প্রেমের সমর পর্ব ৩৭
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
আশপাশের আবহাওয়া ঠান্ডা। স্নিগ্ধ পরিবেশ।সূর্য তখনে নিজের উত্তাপের পরিচয় দেয়নি ধরণীর বুকে।আশপাশে তখন ফুরফুরে হাওয়া। সময়টা তখন বেশ সকালের।আর এ সকাল সকালই নিজের বাবার সাথে হাঁটতে বের হলো স্বচ্ছ। বের হওয়ার পেছনে অবশ্যই তার একটা নিখুঁত উদ্দেশ্য আছে।স্বচ্ছ বাবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে হাসে। রাস্তা দিয়ে এক মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকাতে বাবাকে ইঙ্গিত দিয়ে বলে,
“ দেখলে আব্বু? মেয়েরা কিভাবে আমায় দেখে? এভাবে হলে তো আমার বউ কষ্ট পাবে বলো? ”
শাহরিয়ার সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে চাইলেন। ঠোঁট চেপে বললেন,
“ নিজেই তো নিজের বউকে হাজারটা কষ্ট তাও৷ তার বেলায়? ”
স্বচ্ছ নিজের তাগিদেই হাঁটতে হাঁটতে ভাব নিয়ে শুধায়,
“ বউকে কষ্ট দিলে সে কষ্ট মুঁছে নিতেও পারব আমি। তুমি বারবার এটা মনে করিয়ে কি বুঝাতে চাও?আমি আমার বউকে কেবল কষ্টই দিই? ভালোবাসি না? ”
শাহরিয়ার সাহেব এবারে চোখ গরম করে তাকালেন। রাগত স্বরে বলে উঠলেন,
“থাপ্রে গাল লাল করে দিব বেয়াদব। ”
স্বচ্ছ এই পর্যায়ে হাঁটা থামায়। চোখ মিনমিনে করে তাকিয়ে বলে উঠে,
“ আব্বু? আমার মনে হয় বিয়েটা আবার করা উচিত। পাড়া মহল্লার অর্ধেক মানুষ এখনো জানেই না যে স্বচ্ছ বিবাহিত।জানলে কি মেয়েরা তাকিয়ে থাকত বলো? ”
শাহরিয়ার সাহেবের এই পর্যায়ে রাগে ফেঁটে পড়ার জোগাড় হলো যেন। ছেলে আবার বিয়ে করতে চাইছে বিষয়টা তার মেজাজ খারাপ করে দিল এক মুহুর্তেই।গম্ভীর স্বরে টানটান গলায় বললেন তিনি,
“ সরাসরি বলো যা বলার। ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হেসে শুধাল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ বিয়ে বিয়ে অনুভূতি নিতে চাইছি আবার। ”
কথাটা বলার সাথে সাথেই স্বচ্ছর গালে দানবীয় এক চড় পড়ল। যেন কান জাঁ ঝাঁ করে উঠল এক মুহুর্তেই। শাহরিয়ার সাহেব স্থান কাল ভুলে ছেলেকে চড় মেরেই বলে উঠলেন,
“ সুহার জন্য পাগলামি করে এখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইছো বেয়াদব? তুমি আসলেই একটা অকর্ম আর কুৎসিৎ মনের সন্তান। আমার সম্মান ডুবাতে… ”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই গালে হাক রেখে উত্তর করে,
“ তোমার বউমাকেই তো বউ হিসেবে চাইছি আব্বুজান। শুধু শুধু চড়টা মারলে।”
এইবারে রাগ কমল বোধহয় শাহরিয়ার সাহেবের। থমথমে মুখে বললেন,
“গর্দভের মতো কথা বলো কেন? ”
