প্রেমের সমর পর্ব ৭
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
দিন চার পার হলো। সুহা এই চার দিনে কলে বা ম্যাসেজে স্বচ্ছর সাথে কোন যোগাযোগ করে নি৷ এমনকি বেলকনি থেকে কোন গানের সুর ও ভেসে আসে নি স্বচ্ছর কানে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে না, মেয়েটা কি হাওয়া হয়ে গেল? আশ্চর্য! রোজ রোজ রাতে সে বেলকনিতে এসে বসে থাকে। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ায়। অপেক্ষায় থাকে নিচ থেকে বোধহয় গিটারের টুংটাং সুর আসবে কিংবা মেয়েলি গলার অস্তিত্ব! অথচ স্বচ্ছকে হতাশ করে দিয়ে কিছুই আসে না। এমনকি একটা সিঙ্গেল ম্যাসেজ অব্দি আসে না সুহার থেকে৷ স্বচ্ছ কতগুলো কল করেছে , কতগুলো ম্যাসেজ দিল! একটা ম্যাসেজও সিন হলো না, একটা কলেরও রেসপন্স এল না৷ মেয়েটা তাকে ইগ্নোর করছে নাকি? স্বচ্ছ বুঝে উঠে না। তবে হা হুতাশ করতে করতে বোনের কাছে যায় অবশেষে। উশখুশ করতে করতে সিয়াকে বলে উঠে,
“ সিয়া? তোর ভাবির কি কিছু টিছু হয়েছে? দুই মাস টানা কলে ম্যাসেজে জ্বালিয়ে এখন হাওয়া হয়ে গেছে যে? বেঁচে আছে তো মেয়েটা?”
স্বচ্ছর কথা শুনে মনে হলো সে অতি সিরিয়াস। কিন্তু সিয়া ভাইকে অতি বাউন্ডুলে ছেলে হিসেবে জানে বলেই কথাগুলো সিরিয়াসলি নিল না। ফোঁড়ন কেঁটে বলল,
“ মরে গেলে তুমি খুশি হবে? ”
স্বচ্ছ নাকোচ স্বরে মুহুর্তেই বলল,
” ছিঃ! মানুষ আমায় মরা বউয়ের জামাই বলবে না? ”
সিয়া খুব ব্যস্ত এমন ভঙ্গিতেই ফের বলল,
“ বললেই বা কি? ”
স্বচ্ছ বোনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পকেট থেকে দুটো কিটক্যাট চকলেট বের করে বোনের হাতে দিয়ে অনুরোধ স্বরে শুধায়,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ বোন না, বলে দে না বউ কই আমার? ”
“ জানো তো তুমি, নিচের বাসাতেই থাকে ভাবি। ”
স্বচ্ছ হতাশ শ্বাস ফেলে জানায়,
” সেটা তো জানি, কিন্তু বউ কোনটা আমার? ”
” এটা বললে ভাবি কথা বলবে না আমার সাথে। ”
স্বচ্ছ কপালে ভাজ ফেলে। মুহুর্তেই জিজ্ঞেস করে,
” তুইও এই প্ল্যানের অংশ?”
