প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৪
সাইয়্যারা খান
নিশুতি রাত। থমথমে এক পরিবেশ। পৌষ’র হাতের তালু ঘেমে উঠতেই ওর মন চাইলো গাড়িতে থাকা মানুষটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। ঘামা হাতের স্পর্শে পোস্টার যদি নষ্ট হয় পৌষ এই গাড়ির কাঁচ ফাটাবে তা অলিখিত ভাবে চুক্তি করলো মনে মনে। গাড়ি থেকে টু টু শব্দ আসছে। পৌষ তখনও পেছনে ঘুরলো না। চৈত্র সামান্য গলা ঝেড়ে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই গাড়িতে থাকা তৌসিফ বলে উঠলো,
“পোস্টার তুলছো কেন? এলাকার নেতা হিসেবে সম্রাট চেয়ারম্যানকে পছন্দ হয় নি?”
গমগমে তীক্ষ্ণ, ধারালো এক পুরুষ কণ্ঠ পৌষ’র দেহে ঝঙ্কার তুললো। সম্রাটকে অপছন্দ করে এমন মানুষ পাওয়া যাবে এই গোটা এলাকায়? যেই পিচ ঢালা রাস্তায় আজ গাড়িগুলো চলছে সেই রাস্তা ছিলো মাটির। শাখা রোড গুলো তো সম্রাট চেয়ারম্যানই পাকা করেছে। জৈষ্ঠ্য মিনমিন করে বললো,
“আমরা আসলে এই বাড়ীরই বাচ্চা। আসলে আমরা..”
মিথ্যা একমাত্র পৌষ বাদে ফটাফট কেউ বলতে পারে না। তৌসিফ গাড়ি থেকে বের হতে হতে বললো,
“হেমন্তের ভাই-বোন তোমারা?”
পৌষ শুধু বুঝলো গাড়ির দরজা খুলছে ও আস্তে করে মাথার ঘোমটা টানলো আরেকটু। শুধু বললো,
“এক, দুই তিন।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তৌসিফ’কে চমকে তিন ভাই-বোন এক দৌড়ে বাড়ী পৌঁছালো। তারা খালি হাতে যায় নি। হাতে করে পোস্টার নিয়েই গিয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য তব্দা খেয়ে গেলো তৌসিফ তবে নিজেকে সামলে রনিকে জিজ্ঞেস করলো,
“ওরা পোস্টার তুলার কারণ বুঝলাম না। তুমি বুঝলে?”
রনি যথাসম্ভব ভেবেচিন্তে ঋণাত্মক মাথা নাড়ে। বলে,
“না বস। বুঝলাম না তো। আপনি বললে বাড়ীতে ঢুকে ওদের জিজ্ঞেস করে আসি?”
“এই রাতে একজনের বাড়ীতে ঢুকে পোস্টার তুলার কারণ জিজ্ঞেস করবে? তুহিনের আশেপাশে থেকে এই দশা হচ্ছে তোমাদের।”
তৌসিফ খানিকটা সময় তাকিয়ে রইলো পুরাতন দোতলা বাড়ীটার দিকে। ঠোঁটে সামান্য রহস্য লুকিয়ে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে তাকলো আকাশ পানে। আজ চাঁদটা সুন্দর দেখাচ্ছে অথচ কোন তারা নেই। গাড়িতে উঠা মাত্রই তৌসিফ বললো,
“কাল হেমন্ত’কে বলবে আমি ডেকেছি।”
“জি, বস।”
রনি গাড়ি চালাতে মনোযোগ দিলো। তারা যাচ্ছে এখন ফরিদের বাড়ীতে। এবার নির্বাচনে জয়নাল’কে যদি কেউ হারাতে পারে তা হলো ফরিদ। তৌসিফের তার সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে যদিও তার একডাকে ফরিদ নিজে লেজ নেড়ে হাজির হবে তার বাড়ী।
গাড়ি ঢুকলো বিশাল গেট দিয়ে। বাইরে রাত হলেও বাড়ীর ভেতরে ঝলমলে আলো। ফরিদ জানে তৌসিফ আসবে তাই বাড়ীতে জমকালো আয়োজন। তৌসিফ’কে দেখেই এগিয়ে এসে করমর্দন করলো দু’জন। সোফায় বসা মাত্রই ফরিদ হাক ছেড়ে ডাকলো,
“মিষ্টি, ড্রিংক সার্ভ করো ফাস্ট।”
তৌসিফ পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসেছে। মিষ্টি নামের উঠতি বয়সের যুবতী এক মেয়ে ওদের সামনে ড্রিংকস বানালো। তৌসিফ এক পলক দেখে চোখ সরালো তার থেকে। ফরিদের দিকে তাকাতেই দেখলো তার চোখে মুখে এক ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি। বিনিময়ে তৌসিফও হাসলো। মুখে বললো,
“কথা পার্সোনাল।”
ফরিদ বুঝলো। রনি বাদে আর কেউ রইলো না এখানে। মিষ্টি নামক মেয়েটা কোমড় দুলে দুলে উঠে হেঁটে গেলো। তৌসিফ নিজের কপালে দুই আঙুল বুলিয়ে বললো,
“এত আয়োজনের দরকার ছিলো না।”
“বস মানুষ আসবে আয়োজন না করলে হয় নাকি?”
