প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২৪ (২)
নওরিন কবির তিশা
আরেকটি রাঙা প্রভাত, উদীয়মান সূর্যের উজ্জ্বল রশ্মি ছড়াচ্ছে ধরণী জুড়ে। মির্জা মহলের ব্যস্ততা আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। পুরো মহল জন কলরবমুখর। সৌভিক-কুহেলিকার রিসিপশনে আমন্ত্রিত প্রায় হাজার দুয়েক অতিথি। একে একে শুরু হয়েছে এলাকাবাসীর আনাগোনা। সকাল থেকেই তরুণ-তরুণীদের ব্যস্ততা বেড়েছে শতগুণ।
তবে এত কিছুর মাঝেও সামান্য শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে তিহুর। সকাল থেকেই লাপাত্তা নীল। কি একটা কাজে সকাল সকাল শহরের উদ্দেশ্যে যেতে হয়েছে তাকে। কি অদ্ভুত না? কিছুদিন আগেই যাকে দেখলে মেজাজ গরম হয়ে যেত এখন তাকে না দেখলে অদ্ভুত শূন্যতা অনুভূত হয় চারিধারে। কেন হয় এমন?কারণটা এখনো অজানা। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে ফারিসার রুমের সামনে এসে থামলো সে। ভেতর থেকে ভেসে আসছে কথোপকথনের গুঞ্জন।
কুহেলিকার সাজসজ্জার জন্য সকালে উপস্থিত এই রুমেই। একটা জিনিস বড্ড অবাক করেছে তিহুকে। কুহেলিকা কাল রাতে ফারিসার সাথে থেকেছে। ব্যাপারটা কেমন যেন! বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী এক রুমে ঘুমাবে এটাই তো আজীবন দেখে এসেছে সে। তবে কাল রাতে কুহেলিকা কেন ফারিসার কক্ষে ঘুমালো এই নিয়ে প্রশ্নের শেষ ছিল না তার।
জুনাইয়া অবশ্য তাকে বুঝিয়ে বলেছে এটা একটা আদি গ্রামীন রেওয়াজ। বিয়ের দিন রাতে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকতে পারে না। পৃথক কক্ষে অবস্থান করতে হয় তাদের। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল সে। উন্মোচিত হলো ভিতরে বিদ্যমান সদস্যরা। তাকে দেখে কুহেলিকা কিছুটা হেসে প্রশ্নেরছলে বলল,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
—’তুমি নিশ্চয়ই তিহু?
নববধূর এমন হঠাৎ সম্বোধনের কিছুটা বিস্মিত হলো তিহু। তাকে এমন বিস্মিত হতে দেখে কুহেলিকা একগাল হেসে বলল,,—’আরে নার্ভাস হচ্ছ কেন? অ্যাকচুয়ালি এরা এত বেশি তোমার কথা বলছে আর তোমায় দেখে এমন ভাবে থমকালো তাই ভাবলাম হয়তো তুমিই এদের ফেভারিট বউমনি।
তিহু প্রত্যুত্তরে সামান্য হাসলো,,—’তেমন কিছু নাই আপু আসলে।
 —’কোনো আসলে-নকলে নয়। দেখো সৌভিকের সাথে আমার ৫ বছরের রিলেশন, কতবার আসা যাওয়া করছি এ বাড়িতে। তবে কখনো আমাকে নিয়ে এত এক্সাইটনেস দেখায়নি এরা। অথচ তোমার কথা সেই সকাল থেকে বলেই চলেছে।
তিহু মুচকি হাসতেই পাশ থেকে ফারিসা বলল,,
—’আসলেও বউমনি,তিহু বউমনি জাদু জানে। কি অদ্ভুত ভাবে মিশে গিছে আমাদের সাথে। আমার তো ইচ্ছে করে সব সময় বউমনির কাছাকাছি থাকতে।
তার কথায় রাফা মুখ বাঁকিয়ে বলল,,—’ওই একদম নজর দিবি না, এটা আমার বউমনি।
তিহু দুটোর বাকবিতণ্ডা থামিয়ে বলল,,—’আচ্ছা আচ্ছা, এত ঝামেলা করো না তো। সকলে ফাস্টে নতুন বউমনিকে সাজাও। আর মেকআপ আর্টিস্ট কোথায়?