“ হ্যাঁ।”
স্বচ্ছ বোনের উপর রাগ করেছে এমন ভাব করে বলল,
“ ঠিকাছে, বলতে হবে না। বিয়ের কোন ছবি তোলা হয়নি আমাদের? তাই দেখা। ”
এবারে সিয়া উত্তর দিল না। কিন্তু পেছন থেকে তিহান এসে উত্তর দিল,
” তোলা হয়েছে, তবে তোমায় দেখানোর নিয়ম নেই স্বচ্ছ ভাই। ”
স্বচ্ছ ভ্রুঁ উঁচু করে তাকায় তিহানের দিকে। বলে,
“ তুইও একই দলে নাকি? ”
” অবশ্যই! ”
স্বচ্ছ অবাক, বিস্মিত এমন ভাব ধরে বলে,
“ তোরা কার ভাই বোন? আমার নাকি সুহাসিনীর? ”
সিয়া তিহান দুইজনই বলে উঠল,
” অবশ্যই তোমার। ”
” তাহলে ঐ মেয়ের পক্ষে কেন তোরা? ”
“ কারণ সে আমাদের ভাবি! ”
স্বচ্ছ চোখ কেমন করে তাকায়। যেন এই বিশ্বাসঘাতকতা সে মেনে নেবে না তাই বুঝাল সে দৃষ্টিতে। বিরক্ত হয়ে পা ফেলে নিজের রুমে আসতেই ফোনে কল এল। সাদাফের কল। স্বচ্ছ কল তুলতেই ওপাশ থেকে সাদাফ বলল,
“ দোস্ত?হুবুহু একই দেখতে হাত। তোর বউকে পেয়ে গেছি দোস্ত। ”
স্বচ্ছ এক মুহুর্তে বিশ্বাস করে উঠতে না পেরে বলল,
“ মানে?”
” ঐ বাসারই একটা মেয়ে। আমি আর নিধি বাইরে গিয়েছিলাম না? ফেরার পথে মেয়েটাকে পেলাম।হাত একদম একইরকম দেখতে। তুই নিচে আয় দোস্ত। ”
স্বচ্ছ বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। সত্যিই সুহাসিনীকে পাওয়া গেছে? এত সহজেই? স্বচ্ছ বিছানায় শুঁয়ে থাকা আবিরকে বলেই দ্রুত হাঁটে,
“দোস্ত! বউ পেয়ে গেছি। ভাবি দেখতে হলে তাড়াতাড়ি পিছু আয়।”
আবির অলস চোখে তাকিয়ে চোখে চশমা চাপায়। তারপর আস্তে আস্তে পা বাড়ায়। অপরদিকে স্বচ্ছর পা তখন দ্বিগুণ চলছে। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতেই চোখে পড়ল একটা মেয়েকে। এই মেয়েটাকে সে সেদিন ঐ বাসার চারজন মেয়ের মাঝে দেখেছিল। স্বচ্ছ সঙ্গে সঙ্গেই তাকায় মেয়েটার হাতের দিকে। হুবুহু একই হাত দেখে মুহুর্তেই বলে,
“ তুমিই সুহাসিনী? ”
মেয়েটা সোজাসুজিই উত্তর দিল,
“ না!”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গেই বলল,
“ তাহলে কে আপনি? ”
” যেই হই! আমায় আটকে রেখেছেন কেন ভাইয়া? আমি কি আ’সামী?”
সাদাফ জোর গলায় বলল,
“ আপনি আমাদের বন্ধুর বউ। ”
স্বচ্ছর পছন্দ হলো না সাদাফের কথাটা। মেয়েটাই যে সুহাসিনী তা তো এখনো প্রমাণিত নয়।তার আগেই বন্ধুর বউ বলার দরকার ছিল? স্বচ্ছ বিরক্ত হয়ে তাকাতেই মেয়েটা উত্তরে বলল,
” আমি তো জীবনে বিয়েটাই করলাম না ভাই। এভাবে বিবাহিত ট্যাগ দিয়ে দিবেন না প্লিজ!তবে আপনার বন্ধু দেখতে কিউট আছেন। ক্রাশ খেলাম। ”
স্বচ্ছকে দেখে ক্রাশ খাওয়া অসম্ভব ব্যাপার নয়। তবে তা নিজ মুখেই এভাবে বেহায়ার মতো বলে ফেলবে তা নিশ্চয় স্বচ্ছর বউ নয়? স্বচ্ছ সাদাফের কান টেনে ধরল। একপাশে নিয়ে এসে বিড়বিগ স্বরে বলল,
“ এই বেহায়া মেয়ে আমার বউ হবে? মনে হলো কি করে তোর? ”
সাদাফ কপাল কুঁচকে বলে,
“একটা শান্তশিষ্ট, সেও তোর বউ হবে না। আরেকটা বেয়াদব, সেও তোর বউ হবে না। আরেকটা বেহায়া, সেও তোর বউ হবে না। আসলে তোর বউটা কে ভাই? ”
নিধি দুই বন্ধুকে ফিসফিস করতে দেখেই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল,
” এটা তোমার হাত আপু? ”
মেয়েটা সুহার শেখানো বুলিই আওড়াল,
“ না, এটা সুহার হাত। ”
“ তাহলে তোমার হাতের সাথে মিলছে কেন আপু?”
