প্রেমের সমর পর্ব ১৬

প্রেমের সমর পর্ব ১৬
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

স্বচ্ছর এই হঠাৎ আসা তীব্র জ্বরের কারণেই বোধহয় সুহার মনে একটু মায়া জাগল। শরীরের উত্তাপ বুঝে কিয়ৎক্ষন থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে নিচে গেল পানি আর একটা কাপড় আনতে। যাতে কপালে জল পট্টি দিতে পারে। অতঃপর নিচে গিয়ে কাপড় আর পানিও আনল। স্বচ্ছকে মাথাটা সোজা করতে বলে যখন স্বচ্ছর পাশেই বসতে নিবে ঠিক তখনই স্বচ্ছ হাসল।বলল,
“বউ হিসেবে বউয়ের মতো সেবা করতে এসেছো সুহাসিনী? ”
সুহা তপ্তশ্বাস ফেলে। সে মোটেও বউয়ের মতো সেবা করতে আসেনি। তবে তার মন বলছিল এই ছেলেটার সেবা করতে। এই অসুস্থ ছেলেটাকে এভাবে ফেলে যেতে তার নিজেরই মায়া হচ্ছিল। হয়তো চার বছর আগের ভালোবাসার রেশের টানেই এই মায়া। সুহা তপ্তশ্বাস ফেলে জানায়,

“ আমাদের বাসায় এসে জ্বর বাঁধিয়েছেন। দায়িত্ব পালণ করছি শুধু। ”
স্বচ্ছর চোখ মেলে তাকাতেই কষ্ট হয়। মাথা ভার হয়ে আছে। চোখ জ্বলছে। তবুও চোখ খুলে তাকায় সুহার দিকে। মেয়েটাকে তার ইদানিং বিনা কারণেই দেখতে মন চায়। হয়তো অদৃশ্য একটা টান ও কাজ করে। অথচ স্বচ্ছ এমনটা চায়নি। সে চেয়েছিল মেয়েটাকে তার টানে ফেলতে। শেষ পর্যন্ত সেই ফেঁসে গেল। বিষয়টা বুঝে উঠেই বলে,
“ শুধুই দায়িত্ব? ”
সুহা বিরক্ত হয় যেন। একটা মানুষের জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তার উপর খাবারটুকু পর্যন্ত খায়নি। চোখগুলো লাল হয়ে আছে কেমন জ্বরের তাড়নায়। সুহা বলে,
“ চুপ করে শুঁয়ে থাকুন। জ্বর আপনার। দুপুরের মধ্যে জ্বর না কমলে দাদাজানকে ডক্টর আনার কথা বলতে হবে। ”
স্বচ্ছ চুপ থাকে এবারে৷ সুহা কথা না বাড়িয়ে জলপট্টি দেয় কপালে। একবার, দুইবার, তিনবার। যতবারই দিল স্বচ্ছ সেভাবেই শুঁয়ে থেকে তার দিকেই তাকিয়ে থাকল।সুহা কিছুই বলল না। অবশেষে স্বচ্ছই বলল নিরস স্বরে,
“ এই যে আমি এখানে পড়ে আছি। মায়া হচ্ছে না কিঞ্চিৎ?”
সুহা দৃঢ় গলায় জানাল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ না! ”
স্বচ্ছর মন খারাপ হয়। পুণরায় বলে,
“ এই যে আমি অসুস্থ, জ্বরে পুড়ে যাচ্ছি। কষ্ট হচ্ছে না? ”
“ কেন হবে? ”
স্বচ্ছ মুখটা চুপসে গেল কেমন যেন। বিড়বিড় করে বলে,
“ নির্দয় রমণী! ”
কথাটুকু বলেই চোখ বুঝল স্বচ্ছ। বেশ কিছুটা সময় চুপ থেকেই হুট করে চোখ বন্ধ রেখে বিড়বিড় করে বলল,
“ সুহাসিনী? তুমি আমার জীবনে আচমকায় ঝড়ো হাওয়ার ন্যায় আসা এক অনুভূতি। এই অনুভূতিটা অদ্ভুত। বুঝে উঠি না। কি এক বিভৎস অনুভূতি তুমি তৈরি করে দিলে বলো তো?”
সুহা গলল না কথাগুলোতে। বরং রেগে গেল বেশ এমন ভঙ্গিতে তাকাল। জলপট্টি সরিয়ে বাটিতে রাখতে রাখতেই রাগ নিয়ে বলে উঠল,