তৌসিফ ড্রিংক হাতে তুললো। সরাসরি বললো,
“এবারে নির্বাচন থেকে পিছু হটো।”
ফরিদ অবাক চোখে তাকালো অতঃপর হেসে ফেললো। তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। এক ঢোকে ড্রিংকটুকু গলায় ঢেলে বললো,
“বস লড়ছেন নাকি? হায়, সৌভাগ্য আমার।”
“জয়নাল’কে জেতাব।”
“কিহ!”
ফরিদের দেহ কেঁপে উঠলো। বয়স তার চল্লিশ ছাড়িয়েছে চার বছর হলো। চোখে তার অভিজ্ঞতার শেষ নেই। সে জানে তৌসিফ ফাঁকা কথা বলে না৷ নিশ্চিত এখানে কারণ আছে। শুধু বললো,
“সম্রাট ভাইয়ের হাতে রাজনৈতিক হাত-খড়ি আমার। আপনি তার আপন চাচাতো ভাই। আপনি বলা মানেই সম্রাট ভাই বলা। শুধু বলব, আপনি এবার দাঁড়ালে ভালো হতো।”
“সময় হোক।”
“আর কত বস?”
তৌসিফ জ্বলজ্বল করা চোখে ভাবলো কিছু। সময় ঘনিয়ে আসছে নাকি যাচ্ছে তা বোঝা মুশকিল তবে দেহে প্রাণ থাকলে তৌসিফ এবার নিজেও খেলা দেখাবে। একটু বেশিই দেখাবে।
রনিকে ডাক দিতেই ও হাতে সাবানের দুটো কেইস নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সেন্টার টেবিলে রাখা মাত্রই ফরিদ বললো,
“এসবের দরকার.. ”
“ছিলো।”
ফরিদকে থামিয়ে কথা সম্পূর্ণ করলো তৌসিফ। উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“মিষ্টি মুখ করো তাহলে। দেখা হবে অফিসে এসো।”
ফরিদ মাথা নাড়লো। তৌসিফ চলে যেতেই সাবানের কেইস দুটো খুললো। চোখ দুটোয় তখন ঝলকানি খেলে গেলো। সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে গলা ঝেড়ে ডাকলো,
“মিষ্টি।”
মিষ্টি দ্রুত কদম ফেলে এলো। যতটা হাসিমুখে এসেছিলো ততটাই উদাস হলো সে। এখানে থাকা সুদর্শন সেই পুরুষটি কোথায়? আহত দৃষ্টি ফেলে তাকালো ফরিদের পানে। আজও তাহলে এই বুড়োর মনোরঞ্জনই করতে হবে তাকে।
পলক চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে ছিলো। রাতে এত তারাতাড়ি তুহিন ফিরে না। আগের মতো তাই অপেক্ষা নামক মিষ্টি সময়টা কাটাতে পারে না পলক। আধ ঘুমে থাকা পলককে চুপচাপ দেখছে তুহিন। আধ ঘন্টা ধরে দেখেই যাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে ধরে বিশ্লেষণ করছে তার খাটে ঘুমন্ত পরীটাকে। বহু বিচার বিশ্লেষণ শেষে সে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না। পরণে থাকা টিশার্ট খুলে ছুঁড়ে মারলো কোথাও। খাটে উঠে বসে হাত রাখলো ঘুমন্ত পলকের পেটে। একটা পুরুষ হাত পেটে বিচরণ করছে ভাবতেই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে পলক। ওর ভীতু দৃষ্টি দেখে তুহিন হাসলো। পলক ঢোক গিলে শুকনো গলায়। মারাত্মক সুন্দর দেখাচ্ছে তুহিনকে। রাত কি তবে শেষ দিকে? ভোর কি হতে চললো? তুহিন তো আজ-কাল রাতে ফিরে না। তার টলতে থাকা দেহ নিয়ে দলের কিছু ছেলেপেলে তাকে ফ্লাটে ঢুকিয়ে যায় ভোরের আগ মূহুর্তে। পলক এই নেশায় ডুবে থাকা তুহিনকে ভয় পায়। ভীষণ ভয় পায়। কথা বলতেও তার কণ্ঠে জড়তা সৃষ্টি হয়। তবুও পলক জিজ্ঞেস করলো,
“খাবার দিব? ক্ষুধা পেয়েছে?”
