তৌসিফ ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভেতরে ঢুকেই অসন্তুষ্ট গলায় বললো,
“জেগে আছো কেন?”
“খাবেন না? কি আশ্চর্য, আপনি ঢুলছেন কেন? শরীর খারাপ লাগছে?”
“উহুঁ।”
পৌষ কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে রইলো। তৌসিফ দাঁড়িয়ে থেকেই বললো,

“ফোন আর মানিব্যাগ বের করো তো হানি।”
পকেট হাতড়ে সব বের করে পৌষ। তৌসিফ রুমে ময়লা জুতা নিয়ে ঢুকতেই পৌষ চিল্লাপাল্লা শুরু করলো। তৌসিফের কানে বাজলো কথাগুলো কিন্তু ভালো লাগলো। আগে এভাবে মা চেঁচাতো। তৌসিফ নিজেই চাইতো কেউ তার বাসায় চেঁচামিচি করুক। তোতাপাখির মতো কথা বলুক। তৌসিফ তা পেয়েছে। পৌষ ময়লা পরিষ্কার এসে যখন দেখলো তৌসিফ একই ভাবে বসা তখন কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে বললো,
“কি সমস্যা? আপনি বসে আছেন কেন?”

এগিয়ে এসে পাঞ্জাবীর বোতাম নিয়ে বেশ যুদ্ধ করে খুললো। তৌসিফ থম ধরে বসে থেকে বাথরুমে ঢুকলো। পৌষ দরজায় ঠকঠক শব্দ করে বললো,
“ঘষামাজা বেশিক্ষণ করবেন না আজকে। খাবার ঠান্ডা হলে আর গরম দিতে পারব না৷”
“আসছি।”

পৌষ সন্দেহ করলো। তৌসিফের পাঞ্জাবী শুঁকে দেখলো। ওনাকে কখনো ঢুলতে দেখি নি পৌষ। অসুস্থ কি না কে জানে? নারী ঘটিত ব্যাপা হলে পৌষ একদম চৌদ্দ শিকের ভাত খায়িয়ে ছাড়বে। একা একাই সব ভেবে রেগে গেলো পৌষ। তৌসিফ তখন বেরিয়েছে। পৌষ খেতে ডাকলেও তৌসিফ গেলো না। বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো। পৌষ নিজে ভাত এনে মুখে তুলে খাওয়ালো। কাঁধে থাকা ভেজা টাওয়ালটা যখন সরালো তখনই চোখ গেলো তৌসিফের হাতে। চেঁচিয়ে উঠলো পৌষ,

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩২

“অ্যই আপনার হাতে কি হয়েছে?”
তৌসিফ ওকে টেনে মুখ চেপে ধরলো। আস্তে করে বললো,
“আপা এখানে না?”
পৌষ মাথা নাড়ে। তৌসিফ ওর মুখ ছেড়ে কপালে হাত বুলিয়ে বললো,
“গাড়িটা হঠাৎ উল্টে গিয়েছিলো।”
বেশ শান্ত স্বরে তৌসিফ বললো কথাটা অথচ পৌষের বুকের ভেতর ঝড় বয়ে গেলো তখন। কি সুন্দর সহজ ভাবে বলছে গাড়ি উল্টে গিয়েছিলো।

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here