প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৯
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
ছুটি যখন রুমে মূর্তির মতো স্থির বসে থাকল তখন ফের বাইরে থেকে আবির নক করল। পরমুহুর্তেই যখন বুঝল দরজা খোলাই আছে তখন পা বাড়াল সে। ছুটিকে তৈরি না হয়ে স্থির বসে থাকতে দেখে ভাবল আগের মতোই রাগ পুষছে। আবির ছোটশ্বাস ফেলে। বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
“ আমার উপর রাগ জেদ যাই থাকুক সরাসরি দেখা, ওভাবে দরজার ভেতর চুপচাপ লুকিয়ে থেকে তো দেখাতে পারবি না। ”
ছুটি চোখের পানি মুঁছে ফিরে চাইল এবারে। স্থির তাকিয়ে থাকে সে প্রিয় পুরুষটার দিকে কান্না পাচ্ছে এখনো তার।আটকাতে পারছে না। ঠোঁটগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। যেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়বে সে এক্ষুনি। ধীর পায়ে পা এগিয়ে বহুকষ্টে সে আবিরের সামনে এসে দাঁড়াল। ফুঁফিয়ে কাঁদতে লেগেও থামানোর চেষ্টা চালায় ঠোঁট কাঁমড়ে। অতঃপর হুট করেই ঝাঁপিয়ে পড়ল আবিরের বুকে। দুই হাতে পুরুষটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বোকা কন্ঠে বলে উঠে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“আপনার প্রতি আমার আর রাগ নেই আবির ভাই। আমি আপনার পাশে ছিলাম না। ঐ মুহুর্তে আম্, আমি আপনার পাশে অব্দি ছিলাম না। জানতাম না পর্যন্ত আপনি কোমায় ছিলেন। আমার ভাগ্যটা ঠিক কতটুকু খারাপ! যদি এখনও আপনি সুস্থ না হতেন? যদি এখনও আপনি কোমায় থাকতেন? আমি তো কোনকালেই জানতে পারতাম না আপনি ঠিক কোন অবস্থায় আছেন,কেমন আছেন।আমার ভাগ্যটা সত্যিই খারাপ। ”
কথাগুলো বলতে বলতেই কাঁদে সে। আবির মৃদু হাসে। মেয়েটা এখনো তার বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। হাতজোড়া আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে তাকে যেন ছাড়লেই সে হারিয়ে যাবে। আবির জানত এই মেয়েটা এমন করবে। আগে থেকেই ধারণা করেছিল বোকা ছুটি সবকিছু জানার পর এমন ভাবেই কাঁদবে তাকে আঁকড়ে ধরে। আর হলোও তাই। আবির এক হাত রাখে ছুটির পিঠে। অপর হাতে ছুটির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মুখ নামিয়ে ছুটির চুলে চুমু দেয়। বলে,
“ কিন্তু আমার ভাগ্যটা খুব ভালো। আমার জীবনে যে আস্ত এক বোকাপাখি আছে ছুটি। ”
ছুটি কাঁদতেই থাকে বোকা বাচ্চার মতো। চোখ লাল টকটকে বর্ণ ধারন করেছে। মুখের অবস্থা বেহাল। ফুলো ফুলো লাগছে কান্নার দরুণ। আবির তা দেখে হাসে। ছুটির থুতনি হাতের আঙ্গুলে ঠেকিয়ে মুখটা উপরে তুলল। গম্ভীর স্বরে বলল,
“ আমার সাদা টিশার্টটা তো তোর নাকের পানি চোখের পানিতে এক হয়ে গেল ছুটি। আমার বুকটা ভিজিয়ে দিলি পুরো।আমি কি এই সুন্দর টিশার্ট টা এইজন্য পরেছি যে তোর চোখের পানি নাকের পানি ওটা বহন করবে বলে? ”
ছুটি ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মুহুর্তেই। কান্না থেমে যায় যেন হুট করেই। আবিরের কথাগুলো শুনেই হঠাৎ দুই হাত পিঁছিয়ে যায়। তাকিয়ে দেখে সত্যিই আবিরের টিশার্টের অনেকাংশ ভিজে চুপসে গিয়েছে। ছুটি একটা টিস্যু পেপার নিয়ে আবিরের টিশার্টটা মুঁছে দিতে গেলেই আবির হাত চেপে ধরে। বলে,
“ তুই কার বোকাপাখি? ”
ছুটি এবারে শান্ত দৃষ্টি ফেলে তাকায়। অস্ফুট স্বরে শুধায়,
“ হু? ”
আবির ফের বলল,
“তুই কি অন্য কারোর নাকি আমার? আমার তো?”
