প্রেমের সমর পর্ব ১১
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহাকে কোলে তুলে স্বচ্ছ যখন ছাদ পেরিয়ে সিঁড়ির দুটো ধাপ নেমে এল ঠিক তখনই নাকে প্রচন্ড আঘাতের টের পেল। বুঝতে পারল যে সুহা সজোরে ঘুষি বসিয়েছে তার নাকে। যার দরুণ এক হাতে সুহাকে ধরে অন্য হাত নাকে রাখল স্বচ্ছ। সুহা তখন সুযোগ পেয়েই নেমে দাঁড়ায়। ঝাঝালো স্বরে বলে,
“ এসব কোন ধরণের অসভ্যতা? আমি আপনাকে অনুমতি দিয়েছি কোলে তুলার? সবার সামনে দিয়ে এভাবে অভদ্রের মতো কোলে তুললেন কেন? ”
স্বচ্ছ নাকে চিনচিনে ব্যাথায় নাক চেপে ধরেছিল। সে অবস্থাতেই বলল,
“ ঐ ছেলেটাকে দেখানোর জন্য। কে সে? কেন তোমার দিকে ওভাবে তাকাচ্ছিল হুহ?মে’রে দিব কিন্তু। ”
সুহাও গা জ্বালিয়ে দিতে উত্তরে বলল,
“ প্রেমিক হয়। তাই বোনের জম্মদিন উপলক্ষ্যে ইনভাইট করেছি। সমস্যা? ”
স্বচ্ছ এবারে নাক ছেড়ে সুহার দিকে তাকায়৷ দৃষ্টিতে শীতল রাগ মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চাপে। এক হাতে সুহার ডান হাতটা চেপে ধরে ক্ষোভ নিয়ে উত্তর দেয়,
“ অবশ্যই সমস্যা। একজনের বউ হয়ে অন্যজনকে প্রেমিক বলছো কোন আক্কেলে?ইচ্ছে হচ্ছে তোমার গালে একটা থা’প্পড় বসাই সুহাসিনী। ”
সুহা ঠোঁট এলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। পরমুহুর্তেই ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ তো চারবছর এই বউ বউ করাটা কোথায় ছিল অস্বচ্ছ সাহেব? আর হঠাৎ এই বউয়ের প্রতি সচেতনতাই বা বেড়ে গেল কেন? জাস্ট কয়েকটা হাতের ছবিতেই? ”
স্বচ্ছ ভাবে। আসলেই তো। এতকাল তো সে বউ বউ করেনি। এমনকি এতকাল তো সে বউ নিয়ে সিরিয়াসও ছিল না। শুধু জানত মেয়েটাকে সে হারিয়েছিল। জেদ রেখেছিল। তারপর? তারপর বিয়ের এতবছর পর হুট করেই বউ বউ করে মরছে কেন সে? এই মেয়ে লাস্ট দুই মাসে তাকে কি করল যে এখন বউয়ের সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছে না? এটাও কি শুধু তার ইগো? স্বচ্ছ বুঝে উঠে না যেন। বলে,
“ ঐ হাতের ছবি পাঠিয়েই তো কি এক জ্বালায় ফাঁ’সিয়ে দিলে। এতকাল তো আমি বউ বউ বলে পাগল হইনি। এখনই হচ্ছি। কাহিনী কি? কি করেছো বলো তো? ”
সুহা বিরক্ত হয়ে তাকায়। প্রশ্ন ছুড়েছে সে। কোথায় উত্তর দিবে, উল্টো তাকেই আবার জিজ্ঞেস করছে। সুহা স্বচ্ছর চেপে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,
“ জোর করে অধিকার খাটাতে আসবেন না।হাত ছেড়ে দিন। ”
স্বচ্ছ ছেড়ে দিল। বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ ছেড়ে দিলাম। কিন্তু ঐ ছেলের আশপাশে থাকবে না। যদি আশপাশে দেখি তাহলে কিন্তু ঐ ছেলের হাড় ভে’ঙ্গে দিব।”
সুহা তেজ নিয়ে বলে,
“ হাত আমারও আছে। পাল্টা মা’র আমিও দিতে পারব যেমনটা এখন দিলাম। ”
“ ঐ হ্যাংলা কাঠির জন্য এত টান?”