তুহিনের মুখটা তখনও হাসি হাসি। সে খাবারের প্রসঙ্গে না গিয়ে বললো,
“তুমি ভয় পেলে কেন পলক? আমি ছাড়া আর সাধ্য তোমাকে ছুঁয়ে দিবে?”
“কারো সাধ্য নেই।”
“তাহলে ভয় পেলে যে?”
“মনে হলো আমি একটু আগেই বিছানায় এলাম। ভোর হতে চললো বুঝতে পারি নি তাই।”
“মনে হওয়টাই ঠিক।”
পলক রুমে থাকা বড় ঘড়িটার দিকে তাকালো। রাত মাত্র দু’টো। পলক চুপ করে গেলো। তুহিন তারাতাড়ি ফিরলেও নেশা না করে ফিরে নি। তার মুখ থেকে গন্ধ আসছে মদের। তুহিন সামান্য এগিয়ে এসে পুণরায় হাত রাখে পলকের পেটে। হালকা স্বরে ডাকে,
“পলক?”
“হুঁ।”
“মুটিয়ে যাচ্ছো জান।”
পলকের মন চাইলো কেঁদে ফেলতে। সে নিজের জানে না সৌন্দর্য কতদিন ধরে রাখতে পারবে? কতদিন বাঁধা থাকবে তুহিন। নেশায় আসক্ত মানুষ কখনোই নারীর টান বাদে থাকে না। পলক খোঁজ খবর যতদূর নিয়েছে তুহিন এখনো সেই পথে পা রাখে নি কিন্তু কতদিন? ও ব্যতিব্যস্ত হয়ে হড়বড়িয়ে বলতে লাগলো,
“বিশ্বাস করো আমাকে। আমি বেশি খাই না। আমি অল্পই খাই। রাতেও খাই না। সকলেও খাই না। মাঝেমধ্যে বিকেলে খাই। তুমি কি বিশ্বাস করছো না? আমি প্রমিজ করছি দুপুরেও খাব না। সত্যি বলছি।”
তুহিন তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। পলক ততক্ষণে আয়নার সামনে গিয়ে জামা তুলে পেট দেখছে। মেয়েটার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। তুহিন বুঝেও যেন বুঝলো না। গা এলিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। খানিক সময় যেতেই বললো,
“বিছানায় এসো পলক।”
পলক দৌড়ে এলো। ও হাঁপাচ্ছে। ওর হাত ধরে একটানে নিজের উপর ফেলে চোখের দিকে তাকিয়ে তুহিন বললো,
“কলিকে মে’রেছো কেন পলক?”
শরীরটা কেঁপে উঠে পলকের। তুহিন পাল্টে নিজের উপর থেকে বিছানায় ফেললো পলক’কে। চোখের উপর চুমু খেয়ে বললো,
“বলো জান।”
“আ..আ..মি..”
“হুঁ, তুমি।”
পলক কথা বলতে পারে না। কাজের মেয়েটাকে আজ সে মে’রেছে। বাড়ীতে মশা মা’রার ব্যাট আছে। সেই ব্যাট দিয়েই পলক মে’রেছে। তুহিন পলকের হাত টেনে নিজের কাছে আনলো। অজস্র চুমু খেলো তাতে। পলক স্বামীর বুকে মুখ গুজে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো। আচ্ছা, সত্যিই তো, পলক কেন মা’রলো কলিকে?