পাশ থেকে জুনাইয়া হাতের ইশারা করে বলল,,—’এইতো আমি তো আছিই। মেকআপের উপর পিএইচডি করা। কোনো মেকআপ আর্টিস্টের প্রয়োজন নেই।
তিহু দেখলো জুনাইয়া নিচু হয়ে কিছু একটা খুঁজছে, সে সাহায্য করতে যাওয়ার আগেই মেকআপ ব্রাশটা হাতে তুলে জুনাইয়া বিজয়ের হাসি হাসলো। তা দেখে তিহু বলল,-—’সেটা ঠিক, আওয়ার পুকি মেকআপ আর্টিস্ট। তুমিই করাও মেকওভার।
দিন গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। সারাদিন মানুষের আনোগোনা লেগেই ছিলো। এখন সামান্য ফাঁকা মহলটা। তবুও চারপাশে মানুষ গিজগিজ করছে। এত মানুষের ভিড়েও কাঙ্ক্ষিত পুরুষকে না দেখতে পেয়ে স্বভাবতই মনটা খারাপ হয়ে গেল তিহুর। তবে সেই মন খারাপটা মুহূর্তেই উবে গেল যখন দেখতে পেল, রাওফিন মাহার পিছু পিছু ঘুরছে আর কিছু একটা বলছে। আর মাহা বরাবরের ন্যায় নাকচ করছে।
তিহু লুকোচুরি পায়ে এগিয়ে গিয়ে রাওফিনের পিছে দাঁড়ালো। মাহা তখন সবে তার থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। রাওফিন অসহায় দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে সেদিকে। চুপিসারে পিছনে এসে দাড়িয়ে তিহু বলল,,
—’পাত্তা দিচ্ছে না। না?
রাওফিন ঠোঁট উল্টে কিছু একটা বলতে যাবে তখনই বুঝতে পারে এটা কার কণ্ঠস্বর। তড়িৎ বেগে পাশে ঘুরে তাকায় সে। তিহুকে দেখে সামান্য ভড়কায়, তার উদ্দেশ্যে বলে,
—’সিস্টার তুমি?
তিহু প্রত্যুত্তরে সামান্য দুষ্টু হাসে।রাওফিন সামান্য অপ্রস্তুত কণ্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাকে বাধা দিয়ে তিহু বলে,,,
—’মিথ্যা এক্সকিউজ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই ব্রাদার। আই নো এভরিথিং। তবে আজ আমার তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। কেননা আমি নিজের চোখে তোমার দৃষ্টিতে মাহার জন্য উন্মাদনা দেখেছি। আর অ্যাজ আ বেস্ট ফ্রেন্ড আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ওর সুখের জন্য। হুইচ ওয়ানলি ইউ ক্যান গিভ হার।
রাওফিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,—’সিস্টার!
—’এমন ভাবে তাকিও না ব্রাদার। ও আমার জন্য যা যা করেছে তার কাছে এগুলো সামান্য, অতি নগণ্য। ও না থাকলে হয়তো আমি কখনো নিজের পছন্দের ভার্সিটিতে আমার পড়াশোনাটা কন্টিনিউ করতে পারতাম না। ফ্যামিলির চাপে হয়তো কোনো এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়া লাগতো আমার। এছাড়াও জীবনের অনেক কিছু আমি শুধুমাত্র ওর জন্যই পেয়েছি। ও শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না। আমার আত্মার আত্মা। ওকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ ব্রাদার। তাই ওর খারাপ আমি কখনো হতে দেবো না। ওর সুখের জন্য আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাব।
রাওফিন মুগ্ধ হাসলো। তিহু এবার চঞ্চলতা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,,—’তবে জা টা আমার একটু বেশি অভিমানী। রগচটা স্বভাবের। ওকে মানাতে হলে বহুৎ কাঠখড় পোড়াতে হবে তোমাকে ব্রাদার। তবে ডোন্ট ওয়ারি আমি তোমার সাথে আছি।
রাওফিন মাহার দিকে ফিরে বলল,,—’ শেষ নিঃশ্বাস অব্দি লড়ে যাব তবুও আমি ওকে নিজের করেই ছাড়ব। ইনশাআল্লাহ।