স্বচ্ছ হাসে। বলে,
“ বউকে বউ সাঁজে দেখা হয়নি সেবার ভালো করে। এখন দেখতে চাইছি খুব করে। ব্যবস্থা করো আব্বু। ”
“ চলে গিয়েছিলে কেন সেবার? করব না ব্যবস্থা।সেবার সংসারটা করলে এতদিনে নিশ্চয় আমার বাসায় দুটো ক্ষুদে নাতি-নাতনির মুখ দেখতাম আমি। ”
স্বচ্ছ আপসোস সুরে শুধায়,
“ আব্বু! ব্যবস্থা না করলে তোমার নাতি নাতনি পেতেও দেরি হবে। তুমিই বুঝো এবার, কি করবে? ”
কথাটা শুনেই শাহরিয়ার সাহেব কেঁশে উঠলেন। চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন,
“ বেয়াদব কোথাকার।মেরে মুখ ভেঙ্গে দেওয়া উচিত তোমার। ”
“ খারাপ কি বলেছি? আমি আসার পর থেকে তেমরা যা নিষ্ঠুরতা আমার সাথে দেখাচ্ছো মনে হচ্ছে তুমি কোনদিন বউয়ের পিছনে ছুটোনি।”
দাঁতে দাঁত চাপা স্বরে উত্তর এল,
” তোমার মতো বেখেয়ালি কাজকর্মও করে বেড়ায়নি। ”
স্বচ্ছ মুখ গোল করে বলে,
“ যা বলার ক্লিয়ারলি বলো আব্বু। তুমি আমার আনুষ্ঠানিক বিয়ে,আনুষ্ঠানিক বাসরের ব্যবস্খা করতে চাইছো না তাই তো?”
শাহরিয়ার সাহেব এই পর্যাযে ছেলের নির্লজ্জ্বতা দেখে দ্রুত হাঁটলেন যাতে ছেলের থেকে এগিয়ে যায়। যেতে যেতে বললেন,
“ চুপ, সুহার দাদার সাথে কথা হবে। ”
স্বচ্ছ যখন বাসায় ফিরল দেখতে পেল সোফায় বসা তিহানকে। সাথে অবশ্য বসে আছে রোহানও। হাতে মিষ্টির প্যাকেট৷ স্বচ্ছকে দেখামাত্রই রোহান দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠে। এগিয়ে এসে একটা মিষ্টি এগিয়ে বলে উঠে,
“ বড়ভাই? মেয়ে দেখতে যাচ্ছি আজ। দোয়া করবেন যাতে বিয়েটা হয়ে যায় আমার৷ তাহলে অন্তত আপনাকে জ্বালানো কমাই যদি! ”
স্বচ্ছর মেজাজ জ্বলে উঠে যেন। কেন জানি না এই রোহান ছেলেটাকে দেখলেই তার মেজাজ খারাপ লাগে।হাত পা নিশপিশ করে। মুখ চোখ শক্ত হয়ে আসে। এবারেও হলো তা। স্বচ্ছ তাও দাঁতে দাঁত চেপে উত্তে করল,
“ দোয়া করি তোর মতো কু’ত্তার কপালে যাতে একটা মেয়েও না জুটে। ”
রোহান হাসে। ফের বলে,
“ এভাবে বলছেন? আপনার বউকে তো আর চাইনি ভাই। ”
স্বচ্ছ ফের শুধায়,
“ যাকেই চাস না কেন তোর মতো ছ্যাঁ’চড়া ছেলেকে আর কে বিয়ে করবে? ”
” অপমান করছেন বড়ভাই? ”
স্বচ্ছও গলা শক্ত করে উত্তর দেয়,
“ একশো একবার করব। ”
কথাটা বলেই হুড়মুড় করে পা বাড়ায় স্বচ্ছ। পথে একবার কিচেনের দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“ আম্মু? বাসায় এসব পোলাপাইনকে কেন ডুকতে দাও? যদি আমার বউ টউ চেয়ে বসে আবার? ”
স্বচ্ছে মা হেসে উঠে ছেলের কথা শুনে। শুধায়,
“ চেয়ে বসলেই তোমার বউ চলে যাবে না স্বচ্ছ। আপাতত ও অতিথি হিসেবেই এসেছে বুঝলে? ”