কথাটা বলতে বলতেই স্বচ্ছ এবারে নাকে হাত দিয়ে চ্যাক করে। অল্প তরল অনুভূত হতেই বুঝতে পারে বউয়ের ঘুষিতে কতোটা শক্তি। রক্ত বেরিয়ে গেছে।স্বচ্ছ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ,
” রক্ত? সোজা নাক ফাঁটিয়ে দিলে সুহাসিনী? এতোটা নির্দয় তুমি? স্বামীর প্রতি এইটুকু মায়াও হলো না? ”
সুহা ফের তাচ্ছিল্য করে বলে,
“ সো কল্ড স্বামী শব্দটা ব্যবহার করবেন না অস্বচ্ছ সাহেব। ঘৃণা আসে আমার। ”
স্বচ্ছর মন খারাপ হলো। এতই ঘৃণা? কেন জানি না তার ভালো লাগল না। বলে,
“ এত ঘৃণা? ”
সুহার রাগ যেন ক্রমশ বাড়ছেই। প্রশ্নটা শুনেই এমন ভাবে রাগ নিয়ে তাকাল যেন সে পারলে স্বচ্ছকে খেয়েই ফেলবে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ কেন? ঘৃণা জম্মানোর কথা নয়? ”
স্বচ্ছ বউয়ের আগুনঝরা দৃষ্টি দেখে মিনমিন করে তাকায়। এত কঠিন কঠিন কথা শুনে বুকে হাত রাখে।পরমুহুর্তে মুখ ফুলিয়ে শ্বাস টেনে বাচ্চাদের মতো করে বলে,
“ একটু তো ভালোবেসেও তাকাতে পারো সুহাসিনী। সবসময় এমন রাগ দেখাও যেন মনে হয় তোমার রাগের আগুনে জ্বলসে যাচ্ছি। ”
“ শুধু জ্বলসে যাচ্ছেন? আমার তো ইচ্ছে করছে আপনাকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে স্বচ্ছ। ”
“ ফেলে দাও।বউয়ের হাতে শহীদ হলেও শান্তি! ”
সুহা রাগ নিয়ে বলে,
“ শহীদ হবেন না, বড়জোর হাত পা ভাঙ্গবে।”
“ ভাঙ্গুক, তুমি তো আছো সেবা করার জন্য।”
রাগে সুহার নাক ফুলছে। স্বচ্ছর আজেবাজে কথা শুনে ইতোমধ্যে রাগ আকাশ ছুঁয়েছে। অতএব রাগ ফুসতে ফুঁসতে বলে,
“ সো কল্ড বউদের মতো মনে হয় আমায়?সেবা তো দূর উল্টো হাড় গুড়ো গুড়ো করে দিব আমি। ”
স্বচ্ছ মন খারাপ করে তাকায়।কি নির্দয় তার বউ? আব্বা আম্মা কি করে জেনে বুঝে এই নির্দয় মেয়েটির সাথে তার বিয়ে দিয়েছিল? স্বচ্ছ মন খারাপি গলাতেই বলল,
“ কি নির্দয় তুমি।”
সুহা ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
“হ্যাঁ নির্দয়।শুনুন?আমি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি , আপনার কাছে খুব শীঘ্রই আইনি নোটিশ আসবে অস্বচ্ছ সাহেব৷ ”
স্বচ্ছর দাঁত চিড়চিড় করে রাগে। বলে,
“ নোটিশ আসলেই আমি নেচে নেচে ডিভোর্স দিয়ে দিব নাকি? ”
“ বলেছেন দেখা হওয়ার পর আর পিছুটান নেই।দেখা তো হলোই? আর তো কোন কারণ থাকার কথা নয়। আশা করি এবার ভালোই ভালোই সম্পর্কের ইতিটাও টেনে নিবেন।”
“ ওহ, এইজন্যই চাইছিলে যাতে দেখা না হোক? কারণ দেখা না হলে বিচ্ছেদ হবে না এই কারণে?”