মাহা তখনো জুনাইয়াদের সাথে গল্পে মগ্ন। বোকা সে টেরই পেলো না তাকে নিয়ে কেমন নিঃশব্দ এক সুখময় চুক্তি হয়ে যাচ্ছে তার কাছের মানুষদের মধ্যে।
জুনাইয়া:’আরে বর্ডারটা ভালো করে কর, আর বেলির পাপড়ি গুলো দিয়ে মাঝখানে কুহেলিকা প্লাস সৌভিক লেখ।
ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা চলমান। নবীন গুলো সব সৌভিকদের বাসর ঘর সাজাতে তৎপর। কুহেলিকা আর সৌভিক এখনো নুরজাহান বেগমের রুমে হওয়াই ধীরে-সুস্থে কাজটা করছে তারা। জুনাইয়া গাইড দিচ্ছে সকলকে। তিহুর উপর দায়িত্ব পড়েছে প্রবেশ পথ আর দরজার কার্নিশ সাজানোর।
প্রবেশপথটা সজ্জিত সম্পন্ন হলেও, দরজার কার্নিশ আর ওপরে ফুলগুলো সেট করতে বেশ বিপাকে পড়তে হলো তাকে। তার উচ্চতার তুলনায় দরজাটা বেশ উঁচু। তাই নিহিত কে দিয়ে একটা চেয়ার যোগাড় করে তার উপর দাঁড়িয়ে সাজাচ্ছিল সে।
—’আরে মামা অত চিন্তা করছ কেন? কাল না হয় আরেকবার যাবো, দেখব কার বুকে কত পাটা? আমার সামনাসামনি আসতে বলো।
হঠাৎ নীলের কন্ঠে, হচকিত হল তিহু। কার্যত হাতটা থেমে গেল মুহূর্তেই। সারাদিন পর কাঙ্খিত পুরুষের কণ্ঠে ক্লান্ত-শান্ত চক্ষুদ্বয় চঞ্চল হলো। খুঁজে ফিরল তাকে। সামান্য ঝুঁকেও নীলকে দেখতে না পেয়ে, আরেকটু ঝুঁকলো সে। এদিকে তার ভারে সামান্য দুলে উঠল চেয়ারটা। ভারসাম্য হারিয়ে সে পড়ে যেতে নিতেই, কোনো শক্তপোক্ত পৌরুষিক হাত দ্রুত এগিয়ে এসে আঁকড়ে ধরল তাকে।নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করল তার ক্ষীণ কায়া।
এদিকে পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে রেখেছে তিহু। তবে মুহূর্ত খানেক অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও মনে হলো এখনও হাওয়ায় দুলে আছে সে। শরীরে পৌরুষিক দৃঢ় বাঁধন অনুভূত হতেই মস্তিষ্ক সজাগ হলো তার। পিটপিটিয়ে চোখ খোলামাত্র দৃশ্যমান হলো নীলের উদ্বিগ্ন মুখশ্রী।
‘নিজেকে সামলাতে পারো না,তো ওই চেয়ারে উঠেছিল কেন?’——সামান্য রাগী শোনালো ও তার কণ্ঠস্বর। মূলত উদ্বিগ্নতায় এ অবস্থা। যদিও সে ভালো করেই জানে তিহুর পড়ে যেতে যাওয়ার কারণ,সে ফরিদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আসলেও তার নজর আদতে তিহুর দিকেই ছিলো। এজন্যই তো এই যাত্রায় রক্ষে হলো তিহুর।
—‘আসলে…
’শাট আপ ইডিয়েট। তুমি জানো? এখন যদি আমি না থাকতাম তাহলে কি হতে পারতো? কতটা ব্যথা পেতে তুমি?’——তিহুকে কথা বলতে না দিয়ে ধমকের স্বরে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে উঠল নীল।
ধমকে স্বরে হলেও, তাতে মিলে ছিল তীব্র প্রেমময় উদ্বিগ্নতা। এক অদ্ভুত অস্থিরতা।
‘আসলে আমি…’——তিহু কথাটা বলতে বলতে নীলের থেকে সামান্য সরে যেতে নিতেই, হাতে থাকা সুতায় টান লেগে উপরে সজ্জিত ফুলের পাপড়িগুলো তীব্র ভারি বর্ষনের ন্যায় ঝরে পড়ল তাদের ওপর।
পাপড়ির মিষ্টি সুবাস আর নরম ছোঁয়ায়,পরম আবেশে চোখ বুঁজলো তিহু, নীল মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো তার পানে। তবে সেই দৃষ্টি বিনিময়ের সময়সীমা ছিলো মাত্র কয়েক মুহূর্ত। এতক্ষণ চুপ করে থাকা দৃশ্যগুলো উপভোগ করা জুনাইয়া,নিহিত,রাফা,নীরা ,ফারিসা, ফাহাদ, সামির,মাহা এবার হইহই করে উঠলো। জুনাইয়া,মাহা ফারিসা আর রাফা একযোগে গিয়ে উঠল,,
🎶Cuya Jo tune to Dil ne mare seeti..