মেয়েটা মোবাইলে হাতের ছবি গুলো দেখতে দেখতেই বলল,
“ বুঝে উঠছি না ঠিক।”
মেয়েটা যখন এই কথাগুলো বলছিল মোবাইলে ছবি দেখতে দেখতে ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হলো আবির। মেয়েটাকে দেখেই বিস্মিত হয়ে স্বচ্ছকে বলল,
” এই শা’লা! এ কি করে তোর বউ মানে আমার ভাবি হয়?ঐটুক পিচ্চি! ওর আবার বিয়ে হলো কবে?বিয়ে হলে তো আমি জানতামই! ”
মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গেই মাথা তুলে চাইল। যেন বহুদিন পর এই কন্ঠ শুনছে সে। ফ্যালফ্যাল করে কন্ঠের মালিকের দিকে তাকাতেই আবির চোখ গরম করে তাকাল। বলল,
“ ছুটি? তুই এখানে? ”
ছুটি তখনও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।আবির ভাই?এতদিন পর? স্বপ্ন নয় তো? ছুটি হাতে চিমটি কাঁটে। যখন বুঝতে পারে এটা বাস্তব তখনই খুশিতে চকমক করে উঠে মুখ। বলে উঠে,
“ আবির ভাইয়া? আপনি না স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ ফুরুৎ হয়ে গেলেন আমার যন্ত্রনায়? তারপর তো আর যোগাযোগ করেননি। একদম হাওয়া! কত খুঁজেছি আপনাকে।”
“ তোর যন্ত্রনায় না। স্কলারশিপ পেয়েছিলাম তাই মূলত দেশ ছেড়েছিলাম। তুই? বাসা ছেড়ে এখানে থাকিস নাকি? ”
ছুটি হেসে বলে,
“ কি করব বলুন! বাসায় থেকে তো আর আপনার দেখা মিলে না এখন। আর বাসা থেকে ভার্সিটিও দূরে হয়। তাই এখানে থাকা।”
আবির ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠে,
“ এক মিনিট,তুই স্বচ্ছর বউয়ের ফ্রেন্ড নয়তো?মানে স্বচ্ছর শালিকা?”
” না, না! আপনার বউ হবো তো ভবিষ্যৎ এ !মানে উনার ভাবি হবো।”
সাদাফ বিড়বিড়িয়ে বলে,
“ কি ফ্লার্টবাজ মেয়ে রে বাবাহ! ”
স্বচ্ছ হাসে। আবিরের মুখটা দেখার মতো লাগছে।এগিয়ে এসে বলে,
” আচ্ছা বলুন,সুহাসিনীকে চিনেন আপনি?”