সুহা কঠিন চাহনিতে তাকায়। ফের সিঁড়ি মাড়িয়ে ছাদে উঠতে নিয়ে বলে,
“ আপনার মতো মানুষের সামনে সুহাসিনী হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও আপনার সেই ঘৃণ্য নাটক দেখতে চাইনি৷ সে কারণেই চাইছিলাম দেখাটা না পান। ”
.
সুহা যাওয়ার মিনিট দুই পরই আবির আর সাদাফ ছুটে এল স্বচ্ছর কাছে। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে স্বচ্ছর মুখটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করতেই চোখে এল স্বচ্ছর নাকের কোণায় লেগে থাকা অল্প রক্ত। সাদাফ মুহুর্তেই অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়। বিস্ময় নিয়ে বলে উঠে,
“ প্রথম দিনই মেরে নাক ফাঁটিয়ে দিল ? কি সাংঘাতিক রে দোস্ত! ”
স্বচ্ছ ভোঁতা মুখ নিয়ে তাকাল। নিজের দুঃখে নিজেই মরে যাচ্ছে সে আর এরা এসেছে কাঁটা গায়ে নুন ঢালতে। স্বচ্ছ বিরক্ত হয়। রাগ নিয়ে তাকায় ওর দিকে। সাদাফ সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধুর রাগমিশ্রিত দৃষ্টি দেখে বলে,
“ এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? ”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ তোকে মাথায় তুলে রাখার জন্য। আয়, সামনে আয়। ”
সাদাফ নিরাশ হয় বলে,
“ আমার দোষ কি? মারল তো তোর বউ। ”
“ তাতে তোর কি?তোর কেন এত মাথা ব্যাথা? বউও আমার, নাকও আমার। ”
আবির চাপা হাসে। এতক্ষনে গিয়ে হাসি চেপে রেখে বলে,
“ দোস্ত ভাবছি যে কোনদিন যদি তোদের মাঝে রোমান্স হয়। মানে তুই তোর বউয়ের কাছে গেলি আর তোর বউ সোজা এভাবেই নাক বরাবর ঘুষি মেরে তোর রোমান্সের বারোটা বাঁজাল। কি করবি তখন? ”
স্বচ্ছ কপাল কুঁচকায়। শক্ত গলায় বলে,
“ কিছুই করব না,তোর ঐ ছুটিকেও এই ট্রিকস টা শিখিয়ে দিতে বলব আমার বউকে। যাতে তোর রোমান্সেরও বারোটা বাজাতে পারে। ”
সুহারা পুরো রাতটা না ঘুমিয়েই কাঁটাল। ব্যস্ত শহরে মাঝেমাঝে আনন্দ খুঁজে নেওয়াটা জরুরী তা হোক কোন উপলক্ষ্যে কিংবা বিনা কারণেই। সে হিসেবে তাদের জন্য রাহার জম্মদিন উপলক্ষ্যে এই সময়টা খুব ভালোই কাঁটল।তারপর যে যার মতো ফিরে এল। তিহানদের বিল্ডিংটা স্বচ্ছদের বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি হওয়াতে ছাদ দিয়ে লাফ দিয়েই পেরিয়ে গিয়েছে তিহান আর তিহানের সেই কাজিন ছেলেটা। তারপর সিয়াকে ওর বাসায় দিয়ে বাকি পাঁচজন মেয়ে নিজেদের বাসায় এল। ফ্রেশ হয়ে যখন আবার পাঁচজনে বসল তখন রাহাই প্রথমে বলল,
“ আপু! তোর বরটা কি সুন্দর রে। সেদিন বেলকনিতে বসাতে শিষ বাঁজাল। ভাবলাম বেয়াদব হবে। কিন্তু আজ তো সামনাসামনি দেখে ক্রাশড আমি! ”
সুহা রেগে তাকায়। বলে,
“ তো? ”
রাহা ঠোঁট চেপে হাসে। ফিসফিস স্বরে বলে,
“ আপু? একটা কথা! তোকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে কি করল রে আপু? চুমু টুমু দিয়েছে নাকি? ”