স্বচ্ছ বুঝদ্বার ছেলের মতো গম্ভীর গলায় বলল,
“বুঝলাম। কিন্তু এ ছেলেকে তাড়াতাড়ি বিদায় করো বলে দিলাম। ”
অতঃপর আর এক মুহুর্তও দেরি না করে দ্রুত গেল নিজের ঘরে। রুমে নিজের একমাত্র নারীটির অস্তিত্ব না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে রয়। ঠিক তার পরমুহুর্তেই দেখা গেল ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বেরিয়ে এল তার একমাত্র বউটি। পরনে হালকা নীল রংয়ের একটা সুতির শাড়ি যার আঁচলটা গুঁজে রাখা আছে কোমড়ে। চুলগুলো মুঁছড়ে রেখেছে তোয়ালে দিয়ে।স্নিগ্ধ মুখটায় বিন্দু বিন্দু পানির কণা। স্বচ্ছ পলক না ফেলেই চেয়ে থাকে। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় একদম সুহার সামনেই৷ অতঃপর সুহার স্নিগ্ধ আর্দ্র কোমড়ের ত্বকটায় হাত ছুঁইয়ে সর্বপ্রথম শাড়ির আঁচল মেলল। পরমুহুর্তেই তোয়ালে ছেড়ে মেলে দিল ভেজা চুল গুলো। স্বচ্ছ হাসে। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ সকাল সকাল গোসল সারলে? কারণ কি শুনি সুহাসিনী? ”
সুহা আকস্মিক ছোঁয়ায় হতবিহ্বল হয়ে শিউরে উঠলেও স্বচ্ছর সামনে দেখাতে চাইল না যেন। কেমন করে চেয়ে বলে উঠে,
“ আপনি যেমন কোন কারণ ছাড়াই আজকাল সকাল সকাল না বলে হাওয়া হয়ে যান তেমনই সকাল সকাল গোসল করতে ও নিশ্চয় কোন কারণ লাগে না? ”
স্বচ্ছ ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে৷ আজও না বলে বেরিয়ে যাওয়াতে বোধহয় রাগ করেছে তার বউ। বিষয়টা ভেবে হেসেই কোমড় আঁকড়ে একটানে নিজের কাছে নিয়ে নেয় স্বচ্ছ। ঝুঁকে গিয়ে সুহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে শুধায়,
“ তাই বলে এত ভোরে? আমাদের মাঝে নিশ্চয় কিছু হয়ে উঠে নি বলো?
কথাটায় স্পষ্ট রসিকতা। সাথে স্বচ্ছর মুখে মিটমিট করা চাপা হাসি! সুহা সেদিক পানে তাকিয়েই লজ্জায় লাল হয়ে যেতে যেতে শুধায়,
“ অস্বচ্ছ মনমানসিকতা! ”
স্বচ্ছ ঠোঁট কাঁমড়ে শুধায়,
“ স্বচ্ছ হয়ে লাভ কি? স্বচ্ছকে তো ভালো টালো বাসো না খুব করে। ”
সুহা এবারে তড়াক করে চায়। স্পষ্ট স্বরে বলে,
“ অস্বচ্ছ হয়ে কত মেয়ের প্রেম কুড়িয়েছেন মনে হচ্ছে? ”
স্বচ্ছ আপসোস করে বলে,
“ কত মেয়ে? একটা মেয়েরই তো প্রেম কুড়াতে পারলাম না সুহাসিনী! কপাল খারাপ আমার। ”
“কে বলল পারেননি? আপনি যখন দেশের বাইরে ছিলেন এই পাড়ার অনেক মেয়র কাছেই তো আপনার রূপের প্রশংসা শুনেছি। ধারণা অনুযায়ী তারা রীতিমতো আপনার প্রেমে হাবুডাবু খাচ্ছিল। আবার আমার ফ্রেন্ডরাও তো আপনাকে দেখে আপনার রূপের কত গুণগাণ গাইল!”