সকাল হতেই ফ্লাটে ডাক্তার আনালো তুহিন। কলির বয়স সবে তেরো কি চৌদ্দ হবে। ডাক্তার ওকে দেখেই বললো,
“জ্বর তো বেশি।”
তুহিন পকেটে হাত গুঁজে বললো,
“ঔষধ পত্র যা লাগে দিয়ে যান।”
ডাক্তার সব লিখে বলে দিলেন বড় কাজের মহিলাটাকে। তুহিন শুধু কলিকে বললো,
“ঔষধ ঠিকমতো খাবি।”
কলি ভাঙা গলায় ডেকে বললো,
“মামা, আমি বাড়ী যাই?”
“না।”
বলেই তুহিন চলে গেলো রুমে। খাটে তখনও ঘুমাচ্ছে তার পরী। গতরাতে পরীটাকে খুব কষ্ট দিয়েছে তুহিন। পলকের মাথায় হাত বুলাচ্ছে তুহিন। কপালে চুমু দিয়ে ডেকে বললো,
“ওঠো জান, ক্ষুধা পেয়েছে আমার।”
সকাল সকাল বড় চাচির মুখে তিক্ত কথা শুনেই ঘুম ভেঙেছে পৌষ’র। আজ হেমন্ত’র জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়া হবে। হেমন্ত’কে দিয়ে পৌষ’কে বাড়ীতে রাখার প্রস্তাব অনেকেই বলেছে কিন্তু কোন ভাবেই এটা সম্ভব না। এদের চাচাতো ভাই-বোন গুলোর সম্পর্ক আপনের মতো। চাইলেও কোন ভাবে কোন কিছু সম্ভব নয়। বড় চাচি একবার অবশ্য চেয়েছিলেন যদিও পৌষ’কে তার পছন্দ না কিন্তু এই বিষয় হেমন্তের কানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধামাচাপা পড়েছিলো। পৌষ বা অন্য কারো কান অব্দি যেতে দেয়া হয় নি।
বাড়ীতে প্রস্তুতি চলছে। পৌষ ব্যাগ কাঁধে তুলে ভার্সিটি যেতে বের হচ্ছিলো এমন সময়ে পিছু ডাকলো হেমন্ত। দুইশত টাকা হাতে দিয়ে বললো,
“তারাতাড়ি বাড়ী ফিরবি আজ।”
“কেন?”
“মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।”
“আমি যাব না।”
“চটখানা খেতে না চাইলে চুপচাপ বাড়ী ফিরবি।”
পৌষ মুখ ভেঙালো। বের হওয়ার আগে পেছন থেকে ইনি, মিনির চুল টেনে কাঁদিয়ে দিয়ে গেলো। ছোট চাচি বেশ খানিকটা সময় লাগিয়ে থামালেন ওদের। বড় চাচা হেমন্তের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আজ তালুকদার বাড়ী যাচ্ছো?”
“হ্যাঁ, আব্বু। তৌসিফ ভাই ডেকেছে।”
বড় চাচি দৌড়ে আসলেন কথা শুনতে কিন্তু ততক্ষণে চুপ করে গেলো হেমন্ত। চৈত্র চুপিচুপি হেমন্তের কানে বললো,
“আপা আজ খায় নি সকালে। মিথ্যা বলেছে তোমাকে যে খেয়েছে। আমি অনেক বলেছি তবুও খায় নি।”
” মা কিছু বলেছে আবারও?”
“জানি না তো।”
হেমন্ত কপাল কুঁচকে তাকালো। মায়ের কথা ততটা কানে তুলে না পৌষ তাহলে এমন কি হলো যে মনটা খারাপ? পৌষ’র মন খারাপ হলে বাড়ীর ইটপাথরও যেন টের পায়। পৌষ শান্ত মানেই হক বাড়ী ঠান্ডা। পৌষ চুপ মানেই বাকি পাঁচ বিচ্ছু চুপ। ওদের মধ্যে তারহীন এক সংযোগ আছে যার দারুণ আজ সকালে হক বাড়ী ঠান্ডা। খেতে খেতে ছোট চাচা জিজ্ঞেস করলেন,
“বাড়ী ঘর আজ এত ঠান্ডা কেন?”