সুহা মুহুর্তেই চোখ গরম করে তাকায়।বলে,
“ এক থাপ্পড়ে গাল লাল করে দিব বেয়াদব। তুই ছোট ছোটর মতো থাক। ”
রাহা মুখ ভোঁতা করে চুপ করে। কিন্তু এরপরই সুহার অপর বান্ধবী নিতু বলল,
“ ও নাহয় ছোট। আমরা তো বড়, আমাদের বল প্লিজ। এত সুন্দর দুলাভাই, নিশ্চয় সুন্দর কাজই করেছে বল? ”
ছুটি সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছাস নিয়ে বলে,
“ আমি তো দুলাভাইকে সামনাসামনিই বলে এলাম যে আমি তার উপর ক্রাশ খেয়েছি।”
অপরজন নিহা বলে,
“ সেইম! আমি তো প্রথমদিন দেখেই মনে মনে মাশাল্লাহ বললাম। যদিও এতদিন বলিনি কিন্তু আজ বলছি দুলাভাই সত্যিই সুন্দর। সুহার সাথে বিয়ে না হলে আমি লাফ মেরে বিয়ে করে নিতাম। ”
চারপাশে সবগুলো মেয়ের মুখে স্বচ্ছর রূপের প্রশংসা শুনতে শুনতে ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে পড়লেও বাহিরেও সুহাকে দেখাল খুব শান্ত। কন্ঠে চাপা রাগ মিশিয়ে নিহাকে বলল,
“ প্লিজ, বিয়েটা করে নে৷ আমায় তবু মুক্তি দে এই ছেলের থেকে। তুই যদি চাস আমি পরিচয় করিয়ে দিব তোর সাথে৷ কি বল? দিব পরিচয় করিয়ে? ”
নিহা কাচুমাচু করে বলল,
“ রেগে যাচ্ছিস কেন? মজা! মজাই তো করলাম। ”
যেহেতু রাহার আজ জম্মদিন সে কারণেই সুহা আর রাহা মিলে সাতসকালে তৈরি হয়ে নিল বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যদিও নিজ শহরে শেষ বার গিয়েছে মাস দুয়েক হলো। তবুও সুহার মনে হলো কতগুলো দিন সে দাদা দাদীকে দেখে না। কতগুলা দিন সে মাকে দেখে না। এত এত দিন পর নিজ শহরে ফেরার আলাদা এক আনন্দ হচ্ছে তার। সুহা তৈরি হয়। রাহাকে বকাঝকা করিয়ে জলদি করে তৈরি হতে বলে। অতঃপর রাহাও তৈরি হয়। তারপর প্রায় দিনের সাড়ে এগারোটার দিকেই তারা ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে বাসা ছেড়ে বের হলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য দাঁড়াল এককোণে।
স্বচ্ছ তখন গোসল সেরেছে। কোমড়ে শুধু একটা টাওয়াল। চুল দিয়ে টপাটপ পানি পরছে তখনও। স্বচ্ছ হেলতে দুলতে গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি জড়িয়ে ভেজা শার্টটা বেলকনিতে মেলে দিতে গিয়েই চোখ পড়ল রাস্তায়। এক কোণে সুহাকে আর ওর বোনকে ব্যাগপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই কলিজায় দিল মোঁচড়। এত কষ্ট করে বউ খুঁজে পেয়েছে সে। এখন কিনা বউ তাকে না জানিয়েই পালিয়ে যাচ্ছে ব্যাগপত্র নিয়ে? স্বচ্ছ আবার খুঁজবে কোথায় এই মেয়েকে? স্বচ্ছ রিস্ক নিতে চায়না আর। এই মেয়ে যে ডেঞ্জারাস, হতেই পারেই যে স্বচ্ছ আর জীবনেও এই মেয়েকে খুঁজে পেল না।বিড়বিড় করে বলল,
“ এসব কি? সাতসকালে বউ চলে যাচ্ছে আমার। কিসব শুরু হলো বল তো। সব অত্যাচার আমার উপরই কেন হুহ?”