“ জ্বরের ঘোরেও বসে বসে নাটক করবেন না। এসব নাটক এখন স্বস্তা লাগে। ”
স্বচ্ছর এবার ফুঁসে উঠে। অথচ উত্তর করে না। এই একটা মেয়ে যার সামনে সে সত্যিকারের আবেগ প্রকাশের চেষ্টা করে। কষ্ট বুঝানোর চেষ্টা করে। অথচ এই একটা মেয়েই তাকে কি যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করে, অবিশ্বাস করে আর অবহেলা করে। সে চুপ থাকে। সিদ্ধান্ত নেয় এই মেয়েটার সামনে সে দ্বিতীয়বার আর আবেগ প্রকাশ করবে না। তাই তো চিৎ হয়ে সোজা মতো শুঁয়ে থাকল। সুহা সেভাবে শুঁয়ে থাকতে দেখে বলে,
“উঠুন, মাথায় পানি দিব। ভালো লাগবে।”
স্বচ্ছ টানটান স্বরে উত্তর দেয়,
“প্রয়োজন নেই।”
“ জ্বর সারবে?”
ত্যাড়া স্বরে উত্তর দেয় সে,
“ না সারুক। ”
সুহা এবারে শক্ত স্বরে উত্তর দেয়
“ জেদ করবেন না। আমি আপনার আব্বু আম্মু নই যে আপনার জেদ শুনব। ধরে কাকভেজা করে গোসল করিয়ে দিব বলে দিলাম। ”

স্বচ্ছ উত্তর দেয়না। সুহা এবারে জোরালো স্বরেই বলে উঠে,
“ কি হলো? কথা কানে যায় না আপনার? ”
“ গেছে।”
“ তাহলে উঠুন। ”
স্বচ্ছ উঠে এবারে। সুহার কথা জবাব না দিয়ে ছাদে গিয়ে বসে। সুহা ততক্ষনে বালতি করে পানি এনেছে। স্বচ্ছ মাথা নুয়াতে বলেই পানি ঢালে। তারপর পানি দেওয়া শেষে বিপত্তি বাঁধে চুল মোঁছা নিয়ে। সুহা জিজ্ঞেস করে,
“ তোয়ালে আছে? ”
স্বচ্ছ ততক্ষনে ভার গলায় উত্তর দেয়,
“ কি করে জানব তোমরা এভাবে অনাদরে দূরে সরিয়ে চিলেকোঠার ঘরে থাকতে দিবে? জানলে তো আনতাম। যায় হোক, তোমার ওড়না দিয়েই মুঁছিয়ে দাও না। ”
সুহা ছোটশ্বাস ফেলে।তাকিয় দেখে স্বচ্ছর ভেজা চুল বেয়ে পানি পড়ছে কপালে। নিঃসন্দেহে স্বচ্ছকে এই রূপে সুন্দর লাগছে। বোধহয় একটু বেশিই।তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। তবুও সুহা নজর সরাল।স্বচ্ছর কথা মতো নিজের ওড়নার এককোণা দিয়ে স্বচ্ছর চুল মুঁছতে লাগল। ঠিক তখনই পেছন থেকে দাদার লাঠির ঠকঠক আওয়াজ শোনা গেল। বললেন,

“ কি করছো? ঐ ছোখরার মাথা তুমি কেন মুঁছে দিচ্ছো? ছোট বাচ্চা ও? ”
সুহা হাত সরিয়ে নেয়। দাদাজানের দিকে চেয়ে উত্তরে বলে,
“ জ্বর উনার। ”
স্বচ্ছ তখন বিড়বিড় স্বরে বলে,
“ চলে এসেছে এই ইভিল দাদাজান। কাছাকাছি দেখলেই গা জ্বলে তার।”
দাদাজান অবশ্য শুনতে পেল না কথাটা। সুহাকে বলল গম্ভীর গলায়,
“ তাতে তোমার কি এসে যাচ্ছে? ”
স্বচ্ছ এবারে উত্তর করে,
“আমার জ্বরে আমার বউয়ের এসে যাবে না তো কি আপনার এসে যাবে ডিয়ার দাদাজান? ”
দাদাজান রেগে তাকায়। চোখগুলোতে তাকিয়ে থেকে সন্দেহী স্বরে জানায়,
“ চুপ করো বেয়া’দব ছেলে। চোখ দুটো দেখে তো লাগছে নেশা করেছো। আমার বাসায় কিন্তু নেশাপানি দেখলেই সোজা উষ্ঠা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিব। ”
স্বচ্ছ এবারে বাঁকা হাসে। ঠোঁট এলিয়ে শুধায়,