ছুটি চুপ থাকে। আবির আবারও থুতনিতে হাত রেখে বলে,
“কী হলো বল। ”
ছু্টি উত্তর করল,
” হু,আপনার। ”
আবির হাসে। কিছুটা ঝুঁকে বলে,
“তাহলে তোর চোখের পানি নাকের পানিও আমারই। মানে আমার বুকে থাকতেই পারে। যেমনটা তুই আছিস। ”
ছুটি তাকায়। নরম স্বরে বলতে লাগে,
“ আবির ভাই… ”
আবির ভাই? আবির ভ্রু কুঁচকায়। এই মেয়েটাকে বিয়ের পর থেকে কয়বার বলবে তাকে আবির ভাই সম্বোধন না করতে? তবুও ডাকবেই এই মেয়ে। আবির চোয়াল শক্ত করে। মুখ টানটান করে বলে,
“ আবার বল। ”
ছুটি ফের বলতে নিল,
“ আবির ভা…”
আবির থুতনি চেপে ধরে এবারে। মুখ উপর করে। ছুটির চোখ লাল টকটকে। পাতলা মিহি ঠোঁটজোড়া এখনও কাঁপছে।আবির তাকায় মোহিত নজরে। অতঃপর নিজেকে না আটকিয়ে দ্রুত নিজের ঠোঁটজোড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করল নিজের প্রয় নারীটির অধর। আবির কিঞ্চিৎ হুশজ্ঞান হারিয়েই ছুটির অধরে সুখ খুঁজে যেন উম্মাদের মতো। এক হাতের অবস্থান ঠেকে ছুটির ঘাড়ে। অপর হাতে ছুটির কোমড়ে। মেয়েটাতে নাজেহাল করে দিয়ে যখন চুম্বনের সমাপ্তি ঘটাল তখনই আবির নিজের রুক্ষ্মতার প্রমাণ দিয়ে কাঁমড় বসাল ছুটির ঠোঁটে। অতঃপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
“এটা তোর ভাই বলার শাস্তি। বলবি আর ভাই? ”
ছুটি শুনতে পায় না যেন। ঠোঁট জ্বলে তার। চিনচিনে ব্যাথা হয় কাঁমড় দেওয়া জায়গায়। ছুটি হাঁপাতে থাকে। হাঁপাতে হাঁপাতেই হাত রাখে নিজের ঠোঁটে। ব্যাথায় চোখ টলমল করে তার। আবির তা দেখে দুই হাতে মুখ আগলে ধরে। বলে,
“ কেঁটে গিয়েছে? ”
ছুটি ফ্যালফ্যাল করে উত্তর দেয়,
“ রক্ত ও.. ”
আবির দেখে। ঠোঁটের এককিনারায় রক্তের লালাভ চিহ্ণ। খুব জঘন্য কাঁমড়ে যে এই অবস্থা তা বুঝে উঠে আবির ঝুঁকে কিছুটা৷ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
“ একটু বেশি হিংস্র হয়ে গেছি? উম্মাদের মতো স্পর্শ? তোর কষ্ট হচ্ছে খুব? ”
ছুটি তাকায়৷ কেঁদে ফেলবে যেন। আবির তা বুঝে হালকা হাসে৷ ফের সে অধর ক্ষতটায় ঠান্ডা চুমু আঁকল। বলল,
“মনে হতে পারে আমি কিছুটা হিং’স্র হয়ে উঠেছি। তবে আমি আমার এই আচরণের জন্য একটুও দুঃখিত নই৷ সব তোরই শাস্তি। আমার বহুদিনের দূরত্বের যন্ত্রনা প্রণয়ের রূপ নিলে একটু তো তীব্র হবে বোকাপাখি। তাছাড়া তোর ঠোঁট ওভাবে কাঁপছিল কেন? নয়তো আমি মোটেও ওভাবে ঝাপিয়ে পড়তাম না। আমায় ওভাবে টানছিল কেন তোর ঠোঁটজোড়া বল? দোষ তো তোর ঠোঁটেরই। ”
ছুটি এবারে ছোটশ্বাস টানে। বলে,
“ গলায় ও এখনও তীব্র ব্যাথা। সব শাস্তি কি কেবল কাঁমড় দিয়েই দিতে পারেন? ”
আবির ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে এবারে। হাসি পায় তার। ঠোঁট বাকিয়ে বলে,
“ মোটেই না।বহুভাবে শাস্তি দিতে পারি। এসব তো ক্ষুদ্র শাস্তির নমুনা। আপনার বৃহৎ শাস্তি তো এখনো বাকি রয়ে গেছে ম্যাম। ”