কথাগুলো বলেই স্বচ্ছ আর ভাবল না। পরনের তোয়ালেটা এক হাতে শক্ত করে চেপে ধরে দৌড় লাগাল দ্রুত। যত দ্রুত পারে তত দ্রুতই সিঁড়ি পেরিয়ে নিচে যেতে চাইল। অবশেষে গেল ও। সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর তোয়লে পরনে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়াল সুহাদের সামনেই। সুহা প্রথমে ওভাবে না তাকালেও পরমুহুর্তেই স্বচ্ছকে এই অদ্ভুত পোশাকে তোয়ালে ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়। ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
“কি সমস্যা? ”
“ কোথায় চলে যাচ্ছো? ”
সুহা ত্যাড়া স্বরে উত্তর করল,
“ যেখানে ইচ্ছে। ”
“ বললেই হলো? যেতে দিব? আমি কিন্তু আবার কষ্ট করে খুঁজতে পারব না সুহাসিনী।”
“ খুঁজতে তো বলিনি আমি। ”
স্বচ্ছ কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই সামনে এল রাহা। এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছকে দেখছিল সে। এখন এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে গদগদ স্বরে বলে উঠল,
“ দুলাভাই? আমি রাহা! আপনার বউয়ের একমাত্র ছোটবোন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনার বউ না হওয়াটা আমার ভুল হয়ে গেল। ”
রাহা কথাটা মজা করেই বলল। সাথে দাঁত বের করা হাসি। স্বচ্ছ সে হাসিতে হাসি মিলিয়ে বলল,
“ না ছোটবোন, যিনি বউ হয়েছে তিনিই এনাফ। একই রকমের আরেকটা ডেঞ্জারাস মেয়ে বিয়ে করে নিজের কপালের বারোটা বাঁজাতে চাই না। ”
রাহা প্রশ্ন ছুড়ে,
“ ডেঞ্জারাস কেন? কি করলাম বলেন? আপনার এহেন রূপ দেখে একটু চাইলামই তো কেবল। ”
স্বচ্ছ তখন সুহার দিকে তাকায়৷ সুহা কেন তাকে দেখছে না?কেন তাকাচ্ছে না? হতাশ স্বরে বলে,
“ তোমার বোন তো তাকাচ্ছে না। এই দুঃখই কি আমার জন্য এনাফ না বলো? ”
সুহা এবারে তাকায়। টানটান গলায় বলে,
“ নিজেকে যে অবস্থায় এখানে এনেছেন তাতে কি নিজের সৌন্দর্য ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পরছে মনে হচ্ছে? যে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকব? অবশ্য সৌন্দর্য ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পরলেও আমি ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতাম না আপনার দিকে। ”
“ হু আমার বেলায় চাইবে কেন? ঐ তিহানের কাজিন হলে তো এতক্ষনে চোখ বের করে তাকিয়ে থাকতে। ”
সুহা তির্যক স্বরে জানায়,
“ হ্যাঁ, থাকতাম। অসুবিধা? ”
“অবশ্যই অসুবিধা। ”
“ আপনার তো সবকিছুতেই অসুবিধা৷ ”
স্বচ্ছ উত্তর করে না এবারে। কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে বউকে না যেতে দেওয়ার পরিকল্পনা করে বলে উঠে,
“ যেখানেই যাও, ভাড়া না দিয়ে যেতে দিব না। ”
“ ভাড়া মাস শেষ হলে এমনিই পেয়ে যাবেন।”
“ তাহলে মাস শেষ হলেই যাবে। ”