তাদের কলিটা শেষ হতে না হতেই, নিহিত ফাহাদ সামির সিটি বাজিয়ে গেয়ে উঠলো,,
De de ek gaalon pe ek Pappi meethi meethi….🎶
ঘোর ভাঙলো তিহু-নীলের। নীল শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তাদের দিকে। মূহুর্তেই পিনপতন নীরবতা বিরাজমান হলো কক্ষ জুড়ে।তিহু উঠতে যেতেই নীল বাঁধা দিলো তাকে।অতি সন্তর্পণে ধীরে ধীরে নামানো পূর্বক কোলে তুলে নিলো তাকে।তার কান্ডে বিষ্ময়ে স্থবির হয়ে পড়লো তিহু, বিস্ফোরিত নয়নে তাকালেও কোনো ভাবান্তর দেখানো না নীল।তাকে নিজের শক্ত পৌরুষিক বন্ধনে আবদ্ধ করে এগিয়ে চলল রুমের দিকে।
এদিকে তারা যেতেই একে অন্যের দিকে দৃষ্টি বিনিময় করে অদ্ভুত রহস্যময় হাসলো সবগুলো। যেন কোনো গোপন পরিকল্পনায় সার্থক হয়েছে তারা।
রুমে এসে তবে তিহুকে নামালো নীল। বিস্মিত তিহু স্তব্ধ-নির্বাক। এখনো কল্পলোক থেকে বের হতে পারেনি সে, প্রথম দিন রেগে থাকার দরুন এতটা বিস্মিত না হলেও, আজ পুরাই থ’বনে গেছে সে। এদিকে তাকে নামিয়ে আর কোনো ভাবান্তর দেখালো না নীল, হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা টাওয়ালটা হাতে নিয়ে সোজা এগিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে।
দীর্ঘ এক শাওয়ার শেষে, প্রায় অর্ধ ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো নীল। আর ঠিক তখনি খাবার হাতে রুমে প্রবেশ করল তিহু। তবে রুমে ঢুকেই নীলের দিকে তাকিয়ে, চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম তার। নীলের সর্ব শরীর উন্মুক্ত,কোমরের জড়ানো একখানা টাওয়াল শুধু। নগ্ন বক্ষের ওপর বিন্দু বিন্দু জলকনারা নির্লজ্জের ন্যায় খেলা করছে। টুপটুপিয়ে গড়িয়ে পড়ছে তারা।
তিহু এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যে অবাকের চূড়ায় পৌঁছে হাঁ হয়ে রইলো। কখনো নীলকে এমন ভাবে দেখেনি সে। নীল অপর হাতে অন্য আরেকটা টাওয়াল নিয়ে, এগিয়ে আসলো তার দিকে। এতক্ষন বেশি চুলগুলো মুছঁছিল সে, তবে তিহুকে দেখে মুহূর্তেই থেমে গেল তার হাত।
হাতে রাখার টাওয়ালটা ছুড়ে ফেলে,এগিয়ে এসে আলতোভাবে স্পর্শ করল তিহুর সু-তীক্ষ্ণ নাকের ডগা। সামান্য চাপ দিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,,
—’এভাবে কি দেখছেন ম্যাডাম? অতঃপর সামান্য ঝুঁকে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,—’ক্রাশ খেলেন নাকি?
তিহু হকচকিয়ে তাকালো, অপ্রস্তুত কণ্ঠে বললো,,—’না। আমি কেন ক্রাশ খেতে যাব? অদ্ভুত তো।
—’না যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন তাই আর কি আমি ভাবলাম….
তাকে কথা শেষ করতে দিলো না তিহু,, প্লেট টা সেন্টার টেবিলে রেখে বলল,,—’তাহলে আপনার জন্য এক বালতি সমবেদনা। আর নিজের ভাবনা টাকে পকেটে পুরে রাখেন।
নীল তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,—’পকেট নেই তাই আপাতত, চুলগুলো মুছে দাও।
হেলদোল হীন তার কথায় অবাক হলো তিহু।—’চুল মুছে দিবো মানে?