স্বচ্ছ করুণ চাহনিতে তাকাল। কোমড় আঁকড়ে চেপে ধরে সেভাবেই বলে,
“ শুধু গাইলে না তুমি। নিষ্ঠুর! ”
সুহা সরতে চায়৷ কিন্তু পারে না। উত্তরে বলে,
“তাতে কি? মেয়ের কি অভাব আছে প্রশংসা করার? ”
স্বচ্ছ ভ্রু নাচিয়ে শুধায়,
“ এখন কি আমার উচিত ওদের প্রেমগুলো কুড়িয়ে নেওয়া? ”
সুহা মুহুর্তেই জানাল,
“ কেন উচিত নয়? ”
“ শিওর? ”
সুহা ত্যাড়া স্বরে উত্তর করে,
”অবশ্যই শিওর! পারলে আমি সহ সাহায্য করব।”
স্বচ্ছ ঠোঁট চেপে হাসে। বলে,
“ থাক, লাগবে না। বুঝে গেছি। ”
“ ভালো। এবার ছাড়ুন। বাইরে যাচ্ছি। ”
কথাটা বলেই সুহা স্বচ্ছর হাত সরিয়ে চলে যেতে লাগছিল তখনই ফের কোমড় চেপে ধরল স্বচ্ছ। শরীরের সাথে মিশিয়ে রেখে শুধাল,
“ উহ, যাবে না।মাত্র গোসল সেরে শাড়ি পড়ে তো একদমই যাবে না রুমের বাইরে। ”
সুহা বুঝে উঠে না। বাইরে কি এমন আছে যে যাওয়া যাবে না?আশ্চর্য! ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে বলে উঠে,
“ কেন? আম্মুকে বলেছিলাম গিয়ে নাস্তা বানাব, তারপর ছুটির কাছে যাব৷দেরি হয়ে যাবে তো নাস্তা বানাতে না গেলে। ”
স্বচ্ছ সেভাবেই থেকেই জানাল,
“ দরকার হলে আজ নাস্তা বানানো হবে না, তবুও যাবে না। ”
” এটা কি ধরণের পাগলামো দেখাচ্ছেন? যেতে হবে স্বচ্ছ। ছাড়ুন। ”
” ওকে, যেতে পারো। শাড়ি চেঞ্জ করো। ”
সুহা কপাল কুঁচকায়। বলে,
“ মানে?”
“শাড়ি খুলবে তারপর যাবে…”
সুহার ইচ্ছে হয় স্বচ্ছর মাথা ফাঁটাতে। কত যত্ন করে সে শাড়িটা পরেছে তাও শুধুই স্বচ্ছর জন্য। স্বচ্ছর থেকে শাড়ি সাঁজের কোন প্রশংসা পাবে বলে। অথচ স্বচ্ছ কিছু তো বললই না বরং শাগি চেঞ্জ করতে বলছে। আচ্ছা? সুহাকে কি শাড়িতে খুব বিশ্রী দেখায়?খুব খারাপ লাগে? স্বচ্ছ এমন কেন করে?সুহাকে ভাবতে দেখে স্বচ্ছ ফের গম্ভীর দৃঢ় স্বরে বলে,
“কি হলো? চেঞ্জ করে আসো। ”
সুহা নরম স্বরে শুধায়,
“ জরুরী কি চেঞ্জ করাটা?”