ইনি,মিনি বাবা’র দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। তাদের খাওয়ানো গেলো না। ছোট চাচি ক্লান্ত হলেন।স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“পৌষটা ওদের খায়িয়ে যাবে না? কথা শুনে না এরা আমার।”
ছোট চাচাও চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না৷ দু’জন তখন কুইকুই করে কাঁদছে। হেমন্ত উঠে দুটোকে কোলে তুললো। চোখ মুখ মুছিয়ে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে নানান কথা বললো। চৈত্র ততক্ষণে ওদের মুখে নাস্তা দিলো। হেমন্ত উঠে যেতে যেতে সবার উদ্দেশ্যে শুধু বললো,
“পৌষ যদি কারো উপর বেশি হয়ে যায় তাহলে আমাকে সরাসরি বলবে। ওর ব্যবস্থা আমি করে ফেলব। বাবা-মা নেই এমন এতিম রাখতে সমস্যা হতেই পারে যে কারো। হোস্টেলে পাঠিয়ে দিব আমি। যার সমস্যা সে শুধু আমাকে বলবে যদিও তাদের বাপের বাড়ি না হলেও এটা পৌষ’র বাপের বাড়ি একশত ভাগ।”
সেজো চাচি চুপ করে আছেন। সেজো চাচা স্ত্রী’র দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুমি কিছু বলেছো পৌষ’কে?”
চাচি মুখ খুললেন,
“রাত বিরাতে ছেলেদের সাথে নকশা করতে বাইরে যায় আপনার ভাতিজি সেটাই বলেছি।”
উপস্থিত সকলে তখন থম ধরে ছিলো। হেমন্ত শুধু বললো,
“কার সাথে করে সেই নকশা চাচি? আমার সাথে?”
“ছিঃ ছিঃ কি বলছিস তুই।”
“তাহলে কে? জৈষ্ঠ্য নাকি চৈত্র?”
“হেমন্ত!”
বাবার ধমকে হেমন্ত রাগী স্বরে বললো,
“ধমকটা নিজের ভাইয়ের বউকে দাও আব্বু। আমি আর জৈষ্ঠ্য, চৈত্র বাদে কার সাথে রাতে ছাদে বা রাস্তায় যায় পৌষ? কার সাথে যায়? জিজ্ঞেস করো!”
শেষের দুটো লাইন সে ধমকে বললো। কেঁপে উঠলো সেজো চাচি। হেমন্ত তার দিকে তাকিয়ে শুধু বললো,
” আমার মুখ খুলাবেন না চাচি। ভালো কিছু বের হবে না মুখ দিয়ে।”
সেজো চাচির মুখ ছোট হলো। এই বাড়ীতে একমাত্র তারই প্রেমের বিয়ে ছিলো।
আদিত্য বাইক স্টার্ট দিবে এমন সময় তৌসিফ ডাক দিলো উপর থেকে। আদিত্য উপরে তাকিয়ে বললো,
“চাচ্চু কিছু বলবে?”
“ফিরবে কখন?”
“দুপুর হবে। কিছু বলবে?”
“আমার সাথে দেখা করো রাতে।”
মাথা নাড়ে আদিত্য। ও চলে যেতেই কাজের মেয়ে মিনু এসে বললো,
“মামা নিচে কেউ আসছে দেখা করতে। হেমন্ত নাম।”
“কফিটা দিয়ে যা।”
মিনু চলে গেলো। তৌসিফ পায়ে চপ্পল দিয়ে কফি হাতেই নিচে নামলো। হেমন্ত উঠে সালাম দিতেই তৌসিফ বসতে বললো। হেমন্ত শুধু বললো,
“কোন কাজ আছে ভাই?”
“যেই দায়িত্ব দিয়েছি কতটুকু পূরণ করছো হেমন্ত?”
“চেষ্টা করছি।”
“খেয়াল রেখো।”
“জি ভাই।”
প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩
তৌসিফ আরো কথা বললো হেমন্তের সাথে। তখনই একটা ফোন এলো হেমন্তের ফোনে। একটা কণ্ঠ অস্থির হয়ে বললো,
” পৌষ’র এক্সিডেন্ট হয়েছে হেমন্ত ভাই।”