“ চিনব না কেন? অবশ্যই চিনি। ”
সাদাফ বলল,
” আমাদেরকে চেনাতে পারবেন? ”
ছুটি আবিরকে ইঙ্গিত করে বলে উঠে,
” আপনার বন্ধুকে দিবেন? তাহলে চিনিয়ে দিব! ”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গেই আবিরকে ঠেলে দিয়ে বলে,
” দিয়ে দিলাম।”
“ উহ, এভাবে দিলে হয় না। আপনার বন্ধু আমার পেছনে পেছনে ঘুরবে, ইম্প্রেস করবে তারপর বিয়ে করবে তারপর সংসার…! ”
আবির বাকি কথা না বলতে দিয়েই বিরক্ত স্বরে বলে,
“ থাক , তোকে আর চিনিয়ে দিতে হবে না। বাসায় যা এখন বিচ্ছু। ”
ছুটি ঠোঁট উল্টাল। পরমুহুর্তেই ওদের সামনে দিয়ে চলে গেল। সাদাফ আর স্বচ্ছ তখন আবিরের ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। সন্দেহী দৃষ্টি। সাদাফ বলল,
“ দোস্ত কাহিনী কি? কবে থেকে? মেয়েটা তোর উপর ফিদা! তুই চাইলে এই মেয়েরে দিয়ে স্বচ্ছর বউ এর খোঁজটা বের করে নিতে পারিস। ”
আবির মানল না। বলল,
“ স্বচ্ছর বউয়ের খোঁজ নিতে ওর দুর্বলতাটা ব্যবহার করব? ”
” সমস্যা কি? সিরিয়াস প্রেম তো আর করছিস না। ”
আবির নাকোচ করে বলল,
” প্রথমত আমি স্বচ্ছ না। দ্বিতীয়ত ও একটা বোকা মেয়ে। বরাবরই!পরে সামলাতে পারবে না। ”
সাদাফ বিরক্ত হয়ে বলে,
” আরেহ দুদিনে কি গভীর প্রেম হয়ে যাবে পাগল! আমরা ঠিক পরে বুঝিয়ে দিব ঐ মেয়েরে। ”
সুহা গুণে গুণে চারদিন কথা বলে নি স্বচ্ছর সাথে। কারণ আছে। সেদিন স্বচ্ছ তাকে একটা মেয়ের হাত ধরে রাখা ছবি দিয়েছে। ঠিক যেভাবে সে এতকাল ছবি দিয়ে জ্বালিয়েছে স্বচ্ছকে ঠিক সেরকমই করতে চাইল যেন স্বচ্ছ। পরপর বেশ কয়েকটা ছবিও পাঠাল কপোত কপোতি টাইপ। ছবিগুলো স্বচ্ছর আর নিধির। সুন্দর! কাপল কাপল লাগছিল। স্বচ্ছ আরোও একটা ছবি দিল যাতে স্বচ্ছর হাতে একটা রিং আর নিধির হাতে একটা রিং জ্বলজ্বল করছিল। সাথে সে ছবিটায় লিখল,
“ তোমার ধারণাই ঠিক সুহাসিনী। আমরা এইংগেইজড!তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর তোমায় আমার পিছনে ঘুরিয়ে মিশন কম্প্লিট করেই আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করব। ”
সুহা সে ম্যাসেজটা দেখার পরও বেশ দাম্ভিকতার সাথে রিপ্লাই করেছে যাতে স্বচ্ছ না বুঝে যে সে এসব দেখে কষ্ট পেয়েছেে।স্বচ্ছও ভেবেছিল সব নরমাল। অথচ পরদিন থেকেই যে সুহা তাকে ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে সে জানত না৷ হু, সুহা সত্যিই স্বচ্ছকে ভুলে যাওয়র সিদ্ধান্ত নিল মনে মনে। সুহার বাবা নেই।মা আর দাদা-দাদী আছে। দাদা দাদী সেকেলে মানুষ। তিনজনই সমানে এই চারবছরে তাকে উপদেশ দিয়েছে এই সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসতে। পারিবারিক আলোচনা করে ডিভোর্স দিতে। সুহা বহুবার বুঝিয়েছে সে স্বচ্ছকে ভালোবাসে। তবুও পরিবার তো! মেয়ের ভালোর কথা ভেবেই পারিবারিক ভাবে আলোচনা করেছে ডিভোর্সের বিষয়ে। শেষমেষ তো একটা ছেলেও দেখেছিল তার দাদা দাদী। যার দরুণ সুহা না পেরে স্বচ্ছর সাথে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিল। ইচ্ছে করেই স্বচ্ছকে ফেরানোর জন্য ছুটির হাতের ছবি পাঠাত অন্য একটা ছেলের সাথে। সুহা ভেবেছিল স্বচ্ছ বুঝি শুধরে যাবে।অথচ স্বচ্ছ শোধরানোর নয়।আজীবন সে ছন্নছাড়াই থাকবে। সুহা পরিবারকে বহু বুঝানো সত্ত্বেও পরিবার এখন তাকে শুধায়,
“ ছেলে দেশে ফিরেছে। তবুও সংসার নিয়ে সিরিয়াস সে? তোমায় নিয়ে সিরিয়াস? তবুও তুমি ঐ ছেলের জন্যই পড়ে থাকবে সুহা?”