সুহা চোখ ছোটছোট করর তাকায়৷ ব্যাগ থেকে কয়েকটা নোট বের করে স্বচ্ছর হাতে দিয়ে বলে,
“ ভাড়াটা এখনই দিচ্ছি। এবার পথ ছাড়ুন। ”
স্বচ্ছ না নিয়ে দ্রুতই বলল,
“ আমরা মাসের শুরুতেই ভাড়া নি না, মাস শেষ হবে, মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকবো , ভাড়া দিবে, তারপর যাওয়ার অনুমতি মিলবে। ”
সুহা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলে,
“ আমরা আপনার থেকে ভাড়া নেই নি। আপনার আব্বার থেকে নিয়েছি। আর আপনার আব্বা এমন কোন রুলস আমাদের বলে নি। ”
স্বচ্ছ এবারে ভাব নিয়ে বলল,
“ আব্বা তো আর আপডেট মানুষ না। আমি আপডেট ছেলে। নতুন করে রুলস সংযুক্ত করেছি। ”
স্বচ্ছ যখন কথাটা শেষ করল ঠিক তখনই স্বচ্ছর বাবা শাহরিয়ার সাহেবকে দেখা গেল বাজার হাতে এদিকেই আসতে। সুহা যেন বিচার দেওয়ার সুযোগ পেল। মুহুর্তেই শাহরিয়ার সাহেবের সামনে গিয়ে বলল,
“ আঙ্কেল! আপনার পাগল ছেলেকে কিছু বলুন না। ”
শাহরিয়ার সাহেব তাকালেন। ছেলেকে এহেন অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ গরম করে বললেন,
“ এসব কি স্বচ্ছ? তোয়ালে পড়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমি ছোট বাচ্চা? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,
“ না, বড় বাচ্চা আব্বু। ”
শাহরিয়ার সাহেব গম্ভীর গলায় বলেন,
“ তুমি কোন প্রকারের বাচ্চার মধ্যেই পড়ো না। এবার বলো, বিরক্ত করছো কেন ওদের? ”
স্বচ্ছ কাঁদোকাঁদো দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“ আব্বু? বউ চলে যাচ্ছে আমার। কত কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছি বউকে। তুমিই বলো? আম্মু এভাবে চলে গেলে তোমার কষ্ট হবে না? ”
উনি ফের গম্ভীর গলায় বললেন,
“কথায় কথায় তোমার আম্মুকে টানবে না। তুমি যা করেছো তা আমি কখনো করিনি। এখন চুপচাপ বাসায় যাও। মেয়ে দুটো ঠিক ভাবে যেতে দাও। ”
“ যেতে দিব?পরে কোথায় পাব? ”
প্রেমের সমর পর্ব ১০
শাহরিয়ার সাহেব ততক্ষনে রিক্সা ডেকেছেন। সুহা আর রাহাকে রিক্সাটায় উঠতে বলেই স্বচ্ছর দিকে চেয়ে বলল,
“ সেটা তুমি জানো। কিন্তু এই মুহুর্তে ওদের আর বিরক্ত করতে দেখলে তোমার তোয়ালেটা এই রাস্তার মধ্যেই ছুড়ে ফেলে ব্যাকসাইডে মার বসাব ছোটবেলার মতো। ”
কথাটা শুনেই সুহা হেসে উঠে।তবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। স্বচ্ছ সে হাসিটা দেখেই তোয়ালেটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে। ইশশ! বউয়ের সামনে যদি তার আব্বু তার ইজ্জতটা আর না রাখে তাহলে সে আর মুখ দেখাতে পারবে?স্বচ্ছর রাগ হয়। বাবা কি কথাটা অন্য সময়ে বলতে পারত না?সুহাসিনীর সামনেই বলতে হলো? স্বচ্ছ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
”তোমরা সব কয়জনই ষড়যন্ত্রকারী আব্বু!একদিন এই ষড়যন্ত্রের প্রতিশোধ আমিও নিব। দেখে নিও। ”