“ মনে হচ্ছে দাদাজানের নেশা সম্পর্কে খুবই ভালো অভিজ্ঞতা আছে। কি বলুন দাদাজান? ”
দাদাজান সোজা লাঠি তাক করে। বলে,
” এই ছেলে? লাঠি দেখেছো? পিঠের চামড়া উঠিয়ে নিব।”
স্বচ্ছর দাঁত কিড়মিড় করে। শুধায়,
“ আপনার জিনগুলাই আমার বউয়ের ডিএনএ তে ভর করেছে। নয়তো আমার বউ এতোটা নির্দয় হওয়ার কথা নয়।কখনোই নয়। ”

ছুটি নিরবে বসে আছে। বাইরে ঠান্ডা আবহাওয়া। আকাশ অল্প মেঘলা। প্রকৃতি বোধহয় বর্ষণ চাইছে। ছুটি নিরবে বসেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল প্রকৃতিটাকে। ভাবে, শীতের পর প্রথম বৃষ্টির মতোই তার কাছে একটা বার্তা এসেছিল। তার আবির ভাই তাকে ভালোবাসে। ছুটি সে বার্তাটা পেয়ে যতটুকু খুশি হয়েছিল এখন ঠিক ততোটাই উদাস। কারণ আবির ভাই হুট করেই আবার উধাও হয়ে গিয়েছে। সুহার থেকে শুনেছে সুহাদের বাসাতে কেবল স্বচ্ছই গিয়েছে। অর্থ্যাৎ আবির যায়নি।গেল কোথায়? ছুটির মন খারাপ হয়। যাও ছেলেটাকে দুয়েক পলক দেখা মিলত এখন তাও হবে না।ছুটি কয়েকবার ম্যাসেজ ও করেছেে।জানতে চেয়ে কি অবস্থা। অথচ আবির বরাবরের মতোই তাকে পাত্তা না দিয়ে রিপ্লাই করেনি। ছুটি এই পর্যায়ে উদাস হয়েই বাসা ছেড়ে বের হলো। বন্ধুরা সহ গেল কফি খেতে। সেখানে সাদ ও ছিল। তিনজন মেয়ে এবং একটা ছেলে কফির মগ নিয়ে ছবি তুলে স্টোরি দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তারপর চলল ঘন্টা তিন- চার আড্ডা। অথচ এই তিন চার ঘন্টাতেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কোন এক যুবক যে নাক ফুলিয়ে রাগ ফুসছে তা কি ছুটির জানা ছিল? ছুটি জানত না। যখন বাসায় ফিরল তখন দেখল তার আবির ভাই তাকে কল দিয়েছিল। তাও তার ফোন সাইলেন্ট থাকা অবস্থাতে। ছুটির আপসোস হলো। পরমুহুর্তেই বারকয়েক কল দিতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল এক ধমক,

“ বলদের মতো এভাবে কল দিচ্ছিস কেন বারবার? যখন কল দিয়েছি তখন তুলেছিস?”
ছুটি অভিমান নিয়ে শুধাল,
“ আপনাকেও তো যখন ম্যাসেজ দিয়েছি ম্যাসেজের রিপ্লাই দেননি আবির ভাই। ”
“ আমারটা আর তোরটা এক নয়। ”
“ তাহলে ভিন্ন? ”
আবির এক ধমকে বলে,
“ আমি তোর চাইতে বড়৷ ”
ছুটি কিভাবে যেন সাহস করে বলে ফেলল,
“ তাতে কি? ”
ব্যস! আবিরের রাগটা যেন আরেকটু বাড়ল। বলল,
“ ঐ ছেলেকে একবার মেরেছি না? হাড়গোড় ভাঙ্গে নি? আবার ঐ ছেলের সাথে মিশতে গেছিস কেন? ”
ছুটির গলা নেমে আসে এবারে। বুঝতে পারে আবিরের রাগের কারণ। নরম স্বরে উত্তর দেয়,
“ বন্ধু হয় ও কেবল। ”
আবির রেগে শুধায়,
“ ছেলেবন্ধু রাখবি কেন? ”

প্রেমের সমর পর্ব ১৫

“ ও শুধু বন্ধুই। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?”
ফের রাগ নিয়ে বলে,
“ আমি রাগলে তোর কি? ”
ছুটি এবারে ছোটশ্বাস ফেলে। আবির কিছু না বলতেই বলে উঠে,
“ঠিকাছে, এরপর সাদ এর সাথে আর মিশব না আবির ভাই। ”

প্রেমের সমর পর্ব ১৭