সুহা নিজেকেই একই প্রশ্ন গুলো করে। এত এত হাসি তামাশার ভীড়ে এটা তো সত্যিই যে স্বচ্ছ তাকে নিয়ে সিরিয়াস না। উল্টে অন্য একটা মেয়র সাথে সম্পর্কে আছে। সুহা হতাশার শ্বাস ফেলে। নিচে ছুটিকে এভাবে আটকে রেখেছিল শুনে স্বচ্ছকে কল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সঙ্গে সঙ্গেই বেলকনি দিয়ে চোখে পড়ে নিচে হাঁটতে থাকা নিধি আর স্বচ্ছকে।নিধি সুন্দর! স্বচ্ছর পাশপাশি হাঁটলে বেশ সুন্দর মানায়।তবে এই সুন্দর দৃশ্যটাও সুহার কাছে বিশ্রী লাগল। রাগ হলো তার। গা জ্বলছে যেন। কেন এমন হচ্ছে জানে না। তবে রাগে গিজগিজ করতে করতেই নিজের রুমে গেল সে। স্বচ্ছকে কল দিল।প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কল রিসিভড হলো।।টানটান স্বরে বলল,
” আবারও হাত চ্যাক করছিলেন বন্ধুরা মিলে? বউ খুঁজতে বেহায়ার মতো বন্ধুদের লে’লিয়ে দিয়েছেন? লজ্জা করে না? ”
স্বচ্ছ দুদিন পর বউয়ের ফোন পেয়ে পাল্টা রাগ নিয়ে বলে,
” দুদিনে এতগুলো কল, এতগুলো ম্যাসেজ চোখে পড়ে নি তোমার? ইগ্নোর করছিলে আমায়?কোন সাহসে? ”
সুহা তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল,
” আমি ইগ্নোর করলে আপনার কিছু যাওয়া আসার কথা নয় স্বচ্ছ। আগে বলুন, যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিশ্চায়তা নেই সে সম্পর্কে জড়িত মেয়েটাকে খোঁজার এত প্রয়োজন কি? আপনি তো আর আমার সঙ্গে সংসার করবেন না। তাই না? তাহলে হাতের ছবি নিয়ে বেহায়ার মতো হাত দেখছেন কেন মেয়েদের? ”
স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কেন খোঁজ করছে মেয়েটার? কেন? এর উত্তর বোধ হয় নিজের কাছেও নেই। তবে ভেতরে ভেতরে ক্রমশ মেয়েটাকে দেখার আগ্রহ প্রবল হচ্ছে। আজকাল মেয়েটাকে কল্পনায় ভাবার চেষ্টাও করছে সে। এমনিক মেয়েটা ইগ্নোর করলে মেনে নিতে পারছে না। এই যে দুটো দিন এত চাওয়া সত্ত্বেও সে যোগাযোগ করতে পারেনি এতে তার কেমন কেমন অস্থির লাগছিল যেন। অসহায় লাগছিল। বলল,
“ জানি না,তবে খুব ভুল না হলে আমি এটুকু নিশ্চিত হাত গুলো ঐ ছুটি মেয়েটারই।তুমি আমায় অন্য মেয়ের হাতের ছবি দিয়ে এসেছো এতকাল? ”
সুহা বলল,
“ তো?”