“ অবশ্যই। ”
সুহার জেদ হলো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল সে আর শাড়ি পরবে না দ্বিতীয় কোনদিন। বলল,
“ ঠিক আছে! ”
কথাটা বলেই দ্রুত ওয়াশরুমে গেল। ভেজাচুলগুলোই হাতখোপা করল বিরক্তি নিয়ে। কান্নায় টলমল করছে কেন জানি না চোখজোড়া।তবুও কান্না দমাল সুহা। অনেকটা সময় নিয়ে নিজেকে ওয়াশরুমের আয়নায় দেখে খুঁত বের করতে লাগল?কোথায়? শাড়িতে পরে এতোটা তো বাজে লাগছে না তাকে৷ তাহলে?সুহা দাঁতে দাঁত চাপে। চোখ বুঝে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক মুহুর্তেই পরন থেকে শাড়িটা খুলে নিয়ে টের পেল সে জামা আনে নি পরার জন্য। হুড়মুড় করেই চলে এসেছে।সুহা ছোটশ্বাস ফেলে এবারে শাড়িটা দিয়ে কোনরকমে শরীর জড়িয়ে বের হয়ে এল। উদ্দেশ্য জামা নিয়ে যাওয়া। স্বচ্ছ তা দেখে ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
“ কি হলো?চেঞ্জ করলে না? ”
সুহা নিরস স্বরে উত্তর করে,
“ করছিলাম, ড্রেস নিয়ে যাইনি। এই কারণে”
কথাটা বলেই আলমারি থেকে ড্রেস নিতে যায়। স্বচ্ছ তাকিয়ে দেখে সুহা কোনভাবে শাড়িটা জড়িয়েছে কেবল। পিঠময় এবং পেটের কিছুটা অংশ দৃষ্টিতে আসছে যার দরুণ। স্বচ্ছ হাসে। শুকনো ঢোক গিলে ততক্ষনে। দুয়েকবার নজর সরিয়ে পরমুহুর্তেই কি বুঝে এগিয়ে গেল। আচমকাই সুহার পেছনে গিয়ে কানের কাছে ফিসফিস স্বরে বলে,
“ তুমি বোধহয় খেয়াল করোনি যে তোমার পিঠময় শাড়ি জড়াও নি সুহাসিনী। ”
কথাটা বলেই সুহাকে কোলে তুলে স্বচ্ছ।আর তখনই কোনরকমে জড়িয়ে রাখা শাড়িটা গড়িয়ে পড়ল ফ্লোরে। মুহুর্তেই ব্লাউজের নিচাংশে দৃশ্যমান হলো সুহার ফর্সা পেট৷ স্বচ্ছ হাসে সেদিকে তাকিয়ে। কিছু বলতে নিতেই সুহা দ্রুত হাত রাখে স্বচ্ছর চোখে। বলে,
“এবার কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে স্বচ্ছ। চেঞ্জ করতে বলেছেন করতেই নিচ্ছি.. ”
স্বচ্ছ ঠোঁট চেপে হাসে। কিছুই বলে না। ওভাবেই সুহাকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শোয়াল। নিজেও কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে সুহার কানের কাছে চুলগুলো ফুঁ দিতেই সুহা বলে,
“ কি করছেন? ”
স্বচ্ছ ঠোঁট ছোঁয়ায় সুহার গালে। কানের কাছে কেমন করা স্বরে বলে,
“ নিজেকে সামলানো কঠিন ঠেকছে আজকাল। কি করা উচিত আমার? সামলানো নিজেকে?নাকি যা মন চাচ্ছে তাই করা? ”
স্বরটা কেমন ঠেকে। কন্ঠটা অন্যদিনের তুলনায় ভিন্ন। সুহা লোমকূপ অব্দি শিহরিত হয়। কিছুটা কম্পিত স্বরে শুধায়,
“ হ্ হু?”
স্বচ্ছ এবারে গভীর দৃষ্টিতেই তাকায়। বলে,
“ তোমাকে প্রয়োজন সুহাসিনী। ”
এবারে সুহার কথা আসতে চাইল না। বুকের ভেতর তীব্র কম্পন। সব ঝগড়ক, কঠিন স্বর তখন মিইয়ে গেছে। বহু কষ্টে তবুও শুধাল,
“ ক্ কি?”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই মুখ ডুবায় সুহার গলার দিকে। নিজের ঠোঁটের এবং খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ সুহার গলার দিকে জানান দিতে দিতে শুধায়,
“ তোমার মাঝে হারাতে….”
ঠিক তখনই বাইরে থেকে স্বচ্ছর মায়ের ডাক শোনা গেল,
“ সুহা!”