—’বাংলা কথা বোঝো না?
—’বুঝি কিন্তু আপনার মত ব্রিটিশদের বলা কথায় সামান্য ডাউট আছে আমার।
—’আমি ব্রিটিশ?
—’তা নয়তো কি? আর আপনি এভাবে টাওয়াল পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন আমার সামনে হ্যাঁ? লজ্জা করছে না? দ্রুত ড্রেস চেঞ্জ করে আসুন।
—’বললাম তো চুলটা মুঁছিয়ে দাও।
—’পারবোনা।যান না যান নিজের ফেভারিট মুন্নি কে বলুন চুল মুছিয়ে দিতে।
—’নুর?
সামান্য ধমকের স্বরে কথাটা বলতেই।তিহু মুখে গোটালো। এমনিতেই নির্লজ্জের মত একখানা টাওয়াল পেঁচিয়ে তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার ওপর তাকেই চোটপাট দেখাচ্ছে। সে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিতেই, নীল খপ করে তার হাতখানা ধরে বসলো।
তিহু ঘুরে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই, তার ওড়নাটা একটানে খুলে নিজের মাথায় রাখল নীল। তার এমন কাণ্ডে বিস্ময়ের সীমা চূর্ণ করে তাজ্জব বনে গেছে তিহু। আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই নীল বললো,,
—’কথা না বাড়িয়ে চুল মুছে দাও। বড্ড ক্লান্ত আমি। তোমার সাথে তর্ক করতে আর ভালো লাগছে না। প্লিজ নুর।
আকুতিপূর্ণ কন্ঠে মন গললো তিহুর। তবুও নীলের এমন কাণ্ডে কিছুটা রাগ দেখিয়ে সে বলল,,—’সবসময় এমন ওড়না ধরে টানাটানি করেন কেন হ্যাঁ?নির্লজ্জ পুরুষ!
—’যেখানে ওড়নার মালিকের উপর অধিকার আমার সবচেয়ে বেশি। সেখানে এই তুচ্ছ ওড়নার প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে..?
তিহু চুপ করলো। পায়ের বৃদ্ধা আঙুলে ভর করে মুছে দিতে লাগলো নীলের জল সিক্ত, চুলগুলো। তবে উচ্চতায় নীলের বক্ষের থেকে সামান্য লম্বা হওয়ায়, কাজটাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। এদিকে তার এমন অবস্থায় মুখ চেপে হাসছে নীল। তা দেখে কিছুটা ক্রোধিত কন্ঠে তিহু বলল,,
—’বজ্জাত ব্যাডা, অমন করে না হেসে একটু হেল্পও তো করতে পারেন।
‘ওকে’——ছোট স্বরে কথাটা বলেই, তিহুর কোমর আঁকড়ে ধরল নীল। মুহূর্তেই নিজের সঙ্গে মিশিয়ে সামান্য উঁচু করলো তাকে। তার এমন কাণ্ডে তিহু তড়িৎ বেগে বলল,,
_’কি করছেন?
—’কেন হেল্প! তুমি না বললা, হেল্প করতে?
_’এটা হেল্প?
—’তা নয় তো কি?
—’এটা কোন ধরনের হেল্প? আমি তো শুধু বলছিলাম একটু ঝুঁকতে….
—’এই মেয়ে শোনো, সব সময় এত বেশি কথা বলো কেন? আর কথাগুলো ক্লিয়ারলি বলতে পারো না।
—’আমি কথা ক্লিয়ারলি বলি না? নাকি আপনি এক লাইন বেশি বোঝেন?
—’যা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়েছে এখন আর, কিছু পরিবর্তিত হবেনা। এভাবেই চুল মুছো দ্রুত।
_’মানে কি নামান আমাকে বলছি।
প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২৪
—’শাট আপ স্টুপিড। এভাবেই মুছো, না হলে এক আছাড় মারবো।
তিহু নাক কুঁচকে তাকালো। ফোস করে বলল,,-—’বজ্জাত ব্যাডা!
আনমনে চুল মুছতে লাগলেই, দুষ্টু হেসে তাকালো নীল। মনে মনে বলল,,—’ব্যাডা না, তোমার নেতা।