“ তুমি সবকিছুই একটা জাল দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছো সুহাসিনী। ”
“ রাখলাম। ”
স্বচ্ছ বলল,
” উচিত নয় এটা। ”
সুহা ছোটশ্বাস ফেলে বলে,
”অনুচিত লাগছে না আমার। আমি নতুন কিছু ভেবেছি স্বচ্ছ। মুক্তি দিন। এসব খেলা খেলা আর ভাল্লাগছে না। ”
” মুক্তি দেওয়ার জন্য তো খুুঁজছি না তোমায়।”
সুহক হেসে উঠে। বলে,
” ঘর বাঁধার জন্যও তো খুঁজছেন না। বিজয়ী হওয়ার জন্য খুঁজছেন তাই তো?আসলে আপনিই বিজয়ী। আপনার প্রতি আমার এখনো অনুভূতি আছে। এবার খুশি তো?নিজেকে বিজয়ী ভেবে নিশ্চয় আনন্দ হচ্ছে?যান, এবার একটু খুশি হয়ে পুরোপুরি বিচ্ছেদের কথাটা নিয়ে ভাবুন।প্লিজ! ”
স্বচ্ছ বোকার মতো বলল,
“ মানে? ”
সুহা এবারে চুপ থাকে। ক্লান্ত স্বরে বলে,
“ অলওয়েজ এটা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে যাচ্ছে যে আপনি আমায় ভালোবাসেন না স্বচ্ছ। ভালোবেসে আমি হেরে গেছি আর আপনি আমাকে পাগল বানিয়ে জিতে গেছেন। সবাই জানে এটা। এমনকি এখনো ইগোর খেলায় নেমেছেন। আমাকে সবাই বলছে আপনাকে ছেড়ে দিতে। এমনকি আপনার বাবা মাও! সবার কাছে এই একটা কথা শুনতে শুনতে আমি এখন ক্লান্ত অনুভব করছি স্বচ্ছ। প্লিজ! সম্পর্কটা পুরোপুরি শেষ করুন।আমায় মুক্তি দিন। ”
স্বচ্ছর রাগ জম্মাল নিজের মা বাবার প্রতি। নিজের ছেলের সংসার নিজেরাই ভাঙ্গতে চাইছে?স্বচ্ছ মনে মনে রেগে গিয়ে মা বাবাকে দোষারোপ করল। বলল,
“ দিব না। তোমার বোধহয় মন খারাপ সুহাসিনী। কল রাখো। ”
“ আমি সত্যিই বলছি স্বচ্ছ, ইতি টানুন এই সম্পর্কের।আর শুনুন?”
” বলো…”
সুহা বলল,
“ আপনার জন্য কেনা একটা জিনিস আমার কাছে চারবছর হলো পড়ে আছে। দিয়ে দিতে চাইছি তা আপনাকে। ”
স্বচ্ছ অন্যমনস্ক স্বরে বলে,
“ হু?”
সুহা ঠোঁট ভিজিয়ে উত্তর দেয়,
“ গিফ্ট ছিল ওটা।চার বছর আগের।এখনও সচল আছে। আপনি চলে যাওয়াতে আর দেওয়া হয়নি আপনাকে। নিবেন?”
” কেন নয়?”
সুহা উত্তর দেয়,
“ কাল সকালে দিয়ে দিব।”
প্রেমের সমর পর্ব ৬
স্বচ্ছ খুশি হয় একটু যেন। বিয়ের চার বছরে না দেখা বউয়ের থেকে গিফ্ট পাবে? নিশ্চয় তার বিয়ে করা বউ স্বয়ং নিজে এসেই গিফ্টটা দিয়ে যাবে? স্বচ্ছ মনে মনে উচ্ছাসিত হয় এই ভেবে যে এবার হয়ো সুহাসিনী নিজে তার সামনে দেখা দিবে!