রাহা কোলে নাদুসনুদুস একটা বাচ্চা। বাচ্চা স্বচ্ছ আর সুহার। নাম স্নিগ্ধ! রাহা ড্যাবড্যাব করেই সে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আজ এক মাস হলো সে স্বচ্ছদের বাড়িতে। ওদিকে রোহানের তখন নাজেহাল অবস্থা যেন। যে মেয়েটাকে নিজের প্রথম ভালোবাসার মানুষটার মতোই দেখতে,আচার আচরণে ঐ মানুষটার মতো বলে বিয়ে করেছিল সে মানুষটাকেও যে সে সত্যিই মন দিয়ে ফেলবে তা রোহান বুঝে উঠেনি। এই কয়েক মাসে মেয়েটা না চাইতেও যে তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে তা রোহান বুঝে উঠতে পারে এই একমাস সময়ে। যখন মেয়েটা তার বোনের বাড়িতে গিয়ে বসে আছে। রোহান নিজে থেকে বারবার যোগাযোগ করতে চেয়েও কোন এক ইগোর কারণে সে আর যোগাযোগ করে উঠতে পারে না। রাহা কেন তাকে কল করল না এই এক মাসে? উচিত নয় কি কল করা? রোহান ছোটশ্বাস ফেলে। একবার যেন রাহাকে দেখতে পায় এই কারণেই সে স্বচ্ছদের ওদিক দিয়েই গাড়ি নিয়ে আসল। অথচ দেখা মিলল না। অতঃপর যখন বাড়ি গেল তখন দেখা মিলল তার মায়ের। সোফায় বসে কারোর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। রোহান ভ্রু বাঁকায়। ফোনের ওপাশ থেকে রাহার গলায় শুনতে পায়,
“ আম্মু? ও ভীষণ মিষ্টি না বলো? আমার না ওকে খুব পছন্দ হয়েছে। আমি আরো মাস ছয়েক এখানেই থাকব আম্মু। ওর হামাগুঁড়ি, হাঁটতে পারা সব নিজ চোখে দেখব বুঝলে? ইশশ! আমার বাচ্চাটা! ”
রোহান ভ্রু কুঁচকে নেয়। মাস ছয়? প্রশ্নই উঠে না৷ এই মেয়ে পেয়েছে কি? এই পরিবারের সবার খোঁজখবর নেয়, সবাইকে কল করে অথচ তার একটা বার খোঁজ নেয় না? একটাবার জিজ্ঞেস করে না সে কেমন আছে? এতই অহংকার মেয়েটার? এত ভাব? রোহান ছোটশ্বাস টানে। দ্রুত ওভাবেই বের হয়ে যায় সে গাড়ি নিয়ে। তারপর মিনিট দশের মধ্যেই স্বচ্ছদের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে ফোন দেয় রাহাকে। রাহা ভ্রু কুঁচকায়৷ এতগুলো দিন যে মানুষটা কল করেনি সে মানুষটা আজ কেন কল করবে? বুঝে উঠে না৷ মাত্রই তো সে রোহানের আম্মুর সাথে কথা বলল। রাহা অতোশত না বুঝে কল তুলে। বলে,
“ মিঃ রোহান ফারাবী? আপনাকে কি ভূতে ধরেছে আজ? ”
রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। এসব আজেবাজে কথা যে একমাত্র রাহার দ্বারাই সম্ভব তা সে জানে। বলে,
“ দ্রুত নিচে নামো নবনী। অপেক্ষা করছি। ”
রাহা চোখ গোলগোল করে তাকায় এবারে। বলে কি? সোজা এখানে চলে এসেছে এই লোক? কারণ কি? রাহা বুঝে উঠে না। স্নিগ্ধকে সুহার কাছে দিয়ে বিড়াল পায়ে বেলকনিতে যায়। দেখে, সত্যিই একটা গাগি দাঁড়িয়ে আছে। রাহা একদিকে খুশি হয় অপরদিকে কৈাতুহলি নজরে চেয়ে থাকে। পরমুহুর্তেই কি বুঝে ওড়না মাথায় দিয়ে নিচে নামে। একদম গাড়ির কাছে গিয়ে কাঁচ দিয়ে রোহানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাতেই রোহান কাঁচ নামাল। গম্ভীর স্বরে বলল,
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৮
“ গাড়িতে উঠো। ”
রাহা তাকায়। গাড়িতে উঠবে কেন এখন? কোথায় নিয়ে যাবে? সে তো কাউকে বলেও আসেনি। নিজের ফোনটাও আনেনি। রাহা সরাসরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রোহান ফের গাঢ় গলায় ধমকস্বরূপ বলে,
“ কি হলো? উঠতে বলেছি তো? ”
ছুটি হুট করে আর কিছু বলতে পারল না। গটগট উঠে বসল। সামনে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ল,
“ কোথায় যাব জনাব রোহান ফারাবী? ”
রোহান গাড়ি চালাতে শুরু করে। নাক লাল হয়ে উঠছে তার অজানা কারণেই। অজানা কারণেই তার রাগ লাগছে রাহার প্রতি? অথচ এটা যৌক্তিক নয়। বেমানান। তবুও রোহানের রাগ লাগে। বলে,
“ যেখানে তোমার যাওয়ার ওখানেই যাবে। ”