সুহা চোখ গোল গোল করে তাকায়। সচেতন স্বরে বলে উঠে,
“ আম্মু ডাকছে। ”
স্বচ্ছর নড়চড়ে নাম নেই৷ সেভাবেই মুখ ডুবিয়ে আছে সুহার গলায়। নিজের মনোযোগ থেকে এইটুকুও নারসরে বরং বলে,
“ আম্মু জানে তার পুত্রবধূ এখন ব্যস্ত থাকবে৷ ”
সুহার তখন মরন দশা যেন। চোখ বুঝে আছে। পুরুষালি অধরের স্পর্শে অজানা অনুভূতির যোগান। তবুও রোধ হওয়া কন্ঠস্বরে জানায়,
“ ছে্ ছেড়ে দিন.. ”
স্বচ্ছ মুখ তুলে তাকায়। ঠোট কাঁমড়ে বলে,
“ ছেড়ে দিব?”
সুহা ঘনঘন শ্বাস ফেলছে৷ অস্থির ঠেকছে তার। বলল,
“বাইরে যাব আমি।”
স্বচ্ছ বাঁকা হাসে। বলে,
“ আমায় এভাবে সিডিউসড করে যাব আমি বলাটা মানাচ্ছে সুহাসিনী?”
কথাটা বলেই স্বচ্ছ ফের ঠোঁট ছোঁয়াল সুহার গলায়।দুয়েকটা চুম্বন এঁকে শক্তপোক্ত এক কাঁমড় বসাতেই ওপাশ থেকে দরজার আওয়াজ আসল। শোনা গেল,
“ ভাইয়া? ”
স্বচ্ছর মেজাজ খারাপ লাগে। ওভাবে থেকেই বলে,
“ কি? ”
“ ভাবির বান্ধবীরা এল তো। ছুটি আপুর বাসায় যাবে না? ঐ কারণে আম্মু বলল ডেকে দিতে… ”
স্বচ্ছ বিড়বিড় স্বরে শুধায় এবারে,
“ খালি ডিস্টার্ব!”
কথাটা বলেই ভদ্রবাচ্চার মতো উঠে দাঁড়াল সে। দরজা খুলে নিয়ে সিয়াকে দেখে যেতে যেতে বলল,
“ তোর ভাবী আসছে, যা।”
সিয়া তবুও গেল না। যেন খবরটা তার ভাবিকে দেওয়া লাগবেই লাগবে। পা বাড়িয়ে রুমে আসতেই দেখা গেল সুহা শাড়ি পরার চেষ্টা চালাচ্ছে। সিয়া মিনমিনে স্বরে জানায়,
“ ভাবি? তুমি শাড়ি পরছো? ”
সুহা কোনকিছু না করেও চোরের মতো থাকল। লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসছে অকারণেই। এই যে সিয়াকে দেখল এখনও মনে হচ্ছে সে ধরা পড়ে গিয়েছে। সাক্ষাৎ চোর যেন সে। সুহা কাঁপা স্বরে বলল,
“ হ্ হু?শাড়ি পরতে পারছিলাম না আসলে তাই। ”
সিয়া মেনে নিল। পরমুহুর্তেই বোম ফাটানোর ন্যায় বলে উঠল,
” তোমার গলায় লাল… ”
সিয়ার পুরো কথাটা শেষ হওয়া লাগল না৷ তার আগেই সুহা সেখানটা হাত চেপে ধরল যেখানটা স্বচ্ছ কামঁড় বসিয়েছে। দ্রুত তোতলানো স্বরে বলে উঠল,
” ক্ কি?কই?কিছু না,কিছু না। পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। ”
স্বচ্ছ তখন রুমে আসছিল ফের৷ সুহার মিথ্যে রূপী বোকা বোকা কথা শুনে তার পেট ফেঁটে হাসি ফেল যেন। সিয়া ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে তখনও। পড়ে গিয়ে কেউ গলায় ব্যাথা পায়?গলায় লাল দাগ হয়?সিয়া অবাক হয়ে বলে,
প্রেমের সমর পর্ব ৩৬
“ পড়ে গিয়ে গলায় ব্যাথা পেয়েছো ভাবি?অদ্ভুত!”
স্বচ্ছ হাসিতে ফেটে পড়ার অবস্থা। তবুও বহু কষ্টে হাসি চাপিয়ে সিয়াকে শুধাল,
“ না না! তোর ভাবির এলার্জির প্রবলেম তো তাই এমন হয়েছে। ”